জিজ্ঞাসা–৯১০: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। ইনশাআল্লাহ্‌ আসন্ন কোরবানিতে আমি ৩টি খাসি দিতে চাচ্ছি, একটি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকে, আরেকটি আমার নিজের পক্ষ থেকে, অপরটি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে, এভাবে কি কোরবানি দেওয়া যাবে? উল্লেখ্য যে, আমার মা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। আপনার উত্তরের উপেক্ষায় রইলাম। জাযাকাল্লাহ খাইরান।–Md. Abdul Kadir

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকে কুরবানী করা 

হাদীস শরিফে এসেছে, আলী রাযি. প্রতি বছর নিজের কুরবানীর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকেও কুরবানী করতেন।

عَنْ حَنَشٍ، قَالَ: رَأَيْتُ عَلِيًّا يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ: مَا هَذَا؟ فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي عَنْهُ

হানাশ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আলী রাযি.-কে দেখেছি, তিনি দু’টি মেষ কুরবানী করলেন। আমি তাকে বললাম, এটি কি? (আপনার উপর তো একটি কুরবানী আবশ্যক ছিল, কিন্তু আপনি দু’টি করলেন কেন?) তিনি বললেন, নিশ্চয় রাসূল ﷺ আমাকে অসিয়ত করেছেন তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার জন্য। এ কারণে আমি তার পক্ষ থেকে কুরবানী করছি। (আবু দাউদ ২৭৮৭, তিরমিযি ১৪৯৪)

যদিও একদল মুহাদ্দিস হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন, কিন্তু আরো কিছু মুহাদ্দিস এটিকে হাসান পর্যায়ের হাদীস আখ্যা দিয়েছেন৷ সুতরাং রাসূল ﷺ এর পক্ষ থেকে কুরবানী  করা যাবে; বরং এটি উত্তম ও উম্মত হিসেবে সৌভাগ্যের বিষয়।

দুই.পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করা 

নামাযের মত কুরবানীও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত; যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান নর-নারীর উপর আলাদাভাবে ওয়াজিব। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

অতএব আপনি আপনার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন। (সূরা কাউসার ২)

উক্ত আয়াতের নির্দেশিত নামায যেমনিভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা তেমনিভাবে কুরবানীর নির্দেশও প্রত্যেকের জন্য আলাদা। পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক একজন নামায পড়লে যেমনিভাবে বাকি প্রাপ্ত বয়স্ক সবার নামায হয়ে যায় না, অনুরূপভাবে পরিবারের একজন তার নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করলে অন্যদের পক্ষ থেকেও কুরবানী হয়ে যায় বলা যাবে না। সুতরাং এক পরিবারে একাধিক ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ কুরবানী আদায় করতে হবে। সবার পক্ষ থেকে একজন কুরবানী আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হবে না। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ

কিতাবে এই আছে যে, কোনো ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। (সূরা নাজম ৩৮)

তিন. উল্লেখ্য, কিছু কিছু হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম প্রথম দিকে পরিবারের পক্ষ থেকেও কুরবানী করতেন! মূলত এর অন্যতম কারণ ছিল এই যে,  শুরুর দিকে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে দারিদ্রতা ছিল প্রকট। আর্থিকভাবে তাঁরা দুর্বল ছিলেন। যার কারণে পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সাধারণত একজন হতেন। ফলে অনেক সময় ওই একজনের উপরই কুরবানী ওয়াজিব হত। আর তিনি কুরবানী করতেন। গোশত খেতো পুরো পরিবার। আর এটাই ছিল, পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অর্থ।

তাছাড়া একজনের পক্ষ থেকে নফল কুরবানী করে অনেকের জন্য ইসালে সাওয়াব করা শরিয়তে অনুমোদিত। সুতরাং এটাও হতে পারে। এতে পুরা পরিবার ইবাদতে শরিক না হলেও সাওয়াবে শরিক হয়। এটাও পরিবারের পক্ষ থেকে এক প্রকার কুরবানী হয়। তবে ইতিপূর্বে আমরা যেমনটি বলেছি যে, এর অর্থ এই নয় যে, পরিবারের একাধিক সদস্যের উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে একটি কুরবানী করা দ্বারা যথেষ্ট হয়ে যাবে! বরং শরিয়তের বিধান এটাই যে, এক পরিবারে একাধিক ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ কুরবানী আদায় করতে হবে।

কেউ কেউ বলে থাকেন, রাসুলুল্লাহ   তো তাঁর পরিবার ও উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন! এর জবাবে সহিহ বুখারীর ব্যাখ্যাকার ইবন হাজর আসকালানী রহ. বলেন,   هو من خصائصهﷺ এটি ছিল, কেবল তাঁর বৈশিষ্ট্য। ( ফাতহুল বারী ৯/৫৯৫)

ইবন ইউনুস রহ. বলেন,

لأن النبيﷺ فعل ذلك، ولأن ذلك ليس بشركة في ملك اللحم، وإنما هي شركة في الثواب والبركة

রাসুলুল্লাহ ﷺ গোশতের মালিকানায় শরিক করার উদ্দেশ্যে নয়; বরং সাওয়াব ও বরকতের মাঝে উম্মতকে শরিক করার উদ্দ্যশ্যে উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন। (আলজামি’ লি ইবন ইউনুস ৫/৮৪৫)

চারমৃত  ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা 

আপনার মৃত মায়ের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারবেন। তবে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী দুই রকমের হয়ে থাকে। ১. অসিয়তের কুরবানী। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে কুরবানী করার জন্য ওসিয়ত করে মারা গেলো। উত্তরাধিকারীরা ওসিয়ত অনুযায়ী কুরবানী করল। এই কুরবানীর গোশত ঘরের লোকজন খেতে পারবে না; বরং সম্পূর্ণটাই গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।

২. কেউ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নফল হিসেবে এমনিতেই সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কুরবানী করল। এই কুরবানীর গোশত কুরবানীদাতা যা ইচ্ছা নিজের জন্য রাখতে পারবে, যা ইচ্ছা অন্যদের দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৫/২৯৩ ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৩৩)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
 
Top