রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিতা-মাতা ইমানদার ছিলেন
লেখক ও সংকলক (Masum Billah Sunny)
ইসলামিক বিশ্বকোষ, সুন্নি বিশ্বকোষ, ইসলামী বিশ্বকোষ,ইসলামি বিশ্বকোষ, Islami bissokos, Sunni encyclopedia
ইসলামিক বিশ্বকোষ
🌍 ইসলামিক বিশ্বকোষ Apps Download [2.6 MB]
🌍 ইসলামিক বিশ্বকোষ এপ্স ডাউনলোড [2.6 MB]

হুযুর পাক (ﷺ) পূর্বপুরুষগণ মু’মিন ছিলেন (প্রবন্ধ ১)

প্রসঙ্গঃ হযরত আদম (عليه السلام) থেকে হযরত আবদুল্লাহ ও বিবি আমেনা পর্যন্ত হুযুর [ﷺ]-এঁর মূলধারার পূর্বপুরুষ ও নারীগণ সকলেই মু’মিন ছিলেন।
==============
হুযুর আকরাম [ﷺ]-এঁর উর্দ্ধতন মূলধারার পূর্বপুরুষ নর-নারী সকলেই মু’মিন ছিলেন, এ বিষয়ে সংক্ষেপে কয়েকটি প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে।
প্রথম প্রমাণঃ কোরআন মজিদের সূরা শুয়ারা, আয়াত নং ২১৯-এ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ وَتَقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ
অর্থঃ- “হে রাসুল! সিজদাকারী মু’মিনগণের মধ্যে আপনার আবর্তন আমি লক্ষ্য করেছি।” হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে “আপনার পূর্ববর্তী সকল নর-নারী যাদের মাধ্যমে আপনি আবর্তিত হয়ে এসেছেন- তাঁরা সকলেই ছিলেন সিজদাকারী মু’মিন।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস)।

দ্বিতীয় প্রমাণঃ নবী করিম [ﷺ]-এরশাদ করেছেনঃ
لَمْ يَزَل اللهُ يَنْقُلُنِي مِنَ الاَصْلاَبِ الطَّيِّبَةِ اِلَى الاَرْحَامِ الظَّاهِرَةِ مُصَفَّى مُّهَذَّبًا (عن أبن عباس-مواهب)
অর্থঃ- “আল্লাহ তায়ালা পর্যায়ক্রমে আমাকে পবিত্র ঔরসে (মু’মিন পুরুষ) হতে পবিত্র গর্ভের (মু’মিন নারী) মাধ্যমে পাক-সাফ অবস্থায় স্থানান্তরিত করে পৃথিবীতে এনেছেন।”
হাদীসখানা এত পরিষ্কার এবং এত শালীন ভাষায় উদ্ধৃত হয়েছে যে, যুগ-যুগান্তরের শিরক ও কুফরীর অপবিত্রতা এবং চরিত্রগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে হুযুর [ﷺ]-এঁর পূর্ব পুরুষগণের মুক্ত থাকার পরিষ্কার ইঙ্গিত তাতে পরিষ্ফুট হয়ে উঠেছে। কোরআনের পরিভাষায় পবিত্র নর-নারী বলতে ঈমানদারকেই বুঝানো হয়েছে। (সুরা মু’মিনুন ১৮ পারা)

তৃতীয় প্রমাণঃ ইবনে মোহাম্মদ কলবীর বর্ণনা সূত্রে তাঁর পিতা মুহাম্মদ কলবী (رحمة الله عليه) বলেনঃ-
كَتَبْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْسَ مِائَةِ اُمَّهَاتِه فَلَمْ اَجِدْ فِيْهِنَّ سِفَاحًا وَلاَ شَيْئًا مِّنْ اَمْرِ الجَاهِلِيَّة
অর্থঃ- “আমি নবী করিম [ﷺ]-এঁর বংশধারার পূর্ববর্তী পাঁচশত মায়ের তালিকা প্রস্তুত করেছি। তাঁদের মধ্যে আমি চরিত্রহীনতা এবং জাহেলিয়াতের কিছুই পাইনি।” (বেদায়া-নেহায়া)

জাহেলিয়াত অর্থ কুফরী ও শেরকী। চরিত্রহীনতা অর্থ যিনা। সুতরাং হুযুরের উর্দ্ধতন মহিলারা ছিলেন শিরক, কুফর ও চরিত্রহীনতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত- অর্থাৎ মু’মিনা ও সতী-সাধ্বী নারী ছিলেন। সুতরাং উপরোক্ত তিনটি অকাট্য দলীলের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নবী করিম [ﷺ]-এঁর পিতা-মাতা মু’মিন ছিলেন এবং মিল্লাতে ইব্রাহীমীর উপর তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল।

ইসলামের আবির্ভাবের পর দশম হিজরীতে যখন নবী করিম [ﷺ] হজ্ব করতে মক্কা শরীফে আগমন করেন, তখন হাজুন নামক কবরস্থানে (বর্তমানে জান্নাতুল মুয়াল্লা) আল্লাহ পাক তাঁর পিতা-মাতাকে এনে পুনর্জীবিত করে দ্বীনে মুহাম্মদী [ﷺ] গ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ইমাম সোহায়লী ও খতীবে বাগদাদী সূত্রে হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) কর্তৃক বর্ণিত এ সম্পর্কীয় হাদীসখানা বেদায়া-নেহায়া গ্রন্থে ইবনে কাসির এবং মাওয়াহেব গ্রন্থে ইমাম কাস্‌তুলানী, ফতোয়া শামীতে আল্লামা ইবনে আবেদীন প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।

কিন্তু বিদ’আতি আলেমগন বলে থাকেন যে, এসব হাদীস নাকি জাল বা মওযু। একারণেই উপরে তিনটি নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ করা হলো। ওহাবীদের মতে, হযরত আবদুল্লাহ ও বিবি আমেনা (رضي الله عنهما) নাকি কুফরী হালতে ইন্তিকাল করেছেন (নাউযুবিল্লাহ!)। তারা যুক্তি হিসেবে বলে থাকে যে, হযরত আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) রাসুল [ﷺ]-এঁর জন্মের পূর্বে এবং বিবি আমেনা (رضي الله عنها) হুযুরের ছয় বছর বয়সে ইনতিকাল করেছেন। তাই তাঁরা ইসলাম গ্রহণের যুগ পাননি। তাদের এই কুটযুক্তি উপরের তিনটি দলীলের দ্বারা অসার প্রমাণিত হয়েছে। তারা আর একটি যুক্তি দেখায় যে, বিবি আমেনার (رضي الله عنه) কবর যিয়ারত করতে চাইলে আল্লাহ তায়ালা নবী করিম [ﷺ]-কে অনুমতি দেন। কিন্তু মাগফিরাতের দোয়ার অনুমতি চাইলে প্রত্যাখ্যান করেন। সুতরাং তাদের মতে তিনি মু’মিনা ছিলেন না।

আল্লামা মানাভী এর জবাব এভাবে দিয়েছেন – কবর যিয়ারতের অনুমতি প্রদানই প্রমাণ করে যে, বিবি আমেনা (رضي الله عنها) মু’মিনা ছিলেন। আর তিনি নেককার ছিলেন বলেই ঐ সময় মাগফিরাতের প্রাথনা নামঞ্জুর করা হয়।” তবে নবী করিম [ﷺ] উম্মতের শিক্ষার জন্য সবসময় মাতাপিতার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতেন – যার বর্ণনা নিম্নে করা হবে।

বি:দ্র: এখানে সুন্নীদের পক্ষ হতেও এধরণের প্রশ্নের উদয় হতে পারে। মায়ের প্রার্থনা নামঞ্জুর করার কারণ হলো – তিনি ছিলেন নেককার। তাহলে পরবর্তী সময়ে দেখা যায়- নবী করিম [ﷺ] সবসময় নিজের জন্য এবং পিতামাতার জন্য মাগফিরাত কামনা করতেন। তাহলে কি নবীজী এবং তাঁর পিতামাতা বদকার বা গুনাহগার ছিলেন? নাউযুবিল্লাহ!
এই বিষয়টির জবাব তাফসীরে রুহুল বয়ান ২৬ পারা সূরা আল-ফাতাহ ২য় আয়াতের ব্যাখ্যায় এভাবে বলা হয়েছে – ”হে রাসুল, আপনার উছিলায় আপনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের গুনাহ্ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন”- আল্লাহর এই বাণীর বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কেননা তিনি তো ছিলেন বেগুনাহ। সুতরাং আয়াতে ”আপনার গুনাহ্ ”-এঁর অর্থ হবে ”আপনার উম্মতের গুনাহ।”

আর ”মাগফিরাত”-এর তিনটি অর্থ রয়েছে যথা: (১) অপরাধ ক্ষমা করা (২) অপরাধ থেকে হেফাযত করা (৩) অপরাধের খেয়াল থেকে নিরাপদ রাখা। প্রথম অর্থ হবে সাধারণ গুনাহ্গারদের বেলায়। দ্বিতীয় অর্থ হবে নেককার ও আল্লাহর অলী এবং নবীজীর পিতামাতা ও সাহাবীগণের বেলায়। তৃতীয় অর্থ হবে নবীগণের বেলায়।

উক্ত ব্যাখ্যার দ্বারা বুঝা গেলো – নবী করিম [ﷺ] নিজের জন্য যে মাগফিরাত কামনা করতেন – তার অর্থ হবে – ”হে আল্লাহ, আমাকে সদাসর্বদা গুনাহ বা অপরাধের খেয়াল থেকে বাঁচিয়ে রেখো।” হুযুরের পিতা-মাতার জন্য মাগফিরাত কামনার অর্থ হবে – ”হে আল্লাহ, আমার পিতা-মাতাকে গুনাহ থেকে হেফাযতে রেখো।” আর সাধারণ উম্মতের জন্য মাগফিরাত কামনার অর্থ – ”হে আল্লাহ! তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিও।” (রুহুল বয়ান, সূরা ফাতহ আয়াত-২)

এখন পরিষ্কার হয়ে গেলো – হুযুরের পিতামাতা নেককার ছিলেন এবং নবীজী তাদের গুনাহ হতে হেফাযতের জন্যই দোয়া করতেন এবং গুনাহ ও যাবতীয় অপরাধের খেয়াল থেকে নিজেকে নিষ্পাপ রাখার জন্য তিনি সর্বদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন (তাফসীরে রুহুল বয়ান)। একই শব্দের একাধিক অর্থ ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে না জানার কারণে রহমানপুরী নামে জনৈক মুফতী সাহেব আমার ”নূরনবী”র এই অংশটি নিয়ে অনেক লিফলেটিং করেছিলেন। কিন্তু তিনি কামিয়াব হতে পারেননি। আলহামদুলিল্লাহ! সর্বোপরি জওয়াব হলো – উম্মতকে শিখানোর জন্যই হুযুর [ﷺ] ঐ ভাবে দোয়া করতেন।

নবী করিম [ﷺ]-এঁর পিতা-মাতার পুনর্জীবন লাভ ও নূতন করে ইসলাম গ্রহণ:

নবী করিম [ﷺ]-এঁর পিতা-মাতা হুযুরের নবুয়তের যুগ পাননি। কিন্তু তাঁরা ছিলেন মিল্লাতে ইব্রাহীমীর উপর প্রতিষ্ঠিত একেশ্বরবাদী হানিফ সম্প্রদায়ভূক্ত মু’মিন। তাঁদের মত আরবে আরও কিছু লোক হানিফ সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন। যেমন – আব্দুল মোত্তালেব, ওয়ারাকা ইবনে নওফেল, হযরত খাদিজা ও হযরত আবু বকর – প্রমূখ (رضي الله عنهم)। যারা নবুয়ত যুগের পূর্বে ইনতিকাল করেছেন, তাদেরকে ”আসহাবে ফাৎরাত” বলা হয়। তাঁরা ছিলেন তৌহিদবাদী হানিফ। নবী করিম [ﷺ]-এঁর পিতা হযরত আব্দুল্লাহ এবং মাতা বিবি আমেনাও ছিলেন অনুরূপ তৌহিদপন্থী মু’মিন।

যখন নবী করিম [ﷺ] জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ১০ম হিজরীতে একলাখ চৌদ্দ হাজার সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মক্কা শরীফে হজ্ব করতে আসেন, তখন একদিন বিবি আয়েশা (رضي الله عنها) কে সাথে নিয়ে জান্নাতুল মুয়াল্লাতে বিবি খাদিজা (رضي الله عنه)-এঁর মাযার যিয়ারত করতে গেলেন। (তখন নাম ছিল হাজুন)। হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) গাধার লাগাম ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন। নবী করিম [ﷺ] যিয়ারতকালে প্রথমে খুব কাঁদলেন – পরে হাসলেন। হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) কারণ জানতে চাইলে হুযুর আকরাম [ﷺ] বললেন – ”আমার পিতা-মাতাকে আল্লাহ্ পাক পুনর্জীবিত করে আমার সামনে হাযির করেছেন। তাঁরা নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করে পুনরায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি পিতা-মাতাকে দেখে খুশী হয়ে হেসেছি।” (বেদায়া ও নেহায়া দ্রষ্টব্য)। ইমাম সোহায়লীর বরাত দিয়ে ইবনে কাছির এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ফতোয়ায়ে শামীতে হাফেয নাসিরুদ্দীন বাগদাদীর বরাতে হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) থেকে একখানা হাদীস উদ্ধৃত করে আল্লামা শামী লিখেছেন-

عن عائشة رضي الله عنها قالت ان الله احي ابويه اكراما له صلي الله عليه وسلم فاسلما ثم مانا كما كانا كما احي الموتي بعيسي عليه السلام -(ردالمحتار مطلب اسلام ابوي البي)

অর্থঃ- হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) বলেন- আল্লাহ তায়ালা নবী করিম [ﷺ]-এঁর সম্মানে তাঁর পিতা-মাতাকে পুনর্জীবিত করেন। তাঁরা উভয়ে নূতন করে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপরে তাঁরা পুনরায় পূর্বের ন্যায় মৃত্যুবরণ করেন। যেমন আল্লাহ্ পাক হযরত ঈসা (عليه السلام)-এঁর মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করতেন, তদ্রুপ নবীজীর খাতিরেও করেছেন।” (শামী)

সুতরাং আমরা এখন থেকে মুক্তকন্ঠে বলবো – হযরত আব্দুল্লাহ ও হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। কেননা, তারা সাহাবী হিসাবে গণ্য।

বি:দ্র: হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) ও হযরত ইসমাইল (عليه السلام) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন – যেন তাঁদের বংশধরদের (আরব) মধ্যে প্রত্যেক যুগেই কিছু মুসলিম বিদ্যমান থাকে। (সূরা বাক্বারাহ ১২৮ আয়াত)।

-رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ

অর্থঃ- ”হে প্রভু! আমাদের উভয়কে তুমি তোমার অনুগত মুসলিম হিসেবে কবুল করো এবং আমাদের পরবর্তী বংশধরদের মধ্যেও (আরব দেশে) কিছু সংখ্যক লোককে অনুগত মুসলিম বানিয়ে রেখো।” এই দোয়ার বরকতে পরবর্তী প্রত্যেক যুগেই আরবে কিছু সংখ্যক সত্যপন্থী হানিফ সম্প্রদায় বিদ্যমান ছিলেন। নবী করিম [ﷺ]-এঁর পিতা-মাতা ও তাঁদের পূর্ব পুরুষগণ এই হানিফ সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন। তাঁদেরকে কাফের মনে করা বেদ্বীনি কাজ। ইতিহাসেও হানিফ সম্প্রদায়ের উল্লেখ রয়েছে। বাতিলপন্থীরা ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে বে-খবর।



হুযুর পাক (ﷺ) পূর্বপুরুষগণ মু’মিন ছিলেন (প্রবন্ধ ২)
কিতাবঃ নূরনবী ﷺ 
দ্বাদশ অধ্যায়ঃ শিশুকালে মদীনায় গমন প্রসঙ্গ
মূলঃ প্রিন্সিপাল হযরত হাফেজ আব্দুল জলিল (রহ.)

মায়ের সাথে মদীনায় গমন ও পিতার কবর যিয়ারত এবং ফিরতি পথে মায়ের ইন্তেকাল, হুজুরের পিতামাতার পুনর্জীবন ও সাহাবীর মর্যাদা লাভ 
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস  (رضي الله عنه) বর্ণনা   করেন-  যখন  নবী   করীম [ﷺ]-এঁর বয়স  ছয় বৎসর, তখন বিবি আমেনা (رضي الله  عنها) আপন দাসী উম্মে আয়মন (رضي الله  عنها) ও  নিজ পুত্র মুহাম্মদ [ﷺ] নিয়ে  মদীনায় গমন করেন। উদ্দেশ্য ছিল কবর যিয়ারত  করা ও নিজ পুত্রকে মাতুলালয়ে পরিচিত করা। মদীনার বনী আদী ইবনে নাজজার ছিল নবী করীম [ﷺ]-এঁর মাতুলালয় এবং আবু আইউব আনসারী  (رضي الله عنه) ছিলেন সে বংশের লোক। 'দারুন নাবেগা' নামক স্থানে (বর্তমানে মসজিদে নববীর পশ্চিমাংশে) হযরত আব্দুল্লাহর (رضي الله عنه)  কবর। সেখানে তাঁরা একমাস  অবস্থান করেন। উম্মে আইমন (বারাকাহ্) বলেন আমরা যখন মদীনায়, তখন মদীনার প্রতিবেশী একদল ইহুদী পালাক্রমে  এসে নবী করীম   [ﷺ]-এর দিকে বার বার দৃষ্টি দিতে থাকে। ইহুদিদের মধ্যে একদল বলে উঠলো "ইনিই বর্তমানকালের নবী এবং মদীনাতেই তিনি  হিজরত করে চলে আসবেন। এখানে বহু হতাহত হবে এবং যুদ্ধবন্দীর ঘটনা ঘটবে।"

তাদের  কথা শুনে বিবি আমেনা নিজ পুত্র ও উম্মে আয়মনকে নিয়ে মক্কায় রওনা হয়ে  যান। পথিমধ্যে 'আবওয়া' নামক গ্রামে পৌঁছলে হঠাত বিবি আমেনা (رضي الله عنها) অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এখানেই ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহে  ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন (বেদায়া-নেহায়া)।

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতি (রহ.) তারিখুল খেলাফা নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেছেন  অসুস্থ অবস্থায় বিবি আমেনা (رضي الله عنها) উম্মে আয়মনকে লক্ষ্য করে যে কয়টি হৃদয়বিদারক উপদেশ দিয়েছেলেন, তার মর্মার্থ এই,  "হে উম্মে আয়মন, আমি বিদায় নিচ্ছি। আমার পর তুমিই তাঁর মা।  তাঁকে তুমি আদর-যত্ন করে রাখবে। আর শুনো, তাঁর জন্মকাল থেকে যেসব ঘটনা আমি প্রত্যক্ষ করেছি, তাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, তিনি হবেন শেষ যামানার নবী। এটাই আমার চূড়ান্ত  সাক্ষ্য!" একথা বলেই বিবি আমেনা (رضي الله عنها) জান্নাতবাসিনী হয়ে যান।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, বিবি আমেনা (رضي الله عنها) ও হযরত আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) মিল্লাতে ইবরাহিমীর উপর ইন্তেকাল করেছেন। সুতরাং তাঁরা মুমিন ও জান্নাতবাসি। বিবি আমেনা (رضي الله  عنها)-এঁর মন্তব্যে বুঝা গেল তিনি- নবীজীর নবুয়তের বিশ্বাসী ছিলেন। পরবর্তীতে দশম হিজরী সনে বিদায় হজ্বের  সময় তাঁদেরকে পুনারায় জীবিত করে নবী করীম [ﷺ]-এঁর সামনে পেশ করা হয় এবং উভয়ে হানিফ হওয়া সত্ত্বেও পুনারায় ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত হয়ে সাহাবী হন। আল্লামা সোহায়লী ও হাফেয নাসিরউদ্দিন খতিব বগদাদী হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) থেকে এই হাদীসখান রেওয়ায়াত করেন। ফতোয়া শামী সহ বেদায়-নেহায়া, মাওয়াহেব, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া – প্রভৃতি নির্ভরযোগ্য কিতাবে এই রিওয়ায়াতখানা বর্ণিত হয়েছে।  সনদের ক্ষেত্রে সামন্য দুর্বল হলেও অনেক বিখ্যাত মুহাদ্দিস কর্তৃক গৃহীত হওয়ার কারণে এটা সবল হয়ে হাসান পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। হাদীস শিক্ষক ও  মুহাদ্দিসগণ এই নীতিমালা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল রয়েছেন। সুতরাং  যঈফ বলে হাদীসখানাকে উড়িয়ে দেয়ার মানসিকতা ওহাবীপন্থী আলেমগণের পরিত্যাগ করা উচিত।

এখানে অগ্রিম ঈমান আনায়ন  প্রসঙ্গে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য   যে,   নবী   করীম  [ﷺ]-এঁর আবির্ভাবের  চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে ইয়েমেন-এর বাদশাহ তিববা আবি কুরাব মদীনা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এসে ইহুদী পণ্ডিতদের নিকট আখেরি নবীর গুণাগুণ শুনে   নবী করীম [ﷺ]-এঁর রিসালতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন, "তোমরা তিব্বাকে গালি দিওনা, কেননা সে আমার উপর পূর্বেই অগ্রিম ঈমান এনেছে এবং আমি তাকে মি’রাজ রাতে বেহেস্তে বিচরণ করতে দেখেছি।" (ইবনে কাছির-বেদায়া ও নেহায়া)

হযরত আব্দুল্লাহ এবং বিবি  আমেনার (رضي الله عنهما) ব্যাপারটিও অনুরূপ। পর্বতীকালে নবী করীম [ﷺ]  সাহাবীগণসহ মায়ের কবর যিয়ারত করেন এবং ছোট শিশুর ন্যায় ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদেন। বেদায়া ও নেহায়া এবং মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণিত হাদীসখানা প্রতিধাযোগ্য।

عن سليمان بن بريدة عن أبيه قال انتهى النبي صلى الله عليه وسلم إلى رسم قبر فجلس وجلس الناس حوله فجعل يحرك رأسه  كالمخاطب  ثم بكى فاستقبله عمر رضي الله عنه فقال:  ما يبكيك يا رسول الله؟ قال: هذا قبر آمنة بنت وهب استأذنت ربي  في أن أزور قبرها فأذن لي،  واستأذنته في الاستغفار لها فأبى علي، وأدركتني رقتها فبكيت قال: فما رؤيت ساعة أكثر باكيا من تلك الساعة -
অর্থঃ- "হযরত সোলায়মান ইবনে  বোরায়দা ((رحمة الله)) তার পিতা  বোরায়দা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন  যে,  একদিন  নবী  করীম  [ﷺ] আবওয়ায় একটি  পুরাতন কবরের পার্শ্বে গিয়ে বসলেন  এবং তাঁর সঙ্গীগণও কবরের   পার্শ্বে বসে পড়লেন।  হুজুর পাক [ﷺ] যেন কাউকে সম্বোধন করার মত মাথা নেড়ে নেড়ে কাঁদতে  লাগলেন। হযরত ওমর (رضي الله عنه) সামনে এসে আর‍য করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কেন কাঁদছেন? নবী করীম [ﷺ] জবাব  দিলেন- এটা আমার আম্মা বিবি  আমেনা বিনতে ওহাব-এঁর কবর! আমি আমার রবের নিকট মায়ের কবর যিয়ারত  করার অনুমিতি চাইলে তিনি মাকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দেন। পূনরায় মায়ের জন্য মাগফেরাত কামনার পার্থনা করতে গেলে আমাকে নিষেধ করেন। মায়ের অনাবিল স্নহের  কথা স্মরণ করে আমি কেঁদেছি। বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, ঐ সময়ের চেয়ে এত দীর্ঘ সময় ধরে কাঁদতে রাসূল  [ﷺ]-কে  আর কোনদিন দেখা যায়নি।"  (বেদায়া-নেহায়া-ইবনে কাছির)

উপরে বর্ণিত হাদীসখানায় তিনটি বিষয় লক্ষণীয়-
(১) দীর্ঘদিন পর মায়ের কবর সনাক্ত করা।
(২) সাহাবীগণসহ কবরের পার্শ্বে বসে যিয়ারত করা ও কান্নাকাটি করা এবং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক যিয়ারত করার অনুমতি প্রদান।
(৩) মায়ের জন্য মাগফেরাত কামনার প্রার্থনা করতে বারণ করা।

সুদীর্ঘ সময় পর  নবী করীম [ﷺ] কর্তৃক মরুভূমির মধ্যে মায়ের কবর অনুসন্ধান করে বের করা খুবই দুরূহ ব্যাপার ছিল। ইলমে গায়েব না হলে সম্ভব হতো না।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো - সকলে সমবেত হয়ে কবরের পাশে বসে যিয়ারত করার অনুমতি দান। এটা বৈধ এবং নবী করীম [ﷺ]-এঁর সুন্নাত। বিবি আমেনার (رضي الله  عنهما) কবর যিয়ারত করার অনুমতি দানের ঘটনার দ্বারা পরিষ্কার  ভাবে প্রমাণিত হলো  যে, তিনি মু’মিনা ছিলেন। কেননা, কাফেরের কবর যিয়ারত করা জায়েজ নয়।

তৃতীয় বিষয়টি হলো মাগফেরাত প্রার্থনার অনুমতি না দেওয়ার কারণ কি? জবাব হলো  - বিবি আমেনা (رضي  الله  عنها) গুনাহগার ছিলেন না- সুতরাং মাগফিরাত কামনা করা  নিরর্থক। উল্লেখ্য যে, নবী করীম [ﷺ] নিজের জন্য  এবং পিতা-মাতার মাগফিরাতের জন্য পরবর্তীতে যে দোয়া করতেন-  তা ছিল  উম্মতের শিক্ষার উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে মাগফেরাতের জন্য দোয়া করার দ্বারা  আরো  প্রমাণিত  হয় যে, তাঁরা মু’মিন ছিলেন। মাগফিরাতের ৩টি অর্থ ৪র্থ অধ্যায়ে বিশ্লেষণ  করা হয়েছে। তদুপরি তিনি ছিলেন  নবীজীর মা। তাঁর মর্যাদা অন্যান্য মায়ের মত নয়। আল্লামা মানাভী,  শাইখ  আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله عنهما) প্রমুখ মোহাদ্দেসগণ বর্ণিত হাদীসের এই অর্থ গ্রহণ করেছেন।

কিন্তু ওহাবীপন্থী আলেমগণ হাদীসে বর্ণিত "যিয়ারতের অনুমতি প্রদানের"  অংশটির গুরুত্ব না দিয়ে দ্বিতীয় বিষয়টির অপব্যখ্যা করে বলেছেন যে, "যেহেতু আল্লাহ্‌ তায়ালা মাগফিরাত পার্থনা করতে নিষেধ করেছেন, সেহেতু  বুঝা যায়  যে,  নবী  করীম  [ﷺ] মাতা-পিতা মু’মিন ছিলেন না।" নাউযু বিল্লাহ। হাদীসের প্রথম অংশটি পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে, যার কবর যিয়ারত করা হয়, তিনি কোনদিন কাফের  হতে পারেন না। কেননা কাফেরর কবর যিয়ারত  করা শরিয়তে নাজায়েয। এটাই আহলে সুন্নাতের আকিদা।

উপরে বর্ণিত বিশেষ কারণে ঐ দিন নবীজীর মায়ের জন্য ইসতিগফারের অনুমতি পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া না গেলেও অন্য হাদীসে পরবর্তী সময়ে পিতা-মাতার জন্য   এবং  নিজের   জন্য নবী করীম [ﷺ] নিম্নরূপ দোয়া করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ
اللهم اغفر لى ولوالدى وللمؤمنين يوم يقوم الحساب -
"হে আল্লাহ্‌! তুমি আমাকে, আমার পিতা মাতাকে এবং সকল  মুমিনকে মাগফেরাত করে দিও।" (দোয়ায়ে মাছুরা)। এটা ছিল উম্মতের  তালিমের উদ্দেশ্যে। মাগফিরাতের ব্যাখ্যা ৪র্থ অধ্যায়ে দেখুন।



রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাতা-পিতা জান্নাতী না জাহান্নামী?
🖋খায়রুল হুদা খান

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (ﷺ) এর পিতামাতা নাজাতপ্রাপ্ত- এটাই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা বা বিশ্বাস। ইনশাআল্লাহ, এ নিবন্ধে কুরআন হাদীসের আলোকে রাসূলে পাক (ﷺ) এর সম্মানিত পিতামাতা যে ঈমানদার ছিলেন এবং তাঁরা যে জাহান্নাম থেকে নাজাতপ্রাপ্ত তা আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি যারা বলেন আল্লাহর রাসূলের মাতা-পিতা জাহান্নামী তাদের দলীলগুলো আলোচনা করা হবে এবং তার জবাব প্রদান করা হবে।

নাজাতের পদ্ধতি
ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) কুরআন-হাদীসের দলীল ও মুহাদ্দিসীনে কিরামের মতামতের ভিত্তিতে রাসূলে পাক (ﷺ) এর মাতা-পিতা মুক্তিপ্রাপ্ত এবং জান্নাতী হওয়ার ব্যাপারে তিনটি পন্থা আলোচনা করেছেন।
প্রথম পন্থা : রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতা এমন সময়ে দুনিয়াতে ছিলেন যখন আরবে কোন নবী-রাসূল ছিলেন না, যে সময়কে কুরআন মজীদের ভাষায় ‘ফাতরাতের যুগ’ বলা হয়। এ অবস্থায় কেউ থাকলে আল্লাহ তাআলার বাণী অনুযায়ী তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে না।
দ্বিতীয় পন্থা : রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতা এবং পূর্ব পুরুষগণ ইবরাহীম (عليه السلام) এর অনুসারী হিসেবে ‘হানীফ’ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
তৃতীয় পন্থা : রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতাকে আল্লাহ তাআলা আবার জীবিত করেছিলেন অত:পর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত আবার ইন্তেকাল করেছেন।

ফাতরাতের যুগের হিসেবে নাজাতপ্রাপ্ত
রাসূলে পাক (ﷺ)-এর পিতা-মাতা ফাতরাতের যুগ তথা নবী-রাসূল আগমনের মধ্যবর্তী যুগের হিসেবে নাজাতপ্রাপ্ত। কারণ তারা কোন নবী-রাসূল পাননি। এ মতের পক্ষে ইসলামী শাস্ত্রবিদগণ দলীল পেশ করেন যে, আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন-
-‘আল্লাহপাক কোন জাতিকে ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মাঝে কোনো রাসূল প্রেরণ না করেন।’
অন্য আয়াতে এসেছে-
‘আমি কাউকে শাস্তি দেই না যতক্ষণ না কোনো রাসূল প্রেরণ করেছি।’
রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতার সময়ে কিংবা এর নিকটবর্তী অতীতে আরবে কোন নবী-রাসূল আগমন করেননি। তাছাড়া যদিও ঈসা (عليه السلام) রাসূলে পাক (ﷺ) এর পূর্বে সবচেয়ে নিকটবর্তী নবী ছিলেন কিন্তু তিনি কেবলমাত্র বনী ইসরাঈলের জন্য নবী ছিলেন, আরবের জন্য নয়। সুতরাং তাঁর শরীআত আরববাসীর জন্য প্রযোজ্য নয় এবং সে দাওয়াতও তাদের কাছে পৌঁছেনি। সুতরাং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা অনুযায়ী সেই সময়ের মানুষকে আল্লাহ পাক শাস্তি দেবেন না। এ হিসেবে রাসূল (ﷺ)-এর পিতা-মাতাও নাজাতপ্রাপ্ত।
কেউ কেউ বলেন, আহলে ফাতরাত তথা নবী-রাসূল আসেননি এমন গোত্রের লোকদের আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন পরীক্ষা করবেন। এ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবেন তারা জান্নাতী হবেন এবং যারা উত্তীর্ণ হবেন না তারা জাহান্নামী হবেন। এ ব্যাপারে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন,
-‘এ ক্ষেত্রে প্রবল ধারণা করা যায় যে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতা আল্লাহর আনুগত্যেও ভিত্তিতে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন।’ ফলে তারা জান্নাতী হবেন।
ইমাম তাবারী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে তাবারীতে বর্ণনা করেন, কুরআন কারীমের আয়াত ‘আপনার প্রতিপালক আপনাকে দিতে থাকবেন যতক্ষণ না আপনি সন্তুষ্ট হবেন’ এর ব্যাখ্যায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, ‘রাসূলে পাক (ﷺ) এর সন্তুষ্টির মধ্যে অন্যতম সন্তুষ্টি হবে যাতে তাঁর কোনো পরিবার-পরিজন জাহান্নামে না যান।’ অন্য হাদীসে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে দাবি করে যে আমার পরিবার-পরিজনের জন্য আমার শাফাআত কাজে আসবে না?’ কুরআন কারীমের পূর্বোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা এবং রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদীসের ভিত্তিতে অনুধাবন করা যায় যে, রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্য সুপারিশ করবেন এবং আল্লাহ পাক তাঁর দেওয়া ওয়াদা অনুযায়ী তাঁর হাবীবকে সন্তুষ্ট করবেন। আর রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁর পরিবার পরিজনের জন্য সুপারিশ করবেন অথচ তাঁর মা-বাবার জন্য সুপরিশ করবেন না, তা কি ভাবা যায়?



হানীফ সম্প্রদায়ভুক্ত হিসেবে নাজাতপ্রাপ্ত
দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা মাতা ‘হানীফ’ দলভুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ তাঁরা হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) এর ধর্মের উপর ছিলেন এবং তাঁদের কাছ থেকে কোন শিরক সংঘটিত হয়েছে বলে কোনো প্রমাণ নেই।
উলামায়ে কিরামের বড় এক অংশের অভিমত এটি। এক্ষেত্রে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) কুরআন মজীদ থেকে দলীল পেশ করে বলেন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন-
-‘আপনি যখন নামাযে দন্ডায়মান হন তখন যিনি দেখেন তিনি দেখেছেন সিজদাকারীদের মধ্যে আপনার স্থানান্তর’। এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন, এখানে আল্লাহর রাসূলের নূর মুবারাক স্থানান্তরিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যাদের মাধ্যমে রাসূলে পাক (ﷺ) এর নূর স্থানান্তরিত হয়েছে তাঁদের আল্লাহ পাক ‘সিজদাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, আদম (عليه السلام) থেকে হযরত আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সকল পূর্বপুরুষই মুমিন ছিলেন (যাদের মাধ্যমে তিনি স্থানান্তরিত হয়েছেন)।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
‘আল্লাহ তাআলা আমাকে সর্বদা পুত:পবিত্র পৃষ্ঠদেশ থেকে পবিত্র গর্ভেই স্থানান্তরিত করেছেন। পবিত্র পরিচ্ছন্ন দু’টি বংশ ধারার উভয়টির মধ্যেই আমি উত্তম বংশের অন্তর্ভুক্ত।’
হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি প্রতিটি যুগে মানবজাতির সর্বস্তরের সর্বশ্রেষ্ঠ বংশে আবির্ভূত হয়েছি।’ (বুখারী)

রাসূলে পাক (ﷺ)-এর বংশধারা জাহিলী যুগের ব্যভিচার থেকে পুত:পবিত্র
রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘জাহিলী যুগে ‘সিফাহ’ নামে যেসব অপকর্ম চলত সেগুলোর কোনোটার মাধ্যমেই আমি জন্মগ্রহণ করিনি।’ (বায়হাকী)
সিফাহ শব্দটির অর্থ হল ব্যভিচার। আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারযুগে এটা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। কিন্তু রাসূল (ﷺ)-এর পুর্বপুরুষ ছিলেন যারা তারা সকলেই এ থেকে পবিত্র ছিলেন সর্বদাই।
হাদীস শরীফে আছে
-হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘হযরত আদম (আ) এর যুগ থেকে পিতা-মাতার মাধ্যমে আমার জন্ম পর্যন্ত পবিত্র নিকাহের মাধ্যমেই আমি এসেছি। অপবিত্র ‘সিফাহ’ এর মাধ্যমে নয়। আমার পিতৃপুরুষগণ আজীবন সিফাহ (ব্যভিচার) থেকে পবিত্র ছিলেন।’ (তাবারানী)
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
-‘আমি সর্বদাই ইসলামী নিকাহের মত বিবাহ সম্পর্কের মাধ্যমে এসেছি এমনকি শেষ পর্যন্ত আমার মাতা-পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছি।’

পুর্বপুরুষ কেউই মুশরিক ছিলেন না
উপরোক্ত হাদীসগুলো এবং এরকম সমার্থক আরো বহু হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতা থেকে আদম (عليه السلام) পর্যন্ত সমস্ত বংশধারা পবিত্র ছিলো। আর যারা পবিত্র তারা মুশরিক হতে পারেন না। যেহেতু আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, ‘নিঃসন্দেহে মুশরিকরা অপবিত্র।’

তাছাড়া উপরোক্ত হাদীসগুলোতে দেখা যায়, রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁর বংশকে শ্রেষ্ঠ বংশ বলেছেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষদের শ্রেষ্ঠ মানুষ বলেছেন। যদি তারা মুশরিক হতেন তাহলে তাঁদের শ্রেষ্ঠ বলা যেত না।
অন্য হাদীসে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
-‘আমি সত্য নবী এবং আমি মিথ্যাবাদী নই। আর আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।’ এ হাদীসে দেখা যায় রাসূলে পাক (ﷺ) নিজের দাদা আবদুল মুত্তালিবকে নিয়ে গর্ববোধ করেছেন। যদি তাঁর দাদা মুশরকি হতেন তাহলে তিনি তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন না।
ইবরাহীম (عليه السلام) যখন ইসমাইল (عليه السلام) কে নিয়ে কা’বা শরীফ নির্মান শেষ করেন তখন তাঁরা যে দু’আ করেন তার একটি অংশ ছিল-
-‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুজনকে তোমার অনুগত (মুসলিম) বানাও, আর আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকেও এক দল লোককে তোমার অনুগত (মুসলিম) বানাও।’ (সূরা বাকারা)
এ দু’আর পরবর্তী অংশে তিনি উল্লেখ করেন-
-‘হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের মধ্য থেকে তাদের মাঝে একজন রাসূল প্রেরণ করো।’
এখানে প্রথম দু’আ থেকে প্রমাণিত হয়, ইবরাহীম (عليه السلام) এবং ইসমাইল (عليه السلام) এর বংশে সর্বযুগে একদল লোক ‘উম্মতে মুসলিমাহ’ থাকবেন এবং পরবর্তী দু’আয় শব্দকে কেউ কেউ উম্মতে মুসলিমাহ এর দিকে সম্পর্কিত কওে বলেন, থেকে প্রমাণিত হয়, রাসূল যিনি আসবেন তিনি সেই ‘উম্মতে মুসলিমাহ’র মধ্য থেকে আসবেন। সুতরাং ইবরাহীম (عليه السلام) এর দু’আর ফসল হলেন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এবং তাঁরই দু’আ অনুযায়ী তাঁর পিতা-মাতা এবং পূর্ব পুরুষগণ সেই ‘উম্মতে মুসলিমাহ’র অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া সূরা ইবরাহীমে উল্লেখিত হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) অপর দু’আ
-‘হে প্রতিপালক! আমাকে নামাযী বানাও এবং আমার বংশধরদের থেকেও এক দল লোককে নামাযী বানাও’। এ আয়াতে ‘একদল লোক’ দ্বারা প্রমাণিত হয় কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগে ইবরাহীম (عليه السلام) এর বংশে নামাযী এবং ঈমানদার একদল লোক বেঁচে ছিলেন এবং থাকবেন। আর একথা প্রণিধানযোগ্য যে, কোনো যুগে ইবরাহীম (عليه السلام) এর বংশধর একদল মানুষ ঈমানদার থাকবেন অথচ সেই রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতা সেই ঈমানদার দলের অন্তর্ভূক্ত হবেন না, সে কথা চিন্তাও করা যায় না।

অন্য হাদীসে রাসূলে পাক (ﷺ) গর্ববোধ করে বলেছেন, ‘আমি দুই কুরবানীকৃত ব্যক্তির সন্তান’। আর এরা হলেন তাঁর পূর্বপুরুষ হযরত ইসমাইল (عليه السلام) এবং তাঁর স্বীয় পিতা হযরত আবদুল্লাহ (رضي الله عنه)। এ হাদীসে দেখা যায় রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁর পিতাকে নিয়ে গর্ববোধ করেছেন। যদি তিনি মুশরিক হতেন, তাহলে কুরবানীর জন্য আল্লাহ পাক তাঁকে মনোনীত করতেন না এবং তাকে নিয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) গৌরববোধ করে বাণী প্রদান করতেন না।

আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ‘আবদুল্লাহ’ নামের অর্থ হল ‘আল্লাহর বান্দা’ আর ‘আমিনা’ নামের অর্থ হল বিশ্বস্ত, আমানতদার, আল্লাহর উপর ভরসাকারীনী, সংরক্ষিতা। সুবাহানাল্লাহ! নাম থেকেই তাদের ইমানদার হওয়ার পরিচয় পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, যারা এ নাম রেখেছেন তারাও নিশ্চয়ই ঈমানদার ছিলেন। তা না হলে এমন পবিত্র নাম কিভাবে রাখলেন? অথচ সে সময় তো মূর্তির নামের সাথে মিলিয়ে ‘আবদুল ওজ্জা’ ‘আবদুল লাত’ ইত্যাদি নাম রাখা হতো।

আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে ঈমান আনয়নের ভিত্তিতে নাজাতপ্রাপ্ত
তৃতীয় পন্থা হচ্ছে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁর পিতা-মাতাকে আল্লাহ পাক জীবিত করেছিলেন এবং তাঁরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর ঈমান আনয়ন করেছিলেন। মুহাদ্দিসীনে কিরামের বড় এক অংশ এই মতের প্রবক্তা। তাঁদের মধ্যে হাফিয ইবনে শাহিন, হাফিয আবু বকর আল বাগদাদী, আবুল কাসিম আস সুহায়লী, ইমাম আল কুরতুবী, ইমাম তাবারানী, ইবনে আসাকির (رحمة الله) প্রমুখ।
এ সম্পর্কে হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) আমাদের নিয়ে হজ্জ আদায় করলেন। অতপর তিনি আমাকে নিয়ে ‘আকাবায়ে হুযুন’ এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এসময় তিনি অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলেন। তিনি সেখানে অবতরণ করলেন এবং আমার কাছ থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য চলে গেলেন। যখন তিনি ফিরে আসলেন তখন তিনি ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল এবং আনন্দিত। আমি তাঁর কাছে এর কারণ জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘আমি আমার মায়ের কবরের কাছে গেলাম এবং আল্লাহর কাছে আরজ করলাম আমার মাকে জীবিত করে দেওয়ার জন্য। আল্লাহ পাক তাঁকে জীবিত করে দিলেন, তিনি আমার উপর ঈমান আনলেন এবং আবার মৃত্যুবরণ করলেন।’
অন্য হাদীসে আয়িশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) আল্লাহর কাছে আরজ করলেন তাঁর মা-বাবাকে জীবিত করার জন্য। আল্লাহ পাক তাদের জীবিত করে দিলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর ঈমান আনলেন এবং আবার মৃত্যুবরণ করলেন।
মুহাদ্দিসীনে কেরামের কেউ কেউ এ হাদীসের সনদ সম্পর্কে বলেন, এ হাদীসটি যয়ীফ। কিন্তু এ হাদীসের বর্ণনার আধিক্যের কারণে এটি ‘হাসান’ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
এখন কেউ যদি প্রশ্ন করেন, মৃত ব্যক্তিকে কি এভাবে জীবিত করা সম্ভব এবং মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ঈমানের স্বাক্ষী কি গ্রহণযোগ্য? এর জবাবে ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন যে, কুরআন মজীদে বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির হত্যাকারীর অনুসন্ধানে গরু জবাইয়ের দীর্ঘ আলোচনা এসছে সে ঘটনায় মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা হয়েছিল এবং সে তার হত্যাকারীর ব্যপারে স্বাক্ষী প্রদান করেছিল। তাছাড়া ঈসা (عليه السلام) আল্লাহর হুকুমে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেন এবং আমাদের নবী (ﷺ)ও আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করেছিলেন। এ রকম বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে।
ফতোয়ায়ে শামী প্রণেতা আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (رحمة الله) বলেন, তোমরা কি একথা জানো না যে, আল্লাহ তা’আলা রাসূলে করীম (ﷺ) কে ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি নিজ পিতা-মাতাকে পুনরায় জীবিত করেছেন এবং তারাও রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াত এর উপর ঈমান এনেছেন। (রদ্দুল মুহতার শরহে দুররুল মুখতার)
ইমাম আবদুল বাকী যুরকানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, রাসূলে করীম (ﷺ)-এর পিতা-মাতা কখনোই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। তাঁরা কুফর ও মুর্তিপুজা থেকে সর্বদাই পবিত্র ছিলেন। (যুরকানী, শরহে মাওয়াহিবে লাদুনিয়্যাহ, ১ম খ-)
বিখ্যাত মুহাক্কিক ও মুহাদ্দিস শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) লিখেছেন, ‘উলামায়ে কিরাম একথাই প্রমাণসহ প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিতামাতা, উর্ধ্বতন পিতা-মাতা ও পিতা-মাতামহগণ এমনকি আদম (عليه السلام) পর্যন্ত তাঁর সমগ্র পিতৃপুরুষই (রাসূলের বংশের সবাই) সত্যধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। (আশি’আতুল লুমআত : ১ম খ-)
ইমাম কালবী (رحمة الله) বলেন, ‘আমি রাসূলে করীম (ﷺ)-এর উর্ধ্বতন পাঁচশত বছরের মাতাগণের জীবনী লিখেছি। কোনো যুগেই তাদের মধ্যে জাহিলিয়াতের কোনো অপবিত্রতা ও চরিত্রহীনতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। (কিতাবুশ শিফা)
এখানে আরেকটি হাদীস লক্ষ্যণীয় যে, সহীহ বুখারী শরীফে এসেছে, আবূ লাহাব মারা যাওয়ার পর একদিন তার পরিবারের কিছু লোক তাকে স্বপ্নে খুবই খারাপ অবস্থায় দেখল। প্রশ্ন করা হলো, তুমি কি অবস্থায় আছো? সে বলল, তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে আসার পর আমার ভাগ্যে ভাল কিছু নসীব হয়নি। তবে প্রতি সোমবার আমার (শাহাদাত) আঙ্গুলি হতে পানি পাওয়া যায়। কেননা (এর দ্বারা) আমি আমার দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম। (সহীহ বুখারী)
যেখানে আবু লাহাবের মত কাফির রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্মের সংবাদে খুশি হয়ে দাসী সুয়াইবাকে মুক্ত করে দেওয়ায় প্রতি সপ্তাহে একদিন সোমবার আল্লাহ তার শাস্তি হালকা করে দিয়েছেন তাহলে যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জন্ম দিয়েছেন তাঁদের সম্মান আল্লাহ কি কম দিবেন নাকি বেশি দিবেন? তারা কি জাহান্নামী হতে পারেন? (নাউযুবিল্লাহ)
পরিশেষে বলা যায়, আল্লাহ পাক কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াতে এবং রাসূলে পাক (ﷺ) বিভিন্ন হাদীসে মাতা-পিতার সম্মান এবং তাঁদের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা আলোচনা করেছেন। সে সম্মান এবং দায়িত্ববোধ থেকেই প্রত্যেকটি মানুষই চায় তার পিতা-মাতা জান্নাতী হোক। সেক্ষেত্রে স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি রাসূলে পাক (ﷺ)-এর সম্মান ও দায়িত্ববোধ বহুগুণ বেশি ছিল। তাঁদের প্রতি সে দায়িত্ববোধের সম্মানেই আল্লাহপাক তাঁর হাবীবকে নির্দেশ দিয়েছেন
-‘হে নবী! আপনি বলুন, হে আমার রব, আমার পিতা-মাতা উভয়কে এমনভাবে রহম করো যেরূপ ছোটবেলা তারা আমাকে লালন পালন করেছেন’।
যদি তাঁরা ঈমানদার না হতেন তাহলে আল্লাহ এরূপ দোয়ার নির্দেশ দিতেন না।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পিতা-মাতাকে জাহান্নামী বলা তাঁকে কষ্ট দেয়ার নামান্তর
আল্লাহর রাসূলের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ পাক নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহর রাসূলের সম্মানহানী হয় এমন কোন কথা বলা কিংবা কোনো কাজ করা ঈমান বিনষ্টের কারণ হয়ে যাবে। আল্লাহর রাসূলের সম্মানিত পিতামাতাকে জাহান্নামী বলা প্রকারান্তরে তাঁর সম্মানহানী ও তাঁকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। যেমন মালিকী মাযহাবের অন্যতম ইমাম কাযী আবূ বকর ইবনে আরাবী (رحمة الله) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন যে বলে রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতা জাহান্নামী? তিনি জবাবে বলেন,
-‘এই ব্যক্তি মাল’উন (অভিশপ্ত)। কেননা আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ পাক তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশাপ দেন,’ আর তাঁকে এর চেয়ে বড় কষ্ট কিভাবে দেওয়া যেতে পারে যে তাঁকে বলা হবে তাঁর পিতা জাহান্নামী।’’
আল্লামা আলুসী (رحمة الله) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পিতামাতার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে আমি তার কুফরের আশংকা করি।’ (তাফসীরে রূহুল মা‘আনী ১ম খ-)

যারা রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতামাতা নাজাতপ্রাপ্ত নন বলেন তাদের দলীল ও জবাব
যারা রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতামাতাকে জাহান্নামী বলেন তারা দুটি দলীল পেশ করে থাকেন।

প্রথম দলীল ও এর জবাব
বিরোধীদের প্রথম দলীল হলো-
-‘একদিন এক সাহাবী রাসূলে পাক (ﷺ) এর কাছে এসে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমার পিতা কোথায়? রাসূলে পাক (ﷺ) জবাব দিলেন, তোমার পিতা জাহান্নামে। সে ব্যক্তি নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁকে ডেকে বললেন, নিশ্চয়ই আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে।’

উপরোক্ত দলীলের জবাব উলামায়ে কিরামের বক্তব্য নিম্নরূপঃ

হাদীসটি খবরে ওয়াহিদ, যা কুরআনের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়
ইসলামী শাস্ত্রবিদগণ প্রথম হাদীসের জবাব দেন এভাবে যে, প্রথম হাদীসটি যদিও সহীহ কিন্তু এটি ‘আহাদ হাদীস’। আর উসূলে হাদীসের পরিভাষায় ‘আহাদ হাদীস’ দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করা যায় না, যদি তার বিপরীতে কুরআন মজীদের কোনো আয়াত পাওয়া যায়। যেহেতু আল্লাহর রাসূলের পূর্বপুরুষদের ঈমান এবং পবিত্রতা সম্পর্কে কুরআন মজীদ এবং বিভিন্ন হাদীসে বর্ণনা রয়েছে সুতরাং এ হাদীসের অর্থ এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।

ঈমান আনয়নের হাদীস দ্বারা অন্য সকল হাদীস মানসূখ
ইবনে আবিদীনসহ ইসলামী শাস্ত্রবিদগণ উল্লেখ করেন যে, এক হাদীসে এসেছে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতাকে আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবের আকাক্সক্ষার কারণে বিদায় হজ্জের সময় জীবিত করেছেন এবং তাঁরা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। সুতরাং প্রথম হাদীসে যদিও আল্লাহর রাসূলের পিতাকে জাহান্নামে বলা হয়েছে সেই ঘটনা ছিল আগের এবং তাঁদের ঈমান আনয়নের ঘটনা বিদায় হজ্জের সময়ের অর্থাৎ রাসূলে পাক (ﷺ) এর ইন্তেকালের মাত্র তিন মাস আগের, যা পূর্ববর্তী হাদীসের হুকুমকে রহিত করে দিয়েছে।

আরবী ‘আবুন‘ শব্দ দ্বারা চাচাকেও বুঝানো হয়
ইসলামী শাস্ত্রবিদগণ উল্লেখ করেন যে, উল্লেখিত হাদীসে ‘আমার পিতা’ বলে রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁর চাচা আবু তালিবকে বুঝিয়েছেন। কেননা কুরআন কারীমে বিভিন্ন স্থানে পিতা বলে চাচাকে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া মক্কা শরীফের মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে ‘আবূ তালিবের ছেলে’ বলে সম্বোধন করত, যেহেতু রাসূলে পাক (ﷺ) আবূ তালিবের লালন-পালনে প্রতিপালিত হয়েছিলেন। যেমন তারা তাঁর চাচা আবূ তালিবকে এসে বলেছিল-
‘তোমার ছেলেকে বলো সে যেন আমাদের মূর্তিদের নিন্দা না করে।’ আর একথা সুপ্রসিদ্ধ যে আবূ তালিব কুফুরীর উপর মৃত্যুবরণ করেছেন।
সুতরাং এ হাদীসে রাসূলে পাক (ﷺ) ‘আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে’ দ্বারা তাঁর চাচা আবু তালিবের কথা বুঝিয়েছেন।

দ্বিতীয় দলীল ও এর জবাব
বিরোধীদের দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে,
রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আমার মাতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। তখন আমি তাঁর কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।’
এর জবাবে মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, এ হাদীসেই বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহপাক রাসূলে পাক (ﷺ) কে মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। যদি তিনি মুশরিক হতেন তাহলে আল্লাহ পাক তাঁকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দিতেন না। কারণ কুরআনে কারীমে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন,
‘আর তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে কখনও তার জানাযার নামায পড়বেন না এবং তার কবরে দাঁড়াবেন না। তাঁরা তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি কুফুরী করেছে এবং নাফরমান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে।’
এ আয়াতে দেখা যায়, যারা কুফুরীর উপর মারা যায় তাদের কবরে দাঁড়ানোকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন, অথচ আল্লাহ পাক রাসূল (ﷺ) কে তাঁর মাতার কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। যদি তিনি মুশরিক হতেন তাহলে তাঁকে এ অনুমতি দেওয়া হতো না।
তাছাড়া দ্বিতীয় হাদীসের ক্ষেত্রে এ কথাও প্রযোজ্য যে, ক্ষমা প্রার্থনার নিষেধাজ্ঞা ঈমান আনয়নের হাদীস দ্বারা মানসুখ।
আল্লাহ পাক আমাদের তাঁর হাবীবের প্রতি যথাযথ ঈমান আনার তাওফীক দান করুন এবং তাঁর সম্মানহানী হয় এমন ঈমানবিধ্বংসী মন্তব্য ও বিশ্বাস থেকে হিফাযত করুন। আমীন।


প্রিয় নবীর পিতা-মাতা কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন?

জিজ্ঞাসা–১৮৪: আসসালামু আলাইকুম। মুহাতারাম, আমার প্রশ্নটি হল প্রিয় নবী  কুরআন মাজিদ নাজিল হওয়ার পূর্বে তিনি কোন কিতাব বা রাসুলের অনুসারী ছিলেন? তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ও মাতা আমিনা কি মুশরিক অবস্থায় ইন্তেকাল করেছিলেন নাকি ইব্রাহীম (عليه السلام) এর উপর বিশ্বাস এনেছিলেন? জানালে খুব উপকৃত হতাম।–মোহাম্মাদ ফুরকানুল হক: sabbirshanto87@gmail.com

জবাব:وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

পবিত্র কোরআন এ কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, হযরত ইব্রাহিমের পরে যত নবী রাসূল এসেছেন, তাঁরা সবাই হযরত ইব্রাহিমের পবিত্র বংশধর থেকেই এসেছেন। সব রাসূল এমনকি আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পূর্বে ইব্রাহিম (عليه السلام)-এর হানিফ ধর্মের (একেশ্বরবাদ) অনুসারী ছিলেন। যেমন দেখুন, পবিত্র কোরআনের আয়াত–ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, আপনি ইব্রাহিমের ধর্ম অনুসরণ করুন।’ (সূরা নহল  ১২৩)

ইমাম রাজী রহ. বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মা-বাবা মুশরিক বা পৌত্তলিক ছিলেন না। তাঁরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন এবং হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام)-এর ধর্ম ‘হানিফ’ ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁরা মুর্তিপূজা করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই। তাঁদের নামও প্রমাণ করে তারা মুশরিক ছিলেন না।

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহ. এ বিষয়ে আলাদা ৪টি পুস্তিকা লিখেছেন। ৯টি প্রবন্ধ লিখেছেন। যাতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতা মাতা জান্নাতী। জাহান্নামী নয়। তাঁরা মুশরিক বা পৌত্তলিক ছিলেন না। তাঁরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন ।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী



রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পিতা-মাতা মুমিন ইমানদার মুসলিম ছিলেন।
লেখক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

অত্যন্ত আফসোস ও দু:খজনক ব্যাপার না বললেই নয় বিধর্মীরা যেখানে ইসলাম নিয়ে তামাশা আর বিরোধীতা করছে তেমনি কিছু নামধারী মুসলিম (ওহাবী,আহলে আহলে হাদিস) প্রচার করছে রাসুল (দুরুদ) এর সম্মানিত পিতা মাতা নাকি ইসলাম কবুল করেন নি তাই ইমান ছাড়া দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন তাই জান্নাতী নয়। (নাউজুবিল্লাহ)

এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়ঃ

১) তারা মাজুর। তাই তাদের উপর জাহান্নামের শাস্তি আসবে না।

مَّنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا [١٧:١٥]

যে কেউ সৎপথে চলে,তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়,তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না। [সূরা ইসরা-১৫]

যেহেতু ঈসা আঃ এর পর রাসূল ﷺ এর আগমনের পূর্ব মুহুর্তে কোন নবী ছিলেন না। তাই এ সময়ে যারা ইন্তেকাল করেছেন তারা জাহান্নামী হবেন না।

২)

কিয়ামতের ময়দানে তাদের পরীক্ষা করা হবে। সঠিক জবাব দিতে পারলে জান্নাতী হবেন। আর সঠিক জবাব দিতে না পারলে জাহান্নামী হবেন।

৩)

রাসূল ﷺ নবুওয়ত পাবার পর তাদের উভয়কে আবার জিন্দা করা হয়। তখন তারা উভয়ে ঈমান আনয়ন করেন। তারপর আবার ইন্তেকাল করেন।

৪)

ইমাম রাজী (رحمة الله) বলেন, রাসূল ﷺ এর পিতা মাতা মূলত মিল্লাতে ইবরাহীমীর উপর ইন্তেকাল করেছেন। তারা মুর্তিপূজা করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই। তাই তারা জান্নাতী হবেন। তাদের নামও প্রমাণ করে তারা মুশরিক ছিলেন না।

৫) যারা হাদিস এর ব্যাখ্যা না জেনে, না মেনে, ইমাম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুজাদ্দিদ, মুজতাহিদগণের ব্যাখ্যা না মেনে দুই-একটা হাদিস পড়েই ফতোয়া লাগায় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পিতা-মাতা জাহান্নামী।
তাদের জন্য বড়ই আফসোস লাগে। কয়েকটা হাদিসে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় সত্য যা আমি পড়েছি কিন্তু আমি তাও পড়েছি যিনি ৩ লক্ষ হাদিস মুখস্ত জানতেন, যিনি ইলমে হাদিস, ইলমে তফসীর, ইলমে ফিকাহ এর বিশেষ জ্ঞানী আলেম ও ইমাম ছিলেন, যিনি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ৭০ বার স্বপ্নে দেখেছিলেন - তিনি সহ এমন অনেক অগনিত ইমাম এ ব্যাপারে একমত যে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিতা-মাতা জান্নাতী।

কোন মানবেন? ৩-৪ টা সহিহ হাদিসের আলেমকে নাকি ৩-৪ লক্ষ হাদিসের হাফেজদের ফতোয়া? যদি বলেন তারা জানতেন না এটা তো নেশাগ্রস্ত কথাবার্তা হবে। আর যদি বলেন তারা সত্য গোপণ করে পক্ষপাতীত্ব করেছেন তাহলে তাদের হক ইমাম বললে তো অন্যায় হবে। সিদ্ধান্ত আপনার।

রাসূল ﷺ কে কষ্ট দেয়া হারাম। এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا [٣٣:٥٧

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। {সূরা আহযাব-৫৭}

আর রাসূল ﷺ মাতা পিতাকে জাহান্নামী বললে কি রাসূল ﷺ খোশ হবেন? এতে কি রাসূল ﷺ কষ্ট পাবেন না। বরং অসহনীয় কষ্টের বিষয় পিতামাতাকে জাহান্নামী বলায়। তাই একাজটি করা জায়েজ নয়। এ আলোচনা জায়েজ নয়।

❏ ওয়া তাকাল্লু বাকা ফিস-সাজেদিন।
অর্থ :- হে নবী! আমি আপনাকে সিজদাকারীদের পৃষ্ঠের মাধ্যেমে (ওইরসে) স্থানান্তরিত করেছি।
তথ্যসূত্রঃ━
আল-কুরআন

❏ এ আয়াত থেকে প্রমানিত হয়েছে যে আদম عليه السلام থেকে হযরত আব্দুল্লাহ رضي الله عنه পর্যন্ত (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) সকল পুর্বপুরুষই মুমিন ছিলেন (যাদের পৃষ্ঠের মাধ্যমে তিনি স্থানান্তরিত হয়েছিলেন)।
তথ্যসূত্রঃ━
তফসিরে - মাদারিক

❏ ইন্নামাল মুশরিকুনা নাজাসুন।
অর্থ : নিশ:ন্দেহে মুশরিকরা অপবিত্র।
তথ্যসূত্রঃ━
(আল-কুরআন)

❏ রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন," আল্লাহ তায়ালা আমাকে সর্বদা পুত: পবিত্র পৃষ্ঠদেশ থেকে পবিত্র গর্ভেই স্থানান্তরিত করেছেন। পবিত্র পরিচ্ছন্ন ২টি বংশীয় ধারার উভয়টির মধ্যেই আমি উত্তম বংশের অন্তর্ভুক্ত।
তথ্যসূত্রঃ━
খাসাইসে-ই-কুবরা

❏ তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট অভিজাত ব্যক্তিবর্গ থেকে এক মহান রাসুল তশরিফ এনেছেন।
তথ্যসূত্রঃ━
আত-তওবা ১২৮ নং এর ব্যখায় -
● তফসিরে কাঞ্জুল ইমান
● তফসিরে নঈমী
● খাসাইসে-ই-কুবরা

❏ হাদিস : আমি সর্বদা পবিত্র পৃষ্ঠসমুহ থেকে পবিত্র মাতৃগর্ভসমুহে স্থানান্তরিত হয়ে ভু-পৃষ্ঠে আবির্ভুত হয়েছি।
তথ্যসূত্রঃ━
দালা- ইলুন্নবুয়্যত

❏ আমি প্রতিটি যুগে মানবজাতির সর্বস্থরের সর্বশ্রেষ্ঠ বংশে আবির্ভুত হয়েছি।
তথ্যসূত্রঃ━
বুখারী : সিফাতুন্নবী ﷺ অধ্যায়
সর্বশ্রেষ্ঠ বংশ তাও কি আবার মুশরিক এও কি সম্ভব??

❏ আল্লাহ তায়ালা ধারাবাহিকভাবে পবিত্র  পৃষ্ঠদেশ ও পবিত্র গর্ভে স্থানান্তরিত করে ভু-পৃষ্ঠে আমার বরকতয় আবির্ভাব ঘটিয়েছেন।
তথ্যসূত্রঃ━
ইমাম কাজী আয়াজرحمة الله عليه : কিতাবুশ শিফা

❏ " জাহেলী যুগে 'সিফাহ' নামে যেসব অপকর্ম চলত সেগুলোর কোনটার মাধ্যমেই আমি জন্মগ্রহণ করিনি।
তথ্যসূত্রঃ━
ইমাম বায়হাকি رحمة الله عليه : বায়হাকী শরীফ

❏ সিফাহ - শব্দটির অর্থ হল শরিয়তের পরিভাষায় ব্যভিচার। আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারযুগে এটা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। কিন্তু রাসুলের বংশ যারা পুর্বপুরুষ ছিলেন তারা এগুলো থেকে পবিত্র ছিলেন সর্বদাই।

❏ হযরত আদমعليه السلام এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত আমার পিতা-মাতাও পুর্বপুরুষগনের  ওরসে পবিত্র নিকাহের মাধ্যমেই আমার আগমন হয়েছে। অপবিত্র 'সিফাহ' এর মাধ্যমে নয়। আমার পিতৃপুরুষগন আজীবন সিফাহ থেকে পবিত্র ছিলেন।
তথ্যসূত্রঃ━
ইমাম তাবারানী رحمة الله عليه : তাবারানী শরীফ

❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসرضي الله عنه বলেন একদিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহুয়ালায়হি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে আরজ করলাম-“ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ) হযরত আদমعليه السلام যখন জান্নাতে ছিলেন, তখন আপনি কোথায় ছিলেন”? হুজুর পুরনুর (ﷺ) মুচকি হাসি দিয়ে বললেন – “আদমের ঔরসে(পৃষ্ঠে)। তারপর হযরত নূহعليه السلام তাঁর ঔরসে আমাকে ধারণ করে নৌকায় আরোহণ করেছিলেন। তারপর হযরত ইব্রাহিমعليه السلام এর পৃষ্ঠ দেশে । তারপর পবিত্র(ঈমান্দার) পিতা মাতাগনের মাধ্যমে আমি পৃথিবীতে আগমন করি। আমার পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে কেহই চরিত্রহীন ছিলনা।
তথ্যসূত্রঃ━
(হাফেজ ইবনে কাসীর رحمة الله عليه ওনার বেদায়া নেহায়া ২য় খণ্ড ২৫ পৃষ্ঠা)

❏ জিব্রাইলعليه السلام সয়ং ইরশাদ করেছেন," আমি সমগ্র জাহান তদন্ত করে দেখলাম,আমি কোথাও রাসুল ﷺ অপেক্ষা উত্তম পুরুষ দেখিনি, তার কোন বংশ বা গোত্র অপেক্ষা উত্তম কোন গোত্র আমার নজরে পড়েনি।
আর বনু হাশীম (রাসুলুল্লাহ ﷺ এর গোত্র)
অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কোন গোত্রই আমি দেখি নি।
তথ্যসূত্রঃ━
তাবারানী শরীফ

❏ আপন বংশ পরিচয় নিজ জবানে ইরশাদ করেছেন," আমি হলাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে আব্দিল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে মান্নাফ। এইভাবে কখনো "আদনান " পর্যন্ত নিজের বংশ সুত্র বর্ননা করেছেন।

❏ হযরত আব্দুল্লাহ' ওনার নামের অর্থ হল :- ""আল্লাহর বান্দা"" আর মাতা আমেনা ওনার নামের আভিধানিক অর্থ হল:- বিশ্বস্ত, আমানতদার,আল্লাহর উপর ভরসা কারীনী,সংরক্ষীতা।সুবাহানাল্লাহ এর দারা কি বুঝলেন?
তাদের নামেই ইমানদার এর পরিচয় পাওয়া যায় শুধু তাই নয় যারা এই নাম রেখেছেন তারাও নিশ্চয় ইমানদার ছিলেন তা না হলে এমন পবিত্র নাম কিভাবে রাখলেন?

❏ আদম عليه السلام এর ঔরস হতে মাতা হাওয়া عليه السلام এর পবিত্র গর্ভে ২০ বার জমজ বাচ্চা জন্ম হয় কিন্তু শীস عليه السلام একক ভাবে জন্মগ্রহণ করেন।কারন তিনি ছিলেন নুরে মুহাম্মদীর ধারক ও বাহক। এই নুরে মুহাম্মদী হযরত শীস عليه السلام এর কপালে উজ্জল ও দিপ্তীমান ছিল।আল্লাহ পাক আদমعليه السلام নুরে মুহাম্মদীর কথা জানিয়ে দিলেন।

আদমعليه السلام এর ওফাতের পর হযরত শিসعليه السلام সমস্ত আদম সন্তানের অবিভাবক হলেন। অত:পর আল্লাহ ওনাকে ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন তার সন্তান " আনুশ عليه السلام " কে অবিভাবক ঘোষনা করেন।
তিনি "আনুশعليه السلام" কে খলিফা নিযুক্ত করে আদমعليه السلام এর উপদেশ অনুসারে তাকে বললেন,"" এ নুর মুবারককে নিয়ে কখনও কোন অবিত্র নারীর সংস্পর্শে যাবে না; বরং সব সময় যেকোন অবস্থাতে এ "নুর" মুবারক এর পবিত্রতা রক্ষা করে চলবে।"
পরবর্তীতে প্রতিটি যুগে এ নুরের বাহকগন বংশানুক্রমে এ "ওসীয়ত" রক্ষা করেছেন।

তথ্যসূত্রঃ━
● মাওয়াহিবে লাদুনিয়াহ
● সিরাতে মুহাম্মদীয়া

তফসিরকারক, ফকীহ ও মুজাদ্দিদগনের অভিমত :-

❏ মুফাসসিরকুল শিরমনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رضي الله عنه বলেন," রাসুলুল্লাহ ﷺ আম্বিয়া কেরাম এর মধ্যে হযরত ইব্রাহীম عليه السلام ও ইসমাইলعليه السلام এর বংশীয় ধারায় সমস্ত সৃষ্টির প্রতি সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।
তথ্যসূত্রঃ━
তফসির-ই-খাজিন ৫ম খন্ড ও মাদারিজুন্নবুয়্যত ২য় খন্ড

❏ আল্লামা জালালুদ্দীন  সুয়ুতী رحمة الله عليه " রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পিতা মাতার ইমান আনা" সম্পর্কে " কিতাবুত তাযীম ওয়াল মিন্নাহ "
শিরোনামের কিতাবে ইতিবাচক বর্ননা দিয়েছেন। তাতে তিনি তাদের ইমান আনার পক্ষে অকাট্য প্রমান তো দিয়েছেনই সেই সাথে তিনি বিরোদ্ধবাসীদের বক্তব্যেরও যথাযত খন্ডন করেছেন।

❏ ইমাম আব্দুল বাকী যুরকানীرحمة الله عليه বর্ননা করেন,"
রাসুলে করিম ﷺ এর পিতামাতা কখনোই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। ওনারা কুফর ও মুর্তিপুজা থেকে সর্বদাই পবিত্র ছিলেন।
তথ্যসূত্রঃ━
যুরকানী শরহে মাওয়াহিবে লাদুনিয়্যাহ ১ম খন্ড

❏ বিখ্যাত হানাফী scholar আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী رحمة الله عليه কে চিনে না এমন কেউ নেই যারা ফতোয়া প্রনয়ন করে। হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ ফতোয়া ""ফতোয়ায়ে শামী"" তারই প্রনিত।

তিনি বলেন,"তোমরা কি একথা জানোনা যে," আল্লাহ তায়ালা রাসুলে করিমﷺ কে ক্ষমতা দিয়েছেন।তিনি নিজ পিতা-মাতাকে পুনরায় জীবিত করেছেন ও তারাও রাসুলুল্লাহ ﷺ এর নবুয়্যাত এর উপর ইমান এনেছেন।
তথ্যসূত্রঃ━
রুদ্দুল মুহতার শরহে দুররে মুখতার

❏ বিখ্যাত শায়খ মুহাক্কিক ও মুহাদ্দিস আব্দুল হক দেহলবীرحمة الله عليه লিখেছেন," ওলামায়ে কেরাম একথাই সপ্রমানসহ প্রতিষ্ঠা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পিতামাতা, উর্ধতন মাতা-মাতামহগন এমনকি আদমعليه السلام পর্যন্ত তার সমগ্র পিতৃপুরুষই (রাসুলের বংশ সবাই) সত্যধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
তথ্যসূত্রঃ━
তার বিখ্যাত কিতাব আশ' আতুল লোমআত : ১ম খন্ড

❏ ইমাম কালবী رحمة الله عليه বলেন," আমি রাসুলে করিম ﷺ এর উর্ধতন পাশত বছরের মাতাগনের জীবনী লিখেছি।
কোন যুগেই তাদের মধ্যে জাহেলিয়াতের কোন অপবিত্রতা ও চরিত্রহীনতার কোন প্রমান পাওয়া যায় নি।
তথ্যসূত্রঃ━
কিতাবুশ -শিফা

❏ নিশ্চই নিশ্চই ভুলবশত:ও রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পরম সম্মানিত পিতামাতা সম্পর্কে মন্দ বলোনা।তাদের সম্পর্কে কোন প্রকার কুটুক্তি করোনা।তাদের প্রতি মন্দ ধারনা পোষন করে রাসুলﷺ এর পবিত্র মনে কষ্ট দিও না।
তথ্যসূত্রঃ━
মা-সাবাতা বিস-সুন্নাহ

❏ "আবু লাহাব মরে যাওয়ার পর একদিন তার পরিবারের কিছু লোক তাকে স্বপ্নে খুবই খানাপ অবস্থায় দেখল।প্রশ্ন করা হল, তুমি কি অবস্থায় সময় কাটাচ্ছ?সে বলল "তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে আসার পর আমার ভাগ্যে ভাল কিছু নসিব হয়নি।তবে আমার (শাহাদাত) আঙ্গুল হতে পানি পাওয়া যায়।কেননা (এর দ্বারা) আমি আমার দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম।
তথ্যসূত্রঃ━
(সহীহ বোখারী,খ:১,পৃ:১৫৩)

যেখানে আবু লাহাবের মত কট্ট্রর কাফির মীলাদুন্নবীর নবীর খুশিতে সুয়াইবা কে মুক্ত করে করায় প্রতি সপ্তাহে একদিন সোমবার আল্লাহ তার শাস্তি হালকা করে দিয়েছেন। তাহলে যারা রাসুলুল্লাহ ﷺ কে জন্ম দিয়েছেন তাদের সম্মান আল্লাহ কি কম দিবেন নাকি বেশি দিবেন?তারা কি জাহান্নামী হতে পারেন? (নাউযুবিল্লাহ)
আল্লাহ ওহাবী সালাফীদের বুঝার তৌফিক দান করুন।
আল্লামা আলুসী رحمة الله عليه বলেন," রাসুলুল্লাহﷺ এর পিতামাতার বিরোদ্ধে কেউ কিছু বললে আমি তার কুফরের আশংকা করি।
তথ্যসূত্রঃ━
তফসিরে রুহুল মা'আনী ১ম খন্ড

❏ মাতা আমেনাرضي الله عنه এর কিছু হৃদয় বিদারক বানী:-

হে আব্দুল্লাহ! দেখ তোমার ঔরসে কি মহারত্ন জন্মগ্রহণ করেছে।এই সে তোমার একমাত্র পুত্র তোমার সাক্ষাতে এসেছে।"

" মাতা আমেনাرضي الله عنه ওনার বিদায়ের মুহুর্তে রাসুলুল্লাহ ﷺ ওনার আম্মাজানকে হারানোর ভয়ে কান্না করছিলেন।তখন তারা আমেনা তার নুরানী অশ্রু আচল দিয়ে মুছে দিচ্ছিলেন।আর বলেছিলেন," ওহে আমার প্রিয় বৎস।সারা দুনিয়ার মৃত্যু হলেও আমার মৃত্যু হবে না। তোমার মত সুসন্তান রেখে যাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।তোমারই কারনে পৃথিবীর পুর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তে আমার বিশ্বজোড়া সুখ্যতি চির উজ্জল থাকবে।
তখন তিনি নিম্নক্ত শ্লোকগুলো পড়ছিলেন:-

হে আমার পুত: পবিত্র বৎস। আল্লাহ তোমার মধ্যে বরকত রাখুন।
হে ঔ ব্যক্তির পুত্র যিনি মৃত্যুর ঘেরাও থেকে মুক্তি পেয়েছেন,
মহা অনুগ্রহ দাতা আল্লাহ তায়ালার সাহায্য-মদদে যেই প্রভাতে লটারী টানা হয়েছিল,যার 'ফিদিয়া' স্বরুপ কোরবানী করা হয়েছিল,
১০০ উচু উচু উট, যা আমি স্বপ্নে দেখেছি তা যদি সঠিক হয়,
তাহলে সৃষ্টির জন্য তোমাকে পয়গাম্বর বানানো হবে,
সমগ্র দুনিয়ার প্রতিই তুমি প্রেরিত হবে।

তুমি সত্য ও দ্বীন ইসলাম সহকারে প্রেরিত হবে,
যা তোমার পুন্যবান পিতৃপুরুষ হযরত ইব্রাহীম عليه السلام এরই ধর্ম।

আমি আল্লাহর শপথ দিয়ে তোমাকে মুর্তি প্রতিমা থেকে নিষেধ করছি স্বগোত্রিয়দের সাথে তুমি যেন সেগুলোর প্রতি বন্ধুত্ব না রাখ।

উপরোক্ত পংতিমালা আবৃতি করার পর তিনি বলতে লাগলেন,"
প্রত্যেক জীবকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং প্রত্যেক নবীনকে প্রবীন হতে হবে আর প্রত্যেক প্রবীনকে (বৃদ্ধকে) মৃত্যুবরন করতে হবে।
এখন আমি মুত্যুবরন করতে যাচ্ছি, তবে আমি সারা দুনিয়ায় চির স্মরনীয় হয়ে থাকব। এতে কোন সন্দেহ নেই যে আমি তোমাকে ভাল অবস্থায় রেখে যাচ্ছি এবং পুত: অবিত্র অবস্থায় প্রসব করেছি। এই কথা বলার পরই তিনি ইন্তেকাল করলেন।

❏ উম্মে আয়মান বলেন:- আমি জ্বীন জাতিকে হযরত আমেনার মৃত্যুতে কান্না করতে শুনেছি। তারা এই কবিতাগুলো পড়তে পড়তে বিলাপ করছিল:-

আমরা পুন্যবতী, আমানদার,সৌন্দর্যের অধিকারিণী,পুত:পবিত্র সতী ও মর্যাদা সম্পন্ন একজন নারীর ইন্তেকালে ক্রন্দন করছি
তিনি আব্দুল্লাহর সহধর্মীনী, জীবন সংগিনী, শান্তশিষ্ট এবং আল্লাহর নবীর আম্মাজান।
তিনি [হযরত মুহাম্মদ ﷺ ] মদীনার মিম্বরের মালিক হবেন।

❏ আল্লাহ রাসুলুল্লাহ ﷺ কে কাফির মুশরিক দের কবরের পাশে দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন,"" আপনি তার কবরের পাশে দাড়াবেন না।কারন তারা আল্লাহ ও রাসুলের সাথে কুফর করেছে এবং ফাসিক অবস্থায় মৃত্যু বরন করেছে।

❏ লক্ষ্য করুন আল্লাহ অমুসলিম ও কাফির মুশরিক দের কবরের পাশে দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন এবং জিয়ারত করা নিষেধ করেছেন। ওনার আব্বাজান আম্মাজান যদি অমুসলিম,কাফির,মুশরিক হতেন তাহলে আল্লাহ জিয়ারতের অনুমতি দিতেন না যেহেতু আল্লাহ নিষেধ করেন নি সেহেতু ওনারা নিশ্চই ইমানদার ছিলেন।

❏ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতীرحمة الله عليه "সুবুলুন্নাজাত" এ বলেছেন,"ইমামগন ও হাফেযগনের একটি বিরাট জামাত এ অভিমত দিয়েছে যে," আল্লাহ রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পিতামাতাকে জীবিত করেছেন অত:পর তারা হুজুরﷺ এর উপর ইমান এনেছেন।"
তথ্যসূত্রঃ━
● ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতীرحمة الله عليه : সুবুলুন্নাজাত
● একই মতামত দিয়েছেন চতুর্দশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ যিনি ১৫০০ কিতাব লিখেছিলেন,
আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজাখান বেরলভীرحمة الله عليه
: কিতাবুল খামীস ও আদদারাজুল মুনীফাহ আবাইশ শরীফা।

❏ শির্ষস্থানীয় Islamic Scholars দের মধ্যে আরো যারা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাতাপিতার ইমানের ব্যপারে মতামত দিয়েছেন তাদের কিছু নাম উল্লেখ করা হল:-

১) ইমাম আবু হাফস ওমর ইবনে আহমদ ইবনে শাহীন (যিনি ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে ৩৩০ টি পুস্তক রচনা করেছিলেন)

২) শায়েখুল মুহাদ্দেসীন আহমদ ইবনে খতীব আল-বাগদাদী
৩) ইমাম আবুল কাসেম আলী ইবনে হাসান ইবনে আসাকির

৪) ইবনে আব্দুল্লাহ সুহায়লী (আর-রওজ গ্রন্থ প্রনেতা)

৫) হাফিজুল হাদিস ইমাম মুহিবুদ্দিন তাবারী (ইমাম নকভীর পর হাদিস শাত্রে যার স্থান)

৬) ইমাম নাসিরুদ্দিন ইবনুল মুনীর (শরফুল মোস্তফা কিতাবের প্রনেতা)
৭) ইবনে সাইয়্যেদুন্নাস ( উয়ুনুল আসর এর প্রনেতা)
৮) হাফেয ইবনে নাসিরুদ্দিন দামেস্কী
৯) শায়েখুল ইসলাম হাফেয ইমাম শিহাবুদ্দিন ইবনে হাজর আসকালানী رحمة الله عليه (ফতহুল বারী শরহে বুখারীর প্রনেতা)
১০) ইমাম ইবনুল আরাবী মালেকী
১১) ইমাম আবুল হাসান আলী ইবনে মাওয়ার্দি বসরী
(আল-হাবী আল-কবীর প্রনেতা)
 ১২) ইমাম মুহাম্মদ ইবনে খালাফ (সহীহ মুসলিমের ব্যখ্যা গ্রন্থ প্রনেতা
১৩) ইমাম আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আবু কতবী ( তাযকিয়াহ গ্রন্থ প্রনেতা)
১৪) ইমাম ফখরুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে ওমর আলী রাযী
১৫) ইমাম শরফুদ্দিন মানভী
১৬) খাতেমুল হুফফাজ ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর
১৭) ইমাম শিহাবুদ্দিন ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী (আফজালুল কোরা গ্রন্থ প্রনেতা)
১৮) শায়খ নুরুদ্দিন আলী ইবনে জাযযার মিশরী
১৯) ইবনে আবী শরফা হাসানী তিলমসানী ( শরহে কিতাবুস-শিফা)
২০) মুহাক্কিক সানুসী
২১) ইমাম আরিফ বিল্লাহ
২২) ইবনে ইউসুফ ফাসী (মাতালিউল মুসাররাত শরহে দালাইলুল খায়রাত এর প্রনেতা)
২৩) খাতিমাতুল মুহাক্কেকিন আব্দুল বারী যুরকানী (মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়ার ব্যাখ্যাকারী)
২৪) ইমামে আজাল্ল ফকিহে আকমল কিরদারী বাযযাযী (আল-মানাকিব এর প্রনেতা)
২৫) মুহাক্কিক ইবনে নুজায়ম মিশরী (আল-আশবা ওয়ান নাযাইর গ্রন্থ প্রনেতা)
২৬) শায়খ-ই-শুয়ুখ-ই-ওলামা-ই-হিন্দ মুহাদ্দিসে আব্দুল হক দেহলভী (কাঞ্জুল ফাওয়াইদ এর প্রনেতা)
২৭) ইবনে আবেদীন শামী (রুদ্দল মুহতার ও ফতোয়ায়ে শামীর প্রনেতা)

❏  আর যদি ওহাবীদের তর্কের খাতিরে মেনেও নেই যে ওনারা রাসুল ﷺ এর কাছে কালিমা না পড়ে ওফাত বরন করেছেন তাহলে এই আয়াত গুলো প্রমান করে রাসুল ﷺ এর পিতা-মাতা তখন আল্লাহর হুকম মোতাবেক যে দ্বীন ছিল সেই দ্বীন অনুযায়ী ওনারা মুসলিম। আবার যদি বলে কেউ যে রাসুলের আগমন হওয়ার পর সব দ্বীন ছেড়ে ইসলাম কবুল করতে হবে তাহলে বলব রাসুল ﷺ তখন নবুওয়াত প্রাপ্ত হন নি যদি হত তাহলে ওনার পিতা-মাতা তখনই ইসলাম কবুল করে নিতেন। 

❏ নবীগনের সম্পর্কে:-
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
["ফাত্তাকুল্লাহা ওয়া আতিউনি"]
অর্থ-"অতএব, তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর" (সূরা- শুয়ারা, আয়াত- ১০৮) ।

❏ ""তার (ইব্রাহীম) প্রতিপালক যখন তাকে বলেছিলেন, 'আত্মসমর্পণ কর'; সে বলেছিল, জগতসমূহের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম এবং ইব্রাহীম ও ইয়াকুব এই সম্বন্ধে তাদের পুত্রগণকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, 'হে পুত্রগণ আল্লাহ্‌ই তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে মনোনীত করেছিলেন । সুতরাং মুসলমান তথা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা কখনো মৃত্যুবরণ করো না" (সূরা- বাকারা, আয়াত- ১৩১, ১৩২) ।

পরবর্তীতে তাঁদের অনুসারীগণ নবীর নামে (ইহুদা হতে ইহুদী, ক্রাইস্ট হতে খৃষ্টান ইত্যাদি) নিজেদের নামকরণ করেন এবং উভয় দল হযরত ইব্রাহীম عليه السلام-কে তাঁদের সধর্মাবলম্বী বলে দাবী করেন । এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-

❏ "তোমরা কি বলতে চাও, ইব্রাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধর ইহুদী কিংবা খৃষ্টান? (হে রাসুল!) বলুন, তোমরা কি আল্লাহ্‌ অপেক্ষা অধিকতর জ্ঞাত" (সূরা- বাকারা, আয়াত- ১৪০) ।

❏ পবিত্র কুরআনে দ্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে-"বরং ইব্রাহীম عليه السلام ছিলেন হানিফ (পরম নিষ্ঠাবান) মুসলিম, তিনি মুশরিক ছিলেন না"। পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে হযরত ইব্রাহীম عليه السلام-কে মুসলমান বলা হয়েছে । সব নবী-রাসুলের অনুসারীগণই যে মুসলমান, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-

["মিল্লাতা আদিকুম ইব্রাহীমু হয়া সাম্মাকুমুল মুসলিমিন"]
অর্থ-"ইহা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ, তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান" (সূরা- হজ্জ, আয়াত- ৭৮) ।

আর ওনারা রাসুল ﷺ আগমনের পুর্বে সত্য দ্বীনের উপরই ছিলেন।

❏ কোরআনের পরিভাষায় পবিত্র নর নারী বলতে ঈমান্দারকেই বুঝানো হয়েছে এবং খবীস বা অপবিত্র বলতে কাফের মূশরিকদেরকেই বুঝানো হয়েছে(সুরা মুমিনুন ১৮ পারা)।

❏ ইবনে মোহাম্মদ কলবীর বর্ণনা সুত্রে তাঁর পিতা মোহাম্মদ কলবীرحمة الله عليه বলেনঃ

“আমি নবীকারীম(ﷺ) এর বংশধারার পুরববরতি পাঁচশত মায়ের তালিকা প্রস্তুত করেছি। তাঁদের মধ্যে আমি চরিত্রহীনতা এবং জাহেলীয়াতের কিছুই পাইনি”।
তথ্যসূত্রঃ━ (বেদায়া নেহায়া)

❏ যখন নবী করীম(ﷺ) জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ১০ম হিজরিতে এক লাখ চব্বিশ হাজার সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মক্কা শরীফে হজ্জ পালন করতে আসেন, তখন বিবি আয়েশাرضي الله عنهকে সাথে নিয়ে জান্নাতুল মায়াল্লাতে বিবি খাদিজرضي الله عنه এর মাজার জিয়ারত করতে গেলেন। (তখন নাম ছিল হাজুন)। হযরত আয়েশাرضي الله عنه গাধার লাগাম ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন। নবী কারীম(ﷺ) জিয়ারতকালে প্রথমে খুব কাদলেন-পরে হাসলেন। হযরত আয়েশাرضي الله عنه কারণ জানতে চাইলে হজুর আকরাম(ﷺ) বল্লেন-“আমার পিতামাতাকে আল্লাহপাক পুনঃজীবিত করে আমার সামনে হাজির করেছেন। তাঁরা নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করে পুনরায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি পিতামাতাকে দেখে খুশি হয়ে হেসেছি”।
তথ্যসূত্রঃ━ বেদায়া নেহায়া)

❏ ইমাম সোহায়লঈرحمة الله عليه এর বরাত দিয়ে ইবনে কাছির এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
ফতোয়ায়ে শামীতে হাফেজ নাসিরুদ্দিন বাগদাদির বরাতে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা رضي الله عنه থেকে একখানা হাদীস বর্ণনা করে আল্লামা শামী লিখেছেন-

“আন আয়েশাতা রাদিয়াল্লাহু আনহা আন্নাহা কালাত ইন্নাল্লাহা আহইয়া আবাওয়াইহি ইকরামাল্লাহু সাল্লাল্লাহুয়ালায়হি ওয়া সাল্লাম ফাআস্লামা সুম্মা মা তা কামা কানা ই কামা আহইয়াল মাওতা বিঈসা আলায়হিস সালাম”
তথ্যসূত্রঃ━(রাদ্দুল  মুহতারি মাতলাবু ইসলামি আবয়াইন্নাবিইয়ি)

❏ হযরত আয়েশা رضي الله عنه বলেন “আল্লাহতায়ালা নবী কারীম সাল্লাল্লাহুয়ালায়হি ওয়া সাল্লাম এর সম্মানে তাঁর পিতামাতাকে পুনর্জীবিত করেন। তাঁরা উভয়ে নূতন করে ইসলাম গ্রহণ করেন। তরপর তাঁর পুনরায়
মৃতকে জীবিত করেন।“
তথ্যসূত্রঃ━ (ফতোয়ায়ে শামী)

❏ হযরত ইব্রাহীমعليه السلام ও হযরত ইসমাইলعليه السلام আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করেছিলেন যেন তাঁদের বংশধরদের(আরব) মধ্যে প্রত্যেক যুগেই কিছু না কিছু মুসলমান বিদ্যমান থাকে।(সুরা বাকারা ১২৮)

❏ প্রমুখ পয়গাম্বার ও নেককারগণএর মাধ্যমে স্থানন্তরিত হতে হতে অবশেষে হযরত আব্দদুল্লাহرضي الله عنه এর ললাটে স্থান লাভ করেন নূরে মোহাম্মাদী(ﷺ)। হযরত ইসমাইল ও হযরত আব্দুল্লাহ ছিলেন জবিহউল্লাহ। নবী কারীম (ﷺ) স্বয়ং শুকরিয়া আদায় করে বলতেনঃ
“আমি দুই জবিহ্উল্লাহর সন্তান”।
রজব মাসের প্রারম্ভে হযরত আব্দুল্লাহ ও আমেনাرضي الله  عنه এর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং ঐ দিনেই মিনার নিকটে শিয়াবে আবি তালেব নামক স্থানে স্বামী-স্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়। ঐ দিনেই হযরত আব্দুল্লাহرضي الله عنه এর ললাট হতে নবুয়াতের পবিত্র নূর মা আমেনাرضي الله عنه এর গর্ভে সরাসর স্থানান্তরিত হয়।
তথ্যসূত্রঃ━ মাওয়াহেবে লাদ্দুনিয়া ও বেদায়া ওয়ান নেহায়া)।

সুতরাং আমরা এখন মুক্তকণ্ঠে বলব হযরত আব্দুল্লাহ ও হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।

হযরত আদম عليه السلام ওনার পুত্র হযরত শীস (عليه السلام)কে  ওসীয়ত করেন যে,

ان لا يوضع هذا النور الا فى المطهرات من النساء.

অর্থ: “এই পবিত্র নূর মুবারককে কোন পবিত্র নারীকে (বিবাহ করা) ব্যতীত অন্য কারো নিকট যেন আমানত রাখা না হয় [অর্থাৎ এই পবিত্র নুর মুবারক নিয়ে অন্য কোন অপবিত্র নারীর নিকট যেন তিনি গমন না করেন (নিজেকে যেন সকল অপবিত্রতা থেকে পবিত্র রাখেন)]  ।” (সীরাতুল হালাবিয়া-১/৪৭, মাওলেদুল মুনাবী)

“তাহ্ক্বীকুল মাক্বাম আলা কিফাইয়াতিল আওয়াম” কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক (ﷺ) তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.

অর্থ: “আমি সবসময় পবিত্র পুরুষগনের পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্র নারীগণদের রেহেম শরীফে স্থানান্তরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ!

হুযূর পাক (ﷺ) এর পবিত্র নসব (বংশধারার তালিকা) 

১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ (ﷺ) ।

২। যাবীহুল্লাহিল মুকাররম, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ (عليه السلام)।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অতি প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আর্ব্দু রহমান।” আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার সম্মানিত পিতা সেই প্রিয় নামেরই অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া ১/৯)

৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব (عليه السلام)। তিনি উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ .ছিলেন। (রওদুল উন্ফ ১/২৩)

তিনি সেই ব্যক্তি যিনি জাহিলী যুগেই নিজের জন্য শরাবকে হারাম করেছেন। তিনি ছিলেন মুসতাজাবুদ দাওয়াত। কুরাইশদের সহনশীল ধৈর্যশীল এবং সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। মানুষ উনার দানশীলতার জন্য উনাকে “ফাইয়াজ” লক্ববে অবহিত করতেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৯)

৪। সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম (عليه السلام)।

৫। সাইয়্যিদুনা হযরত আবদে মানাফ (عليه السلام)। উনার নাম মুগীরা।
তিনি অতি সুন্দর সীরত-ছূরত মুবারকের অধিকারী ছিলেন। সেই সৌন্দর্যের কারণে উনাকে ‘উপত্যকার চাঁদ’ লক্বব মুবারকে সম্বোধন করা হতো।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/১৩ রওদুল উন্ফ ১/২৫, তারিখতু তাবারী ১/২৩৭)

মূলত, সেই পবিত্র নসবনামার সকলেরই আকৃতি-প্রকৃতি, সীরত-ছূরত মুবারক ছিলো অতি উজ্জ্বল এবং সৌন্দর্যময়। সে কারণ হলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক (ﷺ) উনার অজুদ মুবারক বা নূর মুবারক উনার অবস্থান।

৬। সাইয়্যিদুনা হযরত কুসাই (عليه السلام)।

৭। সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব (عليه السلام)।

৮। সাইয়্যিদুনা হযরত র্মুরা (عليه السلام)।

৯। সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব (عليه السلام)।

১০। সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই (عليه السلام)।

১১। সাইয়্যিদুনা হযরত গালিব (عليه السلام)।

১২। সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহির (عليه السلام)।

১৩। সাইয়্যিদুনা হযরত মালিক (عليه السلام)।

১৪। সাইয়্যিদুনা হযরত নযর (عليه السلام)।

১৫। সাইয়্যিদুনা হযরত কিনানাহ্ (عليه السلام)।

১৬। সাইয়্যিদুনা হযরত খুযাইমাহ্ (عليه السلام)।

১৭। সাইয়্যিদুনা হযরত মাদ্রিকাহ্ (عليه السلام)।

উনার নাম মুবারক আমর। এই কারণে উনাকে মাদরিকাহ্ বলা হয় যে, তিনি সেই যুগের সমস্ত সম্মান-ইজ্জত ও গৌরবের অধিকারী ছিলেন। উনার মধ্যে আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার নূর মুবারক এমন উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ ঘটেছিল, যা সবাই দেখতে পেতেন।” সুবহানাল্লাহ! (রওদুল উন্ফ ১/৩০)

১৮। সাইয়্যিদুনা হযরত ইলিয়াস (عليه السلام)। তিনি ছিলেন উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) উনাকে গালি দিও না। কারণ, তিনি ছিলেন প্রকৃত মু’মিন। তিনিই উনার পিঠ মুবারক উনার মধ্যে আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার তালবিয়া (যা হজ্জের মধ্যে পড়া হয়) পাঠ শুনতে পেতেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭, রওদুল উন্ফ- ১/৩০)

১৯। সাইয়্যিদুনা হযরত মুদ্বার (عليه السلام)।

উনার কন্ঠস্বর মুবারক ছিলো অত্যন্ত সুন্দর। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা হযরত মুদ্বার (عليه السلام) উনাকে গালি দিও না, মন্দ বলিও না। কারণ তিনি হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) উনার পবিত্র দ্বীন উনার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭ রওদুল উন্ফ ১/৩০)

২০। সাইয়্যিদুনা হযরত নিযার (عليه السلام)।

তিনি স্বীয় চক্ষু মুবারক উনার সামনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার নূর মুবারক দেখতে পেতেন।” সর্বপ্রথম আরবী ভাষায় বিশুদ্ধ কিতাব তিনিই রচনা করেন। (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২১। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’য়াদ (عليه السلام)।

তিনি জিহাদপ্রিয় ছিলেন অর্থাৎ তিনি বড় মুজাহিদ ছিলেন। এমন কোনো জিহাদ নেই যে, তিনি বিজয়ী হননি। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)

 
Top