না’লাইন শরীফ
————
না’লাইন শরীফ কী ও না’লাইন শরীফের ফজিলত।
————————————–
রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জুতা মোবারককে নালাইনশরীফ বলা হয়। সেই নালাইনশরীফের আকৃতি বা নমুনা সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসশরীফে উল্লেখ রয়েছে। তাই যুগে যুগে আউলিয়ায়ে কেরামগণ সেই নালাইনশরীফের (তিমসাল) বা নকশা তৈরি করে নিজেরা ফয়েজ ও বরকত লাভ করেছেন এবং মুসলমানদেরকেও বিপদ আপদে তার ওসিলা গ্রহণ করার নসিহত করেছেন। অনেক আউলিয়ায়ে কেরাম উহার ফজিলত সম্পর্কে স্বতন্ত্র কিতাব ও বহু কবিতা রচনা করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাফেজ আল্লামা আহমদ মুকরি তিলমিসায়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তার প্রণীত কিতাবের নাম ফতহুল মু’তাআল ফি মদহে খাইরিন নি’আল।

না’লাইন শরীফের ফজিলত
——————–
উক্ত কিতাবে হাফেজ তিলমিসায়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিজের ব্যাপারে একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, আমার একবার সমুদ্রে ভ্রমণের সুযোগ হল। সফরে সাগরের এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিল যে জাহাজের যাত্রীদের সবার জীবন ধবংস হয়ে যাওয়ার উপক্রম এবং মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছিলেন। আমি এ মোবারক নকশাটি জাহাজের নাবিকের কাছে দিয়ে বললাম, আপনি এ মোবারক নকশার উসিলা দিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন। ঠিক এ মোবারক নকশার উসিলায় আল্লাহ তায়ালা কিছুণের মধ্যেই আমাদেরকে বিপদমুক্ত করে দিলেন।
হযরত ইমাম আবুল খায়ের মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আল যাজরী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ফজিলত সম্পর্কে যে কবিতা রচনা করেছেন নিম্নে সেই কবিতাটি অর্থসহ প্রদত্ত হল-
ياطالبا تمثال نعل نبيه- هاقد وجدت الى اللقاء سبيلا
فاجعله فوق الرأس واخضعن له-وتغال فيه واوله التقبيلا
من يدعىالحب الصحيح فانه-يثبت على ما يد عليه دليلا
অর্থাৎ হে নবীজীর পাদুকার নকশা মোবারকের অন্বেষণকারী তুমি এ নকশা পাওয়ার পথ অবশ্যই পেয়ে গেছ।
তুমি এ মোবারক নকশাটিকে মাথার উপর ধারণ কর ও তার প্রতি বিনয়ী হও এবং বারবার চুমু খাও এবং অধিক পরিমাণে বিনয় প্রকাশ কর।
যে ব্যক্তি নবীজীর প্রতি প্রকৃত মহব্বত রাখে সে যেন তার দাবি সম্পর্কে অবশ্যই দলিল পেশ করে।
সহীহ বোখারীশরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাছতালানী রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বরচিত মাওয়াহিবে লাদুনিয়া নামক কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৩৭ পৃষ্ঠায় তার ফজিলত সম্পর্কে বলেন-
قال ابو القاسم بن محمد ومما جرب من بركته ان من امسكه عنده متبرك به كان له امانا من بغى البغاة وغلبة العداة وحرزا من كل شيطان مارد وعين كل حاسد وان امسكته المراة الحامل بيمينها وقد اشتد عليها الطلق تيسر امرها بحول الله وقوته-
অর্থাৎ আবুল কাসেম বিন মুহাম্মদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নালাইনশরীফের পবিত্র নকশার পরীতি বরকত এই, যে ব্যক্তি তা নিজের কাছে রাখবে, সে ব্যক্তি জালিমের জুুলুম হতে, দুষমনের দুষমনী হতে শয়তানের শয়তানী হতে এবং হিংসুকের হিংসা হতে নিরাপদ থাকবে। গর্ভবতী নারী প্রসববেদনার সময় এ মোবারক নকশাটিকে ডান হাতে ধারণ করলে আল্লাহর রহমতে তার মুশকিল আসান হবে।
আল্লামা জারকানী রাদিয়াল্লাহু আনহু শরহে মাওয়াহিব নামক কিতাবের ৫ম খণ্ডের ৪৮ পৃষ্ঠায় নালাইনশরীফের পবিত্র নকশার ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন-
هذا التمثال اثر من اثار المصطفى
অর্থাৎ এই তিমসাল বা নকশা মোবরক নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিদর্শন চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ আলা হযরত আল্লামা ইমাম শাহ আহমদ রেজাখাঁন বেরলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া’ নামক কিতাবে আউলিয়ায়ে কেরাম ও সুফিয়ানে এজামের বর্ণিত ফাজায়েল সম্পর্কে যা লিখেছেন নিম্নে তা প্রদত্ত হল।
১। যে ব্যক্তি নালাইন শরীফের নকশাকে তাবাররুক হিসেবে নিজের কাছে রাখবে, সে জালিমের জুলুম হতে শয়তানের কুপ্রভাব হতে, হিংসুকের খারাপ দৃষ্টি হতে নিরাপদ থাকবে।
২। গর্ভবতী নারী প্রসববেদনার সময় এ নকশা মোবারক ডান হাতে রাখলে আল্লাহর রহমতে তার কষ্ট সহজে কেটে যাবে।
৩। এ নকশা মোবারক যার কাছে সর্বদা রাখবে, সে ব্যক্তি সমাজে সর্বজন শ্রদ্ধেয় থাকবে। তার স্বপ্নযোগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জিয়ারত নসিব হবে অথবা রওজাশরীফ জিয়ারত করার সৌভাগ্য লাভ করবে।
৪। যে লস্কর বা সৈন্যবাহিনীতে এ মোবারক নকশা সাথে থাকবে আল্লাহর ফজল ও করমে তারা পরাজিত হবে না। যে কাফেলায় এ নকশা মোবারকটি থাকবে সে কাফেলা কখনো লুণ্ঠিত ও বিপদগ্রস্ত হবে না এবং সহীহ সালামতে থাকবে।
৫। যে জাহাজে বা নৌকায় এ নকশা মোবারক থাকবে সে জাহাজ বা নৌকা কখনও ডুবে যাবে না।
৬। যে বস্তু বা সম্পদের মধ্যে এ নকশা মোবারকখানা থাকবে, সে বস্তু বা সম্পদ চোর বা ডাকাতের হামলা হতে নিরাপদ থাকবে।
৭। যে কোন হাজত বা প্রয়োজনে এ মোবারক নকশাটিকে উসিলা হিসেবে গ্রহণ করবে, আল্লাহ তায়ালা সে মকসুদ অবশ্যই পূর্ণ করবেন। (ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া ১০ম খণ্ড ১১৮ পৃষ্ঠা)
নালাইনশরীফের নকশার উসিলা এভাবে গ্রহণ করবেন। এ নকশা মোবারক আদব সহকারে আপন মাথার উপর রাখবেন এবং অনুনয় সহকারে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন, হে আল্লাহ! যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জুতা মোবারকের আকৃতি মাথায় নিয়েছি আমি তাঁর নগণ্য একজন গোলাম। হে আল্লাহ! এ গোলামীর সম্পর্কের দিকে কৃপাদৃষ্টি করে পবিত্র জুতা মোবারকের নকশা এর বরকতে আমার অমুক উদ্দেশ্য পূর্ণ করুন।
অতঃপর জুতা মোবারকের নকশাখানা মাথা থেকে নামিয়ে স্বীয় চেহারায় মালিশ করবেন এবং ইহাকে অধিকভাবে চুম্বন দিবেন। ইনশায়াল্লাহ নেক মকসুদ কবুল হবে।


 
Top