• নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি ওয়া নুসাল্লিম আ'লা  ইমামুল ক্বাওনাইনি।। আম্মা   বা'দঃ-     


পবিত্র কুরআন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী ও পূর্ববর্তী পুণ্যবান আলেমদের বিবরণ থেকে যেসব বিষয় আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক স্পষ্টভাবে হারাম হিসেবে জানা যায় সেগুলোই কবীরা (বড়) গুনাহ।

কবীরা ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকলে সগীরা (ছোট) গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-

‘তোমরা যদি সেসব কবীরা গুনাহ পরিহার কর, যা থেকে তোমাদের বারণ করা হয়েছে, তাহলে আমি তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাব সম্মানজনক প্রবেশস্থলে।’ 
(সূরা নিসা, আয়াত : ৩১)

কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ আরো ঘোষণা করেছেন-

‘যারা ছোট খাট দোষ-ত্রুটি ছাড়া বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে, নিশ্চয় তোমার রব ক্ষমার ব্যাপারে উদার, তিনি তোমাদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।’ 
(সূরা নাজম, আয়াত : ৩২)

এ থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকেই মনে করে থাকেন যে কবীরা গুনাহ শুধু সাতটি, যা হাদিসে কাবায়েরে (কবীরা গুনাহ সম্পর্কিত হাদিস) উল্লেখ আছে।  কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়।  কেননা এ সাত কাজ কবীরা গুনাহ ঠিকই, কিন্তু এ হাদিসের মধ্যে কবীরা গুনাহকে এ সাতটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়নি।  অর্থাৎ এ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সাতটির মধ্যে কবীরা গুনাহকে সীমাবদ্ধ করেননি, সাতটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহের বর্ণনা দিয়েছেন মাত্র।
আল্লামা শামছুদ্দীন জাহাবি (রহ.) বলেন, হাদিসে কাবায়ের এর সাতটি গুনাহের মধ্যে কবীরা গুনাহের সীমাবদ্ধতা নেই।।

ইবনে তাইমিয়া এবং অন্যান উলামায়ে কিরাম বলেন, ‘কবীরা গুনাহ হল প্রত্যেক ওই গুনাহ যার জন্য দুনিয়াতে শাস্তির বিধান রয়েছে অথবা আখিরাতে শাস্তির ধমকি বা হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।’
 ইবনে তাইমিয়া একটু বাড়িয়ে এও বলেছেন, যে গুনাহের জন্য ঈমান চলে যাওয়ার ধমকি এসেছে কিংবা লানত (বদ দোয়া) ইত্যাদি করা হয়েছে তাও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।
আর এ কবীরা গুনাহকে উলামায়ে কিরাম চিহ্নিত করেছেন নিম্নরূপে :

১. আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরক করা :
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না।  তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান।  আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে। ’ 
(সূরা নিসা, আয়াত : ৪৮)

‘আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শির্‌ক করো না; নিশ্চয় শির্‌ক হল বড় জুলুম। ’ 
(সূরা লুকমান, আয়াত : ১৩)

‘নিশ্চয় যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, তার ওপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। ’ 
(সূরা মায়িদা, আয়াত : ৭২)

২. মানুষ হত্যা করা :
‘আর যে ইচ্ছাকৃত কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা’নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আজাব প্রস্তুত করে রাখবেন।’ 
(সূরা নিসা, আয়াত : ৯৩)

৩. যাদু করা।(বানটোনা মেরে মানুষের ক্ষতি করা) :
‘আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরি করেনি; বরং শয়তানরা কুফরি করেছে।  তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই মালাইকা হারূত ও মারূতের ওপর।’
(সূরা বাকারা, আয়াত : ১০২)

৪. নামাজ না পড়া ও নামাজ আদায়ে উদাসীনতা :
‘তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল।  সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।  তবে তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে; তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ 
(সূরা মরিয়ম, আয়াত : ৫৯-৬০)

৫. জাকাত অস্বীকার করা :  
‘আর মুশরিকদের জন্য ধ্বংস, যারা যাকাত দেয় না। আর তারাই আখিরাতের অস্বীকারকারী। ’ 
(সূরা হা মিম সাজদা, আয়াত : ৬-৭)

৬. ওজর ছাড়া রমজানের রোজা না রাখা :
‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর।  যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।  নির্দিষ্ট কয়েক দিন।  তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।  আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।  অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে।  আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান। ’ 
(সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩-১৮৪)

৭. শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করা :

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত :  ৯৭)

৮. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া :
‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করবে।  তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না।  আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বল।  আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। ’ 
(সূরা ইসরা, আয়াত : ২৩-২৪)

৯. আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা :
‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফ্‌স থেকে।  আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী।  আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক। ’  
(সূরা নিসা, আয়াত : ১)

‘আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে। ’ 
(সূরা আর-রাদ, আয়াত : ২১)

১০. জেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া :
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। ’ 
(সূরা আল-ইসরা, আয়াত : ৩২)

‘ব্যভিচারিণীও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ’টি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।  ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না।  আর মুমিনদের ওপর এটা হারাম করা হয়েছে। ’ 
(সূরা আন-নূর, আয়াত : ২-৩)

১১. সমকামিতা বা মহিলার পায়ুপথে সংগম করা :
সমকামী জাতির ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছিল।  আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদের ওপরকে নীচে উল্টে দিলাম এবং ক্রমাগত পোড়ামাটির পাথর বর্ষণ করলাম, যা চিহ্নিত ছিল তোমার রবের কাছে।  আর তা জালিমদের থেকে দূরে নয়। ’ (সূরা হুদ, আয়াত :  ৮২-৮৩)

১২. সুদের আদান প্রদান করা :
‘হে মুমিনগণ, তোমরা সুদ খাবে না বহুগুণ বৃদ্ধি করে।  আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও। ’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১৩০)
‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই।  অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।  অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন।  আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। ’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

১৩. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা :
‘আর তোমরা এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দাও এবং তোমরা অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করো না এবং তাদের ধন-সম্পদকে তোমাদের ধন-সম্পদের সঙ্গে খেয়ো না। নিশ্চয় তা বড় পাপ। ’ (সূরা নিসা, আয়াত : ২)
‘আর তোমরা এতিমদেরকে পরীক্ষা কর যতক্ষণ না তারা বিবাহের বয়সে পৌঁছে।  সুতরাং যদি তোমরা তাদের মধ্যে বিবেকের পরিপক্কতা দেখতে পাও, তবে তাদের ধন-সম্পদ তাদেরকে দিয়ে দাও।  আর তোমরা তাদের সম্পদ খেয়ো না অপচয় করে এবং তারা বড় হওয়ার আগে তাড়াহুড়া করে।  আর যে ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়।  অতঃপর যখন তোমরা তাদের ধন-সম্পদ তাদের নিকট সোপর্দ করবে তখন তাদের ওপর তোমরা সাক্ষী রাখবে।  আর হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট। ’ (সূরা নিসা, আয়াত :  ৬)

১৪. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর মিথ্যারোপ করা :
‘আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি?’ (সূরা আয-যুমার, আয়াত :  ৬০)

১৫. রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক প্রজাদের সম্পদ ও অধিকার আত্মসাৎ এবং প্রজাদের ওপর অত্যাচার :
‘কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়ায়।  তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। ’ (সূরা আশ শুরা, আয়াত : ৪২)

১৬. অহংকার করা :
‘নিঃসন্দেহে তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে, নিশ্চয় তা আল্লাহ জানেন। নিশ্চয় তিনি অহঙ্কারীদের পছন্দ করেন না।  (সূরা নাহাল, আয়াত : ২৩)
‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।  আর জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা লুকমান, আয়াত : ১৮)

১৭. মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়া :
‘আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়। ’ (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৭২)

১৮. মাদকাসক্তি বা নেশা গ্রহণ করা :
‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৯০)

১৯. জুয়া খেলা :
‘এবং জুয়ার তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়, এগুলো গুনাহ। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত :  ৩)
‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৯০)

২০. সতি সাধবী মহিলার ওপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া :
‘যারা সচ্চরিত্রা সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত।  আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আজাব।  যেদিন তাদের জিহ্বাগুলো, তাদের হাতগুলো ও তাদের পাগুলো তারা যা করত, সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।’ (সূরা আন-নূর, আয়াত : ২৩-২৪)

২১. চুরি-ডাকাতি করা :
‘আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত :  ৩৮)
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং জমিনে ফাসাদ করে বেড়ায়, তাদের আজাব কেবল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে।  এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহা আজাব।’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৩৩)

২২. মিথ্যা বলামিথ্যা কসম বা শপথ :
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর অঙ্গীকার ও তাদের শপথের বিনিময়ে খরিদ করে তুচ্ছ মূল্য, পরকালে এদের জন্য কোনো অংশ নেই।  আর আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেন না, আর তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্যই রয়েছে মর্মন্তুদ আযাব। ’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৭)

২৩. জুলুম বা অত্যাচার করা :
‘কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। ’ (সূরা আশ শুরা, আয়াত : ৪২)
‘তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আর আল্লাহকে অনেক স্মরণ করেছে।  আর তারা নির্যাতিত হওয়ার পর প্রতিশোধ নেয়।  আর জালিমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কোন্‌ প্রত্যাবর্তন স্থলে তারা প্রত্যাবর্তন করবে।’ (সুরা আশ শুআরা, আয়াত : ২২৭)

২৪. হারাম মাল ভক্ষণ এবং যে কোনোভাবে তা ব্যবহার করা :
‘আর তোমরা নিজদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং তা বিচারকদেরকে (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না।  যাতে মানুষের সম্পদের কোনো অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে বুঝে খেয়ে ফেলতে পার। ’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

২৫. আত্মহত্যা করা :
‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা।  আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।  আর যে ওই কাজ করবে সীমালঙ্ঘন ও অন্যায়ভাবে, আমি অচিরেই তাকে আগুনে প্রবেশ করাব।  আর সেটি হবে আল্লাহর ওপর সহজ। ’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০)

২৬. আল্লাহ প্রদত্ত আইন বাদ দিয়ে বিচারকার্য সম্পাদন করা
‘আর যারা আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৪৪)
‘আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই জালিম। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৪৫)
‘আর ইনজিলের অনুসারীগণ তাতে আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তার মাধ্যমে যেন ফয়সালা করে আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৪৭)

২৭. ঘুষ খাওয়া এবং ঘুষ নিয়ে কারো পক্ষে রায় দেয়া :
‘হে নবী! আপনি (আহলে কিতাবদের) অনেককেই দেখবেন পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে (ঘুষ খাওয়াতে) তৎপর।  তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৬২)
‘তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ (ঘুষ) ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৪২)
‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের বা প্রশাসকদের কাছে পেশ করো না। ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ১৮৮)

২৮. পোশাক-চলাফেরা ইত্যাদিতে নারী পুরুষের রূপ কিংবা পুরুষ নারীর রূপ ধারণ করা :
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই সব পুরুষকে লানত করেছেন।  যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ওই সব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে।  (বুখারি : ৫৪৬৫)

২৯. প্রস্রাব থেকে পরিচ্ছন্ন না থাকা :
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।  তখন তিনি বললেন যে, এই দুইজন ব্যক্তিকে আজাব দেওয়া হচ্ছে কোনো বড় অপরাধের জন্য নয়।  বরং তাদের একজন নিজ পেশাব থেকে পবিত্র থাকত না আর অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত। অতঃপর তিনি একটি তাজা খেজুরের ডাল নিয়ে তা দ্বিখণ্ডিত করে প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি এরূপ কেন করলেন? তখন তিনি বললেন, হয়ত এগুলো শুষ্ক না হওয়া পর্যন্ত এদের আযাব লাঘব করা হবে।  (সুনানে নাসাঈ : ২০৭৩)
আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বেদুঈনকে মসজিদে পেশাব করতে দেখলেন।  তখন তিনি বললেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও’।  সে পেশাব শেষ করলে পানি নিয়ে আসতে বললেন, অতঃপর তা সেখানে ঢেলে দিলেন। ।(বুখারি : ২১৯)

৩০. দুনিয়া হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে দ্বীনী এলেম শিক্ষা করা এবং এলেম শিক্ষা করে তা প্রচার ও প্রকাশ না করে লুকিয়ে রাখা :
‘বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। ’ (সূরা ফাতির, আয়াত : ২৮)
‘নিশ্চয় যারা গোপন করে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়াত যা আমি নাজিল করেছি, কিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর, তাদেরকে আল্লাহ লানত করেন এবং লা’নতকারীগণও তাদেরকে লানত করে। ’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৯)

৩১. চোগলখোরি করা :
‘আর তুমি আনুগত্য করো না প্রত্যেক এমন ব্যক্তির যে অধিক কসমকারী লাঞ্ছিত। পিছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখুরী করে বেড়ায়। ’ (সূরা ক্বলম, আয়াত : ১০-১১)

৩২. কাউকে লানত বা গালিগালাজ করা :
‘আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসিকি (জঘণ্য পাপ) আর কোনো মুসলমানকে হত্যা করা কুফরি। ’ (বুখারি : ৬৫৯)

৩৩. ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা :
‘আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সূরা আল ইসরা, আয়াত :  ৩৪)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে মুনাফিক অথবা যার মধ্যে এ চারটি স্বভাবের কোনো একটা থাকে, তার মধ্যেও মুনাফিকির একটি স্বভাব থাকে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করে।
(১) সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে।
(২) যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে।
(৩) যখন চুক্তি করে তা লঙ্ঘন করে।
(৪) যখন ঝগড়া করে অশ্লীল বাক্যালাপ করে।  (সহিহ বুখারি : ২৪৫৯)

৩৪. ভবিষ্যদ্বক্তা ও জ্যোতিষির কথা বিশ্বাস করা :
আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ফেরেশতামণ্ডলি মেঘমালার আড়ালে অবতরণ করেন এবং আকাশের ফায়সালাসমূহ আলোচনা করেন।  তখন শয়তানেরা তা চুরি করে শোনার চেষ্টা করে এবং তার কিছু শোনেও ফেলে।  অতঃপর তারা সেটা গণকের নিকট পৌঁছে দেয় এবং তারা তার সেই শোনা কথার সঙ্গে নিজেদের আরো সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে বলে থাকে।  (সহিহ বুখারি : ৩২১০)
আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কতকগুলো লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গণকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ কিছুই নয়।  তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ওরা কখনও কখনও আমাদের এমন কথা শোনায়, যা সত্য হয়ে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কথা সত্য।  জিনেরা তা ছোঁ মেরে নেয়।  পরে তাদের বন্ধু (গণক) এর কানে ঢেলে দেয়।  তারা এর সঙ্গে সত্য মিথ্যা মিলায়।  (বুখারি : ৫৭৬২)

সূত্র : কবীরা গুনাহ, ইমাম আয-যাহাবী, দারুস সালাম,
 
Top