বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম♥   

বস্তুত মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে শাবান মাসের ফজিলত অনেক বেশি এবং সে উদ্দেশ্যে শাবান মাসে মুমিন মুসলমানের জন্য বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। বিশেষ করে ‘শবেবরাত’ মাসটিকে বিশেষ মহিমায় মহিমান্বিত করেছে। মহিমান্বিত এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহান সুয়োগ এনে দেয়। ওই রাতে মুমিন বান্দা তার জীবনের গুনাহ থেকে পরিত্রাণ লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ লাভ করে।
একটি বছরের দীর্ঘ পরিক্রমা অতিক্রম করে আসা মাহে রমজানে নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতকে গতিশীল করতে এবং স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে শাবান মাসে যে সমস্ত করণীয় রয়েছে সেগুলো হলো :-
(১) দিন গণনা : রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم)বলেছেন, তোমরা রমজানের (প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে) শাবানের দিনগুলো গণনা করতে থাকো।
(মুসান্নেফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৩০৩, সুনানে তিরমিযি, হাদিস : ৬৭৮, আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৮২৪২)।
(২) বেশি বেশি করে নফল রোজা রাখা : রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم)শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি নফল রোজা রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم)-কে রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং আমি তাঁকে শাবান মাসের মতো এত অধিক নফল রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি।
(সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ১৯৬৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৪, সুনানে তিরমিযি, হাদিস : ৭৩৬)।
(৩) নামাজ, রোজা, জিকির, তিলাওয়াতসহ বেশি বেশি নফল ইবাদত করা। যেন মাহে রমজানের আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয় এবং গতিশীলতা হারিয়ে না যায়।
(৪) স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ করে লক্ষ রাখা। যেন সুস্থ থেকে স্বাভাবিকভাবে গোটা মাহে রমজানের যাবতীয় আমল পালন করা যায়।
(৫) শাবান মাসের ১৫ তারিখের পরে আর বেশি নফল রোজা না রাখা। হজরত কাতাদাহ (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী করিম (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন, তোমরা রমজান মাস ও শাবান মাসের মাঝে এক বা দুই দিনের ব্যবধান বজায় রাখো (রোজা রাখা বর্জন করে)। 
( মুসান্নেফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৩১৬)। 
(৬) নফল সাদাকাহ করা : শাবান মাসে বেশি বেশি দান-খায়রাত করা। যাতে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মুসলমানরা প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সংগ্রহ করে মাহে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।
(৭) বেশি বেশি দোয়া করা : মহান আল্লাহর দরবারে রমজান মাসপ্রাপ্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রজব মাস আরম্ভ হলেই রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) দোয়া করতেন, হে আল্লাহ। আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করো এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পোঁছে দাও।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৪৭, মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৬৪৯৬, আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯)

অতএব, পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ দয়া ও ক্ষমার দৃষ্টি লাভের আকাঙ্খায় শাবান মাসব্যাপী অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি ও মধ্য শাবানের রজনীতে তওবা-ইস্তেগফার করে অতীতের সব গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم)-এর সুমহান আদর্শ অনুসরণে নিজেদের জীবন পরিচালনার দৃঢ় প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণ করা উচিত।
 
Top