আলা হজরতের চিংড়ি বিষয়ক ফতোয়া, এবং এ সম্পর্কিত কিছু আলোচনা
------------------------------------------------

আহকাম-ই শরিয়তের প্রথম প্রশ্ন 'চিংড়ি মাছ খাওয়া বৈধ কি না?'
প্রশ্নের জবাবে আলা হজরত বলেন, 'অনেকের মতে চিংড়ি মাছের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে আমি অভিধান, চিকিৎসাশাস্ত্র ও প্রাণিবিদ্যা গবেষণা করে দেখেছি চিংড়ি মাছের অন্তর্ভুক্ত।'


'চিংড়ি মাছের অন্তর্ভুক্ত' - হজরতের এ উক্তিটুকু নিয়েই পর্যালোচনাঃ

-মাছ কী?
'প্রাণিবিজ্ঞানের পরিভাষায়- পানিতে বসবাসকারী শীতল রক্তবিশিষ্ট, মেরুদণ্ডী প্রাণী; যার চলাচলের জন্য যুগ্ম-অযুগ্ম পাখা রয়েছে। ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় এরা। প্রাণী শ্রেনিবিন্যাসে মাছ কর্ডাটা পর্বের অন্তর্গত। যে-সব প্রাণীর মেরুদণ্ড রয়েছে এরাই কর্ডাটা পর্বভুক্ত।'

চিংড়ির মেরুদণ্ড নেই। এদের শ্বসনতন্ত্র মাছের প্রকৃত ফুলকার মতো নয়। এদের রয়েছে সন্ধিযুক্ত পা। দেহের খণ্ডায়ন। প্রতিটি খণ্ডকে বলে সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ। রয়েছে রেচন অঙ্গ হিসেবে সবুজ গ্রন্থির উপস্থিতি। এসকল বৈশিষ্ট্যালোকে প্রাণিশ্রেনিবিন্যাসে চিংড়ি কর্ডাটা নয়, বরং আর্থোপোডা পর্বভুক্ত।

আর্থোপোডা পর্বের ইনসেক্টা শ্রেণির পতঙ্গের সাথে চিংড়ির অনেকটা মিল থাকায় 'চিংড়ি মাছ না পতঙ্গ'- এ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। প্রাণিবিজ্ঞানের পরিভাষায়- 'যে সব প্রাণিদের দেহে খণ্ডায়ন ও বক্ষদেশে তিনজোড়া সন্ধিযুক্ত পা রয়েছে এদের পতঙ্গ বলা হয়। এ হিসেবে তেলাপোকা, গুবরে পোকা, ঘাস ফড়িং, বিচ্ছু ইনসেক্টা শ্রেণিরভুক্ত। অর্থাৎ, এদের অবস্থান আর্থোপোডা পর্বের ইনসেক্টা শ্রেণীতে।

তবে ইনসেক্টা শ্রেণির প্রানী বৈশিষ্ট্যের সাথে চিংড়ির বৈশিষ্ট্যের অনেকটা পার্থক্য থাকায়, চিংড়ির অবস্থান ইনসেক্টার পরিবর্তে 'ম্যালাকোস্ট্রাকা' শ্রেণিতে। যা সরাসরি চিংড়িকে পতঙ্গভুক্ত প্রাণী থেকে আলাদা করে। 

শ্রেণির এই ভিন্নতায় চিংড়ি আর্থোপোড সদস্য হয়েও পোকা বলাটা যথার্থ নয়। কেননা প্রাণি শ্রেণিবিন্যাসে চিংড়ির অবস্থান ইনসেক্টা শ্রেণিতে নয়, ম্যালাকোস্ট্রাকা শ্রেণিতে। যা চিংড়িকে সরাসরি পোকার অন্তর্ভুক্ত করণকে নাকচ করে। তাই বর্তমানে অনেকে বলছেন, 'চিংড়ি সমুদ্রের পোকা মাছ।' যা অনেকটা আলা হজরতের মন্তব্যের অনুরূপ। 

সতর্কতা হিসেবে আলা হজরত রহ. ফতোয়ায় উল্লেখ করেন-
'আমাদের মাযহাব মতে, মাছ ব্যতীত সকল সামুদ্রিক প্রাণী সাধারণভাবে হারাম। সুতরাং, যাঁরা চিংড়িকে মাছের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না, তাঁদের অভিমত অনুযায়ী তা হারাম হওয়া উচিত।' শেষে যুক্ত করেন, 'অপ্রয়োজনে এ ধরণের মতানৈক্য থেকে বেঁচে থাকা উত্তম। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।'

-শরীফ মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান 
প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ
 
Top