ইসলামিক বিশ্বকোষ, সুন্নি বিশ্বকোষ, ইসলামী বিশ্বকোষ,ইসলামি বিশ্বকোষ, Islami bissokos, Sunni encyclopedia
ইসলামিক বিশ্বকোষ
🌍 ইসলামিক বিশ্বকোষ Apps Download [2.5 MB]
🌍 ইসলামিক বিশ্বকোষ এপ্স ডাউনলোড [2.5 MB]

আল-কুরআনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মত কোন নাস্তিক আছে কি?

♦আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “আমি আমার বন্দার প্রতি যাহা অবতীর্ন করেছি, তাহাতে তোমাদের বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ থাকলে, তোমরা ইহার অনুরুপ কোন সূরা আনয়ন কর। এবং তোমরা যদি সত্যবাদি হও তাহলে আল্লাহ ব্যাতিত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে নিয়ে আস। যদি আনয়ন না কর তবে সেই আগুনকে ভয় কর কাফিরদের জন্য যাহা প্রস্তুত করিয়া রাখা হয়েছে। (সূরা বাকারা:২৩, ২৪)।


কোরআন নাজিলের সময় বৈজ্ঞানিক পরিস্থিতি: সপ্তম শতাব্দিতে কোরআন নাযিল হয়। মানুষ তখন পযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কুসংস্কার ও প্রাচীন উপকথায় বিশ্বাসী ছিল। তখন মানুষ মহাবিশ্ব, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, মানুষের সৃষ্টি, বায়ুমন্ডলের গঠন এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিক কিছুই জানতো না।

এই যেমন – সে সময় তারা বিশ্বাস করত যে,

পৃথিবী সমতল। গোলাকার নয়।
পাহাড় আকাশকে ধরে রাখে। অর্থাৎ পাহাড় হল আকাশের খুটি বা স্তম্ভ।
পৃথিবীর দুই প্রান্তে বিশাল বিশাল পাহাড় আছে।
মানুষের শুক্রানুর ভিতরে ছোট্ট একটা মানুষ থাকে। ওটাই মায়ের পেটে বড় হয়।
বাচ্চার লিঙের জন্য মা দায়ি।
গাছের লিঙ্গ নেই।
কর্মি মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি।
ব্যাথা লাগে মস্তিস্কে। ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এরকম এক সময়, যখন মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের বহর ছিল ঠিক উপরের অবস্থা সেই সময়েই নাযিল হয়েছিল আল-কোরআন। যাতে শুধু বিজ্ঞানের সাথে রিলেটেড আয়াতের সংখ্যাই আছে হাজারের বেশি। অথচ সেই কোরআনেরই ১ টি আয়াতও পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। বরং বিজ্ঞানেরই কিছু ভুল ধারণা পরবর্তিতে সংশোধন করলে দেখা গেছে, তা কোরআনের সাথে মিলে গেছে। এরকমই কয়েকটি উদাহরণ দিয়েই বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করা যাক।

(১) :- আকাশের খুটি: সেই সময়ে নাযিল হওয়া কোরআনে লেখা হল- আকাশের কোন দৃশ্যমান খুটি নেই। আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলিকে উচুতে স্থাপন করেছেন কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ ছাড়া, যা তোমরা বুঝতে পারবে। (সূরা রাদ:২)। আর আমাদের বিজ্ঞান আজ জানিয়েছে আকাশমন্ডলির কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ নেই। এর আছে একটি অদৃশ্য স্তম্ভ-মধ্যাকর্ষন শক্তি! আর কোরআনও বলে দিচ্ছে একই কথা।

(২) :- মহাবিশ্বের আদি অবস্থা: আজকের বিজ্ঞান বলছে মহাবিশ্ব গ্যালাক্সিগুলো তৈরী হওয়ার পূর্বে সব পদার্থগুলো গ্যাসিয় অবস্থায় একত্রে ছিলো। চলুন দেখি দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এ বিষয়ে কি বলে- পৃথিবী সৃষ্টি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে – “অত:পর তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুমৃকুঞ্জ, অত:পর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বল্য স্বেচ্ছায় আসলাম।” (সূরা হামিম আস সিজদাহ : ১১)। কিভাবে এই আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা কোরআনে এলো! ?

(৩):- মহাবিশ্বের প্রসারনশীলতা: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “আমি আকাশ নির্মান করিয়াছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী” (সূরা জারিয়াত : ৪৭) মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এটা এই কিছুদিন আগে প্রমাতি হয়েছে। বিজ্ঞানী আরভিন সর্বপ্রথম আলোর লোহিত অপসারন পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রমাণ করেন এ বিশ্বজগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, গ্যালাক্সিগুলো একটার থেকে আরেকটা দূরে সরে যাচ্ছে। মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে কি শক্তিশালী কোন টেলিস্কোপ ছিলো, যা দিয়ে উনি গ্যালাক্সিগুলোর সরে যাওয়া দেখেছিলেন ?

(৪):- বিগ ব্যাং থিওরি: “সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অত:পর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম” (আম্বিয়া:৩০)।আয়াতটি আমাদেরকে একেবারে পরিস্কারভাবে বলছে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রেরা একসময় একজায়গায় পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে এদের জন্ম হয়। আরআজকের বিজ্ঞান কি বলে এ সম্বন্ধে ? ষ্টিফেন হকিং এর বিগ ব্যাং থিওরী আজ সর্বময় স্বীকৃত। এ থিওরী অনুযায়ী মহাবিশ্বের সকল দৃশ্য অদৃশ্য গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টির শুরুতে একটি বিন্দুতে পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা বিশাল বিষ্ফোরণের মাধ্যমে এরা চারিদেকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিভাবে মরুভুমির বুকে সংকলিত দেড় হাজার বছর আগের একটি বই এ এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা ধারণ করতে পারল ? ড:মিলার বলেছেন, এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন যে ঐশী গ্রন্থ তা মেনে নিতে বাধ্য হই। যারা প্রচার চালাচ্ছে কোরআন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নিজস্ব বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট। ড:মিলার বলেছেন, দেড় হাজার বছর আগে ইসলামের নবীর পক্ষে কিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে কথা বলা সম্ভব, যিনি কোন দিন কোন স্কুলে পড়ালেখা করেন নি। কারণ এটি এমন এক বৈজ্ঞানিক বিষয়, যা সম্পর্কে তত্ত্ব আবিষ্কার করে মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন এক বিজ্ঞানী। মিলারের মতে এই আয়াতে সেই বিগ ব্যাং এর কথাই বলা হয়েছে যার মাধ্যমে পৃথিবী, আকাশমন্ডলী ও তারকারাজি সৃষ্টি হয়েছে। এই বিগ ব্যাং থিওরীর একটা অনুসিদ্ধান্ত হল “অনবরত দূরে সরে যাওয়া গ্রহ নক্ষত্রগুলো একসময় আবার কাছাকাছি আসা শুরু করবে কেন্দ্রবিমুখী বল শুন্য হয়ে যাওয়ার ফলে এবং সময়ের ব্যাবধানে সব গ্রহ নক্ষত্র আবার একত্রে মিলিত হয়ে একটা পিন্ডে পরিনত হবে”। আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “সেই দিন আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর” (সূরা আম্বিয়া : ১০৪) কি কিছু বুঝা গেল ? এই হল কোরআন———–!


(৫) :- কে স্থির আর কে গতিশীল: টলেমী বিশ্বাস করতেন থিওরী অফ জিওছেনট্রিজম এ। আর মতবাদটি হল- পৃথিবী একদম স্থির, আর সূর্য সহ সব গ্রহ নক্ষত্রগুলো ঘুরছে পৃথিবীর চারিদেকে। এ মতবাদটি ষোরস শতাব্দি পর্যন্ত বিজ্ঞান হিসেবে টিকে ছিলো। এরপর কোপার্নিকাস এসে প্রমাণ করলেন, পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যের চারিদেকে প্রদক্ষিণ করছে। মাত্র ২৫ বছর আগেও বিজ্ঞান মানুষকে জানাচ্ছিল সূর্য স্থির থাকে, এটি তার নিজ অক্ষের চারপাসে প্রদক্ষিন করে না। কিন্তু আজ এটা প্রমানীত যে পৃথিবী ও সূর্য দুটোই গতিশীল। আর এদের দুজনের রয়েছে আলাদা কক্ষপথ। চলুন দেথি দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এই ব্যাপারে কি বলে! আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “তিনিই একজন যিনি দিন ও রাত সৃষ্টি করেছেন, সুর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমন করছে। (সূরা আম্বিয়া:৩৩)। এমনকি আরো বলেন “এবং সূর্য তার নিজস্ব পথে চলছে যা সর্ব শক্তিমানেরই আয়ত্বে। তিনিই সব জানেন।” (সূরা ইয়াসিন:৩৮)। এই কিছুদিন আগে প্রমাণিত হয়েছে যে, সূর্যও স্থির নয় বরং গতিশীল এবং ২০ লক্ষ বছরে একবার ওর নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তন করে। আর এর গতি ৭২০০০০ কিমি/ঘন্টা। “আকাশ, যা পথ ও কক্ষপথ দ্বারা পরিপূর্ণ”(সূরা জারিয়াত:৭) এটা প্রমাণ করে যে, মহাবিশ্বের অন্য তারকারাজিও স্থির নয় বরং গতিশীল। যার সাথে আধুনিক বিজ্ঞান একাত্বতা ঘোষণা করেছে।


(৬):-  ব্লাক হোলস: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “আমি শপথ করছি সেই জায়গার যেখানে তারকারাজি পতিত হয়। নিশ্চই এটা একটা মহাসত্য, যদি তোমরা তা জানতে।” (সূরা ওয়াক্বিয়া : ৭৫, ৭৬) ৭৫ নং আয়াতটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, মহাবিশ্বে এমন জায়গা আছে, যেখানে তারকা পতিত হয়। ঠিক পরের আয়াতেই এটাকে, মহাসত্য বলে দাবি করা হয়েছে। মহাকাশে এরকম স্থান আছে, এটা মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কার করা হয়েছে। এই জায়গাগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ব্লাক হোলস। এগুলোতে শুধু নক্ষত্র নয়, যে কোন কিছুই এর কাছাকাছি এলে, এখানে পতিত হতে বাধ্য।


(৭) :- নিরাপত্তার ছাদ: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন“আমরা আকাশে একটি সংরক্ষিত ও নিরাপত্তার ছাদ বানিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া : ৩২)। আয়াতটি বলছে আকাশে এমন কিছু আছে যা পৃথিবীকে নিরাপত্তা দেয়।
বায়ুমন্ডলের একেবারে উপরিভাগে ভ্যান-এলেন-বেল্ট নামের একটি অতিরিক্ত স্তর রয়েছে। এই স্তরটি প্রায় ৬০,০০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এই স্তর শুধুমাত্র সেই সমস্ত রশ্মিই পৃথিবীতে আসতে দেয় যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটা সত্যি বিষ্ময়কর যে শুধু রেডিও ওয়েভ বা আল্ট্রা ভায়োলেট রে এর মত ক্ষতিকর রশ্মিগুলোই পৃথিবীতে আসতে পারে না। যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। একইসাথে এই স্তর সূর্যের ক্ষতিকর কসমিক রে কে পৃথিবীকে আসতে বাধা দেয়। অতিরিক্ত কম ঘনত্বের কারণে, এই স্তরটি আয়োনিত বা প্লাজমা অবস্থায় আছে। এই প্লাজমা মেঘ প্রায় ১০০ বিলিয়ন আনবিক বোমার (হিরোসিমায় মাত্র ১ টা ফেলা হয়েছিল) সমান পরিমান ক্ষতিকর শক্তি বিশিষ্ট রশ্মিকে আটকিয়ে দিতে পারে!
আবার এই স্তর পৃথিবীকে মহাকাশের অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে, যা মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (স কি করে জানলেন, পৃথিবীর উপরের এই সংরক্ষিত আর নিরাপত্তার ছাদের কথা ? তার এই তথ্যের উৎস কোথায় ?



(৮):- আকাশের চক্রশীলতা বা পর্যায়বৃত্ততা: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “শপথ চক্রশীল আকাশের এবং বিদারণশীল পৃথিবীর”। (সূরা তারিক:১১-১২) আমাদের বায়ুমন্ডল সাতটি স্তরে বিভক্ত। পত্যেকটি স্তর কিছু ভিন্ন চক্র সম্পূর্ণ করতে কাজ করে। এই যেমন-
ট্রপোস্ফিয়ার: তের থেকে পনের কিলোমিটার উর্দ্ধে অবস্তিত। বায়ু থেকে জলীয় বাস্পকে ঠান্ডা করে বৃষ্টির ফোটা তৈরী করে। এভাবে পানিকে আবার পৃথিবীতে পাঠাতে সাহায্য করে। এভাবে পানি চক্র পূর্ণতা পায়। এই স্তর না থাকলে পৃথিবী সম্পূর্ণ শুস্ক ও অন্ধকার থাকতো।
ওযোন স্তর: ২৫ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি ও রেডিও রশ্মি থেকে পৃথিবীকে বাচতে সাহায্য করে। এই রশ্মিগুলোকে পুনরায় মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়।
আয়নোস্ফিয়ার: পৃথিবী হতে পাঠানো বিভিন্ন রেডিও ওয়েভ আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠাতে সাহায্য করে। যা দ্বারা রেডিও ও টেলিভিশন সিস্টেম কাজ করছে। …………………………………………বাকীগুলো আর লিখলাম না।


(৯):- সাত আসমান: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন, যা কিছু যমিনে রয়েচে সেই সমস্ত, অতপর তিনি মনোযোগ দিয়েচেন আকাশের প্রতি। বস্তুত তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত”। (সূরা বাকারাহ:২৯) আমাদের মাথার উপরের আকাশ অর্থাৎ বায়ুমন্ডল সাতটি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। এটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এই কিছুদিন আগে বিংশ শতাব্দির আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা ইহা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানীত হয়েছে। কোরআনে দেড় হাজার বাছর আগে এই সাতটি স্তরের কথাই এভাবে বলেছে!খুবই বিষ্ময়কর।
এই সাতটি স্তরের নামগুলো এরকম-

1. ট্রাপোস্ফিয়ার,
2. স্ট্রাটোস্ফিয়ার,
3. ওযনোস্ফিয়ার,
4. মেসোস্ফিয়ার,
5. থার্মোস্ফিয়ার,
6. আয়নোস্ফিয়ার,
7. এক্সোস্ফিযার।


(১০):-  ভূমির সাতটি স্তর: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং পৃথিবী সেই একই পরিমানে”। (সূরা তারেক:১২) আয়াতটি আমাদের কি বলছে ? আয়াতটি আমাদের বলছে শুধু আসমানই নয় বরং পৃথিবীরও সাতটি স্তর রয়েছে। মোহাম্মদ (স তখনকার দিনে কিভাবে একথা বলতে পারেন! যখন মানুষ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ণয় করাই শেখেনি ? আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে এর উপরিভাগ পর্যন্ত সাতটি স্তর রয়েছে। গঠনগত এবং কার্যগত দিক থেকে একটার সাথে আরেকটার কোন মিলই নেই। এগুলো হল –
1. Crust,
2. Lithosphere,
3. Upper mantle,
4. Asrenosphere,
5. Lower mantle,
6. Outer core,
7. Inner core.
Source: (Robart Gardner, Samuel F, Allyn and Bacon, Newton, Howe: General science-1885 Page-319-322)


(১১):- চাদের আলো কার আলো?: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “আল্লাহ তায়ালাই এই সূর্যকে করিয়াছেন তেজস্কর আর চন্দ্রকে করিয়াছেন পিতিবিম্বিত আলো”। (সূরা ইউনুস:৫) এবং “কত কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করিয়াছেন রাসিচক্র এবং উহাতে স্থাপন করিয়াছেন প্রদীপ এবং চাদ-যাহার রহিয়াছে ধার কার আলো”। (সূলা ফুরকান:৬১) চাদের আলো যে প্রতিবিম্বিত আলো অন্য কথায় ধার করা আলো একথাটা দেড় হাজার বছর আগের একটা বইয়ে আসাটা খুবই স্বাভাবিক, যদি সে বইটা হয় এমন এক মহাসত্বার কাছ থেকে যিনি সাময়িক জাগতীক ধ্যান-ধারণার অনেক উর্ধে। সুবহানাল্লাহ। যেখানে আজকের বিজ্ঞান সুস্পষ্ট কোরআনের সাথে পুরপুরি একমত।



(১২):- থিওরী অফ রিলেটিভিটি: রিলেটিভিটি থিওরী মতে আমাদের দৃশ্যমান সময়ের পরিমান, আমাদের নিজেদের আপেক্ষিক বেগের উপর নির্ভর করে। সহজ কথায় সময়ের পরিমাণ বেগের সাথে পরিবর্তনশীল। আইনস্টাইনের আগে কোন বিজ্ঞানী আমাদেরকে এই বিষয়ে ধারণা দিতে পারেন নি। মানুষ তখন সময়কে একটা ধ্রুব রাসি হিসেবে বিবেচনা করতো। আথচ দেড় হাজার বছর আগের কোরআনে আছে আমরা যে সময়কে বাস্তবে বিবেচনা করতে পারি, সেই সময়ই অন্য একটি ক্ষেত্রে সময়ের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “ফেরেশতারা আর রুহেরা আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হয়, এমন একদিনে যাহার পরিমান একহাজার বছরের সমান।” (সূরা মায়ারিজ:৪) এবং আরো বলেছেন “তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কার্য পরিচালনা করেন, অত:পর তা তার কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যাহার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান”। (সূরা সেজদাহ:৫) সময়ের পরিমান ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন হয়, এই কথাটা থিওরী অফ রিলেটিভিটি যতটা পরিস্কারভাবে বলেছে, তার থেকেও বেশি পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে এই আয়াতদুটিতে। ভুলে গেলে চলবেনা, থিওরীটি আবিষ্কার হয়েছে মাত্র এক শতাব্দি আগে!


(১৩):- পর্বতের গঠন ও কাজ: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “আমি কি করিনি ভূমিকে বিস্তৃত এবং পর্বতমালাকে পেরেকের মত করে” (সূরা নাবা:৬,৭)। আয়াতটি বলছে পর্বতমালাকে পেরেকের মত করে তৈরী করা হয়েছে। পেরেকের কাজ হলো দুই বা ততোধিক কাষ্ঠখন্ডকে এমনভাবে জোরা লাগানো, যাতে সংযুক্ত বস্তুটিকে নাড়াচড়া করলেও খুলে না যায়। আমরা যে বিস্তির্ণ ভূমির উপর বিচরণ করি, তা মূলত একধরনের পাতলা প্লেট। এদেরকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। পৃথিবীর ঘুর্ণনের ফলে এই প্লেটগুলো সদা নড়াচড়া করে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিয়েছে, দুই বা ততোধিক প্লেট যখন একটির উপর আরেকটি চলমান হয়, অথবা ধাক্কা খায়, তখন এদের মিলনস্থলে পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। এই পাহাড় ভূমির উপরে যতদূর উপরে উঠে, পরের অংশে অনেকগুন পরিমানে ভূমির নিচে দেবে যায়। অনেকটা ভাজ সৃষ্টির মত। এর ফলে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়া কমে যায়। অর্থাৎ এই প্লেটগুলোর সংযোগ স্থলে পাহাড় বা পর্বত অনেকটা পেরেকের মত কাজ করে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ একটা ভীষণ উত্তপ্ত গলিত তরল পদার্থে পূর্ণ। পেরেকের আকৃতির এই পাহাড়গুলো না থাকলে, পৃথিবীর ঘুর্ননের কারনে, হয়তো কোন একদিকের প্লেট সরে গিয়ে ঐ অঞ্চলের গলিত তরলকে বাইরে বের হয়ে আসার সুজোগ করে দিতো। ফলে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটতো।

যেমন এভারেষ্ট পর্বতমালার সবচেয়ে উচু মাথা ভূমির প্রায় ৯ মাইল উপরে উঠেছে। ঠিক একই জায়গায় এর ভিত্তিমূল মাটির নীচে পৌছে গেছে ১২৫ কিমি পর্যন্ত। শুধু যদি এই অংশটিকে আমরা বিবেচনা করি, তাহলে একে দেখতে মনে হবে-দৈত্যাকার এক পেরেকের মত! আর কোরআন চমৎকার ভাবে বলে দিয়েছে একথাটাই দেড় হাজার বছর আগে। আচ্ছা মুহাম্মদ (স কি সমস্ত পৃথিবী ঘুরে পর্বতগুলোর নিচে কি রকম তা দেখেছিলেন?


(১৪):- পর্বতমালার অবস্থান: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর (আসলে সেগুলো সচল), অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত সচল হবে। এটা আল্লাহর কারিগরি যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংগত। তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা অবগত।” (সূরা নামল:৮৮)। ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সোসাইটি (ওয়াশিংটন ডিসি) প্রমাণ করে যে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে পাহাড়গুলোও সম্পূর্ণ স্থির নয় বরং প্রতি বছর ২-৫ সেন্টিমিটার করে সরে যাচ্ছে। যদিও এদের কার্যক্রম পেরেকের মতই। আর আমরা পাহাড়কে স্থির মনে করে যে একটা ভুলের মধ্যে আছি. একথাটাই কোরআন বলেছে কাব্যিকভাবে।


(১৫):- লোহার রহস্য: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেনআমি লৌহ নাযিল করেছি, যার মাঝে অনেক শক্তি রয়েছে এবং যা মানবজাতির অনেক ব্যবহারে আসবে।” (সূরা হাদীদ:২৫) বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে, আমাদের সৌরজগতের কোন গঠন প্রনালী নেই যা লোহার উৎপত্তি ঘটাতে পারে। লোহা কেবলমাত্র সূর্যের চেয়ে বড় কোন নক্ষত্রেই তৈরী হতে পারে যেখানে তাপমাত্রা কোটি ডিগ্রির কাছাকাছি। এ রকম কোন গলিত নক্ষত্রের বিস্ফোরনের মাধ্যমেই লোহার উৎপত্তি সম্ভব। আর এই ধরনের বিস্ফোরনের মাধ্যমে সৃষ্ট লোহার টুকরাগুলো পরবর্তিতে পৃথিবীতে পরার ফলেই লোহা অস্তিত্বলাভ করেছে।অর্থাৎ লোহা যে আকাশ থেকে এসেছে এটা বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে।আরেকটি বিষয় লক্ষনীয়, সুরা হাদিদ (হাদীদ অর্থ লোহা) কোরআনের ৫৭ নং সূরা। আজব ব্যাপারটা হলো ‘আলহাদিদ’ এর সংখ্যাগত অর্থও ৫৭, অর্থাৎ আরবীতে এই শব্দের মান হল ৫৭। শুধু ‘হাদিদ’ এর সংখ্যাগত অর্থ হল ২৬, যা লোহার এটমিক নাম্বার (২৬) এর সাথে মিলে যাচ্ছে। আর সূরাটির ১ থেকে ২৫ নং আয়াত (২৫ নং আয়াতে লোহার গুন সম্বন্ধে বলা হয়েছে) পর্যন্ত হাদিদ শব্দটি এসেছে ২৬ বার। (হা=৮, দাল=৪, ইয়া=১০, দাল=৪)।


(১৬):- পেট্রোলিয়ামের সৃষ্টি: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “তিনি তৃনাদি বের করে এনেছেন, অত:পর তিনিই তাদের পরিনত করেন কাল বন্যার পানির মত” (সুরা আলা:৪,৫)। গাছ-গাছরা, ফার্ন, শ্যাওলা এসব অরগ্যানিক পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে একটা দীর্ঘ পদ্ধতির মাধ্যামে শেসে পেট্রোলিয়াম (খনিজ তেল) এর রূপ নেয়। খনিতে পদার্থটি অনেকটা বন্যার পানির মত গার থাকে, একই সাথে এটির রং থাকে কালোবর্ণের। যদিও মানুষ পেট্রোলিয়ামের ব্যাবহার শিখেছে অনেক আগে, কিন্তু তারা জানতো না কি থেকে এই পদার্থটি পৃথিবীতে তৈরী হয়েছিল। কোরআন উক্ত আয়াতে একটি তরলের কথা বুঝিয়েছে, যা পেট্রোলিয়ামের বৈশিষ্টের সাথে মিলে যায়। এভাবে-
এটি তৈরী হয় তৃনাদি থেকে। অর্থাৎ অরগ্যানিক ম্যাটারিয়াল থেকে।
এটির রং কাল হবে, আর এটি বন্যার পানির মত তরল হবে।

কোরআন হাজার বছর আগে বলে দিয়েছে পেট্রোলিয়াম তৈরী হয়েছে গাছ-গাছড়া থেকে। আজকের বিজ্ঞানে যাহা সত্য বলে প্রমানিত।


(১৭):- বাতাশ ও বৃষ্টির সম্পর্ক: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ুকে চালিত করে আকাশের কছে নিয়ে যাই, অত:পর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদের তা পান করাই। বস্তুত তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই” (সূরা হিজর:২২) বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকেও মানুষের ধারনা ছিল যে, বৃষ্টির সাথে বাতাসের সম্পর্ক হল, বাতাস মেঘকে চালিত করে দূরে নিয়ে যায়, ফলে বৃষ্টি সমভাবে হয়। বাতাসের মাধ্যমেই যে জলিয়বাস্প উপরে উঠে মেঘের সৃষ্টি করে, এ সম্পর্কে মানুষ জানত না। বৃষ্টিভর্গ বায়ু বলতে জলিয়বাস্পপূর্ণ বায়ু বুঝানো হয়েছে। “বাতাস জলিয়বাস্পকে আকাশে উড়িয়ে নেয়, অত:পর মেঘ সৃষ্টি হয়” একথা এই আয়াতে। বাতাসের ভুমিকা না থাকলে সূর্য যতই তাপ দিক না কেনো জলিয়বাস্প কখনোই আকাশে পৌছতেই পারতো না, মেঘ হওয়া তো দূরের কথা।


(১৮):- পরিমানমত বৃষ্টি: তিনি সেই আল্লাহ্‌ “যিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী পানি পৃথিবীতে বর্ষণ করেছেন। যা একটি মৃত জমিকেও জীবিত করতে পারে, ঠিক সেভাবে যেভাবে একদিন তোমরা জীবিত হবে” (সূরা যুখরুফ: ১১) প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬ কোটি পানি বাতাসের সাথে মিশে। যা বছরে পাচ হাজার তেরশ কোটি টন। এই পানির পুরোটাই আবার প্রতি বছর মাটিতে ফিরে আসে। যদি এই ফিরে আসাটা পরিমিত না হত তাহলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যেতো। যেমন পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশী হয়। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখার জন্য যা খুবি জরুরী। গবেষনায় দেখা গেছে যদি ঠিক এই পরিমাণ পানি বাতাশে না মিশে কিছু কম মিশতো, তাহলে মেরু অঞ্চলের জীববৈচিত্র নষ্ট হয়ে যেত। কারন মেরু অঞ্জলে বরফ স্তরের গভীরতা বেড়ে যেতো। যা গোটা পৃথিবীর জীববৈচিত্র রক্ষার সাথে সম্পর্কিত।


(১৯):- সমুদ্রের পানির রহস্য: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “তিনি পাশাপশি দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, উভয়ের মাঝে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না।”(সূরা আর-রহমান:১৯-২০) সমুদ্রের এই বৈশিষ্ট্য অতি সম্প্রতীককালে আবিষ্কৃত হয়েছে। সমুদ্রের সারফেস টেনসন এবং ঘনত্বের পার্থক্যের জন্য এক সমুদ্রের পানি অপরটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলেও মিশে যায় না। যেমন গালফ অফ মেক্সিকোতে এর হাজার হাজার মাইলব্যাপি লোনা আর মিষ্টি পানির সাগর পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও একটির পানি আরেকটির সাথে মিশে যায় না। কোরআন নাযিলের সময় মানুষের মাঝে পদার্থবিজ্ঞানের কোন জ্ঞান ছিল না আর মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন মরুভুমির মানুষ।


(২০):- সমুদ্র বিজ্ঞান: সূরা নূরের ৩৯ ও ৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে: “যারা কাফের তাদের কাজ মরুভুমির মরীচিকার মতো, যাকে পিপাসার্ত ব্যাক্তি পানি মনে করে। এমনকি সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, এরপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব নেন। অথবা (তাদের কাজ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের মত, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের পর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতিই নেই” সমুদ্র বিজ্ঞান অনুযায়ী সূর্যের আলোর তিন থেকে ত্রিশ ভাগ সাগরে প্রতিফলিত হয়। তাই ২০০ মিটার গভীর সাগরে নীল রং ছাড়া আলোর সব রংই মিশে যায়। আগেকার দিনে মানুষ যন্ত্র না থাকায় ২০-২৫ মিটারের নীচে নামতে পারতো না। সাবমেরিনসহ নানা উন্নত সাজ সরাঞ্জাম ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জেনেছেনে গভীর সাগরের পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ায় দুই ধরনের ঢেউ সৃষ্টি হয়। উপরের ঢেউ ও ভিতরের ঢেউ। নিচের ঢেউ অন্ধকার হওয়ায় দেখা যায় না। ফলে কেউ হাত বের করলেও সেই হাত দেখতে পারবে না। সাগর বিষয়ক জার্মান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মার্গারও মনে করতেন বিজ্ঞানের উন্নতির কারেনে ধর্মেল দরকার নেই। কিন্তু সূরা নূরের এ আয়াত শোনার পর তিনি বলেছেন, “এসব কথা কোন মানুষের কথা হতে পারে না, এ আয়াত ইসলামের অলৌকিকতার প্রমাণ।


(২১):- বাচ্চার লিংগ: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন “তিনিই জোড়া সৃষ্টি করেছেন, ছেলে অথবা মেয়ে, যা একফোটা বীর্য এর দ্বারাই নির্ধারিত”। (সুরা আন-নাজম ৪৫-৪৬) আধুনিক জীববিজ্ঞানের আবিস্কারের পূর্বে মানুষের ধারনা ছিল যে, ছেলে বা মেয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য মহিলাই দায়ি। কিন্তু কোরআনে দেড় হাজার বছর আগে বলা হয়েছে বাচ্চার লিংগ নির্ধারন হয় স্পার্ম দ্বারা। অর্থাৎ বাচ্চার লিংগ কি হবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে স্বামি বা পুরুষের উপর। আর আজকে জেনেটিক আর বায়োলোজিকাল গবেষকগণ বহু পরিক্ষারিরিক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে, স্পার্ম সেলের মাধ্যমে লিংগ নিধার্রন হয় যা আসে পুরুষ হতে। আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে একথাটা কে জানতে পারে ?


(২২):- গাছের লিংগ: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “তিনি প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।” (সুরা রাদ:৩) এবং “আর তিনি প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন, তা জমিন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ হোক, কিংবা তারা স্বয়ং অথবা এমন সৃষ্টি হোক যার সম্বন্ধে তারা এখনো জানেই না।” (সূরা ইয়াসিন:৩৬) জোড়া অর্থাৎ পুরুষ আর স্ত্রী লিঙ্গ। এই আয়াতটি আমাদের বলছে গাছপালারও লিঙ্গ রয়েছে। আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে গাছপালারও লিঙ্গ থাকে। পুরুষ গাছ এবং স্ত্রী গাছ। এমনকি উভলিঙ্গ গাছে পুরুষ এবং মাহিলা অংশ আলাদা অবস্থায় থাকে। সর্বপ্রথম যে বিজ্ঞানী উদ্ভিদরে মধ্যে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি হলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী কার্ল লিনে। খৃষ্টিয় অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এ মত প্রকাশ করেন। তার ওই বক্তব্যে অনেকেই বিষ্মিত হয় এবং তারা গীর্জার কর্মকর্তাদরেকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে কয়েক বছর ধরে ইউরোপে তার লেখনীকে ভূর মতামত হিসেবে ধরা হত। কিন্তু এর কিছু পরই বিজ্ঞানীরা লিনের মতামতকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেন এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক মূল নীতি হিসেবে গৃহিত হয়। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে কে জানতো যে গাছেরও লিঙ্গ আছে ?


(২৩):- গাছের নি:শ্বাস-ফটোসিনথেসিস: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “শপথ সকালের যখন তারা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়”। (সূরা তাকভীর:১৮)। ফটোসিনথেসিস আবিষ্কার করার পূর্বে, এই আয়াতটি বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল। মানুষ ভাবতো এটা এমন কি হতে পারে যা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়! লোকজন খুব অবাক হয়ে ভাবতো এমন কিছুর কথা, কিন্তু তারা খুজে পায়নি এটা। যতদিন না ফটোসিনথেসিস পদ্ধতির কথা মানুষ জানলো। এই পদ্ধতি মানুষকে জানালো এমন এক প্রক্রিয়ার কথা যেটা ব্যবহার করে গাছ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড কে শোষণ করার মাধ্যমে নিজের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে। একইসাথে অক্সিজেনকে পরিবেশ এ মুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াটি কেবল দিনের বেলাতেই ঘটে, যেহেতু আলো এখানে অনঘটক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ গাছ কেবল দিনের বেলাতেই নি:শ্বাস ক্রিয়া চালায়। আর এ কথাটিই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। এখানে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি গাছের উল্যেখ করে আয়াতটি নাজিল করেন নি। বোধহয় এ কারনে যে, ভবিষ্যতেও কোরআন যে কালোত্তির্ন, এই বিষয়টি যাতে পরিষ্কার হয়।


(২৪):- জমাট রক্ত বা আলাক: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি মানুষকে তৈরী করেছেন জমাট রক্তপিন্ড(আলাক) থেকে”। (সূরা আলাক: ১,২) আলাক শব্দটির অর্থ আরবিতে জমাট রক্তপিন্ড, পরিস্কারকারি যন্ত্র, জোক। যে কোন একটি বা একাধিক অর্থ নিতে পারেন আপনার পর্যবেক্ষনের জন্য, যাই নেন না কেন, তা ভ্রুনের বৈশিষ্টের সাথে মিলে যাবে! শব্দটির ব্যাবহার এতটাই যৌক্তিক! এটি কি খুবি আশ্চর্য নয় যে, মাতৃগর্ভাষয়ে একেবারে প্রথমদিকে জন্ম নেওয়া জাইগট বা জিগট দেখতে ঠিক জোকের মত, গর্ভের দেয়ালে ঝুলেও থকে ঠিক জোকের মত, এটা মায়ের দেহ থেকে খাবার নেয় অন্য কথায় মায়ের দেহ পরিস্কারের কাজ করে আর এটা জৈবিক গঠন ঠিক রক্তপিন্ডের মত? শত শত বছর আগে নিশ্চয়ই মানুষ জানতো না জাইগোটের এই বৈশিষ্টগুলো!


(২৫):- আঙ্গুলের ছাপের ভিন্নতা: এটা সম্পর্কে আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন“মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহকে একত্রিত করতে পারব না? বস্তুত আমি উহাদের অঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত সুবিন্যস্ত করব”। (সূরা কিয়ামাহ: ৩,৪) অর্থাৎ কারো আঙ্গুলের অগ্রভাগই অন্য কারো সাথে পুরোপুরি একই হবে না। আজ প্রমানীত এ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদা আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। কারো ছাপই কারো সাতে মিলবে না। আর এ জন্যই এই ছাপ এখন ব্যবহার করা হয় পরিচয়পত্র হিসেবে। ১৯ শতকের পূর্বে মানুষ আঙ্গুলের ছাপকে শুধু কিছু ভাজ বলেই জানতো। উল্লেখ্য আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন হয়, এটা ১৮৮০ সালে প্রথম আবিষ্কার করেন স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন।


(২৬):- আঙ্গুলের ছাপের ভিন্নতা: পেশি ও হাড়ের গঠন  সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে মাতৃগর্ভাষয়ে মাংশপেশী গঠিত হওয়ার আগই বাচ্চার হাড় গঠিত হয়। তাই আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “এর পর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাটরক্তবিন্দুতে পরিনত করেছি, অত:পর জমাট রক্তকে মাংষপিন্ডে অত:পর সেই পিন্ডকে হাড়-এ আর তারপর সে হাড়কে মাংসপেশী দ্বারা সজ্জিত করি। এবং এরপর তাকে একটি নতুন সৃষ্টিতে রুপান্তরিত করি, আল্লাহতায়ালার আর্শিবাদ দ্বারা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রূপে। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা কত কল্যানময়।” (সূরা মুমিনুন:১২-১৪) কিছুদিন পূর্বেও এম্ব্রয়লোজি জানতো যে, এম্ব্রয় এর হাড় ও মাংসপেশী একই সময়ে তৈরী হয়। এখন আধুনিক এমব্র্যয়লজি এভাবে দেয়া হয়েছে “সাত সপ্তাহের মদ্ধে কংকালের গঠন শেষ হয় এবং দেহের সবখানে ছড়িয়ে পরতে থাকে। এবং হাড় এর বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। অষ্টম সপ্তাহের দিকে মাংসপেশী গঠিত হতে থাকে যা হাড়ের চারপাশে অবস্থান নিতে থাকে।” Keith Moore (developing Human, 6 part)-1998 অর্থাৎ মানুষের জন্ম ঠিক সেভাবেই হয় যেভাবে কোরআনে বলা হয়েছে। মার্কিন নাগরিক ও বিজ্ঞানী মার্শাল জনসন ভ্রুনতত্ত্ব সম্পর্কিত আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভ্রণের বিকাশের পর্যায়গুলো সম্পর্কে কোরআনের এ বাস্তবতা আবিস্কার করা সম্ভব। কোরআন হল দেড় হাজার বছর আগের গ্রন্থ। সে সময় কোন মাইক্রোসকোপের অস্তিত্ব ছিল না। তখনও মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃতই হয়নি। কোরআন নাজিলের বহু বছর পরে যখন মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃত হল তখন ওই মাইক্রোস্কোপ কোন বস্তুকে ১০ গুণের বেশি বড় করতে পারতো না এবং স্বচ্ছতাও কম ছিল কাজেই কোরআনের বানী মানুষের হতে পারে না”


(২৭):- জন্মের তিন ধাপ: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক (ধাপে ধাপে) ত্রিবিধ অন্ধকারে”। (সূরা যুমার:৬)। আধুনিক এমব্রয়লজি ও বিজ্ঞান জানিয়েছে গভাষয় তিনটি দেয়াল বা স্তর নিয়ে গঠিত।

1. ইন্টেরিয়ার এবডোমিনাল ওয়াল,
2. ইউটেরাইল ওয়াল,
3. এমনিওকার্ডিওনিক মেমব্রেন।

ভ্রুনের বৃদ্ধি ব্যাখ্যা করতে কোরআনে বলা তিনটি অন্ধকার স্তর এবং বাস্তবে পাওয়া তিনটি স্তর মিলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, কারণ কোরআন সকল বিজ্ঞানের উর্দ্ধে। বিজ্ঞান ভুল করতে পারে কিন্তু কোরআন কালোত্তির্ন।

(২৮):- দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি: কোনটা আগে ? তাহলে শুনুন আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “অত:পর তিনি তাতে রুহ সঞ্চার করেন, এবং তোমদের দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্ত:করণ, তোমরা সামা্ন্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর”। (সূরা সেজদাহ : ০৯)। এবং “অত:পর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (সূরা ইনসান : ০২)। অর্থাৎ কোরআন বলছে মানুষ আগে শ্রবণশক্তি আর তারপর দৃষ্টিশক্তি পায়। আসলে কি তাই? চলুন দেখি বিজ্ঞানীরা কি বলেন- গর্ভে পাচ মাস থাকার পর ভ্রুনের শ্রবন ইন্দ্রিয় তৈরী হয়। পরবর্তিতে সাত মাস থাকার পর ভ্রুনের চোখ তৈরী হয়। কি ধ্রুব-বিজ্ঞানময় এই কোরআন!



(২৯):- পেইন রিসেপটরঃ ব্যাথাটা আসলে কোথায় লাগে ? আগেকার দিনের ডাক্তাররা ভাবত শুধুমাত্র ব্রেণের কারণে, আমরা ব্যাথা অনুভব করি। এখন আমরা জানি চামড়ার নিচে কিছু রিসেপ্টর আছে যেগুলোকে বলা হয় পেইন রিসেপ্টর। এগুলোর কারনেই আমরা ব্যাথা অনুভব করতে পারি। এগুলো পুড়ে যাওয়ার পর ঐ পোড়াযায়গাতে খোচালেও মানুষ ব্যাথা অনুভব করে না। আর আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “যাহারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করিবে তাহাদেরকে দোযখের অগ্নিতে দগ্ধ করিব, আর যখনি উহাদের চর্ম ঐ অগ্নিতে দগ্ধ হইবে তখনি উহার স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করিয়া দিব, যাহাতে তাহারা শাস্তি ভোগ করিতে পারে।” (সূরা নিসা : ৫৬)।
এই আয়াত আমাদের বলছে আমাদের চামড়ায় একটা কিছু আছে যেটার কারণে আমরা ব্যাথা অনুভব করি। আর এই কারনে নতুন করে ব্যাথা দিতে গেলে নতুন চামড়ার প্রয়োজন রয়েছে। কি রহস্যময় বিজ্ঞান এই কোরআন!


(৩০):- পাখিদের গতিপথ: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “তাহারা কি উড়ন্ত পাখির দিকে লক্ষ করে না? যাহারা আকাশে শু্ন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রনাধিন। অন্য কেহই তাহাদের স্থির রাখে না, শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাই তাদের স্থির রাখেন।” (সূরা নাহল:৭৯)। আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কার কি ? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে পাখিদের মাথায় উড়ে বেড়ানোর প্রোগ্রামিং করা আছে। আর এই কারনেই ছোট ছোট পাখি আগে কোনরকম অভিজ্ঞতা না থাকলেও হাজার হাজার মাইল উড়ে বেড়িয়ে আবার নিজ বাসায় ফিরে আসতে পারে। এই যেমন শীতকালে আমাদের দেশে সাইবেরিয়া থেকে এভারেষ্ট এর উপর দিযে উড়ে আসে অতিথী পাখিরা। শীত শেষে আবার চলে যায় নিজের বাসায়। এই বিশাল দুরুত্ব (মাত্র ৬৫০০ মাইল গড়ে) পরি দিতে ওদের কোন গাইড লাগে না! কে তাদরে মাথায় রাস্তা চেনার এই ক্ষমতা দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আ্ল্লাহ তায়ালাই তাদের স্থির রাখেন।” কি আশ্চর্যকর এই কোরআন!


(৩১):- পিপিলিকার সমাজ: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “সোলায়মানের সম্মুখে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বীন, মানুষ ও পক্ষিকুলকে। অত:পর তাদরেকে বিভিন্ন দলে ভাগ করা হল। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যষিত উপত্যকায় পৌছল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সোলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদরে পিষ্ট করে ফেলবে”( সূরা নামল: ১৭,১৮)। কি ভাবছেন ? কোরআনে এসব রুপকথার গল্প লিখা হয়েছে কেন ? হে বিজ্ঞানপ্রেমী, এগুলো এখন আর রুপকথা নয়! আপনার বিজ্ঞান ঘোষনা করে দিয়েছে, মানুষের সাথে সামাজিক কাঠামোয় সবথেকে মিল যে পাণীর সেটা পিপীলিকা। ওরা আরো জানিয়েছে পিপীলিকারা নাকি ওদের মৃহদেহ কবর দেয়, ওদের সমাজের কাজ নাকি ভাগ করে করে, ওদের নাকি আছে ম্যানেজার, সুপারভাইজার, শ্রমিক ইত্যাদি ব্যাবস্থা! ওরা নাকি ভবিষ্যত চিন্তা করে মানুষের মত খাদ্য মজুদ করে, আরো অবাক করা কথা কি জানেন, ওদের মজুদকৃত শষ্যদানায় যদি কুড়ি গজায় তো ওরা কুড়িগুলো কেটে ফেলে, যেন ওরা জানে, এই কুড়িগুলো ওদের শষ্যকে নষ্ট করে দিবে। আর কোনভাবে শষ্যদানাগুলো ভিযে গেলে, ওরা ওগুলো বাইরে এনে শুকাতে দেয়। যেনো ওরা জানে, এগুলো না শুকালে শষ্যগুলো পচে যাবে! পিপীলিকাদের এই উন্নত প্রকৃতি সম্বন্ধে বিজ্ঞান আমাদরে জানালো এই কিছুদিন আগে। আর কোরআন জানিয়েছে ——-১৪০০ বছর আগে!


(৩২):- পাখিরা কথা বলে? আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হলো, সে বলল, হে মানুষরা আমাকে উড়ন্ত পক্ষিদের ভাষা পর্যন্ত শিখানো হয়েছে।”(সূরা নামল:১৬) কোরআন এখানে পাখিদের ভাষার কথা বলছে, যা শিথানো হয়েছিল সুলায়মান (আ কে ।পাখিরা কি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারে ? চলুন দেখি বিজ্ঞান কি বলে। মারিয়া লুইসা ডা সিলভা কর্তৃক ব্রাজিলিয়ান হামিং বার্ড এর উপর দীর্ঘ এক গবেষণার পর এর ফলাফল বিখ্যাত সাইন্স ম্যাগাজিন “ন্যাচার” এ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়-হার্মিং বার্ড এর কন্ঠনি:সৃত শব্দগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ আছে, যেগুলো অন্য হার্মিং বার্ডকে নির্দিষ্ট কাজ করতে উৎসাহিত করে। এরা নিজেদের মধ্যে শব্দ বিনিময়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করে।কাকের উপর গবেষণার একটি ফলাফল এরকম- এরা কয়েকশত প্রকারের বিভিন্ন সাউন্ড তৈরী করতে পারে, যেগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ আছে, একটি কলোনির সকল কাকাকে সতর্ক করতে, কোন কলোনির কাকাদরকে এক জায়গায় একত্রিত করতে, নিজেদের দুরবস্থার কাথা অন্যকে জানাতে——এর নির্দিষ্ট ধরনের সাউন্ড তৈরী করে থাকে। এমনকি এরা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রয়োগ ঘটিয়েও অন্য কাককে তা মনের কথা জানাতে পারে। এ রকম হাজারো উদাহরণ দেয়া যাবে।


(৩৩):- মধুর ওষুধীগুন: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “মৌমাছির উদর হইতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাহাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য” (সূরা নাহল:৬৮, ৬৯) আমারা আগে জানতাম মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে বিভিন্ন ফুল থেকে অত:পর তা মৌচাকে মজুদ করে রাকে সরাসরি। আসলে তা নয়, বিজ্ঞান কিছুদিন আগে প্রমাণ করেছে মৌমাছির শরীর থেকে মধু বের হয়। কোরআন দ্বারা যা প্রমাণিত। কোরআন আরো বলেছে মধুর ওষুধীগুনের কথা। আজ আমরা জেনেছি মধুর মদ্ধে রয়েছে প্রচুর ধাদ্যগুন। আছে প্রচুর ভিটামিন কে আর ফ্রুক্টোজ। আরো আছে মাঝারি এন্টিসেপ্টিক গুন। কেটে যাওয়া যায়গায় মধু লাগিয়ে রাখলে কোনরকম ইফেকশান হয়না।


(৩৪):- সূরা নাহল ও কর্মি মৌমাছির লিঙ্গ: কোরআনে মৌমাছিকে নিয়ে একটি সূরা আছে। এটি হল সূরা নাহল, নাহল শব্দটির অর্থ মৌমাছি।

ক. এই সূরাটির অবস্থান কোরআনের ১৬ নাম্বার স্থানে।

খ. খুব সম্প্রতি বিজ্ঞান জানিয়েছে, পুরুষ মৌমাছির ক্রোমোসোম সংখ্যা ১৬! ইস্ত্রী মৌমাছির ৩২ । ১৬*২=৩২ ।এভাবে মিলে যেতে হবে ?

গ. আবার সুরাটিতে আয়াত আছে ১২৮ টা। ১৬*৮=১২৮।

ঘ. এই সূরার ৬৮ নং আয়াতে প্রথম নাহল বা মৌমাছি সম্বন্ধে বলা হয়েছে। এই আয়াতটিতে ১৩টি শব্দ আছে। সূরাটির একেবারে প্রথম শব্দ থেকে গুনে গুনে এই নাহল শব্দটি পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৮৮৪। তো কি হয়েছে ? ৬৮ নং আয়াতে ১৩ টা শব্দ থাকতেই পারে আর সর্বপ্রথম নাহল শব্দটিও থাকতেই পারে, এটার গুরুত্ব কি আছে! আছে বৈ কি, কারণ ১৩*৬৮=৮৮৪ হয় যে!!! কি অস্বাভাবিক গানিতীক অবস্থান এই কোরআন মেনে চলে!!! এই সূরার ৬৮ এবং ৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে কর্মি মৌমাছির কথা। ওখানে কর্মী মৌমাছিকে বলা হয়েছে “কুল্লিঅফাছলুক”। এই শব্দটির অর্থ স্ত্রী মৌমাছি ।অর্থাৎ কোরআন কমী মৌমাছিদেরকে বলেছে মেয়ে মৌমাছি। “আর তোমার প্রভু নারী মৌমাছিকে বললেন, তোমাদের বাসস্থান বানাও। পাহাড়ে, বৃক্ষে আর মানুষের গৃহে” (সূরা নাহল:৬৮)। আগে আমরা জানতাম কর্মী মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি। আজ আমরা জেনেছি কর্মী মৌমাছিদের আসলে কোন রাজা নেই আছে রাণী আর কর্মী মৌমাছি হচ্ছে স্ত্রী মৌমাছি। কোরআন দেড় হাজার বছর আগে মৌমাছির লিঙ্গ সনাক্ত করেছিল ?


(৩৫):- কিছু রহস্যময় আয়াত:

1. ইলেকট্রিক বাল্ব: দেখুন আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের নূর। তার নূরের উদাহরণ যেন এক কুলঙ্গি, যাতে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপিট একটি কাচপাত্রে আবদ্ধ। কাচপাত্রটি নাশপাতি ফল বা পৃথিবীর আকৃতির। যাকে প্রজ্জলিত করা হয়, পবিত্র বৃক্ষের তেল দ্বারা, যা পূর্বমূখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। যার তেল আলোর ঠিক নিকটে থাকে, যদিও অগ্নি উহাকে স্পর্শ করতে পারে না। জ্যোতির উপরে জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথ দেখান তার জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী”। (নূর:৩৫) কার সাথে তুলনা করেছেন মহান আল্লাহ এই আয়াতে ? এটা কি আধুনিক যুগের ইলেকট্রিক বাল্ব নয় ? যা দেখতে পৃথিবীর মতই গোলাকার, কাচপাত্রে আবদ্ধ, যার তেল হচ্ছে ইলেকট্রন কনা, যার আলো সমভাবে ব্যাপ্ত হয় (কোন নির্দিষ্ট দিকে নয়) আর প্রজ্জলনের সময় এই তেলটা শিখার একেবারে কাছই থাকে, কিন্তু এই তেলে কখনো আগুন লাগে না। কি অবাক মিল এই বস্তুটির সাথে ? দেড় হাজার বছর আগের কোন মানুষ, যে ইলেকট্রিক বাল্ব দেখেনি, ইলেকট্রন এর বৈশিষ্ট জানেনা তাকে এর থেকে সহজ আর যৌক্তিক উপায়ে উলেকট্রিক বাল্ব সম্বন্ধে ধারনা দেয়া সম্ভব ?


2. আধুনিক যানবাহন: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “তিনি তোমাদর আরোহনের জন্য এবং শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, গাধা, খচ্চর। আর তিনি আরো জিনিস তৈরী করবেন, যা তোমরা জানো না।” (সূরা নাহল : ০৮) আজকের পৃথিবীতে বাস, ট্রেন, উড়োজাহাজ কত কি! দেড় হাজার বছর আগে এগুলোর একটাও ছিলনা। এগুলো পৃথিবীতে পরে আসবে একথাই কি কোরআন বলছে ? “তোমাদের জন্য নৌকার অনুরুপ যানবাহন তৈরী করিব, যাতে তারা ভবিষ্যতে আরোহন করবে।” (ইয়াসিন : ৪২)। নৌকার অনুরুপ যান হলো উড়োজাহাজ। নৌকা পানিতে ভাসে, আর উড়োজাহাজ ভাসে বাতাসে। উড়োজাহাজ এসেছে নৌকার অনেক পরে। আধুনিক যুগে। মানুষকে নৌকার অনুরুপ যান বলতে কি মহান আল্লাহ উড়োজাহাজ এর কথা বলেছেন ?


3. স্টেট অফ ম্যাটার : আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল- আপনি আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি উহাকে আপনাকে এনে দিব। অত:পর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখতে পেলেন, তখন তিনি বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ”। (সূরা নামল : ৪০) বস্তুর রুপান্তর করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, আলোর গতিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই টেকনোলজীকে বলে স্টেট অফ আর্ট বা ম্যাটার সাইন্স। এই তত্বটা নিয়ে সারা দুনিয়ায় ১৯৯৩ সালের পর থেকে ব্যাপক গবেষনা হচ্ছে। এমন একদিন আসবে হয়ত মানুষ চোখের পলকে একটি বস্তুকে আমেরিকা থেকে জাপানে পাঠিয়ে দিবে। এটা সম্ভব কারণ কোরআন বলছে হাজার হাজার বছর আগে সোলাইমান (আ এর যুগেই এমন ঘটনা ঘটে গেছে!


(৩৬):- কোরআনের ভবিষ্যতবানি :-

1. মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে আল্লাহ তায়ালার আদেশে মুহাম্মদ (সঃ) মদিনায় হিযরত করেন। মদিনায় তিনি ও তার সাথিরা এতোটা নি:স্ব অবস্থায় পৌছান যে উনাদের মাথা গোজার ঠাই না থাকায় খোলা ছাপরার মদ্ধে দিন পার করছিলেন। এ কারনেই ওনারা আসহাফে সুফফা নামে পরিচিত হয়ে উঠেন। তার উপর ছিল কাফেরদের আক্রনের ভয়। এমনি ভায়ানক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালা ওহী পাঠালেন “তুমি মসজিদুল হারামে নিরাপদভাবে প্রবেশ করবে, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় কোন ভয় ছাড়া। তোমার মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তিনি যানেন তোমরা যা জান না। এবং আদেশক্রমে এই জায়গায় তোমাদেরই জয় হবে।” (সুরা ফাতাহ:২৭) সত্যি সত্যি কিছু কালের মদ্ধেই সমগ্র আরব ভূ-খন্ড আল্লাহর রাসূলের অধিকারে এসে গেল, আর মুহা্ম্মদ (সঃ) মক্কায় প্রবেশ করলেন কোন বাধা ছাড়াই। সামান্য কয়েকজন নি:স্ব গরীব লোক, ঐ সমস্ত লোককে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত করল, যারা সংখ্যায় ছিল অধিক, সময় ও পরিবেশ ছিল যাদের অনুকুলে এবং যাদের কাছে ছিল উন্নত সমরাস্ত্র ও ধন-সম্পদের প্রাচুর্য।


2. কোরআনের আর একটি ভবিষ্যতবানী, যার উল্লেখ আমি এখানে করতে চাই তাহলো- ইরানীদের উপর রোমানদের বিজয়। আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “রোমানরা পরাজিত হয়েছে, সবকিছু নিচু জায়গায় এবং তারা পরাজয়ের পর বিজয়ী হবে এবং কিছু বছরের মদ্ধেই। অগ্র পশ্চাতের কাজ হাতেই, সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে।” (সূরা রুম:২-৩) এই আয়াতগুলো নাযিল হয় ৬২০ সনে। তখন রোমান অর্থাৎ বাইজেন্টাইনরা, ইরান বা পারস্য শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে নিজেরা এতটাই দূর্বল হয়ে পরেছিল যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকবে কিনা এই নিয়ে শংসয় চলছিল। উক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার ঠিক ৭ বছর পর ৬২৭ সনে রোমানরা অবিশ্বাস্যভাবে ইরানীদের পরাজিত করে। সত্যি প্রমাণিত হয় কোরআনের ভবিষ্যতবাণী। আর একটি বিষয় খুবি চাঞ্চল্যকর। বলা হয়েছে “রোমানরা পরাজিত হয়েছে, সবচেয়ে নিচু জায়গায় (Adna al-ard পৃথিবীর নিম্নতম স্থান)। – রোমানরা ইরানীদের কাছে যে জায়গায় পরাজিত হয় সেটা হল ডেড সি বেসিন। এটি কি সত্যি পৃথিবীর নিম্নতম স্থান ? আজকে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবীর নিম্নতম স্থান হল ডেডসি বেসিন, এই স্থানটি সমুদ্রতল থেকে মিটার নীচে অবস্থিত। পূর্বে নিশ্চয়ই এটি জানা অসম্ভব ছিলো যে, এটিই পৃথিবীর সবচাইতে নিচু জায়গ। মহানবী (স) এই জাযগাটির গভীরতা কি দিয়ে পরিমাপ করেছিলেন ?


3. কোরআনের ভবিষ্যত বানীর আরেকটি দৃষ্টান্ত সূরা কাওসার। বিশ্বনবী (সঃ) এর পুত্র সন্তান মারা যাওয়ায় এবং তার দ্বিতীয় কোন জীবিত পুত্র সন্তান না থাকায় কোন কোন অজ্ঞ মুশরিকরা বলত, মুহাম্মদ (সঃ) এর বংশ নিশ্চিহৃ হয়ে গেছে। যে লোকটি রাসূল (স কে ‘আবতার’ বা বংশহীন বলে উল্লেখ করত পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক তাকেই ‘আবাতার’ বলে উল্লেখ করেছেন।বাস্তবেও হয়েছে তাই। লোকটির সন্তানাদি থাকা সত্বেও দু্ই প্রজন্ম পরই তার বংশ নিশ্চিহৃ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বনবী (স এর পবিত্র বংশধারা (আওলাদে রাসূল) তার কণ্যা হযরত ফাতেমা (রা এর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে এবং তা আজো অব্যাহত রয়েছে। পবিত্র বৃক্ষের মত এর শাখা-প্রশাখা আজো ক্রমবর্ধমান। মহান আল্লাহ পাক সূরা কাওসারে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওসার (তথা ব্যাপক কল্যাণ ও বরকত) দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নাময পড়ুন এবং কোরবানী করুন। যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।” (সুরাহ কাওসার)


4. ফেরাউনের লাশ সংরক্ষন : কোরআনে আছে ফেরাউন ডুবে মারা গেছে আর মৃত্যুর পরও তার শরীর অক্ষত রাখা হবে, পরবর্তি সীমা লংঘনকারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে। আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “বনী ইসরাইলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী, অত:পর তাদের পশ্চাদ্ভাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্ধেশ্যে, এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করলো, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি কোন মাবুদ নেই তিনি ছাড়া যার ইবাদত করে বনী ইসরাঈলরা। অতএব আজকের দিনে রক্ষা করছি আমি তোমার দেহকে যাতে তা তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নি:শন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।” (সূরা ইউনুস:৯২)। ঐতিহাসিকগণ ১৮৯৮ সালে ফেরাউনের লাশ উদ্ধার করেন। যা আজ মিশরের কায়রোতে দ্যা রয়েল মমী হলে একটি কাচের সিন্দুকের মধ্যে রয়েছে। এর দৈর্ঘ ২০২ সেন্টিমিটার। ৩১১৬ বছর পানির নীচে থাকা সত্ত্বেও তার লাশে কোন পচন ধরে নি। এটা কি মোটেও যৌক্তিক ? মুহাম্মদ (সঃ) এর যুগের আরব জাতি ও অন্যরা মিশরীয়দের মধ্যে, ফেরাউনের পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিংবা তার লাশ যে সংরক্ষিত হবে এরকম ভবিষ্যতবানী করা এবং তা মিলে যাওয়া এক কথায় অসম্ভব।


ইরাম শহর এর রহস্য : কোরআন মাজিদের সূরা আল ফজর এর সাত নং আয়াতে ইরাম নামক একটি শহর এর ধ্বংস এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইরাম নামক কোন শহর এর নাম পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায় না। এজন্য ঐতিহাসিক ও তাফসির কারকগণ ঐ শহরটির সম্বন্ধে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারতেন না। বহুদিন ধরেই বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল কোরআন। ১৯৭৩ সালে সিরিয়ার এরলুস নামক একটি প্রাচিন শহর খননের সময় কিছু শিলালিপি পাওয়া যায়। এ সমস্ত লিপি পর্যবেক্ষন করে সেখানে ৪০০০ বছরের পুরনো একটি সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। শিলালিপিগুলোতে উল্যেখ পাওয়া যায় ইরাম নামক একটি শহরের নাম, যে শহরের সাথে তৎকালীন এরলুস শহরের লোকজন ব্যবসা-বানিজ্য করতো। এই সত্যটা অবিস্কার হলো মাত্র সেদিন, ১৯৭৩ সালে। এর আগে কেউ এই শহরের রহস্য জানতো না। অথচ কোরআন শহরটির কথা বলে গিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। কোরআনের উৎস কোথায় ?


★★★ কোরআনের শব্দ রিপিটেশন চ্যালেঞ্জ : কোরআনের আয়াত রচনার জন্য Choose করা বিভিন্ন শব্দগুলো নেয়া হয়েছে বিশেষ নিয়মে। একই অর্থবোধক ও বিপরীত অর্থবোধক শব্দগুলোর রিপিটেসনের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়েছে।


ক. একদিনে কত ঘন্টা হয় ? কোরআনে ঘন্টা অর্থে ‘সায়াত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৪ বার। একবছরে কতদিন হয় ? কোরআনে ‘দিন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ৩৬৫ বার। (একবচনে)  এভাবে বহুবচনে দিন (days) শব্দটি এসেছে ৩০ বার। (আরবীতে ৩০ দিনে হয় একমাস)। মাস শব্দটি এসেছে ১২ বার। (একবছর হয় ১২ মাস এ) চাদ শব্দ- ২৭ বার। (চাদ পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় প্রায় ২৭.২৩ দিন)। এখানে অনেকে বিভ্রান্তিতে পরতে পারেন, পূর্ণচন্দ্রের সময (২৯.৫৩ দিন) এর সাথে। এই সময়টা লাগে চাদের এক পূর্নিমা থেকে আরেক পুর্ণিমা পর্যন্ত পৌছতে। আর এটা দিয়ে আরবী মাস হিসেব করা হয়)। বছর শব্দটি কোরআনে এসেছে ১৯ বার। এর পেছনেও সুনির্দিষ্ট কারন আছে। লিপ-ইয়ার এর মাধ্যমে সৌরবর্ষ সঠিক করা হয়। পৃথিবী যে সময়ে (৩৬৫ দিন) সূর্যের চারিদেকে একবার ঘুরে সেই সময়ে চাদ প্রায ১২ বার (একটু কম) পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে। প্রথমটা দিয়ে সৌরবর্ষ আর পরেরটা দিয়ে চন্দ্রবর্ষ হিসেব করা হয়। এভাবে পৃথিবী ও চাদ যে স্থান থেকে ঘুরা শুরু করেছিল ঠিক সেই অবস্থানে আসতে সময় লাগে ১৯ বছর। আর কোরআনে ঠিক ১৯ বারই এসেছে বছর শব্দটি। কি অনুপম মিল রাখে এই কোরআন।

খ. শাস্তি-১১৭ বার, ক্ষমা- ২৩৪ (২*১১৭) বার। গরিবী- ১৩ বার, প্রাচুর্য- ২৬ (১৩*২) বার। ধার্মিক- ৬ বার, নাস্তিক- ত বার। প্রায় কাছাকাছি অর্থে ব্যবহৃত দয়ালু (রহমত)- ১১৪ বার। দয়াবান (রহিম)- ১১৪ বার, সদয় (রহমান)- ৫৭ বার (৫৭*২=১১৪) বার করে এসেছে। আশা এবং ভয় শব্দ দুটি এসেছে = ৮ বার। গরম এবং ঠান্ডা = ৪ বার। কালু (তারা বললো) এবং কুল (তুমি বল) = ৩৩২ বার। বীজ এবং চারা এবং ফল = ১৪ বার। অশ্লিলতা এবং পথভ্রষ্ট এবং সীমালংঘনকারী = ২৪ বার। পাপ = ৪৮ (২৪*২) বার। দুনিয়া এবং আখেরাত = ১১৫ বার। পবিত্র এবং অপবিত্র = ৭ বার। অপবিত্রতা এবং নোংরামী = ১০ বার। উপকার এবং অপকার = ২০ বার। খোলামেলা এবং জনসম্মুখে = ১৬ বার। ফেরেশতা এবং শয়তান = ৮০ বার। যাদু এবং প্রলুব্ধকারী = ৬০ বার।

গ. ভাষা এবং উপদেশ = ২৫ বার। ক্ষমা এবং পথ-প্রদর্শক = ৭৯ বার। ন্যায়নিষ্ট এবং পুরুস্কার = ২০ বার। গন্তব্যহীন এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল = ২৮ বার। বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস = ২৫ বার। যাকাত এবং আর্শিবাদ = ৩২ বার। সাত বেহেশ্ত এবং বেহেশ্ত তৈরীকরণ = ৭ বার। সূর্য এবং আলো = ৩৩ বার। সুবিচার এবং অবিচার = ১৫ বার। খুবি অল্প এবং উপলব্ধিযোগ্য = ৭৫ বার। নবী এবং সাধারণ মানুষ = ৩৬৮ বার। লাভ এবং ক্ষতি = ৯ বার। কেয়ামতের প্রথম ফুৎকার এবং দ্বিতীয় ফুৎকার শব্দ দুটি এসেছে = ৫ বার।

ঘ. মানুষ শব্দটি এসেছে ৬৫ বার। মানুষ = ( মাটি- ১৭ বার + বীর্য ফোটা- ১২ বার + ভ্রুন- ৬ বার + মাংসপিন্ড- ৩ বার + হার- ১৫ বার + মাংস- ১২ বার) = ৬৫। অর্থাৎ মানুষ তৈরীর বিভিন্ন উপাদানগুলো কোরআনে যতবার করে এসেছে এই রিপিটেসনের সংখ্যার যোগফল আর মানুষ শব্দটির শব্দটার রিপিটেসনের সমান। (মানুষ= মটি+বীর্যফোটা+ভ্রুন+মাংসপিন্ড+হার+মাংস) এটা কি এমনি এমনি মিলে গেছে ?
চ. বর্তমান বিজ্ঞান নিরীক্ষনের মাধ্যমে দেখিয়েছে পৃথিবীতে স্থলভাগের মোট আয়তনের ২৯ ভাগ আর জলভাগের পরিমান ৭১ ভাগ প্রায়। চলুন দেখি কোরআন কি বলে- কোরআনে সমুদ্র বা জলাধার শব্দটি এসেছে ৩২ বার। ভুমি বা জমি শব্দটি এসেছে ১৩ বার। এদের রিপিটেশন এর পরিমানকে অনুপাতে প্রকাশ করলে পাওয়া যায় -

স্থলভাগের পরিমাণ = (১৩/(১৩+৩২)}=২৮.৮৮৮%)
জলভাগের পরিমান = (৩২/(১৩+৩২)}=৭১.১১১%)।

এখন প্রশ্ন হলো দেড় হাজার বছর আগের কোন মানুষ কি জানতো পৃথিবীর জলভাগ আর স্থলভাগের অনুপাত কতো! এভাবে মিলে যাওয়ার কি কারন থাকতে পারে ?

ছ. আসহাবে কাহাফ বা গুহার অধিবাসিদের বর্ণনা থেকে জানা যায় ওরা গুহার ভিতর ৩০৯ বছর ঘুমন্ত ছিল। এই গুহার অধিবাসিদের বর্ণনা আছে, কোরআনের সূরা কাহাফের ৯ থেকে ২৫ নং আয়াতে। এই আয়াত কয়টির মোট শব্দের সংখ্যা গণনা করুন্ ৩০৯ টি শব্দ পাবেন!

জ. সামুদ জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনা বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে ভয়ংকর এক শব্দের মাধ্যমে আজাবের কথা। এখানে আজাবের উপকরন “ভয়ংকর শব্দ”। আবার লুত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার কথা বলতে গিয়ে কোরআন বলছে পাথর-বৃষ্টির কথা। এখানে আজাবের উপকরণ “পাথব বা শিলা-বৃষ্টি”।
ভয়ংকর শব্দ – ১৩, সামুদ জাতি – ২৬ (১৩*২) বার করে এসেছে।
পাথর বৃষ্টি – ৪ বার, লুত সম্প্রদায় – ৮ (৪*২) বার করে এসেছে।
লক্ষনীয় ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতীর রিপিটেশন, ধ্বংস করার উপকরণের রিপিটেশনের দ্বিগুন।

ঝ. কোরআন অনেক জায়গায় তুলনা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি হলো যে দুটি শব্দের মাঝে তুলনা করা হয়েছে ঐ দুটি শব্দ কোরআনে সমপরিমান সংখ্যায় এসেছে।যেমন-
১. “আল্লাহ তায়ালার কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমরে মত”। (আল-ইমরান : ৫৯)।
২. যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মত”। (সূরা আরাফ) যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ অস্বীকার করে বাক্যটি কোরআনে এসেছে ৫ বার। আবার কুকুর শব্দটিও কোরআনে এসেছে ৫ বার।

ঞ. কোন কাজ করলে সেই কাজের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল সম্পর্কিত রিপিটেশন সমান সংখ্যায় এসেছে কোরআনে।
যাকাত দিলে বরকত আসে। তাই যাকাত ও বরকত শব্দ দুটি এসেছে ৩২ বার করে।
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদ করা। তাই “মানুষ সৃষ্টি” ও “ইবাদত” শব্দ দুটি এসেছে ১৬ বার করে।
গোলামের কাজ হলো গোলামী করা। গোলাম ও গোলামী শব্দ দুটি এসেছে ১৫২ বার করে।
নেশা করলে মাতাল হয়। “নেশা” ও “মাতাল” শব্দ দুটি এসেছে ৬ বার করে।
হায়াত লাভ করলে মউত হবেই। তাই হায়াত ও মউত শব্দ দুটি এসেছে মোট ১৬ বার করে।

মানুষ হেদায়েত পেলে তার উপর রহমত বর্ষিত হয়। হেদায়েত ও রহমত শব্দ দুটি এসেছে মোট ৭৯ বার করে।
কাজ করলে কাজের ফলাফল হবে। কাজ – ১০৮ বার ফলাফল ১০৮ বার।

 
Top