Latest News

সে ছিল বিদেশে। দেশে এসছে। হাতে কাঁচা টাকা। উঁচু সমাজে উঠতে চায়। সমস্যা একটাই। পড়াশুনা নেই।
বহু ভাবল। উপায় বেরুলো একটা। একটা পার্টি দিবে। দাওয়াত দিবে ধনীদের। সাহেবী কায়দায় কথা কইবে। পরিচিত হবে। ব্যাস! হয়ে যাবে ভিআইপি।
তবুও সমস্যা। পার্টিতে ইংরাজী বলতে হবে। ধরুন কেউ এলো। তাকে বলতে হবে, বসুন। কিন্তু এই বয়সে ইংরাজী শিখুম। কেডা শিখাইব। এ যে বড় লজ্জা।
উপায় অবশ্য আছে। ডিকশনারী। হ্যাঁ, ডিকশনারী ঘাঁটুম। কয়টা শব্দ শিখুম। তাইলেই হইছে। কেউ তো আমার সার্টিফিকেট খুঁজব না।
যেই কথা সেই কাজ। ডিকশনারীতে 'বসুন' এর ইংরাজী খুঁজলো। লেখা আছে 'গারলিক' (Garlic) মানে বসুন।
অনুষ্ঠানের দিন। অতিথীরা আসছে। বেচারার মনে আনন্দ। স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। কেউ এলেই বলে, গারলিক! গারলিক! গারলিক!
বেচারার এক বন্ধু আছে। ইউরোপে ছিল। সেও এসেছে দাওয়াতে। দেখল এই গারলিক-গারলিক অবস্থা। ঘটনা কি! এমন করে ক্যা!
- এই তুই এদিকে আয়। এই চিপায় আয়।
- ক' কি হইছে?
- এমন গারলিক-গারলিক করস ক্যা? এইহানে কি কাঁচা-বাজার খুললি!
- ক্যান কমু না! আমি সবাইরে বইতে কইছি। এইডা হইলো ভদ্রতা। আর ডিকশনারীতে লেখা বসুনের ইংরাজী 'গারলিক'। এই দ্যাখ ডিকশনারী।
- আরে উজবুক! গারলিকের বাংলা 'রসুন'। যেইডা তরকারীতে খায়। এইহানে ছাপাইতে ভুল হইছে। রসুনের ফোঁটা ছাপায় নাই। রসুন হইয়া গেছে বসুন।
----------
ইদানিং কিছু মুফতি গজিয়েছে। গুগল মুফতি। যাদের এই 'রসুন-বসুন' অবস্থা। মাযহাব মানে না। ওলামদের মানবে না।
অথচ পবিত্র কোর'আনে বারংবার বলা হচ্ছে তাকলিদের কথা। অনুসরণের কথা।
সূরা তওবা। আয়াত এগারো। শেষাংশ।
- এবং আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি জ্ঞানীদের জন্য।
সূরা আন-নাহল। আয়াত তেতাল্লিশ। শেষাংশ।
- জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো যদি তোমাদের জ্ঞান না থাকে।
সূরা নিসা। আয়াত আটান্নো। প্রথমাংশ।
- হে ঈমানদারগণ, নির্দেশ মান্য করো আল্লাহ্‌র। এবং নির্দেশ মান্য করো রসূল এঁর। আর তাদেরই, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।
কোর'আন ও হাদীস আলিমের জন্য। সাধারনের জন্য আনুগত্য জরুরী। জ্ঞানীর আনুগত্য, অনুসরণ। মূর্খরা যদি কোরা'আন-হাদিস থেকে মাসআলা অনুমান করা শুরু করে, তবে দ্বীন এক হাস্যকর বস্তুতে পরিণত হবে। রসুন-বসুনের মত। কারণ মুক্তা জওহরীর দোকানেই মিলে। সমুদ্রে নয়। সমুদ্রে ডুবা-ভাসার ক্ষমতা সবার থাকে না।
এখন তারা বলবে, সূরা নিসা'র আটান্নো আয়াতের শেষাংশের কথা।
- অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতভেদ ঘটে, তবে সেটাকে আল্লাহ্‌ ও রসূলের সম্মুখে রুজু করো, যদি আল্লাহ্‌ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান রাখো। এটা উত্তম এবং এর পরিণাম সবচেয়ে উৎকৃষ্ট।'
বুঝানো হচ্ছে : আলেম বা ক্ষমতাশীলদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হলে কোর'আন হাদিসের দিকে ফিরে আসতে।
তারা বলে, আপনাদের মাঝে মিল নেই। মাযহাব নাকি সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। নবী এক মাযহাব চারটি কেন?
আরে ভাই, আল্লাহ এক। কিন্তু পয়গম্বর ১/২ লক্ষ চব্বিশ হাজার কেন?
আর মাযহাবীদের মাঝে বিভেদ পেলেন কই?
ইমাম শাফি, শাফি মাযহাবের ইমাম। তিনি ইমামে আযম আবু হানিফা'র মাজার জিয়ারত করতেন। যখন কোনো মাসআলার সমাধান পেতেন না।
সেখানে ইমাম শাফি হাত নাভিতে বাঁধতেন। অথচ শাফিগণ বুক-পেটের মাঝে হাত বাঁধে।
কারণ জানতে চাওয়া হইল। তিঁনি বললেন : ইমামে আযম এঁর প্রতি সম্মান দেখাতেই তিনি নাভিতে হাত বাঁধেন।
জ্বী, এটাই আদব।
এবার গাউসে পাকের কথা ধরুন। আব্দুল কাদের জিলানী এঁর কথা বলছি। আমরা তাঁর আনুগত্য করি। বিশেষত উপমহাদেশের মানুষ। আমরা প্রায় সবাই হানাফি। কিন্তু গাউসে পাক ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের।
হানাফিরা হাম্বলীর আনুগত্য করে। কি মিল! কি ভালোবাসা!
মাযহাবীদের বিভেদ নেই। মাযহাব একে অপরের পরিপূরক। মাযহাব ইসলামের সৌন্দর্য।
বহু কথা লিখলাম। শেষ কথা বলেছেন কবি নজরুল।
তর্ক করে দু:খ ছাড়া কি পেয়েছিস অবিশ্বাসী 
কি পাওয়া যায় দেখ না বারেক হযরত কে মোর ভালোবেসে।

আমি ভালোবাসায় বিশ্বাসী। তর্কে নই। এজন্যই আমি সালাফি নই।
Top