কোরআনের শব্দ রিপিটেশন চ্যালেঞ্জ : কোরআনের আয়াত রচনার জন্য Choose করা বিভিন্ন শব্দগুলো নেয়া হয়েছে বিশেষ নিয়মে। একই অর্থবোধক ও বিপরীত অর্থবোধক শব্দগুলোর রিপিটেসনের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়েছে। যেমন, দিন, মাস, ঘন্টা। কতগুলো শব্দের রিপিটেসন পর্যবেক্ষনগত নিরিক্ষনের সাথে আর্শ্চাভাবে মিলে গেছে। যেমন ভুমি ও জলাভুমি। এমনকি তুলনা ও ফলাফলগত শব্দগুলির মধ্যেও সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। আমরা নিচে শ্রেনীবদ্ধভাবে এগুলোর আলোচনা পাব।

ক. একদিনে কত ঘন্টা হয় ? কোরআনে ঘন্টা অর্থে ‘সায়াত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৪ বার। একবছরে কতদিন হয় ? কোরআনে ‘দিন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ৩৬৫ বার। (একবচনে)  এভাবে বহুবচনে দিন (days) শব্দটি এসেছে ৩০ বার। (আরবীতে ৩০ দিনে হয় একমাস)। মাস শব্দটি এসেছে ১২ বার। (একবছর হয় ১২ মাস এ) চাদ শব্দ- ২৭ বার। (চাদ পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় প্রায় ২৭.২৩ দিন)। এখানে অনেকে বিভ্রান্তিতে পরতে পারেন, পূর্ণচন্দ্রের সময (২৯.৫৩ দিন) এর সাথে। এই সময়টা লাগে চাদের এক পূর্নিমা থেকে আরেক পুর্ণিমা পর্যন্ত পৌছতে। আর এটা দিয়ে আরবী মাস হিসেব করা হয়)। বছর শব্দটি কোরআনে এসেছে ১৯ বার। এর পেছনেও সুনির্দিষ্ট কারন আছে। লিপ-ইয়ার এর মাধ্যমে সৌরবর্ষ সঠিক করা হয়। পৃথিবী যে সময়ে (৩৬৫ দিন) সূর্যের চারিদেকে একবার ঘুরে সেই সময়ে চাদ প্রায ১২ বার (একটু কম) পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে। প্রথমটা দিয়ে সৌরবর্ষ আর পরেরটা দিয়ে চন্দ্রবর্ষ হিসেব করা হয়। এভাবে পৃথিবী ও চাদ যে স্থান থেকে ঘুরা শুরু করেছিল ঠিক সেই অবস্থানে আসতে সময় লাগে ১৯ বছর। আর কোরআনে ঠিক ১৯ বারই এসেছে বছর শব্দটি। কি অনুপম মিল রাখে এই কোরআন।

খ. শাস্তি-১১৭ বার, ক্ষমা- ২৩৪ (২*১১৭) বার। গরিবী- ১৩ বার, প্রাচুর্য- ২৬ (১৩*২) বার। ধার্মিক- ৬ বার, নাস্তিক- ত বার। প্রায় কাছাকাছি অর্থে ব্যবহৃত দয়ালু (রহমত)- ১১৪ বার। দয়াবান (রহিম)- ১১৪ বার, সদয় (রহমান)- ৫৭ বার (৫৭*২=১১৪) বার করে এসেছে। আশা এবং ভয় শব্দ দুটি এসেছে = ৮ বার। গরম এবং ঠান্ডা = ৪ বার। কালু (তারা বললো) এবং কুল (তুমি বল) = ৩৩২ বার। বীজ এবং চারা এবং ফল = ১৪ বার। অশ্লিলতা এবং পথভ্রষ্ট এবং সীমালংঘনকারী = ২৪ বার। পাপ = ৪৮ (২৪*২) বার। দুনিয়া এবং আখেরাত = ১১৫ বার। পবিত্র এবং অপবিত্র = ৭ বার। অপবিত্রতা এবং নোংরামী = ১০ বার। উপকার এবং অপকার = ২০ বার। খোলামেলা এবং জনসম্মুখে = ১৬ বার। ফেরেশতা এবং শয়তান = ৮০ বার। যাদু এবং প্রলুব্ধকারী = ৬০ বার।

গ. ভাষা এবং উপদেশ = ২৫ বার। ক্ষমা এবং পথ-প্রদর্শক = ৭৯ বার। ন্যায়নিষ্ট এবং পুরুস্কার = ২০ বার। গন্তব্যহীন এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল = ২৮ বার। বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস = ২৫ বার। যাকাত এবং আর্শিবাদ = ৩২ বার। সাত বেহেশ্ত এবং বেহেশ্ত তৈরীকরণ = ৭ বার। সূর্য এবং আলো = ৩৩ বার। সুবিচার এবং অবিচার = ১৫ বার। খুবি অল্প এবং উপলব্ধিযোগ্য = ৭৫ বার। নবী এবং সাধারণ মানুষ = ৩৬৮ বার। লাভ এবং ক্ষতি = ৯ বার। কেয়ামতের প্রথম ফুৎকার এবং দ্বিতীয় ফুৎকার শব্দ দুটি এসেছে = ৫ বার।

ঘ. মানুষ শব্দটি এসেছে ৬৫ বার। মানুষ = ( মাটি- ১৭ বার + বীর্য ফোটা- ১২ বার + ভ্রুন- ৬ বার + মাংসপিন্ড- ৩ বার + হার- ১৫ বার + মাংস- ১২ বার) = ৬৫। অর্থাৎ মানুষ তৈরীর বিভিন্ন উপাদানগুলো কোরআনে যতবার করে এসেছে এই রিপিটেসনের সংখ্যার যোগফল আর মানুষ শব্দটির শব্দটার রিপিটেসনের সমান। (মানুষ= মটি+বীর্যফোটা+ভ্রুন+মাংসপিন্ড+হার+মাংস) এটা কি এমনি এমনি মিলে গেছে ?

চ. বর্তমান বিজ্ঞান নিরীক্ষনের মাধ্যমে দেখিয়েছে পৃথিবীতে স্থলভাগের মোট আয়তনের ২৯ ভাগ আর জলভাগের পরিমান ৭১ ভাগ প্রায়। চলুন দেখি কোরআন কি বলে- কোরআনে সমুদ্র বা জলাধার শব্দটি এসেছে ৩২ বার। ভুমি বা জমি শব্দটি এসেছে ১৩ বার। এদের রিপিটেশন এর পরিমানকে অনুপাতে প্রকাশ করলে পাওয়া যায় -

স্থলভাগের পরিমাণ = (১৩/(১৩+৩২)}=২৮.৮৮৮%)
জলভাগের পরিমান = (৩২/(১৩+৩২)}=৭১.১১১%)।
এখন প্রশ্ন হলো দেড় হাজার বছর আগের কোন মানুষ কি জানতো পৃথিবীর জলভাগ আর স্থলভাগের অনুপাত কতো! এভাবে মিলে যাওয়ার কি কারন থাকতে পারে ?

ছ. আসহাবে কাহাফ বা গুহার অধিবাসিদের বর্ণনা থেকে জানা যায় ওরা গুহার ভিতর ৩০৯ বছর ঘুমন্ত ছিল। এই গুহার অধিবাসিদের বর্ণনা আছে, কোরআনের সূরা কাহাফের ৯ থেকে ২৫ নং আয়াতে। এই আয়াত কয়টির মোট শব্দের সংখ্যা গণনা করুন্ ৩০৯ টি শব্দ পাবেন!

জ. সামুদ জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনা বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে ভয়ংকর এক শব্দের মাধ্যমে আজাবের কথা। এখানে আজাবের উপকরন “ভয়ংকর শব্দ”। আবার লুত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার কথা বলতে গিয়ে কোরআন বলছে পাথর-বৃষ্টির কথা। এখানে আজাবের উপকরণ “পাথব বা শিলা-বৃষ্টি”।
ভয়ংকর শব্দ – ১৩, সামুদ জাতি – ২৬ (১৩*২) বার করে এসেছে।
পাথর বৃষ্টি – ৪ বার, লুত সম্প্রদায় – ৮ (৪*২) বার করে এসেছে।
লক্ষনীয় ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতীর রিপিটেশন, ধ্বংস করার উপকরণের রিপিটেশনের দ্বিগুন।

ঝ. কোরআন অনেক জায়গায় তুলনা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি হলো যে দুটি শব্দের মাঝে তুলনা করা হয়েছে ঐ দুটি শব্দ কোরআনে সমপরিমান সংখ্যায় এসেছে।যেমন-

১. “আল্লাহ তায়ালার কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমরে মত”। (আল-ইমরান : ৫৯)।
২. যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মত”। (সূরা আরাফ) যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ অস্বীকার করে বাক্যটি কোরআনে এসেছে ৫ বার। আবার কুকুর শব্দটিও কোরআনে এসেছে ৫ বার।

ঞ. কোন কাজ করলে সেই কাজের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল সম্পর্কিত রিপিটেশন সমান সংখ্যায় এসেছে কোরআনে।

1. যাকাত দিলে বরকত আসে। তাই যাকাত ও বরকত শব্দ দুটি এসেছে ৩২ বার করে।
2. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদ করা। তাই “মানুষ সৃষ্টি” ও “ইবাদত” শব্দ দুটি এসেছে ১৬ বার করে।
3. গোলামের কাজ হলো গোলামী করা। গোলাম ও গোলামী শব্দ দুটি এসেছে ১৫২ বার করে।
4. নেশা করলে মাতাল হয়। “নেশা” ও “মাতাল” শব্দ দুটি এসেছে ৬ বার করে।
5. হায়াত লাভ করলে মউত হবেই। তাই হায়াত ও মউত শব্দ দুটি এসেছে মোট ১৬ বার করে।
6. মানুষ হেদায়েত পেলে তার উপর রহমত বর্ষিত হয়। হেদায়েত ও রহমত শব্দ দুটি এসেছে মোট ৭৯ বার করে।
7. কাজ করলে কাজের ফলাফল হবে। কাজ – ১০৮ বার ফলাফল ১০৮ বার।

কোরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে – “এটি যদি আল্লাহর বানী না হত তাহলে এতে অনেক ভুল এবং পার্থক্য লক্ষ্য করা যেতো” এইটা কি করে সম্ভব ? !!!

ক. কোরআনে Specially চাদকে নিয়ে একটি সূরা লেখা হয়েছে। ৫৪ নং সূরা; সূরা আল-ক্বামার। ক্বামার অর্থ চাদ। মানুষ প্রথম চাদে পদার্পন করে ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দে। যদিও চাদে অবতরন নিয়ে রাসিয়ানরা প্রথমদিকে সন্দিহান ছিলেন কিন্তু কেউই রাষ্ট্রিয়ভাবে ঘটনাটার মোকাবেলা করার সাহস পায়নি। এবং প্রথম চাদে অবতরনের বছর হিসেবে ১৯৬৯ সালই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখানে লক্ষনীয় যে ১৯৬৯ সাল হল হিজরী ১৩৮৯ সাল।

১. এখন সূরা আল-ক্বামার এর প্রথম আয়াত “কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ন হয়েছে” এই আয়াতটির আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় ১৩৮৯ । যেমন “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এই আয়াতটির আক্ষরিক মান ৭৮৬।

২. এই সূরাটির প্রথম আয়াত থেকে শুরু করে গুনে গুনে কোরআনের শেষ আয়াত পর্যন্ত গুনলে মোট আয়াত সংখ্যা হয় ১৩৮৯ টা। এই সূরার দ্বিতীয় আয়াতেই বলা হয়েছে, “এরা কোন নিদর্শন দেখলে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এটাতো একটা চিরাচরিত (স্বাভাবিক ) ব্যাপার” – (আল-কামার : ০২)।

আমি জানিনা এই সূরার অবস্থান এবং এর পরবর্তি সূরাগুলোর আয়াত কাঠামো, আর এই সূরাটির প্রথম আয়াতের গঠন, কেন এভাবে চাদে অবতরনের বছরের সাথে মিলে যায়! তবে এটা কিছুটা বুঝতে পেরেছি, কেন আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন- তার নিদর্শন সম্বন্ধে। এটা অসম্ভব! পৃথিবীর ইতিহাসে আরো লক্ষ কোটি ঘটনা আছে। তাদের মধ্য হতে বেছে বেছে শুধুমাত্র চাদের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এই বছরটার সাথে এতো অবিকলভাবে এগুলোর এরকম মিলে যাওয়াটার সত্যি অন্য কোন ব্যাখ্যা হতে পারে না!

খ. আল্লাহ সুবহানু তা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “তিনিই সর্বোচ্চ ডিগ্রীর অধিকারী, আর তিনিই আরশের মালিক” (সুরা মুমিন : ১৫)। এ আয়াতে ডিগ্রী শব্দটি বুঝাতে আরবী “রাফিই” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে । রাফিই শব্দটির সংখ্যাগত মান ৩৬০ । রা-২০০, ফা-৮০, ইয়া-১০, আইন-৭০। আজকের বিশ্বে সর্বোচ্চ ডিগ্রী যে ৩৬০ ডিগ্রী ধরা হয়, এটা কে না জানে! কথা হচ্ছে ডিগ্রী বুঝাতে কোরআনের “রাফিই” কেই ব্যাবহার করতে হবে ! যার সংখ্যাগত মান ৩৬০ ?

কুরআনে ১৯ সংখ্যাটির প্রয়োগ : আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন “এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ জন ফেরেশতা। আমি জাহান্নামের তত্বাবধানের জন্য ফেরেশতাই রেখেছি আর তার তাদের এই সংখ্যাকে আবিশ্বাসীদের পরীক্ষা করার জন্য একটি মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছি। যেন এর মাধ্যমে যাদের উপর আমার কিতাব নাজিল হয়েছে, তারা আরো দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ইমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনরা সন্দেহ পোষণ না করে”। (সূরা মুদ্দাসসির : ৩০,৩১) এই আয়াতে বলা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্যে ১৯ জন ফেরেশ্তা রাখা হয়েছে। আর তাদের সংখ্যাকে কাফেরদের পরিক্ষা করার জন্য নিধারণ করা হয়েছে। একই সাথে কিতাবীদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে আর মুমিনদের ইমান বৃদ্ধির কাজেও নাকি লাগবে! ১৯৭৪ সালে প্রথম আবিস্কৃত হয় যে, কোরআনের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াত, এমনকি প্রতিটি শব্দ ১৯ সংখ্যার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। পরে আরো ব্যপক গবেষণার ফলে ফলাফল এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যে কেউ সামান্য গুন, ভাগ বুঝতে পারলে, কোরআনে ১৯ এর প্রয়োগ বুঝতে পারবে। এসব গবেষণার ফল আমাদেরকে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই কিতাবটিতে ১৯ সংখ্যাটিকে একটি গানিতিক কোড হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। যা কিতাবটিকে সুরক্ষিত করেছে।


চলুন দেখি কিভাবে ১৯ সংখ্যাটি কিতাবী আর মুমিনদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে সাহায্য করে-

১. কোরআনে মোট ১১৪ টি সূরা আছে। ১১৪ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১১৪/১৯=১৬।

২. প্রথম আয়াত নাযিল করা হয় সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত। যাতে ১৯ টি শব্দ আছে। এই ১৯ টি শব্দের মধ্যে ৭৯ টি অক্ষর। ৭৬ শব্দটিও ১৯ দ্বারা নি:শেষে বিভাজ্য। ৭৬/১৯=৪ । সূরাটিতে মোট ২৮৫ টি অক্ষর আছে । যা এই সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ১৯ । সুরাটি যদিও নাযিল হওয়া শুরু হয়েছে সবার আগে কিন্তু কোরআনে এর অবস্থান ৯৬ তম। যদি উল্টা দিক থেকে গুনা শুরু করেন (অর্থৎ সূরা নাস কে ১, ফালাক কে ২ এভাবে) তাহলে এই সূরাটির অবস্থান হবে ১৯ তম। সূরা মুদদাসসির এর ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “এর উপর রয়েছে ১৯” যা আমি শুরুতে একবার বলেছি। ঘটনা তা না, ঘটনা হল- আল্লাহ তায়ালা সূরা মুদদাসসির এর ৩০ নং আয়াতটি নাযিলের পর একটু বিরতি দিয়ে সুরা আলাকের বাকি ১৪ টি আয়াত নাযিল করেন। এর ফলে পুর্বে নাযিলকৃত ৫ আয়াত সহ, গোটা সূরা আলাকের আয়াত দাড়ালো ১৯ । সূরাটিতে ১৯ এর যে আকষ্যিক কোন কারিসমা রচিত হয় নি, বরং এর পিছনে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার সূক্ষ ইচ্ছা তা এই ঘটনার রহস্য বুঝে বুদ্ধিমানরা সহযেই আন্দাজ করতে পারবেন।

৩. কোরআনের সর্বশেষ সূরাটি হল সূরা আন-নাস। এটি ১১৪ তম সূরা। এ সূরার শব্দ সংখ্যা হল ১৯। আর এই ১৯ টি শব্দে আছে মোট ৬ টি আয়াত। ১৯*৬=১১৪। কি অদ্ভুত মিল!

৪. প্রথম ওহী সূরা আলাকের প্রথম পাচটি আয়াতের শব্দসংখ্যার মতই কোরআনের আরো বহু পরিসংখ্যান ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।

কোরআন যিনি নিয়ে এসেছেন তিনি রাসূল। রাসূল শব্দটি এসেছে- ৫১৩ বার।
যার বানি রাসূল নিয়ে এসেছেন তিনি রব। রব শব্দটি এসেছে- ১৫২ বার।
কোরআনের কেন্দ্রীয় বানি হচ্ছে ইবাদাত। ইবাদাত শব্দটি এসেছে- ১৯ বার।
কেন্দ্রীয় বানির অপর পরিভাষা হচ্ছে আবদ। আবদ শব্দটিও এসেছে- ১৫২ বার।
আবদ এর কাজ যে করবে তাকে বলে আবীদ। আবিদ শব্দটিও এসেছে- ১৫২ বার।
এ সব কটি পরিসখ্যানই ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।

৫. কোরআনে “সংখ্যা” এর উল্লেখ আছে ২৮৫ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য। আবার কোরআনে যে সংখ্যাগুলো উল্লেখ আছে তাদের যোগফল করলে দাড়ায় ১৭৪৫৯১, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৬. কোরআনে বিভিন্ন সূরা শুরু হয়েছে বিচিত্র কিছু বর্ণমালা দিয়ে। এগুলোর কোন অর্থ কেউ এখনো বের করতে পারেনি। এগুলোকে বলা হয় “হরুফে মুকাত্তায়াত”। যেমন আলিফ-লাম-মিম, হা-ত্বোয়া-সিন ইত্যাদি।

ক. হরুফে মুকাত্তায়াত আছে ২৯ টি সূরার শুরুতে। হরুফে মুকাত্তায়াত মোট ১৪ টি মৌলিক বর্ণ সমাহারে গঠিত। ১৪ টি বিভিন্ন সমাহারে এই বর্ণগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। এদের যোগফল ২৯+১৪+১৪=৫৭, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

খ. “আলিফ-লাম-মিম” এই হরুফে মুকাত্তায়াতটি ব্যবহৃত হয়েছে ৬ টি সূরার শুরুতে। সূরা বাকারা, সূরা আল-ইমরান, সূরা আনকাবুত, সূরা রুম, সূরা লুকমান, ও সূরা সাজদায়। এ সূরা গুলোর মধ্যে আলিফ, লাম ও মিম যতোবার করে এসেছে তার যোগফল ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে এ যে এক অসম্ভব কল্পনা!

★সূরা বাকারা : আলিফ-৪৫০২ লাম-৩২০২ মিম-২১৯৮ মোট- ৯৮৯৯ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
★সূরা আল ইমরান : আলিফ-২৫২১ লাম-১৮৯২ মিম-১২৪৯ মোট-৫৬৬২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
★সূরা আনকাবুত : আলিফ-৭৭৪ লাম-৫৫৪ মিম-৩৪৪ মোট- ১৬৭২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
★সূরা রুম : আলিফ-৫৪৪ লাম-৩৯৩ মিম-৩১৭ মোট- ১২৫৪ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
★সূরা লূকমান : আলিফ-৩৪৭ লাম-২৯৭ মিম-১৭৩ মোট- ৮১৭ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
★সূরা সাজদা : আলিফ-২৫৭ লাম-১৫৫ মিম-১৫৮ মোট- ৫৭০ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।


এর পরও কি কোন অবিশ্বাসী থাকতে পারে ? আসুন এবার দেখি এই ছয়টি সূরাতে আলিফ লাম আর মিমের মোট অবস্থাটা কি দ্বারায়। উল্লেখিত ছয়টি সূরাতে আলিফ মোট ৮৯৪৫ বার, লাম মোট ৬৪৯৩ বার, মিম মোট ৪৪৩৬ বার এসেছে। এদের মোট যোগফল ১৯৮৭৪, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযিম।

গ. সূরা মারইয়াম এর হরুফে মুকাত্তায়াত : ক্বাফ, হা, ইয়া, আইন, সোয়াদ। এ সূরায় ক্বাফ-১৩৭ বার, হা-১৭৫ বার, ইয়া-৩৪৩ বার, আইন-১১৭ বার, সোয়াদ- ২৬ বার করে এসেছে। এদের যোগফল- ৭৯৮, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

ঘ. সূরা আরাফ এর হরুফে মুকাত্তায়াত : আলিফ, লাম, মিম, সোয়াদ। এ সূরায় আলিফ ২৫২৯ বার, লাম ১৫৩০ বার, মিম ১১৬৪ বার, সোয়াদ ৯৭ বার করে এসেছে। এদের যোগফল- ৫৩২০, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

ঙ. সূরা মুমিন থেকে সূরা আহক্বাফ পর্যন্ত ৭ টি সূরার শুরুতে রয়েছে একই হরুফে মুকাত্তায়াত; হা-মিম। এ সাতটি সূরায় হা ও মিম এই অক্ষরগুলো যতবার ব্যাবহার হয়েছে তার যোগফল ২১৪৭। এ সংখ্যাটিও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

চ. সূরা ইউসুফ, সূরা ইব্রাহীম ও সূরা হেজর এর হরুফে মুকাত্তায়াত হচ্ছে আলিফ-লাম-রা।

1. সূরা ইউসুফ এ আলিফ-লাম-রা এসেছে মোট ২৩৭৫ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য।
2. সূরা ইব্রাহীম এ আলিফ-লাম-রা অক্ষরগুলো এসেছে ১১৯৭ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য।
3. সূরা হেজর এ আলিফ-লাম-রা অক্ষরগুলো এসেছে ৯১২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

এছাড়া সূরা ইউনুস ও সূরা হুদ শুরু হয়েছে আলিফ-লাম-রা দিয়ে। এ দুটি সূরাতে এই আক্ষরগুলো ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৮৮৯ বার। এ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

ছ. সূরা রাদ শুরু হয়েছে আলিফ-লাম-রা এই অক্ষর ৪টি দিয়ে। এই সূরাতে এই চারটি অক্ষর এসেছে মোট- ১৪৮২ বার; যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

জ. হরুফে মুকাত্তায়াত সম্বলিত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে সূরা কালাম। এই সূরার শুরু মাত্র একটি অক্ষর দিয়ে- নুন। এই সূরাটিতে নুন অক্ষরটি এসেছে ১৩৩ বার, এটিও নি:সন্দেহে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৭. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
ক. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এই আয়াতটি লিখতে ১৯ টি অক্ষর লাগে। কোরআনে মোট ১১৪ বার এই আয়াত এসেছে। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
খ. এই আয়াতে মোট চারটি শব্দ আছে। ইছেম, আল্লাহ, রহমান ও রহীম। ঘটনা তা না; ঘটনা হল এই চারটি শব্দ কোরআনে যতবার করে এসেছে সেই সংখ্যাগুলো ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

ইছেম – ১৯ বার এসেছে; ১৯/১৯=১।
আল্লাহ – ২৬৯৮ বার এসেছে; ২৬৯৮/১৯=১৪২।
রহমান – ৫৭ বার এসেছে; ৫৭/১৯=৩।
রহীম – ১১৪ বার এসেছে; ১১৪/১৯=৬।


এমনকি ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর যে সংখ্যাগুলো পাওয়া গেলো এদের যোগফলও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। (১+১৪২+৩+৬) = ১৫২ (১৯*৮) কি পরাক্রান্ত সেই মহাপ্রজ্ঞাময়!

গ. কোরআনে এই চারটি শব্দের অন্তত একটি শব্দ আছে এরকম আয়াতের সংখ্যা কত ? এরকম আয়াতের সংখ্যা ১৯১৯!!! যা নি:সন্দেহে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

ঘ. ইছেম শব্দটির অর্থ নাম। বাকি তিনটি শব্দ আল্লাহ তায়ালার পবিত্র নাম। এই তিনটি শব্দের সংখ্যাগত মানের যোগফলও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য!
আল্লাহ (৬৬) + রহমান (৩২৯) + রহীম (২৮৯) = ৬৮৪। ৬৮৪/১৯=৩৬।

ঙ. হরুফে মুকাত্তায়াত সম্বলিত সূরাগুলোর মধ্যে এই চারটি শব্দ এসেছে মোট ১২৯২ বার। সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ইসেম ৩১ বার + আল্লাহ ১১২১ বার +রহমান ৬৬ বার + রহীম ৭৪ বার = ১২৯২ বার। ১২৯২/১৯=৬৮।
এতোটা কোডিং করে কি কিছু লিখা সম্ভব !

চ. আরেকটি আশ্চার্যের বিষয় : “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যটির চারটি শব্দ কোরআনে যতবার যে সংখ্যায় এসেছে, শব্দগুলোর অপরিহার্য গুণবাচক শব্দটিও ঠিক ততবার করে এসেছে।
ইছেম এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “হয়াহেদ” এসেছে ১৯ বার।
আল্লাহ এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “যুল ফাদল” এসেছে ২৬৯৮ বার।
রহমান এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “মাজিদ” এসেছে ৫৭ বার।
রহীম এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “জামেউ” এসেছে ১১৪ বার।

ছ. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” আয়াতটিতে ব্যবহৃত ১৯ টি সংখ্যামানের সমষ্টি ৭৮৬ আয়াতটিতে একই অক্ষরের পুরাবৃত্তি বাদ দিলে মৌলিক অক্ষর থাকে মোট ১০ টি। আয়াতটিতে পুনরাবৃত্তি অক্ষরগুলোর সংখ্যামান ৪০৬। ৭৮৬ থেকে ৪০৬ বাদ দিলে থাকে ৩৮০।
যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।


জ. সূরা তওবা “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” দিয়ে শুরু হয় নি। অন্যদিকে সূরা নামলে এই বাক্যটি ২ বার এসেছে। ফলে বাক্যটির মোট রিপিটেসন ১১৪ হয়েছে। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। একইসাথে সুরা তওবা থেকে সূরা নামল পর্যন্ত মোট সূরা সংখ্যা ১৯।

ঝ. সূরা নামল কোরআনের ২৭ নং সূরা। এই সূরার শুরুতে একবার এবং ৩০ নং আয়াতে একবার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যটি এসেছে। ৩০ তম সংখ্যাটি ১৯ তম নন প্রাইম সংখ্যা। (৪,৬,৮,৯,১০,১২,১৪,১৫,১৬,১৮,২০,২১,২২,২৪,২৫,২৬,২৭,২৮, ৩০)।
প্রথমে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” আছে ১১৩ টি সূরাতে। ১১৩ সংখ্যাটি অংকের ৩০ তম প্রাইম নাম্বার!

ঞ. যদি আমরা যোগ করি সূরা নামলের ক্রমিক নং (২৭) এবং রিপিট হওয়া “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর আয়াত নাম্বার (৩০), তাহলে যোগফল হবে ৫৭ ! যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

ট. ৯ নং সূরা (সূরা তওবা) তে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” নাই। ২৭ নং সূরাতে আছে দুই বার। যদি আমরা যোগ করি ৯ নং থেকে ২৭ নং সূরা পর্যন্ত, সূরার ক্রমিক নং গুলো (৯+১০+১১+…….+২৭) তাহলে যোগফল পাব ৩৪২। ৩২৪ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এই শেষ নয়!
২৭ নং সূরাটির ৩০ নং আয়াত যেখানে রিপিটেড “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাওয়া গেছে, সূরাটির প্রথম শব্দ থেকে রিপিটেড বিসমিল্লাহ শব্দ পর্যন্ত মোট শব্দ আছে ৩৪২ টি। এখানেই শেষ নয়!
৯ নং সূরার প্রথম থেকে শুরু করে ২৭ নং সূরার রিপিটেড “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পর্যন্ত মোট আয়াত সংখ্যা ৩৪২ টি।
এই পরিসংখ্যানগুলোর একটার সাথে আরেকটার গণনায় বাহ্যিক কোন সম্পর্ক নেই, অথচ এরা কি সামঞ্জস্যতার সাথে ঘোষণা দিচ্ছে রিপিটেড ও মিসিং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” আয়াতটির অবস্থানগত কারনের!



ঠ. এবার আমরা একটু অন্যভাবে পরিক্ষা করবো কোরআনকে। আমরা সুরা নামলের ৩০ নং আয়াতকে মধ্য আয়াত ধরে (যে আয়াতে মিসিং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাওয়া গেছে) কোরআনকে দুই ভাগ করে ফেলব। এভাবে ভাগ করার পর দেখা যাবে, প্রথম ভাগে ইসেম+আল্লাহ+রহমান+রহীম শব্দের মোট সংখ্যাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যাবে। এমনকি দ্বিতীয় ভাগেরটাও।
দুইভাগ করার পর প্রথম ভাগে শব্দের সংখ্যা :
ইসেম – ৯, আল্লাহ – ১৮১৪, রহমান – ৩৫, রহীম – ৮০ মোট ১৯৩৮
= ১৯*১০২।
দ্বিতীয় ভাগে শব্দের সংখ্যা :
ইসেম – ১০, আল্লাহ – ৮৮৪, রহমান – ২২, রহীম – ৩৪ মোট ৯৫০
= ১৯*৫০।
সুবহানআল্লাহ! —— তিনি অর্থহীন কিছুই করেন না।

৮. কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ তায়ালার সর্বোমোট নামের সংখ্যা ১১৪ টি (মূল ও গুনবাচক মিলে), যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৯. আল্লাহ শব্দটি কুরআনে এসেছে ২৬৯৮ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১৯*১৪২=২৬৯৮। এখানে ১৪২ সংখ্যাটির একটি তাৎপর্য খুজে পাওয়া গেছে। কোরআনের কিছু সূরার প্রথম আয়াতে “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে। প্রথম আয়াতে শব্দটি এসেছে মোট ৪২ বার। এখন এই ৪২ এর সামনে আল্লাহ শব্দটির অত্যাবশ্যকীয় গুনবাচক সংখ্যা ১ বসিয়ে দিলে, পাওয়া যায় ১৪২! আরো আছে! ২৬৯৮ সংখ্যাটিরও একটা সুন্দর তাৎপর্য আছে। আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নাম হলো ‘যুল ফাদল আল-আজিম’। এই নামটির সংখ্যাগত মান ২৬৯৮, কি অদ্ভুত মিল! শুধু এটাই শেষ নয়। যে আয়াতগুলোতে “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে, তাদের ক্রমিক নাম্বারগুলো একত্র যোগ করলে পাওয়া যায় ১১৮১২৩, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১৯*৬২১৭, এখানেই যদি শেষ হতো! প্রথম হরুফে মুকাত্তায়াত “আলিফ-লাম-মিম” আছে ২ নং সূরায়, আর শেষ হরুফে মুকাত্তায়াত “নুন” আছে ৬৮ নং সূরায়। ২ নং থেকে ৬৮ নং সূরা পর্যন্ত “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে ২৬৪১ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। আর বাকি কোরআন জুড়ে শব্দটি এসেছে ৫৭ বার। এটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

১০. সূরা ইয়াসিনে “ইয়া” হরফটি আছে ২৩৭ বার। আর “ছিন” হরফটি আছে ৪৮ বার। উভয়ের সমষ্টি ২৮৫, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ২৮৫/১৯=১৫।

১১. সূরা ত্বহা এর মধ্যে “ত্ব” হরফটি আছে ২৮ বার আর “হা” হরফটি আছে ৩১৪ বার। উভযের সমষ্টি ৩৪২, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ৩৪২/১৯=১৮।

১২. গোপন সূরার গোপন খবর: কোরআন যে ১৯ সংখ্যার গানিতীক কোড দিয়ে সাজানো এটা প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৪ সালে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়। আরবী “মুদ্দাসসির” শব্দটির অর্থ “লুকায়িত” বা গোপন। সূরা মুদ্দাসসির কোরআনের ৭৪ তম সূরা, আর এই সূরাতেই ১৯ সংখ্যাটির প্রয়োগ উল্লেখ করে একটি আয়াত (৩০ নং) আছে। যা এই অধ্যায়ের শুরুতে উল্লেখ করেছি। কথা হচ্ছে, যখন আমরা আবিষ্কৃত ১৯ আর সূরা মুদ্দাসসির এর কোরআনে অবস্থান ৭৪ কে পাশাপাশি বসাই, তখন যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা হলো ১৯৭৪, যা যে সালে বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছে তার সমান। হযরত ইসা (আ এর জন্মের পর ১৯৭৪ বছর ধরে একটা গোপন রহস্য মানবজাতীর জ্ঞানচক্ষুর আড়ালে রেখে দিয়েছিলেন মহাশক্তিশালী বিচার দিনের মালিক !! কি মহামহিম তিনি!!! রহস্য যদি এখানেই শেষ হয়ে যেতো! ইস! ——- কি পহাপরাক্রমশালী তিনি !!

১৯৭৪ সালটি যখন দুনিয়াতে চলছিল, তখন দুনিয়াতে হিজরী সাল চলছিল ১৩৯৩ সাল। কোরআন প্রথম নাজিল হওয়া শুরু হয় হিজরতের ১৩ বছর আগে। এই তের বছর ১৩৯৩ এর সাথে যোগ করলে মোট দাড়ায় ১৪০৯ বছর। অর্থাৎ কোরআন নাজিলের শরু থেকে শুরু করে মোট ১৪০৯ বছর পর কোরাআনের একটা “মুদ্দাসসির” বা “গোপন” রহস্য উন্মোচিত হয়। ১৪০৯ ?? এটার আবার গুরুত্ব কি ? হুমম—- ১৯ কে ৭৪ দিয়ে গুন করলে ১৪০৯ হয়ে যায় যে! ১৯*৭৪=১৪০৯। রহস্যটা যদি এখানেই খতম হয়ে যেতো! এই সূরার প্রথম দুই আয়াত এরকম ১. হে চাদরাবৃত ২. উঠুন সতর্ক করুন।


এই দুই আয়াতে মোট অক্ষর এর সংখ্যা ১৯ টি। আর আয়াতদুটির মোট সংখ্যাগত মান কত জানেন ? আপনি হয়তো ভাববেন আমি ভুল তথ্য দিচ্ছি, আসলে বলতে গিয়ে আমি আবেগাপ্লুত হযে যাচ্ছি ।এই আয়াতদুটির সংখ্যাগত মান হিসাব করলে তা দ্বারায় ১৯৭৪!!!!!! সতর্ক কেন করতে বলেছেন তিনি, বুঝেছেন ? আয়াত দুটি হল, ইয়া আইয়্যুহাল মুদ্দাসসির, কুম ফাআনযির।
ইয়া=১০, আলিফ=১, আলিফ=১, ইয়া=১০, আলিফ=১, আলিফ=১, লাম=৩০, মিম=৪০, দাল=৪, ছা=৫০০, র=২০০, ক্বাফ=১০০, মিম=৪০, ফা=৮০, আলিফ=১, নুন=৫০, যাল=৭০০, র=২০০ এর মোট মান = ১০+১+১+১০+———-+১+৫০+৭০০+২০০=১৯৭৪। এখা্নেই যদি শেষ হয়ে যেতো রহস্যের! সুবহানাআল্লাহ—তিনি কত মহান–!

সূরাটি ৭৪ নং সূরা, মুদ্দাসসির শব্দটা আছে ১ নং আয়াতে। সুতরাং ১ নং আয়াতকে কোথাও রেফার করা হয় (৭৪,১) লিখে। কমা ছারা সংখ্যাটি ৭৪১, কথা তা না, কথা হচ্ছে, এই ১ নং আয়াতটি থেকে শুরু করে , কোরআনের সর্বশেষ আয়াত পর্যন্ত গননা করলে মোট ৭৪১ টা আয়াত পাওয়া যায়। ৭৪১ আক্ষরটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য (১৯*৩৯=৭৪১)। কোরআনে কিভাবে একেকটা আয়াত, একেকটা শব্দ, একেকটা অক্ষর এতো অবাক Mathematics কে মেনে চলতে পারে ? এগুলোকে কি বলবেন আপনি ? Coincidence ? আন্দাজে মিলে গেছে ? দুনিয়ার কোন ঘটনাই কারণ ছারা ঘটে না। যা হোক মেনে নিচ্ছি আপনার কথা। আসুন আরো কিছু আন্দাজে (!) মিলে যাওয়া ঘটনা দেখি ! সূরাটিতে অগ্নি অর্থে “সাকার” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৬, ২৭ ও ৪২ নং আয়াতে। যেগুলোতে বলা হচ্ছে, যারা সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখার পরও, কোরআনকে মানুষের উক্তি বলবে, তাদরেকে সাকার বা অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে। এখন ২৬+২৭+৪২=৯৫, লক্ষনীয় ১৯*৫=৯৫। এই ২৬, ২৭ ও ৪২ নং আয়াত তিনটির সংখ্যাগত মান (৫৫৬,৬৮৩,৬৬১) একত্রে যোগ করলে পাওয়া যায় ১৯০০, লক্ষনীয় ১৯*১০০=১৯০০। আরো অবাক ব্যাপারটা হলো, যদি আমরা এই তিনটি আয়াতের সংখ্যাগত মানের সাথে, কোরআনের সূরাটির অবস্থান (৭৪) কে যোগ করি তাহলে আমরা সেই সালকে পাব যে সালে ১৯ এর রহস্য আবিষ্কার করা হয়।

যে সূরাতে এতোকিছুকে গোপন করে রাখা হয়েছে, তার নাম মুদ্দাসসির কেন দেয়া হলো, এবার বুঝতে পেরেছি! শেষ! না, এখনো হয় নি,——–

আপনি যদি সূরা মুদ্দাসসির পড়েন, তাহলে দেখবেন, এই সূরাটির ১ টি আয়াত বাদে বাকি সব আয়াতগুলো খুব ছোট ছোট। আর এই অস্বাভাবিক আয়াতটা হচ্ছে সূরাটির ৩১ নং আয়াত। একমাত্র এই আয়াতেই ১৯ এর কার্যকারিতা সম্বন্ধে বলা হয়েছে। সূরাটর ১ টি আয়াতে গড়ে যতগুলো অক্ষর এসেছে, তার ১২ গুন অক্ষর এসেছে এই ৩১ নং আয়াতে। উল্লেখ্য কোরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত, সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াত। সূরা বাকারতে একটি আয়াতে গড়ে যতগুলো অক্ষর এসেছে, তার সমান ৬ গুন অক্ষর এসেছে ২৮২ নং আয়াতটিতে। অর্থাৎ গড় অনুপাতের দিকে বিবেচনা করলে মুদ্দাসসির এর ৩১ নং আয়াতটি বাকারার ২৮২ নং আয়াতেরও ২ গুন। এই আয়াতটিতেই যেহেতু এসেছে ১৯ সংখ্যাটির কথা, তাই নিশ্চয়ই আয়াতটির মধ্যে ১৯ এর রহস্য লুকানো আছে ! আছে কি ? আয়াতটিতে মোট ৫৭ টি শব্দ আছে। ১৯*৩=৫৭। আবার আয়াতটির যে বাক্যটিতে ১৯ অক্ষর আছে তাতে ৩ টি শব্দ আছে। ৩ এর একটা অর্থ আছে এখানে। তা হলো এই আয়াতে শব্দ সংখ্যা ৫৭, যেটা ১৯ কে ৩ দিয়ে গুন করে পাওয়া যায়। আয়াতটির একটা বাক্য হলো, “——— আল্লাহ এর দ্বারা কি বুঝাতে চেয়েছেন?” এই বাক্যটিতে মোট ১৯ টা শব্দ আছে। আর আয়াতটির প্রথম থেকে এই আয়াত পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৩৮ টি। লক্ষনীয়, ১৯*২=৩৮। আরো লক্ষনীয় এই বাক্যটির পরের বাক্যগুলোতে মোট ১৯ টা শব্দ আছে।


প্রথম থেকে শুরু করে এই অস্বাভাবিক বড় আয়াতটি পর্যন্ত মোট আয়াত ৩০ টি। এই ৩০ টি আয়াতে মোট শব্দ সংখ্যা ৯৫ টি । লক্ষনীয, ১৯*৫=৯৫।
প্রথম থেকে শুরু করে এই আয়াতে উল্লেখিত “উনিশ” শব্দটি পর্যন্ত মোট ৩৬১ টি অক্ষর আছে। ৩৬১ কে ১৯ দিয়ে ভাগ করলে ১৯ পাওয়া যায়। (১৯*১৯=৩৬১)। সুবহানাল্লাহ——! এটা কি মোটেও মেনে নেয়ার মত ! সূরাটির প্রথম থেকে উনিশতম আয়াত পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৫৭ টি। ১৯*৩=৫৭।
সূরাটিতে ক্রমিক নম্বর সহ আয়াত আছে মোট ৫৬টা। আর ক্রমিক নম্বর ছারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আয়াতটি আছে সূরার শুরুতে। তাহলে মোট আয়াত ৫৬+১=৫৭। লক্ষনীয় ১৯*৩=৫৭। রাব্বুল আলামীন নিশ্চয়ই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কে “মুদ্দসসির” (গোপন) রেখেছেন সূরাটির নামটিকে শিল্পোত্তির্ণ করতে!


১৩. “হিসাব” শব্দের অদ্ভুত হিসাব: আল্লাহ সুভহানাহুওাতা’লা পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন“যাতে আল্লাহ জেনে নেন যে, রাসূলগণ তাদের পালনকর্তার পয়গাম পৌছিয়েছেন কিনা। আল্লাহর সবকিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন”। (সূরা জ্বীন : ২৮)। এই আয়াতে “আদাদা” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে হিসাব বুঝোতে। শব্দটি সূরা জ্বীনের সর্বশেষ আয়াতের সর্বশেষ শব্দ। লক্ষনীয়, কোরআনে ৫৭ (১৯*৩) প্রকারের বিভিন্ন সংখ্যা (আদ্দা) ব্যাবহার করা হয়েছে। সূরা জ্বীন কোরআনের ৭২ নং সূরা আর “আদাদা” শব্দটি এসেছে এই সূরার ২৮ নং আয়াতে। এখন ৭+২+২+৮= কত ? = ১৯ ! “আদাদা” শব্দটি সুরাটির শেষ আয়াতের শেষ শব্দ। এই সূরার প্রত্যেকটি আয়াতের শেষ শব্দগুলোর মোট অক্ষর সংখ্যা ১১৪। ১১৪=১৯*৬। সূরাটির ২৮ টা আয়াত শেষ হয়েছে ২৮ টা শব্দ দিয়ে। কিছু কিছু শব্দ পুনরায এসেছে। এই পুনরায় আসা শব্দগুলোর রিপিটেসন বাদ দিলে পাওয়া যায় ১৯ টি মৌলিক শব্দ। আর এই ১৯ টি মৌলিক শব্দ গঠিত হয়েছে ১৯ টি বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন সমাহারে। উল্লেখ্য আরবী বর্ণমালা ২৮ টি বিভিন্ন বর্ণ নিয়ে গঠিত। “আদাদা” শব্দটি লিখা হয় আইন, দাল, দাল ও আলিফ বর্ণ দিয়ে। সূরা জ্বীন এ আইন ৩৭ বার, দাল ৫৪ বার, দাল ৫৪ বার, আলিফ ২১৬ বার করে এসেছে। এই অক্ষরগুলো মোট রিপিটেশন ৩৭+৫৪+৫৪+২১৬=৩৬১। ১৯*১৯ = কত ? ৩৬১! সুবহানাল্লাহ—– না জানি আরো কত হিসাব বাকি পরে আছে ! বুঝেছেন ! এতকিছু হিসেব করে এই একটি শব্দ “আদাদা” কে বসানো হয়েছে। কি বিষ্ময়কর এ মহাগ্রন্থ!


১৪. কোরআনে আসা সংখ্যাগুলো: কোরআনে মোট ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যা এসেছে। কোরআনে আসা এই ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যার সমষ্টি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
(১*+২*+৩*+৪*+৫*+৬*+৭*+৮*+৯*+১০*+১১+১২*+১৯+২০+৩০*+৪০*+৫০+৬০+৭০*+৮০+৯৯+১০০*+২০০*+৩০০+১০০০*+

২০০০+৩০০০+৫০০০+৫০,০০০+১০০,০০০=১৬২,১৪৬ (১৯*৮৫৩৪)। এই সংখ্যাগুলোর মধ্যে স্টার দেয়াগুলো কোরআনে রিপিট করা হয়েছে। এদের রিপিটেসনকে ধরে নিয়ে যোগ করলে, যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। আর সংখ্যাটি হলো ১৭৪,৫৯১। ১৯*৯১৮৯! এখন বিষয় হচ্ছে মুহাম্মদ (সঃ) কি অংকের শিক্ষক ছিলেন? না ধর্মপ্রচারক? পৃথিবীর যে কোন অংকবিদ, ১৯ এর এরকম রহস্যভরা কোন বই লিখার সাহস করুক দেখি! আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন? নাকি ভয় পাচ্ছেন? রহস্য এখনো শেষ হয়নি—!!! কুরআনে ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যা ছাড়াও, ৮টি দশমিক সংখ্যার উল্যেখ আছে। এগুলো হলো- ১/২০, ১/৮, ১/৬, ১/৫, ১/৪, ১/৩, ১/২, ২/৩। এই আটটি সংখ্যাকে ধরলে কোরআনে মোট মৌলিক সংখ্যা দ্বারায় ৩৮টি। ৩৮ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ কোরআনে উল্যেখিত মোট সংখ্যার সংখাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। যেসব সংখ্যাকে ঐ সংখ্যা ও ১ ব্যাতিত অন্য কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না তাদেরকে প্রাইম নাম্বার বলা হয়। ১৯ একটি প্রাইম নাম্বার। কুরআনে পূর্ণ সংখ্যার সংখ্যা ৩০ টি। আর ৩০ সংখ্যাটি অংকের ১৯ তম নন-প্রাইম সংখ্যা। (৪,৬,৮,৯,১০,১২,১৪,১৫,১৬,১৮,২০,২১,২২,২৪,২৫,২৬,২৭,২৮, ৩০)। কুরআনে ৮টি দশমিক সংখ্যা আছে। অংকে ৮ নাম্বার প্রাইম নাম্বার হচ্ছে ১৯। গুনে দেখতে পারেন। (২,৩,৫,৭,১১,১৩,১৭, ১৯)।


১৫. ১৯তম অক্ষর ক্বাফ: ক্বাফ অক্ষরটি সংখ্যাগত মানের দিক থেকে আরবী বর্ণমালার ১৯তম অক্ষর। (আলিফ, বা, তা, ছা, জ্বিম, হা, খা, দাল, জাল, রা, ঝা, ছিন, সিন, সোয়াদ, দোয়াদ, ত্বো, জো, আইন, গইন, ফা, ক্বাফ) যেহেতু ১৯ নাম্বার অক্ষর, তাই এটার মধ্যেও নিশ্চয়ই মিরাকল থাকবে—

ক. কোরআনের সকল সূরার ১৯ নং আয়াতগুলোতে ক্বাফ অক্ষরটি এসেছে মোট ৭৬ বার। ৭৬ কে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। ৭৬/১৯=৪।

খ. কোরআনে যেসব সূরার অবস্থানকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়, ঐ সকল সূরায় ক্বাফ এসেছে মোট ২২৮ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১৯ ৩৮ ৫৭ ৭৬ ৯৫ ১১৪ মোট ৮৬ ৭৪ ৪৯ ১৫ ৩ ১ ২২৮
১৬. এটাই শেষ আর লিখবো না — হা-মিম এই দুটি অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে কোরআনের ৭ টি সূরা। এগুলো হলো ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নং সূরা। সূরাগুলোতে হা ও মিম এই অক্ষর দুটি এসেছে এভাবে সূরা নং হা মিম ডিজিট গুলোর যোগফল মোট ডিজিট

৪০ ৬৪ ৩৮০ ৬+৪+৩+৮+০ ২১
৪১ ৪৮ ২৭৬ ৪+৮+২+৭+৬ ২৭
৪২ ৫৩ ৩০০ ৫+৩+৩+০+০ ১১
৪৩ ৪৪ ৩২৪ ৪+৪+৩+২+৪ ১৭
৪৪ ১৬ ১৫০ ১+৬+১+৫+০ ১৩
৪৫ ৩১ ২০০ ৩+১+২+০+০ ৬
৪৬ ৩৬ ২২৫ ৩+৬+২+২+৫ ১৮


মোট ২৯২ ১৮৫৫ ১১৩ মোট হা-মিম =২১৪৭ (১৯*১১৩)!!! মোট ডিজিট = ১১৩। শুধু এই নয়- যদি আমরা সূরাগুলোকে দুটি গ্রুপে ভাগ করি; এভাবে ৪০, ৪১, ৪২ এক গ্রুপে আর বাকী চারটি আরেকগ্রুপে, তাহলে প্রতি গ্রুপে হা-মিমের মোট সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য পাওয়া যাবে। আর উপরের টেবিলের মতই ডিজিটগুলোর মোট যোগফল, হা-মিমের মোট সংখ্যাকে ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর যা থাকে তার সাথে মিলে যাবে!!! হা-মিম, ১১২১ (১৯*৫৯) ও ১০২৬ (১৯*৫৪)টি। ডিজিটের যোগফল, ৫৯ ও ৫৪। রাব্বুল আলামিন তার সব সৃষ্টির মধ্যেই, এরকম সামঞ্জস্য বজায় রেখে সৃষ্টি করেছেন। কেউ কেউ তা চোখ খুলে দেখেনা, ফলে বুঝেনা।

১০. কিভাবে এসব হলো ! : আল্লাহ পাক কোরআনকে ১৯ সংখ্যাটির গানিতীক কোড দিয়ে সতর্কতার সাথে নাজিল করেছেন। আর দুটি উদাহরণ দেই, ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।

ক. আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বারটি জয়গায় লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্যেখ করেছেন। এবং প্রতিবার তিনি তাদের সম্বোধন করেছেন “কওমে লুত” বলে। কিন্তু সূরা ক্বাফ এর ১৩ নং আয়াতে তিনি লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে “ইখওয়ানুল লুত: বলেছেন; আর্থেল দিকে থেকে উভয়টাই সমান। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাহলে কেন এখানে “ক্বওমে লুত” শব্দটি ব্যাবহার করলেন না ?
কারণ এই সূরাতে এখানে “কওমে লুত” ব্যাবহার হলে এই সূরাতে “ক্বাফ” অক্ষরটির সংখ্যা ৫৮ হয়ে যেতো, যেটাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায় না। সে জন্য একই অর্থবোধক “ইয়াখওয়ানুল লুত” ব্যাবহার করে ক্বাফ এর সংখ্যা এই সূরাতে ৫৭ রাখা হয়েছে, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

খ. সূরা কাহফের ২৫ নং আয়াতটিতে ৩০৯ বছর বুঝানো হয়েছে এভাবে “ওরা গুহার ভিতরে ছিল ৩০০ বছর, তারা এর সাথে যোগ করেছে আরো ৯ বছর।” আবার নূহ (আ এর সাথে সম্পর্কিত ৯৫০ সংখ্যাটি বলতে গিয়ে কোরআন ১০০০ ও ৫০ এর সাহায্য নিয়েছে এভাবে “১০০০ থেকে ৫০ বাদ দিলে যা হয়।” এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহ তায়ালা কি পারতেন না, এভাবে প্রকাশ না করে সংখ্যাগুলিকে সরাসরি প্রকাশ করতে ? অথবা কেন তিনি এমন পদ্ধতি ব্যাবহার করলেন ? কারন ৯৫০ কে সরাসরি “৯৫০” লিখলে বা ৩০৯ কে সরাসরি “৩০৯” এভাবে লিখলে, কোরআনে যে সংখ্যাগুলি পাওয়া যাবে তাদের যোগফলকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যাবে না! এভাবে কোরআন এর প্রতিটি আয়াত, এমনকি প্রতিটি শব্দ ১৯ এর গানিতিক রহস্যে সাজানো। একটি শব্দের হেরফের করা সম্ভব নয়। কি চমৎকার আর যৌক্তিক মহান প্রভুর নিদর্শণ!



১১. কেন এত ১৯ ? : “১৯ এর এতোসব প্রয়োগ দেখে হয়তো আপনার জানতে ইচ্ছে করছে, এটার কি দরকার ছিল অথবা কোরআনের বাহ্যিক অবস্থানের সাথে এর সম্পর্ক কি। উত্তরটা সহয। কোরআনকে যে কোন ধরনের বিকৃতি থেকে রক্ষা করা। আজ সারা পৃথিবীর প্রতিটা মুসলমানের ঘরে কোরআন আছে। এই কিতাব যেহেতু একটা ধর্মগ্রন্থ তাই এটা অবিকৃতির সাথে সবার ঘরে শোভা পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলামের শত্রুরা বসে নেই। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরাম, কোরআনকে বিকৃত বইয়ের গাদায় ফেলতে। কোরআনকে কেউ যদি বিকৃত করার চেষ্টা করে তা এখন ধরা সম্ভব, ১৯ এর ম্যাথমেটিক্যাল কোড দিয়ে। মহান আল্লাহ এটাকে এমন একটা রক্ষাকবচ বানিয়ে দিয়েছেন, যেটা কোন মানব মস্তিস্ক চিন্তা করারও শক্তি রাখে না।” সুবহানাল্লাহ——

চলুন দেখি এভাবে মিলে যাওয়া কতটা সহয — আপনি অংকের সম্ভাবনা অধ্যায়টার প্রথম কয়েকটি রুল জানলেই, নিচের আলোচনাটা বুঝতে পারবেন।

১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যকার যে কোন একটি শব্দের রিপিটেশনের পরিমান ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে, এর সম্ভাবনা = ১/১৯ তাহলে চারটি শব্দেরই রিপিটেসনের পরিমান ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে, এর সম্ভাবনাও একইভাবে ১/১৯4 এই চারটি শব্দের অপরিহার্য গুনবাচক শব্দগুলো ততবারই এসেছে যতবার মুল শব্দ এসেছে। এরুপ মিলে যাওয়ার সম্ভাবনাও একইভাবে ১/১৯4


২. এই চারটি শব্দের রিপিটেশন সংখ্যাকে ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর প্রাপ্ত সংখ্যাগুলোর যোগফলকেও ১৯ দ্বারা ভাগ করা সম্ভব। এরুপ হওয়ার সম্ভাভবনা ১/১৯²।


৩. আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নামের সংখ্যাগত মান ২৬৯৮, আল্লাহ শব্দটার রিপিটেশন সংখ্যা ১৬৯৮ এর সাথে মিলে যাবে এরুপ হওয়ার সম্ভাবন ১/২৬৯৮4।
আর বেশি না করি। দেখি এ পর্যন্ত কত দাড়ালো! উপরে ১,২ ও ৩ নং পয়েন্ট একইসাথে ঘটার সম্ভাবনা ১/১৯4x১/১৯4x১/১৯²x১/২৬৯৮4 = ১/৩২৪৮,৬৫৬৪,৮২৫৫,৭১০১, ৮৪৬৮,৫০৭৮,৪১৬।

আজব! পড়তে পারলে পড়েন সংখ্যাটা। এর কোন অস্তিত্ব আছে!! ভুলে যাবেন না আবার – এটা শুধুমাত্র “বিসমিল্লাহ” আয়াতটির চারটি শব্দের রিপিটেসনের তিনিটি পয়েন্টের গানিতীক সম্ভাবনা! এখানে নেয়া হয়নি সূরা আলাক, সূরা মুদ্দাস্সির, সূরা জ্বীন এর মত গুরুত্বপূর্ণ ১৯ এর মিরাকলগুলো। এমনকি নেয়া হয়নি হরুফে মুকাত্তায়াত এর মত Vast item কে। সবগুলোকে নিয়ে সম্ভাবনা বের করতে গেলে না জানি সংখ্যাটি কত দারাতো!!! কোরআনে ১৯ এর প্রয়োগ এর উপর আরো বিস্তারিত ডাটা মুছে ফেলা হল পোষ্ট সংক্ষিপ্ত করনার্থে।


হে সত্যান্বেষী! আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি কেউ বলে ১৯ এর এই গানিতীক মিলে যাওয়াগুলো Coincidence। কুরআনে ১৯ এর এই অলৌকিক ভারসাম্যকে যদি কেউ বুঝে, সে স্বীকার করতে বাধ্য হবে এটা এমন একটা বই যেটার মত লেখা, মানুষের ক্ষমতা ও শক্তির বাহিরে। এর পিছনে হাত আছে এক মহান শক্তির। আর বইটির মালিক বলেই দিয়েছেন – “বলূন: যদি সকল মানব আর জ্বীন মিলে, এই কোরআনের অনুরুপ রচনা আনয়ন করার জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্যও করে; তবুও তারা কখনো এর অনুরুপ কিছু আনতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাইল”৮৮)।












 
Top