মুহাদ্দিস পরিচিতিঃ

ইমাম জালাল উদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর আস-সুয়ুতী (রাহঃ)জন্ম ৮৪৯ হিজরীর ১লা রজব মােতাবেক ১৪৪৫ খৃষ্টাব্দের ৩রা

অক্টোবর তারিখে মিসরের রাজধানী কায়রােতে। তাঁর পিতা (মৃ-৮৫৫ হিঃ) ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম ও কাজী। কায়রােতে খলীফার প্রাসাদে ইমামের দায়িত্ব পালনকালে সিয়ুতীর (রাহঃ) জন্ম হয়। সে যুগের দুইজন সেরা আলেম তাঁর মহিমাময় জীবন গঠনের মূল স্থপতি ছিলেন। শিশুকালে পবিত্র কোরআন হেফজ করার পর পরই পিতা শায়খ কামাল উদ্দীনের ইন্তেকাল হয়ে যাওয়ার পরও তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি। তিনি হাদীস শাস্ত্রে ইবনে হাজার আসকালানীর (রাহঃ) নিকট থেকে সনদপ্রাপ্ত ছিলেন। হাদীস, তাফসীর, উলুমুল- কোরআন, ফেকাহ, ইতিহাস, দর্শনসহ দ্বীনি এলেমের সবক’টি শাখাতেই সুয়ুতীর (রাহঃ) অসাধারণ বুৎপত্তি ছিল এবং সব ক’টি বিষয়েই তিনি অত্যন্ত মূল্যবান রচনা রেখে গেছেন। | বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর জালালাইন শরীফের প্রথম অর্ধাংশ জালালুদ্দীন সিয়ুতীর (রাহঃ) রচনা। কথিত আছে যে, মাত্র চল্লিশ দিনের মধ্যে তিনি এই কিতাবটির রচনা সমাপ্ত করেন। এ ছাড়াও হাদীস, তাফসীর, ফেকাহ, কোরআনের তত্ত্বজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতি দ্বীনি এলেমের গুরুত্বপূর্ণ সবক'টি বিষয়েই তাঁর রচিত মূল্যবান গ্রন্থ সারা দুনিয়াতেই অত্যন্ত যত্নের সাথে পঠিত হয়ে থাকে । সুয়ুতীর (রহঃ) রচিত পুস্তক- পুস্তিকার সংখ্যা সহস্রাধিক। আল্লামা সুয়ুতীর (রাহঃ) জীবনীকার শামসুদ্দীন দাউদী (মৃ ৯৪৫ হিঃ) লেখেছেন যে, হাদীস, তাফসীর, ইতিহাস এবং দ্বীনি এলেমের অন্যান্য শাখায় সূয়ুতী (রাহঃ) ছিলেন তার যুগের সর্বশ্রেষ্ট বিশেষজ্ঞ। তার তুল্য আর কেউ ছিলেন না। তাফসিরে নূরুল কোরানের লিখক মাওলানা আমিনুল ইসলাম (সংকলিত সপ্ন যােগে প্রিয় নবী (সাঃ) এর মধ্যে উল্লেখ করেন তিনি সপ্ন যােগে হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহিত ৭৭ বার সাক্ষাত লাভ করেন | এর মধ্যে ২২বার বা ৩৫বার জাগ্রত অবস্থায় সাক্ষাত লাভ করেন। | সুয়ুতীর (রাহঃ) পূর্বপুরষগণ ছিলেন ইরানের অধিবাসী। আস-সুয়ুত’ নামক জনপদে তারা বসতি স্থাপন করেছিলেন বলেই তিনি নামের সাথে সুয়ুতী লেখতেন। | সুয়ুতী (রাহঃ) কর্মজীবনের সূচনা করেছিলেন তখনকার মিসরের সর্বোচ্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার মাধ্যমে। কিন্তু ৯০৬ হিজরীতে অধ্যাপনা ত্যাগ করে আররােখা নামক একটি দ্বীপে বসবাস করে অবশিষ্ট জীবন গ্রন্থ রচনায় নিমগ্ন থাকেন। এখানেই ৯১১ হিজরীর ১৯শে জুমাদাল-উলা (খৃ ১৫০৫) ইন্তেকাল করেন।

 
Top