“
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ وَالصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى خَاتَمِ النَّبِيِّنَ امَّا بَعْدُ فَأَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
“তাফসীরে নূরুল ইরফান” থেকে ৪২টি মাদানী ফুল (পর্ব-৬)
🕌আত্তারের দোয়া
হে আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি এই পুস্তিকা “তাফসীরে নূরুল ইরফান” থেকে ৪২টি মাদানী ফুল (পর্ব: ১) পাঠ করবে বা শুনবে, তাকে কুরআনুল কারীম এর উপর আমল করার তাওফিক দান করো এবং তাকে মাতা-পিতা ও পরিবারসহ জান্নাতুল ফিরদৌসে বিনা হিসেবে প্রবেশ নসীব করো।
اٰمِیْن بِجَاهِ خَاتَمِ النَّبِیّٖنَ صَلَّی اللهُ عَلَیْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ
🕌সদকার ফলাভিষিক্ত দরূদ শরীফ
আল্লাহ পাকের শেষ নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّم এর এরশাদ: যে মুসলমানের নিকট সদকা করার মত কিছু নেই, তার উচিত নিজের দোয়ায় এই বাক্যগুলো বলে নেয়া:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّم এর উপর রহমত নাযিল করুন। মুমিন-মুমিনাত ও মুসলমান নর-নারীর উপর রহমত অবতীর্ণ করুন। কেননা এটা যাকাত। এবং মুমিন কখনো কল্যাণ থেকে পরিতৃপ্ত হয় না, যতক্ষণ না জান্নাত তার ঠিকানা হয়ে যায়। (আল-ইরফান বিরভাতবীয় শরীহ ইবনে হিসাম, ১/১০০, হাদিস: ১০০)
হাদিসের ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি সদকা করার সামর্থ্য রাখে না, তার উচিত আল্লাহ পাকের নিকট হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর জন্য রহমতের দোয়া করা অর্থাৎ দরূদ শরীফ প্রেরণ করা, (এটি) তার জন্য সদকা।
صَلَّى اللهُ عَلٰى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ
🕌“সূরা সাজদাহ” থেকে প্রাপ্ত ৩টি সুন্দর বিষয়
(১) যদিও চোখ, কান, অন্তর পশুদেরও প্রদান করা হয়েছে, কিন্তু মানুষের এই অঙ্গগুলো অনেক মর্যাদা দান। কারণ মানুষ চোখ, কান দ্বারা আল্লাহুর আয়াত দেখে ও শোনে এবং তার অন্তর হলো বস্তুর তা'জীমগাহ (অর্থাৎ যিয়ারতের স্থান), যার দ্বারা সে সমস্ত সৃষ্টি থেকে শ্রেষ্ঠ। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫১৯ পৃষ্ঠা)
(২) কিয়ামতের দিন আল্লাহুর দরবারে সকলেই মাথা নত করে থাকবে, কিন্তু মুমিন মুত্তাকী দরবারের আদবের কারণে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০১ পৃষ্ঠা)
(৩) যে নবীকে (مَعَاذَ اللّٰه) অবমাননার ছলে) সাধারণ মানুষের সমান মনে করে, সে কাফির। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৭ পৃষ্ঠা)
(৪) ‘ফিসক’ এর অর্থ সীমা অতিক্রম করা। গুনাহগার মুমিন তাকওয়ার সীমা থেকে, কাফির ঈমানের সীমা থেকে, এমনকি হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর অবমাননাকারী মানবতার সীমা থেকে বহির্ভূত। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০১ পৃষ্ঠা)
(৫) জাহান্নামীরা প্রজ্জলিত অগ্নিশিখায় এত বেশি লাফালাফি করবে যে, তারা জাহান্নামের মুখের কাছে চলে আসবে, প্রায় ছিটকে বাইরে পড়ার উপক্রম হবে, তখন ফেরেশতারা তাদের শরীরে গদা দিয়ে আঘাত করে আবার নিচে ফেলে দিবে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০১ পৃষ্ঠা)
(৬) প্রথম কিতাবধারী নবী হলেন মূসা عَلَيْهِ السَّلَام, তাঁর পূর্ববর্তী নবীদেরকে সহীফা দেওয়া হয়েছিল। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০১ পৃষ্ঠা)
🕌“সূরা আল-আহযাব” থেকে প্রাপ্ত ৩৪টি চমৎকার বিষয়
(১) আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর মর্যাদা সমস্ত রাসূলগণের চেয়েও বেশি। কারণ অন্য নবীগণকে তাদের নাম ধরে ডাকা হয়েছে, কিন্তু আমাদের হুযূরকে সম্মানিত উপাধি দিয়ে ডাকা হয়েছে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০২ পৃষ্ঠা)
(২) হুযূর পুরনূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর সমস্ত ইলহাম ওহী-ই ইলাহী। হুযূর পুরনূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর প্রতিটি কাজ ওহীর অনুসরণ।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০২ পৃষ্ঠা)
(৩) কাউকে পিতা, ভাই বা পুত্র বলে ডাকলে বাস্তবে তারা পিতা-পুত্র হয়ে যায় না। না তাদের স্ত্রীর হারাম হয়, না তাদের মায়েরা হালাল হয় এবং না তারা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ পায়।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৭ পৃষ্ঠা)
(৪) ঈসা عَلَيْهِ السَّلَام এর পিতা ছিলেন না, নতুবা তাকে ঈসা ইবনে মারইয়াম বলা হতো না। মারইয়াম তাঁর মা। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৭ পৃষ্ঠা)
(৫) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে হাযির-নাযির, কারণ তিনি প্রাণের চেয়েও নিকটবর্তী। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৩ পৃষ্ঠা)
(৬) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর নির্দেশ প্রত্যেক মুমিনের উপর বাদশা, মাতা-পিতা চেয়েও বেশি কার্যকর। কারণ হুযূর আমাদের সর্বাধিক মালিক। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৩ পৃষ্ঠা)
(৭) নবী আমাদের ভাই নন, কারণ ভাইয়ের স্ত্রী ভাবি হয়, মা নয়। বরং হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ আমাদের পিতা এবং মুসলমানরা পরস্পর ভাই। আর তাঁর সেই স্ত্রীগণই মুমিনদের মাতা, যারা সম্মানিত সান্নিধ্যে ধন্য হয়েছেন, চাই তিনি স্ত্রী হোন বা দাসী। যারা শুধু নিকাহে এসে আলাদ হয়ে গিয়েছেন, যেমন উমাইয়া, জুনাইয়া, তারা মা নন।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৩ পৃষ্ঠা)
(৮) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর স্ত্রীগণের মুমিনদের মা হওয়ার বিষয় দুটি হুকুমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য: চূড়ান্ত আদব ও সম্মান এবং তাদের সাথে বিবাহ হারাম হওয়া। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৩ পৃষ্ঠা)
(৯) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর সাথে কোনো কিছুর অস্বীকার করা যেন রবের সাথে অঙ্গীকার করা। কারণ হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ আল্লাহ পাকের প্রধান প্রতিনিধি এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। একইভাবে, নিজের পীর সাথে অস্বীকার করা যেন হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর সাথে অঙ্গীকার করা। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৭ পৃষ্ঠা)
(১০) মুমিনের শান হলো কথা কম বলা এবং কাজ বেশি করা। একারণে পালনকর্তা কথা বলার জন্য একটি জিহ্বা এবং অন্যান্য কাজের জন্য দুটি করে অঙ্গ দিয়েছেন। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৪ পৃষ্ঠা)
(১১) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর জীবন মুবারক সমস্ত মানুষের জন্য একটি পরিপূর্ণ নমুনা (Role Model), যেখানে জীবনের কোনো শাখাই বাকি থাকে না। সফল জীবন সেই, যা হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে। আমাদের জীবন-মরণ, ঘুম-জাগরণ যদি হুযূরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে হয়, তবে এই সমস্ত কাজ ইবাদতে পরিণত হবে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৮২৬ পৃষ্ঠা)
(১২) উলামাগণ বলেন: যে মুমিনের মধ্যে এই তিনটি গুণ একত্রিত হয়: (১) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর অনুসরণ (২) আল্লাহর প্রতি আশা এবং (৩) রবের অধিক যিকির, সে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তিতে থাকবে। কারণ সে বিপদ ধৈর্য এবং সুখে শোকর করার তাওফিক লাভ করে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৮২৬ পৃষ্ঠা)
(১৩) কাফিরদের অন্তরে মুমিনের ঈমানের একটি স্বাভাবিক প্রভাব থাকে। ইমানী শক্তি যত বেশি, প্রভাবও তত বেশি। এমনকি কিছু মুমিনের প্রভাব পশুদের অন্তরেও ছিল। (রাসূলের সাহাবী) হযরত সফীনা رَضِىَ اللهُ عَنْهُ এর সামনে সিংহ কুকুরের মতো লেজ নাড়াতে নাড়াতে এসেছিল। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৮২৮ পৃষ্ঠা)
(১৪) উচ্চ মর্যাদার অধিকারীদের অপরাধের শাস্তি বেশি হয়। কারণ তাদের উপর রবের অনুগ্রহ বেশি। সুতরাং উলামা ও সাদাতে কিরামকে মন্দ কাজ থেকে অনেক বেশি বেঁচে থাকা উচিত। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৮২৯ পৃষ্ঠা)
(১৫) যেহেতু হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর স্ত্রীগণে বিশেষ কোনো নারী নেই, সেহেতু হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর মতোও কেউ হতে পারে না। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৭ পৃষ্ঠা)
(১৬) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর স্ত্রী ও সন্তানগণ গুনাহ থেকে পবিত্র।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৮২৯ পৃষ্ঠা)
(১৭) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর নির্দেশের সামনে মুমিনের নিজের ব্যক্তিগত বিষয়েও কোনো অধিকার থাকে না। যদি হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ কারো উপর তার বিবাহিতা স্ত্রীকে হারাম করে দেন, তবে তা হারাম হয়ে যাবে, যেমনটি হযরত কা’ব رَضِىَ اللهُ عَنْهُ এর ক্ষেত্রে হয়েছিল। সারকথা হলো, হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ আমাদের দ্বীনের মালিক।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৮ পৃষ্ঠা)
(১৮) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ প্রত্যেক মুমিনের জান ও মালের মালিক।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৮ পৃষ্ঠা)
(১৯) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর নির্দেশ মাতা-পিতার নির্দেশের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৮ পৃষ্ঠা)
(২০) অপবাদ থেকে বাঁচা এবং নিজের সম্মান রক্ষার চেষ্টা করা রাসূলের সুন্নাত। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৮২৯ পৃষ্ঠা)
(২১) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর এক হাজার নাম রয়েছে, যার মধ্যে মুহাম্মদ, আহমদ হলো সদাগত নাম এবং বাক্যগুলো গুণবাচক নাম। ‘মুহাম্মদ’ শব্দটি অক্ষর সংখ্যা ও নুকতাবিহীন হওয়ার দিক থেকে ‘আল্লাহ’ নামের সাথে অনেক সাদৃশ্যপূর্ণ। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৯ পৃষ্ঠা)
(২২) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ-কে মাহবুব বানিয়ে পাঠানো হয়েছে যে, তিনি সমস্ত সৃষ্টির মাহবুব এবং চিরস্থায়ী মাহবুব। একারণে তাঁর বিচ্ছেদে কাঠ, উট কেঁদেছে এবং বর্তমানেও তাঁকে না দেখেই কোটি কোটি প্রেমিক বিদ্যমান রয়েছে এবং থাকবে।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৮২৯ পৃষ্ঠা)
(২৩) সকল নবী আল্লাহর সাক্ষী ছিলেন এবং তাঁর রহমতের সুসংবাদদাতা ও ছিলেন, আবার তাঁর আযাবের সতর্ককারীও ছিলেন। কিন্তু তাদের সাক্ষ্য,সুসংবাদ ইত্যাদি ছিল শুনে। আর হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর এই গুণাবলী ছিল দেখে। কারণ হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ জান্নাত ও জাহান্নাম নিজ চোখে দেখেছেন এবং স্বয়ং সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর চাক্ষুষ সাক্ষ্যের ওপর সমস্ত শ্রুত সাক্ষ্যের পরিপূর্ণতা ঘটে যায়, এরপর আর কোনো সাক্ষের প্রয়োজন থাকে না। একারণে হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ সর্বশেষ নবী এবং তাঁর সাক্ষ্যই চূড়ান্ত সাক্ষ্য। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৮২৯)
(২৪) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর দ্বারা চারজন বারোজন এবং ফুকূ দুজন। যাদের মধ্যে হযরত আব্বাস ও হামযাহ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا ঈমান এনেছিলেন এবং ফুকূদের মধ্যে হযরত সাফিয্যাহ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২০, সংক্ষেপ)
(২৫) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর আস্তানা এমন এক আস্তানা, যার আদব স্বয়ং আল্লাহ পাক শেখান এবং এই সম্মানিত আস্তানার আদব ফেরেশতা, জিন, মানুষ, পশু অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টিই পালন করে।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২১)
(২৬) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর পবিত্র স্ত্রীগণ যদিও মুসলমানের মা, তবুও পর্দা করা ওয়াজিব। সুতরাং পীরের ও উস্তাদের স্ত্রী মুরীদ এবং ছাত্র থেকে পর্দা করবে। যেহেতু পবিত্র স্ত্রীগণকে সেই পবিত্র সাহাবীদের জামাত (رَضِىَ اللهُ عَنْهُم) থেকে পর্দা করানো হয়েছে, সেহেতু এখনকার মুসলমানদের আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৩০)
(২৭) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ সর্বদা হায়াতুন্নবী (অর্থাৎ জীবিত) এবং সকলের দরূদ ও সালাম শোনেন, উত্তর দেন। কারণ যে উত্তর দিতে পারে না, তাকে সালাম করা নিষেধ, যেমন নামাযী এবং ঘুমন্ত ব্যক্তি।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৩২)
(২৮) ফেরেশতাদের বিভিন্ন দায়িত্ব মানুষের সৃষ্টির পর নির্ধারিত হয়েছে। এর আগে কোটি কোটি বছর ধরে তাদের দুটিই কাজ ছিল: সিজদা এবং দরূদ। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৩২)
(২৯) দরূদ শরীফ জীবনে একবার পাঠ করা ফরয। নামাযে আত্তাহিয়্যাতুর পর পাঠ করা সুন্নাত এবং সর্বদা পাঠ করা মুস্তাহাব।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৩২, সংক্ষেপ)
(৩০) পরিপূর্ণ দরূদ শরীফ সেটাই, যাতে সালাত ও সালাম উভয়ই থাকে। নামাযে দরূদে ইবরাহীমীতে সালাম নেই, কারণ সালাম আত্তাহিয়্যাতুতে হয়ে গেছে এবং পুরো নামায একই মজলিসের হুকুম রাখে। হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ দরূদে ইবরাহীমীর মাধ্যমে যে দরূদের শিক্ষা দিয়েছেন, সেখানে নামাযের অবস্থার দরূদ উদ্দেশ্য।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৩২, সংক্ষেপ)
(৩১) যে কাজ দ্বারা হুযূর পুরনূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ কষ্ট পান, তা হারাম, যদিও বাহ্যিকভাবে তা ইবাদতই হোক। সুতরাং যদি হুযূর নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ -কে কোনো সময় কোনো নামায দ্বারা কষ্ট পৌঁছায়, তবে সেই নামায হারাম। আর যদি কারো নামায ত্যাগ করার কারণে শাস্তি পৌঁছায়, তবে সেই নামায ছেড়ে দেওয়া ফরয। একারণেই হযরত আলী رَضِىَ اللهُ عَنْهُ এর ঘুমাবার আসরে হুযূর পুরনূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর ঘুমের উপর কুরবান করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়েছিল। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৩২)
(৩২) সর্বদা নির্জনে ও পর্দার মধ্যে গোসল করা উচিত। এটি নবীদের সুন্নাত। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৩২)
(৩৩) জিহ্বাকে ঠিক রাখা, মিথ্যা, গীবত, চাগলখুরি, গালিগালাজ থেকে একে বাঁচানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আল্লাহ পাক তাকওয়ার পর বিশেষভাবে জিহ্বাকে সংযত রাখার কথা উল্লেখ করেছেন, নতুবা এটিও তাকওয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। জিহ্বার হেফাজত সমস্ত কল্যাণের মূল। একারণে সমস্ত কাজের জন্য দুটি অঙ্গ এবং কথা বলার জন্য একটি জিহ্বা, তাও আবার ঠোঁটের ফটকে বদ্ধ এবং ৬২টি দাঁতের পাহারায় আবদ্ধ, যাতে বোঝা যায় যে, জিহবাকে লাগামহীন রেখো না। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫১৩-৫০১)
(৩৪) ফরযের প্রতি যত্নশীল হওয়ার দ্বারা সুন্নাতের তাওফিক মিলে যায়। সুন্নাতের প্রতি যত্নশীল হওয়ার দ্বারা মুস্তাহাব আদায় করা এবং গুনাহ থেকে বাঁচার তাওফিক নসীব হয়। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫১৩-৫০১)
🕌“সূরা সাবা” থেকে প্রাপ্ত ৫টি সুন্দর বিষয়
(১) হযরত সুলাইমান عَلَيْهِ السَّلَام এর সাথে একজন ফেরেশতা আগুনের গদা (অর্থাৎ আগুনের হাতুড়ি) নিয়ে থাকতেন, যিনি অবাধ্য জিনকে মারতেন। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫১৮)
(২) নবীগণের عَلَيْهِمُ السَّلَام দেহ মুবারক ওফাতের পর গলে যাওয়া ও বিলীন হওয়া থেকে সুরক্ষিত। দেখুন, উপত্যকা হযরত সুলাইমান عَلَيْهِ السَّلَام এর লাঠি খেয়েছিল, কিন্তু তাঁর শরীর মুবারকে কোনো পার্থক্য আসেনি। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০২)
(৩) মানুষ দুনিয়ায় এসেছে, আর হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ প্রেরিত হয়েছেন। সুতরাং আমরা নিজেদের জন্য যিম্মাদার, আর হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর জন্য পালনকর্তা যিম্মাদার। যেমন কোনো জায়গায় নিজে যাওয়া আর সরকারের দূত হয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য।
(৪) (কিয়ামতে) গলায় বেড়ি থাকা কাফিরের চিহ্ন হবে, আর গলা খালি থাকা মুমিনের পরিচয় হবে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫১৯)
(৫) অধিকাংশ ধনী ব্যক্তিরাই নবীদের বিরোধিতা করে এবং গরীবেরা তাদের অনুসরণ করে। এই নিয়ম কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে যে, সর্দার, ধনীরা গুনাহে অগ্রগামী থাকে, আর গরীবেরা নেকিতে এগিয়ে থাকে, اَلْإِمَامَةُ الله । (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫১৯)
🕌“সূরা ফাতির” থেকে প্রাপ্ত ৬টি সুন্দর বিষয়
(১) ‘শুকুর’ শয়তানের নাম। এর অর্থ হলো: প্রতারক, ধোঁকাবাজ। সুফীগণ বলেন: যে সম্পদ, সন্তান, শাসন, সম্মান রব থেকে বিদ্রোহী করে তোলে, সেটাই হলো শুকুর। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২০)
(২) সুফীগণ বলেন যে, আল্লাহ পাক আমাদের কারণে আমাদের শত্রু শয়তানকে আমাদের ঘর অর্থাৎ জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছেন, তাই আমাদেরও উচিত শয়তানকে আল্লাহর ঘর অর্থাৎ নিজেদের অন্তর থেকে বের করে দেওয়া। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২০)
(৩) পুরুষের জন্য মুক্তা ইত্যাদি পরা জায়িয, কিন্তু সোনা-রূপা পরা হারাম।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৪)
(৪) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর ঈমান সাক্ষ্যের মাধ্যমে পরিপূর্ণ। কারণ হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ সমস্ত অদৃশ্য জগতকে পর্যবেক্ষণ করেছেন, বিশেষ করে মিরাজে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৮)
(৫) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ আল্লাহ পাকের এমন মাহবুব যে, হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর অন্তরকে আল্লাহ পাক খুশি রাখেন এবং প্রশান্তি দেন। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০০)
(৬) পাহাড়ের মধ্যে কোথাও সাদা পাথরের রাস্তা আছে, কোথাও কালো পাথরের এবং কোথাও লাল পাথরের। এটাও আল্লাহ পাকের কুদরতের নমুনা। একইভাবে দুনিয়াতে শরীয়ত ও তরীকতের বিভিন্ন রতের রাস্তা আছে। হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী এবং কাদেরী, চিশতী, নকশবন্দী, সোহরাওয়ার্দী এগুলো আল্লাহ পাকের কাছে পৌঁছানোর বিভিন্ন পথ। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৪)
(৭) নিজের আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া উচিত নয়, বরং তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা এবং কবুল হওয়ার আশা রাখা উচিত।
(৮) কুরআনের খেদমত করা বড় নেয়ামত। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০০)
(৯) জান্নাতে কোনো ইবাদত থাকবে না, কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা এবং মুস্তফায়াত সেখানে থাকবে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৭)
(১০) গুনাহগার মুসলমানরা জাহান্নামে শাস্তি পাবে এবং তাদের শরীর কয়লা হবে যাবে। তারপর শাস্তির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর তাদেরকে জান্নাতের পাশে রেখে সেখানকার পানি দেওয়া হবে, যা দিয়ে তারা এমনভাবে গজিয়ে উঠবে যেমন শস্য পানি থেকে গজায়।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৭)
(১১) আল্লাহ পাক কাফিরদের জন্য হালীম (ধৈর্যশীল), মুমিনদের জন্য গফূর (ক্ষমশীল)। হালীম তিনি, যিনি দ্রুত শাস্তি দেন না; গফূর তিনি, যিনি মোটেই শাস্তি দেন না, ক্ষমা করে দেন।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৮ পৃষ্ঠা)
(১২) অহংকার ও গর্ব এমন একটি মন্দ রোগ যে, এর কারণে মানুষ নবীর অনুসরণ থেকে বঞ্চিত থাকে। নবীদের দরবারে বিনয় ও নম্রতা ইমানের মাধ্যম। মক্কার কাফিরদের কুফুরীর কারণ এটাই ছিল যে, তারা নিজেদেরকে নবীর চেয়ে বড় মনে করত। তারা বলত: আমরা ধনী এবং তারা (অর্থাৎ নবীগণ عَلَيْهِمُ السَّلَام) গরীব। অধিকাংশ কাফির নিজেদেরকে নবীর মতো মানুষ বলেছে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৮)
(১৩) কোনো নিদর্শনের প্রমাণ কেবল প্রসিদ্ধি দ্বারাও হয়ে যায়। এর জন্য চাক্ষুষ সাক্ষী বা আয়াত ও হাদিসের প্রয়োজন হয় না। কাফিরদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল যে, এই বস্তুটি অমুক কাফির জাতি। এই প্রমাণই কুরআনে করীম যথেষ্ট মনে করেছে। সুতরাং তাবাররুকাতের প্রমাণের জন্য আয়াত জরুরি নয়। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৩৪)
(১৪) সৃষ্টিকর্তার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষ, বাকি সৃষ্টি তার অনুগামী।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৮)
(১৫) মানুষের গুনাহের অশুভ প্রভাব অন্য সৃষ্টির উপরেও পড়ে। নদী ও বায়ুর প্রাণীরাও বিপদে পড়ে যায়। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫২৮)
🕌“সূরা ইয়াসীন” থেকে প্রাপ্ত ৩টি অসাধারণ বিষয়
(১) হাবীবুল্লাহ কিতাবুল্লাহ চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একারণে কুরআনের দর্শক বা পাঠককে ক্বারী বলা হয়, আর হুযূরের চেহারা মুবারক
(২) জান্নাত পাওয়ার বড় কারণ হলো আল্লাহর ভয় এবং হুযূর নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর ভালোবাসার সাথে তাঁর অনুসরণ করা। আল্লাহ পাক আমাদের নবী কককক। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০০)
(৩) নবীর সাহাবীদের অস্বীকার করা নবীকে অস্বীকার করার নামান্তর এবং নবীকে অস্বীকার করা রবকে অস্বীকার করার নামান্তর। আখিরাতীর লোকেরা ঈসা عَلَيْهِ السَّلَام এর সাহাবীদের অস্বীকার করেছিল এবং ধ্বংস হয়েছিল। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৪)
(৪) আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টিতে জোড়া রেখেছেন। মিষ্টি-তিক্ত, ঠাণ্ডা-গরম, ভালো-মন্দ ইত্যাদি সবই জোড়া। বেজোড় কেবল রবের সত্তা। কিছু গাছে নর ও মাদী হয়, যা চেনা যায়। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০২, সংক্ষেপ)
(৫) আল্লাহ পাক পুনরুত্থানের আগে প্রত্যেক মৃতের মূল উপাদানসমূহ সেখানেই জমা করে দিবেন, যেখানে সে দাফন হয়েছিল বা পোড়ানো হয়েছিল বা যেখানে তাকে সিংহ বা মাছ খেয়েছিল।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৬)
(৬) কিয়ামতে সর্বপ্রথম নবীদের নাথওয়ানী হবে, যা কবর থেকে উঠেই সবাই শুনবে। তারপর শাফি'য়াতী (অর্থাৎ শাফায়াতকারী প্রিয় ও শেষ নবী) صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর খোঁজ ও অন্বেষণ শুরু হবে। এ থেকে সেসব লোক শিক্ষা গ্রহণ করুক যারা আজ নাথওয়ানী বা বুযুর্গদের সাহায্যের অস্বীকার করে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৯)
(৭) জান্নাতে প্রাপ্ত হুররা দাসীর অবস্থান থেকে নয়, বরং স্ত্রীর মর্যাদায় থাকবে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৫)
(৮) কাফিরের জিহ্বা সেখানে (অর্থাৎ কিয়ামতে) মিথ্যা থেকে বিরত থাকবে না। বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সব সত্য বলে দিবে। তার জিহ্বা বড় অপরাধী। ঠোঁটে স্থায়ীভাবে মোহর লাগানো হবে না, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য নেওয়ার পর তা ভেঙে দেওয়া হবে। একারণে তারা জাহান্নামে পৌঁছে চিৎকার করবে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৪)
(৯) আরবে দুটি গাছ পাওয়া যায়: মারখ ও আ'ফার। মারখ হলো নর এবং আ'ফার হলো মাদী। যখন এদের সবুজ ডাল এক অপরের সাথে ঘষা হয়, তখন তা থেকে আগুন বের হয়, যদিও সেগুলোতে এত আর্দ্রতা থাকে যে পানি টপকায়। দেখুন রবের শান, পানি ও আগুন একই জায়গায় জমা করে দিয়েছেন। বাবলা গাছ ভেজা অবস্থায়ও জ্বলে, রেলের কয়লা ভিজে আরও ভালো জ্বলে। একইভাবে রব মনুষ্যত্বের সবুজ বুকে মহব্বত ও ইশকের আগুন আমানত রেখেছেন।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৯)
🕌“সূরা সফফাত” থেকে প্রাপ্ত ১৫টি সুন্দর কথা
(১) অপরাগ অবস্থায় কুফরী শব্দ মুখে আনার অনুমতি আছে, অন্তর থেকে কাফির হয়ে যাওয়ার নয়। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৬)
(২) জান্নাতে খাদ্য দেওয়া হবে না, ফল প্রদান করা হবে। খাদ্য ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাওয়া হয় আর ফল কেবল স্বাদ এর জন্য। সেখানে ক্ষুধা থাকবে না, তাই গম ইত্যাদি নয়, আঙুর ইত্যাদি থাকবে।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৬)
(৩) জান্নাতী লোকেরা গোল হয়ে বসবে। দুনিয়াতে যিকিরের মজলিস যেন জান্নাতীদের মজলিস। কিন্তু নামাযে কাতার বানিয়ে পড়ো, যাতে ফেরেশতাদের সারির মতো হয়ে যাও। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৮)
(৪) জান্নাতে মেহমানদের মতো আপ্যায়ন করা হবে, কিন্তু জান্নাতী লোকেরা নিজেদের জিনিসের মালিক হবে। তাদেরকে মেহমান বলা আপ্যায়নের দিক থেকে, মালিকানার দিক থেকে নয়।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৯)
(৫) নূহ عَلَيْهِ السَّلَام এর উপাধি আদম-ই-সানী। সারা বিশ্বে তাঁর তিন পুত্র সাম, হাম ও ইয়াফেসের বংশধর রয়েছে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৬)
(৬) মৃত্যুর পর দুনিয়ায় সৎকর্মের সুনাম থাকা আল্লাহর রহমত। মানুষ নিজের সুনাম বাকি রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করে। মসজিদ, কূপ, পুল, মুসাফিরখানা ইত্যাদি একারণেই মানুষ তৈরি করে। বই লেখা হয়, সুতরাং আল্লাহ পাক এই অধমের দ্বীনি রচনাগুলো কবুল করুক এবং এটিকে আখিরাতের পাথেয় বানিয়ে দিক।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৬)
(৭) হযরত ইবরাহীম عَلَيْهِ السَّلَام নূহ عَلَيْهِ السَّলَام এর দুই হাজার ছয়শত চল্লিশ বছর পরে এসেছিলেন এবং এত দীর্ঘ সময়ে মাত্র দুজন রাসূল এসেছিলেন, হযরত হুদ ও সালিহ عَلَيْهِمَا السَّلَام ।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪০)
(৮) জ্যোতিষশাস্ত্র সত্য। এর মাধ্যমে নামায-রোযার সময়সূচির পুঞ্জিকা তৈরি করা সঠিক, কিন্তু গায়েবী খবর নেওয়া হারাম।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪০)
(৯) বলা নবীদের সুন্নাত। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪০)
(১০) নেক কাজের দৃঢ় সংকল্প করাও নেকী। কারণ হযরত ইবরাহীম عَلَيْهِ السَّلَام এর যবেহ করার প্রস্তুতিকে যবেহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪১)
(১১) হযরত জিবরীল عَلَيْهِ السَّلَام দু'ম্বা নিয়ে আসার সময় বলেছিলেন: اَللّٰهُ اَكْبَرُ । হযরত ইবরাহীম عَلَيْهِ السَّلَام দু'ম্বা দেখে বললেন: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ । হযরত ইসমাইল عَلَيْهِ السَّلَام হাত খোলার পর এবং পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর বললেন: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ । এই সবের সমষ্টিই আজ তাকবীরীতে তাসরীক। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪১)
(১২) হযরত ঈসা عَلَيْهِ السَّلَام পর্যন্ত সমস্ত নবী হযরত ইসহাক عَلَيْهِ السََّام এর বংশে এসেছিলেন এবং কেবল আমাদের প্রিয় নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ হযরত ইসমাইল عَلَيْهِ السَّلَام এর বংশে এসেছেন। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪১)
(১৩) হযরত খিজির সমুদ্রে এবং হযরত ইলিয়াস স্থলে ব্যবস্থাপক। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ওফাত লাভ করবেন। কিছু বুযুর্গের সাথে তাদের সাক্ষাতও হয়েছে। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪২)
(১৪) কিছু আশিক বলেন যে, লাউ খুব বরকতময় সবজি। হযরত ইউনুস عَلَيْهِ السَّلَام এর নিচে আরাম করেছিলেন। আমাদের প্রিয় নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর লাউ খুব পছন্দ ছিল। সাহাবায়ে কিরামও এটি পছন্দ করতেন। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪০)
(১৫) হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর দৃষ্টি থেকে কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব গোপন নয়। হুযূর صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ এর স্বচক্ষে কবরেরা আযাবও দেখেছিলেন, যাঁর কারণে সে চমকে গিয়েছিল। যেমন হাদিস শরীফে আছে:
হযরত যায়েদ বিন সাবিত রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, হুযূর নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ বনু নাজ্জারের বাগানে নিজের খচ্চরে আরোহিত ছিলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম। হঠাৎ খচ্চরটি চমকে উঠল, প্রায় তিনি পিঠ থেকে নিচে নেমে এসেছিলেন। দেখা গেল সেখানে চার, পাঁচ বা ছয়টি কবর ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই কবরবাসীদের কে চেনে? এক ব্যক্তি বলল: আমি চিনি। ইরশাদ করলেন: এরা কখন মারা গেছে? সে বলল: এরা শিরকের অবস্থায় মারা গেছে। ইরশাদ করলেন: নিশ্চয়ই এই উম্মতকে তাদের কবর পরীক্ষা হবে। যদি এই ভয় না থাকত যে, তোমরা মৃতদের দাফন করা ছেড়ে দিবে, তবে আমি আল্লাহর পাকের কাছে দু'আ করতাম যে, এই কবরের আযাব যা আমি শুনছি, তা যেন তোমাদেরও শোনায়।
(মুসলিম, পৃষ্ঠা ২১৭৫, হাদিস: ২৮৬৭) (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৪, পরিবর্তিত)
(১৬) যে ব্যক্তি ‘সুবহান’ বা তাসবীহ (অর্থাৎ سُبْحَانَ اللّٰهِ ইত্যাদি) এর ওযীফা করবে, إِنْ شَاءَ اللّٰهُ তার দোষত্রুটি দূর হয়ে যাবে এবং উত্তম চরিত্র নসীব হবে। কারণ আল্লাহর পাকের নামের প্রভাব ও ওযীফা পাঠকারীর উপর হয়, যেমন ‘শাফী’ নামের ওযীফা শিফা এবং ‘গফূর’ নামের ওযীফা মাগফিরাত নসীব হয়।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৪)
(১৭) নিজের ওয়াজ ও কালাম আল্লাহর হামদ দিয়ে শেষ করা উচিত।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৪)
🕌“সূরা সা'দ” থেকে প্রাপ্ত ০৯টি খুব সুন্দর বিষয়
(১) অতিরিক্ত আরাম ও বাধ্যবাধতা বান্দাকে অবাধ্য করে দেয়।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪২)
(২) নবীর শাসন নির্বোধ এবং নির্জীব বস্তুর উপরেও চলে।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৬)
(৩) শাসকের উচিত বিচারের সময় সৃষ্টির ভালোবাসা থেকে অন্তর খালি করা, কেবল রবকে রাজি করার জন্য বিচার করা।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৭)
(৪) দাউদ عَلَيْهِ السَّلَام এর বয়স হয়েছিল একুশ বছর। তাঁর ওফাত হঠাৎ হয়েছিল। ওফাতের সময় তিনি সিজদায় ছিলেন।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৭)
(৫) হঠাৎ মৃত্যু মকবুল বান্দাদের জন্য রহমত, কারণ তারা সর্বদা প্রভুত্বে থাকেন। গায়েলদের জন্য তা আযাব, কারণ তারা আখিরাতের প্রবীতে নয়। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৮)
(৬) নবীগণ عَلَيْهِمُ السَّلَام মুস্তাহাব কাজ ভুলে যাওয়ার পরেও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫০৮)
(৭) কোনো নবীর উপর যাকা’ত ফরয হয়নি। হযরত ঈসা عَلَيْهِ السَّلَام এর বাণী: (وَأَوْصَانِي بِالصَّلٰوةِ وَالزَّكٰوةِ) (কানযুল ঈমানের অনুবাদ: এবং আমাকে নামায ও যাকাতের তাগিদ দিয়েছেন যতক্ষণ আমি জীবিত থাকি)। এখানে যাকাত বলতে আত্মার পবিত্রতা বোঝানো হয়েছে।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৮)
(৮) কিছু খাদ্যে অসুস্থ করার ক্ষমতা আছে। আল্লাহ পাকের মকবুল বান্দাদের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাও আরোগ্য দেওয়ারও শক্তি আছে। হযরত ঈসা عَلَيْهِ السَّلَام বলেছিলেন যে, আমি অন্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দিই (আমার) রবের হুকুমে। তাদের শক্তি আগুনের তৈরি সৃষ্টি (অর্থাৎ জ্বীন) এর শক্তির চেয়েও বেশি। (তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৮)
(৯) দুনিয়ার স্ত্রীরা হুরদের চেয়ে বেশি সুন্দরী হবে এবং সবাই ত্রিশ বছর বয়সী হবে, সর্বদা এই বয়সীই থাকবে।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান, ৫৪৯)