রবিউস সানি মাসের ২য় খুতবা
আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম, বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

(কু আনফুছাকুম ওয়া আহলিকুম নারা)

সম্মানিত মুসল্লীবৃন্ধ খোতবাওয়ালা আল্লামা ইবনে নাবাতা (রহঃ) উনার প্রসিদ্ধ খুৎবা গ্রন্থে রবিউস সানি মাসের ২য় খুতবার শেষের দিকে আমার পঠিত আয়াতখানি উল্লেখ করেছেন। এ আয়াতের ভিত্তিতে আমি আজ নিজেকে এবং নিজের পরিবার পরিজন সন্তানদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর গুরুত্ব এবং বাঁচাতে হলে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে সে বিষয়ে ইনশা আল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা করব।


আপনার সন্তানের ২১টি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে
প্রথমত: সন্তানকে আদর স্নেহ ভালবাসা দিবেন, সন্তান কয়েকজন হলে সকলের সাথে সম আচরন করবেন।
দ্বিতীয়ত: সন্তানের জন্য মা বাবা হলেন রুল মডেল সুতরাং সন্তানের সামনে এমন আচরণ করবেন যাতে আপনার সন্তান একজন আদর্শবান সন্তান হিসেবে গড়ে উঠে
তৃতীয়ত: সন্তান কোন কিছুতে না কামিয়াব হলে তাঁকা নিরুৎসাহিত না করে সাহস যোগাবেন।
চতুর্থত: আপনার হাজার ব্যস্ততা থাকুক তবুও সন্তানকে সময় দিবেন, সন্তানের সাথে কথা বলবেন, গল্প করবেন
পঞ্চমত: সন্তান ১০ বছরের নিচে হলে তাকে চরিত্র গঠন মূলক গল্প শুনাবেন।
ষষ্ঠত: সন্তানকে মিথ্যা, গীবত, হিংসা, রাগ এসব থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন, কারো প্রতি প্রতিহিংসায় যেন লিপ্ত না হয়, কারো সমালোচনা যেন না করে, মিথ্যা যেন নালে, অল্পতে রাগ যেন না করে এসব ব্যপারে সবসময় তাকিদ দিবেন।
সপ্তমত: প্রতিবেশীর প্রতি, প্রতিবেশী বন্ধুদের প্রতি, স্কুল মাদরাসার সহপাঠিদের সাথে সুন্দর আচরন করার উৎসাহ দিবেন।
অষ্টমত: ছোটে থেকেই সন্তানকে সালাম দিতে অভ্যস্থ করবেন। ছোট বড় সকলকেই সালাম দিতে অভ্যস্থ করে গড়ে তুলবেন।
নবমত: সন্তানকে ছোট থেকেই যে সব স্থানে মাসনুন দোয়া আছে সে সব দোয়া মুখে মুখে পড়াবেন, নিজেও বড় করে পড়বেন এবং সন্তানদেরকেও পড়তে বলবেন যেমন ঘরে প্রবেশের দোয়া, ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া, গাড়ীতে চড়ার দোয়া, খাবারের দোয়া, অজুর দোয়া, বাথরুমে প্রবেশের দোয়া, বাথরুম থেকে বের হওযার দোয়া, মসজিদে প্রবেশের দোয়া, মসজিদে থেকে বের হওয়ার দোয়া, নামাজের দোয়া সুরা সব কিছু ৭ বছরের আগেই আপনি মুখে মুখে মুখস্থ করিয়ে নিবেন।
দশমত: সন্তান যখন ৭ বছর হবে তখন থেকে তাঁকে আপনার সাথে ৫ ওয়াক্ত নামাজে অংশ গ্রহণ করাবেন।
এগারতম: ফরয জ্ঞান যেমন অজুর নিয়ম কানুন, গোসলের নিয়ম, নামাজের নিয়ম কানুন, সফরের নামাজ, নামাজের ওয়াজিব, সাহু সিজদা, মাসবুকের নামাজ, জুমার নামাজ, জানাযার নামাজ, ঈদের নামাজ, মসজিদের আদব, খোতবা শুনার আদব, কবর যেয়ারতের নিয়ম, কথা বলার আদব এসব শিখাবেন
বারতম: সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিবেন সহিহ শুদ্ধ ভাবে কুরান পাঠ করার ব্যপারে, কুরান দেখে দেখেও শিখতে উৎসাহ দিবেন এবং কুরানে পাক বেশী বেশী হেফজ করার ব্যপারেও উৎসাহ দিবেন। নিজেও পড়বেন সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে পড়তে বসবেন, অন্তত প্রতিদিন ১০ মিনিট তফসির থেকে সন্তানদের পাঠ করে শুনাবেন।
তেরতম: পরের হকের ব্যপারে শিক্ষা দিবেন, অন্যের জিনিষ বিনা অনুমতিতে ধরা যে গুনাহ সে বিষয়ে শিক্ষা দিবেন।
চৌদ্দতম: কারো উপর গায়ের জোড় খাটাতে দিবেন না, কেহ ভুল করলে অন্যায় করলে প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করতে উৎসাহ দিবেন।
পনেরতম: কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নিয়ে আসলে সে অভিযোগ নিয়ে অভিভাবক হিসেবে আপনি তেড়ে যাবেন না, বরং নিজের সন্তানকে পরামশ দিন ক্ষমা করে দিতে।
ষোলতম: গরীব অসহায়দেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে শিক্ষা দিন, দান সদকা করতে উৎসাহ দিন, মসজিদে গেলে তাঁর হাতেও টাকা দিন যেন সে নিজ হাতে মসজিদের দান বাক্সে টাকা দেয়। ঘরের দুয়ারে ভিক্ষুক আসলে সন্তানের সামনে ভিক্ষুককে কখনো ধিক্কার দিবেন না, বরং নিজে দিন অথবা সন্তানের হাতে ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিন।
সতেরতম: ঘরের কাজের লোকদের সাথে রুঢ় আচরন করবেন না, কাজের লোকের প্রতি আপনার রূঢ় আচরন থেকেই আপনার সন্তান রূঢ় আচরন শিখবে।
আঠারতম: সব সময় সন্তানকে শাসন করবেন না, অন্যের সামনে সন্তানের বদনাম করবেন না, এতে সন্তান আরো বিগড়ে যাবে ১০০% শিউর।
ঊনিশতম: সন্তানকে সব সময় এই শিক্ষা দিন যে কোন কাজ আল্লাহ তায়ালা দেখছেন, যেখানে কেউ নেই সেখানে আল্লাহ আছেন, সুতরাং গোপনে গোপনে কোন অন্যায় কাজ যেন না করে সে বিষয়ে সতর্ক করুন।
বিশতম: আপনার সন্তান একটু বড় হলে সে কোথায় যায়, কার সাথে আছে, সেখানে কি করছে সে বিষয়ে অবশ্যই খোজ খবর রাখুন।
একুশতম: সন্তানকে উপযুক্ত সময় হলে মোবাইল ল্যাপটপ, কম্পিউটার দিলে শর্ত দিন এসবে যেন পাসওয়াড না থাকে, যে কোন সময় মা বাবা সন্তানের এসব মিডিয়া চেক করার অধিকার রাখবেন এটা সন্তানের উপকারের জন্য করতে হবে।

কোন আমল করে বড়পীরের মা বাবা বড়পীরের মত সন্তান পেলেন?

সম্মানিত মুসল্লীকেরাম আপনারা জানেন এ রবিউস সানি মাসটি হল বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর ওফাতের মাস, তিনি বড়পীর হয়েছেন ওলীদের সরদার হয়েছেন কারন উনার বাবা মা ছিলেন অন্তত্য পরহেজগার, আল্লাহওয়ালা, বাবা আবু ছালে মুছা জঙ্গি (রহঃ) মাত্র ১টি আপেল খেয়ে সেটির ঋন পরিশোধ করতে করতে ১২ বছর গোলামী করেছেন অবশেষে ফলের মালিকের শর্ত ছিল তাঁর লেংড়া, কানা, বোবা মেয়েকে বিয়ে করতে হবে, তিনি এতটাই খোদাভিরু ছিলেন সে হক মাফ করানোর জন্য লেংড়া কানা, বোবা মেয়েটিকে বিয়ে করতেও রাজি হলেন, কিন্তু ঘরে গিয়ে দেখেন অত্যন্ত সুন্দরী এক রমনী, তখন আবু ছলেহ মুছা জঙ্গি (রহঃ) শশুড়ের কাছে জিজ্ঞেস করলেন আপনি বলেছেন আপনার মেয়ে লেংড়া, কানা বোবা এখনতো দেখছি তার সবই সহি ছালামত সে একজন সুস্থ এবং পুর্ণাঙ্গ মানুষ। তখন শশুড় জবাব দিলেন আমার মেয়েকে লেংড়া এ কারনে বলেছি আমার মেয়ে অত্যন্ত পর্দানশীন সবসময় ঘরের কাজ ঘরে করে, বাহিরে বের হয় না, নামাজ কালাম ও দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করে, আর অন্ধ বলেছি আমার মেয়ে তাঁর দু চোখে কোন পরপুরুষের দিকে তাকায়নি, বোবা বলেছি আমার মেয়ে তার জীবনে কোন পরপুরুষের সাথে কথা বলেননি। এমন ঘরেই হতে পারে অলিকুল সরদারের জন্ম। সে মহিয়সী নারীর নাম উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রহঃ), তিনি ১৮ পারা কুরানের হাফেজ ছিলেন বড়পীর গর্ভে থাকা অবস্থায় তিনি সবসময় সে কুরান তেলাওয়াত করতেন, আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত বড়পীর মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেই ১৮ পারা কুরান মুখস্থ করে নিয়েছেন। শিক্ষা অর্জনে বাগদাদ যাওয়ার সময় মাই শিক্ষা দিলেন বেটা যতই সমস্যা হউক মিথ্যা বলবে না। মিথ্যা হল সকল পাপের মুল। শিশু আবদুল কাদের কাফেলার সাথে শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন কাফেলা ডাকাতদের কবলে পড়ল সকলকেই ডাকাতরা লুটে নিল, আবদুল কাদেরকে প্রশ্ন করল তোমার কাছে কি আছে? তিনি অনায়াসে স্বীকার করলেন আমার জামার আস্তিনে ৪০টি স্বর্ন মুদ্রা আছে, ডাকাতদল আবদুল কাদেরকে তাদের দলপতীর কাছে নিয়ে গেল দলপতী জিজ্ঞেস করল তুমি যদি বলতে আমার কাছে কিছুই নাই তাহলে আমরা তোমাকে ছেড়ে দিতাম, তুমি সত্যি কথা কেন বললে? শিশু আবদুল কাদের জবাব দিল আমার মা সফরে বের হওয়ার সময় আমাকে আদেশ দিয়েছেন যতই মছিবত আসুক যেন মিথ্যা না বলি, আমি আমার মায়ের আদশে পালন করছি, শিশু আবদুল কাদেরের এমন কথা শুনে ডাকাত দলের সকলের অন্তরে একটা পরিবর্তনের হাওয়া দুলে গেল তাঁরা চিন্তা করতে লাগল এত ছোট ছেলে মায়ের সামান্য হকুমকে কিবাভে পালন করছে! আর আমরা কিনা রাত দিন মহান সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীতে ডুবে আছি, তাঁরা সকলেই তওবা করে ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে সেদিন ভাল হয়ে গিয়েছিল, শুধু মাত্র ১টি সত্য কথার বরকতে গোটা একটি ডাকাতদল সেদিন সেঠিক পথের দিশা পেয়েছিল। সুবহানাল্লহ। এমনই হওয়া চাই মায়ের শিক্ষা। সন্তানের প্রথম শিক্ষক হলেন মা। মায়ের আদর্শেই সন্তান গড়ে উঠে। তাই সন্তানের সুশিক্ষার জন্য প্রথমত মাকে সুশিক্ষিতি হতে হবে। ধর্ম জ্ঞানে জ্ঞানী হতে হবে। মায়ের অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকতে হবে। নবীর প্রেম জাগ্রত থাকতে হবে। তবেই না মা তাঁর সন্তানের মনে আল্লাহর ভয়, নবী প্রেমের আগুন জ্বালাতে পারবে।


কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে আমাদের মা বাবারা সন্তান জন্মের পর যখন ৬/৭ বছর বয়স হয়, যখন সন্তান খুব বেশী দুষ্টুমী করে, মায়ের কথা শুনে না, বাবার কথা মানে না, পড়ালেখা করে না, তখন মা বাবা ছেলেকে নিয়ে হুযুরের কাছে যায় বিভিন্ন আমেলের কাছে গিয়ে তাবিজ খুঁজে, সন্তানের দুষ্টুমি বন্ধ করার তাবিজ। অথচ সন্তানকে তরবীয়ত করা, জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব মা বাবা দুজনের।

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন (কু আনফুছাকুম ওয়া আহলিকুম নারা) তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও এবং তোমাদের পরিবারকে বাঁচাও।

সন্তানকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে হলে
মা বাবাকে কখন থেকে পরিকল্পনা শুরু করতে হবে?

যেসব নওজোয়ান বিয়ে করার মনস্থ করেন তার পরিকল্পনা থাকতে হবে যে আমি বিয়ে করলে আমার ঔরষে যদি কোন সন্তান হয় আমি সে সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবো। সন্তানকে বড় বড় ডিগ্রী নিতে আপনার লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন আর মানুষের কাছে তা প্রচার করেন গর্ভভরে, আপনি সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন আমার বড় ছেলে ডাক্তার, মেঝ ছেল ইঞ্জিনিয়ার, ছোট ছেলে বেরিষ্টার যখন আপনি মারা যাবেন তখন আপনার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ছেলে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেবকে অনুরোধ করবে হুজুর জানাযার নামাজের নিয়মটা একটু বলে দেন, নিয়তটা একটু বাংলায় বলে দেন।

এক মায়ের ৩ মেয়ে সকলেই উচ্চশিক্ষীত, উনি সকলকেই গর্ভকরে বলেন আমার বড় মেয়ে ডাক্তার, মেঝ মেয়ে এডভোকেট, ছোট মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার ঐ মাকে একজন প্রশ্ন করলেন মুহতারামা আপনি যদি মারা যান আপনার এই উচ্চশিক্ষিতা মেয়েরাকি আপনাকে গোসল দিতে পারবে? সে শিক্ষা কি তারা পেয়েছে? তখন মা খামোশ হয়ে গেলেন।

সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য পিতার প্রথম কাজ হল হারাম রোজগার থেকে বিরত থাকা, হালাল রুজি রোজগার করা। আর যে সব মায়েরা তাদের সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে চান সে সব মায়েরা গর্ভবতী হওয়ার সাথে সাথে সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য সব ধরনের আয়োজন করতে হবে। গর্ভবতী মায়ের চিন্তা চেতনা, দেখা, বলা, চালচলন সব কিছুর প্রভাব গর্ভের সন্তানের উপর পরে। তাই গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই মায়েদের উচিৎ ভবিষ্যৎ সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য, বেশী বেশী কুরান তেলাওয়াত, জিকির আজকার, আল্লাহর শোকর, সত্য কথা বলা, ফরয নামাজ, বেশী বেশী নফলগুজারী, তাহাজ্জুদ নামাজ এ সব কাজে ব্যস্ত থাকা। টিভি দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষ করে হিন্দী সিরিয়াল সমুহ কিছুতেই দেখা যাবে না, কোন ধরনের গান বাজনা করা ও শুনা যাবে না, গান বাজনার আসরে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, বিয়ে অনুষ্ঠান মেহেদী অনুষ্ঠানের সব ধরনের রছম রেওয়াজ, মিষ্টি খাওয়ানো, গ্রুপ ফটো এ সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলেই আপনার সন্তান আপনার চোখের শান্তি হবে, আপনার ফরমাবরদার হবে। তাবীজ তুমারের জন্য হুজুরের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না, সারাজীবন তাকে নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না। অন্যথা আপনার সন্তান দুনিয়ায় আপনার টেনশনের কারন হবে এবং আখেরাতেও তার কারনে আপনাকে কঠোর জবাবদিহিতার সম্মুখিন হতে হবে।

কেয়ামতের মাঠে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ মা বাবা কারা?

আল্লাহ তায়ালা কুরানে পাকে কেয়ামতের ময়দানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ, সবচেয়ে বিপদগ্রস্থ, সবচেয়ে মছিবতগ্রস্থ লোকদের বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৪ পারার সুরা ঝুমারে ১৫-১৬নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন
]ِ قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلَا ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ
বলুন, কেয়ামতের দিন তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা নিজেদের ও পরিবারবর্গের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জেনে রাখ, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি। [ সুরা যুমার ৩৯:১৫ ]
لَهُم مِّن فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِّنَ النَّارِ وَمِن تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ
তাদের জন্যে উপর দিক থেকে এবং নীচের দিক থেকে আগুনের মেঘমালা থাকবে।  [ সুরা যুমার ৩৯:১৬ ]

আল্লাহ বলছেন (জালিকা হুয়াল খুছরানুল মুবিন)এটাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
অথ্যাৎ তারা নিজেরাও নেকীর জিন্দেগী যাপন করেনি তাই তারা ক্ষতিগ্রস্থ, এবং পরিবারের সদস্য ও সন্তানদেরকেও নেককার বানায়নি। সুতরাং তারা উভয়েই চলে যাবেন জাহান্নামে যার উপরেও আগুন নিচেও আগুন।

কেয়ামতের মাঠে সকল পিতা মাতাকে তাঁদের সন্তানের ব্যপারে
আল্লাহ তায়ালা কি জবাবদিহি চাইবেন?

এ ব্যপারে ১টি হাদীস খুবই গুরুত্বপূর্ণ হাদীসটি ৩জন সাহাবী রেওয়ায়েত করেছেন হযরত আনাস বিন মালেক, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) (মা মিন আবদিন আকামা আমারাল্লাহে ফিহিম আম আযাআহু) কেয়ামতের দিন প্রশ্ন করবেন আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে যাদের কর্তা বানিয়েছেন জিম্মাদার বানিয়েছেন তোমরা তাদেরকে আল্লাহ ও রসুলের হকুম পালনকারী বানিয়েছ কিনা?

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বণনা করেন নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন কেয়ামতের মাঠে আল্লাহ তায়ালা এক দিকে মা বাবাকে দাঁড় করাবেন এবং অন্যদিকে তাদের সন্তানদের দাঁড় করাবেন এবং সন্তানদের প্রশ্ন করবেন এ দুজনকে কি তোমরা চিন? সন্তানরা জবাব দিবে এরা আমাদের বাবা মা তাঁরা আমাদেরকে লালন পালন করেছেন বড় করেছন, এবার মা বাবাকে প্রশ্ন করবেন তাদের সন্তানদেরেকে চিনে কিনা? মা বাবাও সন্তানদেরকে চিনার কথা ঘোষনা দিবেন, তখন আল্লাহ তায়ালা মা বাবাকে প্রশ্ন করবেন (মাজা আদ্দাবতাহুম ওয়ামা আল্লামতাহুম) তোমরা তোমাদের সন্তানদের কি আদব শিখিয়েছ? কি জ্ঞান দান করেছ?

সন্তানকে কি কি আদব শিখাবেন?

সুতরাং হে সম্মানতি পিতাগণ মনে রাখবেন কেয়ামতের কঠিন সময় আপনাকে আপনার স্ত্রীকে আপনার সন্তানদের ব্যপারে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে।  সন্তানকে আদব কায়দা শিখিয়েছেন কিনা? খাবার আদব, সালামের আদব, চলাফেরার আদব, কথা বলার আদব, নামাজের আদব, কুরান তেলাওয়াতের আদব, মসজিদের আদব এভাবে সকল আদব কায়দা, দ্বীনি শিক্ষা, ইসলামের সকল ফরয জ্ঞান সন্তানকে শিখাতে হবে আর শিখাতে হলে প্রথমে মা বাবাকে জানতে হবে। এখন আমরা মা বাবারাই ইসলামীক আদব কায়দা জানিনা সন্তানদের শিখাব কোথ্থেকে? মা বাবা না জানলে যারা জানে তাদের দ্বারা শিখাতে হবে। এক প্রকার মা বাবা হলেন যারা নিজেরাই আদবকায়দা জানে না ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না এবং সন্তানদেরকেও শিক্ষা দিতে পারে নাই। অপর প্রকার লোক যারা নিজেরা খুবই নেককার কিন্তু সন্তানদেরকে নেককার বানানোর চেষ্টা করেন নি। অপর প্রকার হল যারা নিজেরা অজ্ঞ কিন্তু সন্তানদেরকে মাদরাসায় দিয়ে, মক্তবে দিয়ে, হুজুরের মাধ্যমে দ্বীনের জ্ঞান দানের ব্যবস্তা করেছন। প্রথম ২ প্রকারের জন্য রয়েছে কেয়ামতে খুবই লঞ্চনা শেষ প্রকারের লোক সন্তানকে দ্বীনের জ্ঞান দেয়ার ফলে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় পাবার আশা রাখা যায়।

সন্তানের ব্যপারে মা এর জিম্মাদারী কি?

এ ব্যপারে মশহুর হাদীস (কুল্লুকুম রাঈনা ….) তোমাদের মধ্যে সব মানুষ জিম্মেদার আর কেয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার জিম্মাদারীর ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা জবাবদিহি নিবেন। বাদশাহ সারা দেশের জিম্মাদার, পুরুষ তার ঘরের জিম্মাদার, নারী তার স্বামীর ঘরের এবং স্বামীর সন্তানের ব্যপারে জিম্মাদার।

তাই ঘরে যদি বাবা না থাকে তাহলে মায়ের জিম্মাদারী হল সন্তানদের নামাজ কালাম পড়া লেখা আদব কায়দা এসব বিষয়ে কঠোর দায়িত্ববান হওয়া, সন্তান যদি নামাজ না পড়ে কোন বে পরোয়া চলাফেরা করে মায়ের কথা না শুনে যখন সন্তানের পিতা আসবেন তাঁকে বলবেন, পিতার কাছে সন্তানের দোষ গোপন করবেন না, বরং মা যদি সন্তানকে কট্রোল করতে না পারে তাহলে বাবাকে বলে দিবেন যেন সন্তানকে শাসন করেন।

সন্তানের ব্যপারে এক মায়ের আশ্চর্য্য ঘটনা
হযরত ইমাম মালেক (রহঃ) এর যুগের ঘটনা মদীনার এক মুজাহিদ যার নাম হযরত আবু আবদুর রহমান (ফাররুখ) তিনি খোরাসানের দিকে জিহাদে বের হলেন যাওয়ার সময় উনার গর্ভবতী স্ত্রীকে ৩০ হাজার দেরহাম আমানত হিসেবে দিয়ে গেলেন,  জিহাদে গিয়ে তিনি শত্রু কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে গেলেন প্রায় ৩০ বছর পর একদিন রাতের অন্ধকারে তিনি নিজ দেশে নিজের ঘরে ফিরে আসলেন, এসে ঘরের দরজা খটখটালেন, দেখলেন এক নওজোয়ান দরজা খুলল, ফাররুখ তাঁর ঘরে একজন অপরিচিত পুরুষকে দেখে হুংকার দিয়ে বললেন তুমি কে আমার ঘরের ভিতর? তখন যুবকটি মনে করল তরবারে হাতে হয়ত কোন ডাকাত যুবকটিও ১টি তরবারী নিয়ে বের হল অথচ তারা হলেন পিতা পুত্র পিতা অনেক বছর পর ঘরে এসে ঘরের দরজায় এক যুবককে দেখে মনে করল কোন পরপুরুষ তার ঘরে, আর ছেলে মনে করল কোন ডাকাত হবে উভয়ে যখন উচ্চবাচ্চ করছে তখন আশে পাশের লোকজন জড়ো হয়ে গেল, আবু আবদুর রহমান নিজের পরিচয় দিয়ে বলল আমি হলাম এ ঘরের কর্তা, আবু আবদুর রহমান নিজের নাম যখন বলল তাঁর স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে উনাকে ঘরে নিয়ে গেলেন, সকালে যখন তাহাজ্জুদের সময় হল তাদের ছেলে মসজিদে নববীতে চলে গেল পিতা রাতের অন্ধকারে ছেলেকে ভাল করে দেখেনি মসজিদে ফজরের নামাজের পর দেখলেন েএক নওজোয়ান মিম্বরে বসে হাদীসের দরস দিচ্ছেন আর হাজার হাজার লোক তার কাছ থেকে হাদীসের দরস নিচ্ছেন, এ নওজোয়ানের এমন শান শওকত ও জ্ঞান গরিমা দেখে আবু আবদুর রহমান ঘরে এসে তার স্ত্রীকে বলল মদীনার মসজিদে এক নওজোয়ানকে দেখলাম হাদীসের দরস দিচ্ছে, আমি যদি জিহাদে না যেতান দেশে থাকতাম তাহলে আমার সন্তানকেও আমি এভাবে শিক্ষা দিতাম যে সেও একজন জগৎবাছা আলেম হত। তখন স্ত্রী বললেন আপনি যে নওযোয়ানকে মসদিজে নববীতে হাদসের দরস দিতে দেখেছেন সেই হলেন আপনার আমার সন্তান, আপনি যে আমাকে ৩০ হাজার দেরহাম আমানত দিয়ে গেছেন সে আমানত আমি আপনার সন্তানকে শিক্ষা দানের দ্বারাই হেফাজত করেছি। এ কথা শুনে আবু আবদুর রহমান খুশীতে বলল তুমি ৩০ হাজার কেন যদি আমার লক্ষ দেরহামও এ কাজে  খরচ করতে আমি খুশী হতাম, তুমি অত্যন্ত ভাল কাজই করেছ, আমার মনের আকাংখা তুমি পুরন করেছ।

সন্তানের ব্যপারে এক বাবার আশ্চর্য্য ঘটনা
কুরানে পাকের সবচেয়ে সুন্দর ঘটনা হল ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনা, আমরা সারাদিন সুরা ইউসুফ পাঠ করি, ঘটনা পড়ি কিন্তু এ গল্প আল্লাহ কেন কুরানে দিয়েছেন? এর মধ্যে আমাদের জন্য কি শিক্ষা রয়েছে তা আমরা জানি না। হযরত ইউসুফ (আঃ) এর মা ছিলেন খুবই রুগ্ন উনার জন্মের ১ বছর পর বিন এয়ামিন জন্ম গ্রহণ করলেন, যেহেতু হযরত ইউসুফ (আঃ) এর মা রুগ্ন ছিলেন সেহেতু ২য় সন্তান বিন এয়ামিন জন্মের সময় তিনি ইন্তেকাল করলেন। ইউসুফ ও বিন এয়ামিন তাই হযরত এয়াকুবের খুবই স্নেহের পাত্র ছিলেন, তাই তাদের অন্য মায়ের ভায়েরা তাঁদের খুবই হিংসা করতেন, লম্বা ঘটনা হযরত তিনি গোলাম হিসেবে বিক্রী হয়ে গেলেন, তখন তাঁর ৭ বছর মিশরের বাদশা তাঁকে কিনে নিয়ে উনার স্ত্রী জুলেখা কে দিলেন ৭ বছরের ইউসুফকে লালন পালন করতে, ৩৩ বছর লালন পালনের পর তিনি যখন ৪০ বছরের টগবগে যুবক হয়ে গেলেন, তখনকার সময় ৪০ বছর হলে মানুষ পূর্ন যুবক হতেন, বর্তমানেতো ৪০ বছরে যৌবনের ভাটা পড়ে, হযরত ইউসুফ (আঃ) ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে জেল খানায় চলে গেলেন ৯ বছর জেল খানায় থাকার পর ৪৯ বছর বয়সে জেল থেকে বের হয়ে তিনি মিশরের সিংহাসনের মালিক হলেন, ১৪ বছর শাসন করলেন ৬৩ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। বাবা এয়াকুব ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ছেলে ইউসুফ যখন বাবাকে দেখলেন বাবাকে প্রশ্ন করলেন বাবা তোমার কি তকদীরে বিশ্বাস নাই? বাবা এয়াকুব বললেন আছে, ইউসুফ বললেন তাহলে আপনি কেন আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে নিজের দৃষ্টি হারালেন? বাবা এয়াকুব জবাব দিলেন বেটা আমি তোমার শোকে কাঁদি নাই, আমি কেঁদেছি তুমি হলে মা হারা সন্তান, তোমাকে লালন পালন করা সুশিক্ষা দেয়া আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য, এখন তুমি আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলে, আমার সন্তান হয়ে তুমি কি রকম পরিবেশে বড় হচ্ছ, কি রকম শিক্ষা পাচ্ছ? তুমি কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছ? যদি আমার কাছে থাকতে আমি তোমার কাছে থাকতাম তাহলে আমি তোমাকে হাতে ধরে জান্নাতে যাওয়ার আমল গুলি শিখাতাম, জাহান্নাম থেকে বাঁচার মত করে গড়ে তুলতাম। যেহেতু তুমি হারিয়ে গেলে তােই তোমাকে যে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারছি না সে চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে আমি অন্ধ হয়ে গেছি। সুবহানাল্লাহ। এই হল আম্বিয়াগনের শিক্ষা।
আর আমাদের বাবাদের  জন্য শত আফসোস যারা নিজেরাও জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছে না, সন্তানদেরকেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় অবলম্বন করছে না।

সকল বাবাদের প্রতি আহ্বান আপনার সন্তানকে হাতে ধরে মসজিদে নিয়ে আসুন, প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জামায়াতে নিজেও শরীক হউক সন্তানের ৫ ওয়াক্ত নামাজ নিশ্চিত করুন। ফজরের নামাজের পর নিজেও কুরান পড়ুন সন্তানদের পড়াও নিশ্চিত করুন। মিথ্যা বলাকে অন্তর দিয়ে ঘৃনা করুন। সন্তানদেরকেও মিথ্যা বলা থেকে বিরত রাখুন। হালাল রুজীর ফিকির করুন সন্তানের জন্য হালাল রুজির রোজগারের ব্যবস্তা করুন। জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ফরয জ্ঞানে সন্তানদের জ্ঞানী করে গড়ে তুলুন। আজ থেকে সন্তানের জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকে নিশ্চিত করুন। ফরয জ্ঞান নিজে শিখুন সন্তানকে শিক্ষা দিন।



এখন আমি হাদীস শরীফের আলোকে ১১টি আমল বলব যা আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখবে, তাই এসব আমল প্রত্যেকের উচিত মনে রাখা এবং আমল করা। সন্তানদের এসব আমলে কঠোরভাবে প্রশিক্ষিত করা।
১। মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকা ও নম্র স্বভাব- সুনানে তিরমিযির ২৪৮৮ নং হাদীস ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন “রাসুলে আকরাম (দঃ) বলেছেন: আমি কি তোমাদের জানাবো না, কোন ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম অথবা বলেছেন কার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম? (তাহলে জেনে রাখ) জাহান্নামের আগুন এমন প্রতিটি লোকের জন্য হারাম, যে লোকদের কাছাকাছি বা তাদের সাথে মিলেমিশে থাকে, যে মকামলমতি নম্র প্রকৃতির ও মধুর স্বভাব বিশিষ্ট।
২। ফরয রোজার পাশাপাশি বেশী বেশী নফল রোজা রাখা। বুখারী শরীফের হাদীস রসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে ১দিন রোযা রাখবে, আল্লাহ ঐ ১ দিন রোযার বিনিময়ে তার চেহেরাকে জাহান্নাম হতে ৭০ বছর (পরিমাণ পথ) দুরো রাখবেন।
৩। কন্যা সন্তান লালন পালন করা- এ ব্যপারে বুখারী শরীফের হাদীস মা আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার নিকট একটি মহিলা তার ২টি কন্যাকে সঙ্গে করে ভিক্ষা করতে (গৃহে) প্রবেশ করল। কিন্তু সে আমার নিকট ১টি খেজুর ছাড়া কিছু পেল না। আমি খেজুরটি দুই খন্ডে ভাগ করে তার দুটি মেয়েকে খেতে দিল। আর নিজে তা হতে কিছুই খেলনা। অত:পর সে উঠে বের হয়ে গেল।
তারপর নবী (দঃ) আমাদের কাছে এলে আমি ঐ কথা তাঁকে জানালাম। ঘটনা শুনে তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি একাধিক কন্যা নিয়ে সংকটাপন্ন হবে, অতঃপর সে তাদের প্রতি যথার্থ সদ্ব্যবহার করবে, সেই ব্যক্তির জন্য ঐ কন্যারা জাহান্নাম থেকে অন্তরাল স্বরুপ হবে।
৪। আন্তরিকভাবে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর স্বীকৃতি দেওয়া। মুসনাদে আহমদের ১৬৪৮২ নং হাদীস ইতবান বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে ক্বিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।
মনে রাখবেন কলমা মুখে বলা যথেষ্ট নয় বরং কলমার স্বীকৃতি তখনই সত্যি হবে যখন সে মহান ইলাহের সকল হকুম আহকাম মনে প্রাণে বিশ্বাস করে পালন করবে।
৫। ফজর ও আসর সালাত যথাসময়ে আদায় করা- মুসলিম শরীফের ১৩১১ নং হাদীস হযরত আবু বকর ইবনু উমারাহ তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (দঃ) কে বলতে শুনেছি এমন ব্যক্তি কখনোই জাহান্নামে যাবে না, যে সুর্যদয়ের পূর্বে ও সুর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করে (অথ্যাৎ ফজর ও আসরের সালাত)।
মনে রাখবেন ফজর ও আসরের সালাত খুবই কষ্টের ফজরে ঘুম থেকে উঠার কষ্ট আসরে নানান ব্যস্ততার কষ্ট, তাই ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এ ২ ওয়াক্তকে বেশী মর্যাদা দেয়া হয়েছে, যারা যথাসময়ে এ দুই ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারবে  তারা বাকী ৩ ওয়াক্ত নামাজ আদায় তাদের জন্য খুবই সহজ হবে।
৬। চোখকে পাপ থেকে হিফাযত করা: রসুলুল্লাহ (দঃ) বলেন “কিয়ামতের দিন জাহান্নাম দেখবে না (১) এমন চক্ষু যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে (২) এমন চক্ষু যে আল্লাহর রাস্তায় জেগে থাকে (৩) এমন চক্ষু যে বেগানা মহিলাকে দেখে নিচু হয়ে যায়।
এখন এমন সময় আমরা পার করছি বেগানা মাহিলা থেকে চোখকে হেফাজত করা খুবই কঠিন, বিশেষ করে যারা সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করেন তাঁদের জন্য আরো বেশী কঠিন, আল্লাহ তায়ালা সকলকে চক্ষু হেফাজত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
৭।যোহরের ফরয নামাজের পূর্বে ৪ রাকাত এবং পড়ে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করা- ইবনে মাজা ১১৬০, তিরমিযি-৪২৭, আবু দাউদ-১২৬৯, মসনদে আহমদ ২৬২৩২ এর হাদীস হযরত উম্মে হাবিবা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (দঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বরাবর যোহরের পূর্বে ৪ রাকাত এবং যোহরের পরে ৪ রাকাত সালাত আদায় করবে আল্লাহ তার প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।
অথ্যাৎ যোহরের আগে ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, তারপর ৪ রাকাত ফরয এর পর ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এরপর ২ রাকাত নফল।
৮। সকাল সন্ধ্যায় জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া পড়া- তিরমিযি শরীফের হাদীস হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে “হে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে হে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।
আবু দাউদ শরীফের ৭৯৩ নং হাদীসে দোয়াটি এভাবে উল্লেখ করেছেন (আল্লাহুম্মা ইন্নি আছআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার) হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
৯। বেশী বেশী দান সদকা করা- বুখারী শরীফের হাদীস রসুলুল্লাহ (দঃ) এরশাদ করেন “তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়। আর যে ব্যক্তি এরও সামর্থ্য রাখেনা, সে যেন ভাল কথা বলে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচে।
১০।৪০ দিন তকবীরে উলার সাথে সালাত আদায় করা- তিরমিযি শরীফের হাদীস রসুলুল্লাহ (দঃ) এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ৪০ দিন জামাতে সালাত আদায় করবে এবং তাকবীরে তাহরিমা পাবে অর্থ্যাৎ সালাত আরম্ভ হ্ওয়ার সময় উপস্থিত থাকবে আল্লাহ তাকে ২টি জিনিষ থেকে মুক্তি দিবেন (১) জাহান্নাম থেকে (২) মুনাফিকি থেকে।
১১। প্রতিদিন ৩৬০ বার তাসবিহ তাহলিল পড়া- মুসলিম শরীফের ২২২০ নং হাদীস আয়শা (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন প্রত্যেক আদম সন্তানের মধ্যে ৩৬০টি গ্রন্থি আছে। আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে সদকাহ রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহু আকবর বলল, আল হামদুলিল্লাহ বলল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল,  সুবহানাল্লাহ বরল, আসতাগফিরুল্লাহ বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু, কাঁটা, পাথর, হাড় সরাল, কিংবা ভাল কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজের নিষেধ করল এবং এসবি মিলে ৩৬০ সংখ্যক পূণ্যকর্ম করল, সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দুর করে নিল।

সালামান্তে
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন
খতিব, হাজী অলি মিয়া সওদাগর জামে মসজিদ
পূর্ব ষোলশহর, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম
 
Top