#উঁচু_কবর_দেখতেই_সেটাকে_মাটির_সমান_করে_দেবে� (ব্যাখ্যাসহ)
❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬০৩)]
○ অধ্যায়ঃ [ মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা ]

[ وعن ابى الهياج الاسدى قال قال لى على الا ابعثك على ما بعثنى عليه رسول الله ﷺ ان لا تدع تمثالا الا طمسته ولا قبرا مشرفا الا سويته. ] - (رواه مسلم)

হযরত আবূ হাইয়্যাজ আসাদী [رضي الله عنه] (টীকাঃ ১) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে হযরত আলী বলেছেন, "আমি কি তোমাকে ওই কাজে প্রেরণ কররবো না, যে কাজে আমাকে রাসূলাল্লাহ [ﷺ] প্রেরণ করেছিলেন?" তা হচ্ছে তুমি কোন প্রতিমা (তাস্ভীর) দেখতেই তা বিলীন করে ফেলবে. আর কোন উঁচু কবর দেখতেই সেটাকে মাটির সমান করে দেবে। (টীকাঃ ২)
[ মুসলিম ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ #MustShAre
    ___________________________________

◇ টীকাঃ ১.
তাঁর নাম হাইয়্যান ইবনে হুসাঈন। উপনাম আবুল হাইয়াজ। বণূ আসাদ গোত্রের লোক। তিনি হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের কেরানী ছিলেন। তিনি প্রসিদ্ধ তাবে'ঈ। মানসূর ইবনে হাইয়্যানের পিতা।

◇ টীকাঃ ২.
অর্থাৎ যে কাজের জন্য নবী করীম [ﷺ] আমাকে প্রেরণ করেছিলেন, ওই কাজের জন্য আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি। 'তাসভীর' (ফটো) ও 'মূর্তিগুলোকে নিশ্চিহ্ন করবে, উঁচু উঁচু কবরগুলোকে ভেঙ্গে মাটির সমান করে দেবে। স্মর্তব্য যে, #এখানে_কবরগুলো_দ্বারা_ইহুদী_ও_খৃষ্টানদের_কবর_বুঝায়, #মুসলমানদের_নয়। এটাও এ কয়েকটা কারণে-

এক. হুযূর-ই আন্ওয়ার [ﷺ] -এর পবিত্র যুগে সাহাবা-ই কেরামের #ক্ববরগুলো_উঁচু_কিভাবে_হয়ে_গেলো, #যেগুলো_ভেঙ্গে_সমতল_করার_জন্য হুযূর [ﷺ] হযরত আলীকে প্রেরণ করেছেন? কেননা, ওইসব বুযুর্গের কাফন-দাফন হুযূর [ﷺ] -এর উপস্থিতিতে এবং তাঁরই অনুমতিক্রমে সম্পন্ন হতো।

দুই. ক্ববরের সাথে ফটো এবং মুর্তির কিসের সম্পর্ক? #মুসলমানদের_ক্ববরের_উপর_না_ফটো_থাকে, #না_প্রতিমা। অবশ্য খৃষ্টানদের কবর অতি উঁচু হয় এবং সেগুলোর উপর মৃতের মূর্তি এবং ফটোও থাকে।

তিন. মুসলমানদের ক্ববর মাটির সমান করা যেতে পারে না; #বরং_এক_বিঘত_পরিমাণ_কিংবা_এক_হাত_উঁচু_রাখা_হয়। আর এখানে তো সমান করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চার. একথার সমর্থন বোখারী শরীফের ওই হাদীস শরীফ দ্বারা হয়, যা মসজিদে নববী শরীফের নির্মাণ কাজের বর্ণনা সম্বলিত অধ্যায়ে রয়েছে। তাতে বর্ণিত হয়েছে যে, #হুযূর_ﷺ_মুশরিকদের_ক্ববরগুলোকে_উপড়ে_ফেলে_দেওয়ার_নির্দেশ_দিয়েছেন। অতঃপর উপড়ে ফেলা হয়েছে। ওই কাজের জন্য হযরত আলী মুরতাদ্বাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।

পাঁচ. বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'ফাত্হুল বারী'তে এ হাদীসের উপর শিরোনাম স্থির করা হয়েছে- 'জাহিলী যুগের মুশরিকদের ক্ববরগুলোকে কি উপড়ে ফেলা যায়? অর্থাৎ তাদের ব্যতীত, নবীগণ [عليهم السلام] ও তাঁদের অনুসারীদেরও নয়। কেননা, তাঁদেরকে তাঁদের ক্ববর থেকে উপড়ে ফেলে দেওয়ার মধ্যে তাঁদের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়।

ছয়. ওই 'ফাত্হুল বারী'তে একটু দূরে (পরে) গিয়ে উল্লেখ করেছেন-- হাদীস শরীফ থেবে বুঝা গেলো যে, মালিকানাধীন কবরস্থানে 'ক্ষমতা প্রয়োগ করা' (সংস্কারমূলক কাজ করা) জায়েয; আর পুরানা কবর উপড়ে ফেলাও জায়েয, এ শর্তে যে, যদি ওই ক্ববরগুলো সম্মাণিত না হয়।

সাত. মুসলমানদের কবরকে উঁচু করে তৈরী করা নিষিদ্ধ। কিন্তু যদি তৈরী করে ফেলা হয়, #তবে_সেটাকে_ভেঙ্গে_ফেলা_নাজায়েয। কারণ, তাতে ক্ববর ও ক্ববরবাসীর প্রতি অবমাননা করা হয়। যখন মুসলমানদের ক্ববরে হেলান দেওয়া, সেটার উপর চলাফেরা নিষেধ, #তখন_সেটার_উপর_কোদাল_ইত্যাদি #চালনা_করা_কিভাবে_জায়েয_হবে? যেমনঃ ছোট সাইজের ক্বোরআন শরীফ ও (ছোট করে) কপিসমূহ ছাপানো নিষিদ্ধ। কিন্তু যদি ছেপে যায়, তবে সেগুলো জ্বালিয়ে ফেলা হারাম।

আট. এটা বোখারী শরীফে 'জানা-ইয' শীর্ষক পর্বে 'আল-জারীদ আলাল ক্ববর' নামক পরিচ্ছেদে 'তা'লীক্ব' (সনদবিহীন অবস্থায়) রয়েছে। হযরত খা-রিজাহ্ বলেছেন, আমরা হযরত ওসমান [رضي الله عنه]'র যুগে ছিলাম। আমাদের মধ্যে বড় বাহাদুর ছিলেন ওই ব্যক্তি, যে হযরত ওসমান ইবনে মায্'ঊনের ক্ববরের উপর লাফিয়ে পার হতে পারতো। বুঝা গেলো যে, ওই ক্ববর এত উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছিলো যে, সেটা লাফিয়ে পার হওয়া কঠিন ছিলো। আর এ কবর হুযূর [ﷺ] নিজেই তৈরী করেছিলেন।

নয়. এখন মিশকাত শরীফে হাদীস আসবে, নবী করিম [ﷺ] হযরত ওসমান ইবনে মায্'ঊনের ক্ববরের #মাথার_দিকে_একটি_উঁচু_পাথর_স্থাপন_করেন, যার ব্যাখা হযরত খারিজার বর্ণিত হাদীস করে দিয়েছে। অর্থাৎ সেটা এতো উঁচু ছিলো যে, সেটার উপর দিয়ে লাফিয়ে পার হওয়া কঠিন ছিলো।

যে কোন অবস্থায়, এখানে যদি মুসলমানদের ক্ববর বুঝানো হয়, তবে এ হাদীস বহু হাদীসের পরিপন্থী হবে। আর তাতে এমন সব সমস্যা সৃষ্টি হবে, যেগুলোর সমাধান করা যাবে না।

আফসোস! নজদীরা এ হাদীস শরীফকে আড়াল করে পবিত্র দু'হেরেমে শীর্ষস্থানীয় সাহাবা-ই কেরাম ও পবিত্র আহলে বায়তের ক্ববরগুলোকে পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলেছে; কিন্তু ওই অঞ্চলে আমেরিকার তেল কোম্পানীর, যাদেরকে ওই নজদীরা তেলের ঠিকাদারী দিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা ওখানে মারা গিয়েছে, তাদের (ওইসব ইংরেজ) বড় বড়, উঁচু উঁচু ক্ববর রয়েছে, কিন্তু সেগুলোতে এরা হাতও লাগায় নি। অর্থাৎ যা ভাঙ্গার জন্য হাদীস ছিলো, তজ্জন্য হাদীস অনুসারে আমল করা হয় নি, বরং মুসলমানদের কবরের উপর যুলম্ করা হয়েছে।

● হাদীস শরীফের এর ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ
��f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ২য় খন্ড, পৃ. ৫৯৯, ৬০০ হাদীস নং-১৬০৩ এর টীকাঃ ৫,৬ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম। সবুজ ভবন, খাজা রোড, কুলগাঁও, ডাকঘর-জালালাবাদ-৪২১৪, বায়েজীদ, চট্টগ্রাম। ফোনঃ ০৩১-৬৮৪২২৪, মোবাইলঃ ০১১৯৯-২২৪৪০৩, ০১৮৬৮-০৩১৬২১]

 
Top