সমগ্র পৃথিবীকে Cryptography (সাংকেতিক ভাষা) শিখিয়েছিলেন যে  মুসলিম বিজ্ঞানী ।


মুসলিম বিজ্ঞানী আল কিন্দি,  তথ্যগোপনীয়তা সম্পর্কিত বিদ্যা বা সাংকেতিক ভাষা সম্পর্কিত বিদ্যা (Cryptography) আবিষ্কার করেন, যার বিশদ বিবরণ উনার A Manuscript on Deciphering Cryptographic Messages বা সাংকেতিক ভাষার অর্থোদ্ধারসম্পর্কিত প্রবন্ধ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। যা যুদ্ধে সেনাবাহিনী শত্রুপক্ষের হাত থেকে জরুরী তথ্য গোপন করা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে রেডিও টেলিভিশন চ্যানেল এবং মোবাইল কোম্পানীগুলো তাদের ফ্রিকোয়েন্সির তথ্যকে সাধারণ রিসিভারের আওতামুক্ত রাখতে ব্যবহার করা হয়।

আল-কিন্দির Risala fi ‘istikhrag al-mu’amma (A Manuscript on Deciphering Cryptographic Messages) গ্রন্থে ভাষা ও সংখ্যাতত্ত্বের এক গভীর ও আধুনিক বোঝাপড়া প্রকাশিত হয়েছে। তিনি গ্রহণযোগ্য পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, পাঠকরা তখনই তার পরিসংখ্যানগত কৌশল প্রয়োগ করেন, যখন রচনাটি ‘পর্যাপ্ত’ অথবা সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে অর্থপূর্ণ হয়। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আরো কিছু পদ্ধতি চালু করেছেন। এসব পদ্ধতির মধ্যে একটি ছিল স্বরবর্ণ-ব্যাঞ্জনবর্ণের অনুপাত বিশ্লেষণ এবং অক্ষরবিন্যাস শৈলী। তিনি উদ্ভাবন করেন, একটি লেখার স্বরবর্ণ-ব্যাঞ্জনবর্ণের অনুপাত নির্দিষ্ট ভাষার ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল। যাহোক, সাংকেতিক ভাষা লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে আল-কিন্দি তিনটি প্রধান প্রয়োগ কৌশল নির্ধারণ করেন, যা তিনি অভিজ্ঞতা-পরিসংখ্যানগত এবং বাস্তবসম্মত-সর্বজনীন মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে আবিষ্কার করেছেন। প্রথম ও সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী এবং উল্লেখযোগ্য সাংকেতিক ভাষা লেখার পদ্ধতি হলো ‘অক্ষরের মধ্যে স্বল্প ব্যবধান’। এ পদ্ধতিকে তিনি ‘অক্ষরের পরিমাণগত উপযোগিতা’ শিরোনামে আখ্যায়িত করেছেন, যা প্রথমে প্রায়ই ঘটে যাওয়া ‘সবচেয়ে বেশি উপযোগী অক্ষর’ নির্ধারণের জন্য কাজ করে। পাঠকদের সুবিধার্থে তিনি স্বাভাবিক বিন্যাসের জন্য বিভিন্ন সারণি তৈরি করেন। পরবর্তী সময়ে এ পদ্ধতি পরিসংখ্যানের জন্য মুখ্য হয়ে ওঠে।

আল-কিন্দির দ্বিতীয় পদ্ধতি ছিল ভাষাগত নিয়মের অন্তর্নিহিত ধারণা, যা সাধারণত আরো বেশি যুক্তিবাদী ও সর্বজনীন পাঠ্য নিয়মকানুনের সঙ্গে জড়িত। তিনি ‘একক শব্দের নিয়ম-কানুন’-এর অংশ হিসেবে অঙ্গকাঠামো ও শব্দের ব্যুত্পত্তি নিয়ে তদন্ত করেন, যা প্রথম পদ্ধতির সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী, এবং এ দ্বিতীয় পদ্ধতিটি ‘গুণগত উপযোগী কৌশল’ হিসেবে ব্যবহূত হয়। এসব নিয়ম অনুসারে আল-কিন্দি ‘সংযুক্ত’ ও ‘অসংযুক্ত’ অক্ষর হিসেবে বিভাজন করে বর্ণনা করেন, এমনকি অক্ষরগুলোর বৈধ আদেশ ও অবস্থানও নির্ধারণ করেন। পরবর্তী সময়ে ইবনে আদলান (১১৮৭-১২৬৮) বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে আল-কিন্দির দ্বিতীয় পদ্ধতির উন্নতি সাধন করেন।

অন্যদিকে সাংকেতিক ভাষা লেখা সম্পর্কে আল-কিন্দির তৃতীয় কৌশল ছিল ‘সম্ভাব্য শব্দ’ পদ্ধতি, যা তিনি প্রকৃত গদ্যের অর্থসূচকের ওপর ভিত্তি করে উদ্ভাবন করেন। তিনি লক্ষ করেছেন কীভাবে প্রচলিত শব্দ অথবা বাক্যাংশ, যেমন ইসলামী রীতি অনুসারে যেকোনো কাজের শুরুতে উচ্চারণ করা হয় ‘পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে’, যা সাংকেতিক অক্ষরে লেখা পাঠোদ্ধারের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ সাংকেতিক ভাষার কোনো লেখক যদি নির্দিষ্ট সাধারণ বা সম্ভাব্য শব্দ বা বাক্যাংশের সঙ্গে সংযুক্ত গুপ্তলিপি খুঁজে পান, তাহলে অনুমান করা যেতে পারে যে সাধারণভাবে লেখা সংশ্লিষ্ট অক্ষরগুলো প্রকাশ করা সম্ভব, যা একটি চাবিকাঠি কিংবা সাধারণ প্রতিস্থাপন হিসেবেও সর্বত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। একই সঙ্গে তিনি আরো বলেছেন, যেসব গোষ্ঠী ও রচনাশৈলীতে অদ্বিতীয় বাক্যাংশ ও সম্ভাব্য শব্দমালা থাকতে পারে, সাংকেতিক ভাষার লেখকরা সেদিকে মনোযোগ দিয়েছেন এবং তা সাংকেতিক ভাষা পাঠোদ্ধারের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব।

IGSRC
 
Top