মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান

হজ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অন্যতম নিদর্শন, মুসলমানদের মিলনমেলার অন্যতম নিমিত্ত । বান্দাকে তার রবের নিকটবর্তী করে হজ্ব । মুমিন বান্দাহ স্বীয় রবের প্রেমে মত্ত হয়ে হজ্বের কার্যাবলি আদায় করে, এক স্থান হতে অন্য স্থানে ছুটে যায়, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলতে বলতে তাওয়াফ করে, সাফা মারওয়াতে দৌড়ায়, শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করে, এমনিভাবে মিনা,মুযদালিফা ও আরাফায় গমন করে বিভিন্ন নিদর্শনাদি অবলোকন করে, এতে করে বান্দার অন্তরে খোদাপ্রেম আরও তীব্রতর হয় । মোটকথা স্বীয় রবের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে । আর আল্লাহ কার উপর সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট ? কাকে তিনি মাহবুব বলেছেন ? কার জন্যে তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ? মু’মিন মাত্রই এ সব প্রশ্নের উত্তর জানা আছে । সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এই ইবাদতে অংশ নিতে গিয়ে তাঁর প্রিয় হাবীব সরকারে কায়েনাতের দরবারে উপস্থিত হওয়া কোন অংশে কম মাহাত্ম্যপূর্ণ নয় । মদীনা মুনাওয়ারায় উপস্থিত হওয়া হজ্বের আরকান সমূহের মধ্যে নয় কিন্তু নিঃসন্দেহে অধিক মর্যাদাপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ, বরকতময়, নৈকট্য অর্জনের উচ্চতর মাধ্যম বটে । আর এ কথা নিঃসন্দেহ যে, এটি নবীপ্রেম ও নৈকট্যের ব্যাপার, এটি ঈমান মজবুতিকরন ও বলবৎ রাখার উৎকৃষ্ট মাধ্যম । কেননা সরকার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবার খোদাপ্রাপ্তি, গুনাহ মাফ, রহমত-বরকতের স্থান বৈকি ।

কুরআনের ভাষায় নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওযায় উপস্থিতিঃ
ইরশাদ হচ্ছে-

وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا

অনুবাদঃ এবং যদি কখনো তারা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার জুলুম করে তখন, হে মাহবুব! (তারা) আপনার দরবারে উপস্থিত হয় এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে । আর রাসুল তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও অত্যন্ত দয়ালু পাবে । [১]

এই আয়াতে কারীমা দ্বারা ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য তিনটি অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে-

১. আক্বা মাওলা নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার দরবারে মুকাদ্দাসায় উপস্থিত হওয়া ।
২. সেখানে (দরবারে নবী) উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা ।
৩. রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ প্রার্থনা বা তাঁর উসিলায় ক্ষমা চাওয়া ।
এই তিন বিষয়ের সমন্বয়ে গুনাহগার বান্দা অতি সহজে আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমা লাভ করবে । আর এই পদ্ধতি কোন বান্দার দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি নয় বরং খোদ বারী তায়ালা নিজেই তা বাতলে দিয়েছেন । আজ তাঁরি বান্দা খাদেম দাবী করে আমরা যিয়ারত করতে বাঁধা দেই ? নিরুৎসাহিত করি।

সর্বসম্মতভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে গুনাহ মাফ চাওয়া বৈধ । মুফাসসিরীন কেরাম তাঁর হায়াতে তাইয়্যেবাহ ও তাঁর পরবর্তী সময় উভয়কেই এতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন । আর এই আয়াত দ্বারাই হায়াতুন্নবীর বৈধতাও প্রমাণিত হয় । ইমাম বাযযার এ প্রসঙ্গে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন –

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন –

حَيَاتِي خَيْرٌ لَكُمْ تُحَدِّثُونَ وَيُحَدَّثُ لَكُمْ وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكُمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ فَمَا كَانَ مِنْ حَسَنٍ حَمِدْتُ اللَّهَ عَلَيْهِ وَمَا كَانَ مِنْ سَيِّئٍ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكُمْ

অনুবাদঃ আমার জীবন তোমাদের জন্য কল্যাণকর । তোমরা আমার নিকট কোন কিছু জানতে চাইবে, আমি তার জবাব দেবো । আমার ওফাতও তোমাদের জন্য কল্যাণকর । তোমাদের আমলসমূহ আমার নিকট পেশ করা হবে, তোমাদের উত্তম আমলসমূহ দেখে আমি আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করব । আর তোমাদের মন্দ আমল দেখতে পেলে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট মাগফেরাত কামনা করব । [২]

এ দ্বারা নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ওফাত পরবর্তী সময়েও উম্মতের জন্য সুপারিশ সাব্যস্ত হয় । আর রওযা মুকাদ্দাসায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জীবিত থাকার বিষয় তাঁর হাদীস হতেই পাওয়া যায় । এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে সাহাবা কেরাম, তাবেঈ ও উম্মতের উলামায়ে হক্ব রওযা মুকাদ্দাসে ওসীলা তালাশ করেছেন ।

পবিত্র কুরআনে আরও ইরশাদ হচ্ছে-

وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ أَنَّهُ مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ

অনুবাদঃ আর যখন আপনার নিকট তারা উপস্থিত হবে, যারা আমার নিদর্শনসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, তখন তাদেরকে আপনি বলুন, ‘তোমাদের উপর শান্তি’! তোমাদের প্রতিপালক নিজ করুণার দায়িত্বে রহমত অবতীর্ণ করেছেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ মূর্খতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে বসে, অতঃপর এর পরে তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয়, তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু । [৩]

নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা মুকাদ্দাসায় উপস্থিত যিয়ারত অতি সওয়াব ও বরকতময় কাজ। এটি মুস্তাহাব কাজসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম বরং ওয়াজিবের কাছাকাছি ।


হাদীসের আলোকে রওযা মুকাদ্দাসায় উপস্থিতির ফজিলতঃ

হাদীস নং-১: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي
অনুবাদঃ নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার রওযা মুবারক যিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফাআ’ত ওয়াজিব হয়ে গেল । [৪]
হাদীস নং-২: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে আরও বর্ণিত হয়-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَ قَبْرِي حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي
অনুবাদঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার রওযা মুবারক যিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফাআ’ত আবশ্যক হয়ে গেল । [৫]
হাদীস নং-৩: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ جَاءَنِي زَائِرًا لَا يَعْلَمُهُ حَاجَةً إِلَّا زِيَارَتِي كَانَ حَقًّا عَلَيَّ أَنْ أَكُونَ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অনুবাদঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি (যিয়ারতকারী) আমার নিকট (রওজা শরীফে) কেবল যিয়ারতের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয়, তার জন্য আমার উপর হক যে, কিয়ামতের দিন যেন আমি তার শাফাআ’তকারী হই । [৬]
হাদীস নং-৪: উমর ইবনে খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পরিবারের এক সদস্য হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ زَارَ قَبْرِي ” أَوْ قَالَ: ” مَنْ زَارَنِي كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا أَوْ شَهِيدًا، وَمَنْ مَاتَ فِي أَحَدِ الْحَرَمَيْنِ بَعَثَهُ اللهُ مِنَ الْآمِنِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অনুবাদঃ যে ব্যক্তি আমার যিয়ারত করল অথবা বেসাল শরীফের পর আমার যিয়ারত করল, আমি তার জন্য সাক্ষ্যদাতা ও শাফাআ’তকারী হব । আর যে ব্যক্তি দুই হেরেম শরীফের একটিতে মৃত্যুবরণ করল, সে কিয়ামতের দিন নিরাপত্তাপ্রাপ্তদের সাথে উত্থিত হবে ।[৭]
হাদীস নং-৫: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ حَجَّ فَزَارَ قَبْرِي بَعْدَ مَوْتِي كَانَ كَمَنْ زَارَنِي فِي حَيَاتِي
অনুবাদঃ যে ব্যক্তি হজ্ব পালন করবে; অতঃপর আমার ওফাতের পর আমার যিয়ারত করবে, তার যিয়ারত ঐ ব্যক্তির মত হবে যে জীবদ্দশায় আমার যিয়ারত করেছে । [৮]
হাদীস নং-৬: উমর ইবনে খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পরিবারের এক সদস্য হতে বর্ণিত-
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ زَارَنِي مُتَعَمِّدًا كَانَ فِي جِوَارِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অনুবাদঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কেবল যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আমার নিকট মদীনায় আগমণ করবে, সে কিয়ামতের দিন আমার পাশে ,প্রতিবেশী হবে । [৯]
হাদীস নং-৭: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-
قَالَ رَسُول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ حَجَّ الْبَيْتَ وَلَمْ يَزُرْنِي فَقَدْ جَفَانِي
অনুবাদঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ্ব করবে আর আমার যিয়ারত করলনা, সে যেন আমার উপর জুলুম করল । [১০]
যিয়ারতের আদবঃ

# মদীনা শরীফে উপস্থিত হয়ে যিয়ারতের নিয়ত করা ।
# গোসল করে পবিত্র ও সাফ সুতর অবস্থায় যাওয়া । পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা ।
# যিয়ারতের আগ হতেই অর্থাৎ, রওজা মুকাদ্দাসায় পৌঁছাবার পূর্ব হতেই আদবের সাথে চলা, নত মস্তকে প্রবেশ করা ।
# পুরো পথ সালাত-সালাম পেশ করা ।
# প্রথমে মসজিদে নববী শরীফে প্রবেশ করে দু’রাকাআ’ত নফল নামায, অতঃপর দু’রাকা’ত শোকরানা নামায আদায় করা।
# রওযা শরীফে উপস্থিত হয়ে সালাম পেশ করা ।
# নিজেকে একাগ্রতার সাথে সরকারে দো আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার সামনে উপস্থিত করা ।
# আদবের সাথে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজার দিকে মুখ করে দু’আ করা ।
ইবনে হুমাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ফাতহুল কাদীরে ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মুসনাদের বরাত দিয়ে ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন-
مِنْ السُّنَّةَ أَنْ تَأْتِيَ قَبْرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قِبَلِ الْقِبْلَةِ وَتَجْعَلَ ظَهْرَك إلَى الْقِبْلَةِ وَتَسْتَقْبِلَ الْقَبْرَ بِوَجْهِك ثُمَّ تَقُولَ: السَّلَامُ عَلَيْك أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
অনুবাদঃ (সাহাবা ও তাবেঈগণের) সুন্নত পদ্ধতি হল, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার রওযা মুনাওয়ারায় উপস্থিত হবে তখন স্বীয় পিঠকে ক্বিবলার দিকে করবে এবং চেহারা রওযা শরীফের দিকে করবে। অতঃপর সালাম পেশ করবে । [১১]

ইমাম মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইবনে ওহাব হতে বর্ণনা করেন-
إذَا سَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَعَا يَقِفُ وَوَجْهُهُ إلَى الْقَبْرِ لَا إلَى الْقِبْلَةِ
অনুবাদঃ রওযা মুকাদ্দাসার সামনে উপস্থিত হয়ে সালাম প্রদান ও দু’আ করার সময় ক্বিবলার দিকে মুখ না করে বরং রওযা শরীফের দিকে করতে হবে । [১২]

একবার খলিফা আবু জাফর মনসুর ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট জিজ্ঞাসা করেন, জিয়ারতের সময় ক্বিবলার দিকে মুখ রাখবেন, না রওযা মুবারকের দিকে রাখবেন ? উত্তরে তিনি বলেন-

فَقَالَ وَلم تَصْرفْ وَجْهَكَ عَنْهُ وَهُوَ وَسِيلَتُكَ وَوَسِيلَةُ أَبِيكَ آدَمَ عيه السَّلَامُ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ بَلِ اسْتَقْبِلْهُ واسْتَشْفِعْ بِهِ فَيُشَفِّعهُ اللَّهُ قَالَ اللَّهُ تعالى (وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظلموا أنفسهم) الآيَةَ
অনুবাদঃ রওজা মুকাদ্দাসা হতে মুখ কেন ফিরাবেন ? যেখানে হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার এবং আদি পিতা আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ওসীলা হবেন । হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে মুখ রেখে আপনি শাফাআ’ত চান, আপনার শাফাআ’ত কবুল হবে । যেমন আয়াতে করীমায় উল্লেখ হয়…… (وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظلموا أنفسهم) [১৩]
মুনীব বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-
رَأَيْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ أَتَى قَبْرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَقَفَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ انْصَرَفَ
অনুবাদঃ আমি হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দেখেছি যে, তিনি হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পবিত্র রওজায় উপস্থিত হয়ে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ হাত উঠিয়ে দু’আ করতে থাকেন, এমনকি আমার মনে হয়েছিল- তিনি যেন নামাযের জন্য নিয়ত করে ফেললেন, অতঃপর তিনি সালাম পেশ করে রওজা শরীফ ত্যাগ করলেন । [১৪]

আল্লাহ পাক রাব্বুল ইজ্জত আমাদেরকে নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে পাকে যথাযথ আদব ও পদ্ধতি সহ উপস্থিত হওয়ার তাওফিক দান করুন । মাসনুন পদ্ধতিতে আদবের সাথে হজ্জ্ব -ওমরার সকল কার্যাদি ও যিয়ারতে মদীনা মুনাওয়ারা বারবার নসীব করুন । আমিন, বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন!

তথ্যসূত্রঃ
১. আল কুরআন,সূরা নিসা: ৬৪ অনুবাদ- আ’লা হযরত (রহঃ) কৃত কানযুল ঈমান ।
২. হাফিজ ইবনে কাসীর কৃত আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৫:২৭৫ দারুল ফিকর বৈরুত, মুসনাদে বাযযার ,কিতাবু আলামাতিন নবুওয়াহ, হাদীস-৯৫৩, হায়সামী মাজমাউজ যাওয়ায়িদ হাদীস নং-১৪২৫০ ।
৩. আল কুরআন,সূরা আনয়া’ম: ৫৪ অনুবাদ- আ’লা হযরত (রহঃ) কৃত কানযুল ঈমান ।
৪. সুনানে দারে ক্বুতনী, ৩:৩৩৪ কিতাবুল হজ্ব, হাদীস-২৬৯৫ মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ বৈরুত , বায়হাক্বী শোয়া’বুল ঈমান হাদীস নং-৩৮৬২ মাকতাবাতুর রুশদ রিয়াদ, ওয়াফা উল ওয়াফা ৪:১৬৮ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ বৈরুত।
৫. ওয়াফা উল ওয়াফা ৪:১৭০ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ বৈরুত, হায়সামী কাশফুল আসতার আন যাওয়ায়িদুল বাযযার হাদীস-১১৯৮ মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ বৈরুত ।
৬. তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ১২:২৯১ হাদীস-১৩১৪৯, মাকতাবাতু ইবন তাইমিয়্যাহ কায়রো, ওয়াফা উল ওয়াফা ৪:১৭০ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ বৈরুত, মাওয়াহিবে লাদুনিয়্যাহ ৩:৫৮৮ মাকতাবাতুত তাওফিকিয়্যাহ কায়রো ।
৭. বায়হাক্বী শোয়া’বুল ঈমান ৬:৪৮ হাদীস নং-৩৮৫৭ মাকতাবাতুর রুশদ রিয়াদ, মুসনাদে আবু দাউদ তাইয়ালসি হাদীস নং-৬৬ দারুল হিজর মিশর, মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস- ২৭৫৫/২৬৩৫ ।
৮. তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ১২:৪০৬ হাদীস-১৩৪৯৭, মাকতাবাতু ইবন তাইমিয়্যাহ কায়রো, মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস- ২৭৫৬/২৬৩৬, ওয়াফা উল ওয়াফা ৪:১৭১ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ বৈরুত।
৯. বায়হাক্বী শোয়া’বুল ঈমান ৬:৪৭ হাদীস নং-৩৮৫৬ মাকতাবাতুর রুশদ রিয়াদ, সুয়ূতী জামেউল আহাদীস, হাদীস-২২৩০৮, মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল মানাসিক হাদীস-২৭৫৬/২৬৩৬ ।
১০. ওয়াফা উল ওয়াফা ৪:১৭১ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ বৈরুত, শিফাউস সিকাম ২৭পৃঃ , সুয়ূতী জামেউল আহাদীস, হাদীস-২১৯৯৭
১১. ইবনে হুমাম, ফতহুল ক্বদীর ৩:১৮০ দারুল ফিকর বৈরুত ।
১২. মোল্লা আলী ক্বারী কৃত শরহুস শিফা ২:১৫৩ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ বৈরুত ।
১৩. কাযী আয়ায, আশ শিফা বিতা’রিফে হুক্বুকিল মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ২:৯২,৯৩ দারুল ফিহা ওমান ।
১৪. বায়হাক্বী শোয়া’বুল ঈমান ৬:৫৩ হাদীস নং-৩৮৬৭ মাকতাবাতুর রুশদ রিয়াদ,


 
Top