জুমার খুতবা
৩য় জুমা, সফর ১৪৩৯ হি, ১০ নভেম্বর-২০১৭
***************************************
প্রতিশ্রুত রাসুল হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
==========================================
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ. খতীব, মুসাফির খানা জামে মসজিদ, নন্দন কানন, চট্টগ্রাম।
بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين, أما بعد!

নবীগণের নবুয়্যাতের সত্যতার অন্যতম প্রমাণ হলো, পূর্ববর্তী নবীগণ কর্তৃক পরবর্তী নবীগণের আগমনের সুসংবাদ দেওয়া, বিশেষ করে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমনের সুসংবাদ। আল্লাহ তায়া’লা প্রত্যেক নবী-রাসুল থেকে অঙ্গিকার নিয়েছেন যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যদি তাঁদের জীবদ্দশায় প্রেরিত হন তবে তাঁর উপর ঈমান আনবেন এবং তাঁকে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগীতা করবেন। আল্লাহ তায়া’লা কোরআন পাকে এরশাদ করেনঃ
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ فَمَن تَوَلَّىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ “হে প্রিয় রাসুল! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের কথা, যখন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীগন থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এ কথার উপর যে, যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরন করবো; তারপর তোমাদের কাছে আমার মহান রাসুল আসবেন এবং তোমাদের নব্য়ুত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন, তখন তোমরা অবশ্য অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাঁকে সাহায্য করবে। অতপর আল্লাহ বলেন: তোমরা কি এ সব কথার উপর অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহন করে নিয়েছো (তখন) তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, আমরা অঙ্গিকার করছি। তিনি বললেন, তাহলে এবার তোমরা একে অপরের সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম। অতঃপর যে লোক এই ওয়াদা থেকে ফিরে দাঁড়াবে, সেই হবে নাফরমান। (আল ইমরান ৮১-৮২)

এ আয়াতে কারীমা থেকে প্রমানিত হয় যে, পবিত্র মিলাদুন্নবী তথা নবীজির শুভাগমনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। মিলাদুন্নবীর সুচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। রোজে আযলে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামেকে নিয়ে আল্লাহ তাআলা এই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন। নবীগনের মহাসম্মেলন ডেকে মিলাদুন্নবীর আয়োজক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তিনি নিজে ছিলেন মীরে মাজলিস বা সভাপতি। সকল নবীগন ছিলেন শ্রোতা।
ঐ মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের বেলাদাত, শান ও মান অন্যান্য নবীগনের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য-সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা। কোরআন মজিদের ৩য় পারা সুরা আলে এমরানে ৮১-৮২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঐ মিলাদুন্নবী মাহফিলেরই কথা উল্লেখ করেছেন। নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোগতা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।

সুতরাং মিলাদে মাহফিল আনুষ্ঠান হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত বা তরিকা। ঐ মজলিসে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামও উপস্থিত ছিলেন। ঐ মজলিসে স্বয়ং আল্লাহ নবীজীর শুধু আবির্ভাব বা মিলাদের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। সমস্ত নবীগন খোদার দরবারে দন্ডায় মান থেকে মিলাদ শুনেছেন এবং কিয়াম করেছেন। কেননা খোদার দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই। পরিবেশটি ছিল আদবের। মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং কিয়মকারীগন ছিলেন আন্বিয়ায়ে কেরাম।

অতপর প্রত্যেক নবী-রাসূল নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয়নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবিবের আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম তাঁর প্রিয় পুত্র ও প্রতিনিধি হযরত শীস আলাইহিস্ সালামকে নুরে মুহাম্মদীর তাযীম করার জন্য নিম্ন অসিয়ত করে গেছেন।

আদম আলাইহিস্ সালাম আপন পুত্র হযরত শীস আলাইহিস্ সালামকে লক্ষ্য করে বলেন:
واخرج ابْن عَسَاكِر عَن كَعْب الاحبار قَالَ ان الله انْزِلْ على آدم عصيا بِعَدَد الْأَنْبِيَاء وَالْمُرْسلِينَ ثمَّ اقبل على ابْنه شِيث فَقَالَ أَي بني انت خليفتي من بعدِي فَخذهَا بعمارة التَّقْوَى والعروة الوثقى فَكلما ذكرت الله فاذكر الى جنبه اسْم مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَإِنِّي رَأَيْت اسْمه مَكْتُوبًا على سَاق الْعَرْش وَأَنا بَين الرّوح والطين ثمَّ إِنِّي طفت السَّمَوَات فَلم أر فِي السَّمَوَات موضعا إِلَّا رَأَيْت اسْم مُحَمَّد مَكْتُوبًا عَلَيْهِ وَأَن رَبِّي اسكنني الْجنَّة فَلم ار فِي الْجنَّة قصرا وَلَا غرفَة إِلَّا اسْم مُحَمَّد مَكْتُوبًا عَلَيْهِ وَلَقَد رَأَيْت اسْم مُحَمَّد مَكْتُوبًا على نحور الْحور الْعين وعَلى ورق قصب آجام الْجنَّة وعَلى ورق شَجَرَة طُوبَى وعَلى ورق سِدْرَة الْمُنْتَهى وعَلى أَطْرَاف الْحجب وَبَين اعين الْمَلَائِكَة فَأكْثر ذكره فان الْمَلَائِكَة تذكره فِي كل ساعاتها (شرح الزرقاني على المواهب اللدنية بالمنح المحمدية. جـ৪ صـ২৩৮ الكتاب: الخصائص الكبرى. المؤلف: عبد الرحمن بن أبي بكر، جلال الدين السيوطي (المتوفى: ৯১১هـ) الناشر: دار الكتب العلمية – بيروت. جـ১ صـ১২-১৩)
“হে প্রিয় বৎস। আমার পরে তুমি আমার খলিফা। সুতরাং এই খেলাফতকে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় এক্বিনের দ্বারা মজবুত করে ধরে রেখো। আর যখনই আল্লাহর নাম যিকির (উল্লেখ) করবে তার সাথেই হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামও উল্লেখ করবে। তার কারন এ যে, আমি রূহ ও মাটির মধ্যবর্তী থাকা অবস্থায়ই তাঁর পবিত্র নাম আরশের পায়ায় (আল্লাহর নামের সাথে) লিখিত দেখেছি। এরপর আমি সমস্ত আকাশ ভ্রমন করেছি। আকাশের এমন কোন স্থান ছিলনা যেখানে হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম মুবারক অংকিত পাইনি। আমার রব আমাকে বেহেস্তে বসবাস করতে দিলেন। বেহেস্তের এমন কোন প্রাসাদ ও কামরা পাইনি যেখানে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম মুবারক ছিলনা। আমি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরকতময় নাম আরোও লিখিত দেখেছি সমস্ত হুরের স্কন্ধ দেশে, বেহেস্তের সমস্ত বৃক্ষের পাতায়, বিশেষ করে তুলা বৃক্ষের পাতায় পাতায়, পর্দার কিনারায় এবং ফেরেশতাগনের চোখের মনিতে ঐ নাম মুবারক অংকিত দেখেছি। সুতরাং হে শীস ! তুমি এই নাম বেশী বেশী করে জপতে থাক। কেননা, ফেরেস্তাগন পুর্ব হতেই এই নাম জপনে মশগুল রয়েছেন। ” ( জুরকানি শরীফ ২/২৩৮, খাসায়েস আল কুবরা: সুয়ূতী ১/১২-১৩ )।


হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম:
————————————
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম যখন আল্লাহর ঘর তৈরী করছিলেন, তখন ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদিদের মুসলমান হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লামের আবির্ভাব আরবে ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালমের বংশে হওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করেছেন।
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ“হে আমার রব ! তুমি (এই আরব ভুমিতে আমার ইসমাইলের
বংশে) তাদের মধ্য হতেই সেই মহান রাসুলকে প্রেরণ করো- যিনি তোমার আয়াত সমুহ তাদের কাছে পাঠ করে শুনাবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত(কোরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান) শিক্ষা দেবেন এবং (বাহ্যিক ও আত্বিক) অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন। (সুরা আল বাকারা ১২৯ আয়াত।
এখানে দেখা যায়, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৪০০০ বৎসর পুর্বেই মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব, তাঁর সারা জিন্দেগীর কর্ম তৎপরতা ও মানুষের আত্বার পরিশুদ্ধির ক্ষমতা বর্ননা করে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন। আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ الْكَلاعِيِّ ، أَنَّ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالُوا : ” يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَخْبِرْنَا عَنْ نَفْسِكَ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، أَنَا دَعْوَةُ أَبِي إِبْرَاهِيمَ ، وَبُشْرَى عِيسَى ، وَرَأَتْ أُمِّي حِينَ حَمَلَتْ بِي أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَ لَهَا قُصُورَ بُصْرَى مِنْ أَرْضِ الشَّامِ (المستدرك على الصحيحين, رقم الحديث৪১১১, جـ১ص৬০০. الطبقات الكبرى لابن سعد, رقم الحديث: ১৮৭, ২০০, ৩৩৬, ৩৫৯. جـ১ صـ৪৬, ৪৭, ৭১) تاريخ الطبري গ্ধ ذكر مولد رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رقم الحديث: ৩৭৯)
“আমি হযরত ইব্রহীমের আলাইহিস্ সালামের দোয়ার ফসল, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সুসংবাদ এবং আমার মা যখন আমাকে প্রসব করেন তখন তিনি দেখতে পেলেন যে তাঁর থেকে এমন একটি নূর প্রকাশিত হল যা তাঁর সামনে সিরীয়ার বুসরা শহরের প্রাসাদগুলো সুস্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত করে দিল।” (মুসতাদরাক ১/৬০০, হা-৪১১১, তাবাক্বাত ইবনু সাদ ১/৪৬,৪৭,৭১, হা-১৮৭, ২০০, ৩৩৬, ৩৫৯)
হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম:
—————————–
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম খাতেমুন নাবিয়্যীন ওয়াল মুরসালিন (সর্বশেষ নবী ও রাসুল)। হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম বনী ইসরাইলকে শেষ নবীর সুসংবাদ দিয়েছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের ৫৭০ বৎসর পুর্বে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আবির্ভাব। তিনি তাঁর উম্মত তথা হাওয়ারী (বনি ইসরাইল) কে নিয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিলাদ শরিফ পাঠ করেছেন। উম্মতের কাছে তিনি আখেরী জামানার পয়গম্বর হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের নাম মুবারক ও তাঁর সানা-সিফাত এবং আগমন বার্তা এভাবে বর্নণা করেছেন: وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ “হে আমার প্রিয় রাসুল! আপনি স্বরণ করুন ঐ সময়ের কথা, যখন মরিয়ম তনয় ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) বলেছেন: হে বনী ইসরাইল, আমি তোমাদের কাছে রাসুল হয়ে প্রেরিত হয়েছি। আমি আমার পুর্ববর্তী তওরাত কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং এমন এক মহান রাসুলের সুসংবাদ দিচ্ছি-যিনি আমার পরে আগমন করবেন এবং তাঁর নাম হবে আহমদ (সুরা আছ্ছফ ৬ আয়াত।)
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ “আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (আ-ল ইমরান, আয়াত-১৬৪)

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমনের সুসংবাদ বিদ্যমান ছিল তাওরাত ও ইঞ্জিলে। পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে তাঁর গুনাবলী এভাবেই বর্ণিত হয়েছে; যেন আহলে কিতাবগন তাঁর গুনাবলী দেখে তাঁকে চিনতে পারে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন:
الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ ۚ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنزِلَ مَعَهُ ۙ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“সে সমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী (আসল) নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। (আ’রাফঃ ১৫৭)

আহলে কিতাবরা আশা করত তারা হবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের উপর প্রথম ঈমান আনায়নকারী, যেহেতু তারা তাকে এমনভাবে জানত ও চিনত যেভাবে তারা নিজেদের সন্তানদেরকে জানত ও চিনত। আল্লাহ তায়া’লা তাদের সম্পর্কে বলেনঃ الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ ۖ وَإِنَّ فَرِيقًا مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ “আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি, তারা তাঁকে চেনে, যেমন করে চেনে নিজেদের পুত্রদেরকে। আর নিশ্চয়ই তাদের একটি সম্প্রদায় জেনে শুনে সত্যকে গোপন করে।“ (বাকারাঃ ১৪৬)

আল্লাহ তায়া’লা আরও এরশাদ করেনঃ وَلَمَّا جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ كِتَابَ اللَّهِ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ “যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রসূল আগমন করলেন যিনি ঐ কিতাবের সত্যায়ন করেন, যা তাদের কাছে রয়েছে, তখন আহলে কিতাবদের একদল আল্লাহর গ্রন্থকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল যেন তারা জানেই না।(বাকারাঃ ১০১)

এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ববর্তী উম্মতগন বিভন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহ ও বিপর্যয়কালে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের ওসীলা নিয়ে দোয়া করত এবং এতে তারা সফলও হত। আল্লাহ তায়া’লা কোরআন পাকে এরশাদ করেনঃ وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُم مَّا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ ۚ فَلَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَافِرِينَ যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এসে পৌঁছাল, যা সে বিষয়ের সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে এবং যাঁর ওসীলায় তারা পূর্বে কাফিরদের উপর বিজয় প্রার্থনা করত। অবশেষে যখন তাদের কাছে পৌঁছলেন তিনি যাঁকে তারা চিনত, তখন তারা তাঁকে চিনতে পারেনি এবং তারা অস্বীকার করে বসল। অতএব, অস্বীকারকারীদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (বাক্বরা, আয়াত ৮৯)

মহাগ্রন্থ আল কোরআন সে সুসংবাদের দিকে ইশারা দিয়েছে, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের নবুয়্যাতের সত্যতা প্রমাণে এটিকে দলিল হিসেবে পেশ করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ কাফেররা বলেঃوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَسْتَ مُرْسَلاً قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِندَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ
“আপনি প্রেরিত ব্যক্তি নন। বলে দিন, আমার ও তোমাদের মধ্যে প্রকৃষ্ট সাক্ষী হচ্ছেন আল্লাহ এবং ঐ ব্যক্তি, যার কাছে গ্রন্থের জ্ঞান আছে। (রা’দঃ ৪৩)

পূর্ববর্তী নবীদের এ সুসংবাদ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের উপরই প্রযোজ্য। তিনি সে রাসুল যার আগমনের বার্তা পূর্ববর্তীরা দিয়েছেন। কিন্তু আহলে কিতাবদের কতিপয় এ সত্য গোপন করেছে, তাদের পবিত্র গ্রন্থে যা ছিল তা অস্বীকার করল, একে তারা পশ্চাতে নিক্ষেপ করল, যেন তারা জানেই না।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত হলো রিসালাতের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ রিসালাতঃ مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا “মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। (আহযাবঃ ৪০) এ জমিন ও তার মধ্যকার যা কিছু আছে তা যতদিন টিকে থাকবে এ রিসালাতও ততদিন টিকে থাকবে।

 
Top