প্রশ্ন: দ্বীনের আলিমগণ এবং শরীআতের মুফতীগণ এই ব্যাপারে কী বলেন—একজন ইমাম সাহেব নামায পড়ানোর সময় শালওয়ারের (বা প্যান্টের) পায়ের নিচের অংশ গুটিয়ে নেন। আমরা ইমাম সাহেবকে অনুরোধ করেছি যে এভাবে করা ঠিক নয়। কিন্তু তিনি বলেন, “দ্বীনে এত কঠোরতা নেই,” এবং তিনি এখনও একইভাবে নামায পড়াচ্ছেন। প্রশ্ন হলো: নামাযে কাপড় নিচ থেকে ভাঁজ করার বিধান কী? ইসলাম কি এটি করার অনুমতি দেয়, নাকি এটি নিষেধ?


উত্তর:

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
الجواب بعون الملك الوهاب، اللهم هداية الحق والصواب


প্যান্ট, শালওয়ার বা পায়জামা নিচ থেকে ভাঁজ করে অথবা উপরের দিক থেকে গুটিয়ে নামায পড়া মাকরূহে তাহরিমী এবং এ অবস্থায় আদায়কৃত নামায ওয়াজিবুল ই’আদা, অর্থাৎ পুনরায় আদায় করা আবশ্যক। এভাবে নামায পড়া গুনাহ, এবং যত নামায এ অবস্থায় পড়া হয়েছে, সবগুলো পুনরায় আদায় করতে হবে। আর ইমামের এই মন্তব্য “দ্বীনে এত কঠোরতা নেই” এটি ভুল ও ভিত্তিহীন।


যখন রাসুলে পাক 
 স্পষ্টভাবে এই কাজ থেকে নিষেধ করেছেন, তখন কোনো মসজিদের ইমাম তো দূরের কথা, যুগের শ্রেষ্ঠ ইমামও তাঁর আদেশ অমান্য করতে পারেন না।


যদি কেউ হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ হয়, তাকে হাদীস ও শরীআতের বিধান জানিয়ে দিতে হবে। কিন্তু জেনে-বুঝে যদি কেউ এমন কথা বলে, তাহলে তার নিজের ঈমান নিয়ে চিন্তা করা উচিত। দ্বীনে সহজসাধ্যতা ও কঠোরতার ভারসাম্য সবচেয়ে ভালো জানেন আল্লাহ্ পাকের প্রিয় রাসুল 
, এবং রাসূলে পাক  এর বরকতেই ফকীহগণ তা জেনেছেন এবং উম্মতে মুসলিমাদের জানিয়েছেন। জেনেবুঝে এমন আচরণ করা “তাকাব্বুর” (অহংকার) এর আলামত; কেননা নবী করিম  অহংকার এর সংজ্ঞায় এরূপ ইরশাদ করেছেন: “অহংকার হলো মানুষকে তুচ্ছ মনে করা এবং সত্য/হক্ব কথা গ্রহণ না করা।”


নিঃসন্দেহে দ্বীনে সহজসাধ্যতা রয়েছে, যেমন আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন:


یُرِیْدُ اللّٰهُ بِكُمُ الْیُسْرَ وَ لَا یُرِیْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ


অর্থ: “আল্লাহ্ তোমাদের ওপর সহজই চান, এবং তোমাদের ওপর ক্লেশ চান না।” [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত ১৮৫]


অপর এক আয়াতে ইরশাদ করেন:


لَا یُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا


অর্থ: “আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আরোপ করেন না।” [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত ২৮৬]


স্বয়ং নবী করিম  ইরশাদ করেছেন: أمرت أن أسجد على سبعة، لا أكف شعرا ولا ثوبا
অর্থ: “আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে আমি সাত অঙ্গে সিজদা করব এবং আমার চুল বা কাপড় গুটাব না।”[1] 
[সহিহ্ বুখারী, খণ্ড ১, باب لا يكف ثوبه في الصلاة, পৃষ্ঠা ১৬৩]


  • আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম হালবি رَحْمَۃُاللہ تَعَالٰی عَلَیْہِ [ওফাত: ৯৫৬ হি./১৫৪৯ খ্রিঃ] লিখেছেন:

 يكره أن يكف ثوبه وهو في الصلاة أو يدخل فيها وهو مكفوف كما إذا دخل وهو مشمر الكم أو الذيل۔ 

অর্থাৎ: “নামাযের অবস্থায় কাপড় গুটানো মাকরূহ। একইভাবে যদি কেউ নামায শুরুই করে গুটানো কাপড় পরে, যেমন হাতা বা জামার নিচের অংশ গুটানো অবস্থায়, তবুও তা মাকরূহ।”

[غنية المتملّي شرح منية المصلي, পৃ. ৩৪৮]


আল্লামা আলাউদ্দিন হাস্কাফী رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ [ওফাত: ১০৮৮ হি./১৬৭৭ খ্রিঃ] লিখেছেন:

"کرہ کفہ অর্থাৎ কাপড় গুটানো মাকরূহে তাহরিমি।"

[দূররে মুখতার মা’আ রদ্দুল মুখতার, ২/৪৯০]


এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ [ওফাত: ১২৫২ হি./১৮৩৬ খ্রিঃ] লিখেন:

حرر الخير الرملي ما يفيد أن الكراهة فيه تحريمية۔

“আল্লামা খাইরুদ্দীন রামলি رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ যা লিখেছেন, তা প্রমাণ করে যে এটি মাকরূহে তাহরিমি।”

[রাদ্দুল মুখতার মা’আ দুররে মুখতার, ২/৪৯০]


ইমামে আহলে সুন্নাত, ইমাম আহ্‌মাদ রাযা খান رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ এর কাছে কাফে সাওব এর একটি ধরণ অর্থাৎ নামাযের সময় হাতার অর্ধেক কবজির ওপরে পর্যন্ত ভাঁজ করে নামায পড়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে লিখেন: “নিঃসন্দেহে এটি মাকরূহ, এবং তা অত্যন্ত কঠোর মাকরূহ। মাযহাবের সব ফিক্বহী গ্রন্থে বলা হয়েছে: ‘کُرِهَ کَفَّهُ’ কাপড় গুটানো মাকরূহ। তাই নামাযের আগে হাতা খুলে নেওয়া আবশ্যক, যদিও তার একটি রাকাত ছুটে যায়। যদি কেউ হাতা গুটিয়ে নামায পড়ে, তবে পুনরায় নামায আদায় করা আবশ্যত। کما ھو حکم صلاۃ ادیت مع الکراھۃ کمافی الدر وغیرہ ۔ যেমন প্রত্যেক ওই নামাযের হুকুম যা মাকরূহ ভাবে আদায় করা হয়েছে।” [ফাতাওয়া রাযাভিয়াহ্‌, ৭/৩০৯]


খালীল'এ মিল্লাত, মুফতি মুহাম্মদ খালীল খান কাদেরী বারকাতি رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ লিখেন: “শালওয়ারের নিচের অংশ ভাঁজ করা বা উপরের দিক থেকে গুটিয়ে নেওয়া দুটি ‘কাফে সাওব’ তথা কাপড় ফোল্ড করা বা গুটিয়ে নেওয়ার অন্তর্ভূক্ত। আর ‘কাফে সাওব’ তথা কাপড় গুটানো মাকরূহ এবং এ অবস্থায় নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমি, এবং পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব। কারণ এতে কাপড়ের ব্যবহার স্বাভাবিক নিয়মের বিপরীত করা হয়। যেমন ফতোয়া আলমগিরিতেও এভাবে উল্লেখ আছে।” [ফাতাওয়া খলিলিয়াহ্, ১/২৪৬]


وَاللہُ اَعْلَمُ عَزَّوَجَلَّ وَرَسُوْلُہ اَعْلَم صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

জবাব প্রদান -
মুফতী মুহাম্মাদ ক্বাসিম আত্তারী 
حَفِظَهُ اللهُ تَعَالَى
দারুল ইফতা আহ্‌লে সুন্নাত, দাওয়াত’এ ইসলামী, পাকিস্তান।


[1] Sahih Bukhari Sharif - Hadith# 809, 810 & 812

---
বাংলা অনুবাদ - হামীম রেযা

Next
This is the most recent post.
Previous
Older Post
Top