হাদীস নং ৯

হযরত রিফা‘আ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: 
“আমরা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আগমন করতে লাগলাম, এমনকি যখন আমরা ‘আল-কাদীদ’ নামক স্থানে পৌঁছালাম, তখন আমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক তাদের পরিবার-পরিজনের নিকট যাওয়ার জন্য তাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করতে শুরু করল এবং তিনি তাদেরকে অনুমতি প্রদান করলেন; অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ভাষণ দেয়ার জন্য) দাঁড়ালেন, তারপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলেন, অতঃপর তিনি বললেন: “লোকজনের কী অবস্থা হল, গাছের যে অংশ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সম্পৃক্ত, অপর অংশের চেয়ে তাদের নিকট গাছের সেই অংশ অধিক অপছন্দনীয়; আর আমরা সেই সময় সম্প্রদায়ের সকল লোককে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেলাম। জনৈক ব্যক্তি বলল: এর পরেও যে ব্যক্তি আপনার নিকট অনুমতি চাইবে, সে তার বোকামীর জন্যই চাইবে; অতঃপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তিনি বললেন: “যখন আমি আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিব, তখন যে বান্দা মনে-প্রাণে এই সাক্ষ্য দিয়ে মারা যাবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, অতঃপর ঠিক সেই অনুযায়ী সে কাজ করে, তাহলে সে জান্নাতের পথেই চলে; আর তিনি বলেন: “আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার (৭০,০০০) উম্মত বিনা হিসাবে কোন শাস্তি ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর আমি অবশ্যই আশা করি যে, তারা তাতে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা এবং তোমাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী-পরিজন ও সন্তান-সন্ততীর মধ্য থেকে যারা সৎকর্ম করে, তারা জান্নাতের মধ্যে আবাসগৃহ তৈরি করবে; আর তিনি বললেন: যখন রাতের অর্ধেক অতিবাহিত হয় অথবা তিনি বলেছেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং তারপরে বলেন: আমি আমার বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করব না; কে আছো আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব; কে আছো আমার নিকট দো‘আ করবে, আমি তার দো‘আ কবুল করব; কে আছো আমার নিকট কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব, এভাবে করে শেষ পর্যন্ত উষার আলো উদ্ভাসিত হয়ে সকাল হয়ে যাবে।”

দলীলঃ 

১. আহমদ ৪/১৬, 
২. আত-তায়ালাসী ১/২৭, 
৩. ইবনু খুযাইমা পৃ. ১৩২, 
৪. ইবনু হিব্বান ১/২৫৩, 
৫. তাবারানী, আল-কাবীর ৫/৪৩, 
৬. আন-নেহায়া ২/১০৮

হাদীস নং ১০

হযরত আবূ সা‘ঈদ আল-আনমারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর প্রতি হাজার উম্মত সুপারিশ করবে আরও সত্তর হাজার উম্মতের জন্য; অতঃপর আমার প্রতিপালক তাঁর দুই হাতের তালু দ্বারা তিন মুষ্টি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” কায়েস অনুরূপ বলেছেন; অতঃপর আমি আবূ সা‘ঈদকে বললাম: আপনি কি এই হাদিসটি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন? জবাবে সে বলল: হ্যাঁ, আমি আমার নিজ কানে শুনেছি এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে; আবূ সা‘ঈদ বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “আর এটা আল্লাহ চায় তো তিনি আমার উম্মতের (সকল) মুহাজিরকে শামিল করবেন এবং আল্লাহ তার বাকিটা পূর্ণ করবেন আমাদের বেদুঈনদের মধ্য থেকে।”
দলীলঃ (ইবনু আবি ‘আসেম, আস-সুন্নাহ ২/৩৮৫, আল-ইসাবা)

হাদীস নং ১১
--------------
হযরত যায়েদ ইবন সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আবূ সালামকে বলতে শুনেছেন, আমার নিকট হযরত ‘আমের ইবন যায়েদ আল-বাকালী হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত ‘উতবা ইবন আবদ আস-সুলামী (রাঃ)কে বলতে শুনেছেন:
“জনৈক আরব বেদুইন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করল, তারপর সে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: আপনার হাউযটি কোন ধরনের, যার ব্যাপারে আপনি আলোচনা করেন? জবাবে তিনি বলেন: “তা হল বায়দা থেকে বসরা পর্যন্ত দূরত্বের মত বিস্তৃত; অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য তার প্রান্তদেশকে সম্প্রসারিত করবেন, ফলে তাঁর সৃষ্ট কোন মানুষ জানতে পারবে না তার দুই প্রান্তের সীমানা কোথায়; তিনি (উতবা) বলেন: অতঃপর ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিলেন; অতঃপর তিনি (নবীজী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেন: “হাউযের কিনারে ঐসব মুহাজির ফকীরগণ ভিড় করবে, যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে লড়াই করে এবং আল্লাহ তা‘আলার পথে মৃত্যুবরণ করে।” আর (উতবা বা আরব বেদুইন বলেন) আমি আশা করি আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তার কোন এক প্রান্তে অবতরণ করাবেন, অতঃপর আমি তার থেকে পান করব; অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, বিনা হিসাবে আমার সত্তর হাজার উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে; অতঃপর প্রত্যেক হাজার আরও সত্তর হাজারের ব্যাপারে সুপারিশ করবে; অতঃপর তিনি তাঁর দুই হাতের তালুর মাধ্যমে (আমার উম্মতের মধ্য থেকে) তিন মুষ্টি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” অতঃপর ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিলেন; তারপর তিনি (নবীজী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেন: প্রথম সত্তর হাজারকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততী ও আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারে সুপারিশ করার সুযোগ দিবেন।” আর (উতবা বা আরব বেদুইন বলেন) আমি আশা করি আল্লাহ তা‘আলা আমাকে শেষ তিন মুষ্টির কোন একটার মধ্যে শামিল করবেন। আর আরব বেদুঈন বলল: হে আল্লাহর রাসূল! তাতে কি ফলমূল আছে? জবাবে তিনি বললেন: না, তাতে ‘তুবা’ নামক একটি বৃক্ষ আছে, তা ফিরদাউস নামক জান্নাতের উপযোগী। সে বলল: আমাদের দেশের কোন বৃক্ষের সাথে তার সাদৃশ্যতা রয়েছে? জবাবে তিনি বললেন: তোমাদের দেশের কোন গাছের সাথেই তার মিল নেই, তবে তুমি কি শাম দেশে গিয়েছ? জবাবে সে বলল: না, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন: “নিশ্চয়ই তা শাম দেশের ‘জূযা’ নামক বৃক্ষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তা এক কাণ্ডের উপর অঙ্কুরিত উদ্ভিদ এবং তার উপরিভাগ ছড়িয়ে যায়।” সে বলল: তার মূলের বড়ত্ব কী পরিমাণ? তিনি বললেন: “যদি পরিপূর্ণ চার বছরের তোমার পরিবারের একটি উট অনবরত সে বেষ্টনীতে ভ্রমণ করে, তবে সেটার কণ্ঠনালী বৃদ্ধ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু তার শেষ পর্যন্ত যেতে পারবে না।” সে বলল: তাতে কি আঙ্গুর ফল থাকবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে বলল: তার মধ্যকার আঙ্গুরের কাঁদি বা গুচ্ছের বড়ত্ব কেমন? তিনি বললেন: “বিরামহীন গতিতে চলমান একটি কাকের এক মাসের রাস্তার সমপরিমাণ।” সে বলল: তার দানার বড়ত্ব কেমন? তিনি বললেন: তোমার পিতা কি কখনও বড় ধরনের পাহাড়ী বকরা (পুরুষ ছাগল) জবাই করেছে? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: “অতঃপর সে কি তার চামড়া খসিয়েছে, তারপর তা তোমার মাকে দিয়ে বলেছে যে, তুমি এটা আমাদের জন্য প্রক্রিয়াজাত কর, তারপর তার থেকে আমাদের জন্য একটি বালতি প্রস্তুত কর, যাতে আমরা তা থেকে তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারি? সে বলল: হ্যাঁ। (অর্থাৎ সেটার দানা এতটাই বড় হবে।) সে বলল: “নিশ্চয়ই এই দানা আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে পরিতৃপ্ত করবে? রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: হ্যাঁ, তোমার গোটা বংশধরকে পরিতৃপ্ত করবে।”
দলীলঃ (আল-মু‘জামুল আওসাত (المعجم الأوسط), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৬, তাবারানী, আল-ফাসাবী, আল-মা‘রেফাতু ওয়াত তারিখ (المعرفة و التاريخ), ২/৩৪১)

হাদিস নং ১২ 

তিবরানী, বায়হাকী, আবূ নয়ীম ও ইবনে আসাকির কালতান ইবনে আসেম (রাঃ) থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, 
আমরা নবী কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আগমন করল। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি তাওরাত পড়েছ? সে বললঃ হ্যাঁ। আবার প্রশ্ন করলেনঃ ইনজীলও পড়েছ? সে বললঃ হ্যাঁ। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি তাওরাত ও ইনজীলে আমার আলোচনা পেয়েছ? লোকটি বললঃ হ্যাঁ হুবহু আপনার অভ্যাস ও আপনার আপাদমস্তক অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। আমাদের ধারণা ছিল যে, এই শেষ নবী আমাদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবেন। আপনার আবির্ভাবের পর আমাদের আশংকা হয় যে, আপনিই হয়তো সেই নবী। কিন্তু অনেক চিন্তা-ভাবনার পর জানা গেল যে, আপনি সেই নবী নন। কেননা, আমাদের কিতাবে আছে যে, সেই নবীর সঙ্গে সত্তর হাজার উম্মত এমন থাকবে যে যারা বিনা হিসাবে-নিকাশে বেহেশত পাবে। আপনার সঙ্গে সামান্য লোক রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সেই আল্লাহর কসম, যাঁর কব্জায় আমার প্রাণ। আমিই সেই প্রতিশ্রুত নবী। বিনা হিসাবে যারা বেহেশতে যাবে, তারা আমারই উম্মত। আর তারা সত্তর হাজার কেন, সত্তর হাজারেরও অনেক বেশি হবে।
দলীলঃ (খাসায়েসুল কুবরা, ১ম খন্ড, পৃ. ৩০)

হাদীস নং ১৩

হযরত হুযাইফা (রাঃ) বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দৃষ্টির আড়াল হলেন। তারপর আর বের হলেন না। এমনকি আমরা ধারণা করলাম, তিনি বুঝি আর বেরই হবেন না। যখন বের হলেন, তখন এমনই এক সেজদা দিলেন যে, আমরা ধারণা করলাম যে ঐ অবস্থায় বুঝি তাঁর জান কবজ হয়ে গেছে। এরপর যখন তিনি মাথা উঠালেন, তখন বললেন— আমার প্রভু আমার উম্মত সম্পর্কে আমার পরামর্শ চাইলেন— আমি তাদের সাথে কি ব্যবহার করতে পারি। আমি উত্তর দিলাম, আপনি যা চাইবেন, হে প্রভু! তারা তো আপনারই সৃষ্টি, আপনারই বান্দা। এরপরও তিনি দ্বিতীয় বার আমার অভিমত চাইলেন। আনিও আগের মতই জবাব দিলাম। তখন তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি আপনাকে আপনার উম্মতের ব্যাপারে শরমিন্দা করব না। আরও জানালেন যে, সর্ব প্রথম আমার উম্মত থেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে ৭০ হাজার লোক। প্রতি হাজারের সাথে আরও ৭০ হাজার করে— তাদের হিসেব-নিকেশ হবে না। তারপর আমার কাছে বলে পাঠালেন, দোয়া করুন, কবুল হবে। তখন আমি তাঁর দূতকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার প্রভু কি আমি যা চাইব তা-ই দিবেন? তিনি বললেন, আপন্র কাছে আমাকে তো দিতেই পাঠিয়েছেন। হ্যাঁ, আমার প্রভু আমাকে দিয়েছেন, তবে ফখর করি না। আমার আগে পিছে কোন গুনাহ নাই বলে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন, অথচ আমি চলছি ফিরছি, সুস্থ সবলভাবে বেঁচে আছি। আমাকে এ নিশ্চয়তাও দিয়েছেন যে, আমার উম্মত ভুখা থাকবে না অথবা পরাজিত হবে না। আর আমাকে জান্নাতের কাওসার দিয়েছেন যা আমার চৌবাচ্চায় বইবে, আমাকে দিয়েছেন ইজ্জত ও বিজয় আর এমন এক ভীতি সঞ্চারী প্রভাব যা আমার উম্মতের এক মাসের পথ আগে থেকে শত্রুর মনে ত্রাসের সঞ্চার করবে। আমাকে আরও মর্যাদা দিয়েছেন যে, আমি সর্বপ্রথম নবী যিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আমি ও আমার উম্মতের জন্য হালাল করে দিয়েছেন যেগুলোর ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের উপর কঠোরতা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের জন্য কোন অসুবিধা রাখেন নি।
দলীলঃ 
১। মাজমাউয্‌ যাওয়ায়েদ, খঃ ১০, পৃ. ৬৪
২। সাইয়্যেদ ইউসুফ হাশেম রেফায়ীঃ আহ্‌লে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের দলীল, ২য় অধ্যায়, নবী মুহাম্মদের (সঃ) সাথে আল্লাহর পরামর্শ, পৃ. ২৫-২৬


হাদীস নং ১৪

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানবমন্ডলীকে একটি ময়দানে একত্রিত করা হবে। তখন একজন ঘোষক এই ঘোষণা করবে যে— এ সকল লোকেরা কোথায় যারা (রাতে) আরামের বিছানা থেকে নিজেদের পাশকে দূরে রেখেছিল? তখন অল্পসংখ্যক লোক উঠে দাঁড়াবে এবং তারা বিনা হিসেবে জান্নাতের প্রবেশ করবে। অতঃপর অবশিষ্ট সকল মানুষ হতে হিসেব নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে।
দলীলঃ (বায়হাকীঃ শোআবুল ঈমান, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীসঃ ৫২০৮)

[বিঃদ্রঃ উপরোক্ত হাদীসে অল্পসংখ্যক বলতে শুধুমাত্র কঠোর রিয়াযত-সাধনাকারী, রাত্রি বেলায় আল্লাহর স্মরণকারী এবং ইবাদতকারী লোক-কেই বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য হাদীস শরীফে বর্ণিত ৭০ হাজার বা ৭০ লক্ষ লোক এখানে উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ এই বিশেষ ইবাদতকারী বান্দাগণ উক্ত বিশাল (৭০ হাজার বা ৭০ লক্ষ) উম্মতেরই অংশ।]

হাদীস নং ১৫

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আমাকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমার উম্মতের চার লক্ষ ব্যক্তিকে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আনাদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করুন। তখন তিনি বললেন, ‘এ পরিমাণ’-এই বলে তিনি উভয় হাত একত্রিত করে মুষ্টি (দু’হাতের করতল) একত্রিত করলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করুন। এবারও রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ (দু’হাতের) মুষ্টি একত্রিত করে দেখিয়ে দিলেন, আরও এ পরিমাণ। তখন হযরত উমর (রাঃ) বললেন, হে আবু বকর! আমাদের নিজ নিজ অবস্থায় থাকতে দাও। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে উমর! এতে তোমার কি ক্ষতি যদি আল্লাহ ইচ্ছে করেন। তবে তাঁর সব সৃষ্ট মাখ্‌লুককে তিনি এক মুষ্টিতেই জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন (অর্থাৎ দু’হাতের সম্মিলিত মুষ্টির দরকার হবে না)। এ কথা শুনে তখন রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উমর সত্যি বলেছে।
দলীলঃ (শরহে সুন্নাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীসঃ ৫২৪০)



 
Top