🕌কন্যা সন্তানের লালন-পালন

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ وَالصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى خَاتَمِ النَّبِيِّنَ أَمَّا بَعْدُ فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

১. দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগ ও মারকাযী মজলিসে শূরা হযরত মাওলানা আবু হামিদ হাজী মুহাম্মদ ইমরান আত্তারী من ظله العالي এই বয়ান ১৪ই শাওয়ালুল মুকাররম ১৪৩১ হিজরী মোতাবেক ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে কুরআন ও সুন্নাহ প্রচারের আশিকানে রাসূলে দ্বীনি সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনা, বাবুল মদীনা (করাচী)-তে সাপ্তাহিক সুন্নতে ভরা ইজতেমায় প্রদান করেন। ১০ই রবিউল আউয়াল ১৪৩৪ হিজরী মোতাবেক ২৩শে জানুয়ারী ২০১৩ তারিখে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংযোজনের পর লিখিত আকারে পেশ করা হচ্ছে।

(শো'বায়ে রসাইল, দা'ওয়াতে ইসলামী, মাকতাবাতুল মদীনা মজলিস)


🕌দরূদ শরীফের ফযিলত

আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর বাণী: যে ব্যক্তি আমার উপর ১০০ বার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ পাক তার উভয় চোখের মাঝে লিখে দেন যে, এই ব্যক্তি মুনাফেকী ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত এবং কিয়ামতের দিন তাকে শহীদদের সাথে রাখা হবে।

(জামউল যাওয়ায়িদ, কিতাবুল আদইয়াত, বাবু ফিস সালাতি আলান নবী, ১০/৩৫৩, হাদিস: ১৭২৯৮)

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد


🕌অদ্বিতীয়া শাহজাদী

হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শাহ কিরমানী رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ এর শাহজাদী যখন বিবাহের উপযুক্ত হলেন, তখন বাদশাহর দরবার থেকে বিবাহের প্রস্তাব এলো। কিন্তু তিনি তিন দিনের সময় চাইলেন এবং মসজিদে মসজিদে ঘুরে কোনো পরহেজগার যুবককে খুঁজতে লাগলেন। এক যুবকের উপর তাঁর দৃষ্টি পড়ল, যে খুব সুন্দরভাবে নামায আদায় করলো (এবং কেঁদে কেঁদে দু'আ করলো)। শায়খ তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তোমার কি বিবাহ হয়েছে? সে না-সূচক জবাব দিলো। আবার জিজ্ঞেস করলেন: বিবাহ করতে চাও? মেয়েটি কুরআন মাজীদ পাঠ করে, নামায-রোযা আদায় করে এবং চরিত্র ও সুন্দর চেহারার অধিকারিণী। সে বললো: আমাকে কে বিবাহ করবে! শায়খ বললেন: আমি করাবো, এই নাও কিছু দিরহাম! এক দিরহামের রুটি, এক দিরহামের তরকারী এবং এক দিরহামের সুগন্ধি কিনে আনো। এভাবে শাহ কিরমানী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ নিজ পুণ্যবতী কন্যার বিবাহ তার সাথে পড়িয়ে দিলেন। নববধূ যখন বরের ঘরে এলো, তখন সে দেখলো যে পানির কলসীর উপর একটি রুটি রাখা আছে। সে জিজ্ঞেস করলো: এই রুটি কেমন? বর বললো: এটা গতকালের বাসি রুটি, আমি ইফতারের জন্য রেখে দিয়েছিলাম। একথা শুনে সে ফিরে যেতে লাগলো। এটা দেখে বর বললো: আমি জানতাম যে শায়খ শাহ কিরমানী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এর শাহজাদী আমার মতো গরীব মানুষের ঘরে থাকতে পারবে না। নববধূ বললো: আমি আপনার দারিদ্র্যের কারণে নয়, বরং এজন্য ফিরে যাচ্ছি যে, আল্লাহ পাকের উপর আপনার বিশ্বাস খুবই দুর্বল মনে হচ্ছে, তাই তো আপনি আগামীকালের জন্য রুটি বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমার তো আমার পিতার উপর আশ্চর্য লাগছে যে, তিনি আপনাকে পবিত্র স্বভাব ও সৎকর্মপরায়ণ কিভাবে বললেন! বর একথা শুনে খুবই লজ্জিত হলো এবং বললো: এই দুর্বলতার জন্য ক্ষমা প্রার্থী। নববধূ বললো: আপনার কৈফিয়ত আপনিই জানেন, তবে! আমি এমন ঘরে থাকতে পারবো না যেখানে একবেলার খাবার জমা করে রাখা হয়, এখন হয় আমি থাকবো।

অথবা রুটি। বর তৎক্ষণাৎ গিয়ে রুটি সদকা করে দিলো (এবং এমন ধার্মিক স্বভাবের অদ্বিতীয়া শাহজাদীর স্বামী হতে পেরে আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করলো)।

(রওষুর রায়‍্যাহীন, আল-হিকায়াতুস সানিয়াতু ওয়াত তিসউনা বা'দাল মিআহ, পৃ: ১৯২)

আল্লাহ পাকের রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।


🕌পরিপূর্ণ বিশ্বাসের প্রতিফলন

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো, ভরসাকারীদেরও কী চমৎকার আচরণ! শাহজাদী হওয়া সত্ত্বেও এমন তাওয়াক্কুল যে, আগামীকালের জন্য খাবার বাঁচিয়ে রাখাটাও তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়! এসবই হলো পরিপূর্ণ বিশ্বাসের প্রতিফলন, কারণ যে মালিক আজ খাইয়েছেন, তিনি আগামী কালও খাওয়াতে অবশ্যই সক্ষম।


🕌শায়খ শাহ কিরমানীর পরিচিতি

আমিরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা উসমান গণী رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ এর খিলাফতকালে ইসলামী বিজয়ের ধারা যখন মাকরান উপত্যকার পশ্চিমে অবস্থিত বিশাল ও বিস্তৃত কেরমান রাজ্য পর্যন্ত পৌঁছল, তখন কেরমানের বাদশাহ ইসলামী সালতানাতের করদ রাজ্য হওয়ার মধ্যেই নিরাপত্তা খুঁজে পেয়ে সন্ধির দিকে অগ্রসর হন এবং এভাবে ইসলামের আলোয় কেরমান রাজ্যের ঘরে ঘরে আলোকিত হয়ে ওঠে। তৃতীয় হিজরী শতাব্দীতে কেরমানের শাহী খান্দানে এমন এক ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়, যিনি এই খান্দানের নাম পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত উজ্জ্বল করে দেন। এই ব্যক্তিত্ব ছিলেন হযরত সায়্যিদুনা শাহ বিন শুজা কেরমানী رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ শাহী খান্দানের সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সরকারের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে তাঁরই রাজত্ব ছিল, কারণ এক বর্ণনা অনুযায়ী তিনি আবদালগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

তাঁর মর্যাদার উচ্চতা শুধু এই কথা থেকেই অনুমান করা যায় যে, যখন তাঁর ওফাত হলো, তখন হযরত সায়্যিদুনা আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আহমদ رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: আমি হযরত সায়্যিদুনা সাহল বিন আবদুল্লাহ رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম, হঠাৎ হাঁপাতে কাঁপতে একটি কবুতর আমাদের সামনে এসে...... পড়ল। আমি তাকে ওড়াতে লাগলে হযরত সায়্যিদুনা সাহল বিন আবদুল্লাহ رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এমনটি করতে নিষেধ করে ইরশাদ করলেন: তাকে কিছু খাওয়াও, পান করাও। হযরত সায়্যিদুনা আবু আবদুল্লাহ رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: আমি একটি রুটির ছোট ছোট টুকরো করে তার সামনে রাখলাম, সে খেতে লাগলো। তারপর আমি পানি রাখলাম, সে পানিও পান করলো, এরপর সে উড়ে গেল। আমি এসব দেখে অবাক হচ্ছিলাম, অবশেষে আমি জিজ্ঞেসই করে ফেললাম যে, এই কবুতরের ঘটনা কী? তখন তিনি رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বললেন: শাহ কিরমানী এই নশ্বর জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং এই কবুতর আমার কাছে সমবেদনা জানাতে এসেছিল।

(হিলয়াতুল আউলিয়া, যিকরুল জামা'আতিল আরিফীনাল ইরাকিয়্যীন, শাহ বিন শুজা আল-কিরমানী, ১০/২৫৪)


🕌মহান পিতার মহান কন্যা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! লক্ষ্য করুন! হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শাহ কেরমানী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এত বড় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও নিজ শাহজাদীর প্রতিপালনে অবহেলা করেননি, বরং তাকে দুনিয়ার চাকচিক্য থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি সর্বাবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টিতে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ থাকার মাদানী চিন্তাধারাও দান করেছেন। সুতরাং মনে রাখবেন! সন্তানের প্রতিপালনে যেখানে মায়ের বড় ভূমিকা রয়েছে, সেখানে পিতাও......একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের ভূমিকা পালন করেন, বিশেষ করে কন্যার ক্ষেত্রে পিতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


🕌ইসলামের পূর্বে নারীর মর্যাদা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ইসলামের পূর্বে যদি পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে নারীর মর্যাদা দেখা যায়, তাহলে জানা যাবে যে নারীরা পুরুষদের অধীন ছিল। পুরুষ পিতা হোক বা স্বামী, পুত্র হোক বা ভাই, তাদের সাথে যেমন খুশি আচরণ করত। নারীদের মর্যাদা ছিল কেবল একজন চাকরাণীর মতো। কোথাও তাদের সাথে পশুর চেয়েও খারাপ আচরণ করা হতো, আবার কোথাও উত্তরাধিকার সূত্রে অন্যান্য ধন-সম্পদের মতো তাদেরও ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হতো। কোথাও তাদের স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে তার চিতায় (কাঠের স্তূপ যার উপর হিন্দুরা তাদের মৃতদেহ পোড়ায়) জীবন্ত পুড়ে সতী হতে হতো (অর্থাৎ বিধবাকে মৃত স্বামীর লাশের সাথে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হতো), আবার কোথাও জন্মের সাথে সাথেই তাদের জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো, কারণ কন্যার জন্মকে লজ্জার কারণ মনে করা হতো। অনেক সময় কোনো ব্যক্তিকে জানানো হতো যে তার কন্যা সন্তান হয়েছে, তখন সে বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত মানুষের সামনে আসত না এবং চিন্তা করত যে এই ব্যাপারে সে কী করবে? অপমান সহ্য করে কন্যার প্রতিপালন করবে, নাকি লজ্জা থেকে বাঁচতে নিজ কন্যাকে জীবন্ত...... মাটিতে পুঁতে ফেলবে। যেমনটি ১৪ পারার সূরা নাহলের ৫৮ ও ৫৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:

وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًا وَهُوَ كَظِيمٌ يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ

(পারা: ১৪, সূরা: নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯)

কানযুল ঈমানের অনুবাদ: এবং যখন

তাদের মধ্যে কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন সারাদিন তার মুখমন্ডল কালো থাকে এবং সে ক্রোধকে হজম করে। লোকদের নিকত থেকে আত্মগোপন করে বেড়ায়, এ সুসংবাদের গ্লানি হেতু; তাকে কি লাঞ্ছনা সহকারে রাখবে কিংবা তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে? ওহে! তারা কতই নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত করে!


🕌জীবন্ত কবর দেওয়ার কদর্য প্রথার সূচনা

জাহেলিয়াতের যুগে অনেক কদর্য ও নিষ্ঠুর প্রথা প্রচলিত ছিল, যা লোকেরা অত্যন্ত গর্বের সাথে পালন করত। যেমন, একটি প্রথা এটাও ছিল যে, কিছু লোক তাদের কন্যাদের জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলত এবং এর জন্য দুঃখিত বা অনুতপ্ত না হয়ে বরং গর্ব করত। এই নির্মম কাজের সূচনার কারণ হিসেবে বলা হয় যে, একবার রাবী'আ গোত্রের উপর তাদের শত্রুরা রাতের আঁধারে আক্রমণ করে এবং রাবী'আর সর্দারের কন্যাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। যখন উভয় গোত্রের মধ্যে সন্ধি হলো, তখন সেই কন্যাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হলো এবং তাকে অধিকার দেওয়া হলো যে, সে চাইলে তার পিতার কাছে থাকতে পারে অথবা বন্দীদশায় যার সাথে ছিল তার কাছে ফিরে যেতে পারে। সে সেই ব্যক্তির কাছে যাওয়াই পছন্দ করলো। এতে তার পিতা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন এবং নিজ গোত্রে এই প্রথা চালু করেন যে, যখন কারও কন্যা সন্তান জন্মাবে, তখন তাকে জীবন্ত মাটিতে - পুঁতে ফেলা হবে, যাতে ভবিষ্যতে তাদের গোত্রের এমন অপমান না হয়। এরপর অন্যান্য গোত্রেও এই প্রথা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

(রুহুল মা'আনী, আল-জুযউস সালাসুন, আত-তাকবীর, তাহতাল আয়াত ৮, পৃ: ৩৬০)


🕌কন্যাদের কবর দেওয়ার কয়েকটি কারণ

  • ★ সাধারণ আরবদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল।

    কন্যা সন্তান লালন-পালন করা, বড় করা, তারপর তাদের বিবাহ দেওয়াকে তারা নিজেদের জন্য অসহনীয় বোঝা মনে করত, তাই শৈশবেই তাদের ঠিকানা লাগিয়ে দিত (অর্থাৎ হত্যা করত)।

  • ★ বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে পারস্পরিক রক্তপাত (হত্যা ও লুণ্ঠন) দৈনন্দিন ব্যাপার ছিল।

    ছেলেরা বড় হয়ে এই ধরনের লড়াইয়ে তাদের সাহায্য করত। মেয়েরা লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে পারত না......এবং শত্রুদের হাত থেকে তাদের বাঁচানোর জন্যেও অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো, তাই তারা তাদের জীবিত রাখাকে নিজেদের জন্য জীবনের আপদ মনে করত।

  • ★ তাদের জাহেলী ঔদ্ধত্যও (অহংকার) এর একটি কারণ ছিল।

    তারা কাউকে নিজেদের জামাতা বানানোকে নিজেদের জন্য অপমানজনক মনে করত। এর থেকে বাঁচার এটাই সহজ উপায় ছিল যে, কন্যা জীবিতও থাকবে না, তাকে বিবাহও দেওয়া হবে না এবং কেউ তাদের জামাতাও হবে না।

কারণ যদিও অনেকগুলো ছিল, কিন্তু এই নির্মম প্রথা আরবের জাহেলী সমাজে তার পাঞ্জা গেড়ে বসেছিল। সাধারণত একে কোনো নিন্দনীয় কাজ বা জুলুমও মনে করা হতো না। পিতা তার সন্তানদের সর্বময় কর্তা ছিল, সে তাকে জীবিত রাখুক বা হত্যা করুক, এ ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি করার অধিকার ছিল না। বরং একই ব্যক্তি তার একাধিক কন্যাকে জীবন্ত কবর দিয়ে দিত এবং তার বিন্দুমাত্র দুঃখও হতো না। যেমন আমিরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুক رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ বলেন যে, হযরত সায়্যিদুনা কায়স বিন আসিম رَضِيَ اللهُ عَنْهُ একবার নবী صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর দরবারে উপস্থিত হয়ে (জাহেলিয়াতের যুগে কন্যাদের জীবন্ত কবর দেওয়ার কাজের জন্য লজ্জিত হয়ে) আরয করলেন: আমি জাহেলিয়াতের যুগে আটজন কন্যাকে জীবন্ত কবর দিয়েছি (আমার এই গুনাহ কি মাফ হবে?)......তখন নবীয়ে পাক صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: (ক্ষমা তো ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই হয়ে গেছে, তবে!)

প্রত্যেক জীবন্ত কবর দেওয়া কন্যার বিনিময়ে তুমি একজন গোলাম আজাদ করো। আরয করলেন: আমার কাছে অনেক উট আছে। ইরশাদ করলেন: তাহলে প্রত্যেক কন্যার বিনিময়ে একটি করে পশু সদকা করো।

(আল-মু'জামুল কবীর, ১৮/৩৩৭, হাদিস: ৮৬৩)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হযরত সায়্যিদুনা কায়স বিন আসিম

رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ এর স্বীকারোক্তি থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, যখন তিনি নিজ আট কন্যাকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলেন, তখন না জানি অন্যরা কত কন্যাকে কবর দিয়েছিল! কিন্তু এরপরেও সেই পাষাণ হৃদয়ের সমাজে কদাচিৎ এমন লোকও ছিলেন যারা নিষ্পাপ কন্যাদের অসহায়ত্বে রক্তের অশ্রু ঝরাতেন এবং যতদূর সম্ভব কন্যাদের জীবন্ত কবর দেওয়া থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন। যেমন আমীরুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ফারুকে আ'যম رَضِيَ اللهُ عَنْهُ এর চাচাতো ভাই এবং হযরত সায়্যিদুনা সা'ঈদ বিন যায়েদ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ এর পিতা যায়েদ বিন আমর বিন নুফাইল যখন জানতে পারতেন যে, অমুকের কন্যা সন্তান হয়েছে এবং সে তাকে জীবন্ত কবর দিতে চায়, তখন দৌড়ে তার কাছে যেতেন এবং সেই শিশুর প্রতিপালন ও তার বিবাহ ইত্যাদি খরচের দায়িত্ব নিতেন এবং এভাবে সেই ছোট্ট..... কলিটিকে ফোটার আগেই পিষে ফেলা থেকে বাঁচিয়ে নিতেন। প্রসিদ্ধ কবি ফারাজদাকের দাদা হযরত সায়্যিদুনা সা'সা'আহ বিন নাজিয়াহ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ এরও এটাই নিয়ম ছিল। হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা আলুসী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ তাবারানীর সূত্রে লিখেছেন যে, হযরত সায়্যিদুনা সা'সা'আহ বিন নাজিয়াহ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ! আমি জাহেলিয়াতের যুগেও নেক কাজ করেছি, আমি কি তারও প্রতিদান পাব? যেমন আমি ৩৬০টি কন্যাকে জীবন্ত কবর দেওয়া থেকে বাঁচিয়েছি এবং প্রত্যেকের বিনিময়ে দুটি করে দশটি গর্ভবতী উটনী এবং একটি করে উট ফিদইয়া হিসেবে তাদের পিতাদের দিয়েছি, আমি কি এই কাজের কোনো প্রতিদান পাব? তখন নবী করীম صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: এই কাজের প্রতিদান তো তুমি পেয়ে গেছ, আল্লাহ পাক তোমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফিক দান করেছেন এবং তোমাকে ঈমানের নিয়ামত দ্বারা সম্মানিত করেছেন। (রুহুল মা'আনী, আল-জুযউস সালাসুন, সূরাতুত তাকবীর, তাহতাল আয়াত ৯, পৃ: ৩৬১। আল-মু'জামুল কবীর, ৮/৭৭, হাদিস: ৭৪১২)


🕌কন্যারা পেল ইসলামের ছায়া

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ইসলামের আলোকময় সকাল উদিত হওয়ার সাথে সাথে চতুর্দিক থেকে কুফর এবং জুলুম ও অত্যাচারের অন্ধকারও দূর হয়ে গেল এবং এভাবে কন্যারা ইসলামের বরকতে এক নতুন...... জীবন পেল। যে লোকেরা আগে কন্যাদের জীবন্ত কবর দেওয়াকে গর্বের বিষয় মনে করত, তারা এখন কন্যাদের নিজেদের চোখের মণি মনে করতে লাগল, কারণ অসহায়দের সহায়, আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم তাদের সামনে কেবল নিজ শাহজাদীদের প্রতি ভালোবাসার বাস্তব নমুনা পেশ করেননি, বরং তাদের এই মাদানী মানসিকতাও তৈরি করেছিলেন যে, কন্যাদের লজ্জার কারণ মনে করা উচিত নয়, কারণ তারা আল্লাহ পাকের রহমত ও ক্ষমার মাধ্যম। এছাড়াও আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم সন্তান-সন্ততি, বিশেষ করে কন্যাদের প্রতিপালন সম্পর্কিত ফযিলত বর্ণনা করে তাদের গুরুত্বও খুব ভালোভাবে তুলে ধরেছেন। অতএব, কন্যাদের ফযিলত সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিসে মুবারকা লক্ষ্য করুন।


🕌কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যের সুসংবাদ

নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর রহমতের বাণী হলো: যখন কারও ঘরে কন্যা সন্তান জন্মায়, তখন আল্লাহ পাক তার ঘরে ফেরেশতাদের পাঠান, যারা এসে বলে: হে গৃহবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তারপর ফেরেশতারা তাদের ডানা দিয়ে...... সেই কন্যাকে ঘিরে ফেলে এবং তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে: এক দুর্বল কন্যা দুর্বল নারী থেকে জন্মগ্রহণ করেছে, যে তার দেখাশোনা করবে, কিয়ামত পর্যন্ত তাকে সাহায্য করা হবে।

(আল-মু'জামুস সগীর, প্রথম খণ্ড, ১/৩০)


🕌একজন কন্যার প্রতিপালনের পুরস্কার

রাসূলে পাক صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: যার একটি কন্যা সন্তান হবে, সে তাকে আদব শেখাবে এবং উত্তম আদব শেখাবে, তাকে শিক্ষা দেবে এবং উত্তম শিক্ষা দেবে এবং আল্লাহ পাক তাকে যে নেয়ামত দান করেছেন, তা থেকে তাকেও দেবে, তাহলে তার সেই কন্যা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল ও পর্দা হয়ে যাবে।

(হিলয়াতুল আউলিয়া, ৫/২৭, হাদিস: ৬৩৪৮)


🕌তিন কন্যার প্রতিপালনের পুরস্কার

প্রিয় নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর নিরাপত্তার বাণী হলো: যার তিনটি কন্যা সন্তান হবে এবং সে তাদের উপর ধৈর্য ধারণ করবে, তাদের খাওয়াবে, পান করাবে এবং নিজ উপার্জন থেকে তাদের কাপড় পরাবে, তাহলে সেই কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে পর্দা হয়ে যাবে।

(ইবনে মাজাহ, কিতাবুল আদব, ৪/১৮৯, হাদিস: ৩৬৬৯)


🕌আল্লাহ পাক জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন

উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا বলেন: আমার কাছে এক অভাবী মহিলা তার দুই কন্যাকে নিয়ে এলো, আমি তাকে তিনটি খেজুর দিলাম। সে একটি করে খেজুর দুই কন্যাকে দিল এবং একটি খেজুর খাওয়ার জন্য নিজের মুখের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, এমন সময় তার কন্যারা তার থেকেও সেই খেজুরটি চেয়ে নিলো। সে সেই খেজুরটিও ভেঙে দুই কন্যাকে খাইয়ে দিলো। আমার এতে আশ্চর্য লাগলো, তারপর আমি রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর কাছে এই ঘটনার উল্লেখ করলে তিনি বললেন: আল্লাহ পাক তার (এই কাজের) কারণে সেই মহিলার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন।

(মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ, পৃ. ১৪১৫, হাদিস: ২৬৩০)


🕌কন্যা বা বোনদের প্রতিপালনের পুরস্কার

রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর বাণী হলো: যে ব্যক্তি তিন কন্যা বা বোনের এমনভাবে প্রতিপালন করবে যে, তাদের আদব শেখাবে এবং তাদের প্রতি দয়ার আচরণ করবে...... যতক্ষণ না আল্লাহ পাক তাদের অভাবমুক্ত করে দেন (অর্থাৎ তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় বা তাদের বিবাহ হয়ে যায় অথবা তারা ধন-সম্পদের অধিকারী হয়ে যায়), আল্লাহ পাক তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেন। এই নববী ফরমান শুনে সাহাবায়ে কেরাম عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان আরয করলেন: যদি কোনো ব্যক্তি দুই কন্যার প্রতিপালন করে? ইরশাদ করলেন: তার জন্যও এই একই সাওয়াব ও পুরস্কার রয়েছে, এমনকি লোকেরা যদি একজনের কথা উল্লেখ করত, তাহলে তিনি তার ব্যাপারেও এই একই কথা ইরশাদ করতেন।

(শরহুস সুন্নাহ লিল বাগাভী, কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ, ৬/৪৫২, হাদিস: ৩৩৫১)


🕌কৃতজ্ঞতার স্থান

ইসলামী বোনদের জন্য কৃতজ্ঞতার স্থান হলো এই যে, এক সময় এমন ছিল যখন দুনিয়ায় তাদের জন্ম হওয়া লজ্জা ও অপমানের কারণ মনে করা হতো, কিন্তু ইসলামী শিক্ষা, কুরআনের আয়াত এবং নবীর নির্দেশাবলী তাদের গুরুত্ব তুলে ধরে এই চেতনা জাগ্রত করেছে যে, কন্যারা আল্লাহর রহমত বর্ষণের কারণ, সুতরাং তাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত। একারণেই আজকের এই অশান্ত সময়ে ইসলামী শিক্ষায় সজ্জিত পিতা-মাতার প্রশিক্ষণ ও মনোযোগ যেখানে পুত্রদের সমাজের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার উপর কেন্দ্রীভূত, সেখানে তারা কন্যার উত্তম প্রতিপালন থেকেও উদাসীন নয়। বরং কন্যার মহিমা ও গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে তার সম্মান ও সতীত্ব রক্ষার জন্য ইসলাম যে সোনালী মাদানী ফুল দান করেছে, তারা সেগুলোকে প্রাণের সম্পদ মনে করে।


🕌কন্যা প্রতিপালনের মাদানী ফুল

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আজকের এই অবর্ণনীয় পরিস্থিতিতে ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরত্ব এবং অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণ মুসলমানদের কোথাও ছাড়েনি। দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান সময়ে মুসলমানদের জীবনযাত্রা, রীতিনীতি এবং প্রথা ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সন্তানদের, বিশেষ করে কন্যার সঠিক ইসলামী প্রতিপালন অত্যন্ত কঠিন মনে হয়। সুতরাং, যদি আমরা আমাদের কন্যার সঠিক প্রতিপালন করতে চাই, তাহলে প্রথমে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা জরুরি, যাতে ইসলামী শিক্ষার আলোকে আমরা সঠিকভাবে আমাদের এই দায়িত্ব পালন করতে পারি। কারণ আজকের কন্যা আগামী দিনে কারও স্ত্রী ও পুত্রবধূ হবে, তারপর মা এবং পরে শাশুড়ি হবে। সুতরাং আজ এই কন্যার প্রতিপালনের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া জরুরি, যাতে আগামীকাল যখন সে নিজে কারও মা হবে, তখন নিজ সন্তানদের উত্তম প্রতিপালনে অবহেলা না করে।

আসুন! এমন কিছু মাদানী ফুলের প্রতি দৃষ্টি দিই, যা এক কন্যার প্রতিপালনে মৌলিক গুরুত্ব রাখে:


🕌(১) কন্যার জন্মের প্রতিক্রিয়া

পুত্র হোক বা কন্যা, সর্বাবস্থায় শুকরিয়া আদায় করা উচিত, কারণ পুত্র যদি আল্লাহ পাকের নেয়ামত হয়, তাহলে কন্যা রহমত। উভয়েই ভালোবাসা ও স্নেহের যোগ্য। আধুনিক যুগে এটা সাধারণভাবে দেখা যায় যে, পুত্রের জন্মে যে আনন্দ প্রকাশ করা হয়, কন্যার জন্মে তার সিকিভাগও হয় না। যেহেতু জাগতিকভাবে কন্যাদের থেকে পিতামাতা ও পরিবারের বাহ্যত কোনো লাভ হয় না, সম্ভবত একারণেই কিছু অজ্ঞ লোক কন্যাদের জন্মে নাক সিঁটকায় এবং অনেক সময় কন্যার মাকে নানা রকম কটু কথা শোনায়, তালাকের হুমকি দেয়, এমনকি পরপর কন্যা সন্তান হলে এই হুমকিকে বাস্তবে রূপও দেয়। এমন লোকদের উচিত যে, তারা পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলো ছাড়াও নিম্নলিখিত রেওয়ায়েতটির প্রতিও মনোযোগ দেবে, যেখানে কন্যার জন্মে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। যেমন, হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে আকরাম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর সুমহান বাণী হলো: যার কন্যা সন্তান জন্মাবে এবং সে তাকে জীবন্ত কবর দেবে না, তুচ্ছ মনে করবে না এবং তার উপর পুত্রকে প্রাধান্য দেবে না তবে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (মুসতাদরাক, কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ, ৫/২৪৮, হাদিস: ৭৪২৮)


🕌(২) কানে আযান

কন্যার জন্মে দুঃখিত না হয়ে বরং আনন্দ প্রকাশ করার পর সর্বপ্রথম কাজ হলো তার কানে আল্লাহ ও রাসূল صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর আনুগত্যের বার্তা আযান ও ইকামতের মাধ্যমে পৌঁছানো, যাতে তার আত্মা তাওহীদের আলোয় আলোকিত হয় এবং অন্তর নবী প্রেমের প্রদীপে প্রজ্বলিত হয়। এমন করা মুস্তাহাব এবং সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, দা'ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত ২২ পৃষ্ঠা সম্বলিত পুস্তিকা "আকীকা সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর" এর ৭পৃষ্ঠায় আছে: "যখন শিশু জন্মায়, তখন মুস্তাহাব হলো তার কানে আযান ও ইকামত বলা। আযান বলার দ্বারা إن شاء الله বালা-মুসিবত দূর হয়ে যাবে।" ইমামে আলী মাকাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন ইবনে আলী رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর সুমহান বাণী হলো: যার সন্তান জন্মাবে, তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত বলা হলে, সেই শিশু উন্মুস সিবইয়ান (শিশুদের রোগ) থেকে সুরক্ষিত থাকবে। (মুসনাদে আবী ইয়া'লা, ৬/৩২, হাদিস: ৬৭৪৭) উন্মুস সিবইয়ানের ব্যাপারে আশিকদের ইমাম, ইমামে আহলে সুন্নত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, আশিকে মাহে নবুয়ত, মাওলানা ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: (মৃগী) খুবই নিকৃষ্ট রোগ এবং একেই উম্মুস সিবইয়ান বলা হয়, যদি শিশুদের হয়, নতুবা সরা (মৃগী)।

(মলফুযাতে আ'লা হযরত, পৃ: ৪১৭)

"নুযহাতুল ক্বারী"-তে আছে: সরা' এর অর্থ হলো বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাওয়া। এটা কখনো আখলাত (শরীরের চারটি তরল: (১) সফরা অর্থাৎ পিত্ত, (২) রক্ত, (৩) কফ এবং (৪) সাওদা অর্থাৎ পোড়া কালো কফ) এর বিকৃতির কারণে হয়, যাকে মৃগী বলা হয় এবং কখনো জ্বিন বা নিকৃষ্ট হামজাদের প্রভাবে হয়। (নুযহাতুল ক্বারী, ৫/৪৮৯) আমার আক্বা, আলা হযরত ইমাম আহমদ রযা رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ বলেন: যখন শিশু জন্মায়, তখন সাথে সাথে ডান কানে আযান এবং বাম কানে তাকবীর বলবে, যাতে শয়তানের।

কুমন্ত্রণা ও উন্মুস সিবইয়ান থেকে রক্ষা পায়। (ফাতাওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪/৪৫২) উত্তম হলো, ডান কানে চারবার আযান এবং বাম কানে তিনবার ইকামত বলা।

যদি একবার আযান ও ইকামত বলা হয়, তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।

সাত দিনের দিন তার নাম রাখা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করা হবে এবং মাথা মুণ্ডানোর সময় আকীকা করা হবে এবং চুল ওজন করে ততটুকু রূপা

বা সোনা সদকা করা হবে। (বাহারে শরীয়ত, ৩/৩৫৫) অনেক লোকের মধ্যে এই

প্রচলন আছে যে, ছেলে সন্তান হলে আযান দেওয়া হয় আর মেয়ে সন্তান হলে দেওয়া হয় না। এমনটা করা উচিত নয়, বরং মেয়ে সন্তান হলেও আযান ও ইকামত বলা উচিত। (প্রাগুক্ত)


🕌(৩) তাহনীক

তাহনীক অর্থাৎ মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যাপারে হযরত সায়্যিদুনা আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া বিন শরফ নববী رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ শরহে সহীহ মুসলিমে বলেন: সকল ওলামায়ে কেরামের এই ব্যাপারে ঐক্যমত আছে যে, শিশু জন্মের পর খেজুর (বা কোনো মিষ্টি জিনিস) দ্বারা তাহনীক করা মুস্তাহাব। যদি খেজুর না থাকে, তাহলে যে কোনো মিষ্টি জিনিস পাওয়া যায়, তা দিয়েই তাহনীক করা যেতে পারে। এর পদ্ধতি হলো, তাহনীককারী খেজুরকে মুখে খুব ভালোভাবে চিবিয়ে নরম করবে যাতে তা গিলে ফেলা যায়, তারপর শিশুর মুখ খুলে তার মধ্যে রেখে দেবে। মুস্তাহাব হলো, তাহনীককারী নেককার, মুত্তাকী ও পরহেযগার হবে, সে পুরুষ হোক বা নারী। যদি এমন কোনো ব্যক্তি আশেপাশে উপস্থিত না থাকে...

তাহলে নবজাতককে তাহনীকের জন্য কোনো নেককার ব্যক্তির কাছে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। (শরহে সহীহ মুসলিম, কিতাবুল আদব, বাবু ইস্তিহবাবি তাহনীকিল মাওলুদ, চতুর্দশ খণ্ড, ৭/১২২) যেমন উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا থেকে বর্ণিত আছে যে, লোকেরা তাদের (নবজাতক( শিশুদের রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর দরবারে নিয়ে আসত, তিনি তাদের জন্য কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করতেন এবং তাহনীক করতেন।

( মুসলিম, কিতাবুল আদব, বাবু ইস্তিহবাবি তাহনীকিল মাওলুদ... ইত্যাদি, পৃ: ১১৮৪, হাদিস: ২১৪৭)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সাহাবায়ে কেরাম عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان এর আমল থেকেও জানা যায় যে, শিশুদের, বিশেষ করে কন্যার তাহনীক নেককার ও মুত্তাকী মুসলমানদের দ্বারা করানো উচিত, যাতে নেককার লোকদের দোয়া ও বরকত তার মিষ্টিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।


🕌(৪) ভালো নাম রাখা

পিতা-মাতার পক্ষ থেকে শিশুর জন্য সর্বপ্রথম ও মৌলিক উপহার হলো তার সুন্দর ও বরকতময় নাম রাখা, যাতে এই উপহার সারাজীবন তাকে পিতা-মাতার স্নেহ ও ভালোবাসার কথা মনে করিয়ে দেয়, এমনকি হাশরের ময়দানেও...... পিতা-মাতার দেওয়া সেই নামেই আল্লাহর দরবারে উপস্থিতির জন্য ডাকা হবে। যেমন হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের ও তোমাদের পিতাদের নামে ডাকা হবে, সুতরাং ভালো নাম রেখো।

(আবু দাউদ, কিতাবুল আদব, বাব ফী তাগয়ীরিল আসমা, ৪/৩৭৪, হাদিস: ৪৯৪৮)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল যে, শিশুদের, বিশেষ করে কন্যাদের নাম রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং তাদের নাম এমন হওয়া উচিত যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের কোথাও লজ্জিত হতে না হয়। কারণ অনেক সময় শরয়ী মাসআলা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে লোকেরা কন্যাদের নাম প্রসিদ্ধ কাফির নারীদের নামে রেখে দেয় অথবা নতুন নতুন নাম রাখার প্রতিযোগিতায় এমন নাম রেখে দেয় যা অর্থহীন হয় বা তার অর্থ ভালো হয় না। এমন সব নাম রাখা থেকে বিরত থাকা উচিত। যেমন বাহারে শরীয়তে আছে: এমন নাম রাখা, যার উল্লেখ না কুরআন মজীদে আছে, না হাদিসে আছে, না মুসলমানদের মধ্যে এমন নাম প্রচলিত, এতে উলামাদের মতবিরোধ আছে, উত্তম হলো না রাখা। (বাহারে শরীয়ত, ৩/৬০৩) সুতরাং উচিত হলো, কন্যাদের নাম উম্মাহাতুল মুমিনীন, সাহাবিয়াত ও সালিহাত رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُنَّ এর মুবারক নামে নাম রাখা। এর একটি উপকার তো এই হবে যে, আপনার কন্যার আল্লাহ পাকের মনোনীত ও নেককার নারীদের সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়ত, এই নেককার ব্যক্তিত্বদের নামে নাম রাখার বরকতে তার জীবনে মাদানী প্রভাব পড়বে। যদি আপনি আপনার কন্যার নাম রাখার সময় এই মাদানী ফুলগুলো বিবেচনা না করে থাকেন, তাহলে চিন্তিত হবেন না, বরং সাথে সাথেই তাদের নাম পরিবর্তন করে দিন। যেমন,

উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِيَ اللهُ عَنْهَا থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم খারাপ নামগুলো পরিবর্তন করে দিতেন। (তিরমিযী, কিতাবুল আদাব, বাব মা জাআ ফী তাগয়ীরিল আসমা, ৪/৩৮২, হাদিস: ২৮৪৯) এবং হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا থেকে বর্ণিত আছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা জুওয়াইরিয়া رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا এর নাম প্রথমে বাররাহ (নেকী) ছিল, নবী করীম صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم তা পরিবর্তন করে জুওয়াইরিয়া রেখে দেন। (মুসলিম, কিতাবুল আদব, বাব ইস্তিহবাবি তাগয়ীরিল ইসমিল কাবিহ, পৃ. ১১৮২, হাদিস: ২১৪০) নাম রাখার ব্যাপারে হযরত সায়্যিদুনা আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া বিন শরফ নববী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এর দেওয়া এই মাদানী ফুলটি সব সময় মনে রাখা উচিত যে, শিশুর নাম আল্লাহ পাকের কোনো মনোনীত বান্দার (যেমন পীর ও মুর্শিদ ইত্যাদি) নামে রাখানো মুস্তাহাব এবং যেদিন শিশু জন্মায়, সেদিনই নাম রাখাও জায়িয।

(শরহে সহীহ মুসলিম, কিতাবুল আদব, বাব ইস্তিহবাবি তাহনীকিল মাওলুদ, চতুর্দশ খণ্ড, ৭/১২৪)


🕌(৫) চুল মুণ্ডানো ও আকিকা করা

সাত দিনের দিন চুল মুণ্ডিয়ে তার ওজনের সমান রূপা সদকা করা উচিত, এবং আকিকাও সেদিনই করে দেওয়া উচিত। যেমন, আলা হযরত رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ ফাতাওয়ায়ে রযবীয়া শরীফে বলেন: সাত দিনে, আর না পারলে চৌদ্দ দিনে, নতুবা একুশ দিনে আকিকা করবে। কন্যার জন্য একটি, পুত্রের জন্য দুটি (ছাগল), কারণ এতে শিশুর বন্ধনমুক্তি হয়।

(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪/৪৫২)

আকিকা সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর, পৃষ্ঠা ৪-এ আছে: "যে শিশুর আকিকার সময় এসে গেছে, অর্থাৎ সে সাত দিনের হয়ে গেছে এবং কোনো অপারগতা ছাড়াই সামর্থ্য (অর্থাৎ শক্তি) থাকা সত্ত্বেও তার আকিকা করা হয়নি, সে তার পিতা-মাতার জন্য শাফায়াত করবে না। হাদিস শরীফে আছে : بِعَقِيقَتِهِ مُرْتَهَنَّ الْغُلَامُ অর্থাৎ ছেলে তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে। (তিরমিযী, কিতাবুল আযাহী, বাবু মিনাল আকিকাহ, ৩/১৭৭, হাদিস: ১৫২৭) "আশি'আতুল লুম'আত'-এ আছে, ইমাম আহমদ رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: "শিশুর যতক্ষণ আকিকা না করা হয়, তাকে পিতা-মাতার পক্ষে শাফায়াত করা থেকে বাধা প্রদান করা হয়।" (আশি'আতুল লুম'আত, ৩/৫১২)

সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ উক্ত হাদিস শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন: "বন্ধক" হওয়ার অর্থ হলো, তার থেকে পূর্ণ উপকার লাভ হবে না যতক্ষণ না আকিকা করা হয় এবং কিছু (মুহাদ্দিস) বলেছেন, শিশুর নিরাপত্তা এবং তার বৃদ্ধি ও বিকাশ (বেড়ে ওঠা) এবং তার মধ্যে ভালো গুণাবলী (অর্থাৎ উত্তম বৈশিষ্ট্য) থাকা আকিকার সাথে সম্পর্কিত।

(বাহারে শরীয়ত, ৩/৩৫৪)


🕌(৬) হালাল রিযিক খাওয়ানো

আধুনিক যুগে মূল্যবৃদ্ধির কারণে যেহেতু সকলের কোমর ভেঙে গেছে, তাই এটা সাধারণভাবে দেখা যায় যে, প্রয়োজন পূরণ এবং আরাম-আয়েশের জন্য অনেক সময় হারাম ও হালাল উপার্জনের পরোয়া করা হয় না এবং এই বিষয়টি প্রায়শই উপেক্ষা করা হয় যে, হারাম উপার্জন দুনিয়া ও আখিরাতে বিরাট ক্ষতির কারণ। যেমন হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আবদুল্লাহ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে পাক صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: সেই গোশত কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না যা হারামে লালিত-পালিত হয়েছে। (সুনানে দারেমী, কিতাবুর রিকাক, ২২/৪০৯, হাদিস: ২৭৭৬)

সুতরাং সব সময় হালাল রিযিক উপার্জন করে নিজ সন্তানদের প্রতিপালনের চেষ্টা করুন, কারণ যে ব্যক্তি এজন্য হালাল উপার্জন করে যে, সে চাওয়া থেকে বাঁচবে, পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু অর্জন করবে এবং প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যে, তার চেহারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করবে।

(শুয়াবুল ঈমান, বাব ফীয যুহদ ওয়া কাসরিল আমাল, ৭/২৯৮, হাদিস: ১০৩৭৫)


🕌(৭) ভালো কথা শেখানো

নারীদের ব্যাপারে যেহেতু এই কথা খুবই প্রসিদ্ধ যে, তারা অহেতুক কথা বলার অভ্যস্ত, তাই নিজ কন্যাকে অহেতুক কথা ইত্যাদি থেকে বাঁচানোর জন্য ভালো ভালো নিয়্যত সহকারে চেষ্টা করুন যে, যখন সে একটু হুঁশিয়ার হবে এবং কথা বলতে শুরু করবে, তখন সর্বপ্রথম তার পবিত্র ও পরিষ্কার মুখ থেকে মহান আল্লাহর নাম "আল্লাহ" এবং কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ্ জারি হোক। হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: তোমাদের সন্তানদের মুখ থেকে সর্বপ্রথম "لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ" বলাও। (শুয়াবুল ঈমান, ৭/২৯৮, হাদিস: ১০৩৭৫) একারণেই পঞ্চদশ শতাব্দীর মহান ইলমী ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নত, দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রবী যিয়ায়ী دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيهِ তার নাতনীর জন্য পরিবারের সকলকে বলে রেখেছিলেন যে, তার সামনে যেন "الله الله" জিকির করতে থাকে, যাতে তার মুখ থেকে প্রথম শব্দ "ﷲ।" বের হয় এবং যখন তাকে আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهِ এর দরবারে আনা হতো, তখন তিনি নিজেও তার সামনে আল্লাহর জিকির করতেন। সুতরাং যখন তাঁর নাতনী কথা বলতে শুরু করলো, তখন প্রথম শব্দ "আল্লাহ"-ই বললো।


🕌(৮) শিক্ষা ও ইসলামী প্রতিপালন

বর্তমান সময়ে যদি সমাজের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করা হয়, তাহলে চারদিকে দুটি জিনিসই নজরে আসে। আধুনিক শিক্ষা ও উন্নতি এবং তথাকথিত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নামে একদিকে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে (Western culture) পরিপূর্ণ বিভিন্ন (Different) সুন্দর (Beautiful) ও আকর্ষণীয় (Attractive) নামের সাথে শহরে শহরে, এমনকি অলি-গলিতে খোলা স্কুল (Schools) দেখা যায়, যার একটি বড় অংশ ইসলাম বিরোধী শক্তির প্রভাবে ধর্ম ও জাতির বন্ধন থেকে মুক্ত সমাজের ধারক লোক তৈরি করতে ব্যস্ত। অন্যদিকে, সর্বত্র, বিশেষ করে বড় শহরগুলোর অভিজাত এলাকা, হাউজিং সোসাইটি (Housing Societies), ভি.আই.পি. পপুলেশন এরিয়াজ (V.I.P. Population Areas), আপার ক্লাস রেসিডেন্সিয়াল এরিয়াজ (Upper class residential areas)-এ ইসলামিক স্কুল (Islamic Schools) এর নামে পথভ্রষ্টদের তৈরি করা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আগামী প্রজন্মের ঈমান এবং দ্বীনি আবেগ ও আত্মমর্যাদার জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুতরাং প্রয়োজন হলো এই যে, নবী প্রেমে পরিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য মাদানী প্রশিক্ষণের এমন এক শক্তিশালী ও সুসংহত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা, যার মাধ্যমে আধুনিক যুগের তরুণদের চিন্তা ও মানসিকতায় পরিবর্তন আসার পাশাপাশি কেবল না তাদের চেহারা মদীনা হয়ে যাবে, বরং তাদের সিনাও মদীনা হয়ে যাবে। এর জন্য সর্বপ্রথম সিঁড়ি হলো, আজকের এই ছোট্ট কলিটিকে ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা, যাতে আজ যার হাসি পিতা-মাতাকে দুঃখ থেকে দূরে রাখে, কাল যখন সে পূর্ণরূপে ফুটে কারও জীবনের বাগানে সুবাস ছড়াবে, তখন চারপাশের পরিবেশ মনোরম হয়ে উঠবে। এটা খুবই জরুরি যে, আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে, বিশেষ করে কন্যাদের সতীত্ব ও মহিমার প্রতিমূর্তি বানাব, তাওহীদ ও রিসালাতের সাথে পরিচিত করাব এবং ইসলামের নামে মন-ধন উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত করব, যাতে আশিকে রাসূলের প্রেম ও উন্মাদনায়।

ভরপুর দিনগুলো অতীতের কোনো কাহিনীতে পরিণত না হয়ে আধুনিক যুগে বাস্তব রূপ ধারণ করতে পারে এবং এর জন্য কুরআন ও সুন্নাত প্রচারের আশিকানে রাসূলের বিশ্বব্যাপী দ্বীনি সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর সুগন্ধময়, পবিত্র ও সুবাসিত মাদানী পরিবেশের চেয়ে ভালো কোনো পরিবেশ নেই।

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনার জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রের সাথেই সম্পর্ক থাকুক না কেন, চিন্তা করবেন না, দাওয়াতে ইসলামী আপনাকে সর্বত্র এবং জীবনের প্রতিটি মোড়ে দিক নির্দেশনা দিতে দেখতে পাবেন। যেমন, আড়াই বছর বয়সে আপনার কন্যাকে আধুনিক জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ফরয ইলমে দ্বীন শেখানোর জন্য দারুল মদীনাতে ভর্তি করান অথবা একটু বড় হলে তাকে কুরআন করীম নাজেরা ও হিফয করানোর জন্য মাদরাসাতুল মদীনা (মহিলা শাখা) এবং ইলমে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের জন্য জামিয়াতুল মদীনা (মহিলা শাখায়) ভর্তি করিয়ে দিন।

আলা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত মাওলানা ইমাম আহমদ রযা رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: শৈশব থেকে যে অভ্যাস গড়ে ওঠে, তা সহজে দূর হয় না। (ফাতাওয়ায়ে রযবীয়া, ২২/২১৫) সুতরাং যে লোকেরা এক কন্যার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে অলসতা করে, তারা প্রকৃতপক্ষে আগামী প্রজন্মের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে উদাসিনতা করে। অতএব, এক কন্যার প্রতিপালনের সময় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের যে পর্যায়গুলোর সম্মুখীন হতে হয় তা যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে জানা যাবে যে, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ যদিও অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য, কিন্তু সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিলে পরিস্থিতি কিছুটা এমন দাঁড়ায়:


🕌(১) মৌলিক ও জরুরি আকিদার শিক্ষা

তাগুতী শক্তিগুলো আশিকানে রাসূলদের পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার জন্য তাদের আকিদা ও আমলকে বরবাদ করার সর্বাত্মক অপচেষ্টায় নিয়োজিত এবং এক্ষেত্রে তারা কিছু কুচক্রী লোকেরও সাহায্য পাচ্ছে। অমুসলিম শক্তিগুলোর মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করা এবং পবিত্র ইসলামী শিক্ষাকে বিকৃত করার এই অপবিত্র ষড়যন্ত্রের ফলেই এই ফিতনার যুগে গুনাহের ঢল এবং ফ্যাশনের অভিশাপ মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে আমলহীন করে দিয়েছে। ইলমে দ্বীনের প্রতি অনীহা এবং সাধারণ ও বিশেষ সকলের প্রবণতা কেবল জাগতিক শিক্ষার দিকে। দ্বীনি মাসআলা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে সর্বত্র অজ্ঞতার মেঘ ছেয়ে আছে, নাস্তিকতা ও পথভ্রষ্টতার উত্তাল তরঙ্গে মুসলমানরা দ্রুত অনৈতিকতার গভীর গর্তে পতিত হচ্ছে। সুতরাং এই নাজুক পরিস্থিতিতে আশিকে রাসূলের কানে আল্লাহ ও মুস্তফার মর্মস্পর্শী আওয়াজ পৌঁছানোর জন্য জরুরি যে, আজকের কন্যা ও আগামী দিনের মায়ের এমন মাদানী প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক, যাতে আগামী প্রজন্ম নবী প্রেমে রঙিন হয়ে ওঠে। মায়ের কোল যেহেতু শিশুর প্রথম পাঠশালা, তাই এক কন্যার সঠিক মাদানী প্রশিক্ষণের জন্য জরুরি যে, মা নিজেও জরুরি দ্বীনি ইলম সম্পর্কে অবগত হোক, যাতে সে তার কন্যাকে শৈশব থেকেই তাওহীদ ও রিসালাতের প্রেম ও উন্মাদনায় ভরপুর পেয়ালা পান করানোর এমন অভ্যস্ত করে তোলে যে, যার স্বাদে মগ্ন হয়ে সে সারাজীবন অন্য কোনো দিকে তাকানোর হুঁশই না রাখে। সুতরাং তাকে আল্লাহ, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, আম্বিয়ায়ে কেরাম عَلَيْهِمُ السَّلام, বিশেষ করে নবীদের সর্দার, আল্লাহর পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم, কিয়ামত এবং জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কিত মৌলিক আকিদাসমূহ ধীরে ধীরে শেখানো হোক। যেমন:

🕌আল্লাহ পাকের তাওহীদ তথা একত্ববাদ সম্পর্কিত মৌলিক আকিদা

আল্লাহ পাক আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাদের রিযিক দান করেন, তিনিই জীবন দিয়েছেন, তিনিই মৃত্যু দেবেন, আমরা কেবল তারই ইবাদত করি, তিনি শরীর, স্থান ও কাল থেকে পবিত্র (কিছু পিতা-মাতা আল্লাহ পাকের নাম নেওয়ার সময় তাদের সন্তানকে আকাশের দিকে আঙুল তুলে দেখায়, এমনটি করা উচিত নয়), তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন,

সমগ্র সৃষ্টি তার মুখাপেক্ষী, তিনি সন্তান থেকে পবিত্র, তিনি সব সময় ছিলেন এবং সব সময় থাকবেন, যা কিছু হয়েছে, যা হচ্ছে বা যা হবে,

সবই তিনি জানেন।

🕌ফেরেশতাদের ব্যাপারে মৌলিক আকিদা

ফেরেশতারা তার নূরের সৃষ্টি, যারা তার আদেশে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে। যেমন বৃষ্টি বর্ষণ, বাতাস চালনা, কারও রূহ কবয করা ইত্যাদি।

🕌আসমানী কিতাব সম্পর্কিত মৌলিক আকিদা

আল্লাহ পাক তার বান্দাদের হেদায়েতের জন্য অনেক সহীফা ও কিতাব নাযিল করেছেন, যার মধ্যে চারটি কিতাব খুবই প্রসিদ্ধ:

  • (১) তাওরাত (এটি হযরত সায়্যিদুনা মূসা عَلَيْهِ السَّلَام এর উপর নাযিল হয়েছিল)
  • (২) যাবুর (এটি হযরত সায়ি‍্যদুনা দাউদ عَلَيْهِ السَّلَام এর উপর নাযিল হয়েছিল)
  • (৩) ইঞ্জিল (এটি হযরত সায়্যিদুনা ঈসা عَلَيْهِ السَّلَام এর উপর নাযিল হয়েছিল)
  • (৪) কুরআনে করীম (এটি আমাদের নবী মুহাম্মদ মুস্তফা صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর উপর নাযিল হয়েছিল)

🕌আম্বিয়ায়ে কেরাম সম্পর্কিত মৌলিক আকিদা

আল্লাহ পাক সৃষ্টির হেদায়েতের জন্য তার নবী ও রাসূলদের পাঠিয়েছেন, যাদের মোট সংখ্যা তিনিই জানেন এবং সবার শেষে আমাদের নবী মুহাম্মদ মুস্তফা صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم কে পাঠিয়েছেন। তিনি আল্লাহ পাকের সর্বশেষ নবী, তারপরে কোনো নবী আসবেন না।

🕌কিয়ামত এবং জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কিত মৌলিক আকিদা

কিয়ামত বলতে বোঝায় যে, এক সময় আসবে যখন এই আকাশ ও পৃথিবী সবই ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপর মৃতরা নিজ নিজ কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে এবং নিজ নিজ আমলের হিসাব দেবে। যার আমল ভালো হবে, সে জান্নাত পাবে এবং যার আমল খারাপ হবে, তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। জান্নাতের আগ্রহ এবং জাহান্নামের ভয় সৃষ্টি করার জন্য কন্যার বুঝ-জ্ঞান অনুযায়ী জান্নাতের নিয়ামত এবং জাহান্নামের আযাবের বর্ণনা শোনান এবং তাকে বলুন যে, যদি আমরা আল্লাহ পাক এবং তার প্রিয় হাবীব صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এ আনুগত্য করি, তাহলে আমরা জান্নাত পাব এবং যদি আল্লাহ পাকের নাফরমানিতে জীবনযাপন করি, তাহলে জাহান্নামের আযাব আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। (১) وَالْعِيَاذُ بِاللَّهِ تَعَالٰى

১. এই আকিদাগুলো বাহারে শরীয়তের প্রথম অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং আকিদার বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য সদরুল আফাযিলের সহজ রচনা "কিতাবুল আকাইদ", সদরুশ শরীয়ার "বাহারে শরীয়ত" প্রথম অংশের অধ্যয়নের জন্য মাকতাবাতুল মদীনা থেকে হাদিয়ার বিনিময়ে সংগ্রহ করুন। এছাড়াও আমীরে আহলে সুন্নতের বই "কুফরিয়া কালিমাত কে বারে মে সওয়াল জবাব" ছাড়াও মাদানী নেসাব কায়দা এবং মাদানী নেসাব নাজেরাও অবশ্যই পড়ুন।

মুস্তফার যিকির যেহেতু ঈমানের নূর ও প্রাণের আনন্দ, তাই এমন উপায় অবলম্বন করা উচিত যাতে আপনার কন্যার হৃদয়ে দরূদ শরীফ ও নাত শরীফ পড়ার ও শোনার আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। যেমন, শিশুকে ঘুম পাড়ানোর বা ভোলানোর জন্য লোরি (ঘুমপাড়ানি গান) গাওয়ার প্রচলন আছে, কিন্তু লোরি গাওয়ার সময় খেয়াল রাখা উচিত যে, তা যেন অর্থহীন শব্দে পরিপূর্ণ না হয় এবং তাতে কোনো শরীয়ত পরিপন্থী কথা না থাকে, বরং উত্তম হলো হামদ বা নাত অথবা আউলিয়ায়ে কেরামের মানকাবাত শিশুকে শোনানো, তাহলে সাওয়াবও পাওয়া যাবে এবং শিশুর ঘুমও এসে যাবে। এছাড়াও সালেহীন ও সালেহাতদের ঘটনা কাহিনী আকারে শোনানোও উপকারী, কারণ পূর্বসূরীদের প্রতি আকিদা ও ভালোবাসার সম্পর্ক ঈমানের দৃঢ়তার মাধ্যম এবং শিশুদের হৃদয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইত رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ এবং অন্যান্য আউলিয়ায়ে কেরাম رَحِمَهُمُ اللَّهُ السَّلَامِ এর প্রতি আকিদা সৃষ্টি করার সহজ উপায় হলো এই পুণ্যবান ব্যক্তিত্বদের জীবনের নূরানী ঘটনাগুলো। এছাড়াও একজন মুসলমানের জন্য যেহেতু তার ঈমান জীবনের সম্পদ হিসেবে গণ্য, তাই আগামী প্রজন্মের ঈমান রক্ষা করার জন্য পুত্রের চেয়েও বেশি কন্যার ঈমানের হেফাযতের চিন্তা অন্যান্য সকল জাগতিক বিষয়ের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত এবং ঈমান হেফাযতের একটি খুব বড় মাধ্যম হলো কোনো কামেল পীরের হাতে বায়আত হয়ে যাওয়া। বর্তমান যুগে কোনো পীরে কামেলের সন্ধান পাওয়া অসম্ভব না হলেও কঠিন অবশ্যই। সুতরাং যদি আপনি কারও মুরিদ না হন, তাহলে সাথে সাথেই আপনার সন্তানদেরসহ সিলসিলায়ে কাদেরিয়া রযবীয়া আত্তারীয়ার মহান বুযুর্গ, শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নত, দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবী دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَه এর মুরিদ হয়ে যান। তিনি কুতুবে মদীনা, মেজবানে মদীনা, খলিফায়ে আলা হযরত, হযরত সায়্যিদুনা যিয়াউদ্দীন আহমদ মাদানী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এর মুরিদ ও খলিফা, কুতুবে মদীনা হযরত মাওলানা আবদুস সালাম কাদেরী রযবী, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী, ফকিহে আযমে হিন্দ হযরত আল্লামা মুফতি শরীফুল হক আমজাদী, জানশীনে কুতুবে মদীনা হযরত আল্লামা ফযলুর রহমান কাদেরী এবং মুফতিয়ে আযমে পাকিস্তান হযরত আল্লামা মুফতি ওয়াকার উদ্দীন রযবী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এর খলীফা। এছাড়াও অন্যান্য বুযুর্গদের থেকেও খিলাফত ও ইজাযতে হাদিসের সনদ হাসিল করেছেন। তিনি সিলসিলায়ে কাদেরিয়াতে মুরিদ করান। কাদেরী সিলসিলার মহিমার কথা কী আর বলল! এর মহান পেশওয়া হযরত সায়্যিদুনা গাউসুল আযম رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর দয়ায় তার মুরিদদের তাওবার উপর মৃত্যুবরণের যামিনদার। (বাহজাতুল আসরার, যিকরু ফযলি আসহabihi ওয়া বুশরাহুম, পৃ: ১৯১)


🕌(২) কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা

আমিরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা আলী বিন আবী তালিব رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে করীম صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর সুমহান, বাণী হলো: "তোমাদের সন্তানদের ৩টি জিনিস শেখাও: (১) তোমাদের নবী صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর প্রতি ভালোবাসা, (২) আহলে বাইত رِضْوَانُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِيْنِ এর প্রতি ভালোবাসা এবং (৩) কুরআন করীম তিলাওয়াত, কারণ কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ, আম্বিয়া ও আসফিয়াদের সাথে আল্লাহ পাকের রহমতের ছায়ায় থাকবে যেদিন তার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে

না।" (আল-জামি'উস সগীর, পৃ: ২৫, হাদিস: ৩১১)

হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবু মুহাম্মদ সাহল رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: ঈমানের আলামত হলো আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার আলামত হলো আল্লাহর কালামের প্রতি ভালোবাসা, আল্লাহর কালামের প্রতি ভালোবাসার আলামত হলো আল্লাহর প্রিয় হাবীবের প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহর প্রিয় হাবীবের প্রতি ভালোবাসার আলামত হলো আল্লাহর প্রিয় হাবীবের অনুসরণ। (কুতুল কুলুব, আল-ফাসলুস সাবি' আশার, ১/১০৪)

সুতরাং মৌলিক ও জরুরি আকিদার পাশাপাশি কন্যার হৃদয়ে কুরআন ও সুন্নাহর ভালোবাসা সৃষ্টি করা জরুরি, যাতে শৈশব থেকেই আল্লাহ পাক ও তার প্রিয় হাবীবের ভালোবাসা তার হৃদয়ে জন্মায় এবং সে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী তার পুরোটা জীবন অতিবাহিত করে, কারণ কুরআন ও সুন্নাহর উপর আমলই উভয় জগতে সাফল্যের কারণ। কিন্তু মনে রাখবেন! কুরআনে করীমের উপর আমল করার জন্য তা সঠিকভাবে পড়া, শেখা এবং বোঝা জরুরি। কিন্তু আফসোস, শত আফসোস! সৃষ্টি আল্লাহ পাকের কালাম পড়া, শেখা, বোঝা এবং তার উপর আমল করা থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে এবং জাগতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য সবসময় নতুন নতুন জ্ঞান ও কলাকৌশল শেখা ও শেখানোতে ব্যস্ত। অথচ, এর শিক্ষা সম্পর্কে আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর মহিমান্বিত বাণী হলো : خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়। (বুখারী, কিতাবু ফাযাইলিল কুরআন, বাব খাইরুকুম মান তা'আল্লামা... ইত্যাদি, ৩/৪১০, হাদিস: ৫০২৭) সুতরাং পিতামাতার উপর আবশ্যক যে, কন্যার প্রতিপালনে কুরআন ও সুন্নাহর ভালোবাসা তার সিনার কানায় কানায় প্রবেশ করিয়ে দেয়া।


🕌(৩) ফরয ইলম ও দ্বীনি শিক্ষা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ফরয ইলম ও দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নাত, দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রবী যিয়ায়ী دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَه দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত ৫০৫ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব "গীবতের ধ্বংসলীলা"-এর ৫ পৃষ্ঠায় বলেন: প্রিয় নবী صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর সুমহান বাণী হলো : طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ অর্থাৎ ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুস সুন্নাহ, বাবু ফযলিল উলামা... ইত্যাদি, ১/১৪৬, হাদিস: ২২৪) এখানে স্কুল-কলেজের জাগতিক শিক্ষা নয়, বরং জরুরি দ্বীনি ইলম উদ্দেশ্য। সুতরাং সর্বপ্রথম মৌলিক আকিদা শেখা ফরয, এরপর নামাযের ফরয, শর্তাবলী ও মুফসিদাত, তারপর রমযানুল মুবারকের আগমনে রোযার ফরয অবস্থায় রোযার জরুরি মাসআলা, যার উপর যাকাত ফরয, তার জন্য যাকাতের জরুরি মাসআলা, একইভাবে হজ্ব ফরয হলে হজ্বের, বিবাহ করতে চাইলে সেটার বিষয়ে, ব্যবসায়ীকে ক্রয়-বিক্রয়ের, চাকরিজীবীকে চাকরির, চাকরিদাতাকে ইজারার, وَعَلَى هُذَا الْقِياس (অর্থাৎ এর উপর কিয়াস করে) প্রত্যেক মুসলমান বিবেকবান ও বালেগ পুরুষ ও নারীর উপর তার বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী মাসআলা শেখা ফরযে আইন। একইভাবে প্রত্যেকের জন্য হালাল ও হারাম বিষয়ে মাসআলা শেখাও ফরয। এছাড়াও ক্বলবের মাসআলা (বাতিনী মাসআলা) অর্থাৎ ফারায়েযে কুলবিয়্যাহ (বাতিনী ফরয) যেমন নম্রতা ও একনিষ্ঠতা এবং ভরসা ইত্যাদি এবং সেগুলো অর্জন করার পদ্ধতি এবং বাতিনী গুনাহ যেমন অহংকার, রিয়াকারী, হিংসা ইত্যাদি এবং সেগুলোর চিকিৎসা শেখা প্রত্যেক মুসলমানের উপর গুরুত্বপূর্ণ ফরয। ধ্বংসাত্মক বিষয় অর্থাৎ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া জিনিস যেমন মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, অপবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে জরুরি তথ্য হাসিল করাও ফরয, যাতে এই গুনাহগুলো থেকে বাঁচা যায়। (গীবতের ধ্বংসলীলা, পৃ: ৫)

হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবু তালিব رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ বলেন: আমলের আগে ইলম জরুরি, কারণ আমল ফরয হওয়ার কারণে তার ইলম হাসিল করাও ফরয হয়ে যায়। (কুতুল কুলুব, আল-ফাসলুল হাদী ওয়াস সালাসুন, ১/২২৬)


🕌জীবনের আদব-কায়দা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কন্যার প্রতিপালনের সময় কুরআন, সুন্নাহ ও পূর্বসূরীদের কিতাবে (বুযুর্গদের কিতাবে) বর্ণিত যে আদব-কায়দার প্রয়োজন হতে পারে, সেগুলো যদি অধ্যয়ন করা হয়, তাহলে আমরা সেগুলোকে তিনটি ভিন্ন অংশে এভাবে বিভক্ত করতে পারি:

★ ব্যক্তিগত আদব-কায়দা

পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে একজন মুসলমানের জীবনে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। যেমন আল্লাহ পাকের বাণী:

وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ

(পারা ১১, সূরা তাওবা: ১০৮)

কানযুল ঈমানের অনুবাদ: আর আল্লাহ পবিত্রদের ভালোবাসেন।

এবং রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর একটি বাণী হলো: পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (তিরমিযী, কিতাবুদ দা'ওয়াত, ৫/৩০৮, হাদিস: ৩৫৩০) এবং বর্ণিত আছে بُنِيَ الدِّينُ عَلَى النَّظَافَةَ : لَهُ অর্থাৎ দ্বীনের ভিত্তি পবিত্রতার উপর। (আশ-শিফা, আল-বাবুস সানী ফী তাকমীলি মাহাসিনিহি, ১/২১) এখানে পবিত্রতা বলতে কেবল কাপড়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বোঝায় না, বরং অন্তরের পরিচ্ছন্নতাও বোঝায়। কারণ অপবিত্রতা কেবল শরীর বা কাপড়ের সাথেই নির্দিষ্ট নয়, বরং বাতিনের (অন্তরের) পরিচ্ছন্নতাও শরীয়তের পবিত্রতার কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত বাতিন পবিত্র না হবে, উপকারী ইলম (লাভজনক জ্ঞান) হাসিল হবে না এবং মানুষ ইলমের নূর থেকে আলোও পাবে না। সুতরাং কন্যার প্রতিপালনের সময় পিতামাতার উপর আবশ্যক যে, তারা কন্যার বাহ্যিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থার পাশাপাশি তার বাতিনের পবিত্রতার প্রতিও পূর্ণ মনোযোগ দেবে, যাতে তার অন্তর মন্দ গুণাবলী থেকে পবিত্র থাকে। যেমন হিংসা, অহংকার, রিয়াকারী, আত্মম্ভরিতা ও আত্মতুষ্টি, মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, গালিগালাজ, আমানতের খিয়ানত, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ইত্যাদি এবং এগুলোর দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত করবে, যাতে কন্যা এই ধ্বংসাত্মক ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া গুনাহগুলো থেকে বাঁচতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, প্রশিক্ষণ তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন আপনি নিজেও এই বাতিনী গুনাহগুলো থেকে বাঁচার চেষ্টা করবেন কারণ পিতামাতা যদি নেককার ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা লোক হয়, তাহলে সেটার বরকত তাদের সন্তানদেরও নসীব হয়।

★ পারিবারিক আদব-কায়দা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এর দ্বারা সেই আদব-কায়দা বোঝায় যা একটি শক্তিশালী ও সুখী পরিবারের স্থায়িত্বের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যেমন পিতামাতার আদব ও সম্মান এবং অন্যান্য ছোট-বড়দের সাথে সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা (আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার) এর ফযিলত এবং সম্পর্ক ছিন্ন করার নিন্দা ইত্যাদি। এই আদব-কায়দাগুলো পালনের ফলে একটি কন্যা পরিবারের সকলের চোখের মণি হয়ে ওঠে। সুতরাং পিতামাতার দায়িত্ব হলো, তারা তাদের কন্যার প্রতিপালনে বিন্দুমাত্রও যেন অবহেলা না করে এবং শৈশব থেকেই তার ইসলামী প্রশিক্ষণের এমন ব্যবস্থা করে যে, প্রত্যেকেই তাদের কন্যার সদ্ব্যবহারের প্রশংসা করবে, তার দুর্ব্যবহার, বেয়াদবি ও কটূক্তির কারণে চারদিকে যেন চর্চা না হয়।

ছোট মণিরা, বিশেষ করে কন্যারা যেহেতু পিতামাতার থেকে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের পরিচয় শেখার পাশাপাশি এটাও শেখে যে, তাদের পিতামাতা তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে কেমন আচরণ করে, সুতরাং যদি আপনারা আপনাদের কিছু আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন অথবা তাদের সাথে ভালো ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনাদের সন্তানদের, বিশেষ করে কন্যাদের মন থেকে এই সম্পর্কগুলোর পবিত্রতা সব সময়কার জন্য শেষ না হলেও অবশ্যই কমে যাবে। সুতরাং নিজেরাও মনে রাখুন এবং আপনাদের কন্যাকেও এই কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিন:

  • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট হন, কারণ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা তারই হুকুম।

  • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় ফেরেশতারা খুশি হন।

  • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারীর লোকেরা প্রশংসা করে।

  • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় অভিশপ্ত শয়তান দুঃখিত হয়।

  • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় বয়স ও রিযিকে বরকত হয়।

  • ☆ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় আন্তরিক প্রশান্তি লাভ হয় এবং হাদিস শরীফেও আছে যে, (ফরয পালনের পর) সর্বোত্তম আমল হলো যা মুমিনের খুশির কারণ হয়। (আল-মু'জামুল কাবীর, ১১/৫৯, হাদিস: ১১০৭৯)

  • ★ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, কারণ যাদের প্রতি সে অনুগ্রহ করেছে, তারা সকলেই তার সুখ-দুঃখে শরীক হবে এবং তার সাহায্যও করতে থাকবে, যার ফলে পারস্পরিক ভালোবাসা বাড়বে।

  • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা মৃত্যুর পরেও সাওয়াব ও পুরস্কারের কারণ হয়, কারণ লোকেরা তার মৃত্যুর পর তার অনুগ্রহগুলো মনে করে তার জন্য ইসালে সাওয়াব ও দোয়ার ব্যবস্থা করবে।

(তানবীহুল গাফিলীন, পৃ: ৭৩, সারসংক্ষেপ)

★ সামাজিক আদব-কায়দা

সমাজ হলো পারস্পরিক মিলেমিশে থাকা ব্যক্তিদের সমষ্টি, যার ভিত্তি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন জ্ঞাতিগোষ্ঠী, জাতি, ভাষা, ধর্ম এবং ভৌগোলিক সীমানা ইত্যাদি। সাধারণত বিভিন্ন সমাজের গঠনে সামাজিক জীবনের স্থায়িত্বের জন্য দুটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়: একটি হলো, লোকেরা এমনভাবে জীবনযাপন করবে যাতে তাদের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণতা ঘটে এবং দ্বিতীয়টি হলো, এমন নীতিমালা ও নিয়ম-কানুন তৈরি করা হবে যার মাধ্যমে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে।

এই নীতিমালা ও নিয়ম-কানুন যেহেতু মানুষ তৈরি করে, তাই এগুলোতে পরিবর্তনের অবকাশ সব সময় থাকে এবং এগুলো পরিবর্তিতও হতে থাকে। কিন্তু ইসলামী সমাজ এমন, যার মৌলিক আকিদা ও শরীয়তের নীতিমালায় ওহী সমাপ্তির পর কখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং আসবেও না। কারণ এটি এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিমিত জীবনের নাম, যেখানে মানুষের বুদ্ধি, রীতিনীতি ও প্রথা এবং সকল সামাজিক আদব-কায়দা ওহীর আলোয় নির্ধারিত হয় এবং ওহীর আগমনের দরজা যেহেতু চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে, তাই এখন ইসলামী সমাজের যে মৌলিক রূপরেখা নবীয়ে পাক صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর সত্যভাষী মুখ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাতে কোনো প্রকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে প্রত্যেক যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী উদ্ভূত নতুন নতুন সমস্যার সমাধানও কুরআন ও সুন্নাহর বর্ণিত নীতিমালা থেকেই গ্রহণ করা হয়। যদি এই সমাধান কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী না হয়, বরং মুসলমানদের কল্যাণ ও মঙ্গলের সাথে সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা গ্রহণ করা হয়, নতুবা বাতিল করা হয়। যেমন,

একটি ইসলামী ও কল্যাণময় সমাজের স্থায়িত্বের জন্য অত্যন্ত জরুরি যে, সেটার সদস্যদের প্রশিক্ষণের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া। তাই উত্তম হলো, এর সূচনা মায়ের কোল থেকে হওয়া, যাতে এই প্রশিক্ষণের প্রভাব সারাজীবন শিশুর উপর অটল থাকে। এই প্রেক্ষাপটে কন্যার উত্তম প্রতিপালনের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়, কারণ আজ যদি তার প্রশিক্ষণে কোনো কমতি থেকে যায়, তাহলে তার প্রতিকার করা অসম্ভব না হলেও কঠিন অবশ্যই হয়ে যাবে।

! الحَمْدُ لله আমরা মুসলমান এবং একটি ইসলামপন্থী সমাজের অংশ। আমাদের উচিত যে, কখনোই কন্যার প্রতিপালনে তার মাদানী প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কোন প্রকার উদাসিনতা না করা, তাকে সামাজিক অন্যায়ের কদর্যতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত করা, যাতে সে সেগুলো থেকে বাঁচতে পারে।


🕌শৈশবের অভ্যাস সহজে দূর হয় না

আজ একজন পিতা তার আট-দশ বছরের কন্যাকে যে বেপর্দা অবস্থায় নিজের সাথে এমন এক অনুষ্ঠানে নিয়ে যায়, যেখানে পুরুষ ও মহিলাদের অবাধ মেলামেশা, সঙ্গীত ও বাজনার আয়োজন রয়েছে, নির্লজ্জ ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত মেয়েরা ঢোলের তালে অত্যন্ত অশ্লীলভাবে নাচছে, আর সেই ফুলের মতো শিশুটি এসব দেখছে ও শুনছে যে, এই বড় বড় মেয়েরা তাদের কাজিনদের সাথে নাচছে, গান গাইছে। তখন তার মনে এই ধারণাই জন্মাবে যে, যেহেতু এখানে আমার বাবা আমাকে নিয়ে এসেছেন, তাই এমন জায়গায় যাওয়া এবং নাচ-গান করা সঠিক, কারণ এসব যদি ভুল হতো, তাহলে আমার বাবা কখনোই আমাকে এখানে নিয়ে আসতেন না।

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমাদের উচিত যে, নিজেদের সংশোধনের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সংশোধনের প্রতিও মনোযোগ দেয়া এবং তাদের এমন অনুষ্ঠান ও মাহফিল থেকে দূরে রাখি যা শরীয়ত বিরোধী বিষয়ে পরিপূর্ণ। একারণেই যে লোকেরা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও তাদের স্ত্রী, বোন ও কন্যাদের বেপর্দা হওয়া থেকে নিষেধ করে না, তারা "দাইয়ূস" এবং দাইয়ূসের ব্যাপারে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার হুঁশিয়ারি বর্ণিত হয়েছে। পরিবার-পরিজনকে শরীয়ত বিরোধী অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া লোকদের সতর্ক করার জন্য ফাতাওয়ায়ে রযবীয়া শরীফে উল্লেখিত একটি ফতোওয়ার কয়েকটি উদ্ধৃতির সারসংক্ষেপ পেশ করা হলো। যেমন


🕌জান্নাত থেকে বঞ্চিত

প্রিয় নবী, রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم (ইরশাদ) করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ الْعَاقُ بِوَالِدَيْهِ وَالدَّيُّوتُ وَرَجُلَةُ النِّسَاءِ

অর্থাৎ তিনজন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না: পিতা-মাতার প্রতি অবাধ্য সন্তান, দাইয়ূস এবং পুরুষরূপী নারী। (মুসতাদরাক, কিতাবুল ঈমান, ১০৮ তিনজন জান্নাতে প্রবেশ করবে না, ১/২৫২, হাদিস: ২৫২)


🕌প্রিয়জনের সাথে হাশর

রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم বলেন:

لَا يُحِبُّ رَجُلٌ قَوْمًا إِلَّا جَعَلَهُ اللهُ مَعَهُمْ

যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে ভালোবাসা রাখবে, আল্লাহ পাক তাকে তাদের সাথেই একত্রিত করবেন। (মুসনাদে আহমদ, মুসনাদুস সায়্যিদাহ আয়েশা, ৯/৪৭৮, হাদিস: ২৫১৭৫) এবং বলেন : مَنْ أَحَبَّ قَوْمًا حَشَرَهُ اللَّهُ فِي زُمْرَتِهِمْ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করবে, আল্লাহ পাক তাকে তাদের দলেই উঠাবেন। (আল-মু'জামুল কাবীর, ৩/১৯, হাদিস: ২৫১৯) এবং বলেন: الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ মানুষ তার বন্ধুর সাথেই থাকবে। (বুখারী, কিতাবুল আদব, বাব আলামাতু হুব্বিল্লাহ, ৪/১৪৭, হাদিস: ৬১৬৮)


🕌বনী ইসরাঈলের ধ্বংসের কারণ

বনী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথম যে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, তা হলো তাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি অন্যের সাথে দেখা করলে বলত:

يَا هُذَا اتَّقِ اللَّهَ وَدَعْ مَا تَصْنَعُ، فَإِنَّهُ لَا يَحِلُّ لَكَ

হে অমুক! আল্লাহ পাককে ভয় কর এবং তোমার কাজ থেকে বিরত থাক, কারণ এটা হালাল নয়। তারপরের দিন তার সাথে দেখা হলে এবং সে তার একই অবস্থায় থাকলে, সে তাকে নিজের সাথে খাওয়া-দাওয়া ও বসা থেকে বিরত রাখত না। যখন তারা এই কাজ করতে লাগল, তখন আল্লাহ পাক তাদের অন্তর একে অপরের উপর নিক্ষেপ করলেন, যাতে নিষেধকারীদের অবস্থাও সেই পাপীদের

মতো হয়ে যায়। অত:পর বললেন:

لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَاعِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَ كَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُّنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

(পারা ৬, সূরা মায়িদাহ, আয়াত: ৭৮, ৭৯)

কানযুল ঈমানের অনুবাদ: অভিশপ্ত হয়েছিল ঐসব লোক, যারা কুফর করেছিল, বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে, দাউদ এবং মরিয়ম-পুত্র ঈসার ভাষায়। এটা পরিণাম তাদের অবাধ্যতা ও সীমালঙ্গনের। যারা অন্যায় কাজ করতো, পরস্পরের মধ্যে একে অপরকে বারণ করত না। তারা নিশ্চয়ই অত্যন্ত মন্দ কাজ করত।

(আবু দাউদ, কিতাবুল মালাহিম, বাবুল আমর ওয়ান নাহি, ৪/১৬২, হাদিস: ৪৩৩৬)

আল্লাহ পাক বলেন:

وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَنُ فَلَا تَقْعُدُ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّلِمِينَ

(পারা ৭, সূরা আনআম, আয়াত: ৬৮)

কানযুল ঈমানের অনুবাদ: আর যখনই তোমাকে শয়তান ভুলিয়ে দেবে, অত:পর স্মরণ আসতেই যালিমদের নিকটে বসো না।

তাফসীরে আহমদীতে রয়েছে: যালিম লোক হলো পথভ্রষ্ট, ফাসিক ও কাফির; এদের সকলের সাথে বসা নিষেধ। (তাফসীরাতে আহমদীয়া, পৃ: ৩৮৮)


🕌নাজুক কাঁচের বোতল

নারী হলো মোমের নাক, বরং রজন (গঁদের আঠা) এর পুটলি, বরং বারুদের কৌটা। আগুনের সামান্য স্পর্শেই জ্বলে ওঠে (অর্থাৎ সাথে সাথে জ্বলে যায়)। বুদ্ধিও সামান্য এবং দ্বীনও সামান্য এবং প্রকৃতিতেও (অর্থাৎ ভিত্তিতে) বক্রতা (বাঁকা ভাব) এবং কাম প্রবৃত্তিতে পুরুষের চেয়ে শতগুণ বেশি (অতিরিক্ত) এবং মন্দ সংস্পর্শের প্রভাব স্থায়ীভাবে পুরুষদেরও নষ্ট করে দেয়। অত:পর এই নাজুক কাঁচের বোতলগুলোর কথা কী আর বলব, যা সামান্য আঘাতেই চুরমার হয়ে যায়! এই সকল বিষয় অর্থাৎ নারীদের বুদ্ধি ও দ্বীনের অপূর্ণতা এবং প্রকৃতিতে বক্রতা ও কাম প্রবৃত্তিতে আধিক্য এবং নাজুক কাঁচের বোতল হওয়া সহীহ হাদিস সমূহে বর্ণিত হয়েছে। এবং মন্দ সংস্পর্শের প্রভাবের কথা তো অসংখ্য সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

তন্মধ্যে এই মহান হাদিস হলো: ভালো সঙ্গী ও মন্দ সঙ্গীর উপমা এমন, যেমন কস্তুরী বিক্রেতা ও কামারের ভাট্টি। কস্তুরী বিক্রেতা তোমার জন্য লাভজনক হবেই, হয় তুমি তার থেকে কিনবে, অথবা নিজেও কস্তুরী বিক্রেতা হয়ে যাবে, নতুবা সুগন্ধ তো অবশ্যই পাবে। আর কামারের ভাট্টি তোমার ঘর পুড়িয়ে দেবে অথবা কাপড় পুড়িয়ে দেবে, অথবা কিছুই না হলে তোমার কাছে দুর্গন্ধ পৌঁছাবে। যদি তোমার কাপড় তার দ্বারা কালো না হয়, তাহলে ধোঁয়া তো অবশ্যই পৌঁছাবে।

(বুখারী, কিতাবুল বুয়ু', বাব ফিল আত্তার ওয়া বাই'ইল মিসক, ২/২০, হাদিস: ২১০১)

অশ্লীল গান শয়তানী প্রথা ও কাফিরদের রীতি। অভিশপ্ত শয়তান নির্লজ্জ এবং আল্লাহ পাক পরিপূর্ণ লজ্জাশীল। নির্লজ্জতার কথায় লজ্জাশীল কি অসন্তুষ্ট হবেন না আর সে তো নির্লজ্জদের উস্তাদ, তাদেরকে নিজের খেলার পুতুল বানাবে। হাদিসে পাকে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم (ইরশাদ) করেন:

فَاحِشٍ أَنْ يَدْخُلَهَا الْجَنَّةَ حَرَامٌ عَلَى كُلِّ

অর্থাৎ জান্নাত প্রত্যেক অশ্লীল ভাষীর উপর হারাম যে, সে তাতে প্রবেশ করবে। (মাওসূ'আতুল ইমাম ইবনে আবীদ দুনিয়া, কিতাবুস সামত ওয়া আদাবুল লিসান, বাব যাম্মিল ফুহশ ওয়াল বাযা', ৭/২০৪, হাদিস: ৩২৫)

এভাবেই শরীয়তসম্মত প্রয়োজন ও কারণ ছাড়া লোকদের সাথে অশ্লীল কথাবার্তাও নাজায়িয ও লজ্জাশীলতার পরিপন্থী।

প্রিয় নবী, রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم (ইরশাদ) করেন:

الْحَيَاءُ مِنَ الْإِيمَانِ وَالْإِيمَانُ فِي الْجَنَّةِ، وَالْبَذَاءُ مِنَ الْجَفَاءِ وَالْجَفَاءُ فِي النَّارِ

অর্থাৎ লজ্জা ঈমানের অংশ এবং ঈমান জান্নাতে (নিয়ে যায়), আর অশ্লীলতা অভদ্রতার অংশ এবং অভদ্রতা জাহান্নামে (নিয়ে যায়)। (তিরমিযী, কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ, বাব মা জাআ ফিল হায়া, ৩/৪০৬, হাদিস: ২০১৬)

مَا كَانَ الْفُحْشُ فِي شَيْءٍ قَطُ إِلَّا شَانَهُ، وَلَا كَانَ الْحَيَاءُ فِي شَيْءٍ قَطْ إِلَّا زَانَهُ

অর্থাৎ অশ্লীলতা যখন কোনো জিনিসে প্রবেশ করে, তখন তাকে ত্রুটিপূর্ণ করে দেয় এবং লজ্জা যখন কোনো জিনিসে যুক্ত হয়, তখন তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। (তিরমিযী, কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ, বাব মা জাআ ফিল ফুহশ ওয়াত তাফাহহুশ, ৩/৩৯২, হাদিস: ১৯৮১, কিছুটা পরিবর্তনে) (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২/২১০ থেকে ২১৫)


🕌গুনাহগার কে?

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মনে রাখবেন! নাবালেগ শরয়ী আহকামের মুকাল্লাফ নয়, সুতরাং তার গুনাহ গণ্য হবে না। কিন্তু পিতামাতা বা অভিভাবক যদি শিশুদের এমন জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে বেপর্দা ও নির্লজ্জতা এবং গান-বাজনা ইত্যাদি গুনাহের কার্যাদি রয়েছে, যেমন আজকালকার সাধারণ অনুষ্ঠানের অবস্থা, তাহলে সেই নিয়ে যাওয়া ব্যক্তির উপর নিজের গুনাহের পাশাপাশি সেই নাবালেগকে নিয়ে যাওয়ার গুনাহও হবে। এছাড়াও এই শিশু ছেলে বা মেয়ে, যাকে শৈশব থেকেই আপনারা এই ধরনের পরিবেশ দিচ্ছেন, সে যখন বুঝের বয়সে পৌঁছবে এবং এই অভ্যাসগুলো অবলম্বন করবে, তখন সেটার কারণও আপনারাই হবেন। তারপর যখন তাকে বোঝাবেন যে, এই কাজগুলো ভুল এবং শরীয়তের পরিপন্থী, তখন তার মনে এই প্রশ্ন জাগবে যে, যদি এটা ভুল ছিল, তাহলে আমার বাবা কেন শৈশব থেকে আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতেন? একারণেই আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নত رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ লিখেছেন যে, শৈশব থেকে যে অভ্যাস গড়ে ওঠে, তা সহজে দূর হয় না। সুতরাং নিজেদের নাবালেগ সন্তানদের এমন অপবিত্রতা থেকে না বাঁচানো তাদের জন্য, আল্লাহর পানাহ, জাহান্নামের সরঞ্জাম তৈরি করা এবং নিজে কঠিন গুনাহে লিপ্ত হওয়া। আল্লাহ পাক বলেন:

يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

(পারা ২৮, সূরা তাহরীম, আয়াত: ৬)

কানযুল ঈমানের অনুবাদ: হে

ও ঈমানদারগণ! নিজেদেরকে নিজেদের পরিবারকে ঐ আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর, যার উপর কঠোর ফেরেশতাগণ নিয়োজিত রয়েছেন যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে না এবং যা তাদের প্রতি আদেশ হয়, তাই করে।

(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়া, ২২/২১৫)


🕌ফ্যাশনের কুফলসমূহ

বর্তমান সময়ে ইসলামী বোনদের পোশাকে ফ্যাশনের নামে যে ত্রুটিগুলো দেখা যাচ্ছে, তা কারও অজানা নয়। এমনকি দ্বীনি পরিবেশে থাকা মহিলারাও বিবাহ-শাদির অনুষ্ঠান ও মাহফিলে এমন পোশাক পরেন যে, معاذ الله! আফসোস, শত আফসোস! পর্দা করা তো দূরের কথা! যে অঙ্গগুলো ঢাকা ওয়াজিব, ফ্যাশনের নামে সেগুলোও ঠিকমতো ঢাকা হয় না। অথচ 'নারী' বলতে বোঝায় ঢাকার জিনিস। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো, মুসলমানরা ইসলামী সভ্যতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে পশ্চিমা সভ্যতার সাথে সম্পর্ক জুড়ে নিয়েছে। কারণ ইসলামী সভ্যতায় তো অন্তর ও দৃষ্টিকে পবিত্র রাখার তাকিদ করা হয়েছে এবং কখনোই এই ধরনের তথাকথিত স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। একারণেই উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ইরশাদ করেছেন: যদি আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم )এই সাজ-সজ্জা) দেখতেন যা নারীরা এখন উদ্ভাবন করেছে, তাহলে তাদের মসজিদে আসা থেকে নিষেধ করে

দিতেন। (বুখারী, কিতাবুল আযান, ১/৩০০, হাদিস: ৮৬৯)

আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ বিন আহমদ আইনী হানাফী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ (মৃত্যু ৮৫৫ হিঃ) এই হাদিস শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন: যদি উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِيَ اللهُ عَنْهَا সেই সাজ-সজ্জা দেখতেন যা এই যুগের, বিশেষ করে শহরের নারীরা উদ্ভাবন করেছে এবং নিজেদের সৌন্দর্য ও প্রদর্শনে শরয়ী পরিপন্থী পদ্ধতি ও নিন্দনীয় নব্য সৃষ্টি বের করে নিয়েছে, তাহলে তিনি নারীদের খুব বেশি নিন্দা করতেন।

(উমদাতুল ক্বারী, আবওয়াবু সিফাতিস সালাত, ৪/৬৪৯, হাদিস: ৮৬৯ এর পাদটীকা)

জানা গেল যে, ফ্যাশনের নামে প্রত্যেক যুগে নারীরা কোনো না কোনো নতুন কাজ অবশ্যই করেছে, সেই সময়ের সালিহাতরা নিজেদের দায়িত্ব মনে করে অবশ্যই সেগুলোর নিন্দা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং আসুন! ইসলামী ইতিহাসের বসন্তময় উদ্যানে উঁকি দিয়ে আমাদের মহান নারীদের পবিত্র জীবন থেকে কিছু মাদানী ফুল চয়ন করি, যার সুবাসে আমরা আমাদের কন্যাদের প্রতিপালনের সময় তাদের জীবনকে সুবাসিত করতে পারি। যেমন,


🕌খাতুনে জান্নাতের লালন-পালন

সর্বপ্রথম আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, নবীদের ইমাম, আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم তার শাহজাদী হযরত সায়্যিদাতুনা খাতুনে জান্নাত, বিবি ফাতেমাতুয যাহরা رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا এর যে মাদানী প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, প্রত্যেক ইসলামী বোনের তা নজরে রাখা উচিত। কেননা তিনি নবীয়ে পাক صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর চোখের শীতলতা ছিলেন। তিনি যখন কোথাও সফরে যেতে চাইতেন, তখন সবার শেষে তাঁর শাহজাদীর সাথে দেখা করে রওনা হতেন এবং ফিরে আসার পর সবার আগে তাঁর কাছে আসতেন। সুতরাং তিনি নবীয়ে আকরাম صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর প্রশিক্ষণের হক আদায় করে বিবাহের পর নিজ স্বামীর খেদমত এবং ঘরের কাজ-কাম করার পাশাপাশি নিজ শাহজাদাদের যে মাদানী প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, الْحَمْدُ لله পৃথিবী আজও তার মহিমার সাক্ষী এবং إِنْ شَاء الله কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। একারণেই আলা হযরত رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ তাঁর رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا এর পরিবারের মহিমাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন:

কিয়া বাত রযা ইস চমনসতানে করম কি যাহরা হে কলি জিস মে হুসাইন অর হাসান ফুল শাহজাদীয়ে কওনাইন رَضِيَ اللهُ عَنْهَا এর পবিত্র জীবনের অসংখ্য সুবাসিত মাদানী ফুলের মধ্যে তাঁর পবিত্র জীবনের শেষ দিনগুলোর কেবল এই একটি ঘটনাই যথেষ্ট, যা শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهِ দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত ৩৯৭ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব "পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর"-এর ২০০ পৃষ্ঠায় এভাবে নকল করেছেন: রাসূলে করীম صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর জাহিরি ওফাতের পর খাতুনে জান্নাত, শাহজাদীয়ে কওনাইন, হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতেমাতুয যাহরা رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا এর উপর মুস্তফার বিরহের এমন প্রভাব পড়ল যে, তাঁর মুখের হাসিই শেষ হয়ে গেল! তাঁর ওফাতের আগে কেবল একবারই হাসতে দেখা গিয়েছিল। সেই ঘটনাটি কিছুটা এমন: হযরত সায়্যিদাতুনা খাতুনে জান্নাত رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا এর এই চিন্তা ছিল যে, সারাজীবন তো পরপুরুষদের দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি, এখন যেন মৃত্যুর পর আমার কাফন মোড়ানো লাশের উপর লোকদের দৃষ্টি না পড়ে! একদা হযরত সায়্যিদাতুনা আসমা বিনতে উমাইস رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا বললেন: আমি হাবশায় দেখেছি যে, জানাযার উপর গাছের ডাল বেঁধে একটি ডুলির মতো আকৃতি তৈরি করে তার উপর পর্দা ফেলে দেওয়া হয়। তারপর তিনি খেজুরের ডাল আনিয়ে সেগুলো জুড়ে তার উপর কাপড় টাঙিয়ে সায়্যিদা খাতুনে জান্নাত رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا কে দেখালেন। তিনি খুব খুশি হলেন এবং তাঁর মুখে হাসি ফুটে উঠল। এটাই ছিল সেই তিনি খুব খুশি হলেন এবং তার মুখে হাসি ফুটে উঠলা এটাই ছিল সেহ হাসি যা রাসূলে করীম صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর জাহিরি ওফাতের পর দেখা গিয়েছিল। (পর্দা সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর, পৃ. ২০০। জযবুল কুলুব (অনুদিত), পৃঃ ২৩১ এর সূত্রে)


🕌বিনতে সাঈদ বিন মুসাইয়্যিবের প্রতিপালন

হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এর কন্যা সৌন্দর্য ও মাধুর্যের প্রতিমূর্তি ছিলেন। তিনি তাঁর কন্যার এমনভাবে প্রতিপালন করেছিলেন যে, তিনি কেবল কুরআনের হাফেযাই ছিলেন না বরং রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَসَلَّم এর সুন্নাত সম্পর্কেও খুব বেশি জানতেন। যদি বলা হয় যে, তিনি চেহারার পাশাপাশি চরিত্রের সৌন্দর্য দ্বারাও সমৃদ্ধ ছিলেন, তাহলে অত্যুক্তি হবে না। একারণেই খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান তাঁর কাছে নিজের এই কন্যার জন্য নিজ পুত্র ওলিদের বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। খলিফা অনেক চেষ্টা করলেন যাতে কোনোভাবে তিনি রাজি হয়ে যান, কিন্তু তিনি বরাবরই দ্বিমত করতে থাকলেন। তারপর যুলুম ও অত্যাচারের পালা এলো এবং এক শীতের রাতে সেই যালিম তাঁকে ১০০ কোড়া মারল এবং উলের জুব্বা পরিয়ে তাঁর উপর ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিল, কিন্তু তারপরেও তিনি তাঁর কন্যার বিবাহ দিলেন না। তিনি তাঁর কন্যাকে শৈশব থেকে যে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিয়েছিলেন, তিনি চাননি যে সে দুনিয়ার চাকচিক্যে তা ভুলে যাক। একারণেই তিনি তাঁর এই কন্যার বিবাহ তাঁর এক ছাত্র হযরত সায়্যিদুনা আবু ওয়াদাহ রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এর সাথে করালেন, যিনি অত্যন্ত গরীব ছিলেন।

হযরত সায়্যিদুনা আবু ওয়াদাহ রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ নিজে তার এই বিবাহের ঘটনা কিছুটা এভাবে বর্ণনা করেন যে, আমি হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ বিন মুসাইয়ি‍্যব রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এর মজলিসে নিয়মিত উপস্থিত হতাম, তারপর কয়েকদিন উপস্থিত হতে পারলাম না। যখন পুনরায় তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এতদিন কোথায় ছিলে? আমি আরয করলাম: আমার স্ত্রীর ইন্তেকাল হয়ে গিয়েছিল, সেই পেরেশানিতে কয়েকদিন উপস্থিতির সৌভাগ্য লাভ করতে পারিনি। একথা শুনে তিনি বললেন: আমাকে খবর দাওনি কেন, আমিও জানাযায় শরিক হতাম? হযরত সায়্যিদুনা আবু ওয়াদাহ রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: এতে আমি চুপ থাকলাম। যখন আমি বিদায় নিতে চাইলাম, তখন তিনি বললেন: দ্বিতীয় বিবাহ করতে চাও? আমি আরয করলাম: হুযুর! আমি খুব গরীব, আমার কাছে সামান্য কয়েক দিরহাম আছে, আমার মতো গরীবের সাথে কে বিবাহ করাবে? তখন তিনি বললেন: আমি তোমাকে বিবাহ করাবো। আমি অবাক হয়ে আরয করলাম: আপনি আমার বিবাহ করাবেন? বললেন: হ্যাঁ! আমি তোমার বিবাহ করাবো এররপর তিনি আল্লাহ পাকের হামদ বর্ণনা করলেন এবং রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর উপর দরূদ ও সালাম পড়লেন এবং আমার বিবাহ তাঁর কন্যার সাথে করিয়ে দিলেন। আমি সেখান থেকে উঠে ঘরের দিকে রওনা হলাম। আমি এত খুশি ছিলাম যে, আমার বুঝে আসছিল না কী করব। তারপর আমি ভাবতে লাগলাম যে, কার কার কাছ থেকে আমার ঋণ আদায় করতে হবে, একইভাবে আমি আগামী মুহূর্তগুলোর কথা ভাবতে লাগলাম, অত:পর আমি মাগরিবের নামায মসজিদে আদায় করলাম এবং পুনরায় ঘরে ফিরে এলাম। আমি ঘরে একাই ছিলাম, তারপর আমি জলপাই তেল ও রুটি দস্তরখানে রেখে খাওয়া শুরু করতেই দরজায় টোকা পড়ল। আমি জিজ্ঞেস করলাম: কে? আওয়াজ এলো: সাঈদ। আমি বুঝে গেলাম যে, নিশ্চয়ই ইনি হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ হবেন। এতক্ষণে তিনি ভেতরে প্রবেশ করলেন। আমি আরয করলাম: আপনি আমাকে খবর পাঠিয়ে দিতেন, আমি নিজেই উপস্থিত হতাম। তিনি বললেন: না! তুমি এই ব্যাপারে বেশি হকদার যে, তোমার কাছে আসা হোক। আমি আরয করলাম: বলুন! আমার জন্য কী হুকুম রয়েছে? তিনি বললেন: এখন তুমি অবিবাহিত নও, তোমার বিবাহ হয়ে গেছে, আমি এই বিষয়টিকে অপছন্দ করি যে, তুমি বিবাহ হওয়ার পরেও একাই থাকো। তারপর একদিকে সরে দাঁড়ালেন, তখন আমি দেখলাম যে, তার কন্যা তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার হাত ধরে ঘরের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বললেন: এ তোমার স্ত্রী। এতটুকু বলার পর তিনি চলে গেলেন। আমি দরজার কাছে গেলাম। এবং যখন মনে হলো যে, তিনি চলে গেছেন, তখন ফিরে এসে ঘরের মধ্যে সেই লজ্জা ও শরমের প্রতিমূর্তিকে মাটিতে বসে থাকতে দেখলাম।

আমি তাড়াতাড়ি জলপাই তেল ও রুটির পাত্রটি একপাশে রেখে দিলাম যাতে সে তা দেখতে না পায়। তারপর আমি আমার ঘরের ছাদে উঠে আমার প্রতিবেশীদের ডাকতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই জমা হয়ে গেল এবং জিজ্ঞেস করতে লাগল: কী পেরেশানি? আমি যখন বললাম যে, হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ বিন মুসাইয়ি‍্যব রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ তার কন্যার সাথে আমার বিবাহ করিয়ে দিয়েছেন এবং তিনি তার কন্যাকে আমার ঘরে ছেড়ে গেছেন, তখন লোকেরা অবিশ্বাসের সাথে জিজ্ঞেস করলো: সত্যিই কি হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ বিন মুসাইয়ি‍্যব রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ তোমার সাথে তার কন্যার বিবাহ করিয়েছেন? আমি বললাম: যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে আমার ঘরে এসে দেখে নাও, তার কন্যা আমার ঘরে বসে আছে। একথা শুনে সবাই আমার ঘরে এলো। যখন আমার মা এই কথা জানতে পারলেন, তখন তিনিও সাথে সাথেই এলেন এবং আমাকে বলতে লাগলেন: যদি তিন দিনের আগে তুমি তার কাছে যাও, তাহলে তোমার উপর আমার চেহারা দেখা হারাম। আমি তিন দিন অপেক্ষা করলাম, চতুর্থ দিন যখন গেলাম এবং তাকে দেখলাম, তখন শুধু দেখতেই রইলাম। সে সৌন্দর্য ও মাধুর্যের প্রতিমূর্তি ছিল, কুরআনে পাকের হাফেযা, রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَসَلَّم এর সুন্নাত সম্পর্কে খুব বেশি জানত এবং স্বামীর অধিকার সম্পর্কে খুব বেশি অবগত ছিল। এভাবেই এক মাস কেটে গেল। না তো হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ আমার কাছে এলেন, না আমি উপস্থিত হতে পারলাম। তারপর আমিই তার কাছে গেলাম। তিনি অনেক লোকের ভিড়ে বসে ছিলেন, সালামের জবাব দেওয়ার পর মজলিস শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি আমার সাথে কোনো কথা বললেন না। যখন সবাই চলে গেল আর আমি ছাড়া আর কেউ রইল না, তখন তিনি আমাকে বললেন: সেই লোকটিকে কেমন পেলে? আমি আরয করলাম: হুযুর! (আপনার কন্যা এমন গুণের অধিকারী যে) সম্ভবত কোনো শত্রই তাকে অপছন্দ করবে না, নতুবা বন্ধুরা তো এমন জিনিস পছন্দ করেই। বললেন: যদি সে তোমাকে কষ্ট দেয়, তাহলে লাঠি দিয়ে সংশোধন করবে। তারপর যখন আমি ঘরের দিকে রওনা হলাম, তখন তিনি আমাকে বিশ হাজার দিরহাম দিলেন, যা নিয়ে আমি ঘরে চলে এলাম।

(উয়ুনুল হিকায়াত, আল-হিকায়াতুস সাবি'আতু ওয়াল ইশরূন, ১/৮০, সারসংক্ষেপ)

আল্লাহ পাকের রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক আর তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নারীর জন্য সাজসজ্জা করা তো জায়িয বরং তার উপর আবশ্যক যে, সে তার স্বামীর জন্য চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে সাজসজ্জা করবে, পরপুরুষদের দেখানোর জন্য নয়। কিন্তু আফসোস! আজকাল ঘরে তো সাদামাটা ও ময়লা কাপড় পরা হয়, কিন্তু বাইরে যেতে হলে ভালো থেকে ভালো কাপড় পরার চেষ্টা করা হয়। সুতরাং নিয়ত করে নিন যে, যেমনটি শরীয়ত প্রশিক্ষণ ও প্রতিপালনের আদেশ দিয়েছে, إِنْ شَاءَ الله আমরা আমাদের কন্যার সেভাবেই প্রতিপালন করার চেষ্টা করব এবং তাকে এমন পর্দানশীন মুবাল্লিগা বানাব যে, সে ইসলামী বোনদের মধ্যে মাদানী বিপ্লব ঘটাবে।


🕌বিদায় বেলার উপদেশ

হযরত সায়্যিদাতুনা আসমা বিনতে খারিজা ফাযারী রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهَا তার কন্যাকে বিবাহের পর ঘর থেকে বিদায় দেওয়ার সময় যে উপদেশপূর্ণ মাদানী ফুলের তোড়া উপহার দিয়েছিলেন, হায়! প্রত্যেক মা এই মাদানী ফুলগুলো তার কন্যাকে বিদায় বেলায় মনে করিয়ে দিত। এই মাদানী ফুলগুলো কিছুটা এমন: কন্যা! তুমি যে ঘরে জন্মগ্রহণ করেছ, এখন এখান থেকে বিদায় নিয়ে এমন এক জায়গায় (অর্থাৎ স্বামীর ঘরে) যাচ্ছ, যার সাথে তুমি পরিচিত নও এবং এমন এক সঙ্গীর (অর্থাৎ স্বামীর) কাছে যাচ্ছ, যার সাথে তুমি পরিচিত নও।

  • তার জন্য জমিন হয়ে যেও, সে তোমার জন্য আসমান হয়ে যাবে।

  • তার জন্য বিছানা হয়ে যেও, সে তোমার জন্য স্তম্ভ হয়ে যাবে।

  • তার জন্য দাসী হয়ে যেও, সে তোমার গোলাম হয়ে যাবে।

  • কম্বলের মতো জড়িয়ে থেকো না যে, সে তোমাকে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দেয়।

  • তার থেকে এত দূরেও থেকো না যে, সে তোমাকে ভুলেই যায়।

  • যদি সে কাছে আসে, তাহলে কাছে যেও এবং যদি দূরে সরে যায়, তাহলে দূরে যেও।

  • তার নাক, কান ও চোখ (অর্থাৎ সব ধরনের গোপনীয়তার) হেফাযত করবে, যাতে সে তোমার কাছ থেকে কেবল তোমার সুগন্ধই পায় (অর্থাৎ গোপনীয়তার হেফাযত ও বিশ্বস্ততা পায়)।

  • সে তোমার কাছ থেকে কেবল ভালো কথাই শুনুক এবং কেবল ভালো

  • কাজই দেখুক। (ইহয়াউ উলুমিদ্দীন, কিতাবু আদাবিন নিকাহ, ২/৭৫)

এই মাদানী ফুলগুলো থেকে সেই মায়েরা উপদেশ গ্রহণ করুক, যারা কন্যাদের ঘরকে জান্নাত বানানোর ভালো পরামর্শ দেওয়ার পরিবর্তে স্বামী, দেবর-ভাসুর ও শাশুড়ির উপর কর্তৃত্ব করার পদ্ধতি শেখায়। তারপর যখন কন্যা এই পরামর্শগুলোর উপর আমল করার চেষ্টা করে, তখন ফিতনা ও ফাসাদের এমন এক আগুন জ্বলে ওঠে যে, উভয় পরিবার তার কবলে পড়ে যায়। আল্লাহ পাক আমাদের সন্তানদের মাদানী প্রশিক্ষণ দেওয়ার তাওফিক দান করুক এবং এই (লিখিত) বয়ানকে আমাদের জন্য আখিরাতের সম্বল বানিয়ে দিক।

নিজেদের সন্তানদের ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ কোনো নেয়ামতের চেয়ে কম নয়। সুতরাং নিজেরাও দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে যুক্ত থাকুন এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকেও এই সুবাসিত মাদানী পরিবেশের সাথে যুক্ত রাখুন। কারণ দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে যুক্ত হয়ে অসংখ্য লোকের জীবন পরিবর্তিত হয়েছে। আপনারাও নিজেদের ও নিজেদের পরিবার-পরিজনের জীবনে মনোরম মাদানী পরিবর্তন আনার জন্য ফয়যানে আউলিয়া দ্বারা সমৃদ্ধ দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে যুক্ত হয়ে যান এবং আপনাদের শহরে অনুষ্ঠিত দা'ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নতে ভরা ইজতেমায় নিয়মিতভাবে অংশগ্রহন করুন, অতঃপর দেখুন আপনাদের উপর কেমন মাদানী রঙ লাগে! উৎসাহের জন্য দা'ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতেমার একটি মাদানী বাহার পেশ করা হলো।


🕌সুন্নাতে ভরা ইজতেমার মাদানী বাহার

পাঞ্জাব (পাকিস্তান) এর এক ইসলামী বোনের বর্ণনার সারমর্ম হলো: আমি গান-বাজনা শোনার খুব অভ্যস্ত ছিলাম। আমার কাছে গানের অনেক ক্যাসেট ও বই জমা ছিল, এমনকি আমি নিজেও গান লিখতাম। সিনেমা-নাটকের এমন আসক্ত ছিলাম যে, মনে হতো সম্ভবত এগুলো এছাড়া (আল্লাহর পানাহ) বাঁচতে পারব না। আফসোস! দৃষ্টির হেফাযতের কোনো চিন্তাই ছিল না। আল্লাহ পাকের কৃপায় অবশেষে গুনাহে ভরা জীবন থেকে সরে আসার সুযোগ হলো। ঘটনা হলো, আমি দা'ওয়াতে ইসলামীর ইসলামী বোনদের সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতেমায় অংশগ্রহন করার সৌভাগ্য লাভ করলাম। এই সুন্নাতে ভরা ইজতেমায় হওয়া বয়ান, দোয়া এবং ইসলামী বোনদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার মাদানী ফুলগুলো আমার হৃদয়ে মাদানী বিপ্লব ঘটিয়ে দিল। الحَمْدُ لله আমি আমার গুনাহ থেকে তাওবা করলাম এবং সুন্নাতে ভরা জীবন-যাপন করার জন্য দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে যুক্ত হয়ে গেলাম। লেখার সময় পর্যন্ত এলাকার দায়িত্বশীলার সাথে সুন্নাতের খেদমতের সৌভাগ্য লাভ করছি।

করম জু আপ কা এ সায়্যিদে আবরার হো জায়ে তো হার বদকার বান্দা দম মে নেকো কার হু জায়ে

আপনাদের কন্যাদের এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে নিয়ে যাবেন না, যেখানে শরীয়ত বিরোধী কাজ হয়, যেখানে তার নৈতিকতা বরবাদ হয়, যেখানে তার আখিরাত বরবাদ হয়। আমাদের সকলকে চেষ্টা করতে হবে এই নির্লজ্জতার মোকাবেলা করার এবং আমরা নিয়ত করব, আমার ঘরের কোনো ইসলামী বোন, কন্যা উঠবে এবং সে ইসলামী বোনদের মধ্যে মাদানী বিপ্লব ঘটাবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে আমলের তাওফিক দান করুক।

أمين بجاهِ النَّبِيِّ الْآمِينَ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم


🕌মন্দ সংস্পর্শের প্রভাব

রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর বাণী: মন্দ সঙ্গী থেকে বাঁচো, কারণ তোমাকে তার সাথেই চেনা যাবে। অর্থাৎ যেমন লোকদের সাথে মানুষের ওঠা-বসা হয়, লোকেরাও তাকে তেমনই জানে। (কানযুল উম্মাল, কিতাবুস সুহবাহ, কিসমুল আকওয়াল, আল-বাবুস সালিস ফিত তারহীব আন সুহবাতিল সূ', ৯/১৯, হাদিস: ২৪৮৩৯)


🕌সৎ সাহচর্যের প্রভাব

সূফী বুযুর্গগণের (رَحِمَهُمُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِين) বাণী: সৎ সঙ্গ সকল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। দেখো, সাহাবায়ে কেরাম (عَلَيْهِمُ الرَّضْوَان) সমগ্র বিশ্বের আউলিয়াদের চেয়েও উত্তম কেন? কারণ তাঁরা প্রিয় নবী صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم -এর সাহচর্য লাভ করেছেন।

(মিরআতুল মানাজীহ, ৩/৩১৩)


🕌কেউ দেখছে না তো!

হযরত সায়্যিদুনা ফারকাদ সাবাখী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: মুনাফিক যখন দেখে যে, কেউ (তাকে দেখছে না), তখন সে মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। সে এই কথার তো খেয়াল রাখে যে, লোকেরা তাকে না দেখুক, কিন্তু আল্লাহ পাক দেখছেন, এই কথার খেয়াল রাখে না। (ইহয়াউ উলুম, কিতাবুল মুরাকাবা ওয়াল মুহাসাবা, ৫/১৩০, সংক্ষেপিত)


🕌হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইমরান আত্তারী এর লিখিত বয়ানসমূহ

প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য বয়ানসমূহ

তালিকা ১:

  1. ফয়যানে মুর্শিদ (পৃষ্ঠা ৪৬)

  2. জান্নাতের প্রস্তুতি (পৃষ্ঠা ১৩৪)

  3. দায়িত্বের অনুভূতি (পৃষ্ঠা ৫০)

  4. ওয়াকফে মদীনা (পৃষ্ঠা ৮৬)

  5. মাদানী কাজের বিভাজন (পৃষ্ঠা ৬৮)

  6. মাদানী কাজের বিভাজনের দাবীসমূহ (পৃষ্ঠা ৭৩)

  7. মাদানী পরামর্শের গুরুত্ব (পৃষ্ঠা ৩২)

  8. সুদ এবং এর প্রতিকার (পৃষ্ঠা ৯২)

  9. সীরাতে সাইয়্যেদুনা আবু দারদা (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) (পৃষ্ঠা ৭৫)

  10. প্রিয় মুর্শিদ (পৃষ্ঠা ৪৮)

  11. পাপসমূহের জননী (পৃষ্ঠা ১১২)

  12. সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাদানী পুষ্প (পৃষ্ঠা ৫৬)

  13. আত্মমর্যাদাশীল স্বামী (পৃষ্ঠা ৪৮)

  14. সকল শর্ত পূরণকারী পীর (পৃষ্ঠা ৮৮)

  15. সাহাবাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা (পৃষ্ঠা ১২৪)

  16. কামিল মুরীদ (পৃষ্ঠা ৪৮)

  17. পীরের প্রতি আপত্তি করা নিষেধ (পৃষ্ঠা ৬০)

  18. আমীরে আহলে সুন্নাতের দ্বীনী খিদমাত (পৃষ্ঠা ৪৮০)

  19. জান্নাতের পথ (পৃষ্ঠা ৫৬)

  20. আমাদের কী হয়েছে (পৃষ্ঠা ১১৬)

  21. জীবনের উদ্দেশ্য (পৃষ্ঠা ৬০)

  22. মৃত্যুর চিন্তা (পৃষ্ঠা ৪৪)

  23. সদকার পুরস্কার (পৃষ্ঠা ৬০)

  24. কন্যা সন্তানের প্রতিপালন (পৃষ্ঠা ৭২)

প্রকাশিতব্য লিখিত বয়ানসমূহ

  • (১) এক চোখওয়ালা মানুষ
  • (২) গুনাহের পরিণতি

🕌নেক-নামাযী হওয়ার জন্য

প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ইশার নামাযের পর আপনার শহরে অনুষ্ঠিত দাওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টির জন্য ভাল ভাল নিয়্যত সহকারে সারা রাত অতিবাহিত করুন। * সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য আশিকানে রাসূলের সাথে প্রতি মাসে তিন দিন মাদানী কাফেলায় সফর এবং * প্রতিদিন "পরকালিন বিষয়ে চিন্তা ভাবনা" করার মাধ্যমে নেক আমলের পুস্তিকা পূরণ করে প্রত্যেক মাসের ১ম তারিখ আপনার এলাকার যিম্মাদারকে জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।


🕌আমার মাদানী উদ্দেশ্য

"আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।" إِنْ شَاء الله নিজের সংশোধনের জন্য নেক আমলের পুস্তিকার উপর আমল এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের জন্য "মাদানী কাফেলায়" সফর করতে হবে। إِنْ شَاء الله


🕌মাকতাবাতুল মদীনার বিভিন্ন শাখা

  • হেড অফিস: ১৮২ আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। মোবাইল: ০১৭১৪১১২৭২৬

  • ফয়যানে মদীনা জামে মসজিদ, জনপথ মোড়, সায়েদাবাদ, ঢাকা।

  • মোবাইল: ০১৯২০০৭৮৫১৭

  • আল-ফাতাহ শপিং সেন্টার, ২য় তলা, ১৮২ আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। মোবাইল ও বিকাশ নং: ০১৮৪৫৪০/৩৫৮৯

  • কাশারীপট্টি, মাজার রোড, চকবাজার, কুমিল্লা। মোবাইল: ০১৭৯৪৭৮১৩২৬

  • পুরাতন বাবুপাড়া ফয়যানে শাহজালাল মসজিদ নিয়ামতপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী।

  • মোবাইল: ০১৮৭৬৮৪৫০৩৪

  • E-mail: bdmaktabatulmadina26@gmail.com, banglatranslation@dawateislami.net, Web: www.dawateislami.net

Top