যবেহের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নাম বাদ দিলে হারাম



মাসআলাঃ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নাম বাদ দেয় তাহলে উহা আহার করা হালাল হবেনা। উহার দলীল আল্লাহর এ বাণীঃ যে প্রাণী যবেহ করার সময় আল্লাহ্ তায়ালার নাম নেয়া হয়নি উহা আহার করিওনা। উহা পাপ।  ১৭৮

 ➥১৭৮. সূরা আনয়াম, আয়াত-১১২।


এ ব্যাপারে প্রথম শতাব্দী থেকে কোন মতবিরোধ বর্ণিত নেই। হ্যাঁ অবশ্য ভুলক্রমে আল্লাহর নাম বাদ দেয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (رضي الله عنه) এর মাযহাব হল- উহা খাওয়া হারাম। হযরত আলী মরতুজা ও ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে উহা হালাল হওয়া বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ইউসুফ ও অন্যান্য মাশায়েখ (رحمة الله) বলেছেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নাম বাদ দেয়ার ব্যাপারে তো ইজতিহাদের সুযোগ নেই। যদি কাজীও উহা বিক্রয় করা জায়েয হওয়ার সিদ্ধান্ত দেন তাহলেও তা আমল করা যাবেনা। কেননা এটা ইজমা এর পরিপন্থী, এ জন্য যে, উহা মৃত, উহা যবেহ করার সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি। অবশ্য আমাদের হানাফী আলেম গণের মতে ভুলক্রমে আল্লাহর নাম বাদ পড়লে- যবেহকৃত প্রাণী হালাল হবে। কেননা উহাকে হারাম আখ্যায়িত করলে বড় ধরণের অসুবিধা আবশ্যক হয়ে পড়ে, অসুবিধা সম্পন্ন বস্তুকে দূর করতে হবে।


ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে কলমকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, যেমন শরীয়ত প্রবর্তক (ﷺ) ইরশাদ করেন- আমার উম্মত থেকে ভুলক্রমে ও ভুলে যাওয়া ও ঐ সমস্ত কাজ যে কাজে তাকে বাধ্য করা হয়েছে- এ সমস্ত ব্যাপারে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ১৭৯

 ➥১৭৯. জামিউল আহাদিস, ৪র্থ খণ্ড, ২৩৩ পৃষ্ঠা।


এতে বুঝা গেল যে, ভুল করে যিনি যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উল্লেখ করেনি তিনি কোন ফরয বাদ দেননি তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নাম উল্লেখ না করা এর বিপরীত।


হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, একটি সম্প্রদায় হুজুর (ﷺ) এর নিকট আরজ করলেন- কিছু লোক আমাদের নিকট গোস্ত নিয়ে আসেন, আমরা জানিনা তারা উহা যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নিয়েছেন, নাকি নেন নি? এ অবস্থায় আমরা কি করব? হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেন- তোমরা বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে খেয়ে নাও।  ১৮০

 ➥১৮০. সহীহ বুখারী, ১১৯১পৃষ্ঠা।


মাসআলাঃ যবেহ ইখতিয়ারী (আয়াত্ত্বধীন যবেহ) এর মধ্যে প্রাণী যবেহ করার সময় আল্লাহর নামে যবেহ করা শর্ত, তাই যদি কেউ ছাগলকে যমীনে শায়িত করে এবং উহার উপর বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে অতপর তার অন্য কাজ এসে যাওয়ার দরুণ উহাকে যবেহ করল না অতপর অপর একটি ছাগলকে উক্ত বিসমিল্লাহ্ এর ভিত্তিতে যবেহ করল তাহলে উহা খাওয়া জায়েয নয়, আর যদি ছাগলকে নিচে শায়িত করলেন এবং বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে এবং এক ছুরি দিয়ে জখমী করলেন এবং অপর একটি ছুরি দিয়ে যবেহ করলেন, তাহলে উহা খাওয়া হালাল হবে কেননা এ বিসমিল্লাহ্ প্রাণীর উপর হয়েছে। আর শিকারের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ্ শিকারী জন্তু ছেড়ে দেয়ার সময় ও তীর চালানোর সময় বলা শর্ত। অতএব, যদি কেউ শিকারকে তীর নিক্ষেপ করল এবং সে বিসমিল্লাহ্ও পাঠ করল এবং ঐ তীর অন্য আরেকটি প্রাণীকে জখমী করে তাহলে ঐ শিকার হালাল হবে। আর যদি একটি তীর নিক্ষেপের সময় বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে অতপর অপর একটি তীর শিকারের দিকে নিক্ষেপ করে তাহলে উহা খাওয়া যাবেনা। আর যদি স্বীয় প্রশিক্ষিত কুকুরকে ছাড়ার সময় বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে অতপর অপর একটি কুকুর ছেড়ে দেয় এবং সে কুকুরটি শিকার নিয়ে আসে তাহলে উক্ত শিকার হালাল হবে না। কেননা শিকারের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ্ তীর নিক্ষেপের সময় শর্ত। অতএব যদি যবেহ করার সময় আল্লাহর নিকট দোয়া করে তাহলে উহা খাওয়া হালাল হবে না।


মাসআলাঃ যবেহকারী মুসলমান বা আহলে কিতাব হওয়া। উহার দলীল হল এ আহলে কিতাবের যবেহকৃত প্রাণী খাওয়া তোমাদের জন্য হালাল। (সূরা মায়িদা) যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাবার তোমাদের জন্য হালাল।


মাসআলাঃ  জন্তুর মধ্যে সাতটি জিনিষ হারাম- 

(১) প্রবাহিত রক্ত অর্থাৎ যবেহ করার সময় যে রক্ত তীব্র বেগে বের হয়। 

(২) পেশাবের নালী 

(৩) উভয় অন্ডকোষ 

(৪) পায়খানার জায়গা 

(৫) শরীরের ঘাঁট 

(৬) পেশাবের থলি 

(৭) পিত্ত। (হিদায়া) আর কান্য গ্রন্থে মজ্জাকে হারাম লেখেছেন।


মাসআলাঃ সোনা, রূপা ও পিতল (তামা) যদি ধারলো হয় তাহলে উহা দ্বারা যবেহ করলে হালাল হয়। অনুরূপভাবে পাথর দিয়ে যবেহ করলে হালাল হয়ে যাবে এবং ধারালো লাকড়ী দিয়ে যবেহ করলেও হালাল হয়। 


মাসআলাঃ যদি কোন জন্তু পানিতে পতিত হয় এবং দ্রুত উহাকে ধরতে সক্ষম না হয় এবং মরে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে উহাকে আঘাত করলে খাওয়া হালাল হয়।


মাসআলাঃ যে জন্তু মানুষকে মারতে আসছে, এবং উহাকে পাকড়াও করা সম্ভব না হয় তাহলে ধারালো হাতিয়ার এর উপর বিসমিল্লাহ্ বলে উহাকে মেরে আঘাত করলে খাওয়া হালাল হয়।


মাসআলাঃ উটের ক্ষেত্রে নাহর অর্থাৎ- নেজা (বর্শা) ইত্যাদি মেরে রগ সমূহ কাটা মুস্তাহাব। আর যবেহ করা মাকরূহ এবং গাভী, ষাড় ও ছাগলকে যবেহ করা মুস্তাহাব। আর নাহর মাকরূহ।


মাসআলাঃ জন্তুকে যবেহ করার পর উহার পেট থেকে মৃত বাচ্চা বের হল তাহলে ইমাম আযম আবু হানীফা, যুফর ও হাসান বিন যিয়াদ এর মতে উক্ত বাচ্চা খাওয়া জায়েয হবেনা। উহার উপরই ফতওয়া, হিদায়া ইত্যাদি।


মাসআলাঃ যবেহ করার সময় যদি মাথা কেটে পৃথক হয়ে যায় তাহলে উক্ত মাথা যবেহকৃত প্রাণী খাওয়া হালাল হবে। ইহা হিদায়া গ্রন্থে সারমর্ম। (আল্লাহ্ তায়ালা অধিক জ্ঞাত সঠিক সম্পর্কে)


মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি জন্তুকে শায়িত করে বিছমিল্লাহ্ বলার পূর্বে “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন ফুলানিন” (হে আল্লাহ্! আপনি অমুক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কবুল করুন)। বা অন্য কোন দোয়া পাঠ করার পর বিছমিল্লাহ্ বলে যবেহ করে তাহলে যবেহকৃত প্রাণী হালাল হবে। 


মাসআলাঃ নাখাহ্ মাকরূহে তাহরীমী। আর নাখাহ্ জন্তুর ঘাড়ের হাড়ের মধ্যে সাদা রগ রয়েছে, উহা কেটে দেয়াকে নাখাহ্ বলে। আর যবেহ করার সময় মাথাকে টেনে ধরা যাতে যবেহ এর স্থান ভালভাবে প্রকাশ পায়।

 
Top