আল্লাহর আকৃতিতে আদম (عليه السلام) কে বানানো প্রসঙ্গ


আমাদের সমাজের কিছু বাউল ও সাধারণ মুসলমানের ধারণা এরূপ। প্রকৃতপক্ষে এরূপ ধারণা রাখা বৈধ নয়; বরং এটি বাতিল পন্থীদের আক্বিদা। ইমাম ত্বাহাভী (رحمة الله) তার আক্বিদাতুত ত্বাহাভীর ভূমিকায় বলেন-

المرجئة يقولون ان الله خلق ادم على صورته والعرش مكان لله-

-‘‘ফিরকায়ে মুর্জিয়া সম্প্রদায় বলে, নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে তার আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। আরশ হল আল্লাহর স্থান।’’ আমাদের সমাজে এখন বহু লোক এ হাদিসটি অনেক সময় বলে থাকেন যে,  خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ‘আল্লাহ আদম (عليه السلام) কে তাঁর স্বীয় ছুরতে (আকৃতিতে) সৃষ্টি করেছেন।’  

➤মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল আদাব, বুখারি ও মুসলিম শরিফের সূত্রে। 


এই হাদিসের প্রকাশ্য অর্থে গ্রহণ করা মূলত গোমরাহী ছাড়া আর কিছু নয়। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বলেন-

وَقد يُقَال: هُوَ عَائِد إِلَى الله تَعَالَى، لَكِن الصُّورَة هِيَ الْهَيْئَة وَذَلِكَ لَا يَصح إلاَّ على الْأَجْسَام، فَمَعْنَى الصُّورَة الصّفة كَمَا يُقَال: عرفني صُورَة هَذَا الْأَمر أَي: صفته، يَعْنِي: خلق آدم على صفته أَي حَيا عَالما سميعاً بَصيرًا متكلماً

-‘‘এ ব্যাখ্যাও করা যায় যে, عَلَى صُورَتِهِ এর ه সর্বনামটি الله এর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী কিন্তু ছুরত অর্থ আকৃতি। আর এমন অর্থ জিসিম বা শরীর ব্যতীত প্রয়োগ হয় না। তাই এখানে الصُّورَة  শব্দটি الصّفة বা গুণ অর্থে ব্যবহৃত। যেমন আরবীতে বলা হয়- عرفني صُورَة هَذَا الْأَمر (এ বিষয়ে ছুরত আমাকে অবগত করুন) বক্তব্যটিতেالصُّورَة শব্দটি গুণ অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ আদমকে আল্লাহর গুণে সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ আদমকে আল্লাহর গুণ জীবিত, জ্ঞানী, শ্রবণকারী, দৃষ্টিসম্পন্ন এবং বক্তা হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’  

➤আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ২২/২২৯পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৬২২৭


আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-

)خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ ) أَيْ: عَلَى صُورَتِهِ الَّتِي اسْتَمَرَّ عَلَيْهَا إِلَى أَنْ أُهْبِطَ، وَإِلَى أَنْ مَاتَ دَفْعًا لِتَوَهُّمِ أَنَّ صُورَتَهُ كَانَتْ فِي الْجَنَّةِ عَلَى صِفَةٍ أُخْرَى-

-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা আদম (عليه السلام) কে ঐ আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন যে আকৃতির উপর তাকে জান্নাত হতে জমিনে অবতরণ করা হয় এবং ইন্তিকাল পর্যন্ত ছিলেন। জান্নাতে তাঁর আকৃতি অন্য রকম ছিল, এমন সন্দেহকে দূর করার জন্য এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।’’  

➤মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাতুল মাফাতীহ, ৭/২৯৩৫পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪৬২৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


কিন্তু বিজ্ঞ আকায়েদবিদগণের মতে-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা দিক, কাল, গতি, স্থিতি, আকার-আকৃতির এবং যাবতীয় অঘটন থেকে পবিত্র। (মুসামের, ৩১পৃ. মাসায়েরা, ৩৯৩পৃ. বাহারে শরীয়ত, প্রথম খন্ড) 

 
Top