উম্মি মানে সৃষ্টিকুলের সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস:  অক্ষরজ্ঞানহীন নয়।

☞ উম্মি মানে সৃষ্টিকুলের সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস: অক্ষরজ্ঞানহীন নয়
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
✍ ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানি
………………………………………
মিশরের আল-আজহার থেকে ডিগ্রী নিয়ে নিজেকে আজহারি বলতে গর্ববোধ করে। সবাই মনে করে সে কিছু লেখাপড়া করে এসেছে। বিশেষত তারা মুখ থেকে কয়েকটি আরবি শব্দ শুনে মনে করে সে মস্তবড় আলেম। কিন্তু যে নবীর শানে বেয়াদবি করে সে কি আলেম, সে কি মুসলমান? না, তারা কখনো আলেম হতে পারে না, তারা জালেম। যারা নবীর শানে বেয়াদবি করে তারা মুসলমান নয়, কাফির। এরা মুনাফিক, ইহুদি-খৃষ্টান গংদের চর? নাম তার মিজানুর রহমান আজহারি। এই আজহারি গাঁজাখুরি কথা বলে, নবীর শানে বেয়াদবি করে, নবীজির অবমাননা করে নিজেকে প্রচার-প্রচারণায় রাখতে চায়। যেমন ইতিপূর্বে বিভিন্ন নবী বিদ্বেষী নাস্তিকরাও একই কৌষল করতো। তিনি অনবরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে বেয়াদবি করে যাচ্ছেন। তার একটি বক্তব্য এমন:
রাজা-বাদশারা ঐ চিঠি গ্রহণ করে না যে চিঠির নিচে প্রেরক সিগনিসার না দেয় কিংবা সিল না দেয়। তো বিশ্বনবী তো সিগনিসার দিতে জানতেন না। কারণ বিশ্বনবী ছিলেন আননবী আলউম্মি। নিরক্ষর নবী, বিশ্বনবীর কোনো অক্ষরজ্ঞান ছিলো না। আলিফ বা তা সা কোনটারে জিম বলে কোনটারে হা বলে উনি বুঝতেন না। কোনটাকে ওয়াহেদ, ইসনাইন, সালাসা এক দুই তিন কিভাবে লেখে, লেখা থাকলেও এটা পড়তেও জানতেন না। উনি নিরক্ষর ছিলেন। লিখিত কোন জিনিস তার কাছে রহস্যের মতো ছিলো। 
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম উম্মি মানে সমগ্র সৃষ্টিজগতের উৎস, সৃষ্টির মুল এবং সকলপ্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি। এর অর্থ কখনো নিরক্ষর ও অক্ষরজ্ঞানহীন নয়।
কুরআন করিমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র কয়েকটি নাম বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে একটি হলো উম্মি। এ নাম তাঁর সৃষ্টির প্রথম উৎস হওয়া ও সমগ্রসৃষ্টিজগতের মুল হওয়ার দলিল।
কুরআন করিম হুযুরের বিশেষ ও স্বাতন্ত্র বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করছে এভাবে:
১.الَّذِيْنَ يَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِيِّ الْاُمَّيِّ 
যারা তাঁর অনুসরণ করে যিনি উম্মি নবী (দুনিয়াতে যিনি কোনো লোক থেকে না পড়েও আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল প্রকার জ্ঞান বিজ্ঞান, ইহকাল ও পরকালের সকল বিষয় ও অদৃশ্যের সংবাদ দেন)। অর্থাৎ তিনি সে মহাজ্ঞানী ও সকল গায়বের সংবাদাতা নবী যিনি মায়ের পেট থেকেই জ্ঞানী হয়ে বের হয়েছেন। এবং সকল অদৃশ্য সংবাদ তিনি সে সময় অর্জন করেছেন যখন তিনি মায়ের পেটে ছিলেন। আল কুরআন, আরাফ, ৭:১৫৭।
২.فَاَمِنُوْا بِاللهِ وَ رَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الاُمِّيِّ 
সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর উম্মি [উপাধিকারী] নবীর উপর (যিনি আল্লাহ ছাড়া আর কারো থেকে কিছুই পড়েন নি, কিন্তু সৃষ্টিজগতের সকলের থেকে বেশি জ্ঞানী) ঈমান আনো। আল কুরআন, আরাফ, ৭:১৫৮।
উপরিউক্ত আয়াতদ্বয়ে যে নবীয়ে উম্মি শব্দের ব্যবহার হয়েছে। এর কয়েকটি অর্থ রয়েছে। এর একটি অর্থের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি সমগ্র কায়েনাতের মুল ও সমস্ত দৃশ্য-অদৃশ্য জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎস।
আরবি অভিধান মতে, উম্মি শব্দটি উম্ম থেকে নির্গত। উম্ম আরবি ভাষায় মুলকে বলা হয়। এ জন্য মাকেও উম্ম বলা হয় এ দৃষ্টিতে যে, সন্তান তার থেকে জন্মগ্রহণ করে।
১. ইমাম রাগেব ইসপাহানি বলেন,
ويقال لكل ما كان أصلا لوجود شيئ او تربيته أو اصلاحه أو متدءه ام-
প্রত্যেক ঐ বস্তকে উম্ম বলা হয় যা কোনো জিনিসের প্রতিপালন বা সংশোধনের অস্তিত্বের মূল বা উৎস হয়। [রাগিব ইস্পেহানি, মুফরেদাত লিআলফাজিল কুরআন:৫৭।]
২. ইমাম মুরতাজা জুবেদি বলেন,
وام كل شئ: اصله وعماده-
প্রত্যেক জিনিসের উম্ম হলো তার উৎস ও মুল ভিত্তি। [জুবেদি, তাজুল আরূস, ১৬:২৭।]
এ অর্থের ভিত্তিতে নবীয়ে উম্মি অর্থ : ঐ নবী যিনি সমগ্র কায়েরনাত তথা সৃষ্টিজগতের মূলভিত্তি ও উৎস। সমগ্র কায়েনাতের অস্তিত্ব যে ভিত্তিমুল থেকে উৎসারিত তা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে। সমগ্র কায়েনাতের উৎপত্তি তাঁর থেকে, আরশ, কুরসি, লাওহ, কলম,…………. সবই তাঁর থেকে সৃষ্টি। তাই তিনি সকল কিছুর মূল। সমগ্র কায়েনাতের অস্তিত্ব নূরে মুস্তাফা (দ.)থেকে বিস্তার লাভ করেছে। সুতরাং হুযুরের নূর কায়েনাত মুল ও কায়েনাত সূচনাকারী। এ কারণে তাঁকে উম্মি নবী তথা মৌলিক জ্ঞানের উৎস বলা হয়। কুরআন করিমের এ আয়াতগুলো থেকে এ কথা প্রমাণিত হয়।
১. আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يمحوا الله ما يشاء ويثبت وعنده أم الكتاب-
আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সুদৃঢ় রাখেন আর তারই কাছে রয়েছে মুল কিতাব। [আল কুরআন, রাদ, ১৩:৩৯।]
১. মহান আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন-
وإنه في أم الكتاب لدينا لعلي حكيم-
আর নিশ্চয়ই এটা আমার নিকট লাওহে মাহফুজে (বিদ্যমান রয়েছে। এটা) উচ্চমর্যাশীল (বিগত সকল কিতাবের উপর বিজয়ি ও উচু মর্যাদাশীল) বিজ্ঞাময়। [আল কুরআন, জুখরূপ, ৪৩:৪।]
এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, কায়েনাতের সমগ্র জ্ঞানের ধারক লাওহে মাহফুজকে উম্ম বলা হলো কেন? ইমাম রাগেব ইস্পেহানি এর উত্তরে বলেন, এ কারণে যে, সকল জ্ঞান লাওহে মাহফুজের দিকে সম্পৃক্ত। আর তা সকল জ্ঞানবিজ্ঞানের মুলউৎস। ইমাম বুসিরি বলেন, দুনিয়া ও আখিরাত প্রিয় নবী দ. এর বদান্যতার সামান্য অংশ। আর লাওহ ও কলমের জ্ঞান তাঁর জ্ঞান-বিজ্ঞানের কিয়দংশ মাত্র।[কসিদায়ে বুরদাহ]
৩. উম্ম শব্দের এ অর্থের কারণে মক্কা নগরিকে উম্মুল কুরা বলা হয়। কুরআনে করিমে মক্কা নগরিকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
وهذا كتاب أنزلناه مبارك مصدق الذي بين يديه ولتنذر أم القري ومن حولها-
আর এটা (ঐ) কিতাব যা আমি নাজিল করেছি (তা) বরকতময়, পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। আর তা এ কারণে (নাজিল করা হয়েছে) যে, আপনি [সকল মানব] বস্তির মুলকেন্দ্র [মক্কা]বাসীদের এবং এর পার্শ্ববতী লোকদের ভীতিপ্রদর্শন করবেন। [আল কুরআন,আনআম, ৬:৯২।]
এ থেকে বুঝা গেলো যে, সকল গ্রাম ও শহরের মুলকেন্দ্র ও উৎস হলো মক্কা। যেমন হাদিস শরিফে আছে, যখন কায়েনাত সূচনা হলো তখন সর্বপ্রথম শুধু পানিই ছিলো, অন্য কিছু ছিলো না। অতঃপর পানি শুষ্ক হতে শুরু করলো। আর যেখানে যেখানে পানি শুকিয়ে গেলো সেখানে জমি সৃষ্টি হলো। আর এভাবে জমি সৃষ্টি হলো। অর্থাৎ যতোটুকু অংশ শুষ্ক হয়ে গেলো তা জমিতে পরিণত হলো আর অবশিষ্ট সমুদ্র রয়ে গেলো।
সমগ্র জগতের ভূখÐের মধ্যে সর্বপ্রথম অংশ যা পানিতে শুষ্ক হয়েছে ও জমিনরূপে প্রকাশিত হয়েছে তা হলো মক্কা নগরি।
১. হযরত আবদুর রহমান বিন সাবিত থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
دحيت الأرض من مكة জমিকে মক্কা থেকে প্রসারিত করা হয়েছে। [তাবারি, জামেউল বয়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, ১:১৯৯, সুয়ুতি, আদদুররুল মানসূর, ১:১১৩, ইবনে কাসির, তাফসিরূল কুরআনিল আজিম, ১:৭১, শাওকানি, ফতহুল কদির, ১:৬৩।]
ইমাম কুরতবি এ হাদিস বর্ণনার পর বলেছেন, ولذالك سميت ام القري এ কারণে মক্কাকে উম্মূল কুরা বলা হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ শহর সম্মানের দিক দিয়ে পৃথিবীর অপরাপর শহর থেকে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাময়। যেহেতু এটাকে বিস্তৃত করে ভূমণ্ডল অস্তিত্ব লাভ করেছে। তাই এটাকে উম্মুল কুরা বলা হয়। [কুরতুবি, 1: 112] তাহলে নবীয়ে উম্মি অর্থ সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাময় নবী।
৩. হযরত কাতাদাহ থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أن أم القري مكة منها دحيت الارض-
নিশ্চয় উম্মুল কুরা হলো মক্কা মুকররমা। এর থেকে ভূখন্ড বিস্তার করা হয়েছে। [তাবারি, জামেউল বয়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, ১৪:১৫, সুয়ুতি, আদদুররুল মানসূর, ৩:৩১৬।] 
ইমাম কুরতবি বলেন, 
سميت ملة ام القري لأنها أول الأرض ومنها دحيت ومنه سميت الأم أما لأنها أصل النسل والارض-
মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে। কেননা, এটা সর্বপ্রথম জমি। আর এটা থেকে জমি প্রসারিত হয়েছে। আর একারণেই উম্মকে উম্ম বলা হয়। কেননা, কেননা, বংশ ও ভূখন্ডের মূল হয়ে থাকে। [কুরতুবি, আলজামে লেআহকামিল কুরআন, ১:১১২।]
ইমাম বগভি বলেন,
وام الشيء اصله ويقال لمكة أم القري لأنها أصل البلاد دحيت الأرض من تحتها-
কোনো বস্তুর উম্ম হলো তার মূল। আর মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়। কেননা, এটা সকল নগরের মুল। এ থেকে ভূখÐ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। [বাগভি, মায়ালেমুত তানযিল, ১:৩৭]
৭. ইবনে কাসির বলেন,
وسميت مكة أم القري لتقديمها وجمعها ما سواها وقيل لأن الأرض دحيت من تحتها-
সর্বপ্রথম ভূখন্ড হওয়ার কারণে মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়। আর এটা বলা হয় যে, এর নিচ দিয়ে জমি প্রসার লাভ করেছে।। [ইবনে কাসির, তাফসিরূল কুরআনিল আজিম, ১:১০।]
এখানে লক্ষনীয় বিষয় এ যে, যেহেতু মক্কা জমিনের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রকাশিত শুষ্ক জায়গা এ জন্য এটাকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে। সুতরাং যেভাবে জমিনে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশের ভিত্তিতে মক্কা মুকাররমাকে উম্মুল কুরা হয়েছে, তেমনিভাবে যখন সৃষ্টিজগতে আল্লাহ তায়ালার পর কিছুই ছিলো না, তখন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার কুন নির্দেশ দ্বারা যে সুন্দর নকশা সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করেছে তাঁর নাম মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। এ জন্য বলা হয়েছে, ইনি রাসূলে উম্মি অর্থাৎ ইনি ঐ রাসূল যিনি সৃষ্টিজগতে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন আর সমগ্র কায়েনাত তাঁর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। মক্কা শহরও যেহেতু উম্ম তাই তাকে সেদিকে সম্পৃক্ত করে উম্মি বলা হয়েছে।
৪. সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব ও উম্মুল কুরআন বলা হয়। কেননা, এ দ্বারা কুরআন মজিদের সূচনা হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الحمد لله أم القران وأم الكتاب والسبع المثاني-
আলহামদু লিল্লাহ (সুরা ফাতিহা) উম্মুল কুরআন, উম্মুল কিতাব ও সাবয়ে মাসানি। [তিরমিযি, জামে সহিহ, ৫:২৯৭, আবু দাউদ, সুনান, ২:৭১, বায়হাকি, সুনানুল কুবরা, ২:৪৫।]
১.ইমাম রাগেব ইস্পাহানি বলেন, 
وقيل لفاتحة الكتاب ام الكتاب لكونها مبدأ الكتاب-
সূরা ফাতিহাকে কুরআনের মূল হিসাবে উম্মুল কিতাব বলা হয়েছে। [আল-মুফরেদাত ফি গরিবিল কুরআন: 20]
২. ইমাম জুবায়দি বলেন, 
الام من القران الفاتحة لأنه يبدأ بها في كل صلاة ويقال لها ام الكتاب ايضا او ام الكتاب-
সুরা ফাতিহা উম্মুল কুরআন। কেননা, এর দ্বারা প্রত্যেক নামাজ শুরু করা হয়। তাকে উম্মুল কিতাব ও উম্মূল কুরআনও বলা হয়। [তাজুল আরূস, ১৬: ২৮]
৩. ইমাম সুয়ুতি বলেন, 
قيل ام الشيء أصله وهي أصل القران لأنطوائها علي جميع أغراض القران وما فيه من العلوم والحكم-
উম্ম কোনো বস্তুর মূলকে বলা হয়। সুরা ফাতিহা কুরআনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য ও জ্ঞান বিজ্ঞানের সমষ্টি হওয়ার কারণে এর মূল। [সূয়ুতি, আল-ইতকান, ১: ১৪৯।]
৪. ইমাম কুরতবি বলেন, 
وسميت ام الكتاب لأنه يتبدأ بكتابها في المصاحف ويبدأ بقراءتها بالصلاة-
সুরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব নাম দেয়া হয়েছে। কেননা, কুরআনে করিম লেখা এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে আর এটা পাঠের মাধ্যমে নামাজ শুরু হয়।তিনি আরো বলেন, 
وأم القران: سورة الحمد وقيل: سميت ام القران لأنها أوله ومتضمنه لجميع علومه-
উম্মুল কুরআন হলো সুরা ফাতিহা। এটাকে উম্মুল কুরআন এ কারণে বলা হয় যে, এটা কুরআনের প্রথম আর এর মধ্যে সকল জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। [আল-জামে লেআহকামিল কুরআন, ১: ১১২]
উপরিউক্ত আলোচনার ভিত্তিতে পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, লাওহে মাহফুজ সকল জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎস হওয়ার কারণে এটাকে উম্মুল কিতাব বলা হয়।আর লাওহে মাহফুজের জ্ঞান হুযুরকে দেয়া দেয়া হয়েছে। মক্কার ভূখন্ডকে জমিনের মূল হওয়ার কারণে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে। আর সূরা ফাতিহা যার মাধ্যমে কুরআন করিমের সূচনা হয়েছে তাও উম্মুল কুরান হলো। ঐগুলোর মধ্যে প্রত্যেক নিজ স্তর অনুযায়ি উম্মি হলো। এরই উপর ভিত্তি করে যার মাধ্যম কায়েনাতের সূচনা হয়েছে, যার নূর সমগ্রসৃষ্টিজগতের উৎস সাব্যস্থ হলো, যার হাকিকত কায়েনাতের ভিত্তি হলো, যার মাধ্যমে সকল বস্তু অস্তিত্ব লাভ করলো, তিনি হলেন আমাদের প্রিয়নবী বিশ্বনবী মুস্তাফা (দ.)। তিনিই সকল রাসূল ও নবীগণের মধ্যে উম্ম বা মূল। আর তাঁকেই উম্মি উপাধি দেয়া হয়েছে।
উপরিউক্ত বণনা থেকে বুঝা গেল যে, উম্মি মানে নিরক্ষর ও অক্ষরজ্ঞানহীন নয়। বরং নবীয়ে উম্মিঅর্থ হলো সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস এবং সমগ্র কায়েনাত ও সৃষ্টিজগতের মূল।
[বি:দ্র: নবীজি লেখাপড়া জানতেন এ সম্পের্কে একটি গবেষণা লেখা আসছে। অপেক্ষায় থাকুন।]
ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানি, সাভার, ঢাকা।
তারিখ: 3. 27. 2019
মুসলমান যখন নিজ নবীকে মূর্খ বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত
————————————————————-
কিছু অভাগারা সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিতে তাঁদের নবীকে “নিরক্ষর” প্রমাণ করতে কুর’আনের এই আয়াত পেশ করছে,
وَمَا كُنتَ تَتْلُو مِن قَبْلِهِ مِن كِتَابٍ وَلَا تَخُطُّهُ بِيَمِينِكَ ۖ إِذًا لَّارْتَابَ الْمُبْطِلُونَ
অর্থঃ আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেননি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত। (আনকাবুত-৪৮)
এই আয়াত এর ব্যখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির বলেন-
(এ আয়াত দ্বারা যদিওবা নবীজী লেখেননি বা পড়েননি হিসেবে যে বর্ণনা এসেছে) কিন্তু অপরদিকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় নবীজী কর্তৃক সন্ধিপত্র নিজ নাম মুবারক লেখার যেই বর্ণনা সহিহ বুখারী তে এসেছে এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, أنه كتب ذلك على وجه المعجزة অর্থাৎ নিশ্চয় তিনি সেটা লিখেছিলেন তাঁর মুজিযা হিসেবে। [তাফসীরে ইবনে কাসির, সুরা আনকাবুত-৪৮]
সুতরাং বুঝা গেল, আমাদের নবীজীর নিকট মুজিযা হিসেবে আল্লাহ প্রদত্ত লেখা বা পড়ার ক্ষমতা ছিল, কিন্তু তিনি তা প্রকাশ করেননি; কারণ তখন আল্লাহর আদেশ হয়নি বিধায়। যেমনটা অন্যান্য মুজিযা যেমন, মিরাজ সহ চন্দ্র দ্বিখন্ডন, ডুবন্ত সূর্য ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি তিনি আল্লাহর আদেশই প্রকাশ করেছিলেন। সুতরাং “উম্মী হওয়া”টা নবীজীর একটি অন্যতম মু’জিযা ছিল। মু’জিযা সেটাকে বলে, যেটা নবীর পক্ষে সম্ভব কিন্তু আমাদের পক্ষে অসম্ভব। আমাদের লেখাপড়া জানাটা দুনিয়াবী কোন শিক্ষক ছাড়া অসম্ভব, আর নবীর বেলায় তা সম্ভব। এর কারণ হচ্ছে নবীজীর শিক্ষক হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ। এরপরও যে নবীকে নিরক্ষর বলবে, সে মূলত নবীর মু’জিযাকে অস্বীকারকারী। আর নবীর মু’জিযাকে অস্বীকার করা স্পষ্টত কুফর। তার মধ্যে আর আবু জাহেলের মধ্যে কোন তফাৎ নাই
 
Top