হাদীস নং-১

‘‘হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রা) বলেন, 

বনী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত পাপী, যে ২০০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর নাফরমানী করেছে। যখন সে মৃত্যুবরণ করে মানুষেরা তাকে এমন স্থানে নিক্ষেপ করল, যেখানে আবর্জনা ফেলা হতো। তখন হযরত মুসা (আ) এর প্রতি ওহী এলো যে, লোকটিকে ওখান থেকে তুলে যেন তার ভালভাবে জানাযার নামায পড়ে তাঁকে দাফন করা হয়। হযরত মুসা (আ) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! বনী ইসরাঈল সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, লোকটি ২০০ বছর পর্যন্ত তোমার নাফরমানী করেছিল। ইরশাদ হলো, হ্যাঁ, তবে তার একটি ভাল অভ্যাস ছিল। যখন সে তাওরাত শরীফ তেলাওয়াত করতো, যতবার আমার হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সা) এর নাম মোবারক দেখত তখন সেটা ততবার চুম্বন করে চোখের উপর রাখত এবং তার প্রতি দুরূদ পাঠ করত। এজন্য আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং সত্তর জন হুর স্ত্রী স্বরূপ তাকে দান করেছি।’’ 
*উক্ত হাদীসের ব্যাপারে কোনো মুহাদ্দিস মন্তব্য করেননি। তাদের নীরবতা পালন দ্বারা বুঝা গেল হাদিসটি গ্রহণ করেছেন বলে এই হাদিসের ব্যাপারে কোন মুহাদ্দিসের বিরোধীতা পাওয়া যায়নি।

Reference :

ক. ইমাম আবু নঈম : হুলিয়াতুল আউলিয়া : ৩/১৪২ পৃ.
খ. আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালভী : সিরাতে হালবিয়্যাহ ১ম খন্ড পৃষ্ঠা-৮৩ 
গ. আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ৩৫৪ পৃষ্ঠা
ঘ. জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা :১/­৩০,হাদিস : ৬৮, মাকতুত-তাওফিকহিয়্যাহ, বয়রুত।
ঙ. আল্লামা আবদুর রহমান ছাফূরী : নুযহাতুল মাযালিস : ২/১৪২ পৃ.
চ. আল্লামা দিয়ার বকরী : আল খামীস ফি আহওয়ালে আনফাসে নাফীস : ১/২৮২ পৃ.

হাদীস নং ২

* এ ব্যাপারে হযরত আদম (আ) এর আমলঃ
বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রহ) তাঁর উল্লেখযোগ্য তাফসীর তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ লিখেন,
-‘‘কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আ) জান্নাতে অবস্থানকালে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা)‘র সাথে সাক্ষাতের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অত:পর আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, হে আদম! তিনি তোমার পৃষ্ঠ হতে শেষ যামানায় প্রকাশ হবেন। তা শুনার পর তিনি জান্নাতে অবস্থানকালে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন। বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা ওহী প্রেরণ করলেন, যে নূরে মুহাম্মদী (সা) তোমার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর মধ্যে স্থানান্তরিত করেছি, তখন সে অঙ্গ হতে তাসবীহ পাঠ আরম্ভ হলো। এজন্যই এই আঙ্গুলকে তাসবীহ পাঠকারী আঙ্গুল বলা হয়। যেমন ‘রওযাতুল ফায়েক’ কিতাবেও বর্ণিত আছে, অথবা আরেক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা আপন হাবীব (সা) এর সৌন্দর্য প্রকাশ করলেন দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর যেভাবে আয়নাতে দেখা যায়। তখন আদম (আ) দুই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুম্বুন করে স্বীয় চোখের উপর মালিশ করলেন। এটি দলীল হিসেবে প্রমাণিত হলো যে, তাঁর সন্তানাদীর জন্য। অতঃপর জিবরাঈল (আ) এই ঘটনা হুযুর (সা) কে জানালেন। হুযুর (সা) বললেন, যেই ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করবে আর চোখে মালিশ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না।’’

Reference :

ক.আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ৭/২২৯ : সূরা মায়েদা আয়াত : ৫৭ নং এর ব্যাখ্যা খ.আবদুর রহমান ছাফুরী, নুযাহাতুল মাযালিস,২/৭৪পৃ.

হাদীস নং-৩

* হযরত খিযির (আ) কর্তৃক রাসূল (সা) এর নাম শুনে চুমু খাওয়ার আমল বর্ণিতঃ

ইমাম আবু আব্বাস আহমদ বিন আবি বকর ইয়ামানী (রহ) তাঁর লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ موجبات الرحمة و عزائم المغفرة এর মধ্যে হযরত খিযির (আ) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলূল্লাহ’ শোনে বলবে مرحبا بحبيبى و قرة عينى محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم ) মারহাবা বি হাবিবি ওয়া কুররাতো আইনী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সা) অতঃপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে তার চোখে কখনও ব্যথা হবে না এবং সে কোন দিন অন্ধ হবে না।’’ 

Reference :

ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/৩৮৩ : হাদিস : ১০২১
খ. আল্লামা আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হাদিস : ২২৯৬
গ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কবীর : ১০৮ পৃ
ঘ. আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জাআল হক : ২/২৪৬ পৃ

হাদীস নং-৪

*হযরত আবু বকর (রা) এর আমল এবং সনদ তাত্ত্বিক বিশ্লেষনঃ

হযরত আবু বকর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি মুয়ায্যিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার’ রাসূলূল্লাহ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। তা দেখে রাসূল (সা) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়ে গেল।’’ 
উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণের মতামত আমি তুলে ধরব, যাঁরা হাদিসটি সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।

১. ইমাম সাখাভীর অভিমতঃ

আল্লামা ইমাম সাখাভী (রহ) হযরত আবু বকর (রা) এর বর্ণিত হাদিসটি সংকলন করে বলেন, لا يصح ‘হাদিসটি সহিহ নয়।’ 

হাদিসটি সহিহ নয় বললে, “হাসান” হাদিস বুঝায়। এমনকি মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) বলেন, لا يصح لا ينافى الحسن-
-‘‘কোন মুহাদ্দিসের বক্তব্য হাদিসটি সহিহ নয়-তা দ্বারা হাদিসটি “হাসান” হওয়াতে কোন অসুবিধা বা নিষেধ করে না।’’ ইতিপূর্বে আমি ইমাম সাখাভীর বক্তব্যও পেশ করেছি।
বুঝা গেল, হাদিসটি কমপক্ষে “হাসান” হাদিস যা দলীল হিসেবে দাড় করানোর গ্রহণযোগ্যতা রাখে। 
(প্রমানিত হাদিস জাল বানানোর স্বরুপ উন্মোচন বই)

২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) এর অভিমতঃ

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) তাঁর গ্রন্থে ইমাম সাখাভী (রহ.)‘র রায় পেশ করে সমাধানের কথা বলেন যে-
‘‘আমার কথা হলো হাদিসটির সনদ যেহেতু হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) পর্যন্ত প্রসারিত (মারফূ হিসেবে প্রমাণিত), সেহেতু আমলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কেননা হুযুর (সা) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার পর আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরো।’’ 
দেখুন! আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) বলেছেন যে, এতটুকুই যথেষ্ট যেহেতু হযরত আবু বকর (রা) আমলটি করেছেন এবং তিনি পর্যন্ত সনদটি প্রসারিত।

Reference :

খ. ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৩ : হাদিস : ১০২১
গ. আল্লামা ইমাম আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৫৯ : হাদিস : ২২৯৬
ঘ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূ : ৩১২ পৃষ্ঠা : হাদিস : ৪৫
 
Top