মাযার সমূহের ওপর ঘর নির্মাণ করার বর্ণনা-


❏ প্রশ্ন-১২৩ঃ আউলিয়া-ই কিরামের মাযারসমূহের ওপর ভবন বা ঘর নির্মাণ করা কেমন? অথচ স্পষ্ট বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা এর নিষেধ করা হয়েছে। মসজিদসমূহ অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বিশাল আকারের এবং এতে গম্বুজ ও বিভিন্ন প্রকারের আকর্ষণীয় স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য দ্বারা সুসজ্জিত করে নির্মাণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি-না? অথচ হাদীস শরীফে এরকম কারুকার্য মাকরূহ বলা হয়েছে। কারণ যাতে মুসলি­দের ধ্যান কারুকার্যের সৌন্দর্য্যের দিকে ধাবিত না হয় অথবা অযথা অর্থের অপচয় না হয়। অনুরূপভাবে মসজিদের ওপর গম্বুজ নির্মাণ করার বিধান কী?


✍ উত্তরঃ আউলিয়া-ই কিরামের মাযার এবং মসজিদ সমূহের সুউচ্চ ইমারত বর্তমানে সেগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং দূর-দূরান্ত থেকে এই ইসলামি নিদর্শনসমূহের ওপর অবহিত হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে এটাই অন্যতম কারণ। তাছাড়া তা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল না। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে মানুষের মাঝে যে নিত্য নতুন অবস্থার সৃষ্টি হতে চলেছে, অনুরূপভাবে তাদের জন্য ফতোয়াও নতুন নতুন হচ্ছে। বর্তমানে মুসলিম এবং কাফিরসহ সকল জাতি নিজ নিজ বাড়ী-ঘর সুউচ্চ ইমারত ও অট্টালিকা তৈরীর প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। আর আমরা মুসলমানরা যদি আকর্ষণীয় উচ্চ ইমারতের মাঝে কাঁচা ইটের নিচু দেয়ালের মসজিদ নির্মাণ করি অথবা তালিজোড়া দিয়ে ঝোপড়ির ন্যায় তৈরী করা হয় এবং আকর্ষণীয় গম্বুজ এবং সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করা না হয়। এতে বিশেষ করে অমুসলিমদের দৃষ্টিতে তা হেয়প্রতিপন্ন হবে। আর মসজিদের অবমূল্যায়ন করা মানে পক্ষান্তরে ইসলাম ও মুসলমানদের অবমাননা ও অবমূল্যায়নের শামিল। যা পবিত্র শরীয়তের দৃষ্টিতে কখনো পছন্দনীয় নয়।

এই পবিত্র দলিল ও মর্যাদাপূর্ণ নিদর্শনের কারণে মুসলিম জাতিসত্তার সম্মান রক্ষার্থে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ইমাম ও ওলামায়ে কিরাম এগুলোকে জায়েয বলেছেন। যা বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে নিদ্বির্ধায় প্রচলিত নিয়ম-নীতিতে পরিণত হয়েছে। 

ماراه المسلمون حسنا فهو عند الله حسن -এর অন্তভুর্ক্ত হয়েছে।


‘জওয়াহিরে ইখলাতি’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে,


وان كان احداثا فهو بدعة حسنة وكم من شئ كان احداثا وهو بدعة حسنة وكم من شئ يختلف باختلاف الزمان والمكان .


যদিও এটা নতুন আবিষ্কার। তবুও بدعة حسنة বা ভাল আবিষ্কার। এমন অনেক বস্তু রয়েছে যা নতুন আবিষ্কার, অথচ উহা উত্তম বিদআত বৈ আর কিছু নয়। অনেক বিধান এমনও আছে যা স্থান-কাল পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত হয়, এমতাবস্থায় পূর্বযুগের বিধানাবলী থেকে দলিল পেশ করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। যুগের চাহিদা অনুপাতে হুকুম প্রদান করা উচিৎ। যেমন- উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله تعالي عنها) বলেছেন যে, যদি  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)    বর্তমানে মহিলারা যেসব কর্মকান্ড বের করেছেন তা উপলব্ধি করতেন, তা হলে তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন। যেমনিভাবে বনি ইসরাঈলের মহিলাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। পরিশেষে আইম্মায়ে কিরাম ও মুহাক্কিক আলিমগণ মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। অথচ  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)    ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার বন্দিনীদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করিও না।" 

163. সহীহ মুসলিম।


আইম্মা-ই কিরাম এবং ওলামায়ে মুহাক্কিকীনরা যুগের চাহিদা মোতাবেক অবস্থার প্রেক্ষাপটে যে হুকুম প্রদান করেছেন, তবে এটাকে কী হাদীসের বিপরীত বলা যাবে? এটা কখনো হতে পারে না? আল্লাহ্ না করুক, এমন কথা নির্বোধ ও বোকা ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। এ জন্যে আউলিয়া-ই কিরামের মাযার সম্পর্কে ওলামায়ে কিরামগণ যে ফতোয়া দিয়েছেন তা যুগের মুহাক্কিক হযরত আল্লামা ইউসুফ নাব্হানি (رحمه الله تعالي ) ‘মাজমাউ বিহারুল আনওয়ার’ গ্রন্থের তৃতীয় খন্ড বলেছেন, 


قد اباح السلف البناء علي قبور الفضلاء الاولياء والعلماء ليزورهم الناس ويستريحون فيه .


‘নিশ্চয়ই পূর্ববর্তী ইমামগণ সম্মানিত আউলিয়া ও ওলামায়ে কিরামের যিয়ারতের স্থানে মাযার ও অবকাঠামো নির্মাণ করা বৈধ বলে ফতোয়া প্রদান করেছেন। যাতে লোকজন তাঁদের কবর যিয়ারত করতে পারে এবং তাতে প্রশান্তি লাভ করে। সলফে সালেহীন তথা পূর্ববর্তী বুযূর্গানে দ্বীনের পবিত্র আত্মাসমূহ শা‘আয়িরুল্লাহ বা আল্লাহ'র নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান পূর্ণমাত্রায় ছিল। বাহ্যিক শান-শওকত, সম্মান-প্রতিপত্তি ও ঐশ্বর্যতার মুখাপেক্ষী ছিলেন না। তাদের সময় এগুলো ছিল অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয়। প্রত্যেক অপ্রয়োজনীয় বিষয় মাকরূহ এবং এতে অর্থ ব্যয় করা নিষিদ্ধ।

বর্তমান যুগে বাহ্যিক শান-শওকত, জাকজঁমক ও আড়ম্বরতা ব্যতীত সাধারণ মানুষের অন্তরে মর্যাদার স্থান পাওয়া যায় না বিধায় উক্ত বিষয়াদির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যেমন- কোরআন শরীফের ওপর অক্ষর স্বর্ণখচিত করার অনুমতি হয়েছে, মসজিদ সমূহে সোনালী গম্বুজ এবং স্বর্ণ-রৌপ্য দ্বারা কারুকার্য করার অনুমতি হয়েছে এবং আউলিয়া-ই কিরামের মাযারে চাদর, গিলাফ পরিধান করা এবং আলোক সজ্জা করার অনুমতি হয়েছে। সে ভিত্তিতে তাঁদের মাযারে গম্বুজ নির্মাণের বৈধতার হুকুম দেয়া হয়েছে। উপরোক্ত সকল বিষয়ের ক্ষেত্রেও বর্ণিত হাদীস এবং প্রাথমিক যুগের বিধানাবলী পেশ করা মূর্খতা ও নিবুর্দ্ধিতা ছাড়া আর কি হতে পারে? উক্ত ইমারত নির্মাণের ফলে মাটি ও ইট-পাথরের প্রতি কখনো সম্মান প্রদর্শন হতে পারে না, বরং আল্লাহ্ পাকের নৈকট্য লাভে ধন্য এবং তাঁর প্রিয় বান্দার পবিত্র আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন উদ্দেশ্য। যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। আর আমলের ভিত্তি নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। তাই ইমাম আবদুল গণি নাবুলুসী (رحمه الله تعالي ) তাঁর অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্ববিখ্যাত ‘হাদিকাতুন নাদিয়্যাহ’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 


تعظيما لروحه المشرفة على نواب جسده الخ .


অর্থাৎ- আউলিয়া-ই কিরামের মাযার শরীফে আলোক সজ্জা করা, তাঁর পবিত্র আত্মার প্রতি সম্মান জ্ঞাপনার্থে। যা স্বীয় শরীর মোবারকের সাথে মিলিত মাটিতে আকাশের সূর্যের ন্যায় আলোকরশ্মি দান করছেন। যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে, এখানে কোন ওলি-আল্লাহ'র মাযার আছে। ফলে এখান থেকে বরকত হাসিল করতে পারবে এবং সেখানে গিয়ে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে, তার দু‘আ কবুল হবে। যেমন, ইমাম শাফেঈ (رحمه الله تعالي ) হযরত ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمه الله تعالي ) এর মাযার শরীফে গিয়ে তাঁর পবিত্র কবর সামনে রেখে দু‘আ করতেন, যা তিরয়াক্ব পাথরের ন্যায় অতি দ্রুত কবুল হতো। হযরত আবদুল গণি নাবুলুসি (رحمه الله تعالي ) সকল প্রশ্নের উত্তর ওই দু’টি শব্দের দ্বারা দিয়ে দিয়েছেন যে, تعظيما لروحه উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহ'র প্রিয় মাহবুব বান্দাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন; মাটি, ইট ও পাথরের নয়। তাই উক্ত সম্মান প্রদর্শনকে ইবাদত আখ্যা দেয়া এবং নৈকট্যকে ইবাদত বন্দেগী মনে করা মানে হাজার হাজার আল্লাহর ওলি ও বুযূর্গানে দ্বীনকে শিরক ও কুফরীর সাথে লিপ্ত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কুধারণা থেকে রক্ষা করুন। যেমন- তাবুতে সকিনার কাহিনী আল্লাহ্ তা‘আলা কোরআন মজিদে উল্লেখ করেছেন। ফলে স্পষ্টতঃ একথা প্রতীয়মান হয় যে, বুযূর্গানে দ্বীনের তাবার্রুকাতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আবশ্যক। তাঁদের বরকতে মানুষের দু‘আ কবুল এবং হাজত পূর্ণ হয়। আর তাবাররুকাতের অবমাননা করা পথভ্রষ্টতারই কাজ এবং যা ধ্বংস হওয়াকে আবশ্যক করে। 

164. তাওযীহাত-ই হাফত মাসআলা, পৃষ্ঠা-২২২।


আউলিয়া-ই কিরামের মাযারের ওপর গম্বুজ নির্মাণ সম্পর্কে আল্লামা গোলাম দস্তগীর কুরাইশী হাশেমী (رحمه الله تعالي ) ‘তারীখে মক্কা মুয়ায্যমা’ গ্রন্থের ৩০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, আমার তত্ত্বাবধানে ‘তোহাফায়ে ওহাবী’ নামক একটি কিতাব প্রকাশিত হয়েছে।

النَّاسُ عَلٰى دِيْنِ مُلُوْكِهِمْ . বাক্যের সত্যতা দেখুন যে, হিন্দুস্তান ও বাংলার ওহাবীরা প্রাথমিক যুগে বা প্রথম প্রথম তাদেরকে ওহাবী বললে খুব রেগে যেত এবং ক্ষোভ প্রকাশ করতো। কিন্তু বর্তমানে তারা অত্যন্ত গর্বের সাথে কিতাবের নাম ‘তোহফাতুল ওহাবীয়্যাহ’ রাখছেন। নজদীরা হিজাযে এসে হিন্দী আহলে হাদীসের জন্যে ওহাবী শব্দটির উপাধি ও সম্বোধন অত্যন্ত সম্মানের ফাঁদে ও তোড়ায় পরিণত হয়েছে। অথচ ইতিপূর্বে ওহাবী শব্দটি তাদের জন্য গালিগালাজ ও বদনাম ছিল।

‘তোহফাতুল ওহাবীয়্যাহ’ গ্রন্থের ৫৯ পৃষ্ঠায় লিখা আছে যে, সালেহীন ও বুযূর্গানে দ্বীনের কবরের ওপর যে গম্বুজ ও মীনার নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোও এক প্রকারের মূর্তি। অথচ কোরআন মজিদে মূর্তি ও প্রতিমাগুলোকে নাপাক ও অপবিত্র বলা হয়েছে। লোকেরা এগুলো হতে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দু‘আ করে থাকে। তাই এগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নজদিরা বুযূর্গানে দ্বীনের মাযারসমূহ যা যিয়ারত করা ওয়াজিব, এগুলোকে মূর্তির সাথে তুলনা করে এবং নাপাক ও অপবিত্র বলে জঘন্যতম অপরাধ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও বেআদবী করেছে। আমরা কাউকে কখনো কবর থেকে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রার্থনা করতে দেখিনি এবং শুনিনি বরং সাহেবে মাযার আউলিয়া-ই কিরামকে উসিলা বানিয়ে মুনাজাত করে থাকে। কবরসমূহকে ইমারত দ্বারা হিফাযত ও সংরক্ষণ করার বিষয়টি নবুয়তের যুগ এবং সাহাবা-ই কিরামের যুগ থেকে প্রমাণিত আছে


১. হুযূর সৈয়্যদে ‘আলম(ﷺ)ইন্তিকালের স্থান উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله تعالي عنها)-এর হুজরায়, সেখানেই তাঁর রওজা শরীফ।


২. হযরাত আম্বিয়া-ই কিরামের পর সর্বোত্তম মানব হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضى الله تعالي عنه)-এর মাযার শরীফও হুযূর(ﷺ)-এর একই ছাদযুক্ত স্থানে হয়েছে।


৩. হযরত ফারুকে আযম ওমর (رضى الله تعالي عنه)-এর ইন্তিকাল নিকটবর্তী হলে তিনি অসিয়ত করেন যে, আমাকেও হুযূর সৈয়্যদে ‘আলম   ও সিদ্দীকে আকবর (رضى الله تعالي عنه)-এর পাশেই পবিত্র হুজরা শরীফে যেন দাফন করা হয়।


৪. উম্মুল মুমিনীন হযরত মায়মুনা (رضى الله تعالي عنها)কে ৩৮ হিজরীতে মক্কা মকার্রমা থেকে দশ মাইল দূরে অবস্থিত শরফ নামক স্থানের ওই ঘরে দাফন করা হয়, যেখানে তিনি হুযূর(ﷺ)-এর সাথে বাসর ঘরে আরাম করেছিলেন। 

165. তিরমিযী শরীফ, باب ترويج المحرام , খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১১০।


যে ঘটনাটি হযরত আলী (رضى الله تعالي عنه)-এর খিলাফতকালে সংঘটিত হয়। যার সম্পর্কে নজদীরা প্রচার করে যে, তাঁকে উঁচু কবরসমূহ বিলীন করে দেয়ার হুকুম দেয়া হয়েছিল। পক্ষান্তরে এ হুকুমটি ছিল মুশরিকদের কবর সম্পর্কে। একথার ওপর কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই যে, তিনি কোন মুসলমানের কবর বিলীন করে দিয়েছিলেন। 

166. জওহরুন নক্বী, পৃষ্ঠা-২৬৫।


বুখারী শরীফে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, হুযূর   হযরত ওসমান বিন মাযউন (رضى الله تعالي عنه)-এর কবরের ওপর অনেক বড় পাথর দিয়ে উঁচু করে দিয়েছিলেন। যাতে হুযূর সৈয়্যদে ‘আলম(ﷺ)-এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সাহাবা-ই কিরামের কবর তাঁর পাশে দেয়া যেতে পারে।

আফসোস! পরিতাপের বিষয়!! নজদিরা সে সকল কবরসমূহ যা মদিনা মুনাওয়ারার জান্নাতুল বাক্বীতে ছিল, সব কবরই বিদীর্ণ ও চুরমার করে বিলীন করে দিয়েছে। প্রথম দিকে কবরসমূহের ইমারতের চারিপার্শ্ব সাধারণ কাঁচা ইট দ্বারা নির্মিত ছিল। ক্রমান্বয়ে আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদেরকে ধন-দৌলত দান করেন। ফলে তারা মসজিদ সমূহকে পাকা ও কারুকার্য দ্বারা শোভাবর্ধন করেন। আর বুযূর্গানে দ্বীনের বিশ্রামস্থল ও মাযারকেও তাঁদের শান ও মর্যাদা অনুপাতে বিশাল ও জাঁক-জমকপূর্ণ করে তৈরী করেন। এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কোন আলেমদ্বীন অভিযোগ উত্থাপন করেননি। এখানকার ভারত-বাংলার যে সকল ওহাবী মোল্লারা হজ্ব করতে যেতো তারাও ফিরে এসে কখনো উক্ত ইমারত ও নির্মাণকে নাজায়েয বলে ভেঙ্গে ফেলার ফতোয়া প্রদান করেননি। কিন্তু যখনই নজদিরা মক্কা মুয়ায্যমার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করল, তখন থেকেই তারা ওই সকল বুযূর্গানে দ্বীনের শান-মান হ্রাস ও খর্ব করার নিমিত্তে তাঁদের পবিত্র মাযার ও নিদর্শনাবলিকে ভেঙ্গে বিলীন করে দিল।

কিন্তু হিন্দুস্থানের আহলে হাদীসরা অত্যন্ত কঠিন ভাষায় তাদের চরম বিরোধিতা করেছিলেন যে, এমন কখনো হতে পারে না। এতদ্সত্ত্বেও নজদি শায়খের বংশধরেরা তাদের হিংসাত্মক কার্যক্রম খুব দ্রুত বেগে প্রকাশ করল। তখন মসজিদ ও মাযার সমূহের বিভিন্ন নিদর্শনাবলী চূর্ণ-বিচূর্ণ ও ভেঙ্গে দেয়ার পক্ষে জায়েয ফতোয়া প্রদানে তাদের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের সিলসিলা শুরু হয়। তখন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের আলিম-ওলামারা ফতোয়া প্রদান করতে থাকেন যেমন, সৈয়্যদুনা মাযহার হুসাইন লাহোরীসহ শীর্ষ আলিমরা, তখন তাদের পক্ষ থেকে কোন প্রতি উত্তর আসেনি। বরং তাদের থিওরী ছিল যে, কারো কোন কথা শুনবে না এবং নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং শায়খে নজদির মিশনকে সহযোগিতা ও বাস্তবায়ন করে যাবে।


❏ প্রশ্ন-১২৪ঃ মাযারসমূহ ধৌত করা জায়েজ কিনা?


✍ উত্তরঃ وبه نستعين মাযারসমূহ গোসল দেয়া জায়েযের সপক্ষে এতটুকু দলিলই যথেষ্ট যে, যারা এটাকে নাজায়েয বলেছে তাদের হাতেই বর্তমানেও পবিত্র কা’বা শরীফকে গোসল দেয়া ও গিলাফ লাগানো হচ্ছে। সুতরাং شعائرالله কে সম্মান প্রদর্শন বিশেষ করে আউলিয়ায়ে কিরামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মূলতঃ বিশ্ব প্রতিপালকের প্রিয় বান্দাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনরই অন্তভুর্ক্ত।

 
Top