জুমা আদায় করা ফরয হওয়ার জন্য ১১টি শর্ত

❁ শহরে  মুকীম হওয়া। ❁  সুস্থ হওয়া, অসুস্থের  উপর জুমা   ফরয   নয়।  অসুস্থ দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য   যে, জুমা  মসজিদ   পর্যন্ত   যেতে    অক্ষম   অথবা   মসজিদে    গেলে রোগ    বৃদ্ধির    কিংবা    দেরীতে    সুস্থ    হওয়ার    সম্ভাবনা  রয়েছে।   অতিশয়   বৃদ্ধ    ব্যক্তি  অসুস্থ   ব্যক্তির  হুকুমের  অন্তুর্ভূক্ত।

রাসুলুল্লাহ্    ﷺইরশাদ   করেছেন:     “যে   ব্যক্তি   আমার উপর   সারাদিনে   ৫০বার   দরূদ   শরীফ   পড়ে,   আমি  কিয়ামতের দিন তার  সাথে   মুসাফাহা  করবো।” (আল কওলুল  বদী)  ❁স্বাধীন  হওয়া,  গোলামের উপর জুমা   ফরয   নয়।   তার   মুনিব   তাকে   (জুমা   আদায়ে)   বাধা  দিতে  পারবে।  ❁পুরুষ   হওয়া,  ❁  প্রাপ্ত   বয়স্ক  হওয়া, ❁বিবেকবান হওয়া,  এই দু’টি  শর্ত জুমার জন্য নির্দিষ্ট নয়      বরং      প্রত্যেক      ইবাদত      ফরয      হওয়ার      জন্য  বিবেকবান     ও   প্রাপ্ত   বয়স্ক   হওয়া    শর্ত।❁দৃষ্টি   শক্তি  সম্পন্ন  হওয়া,   ❁  হাটতে  সক্ষম  হওয়া,  ❁   বন্দী     না  হওয়া,    ❁     বাদশা     (শাসক)     অথবা     চোর,    ডাকাত ইত্যাদি  কোন    প্রকারের   জালিমের ভয়ের আশংকা না থাকা।❁ঝড়,   তুফান,   শিলাবৃষ্টি   ও   ঠান্ডা   ইত্যাদির  ক্ষতির  সম্ভাবনা   হতে   মুক্ত  হওয়া   অর্থাৎ  তা  এতটুকু পরিমাণ   হওয়া  যাতে   ক্ষতি    হওয়ার  সত্যিই  সম্ভাবনা রয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭০-৭৭২ পৃষ্ঠা) যার   উপর    নামায    ফরয   কিন্তু   কোন   শরয়ী   ওযরের  কারণে   জুমার     নামায   ফরয     হয়নি,   তাকে   অবশ্যই  জুমার দিন  যোহরের  নামায আদায়  করে  দিতে  হবে।  কেননা,  জুমার  দিন   জুমার   নামায  আদায়   করতে  না  পারলে, কিংবা  শর্ত পাওয়া না  যাওয়ার কারণে  জুমার  নামায ফরয না  হলে,    যোহরের  নামায  মাফ হবে না। তা অবশ্যই আদায় করতে হবে।

জুমার সুন্নাত সমূহ

জুমার নামাযের জন্য প্রথম ওয়াক্তে যাওয়া, মিসওয়াক করা, উত্তম (ভাল) ও সাদা কাপড় পরিধান করা, তৈল ও  সুগন্ধি  লাগানো  এবং  প্রথম  কাতারে  বসা  মুস্তাহাব  আর জুমার দিন গোসল  করা সুন্নাত। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা। গুনিয়া, ৫৫৯ পৃষ্ঠা)

জুমার দিন গোসল করার সময়

প্রখ্যাত   মুফাস্সীর,     হাকীমূল    উম্মত,   হযরত   মুফতী আহমদ   ইয়ার    খাঁন    رَحْمَۃُ     اللّٰہِ    تَعَالٰی     عَلَیْہِ   বলেন: কতিপয় ওলামায়ে  কিরাম    বলেন; জুমার দিন  গোসল করা  জুমার  নামাযের জন্য সুন্নাত। জুমার দিনের জন্য নয়।     সুতরাং  যার  উপর  জুমা   ফরয    নয়,    তার  জন্য জুমার   দিন   গোসল    করাও     সুন্নাত    নয়।    কিছু   কিছু   ওলামায়ে  কিরাম  বলেন: জুমার দিনের  গোসল  জুমার নামাযের এতটুকু আগে করা  উচিত, যেন ঐ গোসলের ওযু দ্বারা  নামায আদায়   করা যায়। তবে সঠিক এটাই  যে, জুমার দিন গোসল করার সময় ফযর উদয় হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়। (মীরআত, ২য়  খন্ড, ৩৩৪ পৃষ্ঠা) জানা   গেলো,   নারী,   মুসাফির   ইত্যাদি    যাদের   উপর  জুমার    নামায   ফরয    নয়,   তাদের   জন্য    জুমার   দিন  গোসল করাও সুন্নাত নয়।


জুমার গোসল সুন্নাতে যায়িদা

হযরত আল্লামা  ইবনে আবেদীন শামী   رَحْمَۃُ  اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: জুমার নামাযের জন্য গোসল করা সুন্নাতে যায়িদা। এটা ত্যাগ করলে কোন অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৩৩৯ পৃষ্ঠা)

খোৎবার সময় কাছাকাছি থাকার ফযীলত

হযরত  সায়্যিদুনা  সামুরা  ইবনে জুনদুব  رَضِیَ  اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ  থেকে    বর্ণিত;নবী  করীম,   রউফুর  রহীমصَلَّی   اللّٰہُ تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “তোমরা  খোৎবা পাঠের সময় উপস্থিত থাকো   এবং ইমামের  কাছাকাছি থেকেই তা  শ্রবণ  করো। কেননা    খোৎবা পাঠের সময় যে  ইমাম  থেকে  যতটুকু  পরিমাণ    দূরত্বে  থাকবে,  সে জান্নাতেও ততটুকু  পরিমাণ  পিছনে  থাকবে।যদিও  সে (অর্থাৎ    মুসলমান)   নিশ্চিত   জান্নাতে    প্রবেশ   করবে।  (সুনানে       আবু       দাউদ,       ১ম       খন্ড,         ৪১০       পৃষ্ঠা, হাদীস-১১০৮)

তখন জুমার নামাযের সাওয়াব পাওয়া যাবে না

তাজেদারে  রিসালাত,   নবীয়ে   রহমত,  শফীয়ে  উম্মত  صَلَّی  اللّٰہُ   تَعَالٰی   عَلَیْہِ    وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم  ইরশাদ  করেন:    “যে  ব্যক্তি,   ইমাম জুমার খোৎবা  দেয়ার  সময়   কথা বলে,  তার উদাহরণ ঐ গাধার মতো, যে  কিতাব বহন  করে। আর  ঐ  সময় যে কেউ  তার  সাথীকে  এরূপ বলল  যে, “চুপ    থাক”    বলে    সে     জুমার    সাওয়াব    পাবে     না।” (মুসনাদে ইমাম  আহমদ বিন্  হাম্বল,    ১ম খন্ড,  ৪৯৪  পৃষ্ঠা, হাদীস-২০৩৩)

নিরবে খোৎবা শুনা ফরয

যে সমস্ত  কাজ  নামাযের  মধ্যে  হারাম  যেমন-পানাহার করা,  সালাম  ও   সালামের  জবাব  দেওয়া   ইত্যাদি  তা খোৎবার  সময়ও  হারাম।     এমনকি  নেকীর   দা’ওয়াত  দেয়াও   হারাম।   তবে   খতিব  সাহেব  নেকীর  দাওয়াত দিতে    পারবেন।    যখন   খোৎবা   পাঠ   করা   হয়   তখন খোৎবা       শুনা     এবং     নিরব      থাকা      উপস্থিত     সকল   মুসল্লীদের   উপর    ফরয।  আর   যে  সমস্ত  লোক  ইমাম থেকে দূরে এবং   খোৎবার  আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না   তাদের উপরও নিরব   থাকা  ওয়াজীব।  খোৎবা পাঠের সময় কাউকে কোন  খারাপ কথা  বলতে দেখলে তাকে হাত বা মাথার ইশারা দ্বারা নিষেধ করতে পারবে। মুখ দ্বারা   নাজায়িয।   (বাহারে   শরীয়াত,   ১ম   খন্ড,   ৭৭৪  পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা)

খোৎবা শ্রবণকারী দরূদ শরীফ পড়তে পারবে না

খতিব  সাহেব  খোৎবাতে  সুলতানে  মদীনা,   হুযুর   صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم এর নাম  মোবারক  উচ্চারণ  করার সময়   উপস্থিত  মুসল্লীরা মনে  মনে  দরূদ শরীফ পাঠ  করবে।  খোৎবা  পাঠের  সময়  মুখে  দরূদ  শরীফ  পড়ার অনুমতি নেই। অনুরূপ সাহাবায়ে  কিরামগণের عَلَیۡہِمُ  الرِّضۡوَان  নাম উচ্চারণ করার  সময়ও   মুখে  رَضِیَ  اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ বলার অনুমতি নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম  খন্ড,  ৭৭৫  পৃষ্ঠা।  দুররে মুখতার, ৩য়  খন্ড,   ৪০  পৃষ্ঠা)
 
Top