গরীব লোক ও হযরতের জীবন ধারণ

“ছেরাজুছ্-ছালেকীন” – আব্দুল খালেক এম এ
গরীব লোক ও হযরতের জীবন ধারণঃ
  হাদীছঃ অনেক এলোমেলো কেশ ও মলিন বেশ বিশিষ্ট এবং তাচ্ছিল্যভাবে দ্বারদেশ হইতে বিতাড়িত লোক আছে, যাহারা আল্লাহর নিকট কোন কাজ সম্পাদনে কছম করিলে অবশ্যই আল্লাহ উহা সত্য করিবেন, অর্থাৎ এমন কতগুলি আল্লাহর পেয়ারা বান্দা আছে যাহাদের চুল এলামেলো, যাহারা মলিন বস্ত্র পরিহিত এবং যাহারা লোক চক্ষে হেয়, তাহারা কোন কাজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইলে, আল্লাহতায়ালা তাহা পুরা করিয়া দেন।
  হাদীছঃ হজরত ফরমাইয়াছেন: আমি বেহেশতের দিকে তাকাইলাম তন্মধ্যে অধিক সংখ্যক অধিবাসী গরীব লোক দেখিতে পাইলাম, আর দোজখের দিকে তাকাইয়া তন্মধ্যে অধিক সংখ্যক অধিবাসী মেয়েলোক দেখিতে পাইলাম।
  হাদীছঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) ফরমাইয়াছেন: হজরতের পরিবারস্থ লোকজন ক্রমাগত দুইদিন যবের রুটি ভক্ষণ করিয়া তৃপ্তিলাভ করিতে পারে নাই, এমতাবস্থায় তিনি দুনিয়া হইতে বিদায় গ্রহণ করিলেন।
  হাদীছঃ হজরত আনাছ (রাঃ) ফরমাইয়াছেন: আমি হজরতের নিকট যবের রুটি এবং দূষিত ও বদবুদার চর্বি সহকারে উপস্থিত  হইয়া দেখিলাম যে তিনি আপন জেরা (লৌহবস্ত্র) জনৈক ইহুদীর নিকট বন্ধক রাখিয়া তাঁহার পরিবারস্থ লোকগণের জন্য কিছু যব সংগ্রহ করিয়াছেন। আরও আমি হযরতকে বলিতে শুনিয়াছি যে, তাঁহার পরিবারস্থ লোকগণের নিকটে এমন কোন সন্ধ্যা আসে নাই যখন তাঁহার ঘরে এক ছাঁ বা দুই সের পরিমাণ আটা বা এক ছা’ পরিমাণ ময়দা মৌজুত আছে, অথচ তাঁহার নিকট নয়জন বিবিও ছিলেন।
  হজরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলিয়াছেনঃ একদা হজরত আমার কাঁধে হাত রাখিয়া ফরমাইলেন: দুনিয়ার মধ্যে তুমি একজন মুছাফেরের ন্যায় বাস কর এবং নিজকে গোরবাসীদের (কবরবাসী) মধ্যে গণ্য কর।
  হজরত ওমর (রাঃ) ফরমাইয়াছেন: এক দিবস হজরতের নিকট উপস্থিত হইয়া দেখিলাম যে তিনি খেজুর পাতার চাটাইর উপর এরূপভাবে শয়িত আছেন যে তাঁহার ও চাটাইর মধ্যে কোন ফরাশ (বিছানা) নাই এবং তাঁহার পার্শ্বদেশে চাটাইর চিহ্ন অঙ্কিত রহিয়াছে আর এমন একটি বালিশ তাহার শিয়রে রহিয়াছে যাহার খোল চামড়ার এবং ভিতর খেজুরের খোসা দ্বারা পরিপূর্ণ। আমি আরজ করিলাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ)। আপনি দোয়া করুন যেন আল্লাহতায়ালা আপনার উম্মতের অবস্থা স্বচ্ছল করিয়া দেন, কেননা পারস্য ও রোমবাসীগন আল্লাহর এবাদত করে না, অথচ আল্লাহ তাহাদিগকে প্রচুর অর্থ দান করিয়াছেন। তাহা শুনিয়া হজরত ফরমাইলেন: হে ওমর (রাঃ)! তুমি কি এখনও এই মোকামে আছ? অর্থাৎ তুমি কি এখনও এরূপ ধারণা পোষণ কর? তাহাদের আকাঙ্খিত বস্তুগুলি এই দুনিয়াতে দেওয়ার জন্য সত্বরতা অবলম্বন করা হইয়াছে। (এক রেওয়ায়েতে আছে): তুমি কি ইহা পছন্দ কর না যে তাহাদের জন্য দুনিয়া এবং আমাদের জন্য আখেরাত?
  হাদীছঃ গরীব লোক ধনবান ব্যক্তির পাঁচশত বৎসর আগে বেহেশতে যাইবে, আর পাঁচশত বৎসর কেয়ামতে অর্ধ দিবসের সমান হইবে।
  হাদীছঃ আমার নিকট তিন বস্তুকে প্রিয় করা হইয়াছে, খোশবু, স্ত্রীলোক এবং নামাজ যাহার মধ্যে আমার চক্ষুর শীলতা আসে।
  হাদীছঃ হজরত ইবনে ওমর (রাঃ) ফরমাইয়াছেনঃ যখন আমরা খায়বারের লড়াই ফতেহ (বিজয়) করি তখন আমরা একটি পূর্ণ খোর্মা খাইয়া তৃপ্তি লাভ করিতে পারি নাই।
  হাদীছঃ হজরত আবু জার্র (রাঃ) হইতে রেওয়ায়েত আছে যে, আমার প্রাণের দোস্ত নবী করীম (সাঃ) সাতটি বস্তুর জন্য আদেশ করিয়াছেনঃ মিছকীনদিগকে ভালবাসিতে ও তাহাদের নিকটবর্তী হইতে, আমা হইতে ক্ষুদ্রতর ব্যক্তিকে দেখিতে ও আমা হইতে উচ্চতর ব্যক্তিকে না দেখিতে (দুনিয়ার হিসাবে), আত্মীয় স্বজন আত্মীয়তার বন্ধন ছেদন করিলেও তাহাদের সহিত মেলামেশা রাখিতে, কাহারও নিকট কোন বস্তুর ছওয়াল (যাঞ্চা) না করিতে, হক কথা তিক্ত হইলেও বলিতে, আল্লাহর পথে কোন প্রতিবাদকারী প্রতিবাদকে গ্রাহ্য না করিতে এবং ‘লা হাউলা অলাকুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অধিক পরিমাণে পড়িতে, কেননা আরশের নীচে এইগুলি মহামূল্যবান ধরণের ভান্ডার।
  হাদীছঃ আদম সন্তান দুইটি বস্তুকে না পছন্দ করে – সে মৌতকে না পছন্দ করে, অথচ ঈমানদারের জন্য ফছাদ অপেক্ষা মৌত ভাল, আর অল্প ধনকে সে না পছন্দ করে অথচ অল্প ধনের হিসাব নিকাশও অল্পই হইবে।
  হাদীছঃ হজরত আনাছ (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, একদা হজরত দোয়া করিলেন-
29
আল্লাহুম্মা আহ্‌য়ীনী মিস্‌কীনাও, ওয়াআমিতনী মিসকীনাও, ওয়াহ্‌শুরনী ফী ঝুমরাতিল্‌ মাসাকীন।
  “হে আল্লাহ! আমাকে মিছকীন অবস্থায় জেন্দা রাখ, আমাকে মিছকীন অবস্থায় মৌত দাও এবং মিছকীনদের দলে আমার হাশর কর।”
  হযরত আয়েশা (রাঃ) উহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেনঃ তাহারা ধনবান ব্যক্তির চল্লিশ বৎসর পূর্বে বেহেশতে যাইবে। হে আয়েশা (রাঃ) মিছকীনদিগকে ভালবাস এবং তাহাদিগকে নিকটে স্থান দাও তাহা হইলে আল্লাহ কেয়ামতে তোমাকে তাঁহার নিকট স্থান দিবেন।
  হাদীছঃ হজরত মোয়াজ (রাঃ) কে য়্যামন দেশে পাঠাইবার সময় রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তাঁহাকে বলিলেন: তুমি বিলাসিতা হইতে পরহেজ করিও যেহেতু আল্লাহর প্রকৃত বান্দাগণ বিলাসপ্রিয় নহে।
  হাদীছঃ আদম সন্তান বৃদ্ধ হইয়া যায়, কিন্তু তাহার দুইটি বস্তু যৌবন প্রাপ্ত হয়: মালের লোভ এবং দীর্ঘ বাসনা।
  হাদীছঃ যদি দুইটি প্রান্তর পরিপূর্ণ মাল কোন আদম সন্তানকে দেওয়া যায়, সে তৎক্ষণাৎ তৃতীয় প্রান্তর পরিপূর্ণ মাল চাহিতে থাকিবে এবং মাটি ব্যতীত আর কিছুই আদম সন্তানের পেট ভরিতে পারে না। আর যে ব্যক্তি তওবা করে আল্লাহ তাহার তওবা কবুল করেন।
  হাদীছঃ অবশ্যই আল্লাহতায়ালা পরহেজগার ধনী ও নির্জনবাসী বান্দাকে ভালবাসেন।
  হাদীছঃ এক ব্যক্তি হজরতকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ কোন্‌ লোক উত্তম? তিনি বলিলেন: যাহার বয়স বেশী অথচ আমল ভাল। আবার সে ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিলেন: তবে কোন্‌ লোক মন্দ? তিনি বলিলেন: যাহার বয়স বেশী অথচ আমল মন্দ।
  হাদীছঃ যাখন আল্লাহতায়ালা কোন বান্দার সঙ্গে ভালাই করিবার ইচ্ছা করেন, তখন তাহার দ্বারা নেক কাজ করাইয়া থাকেন। হযরতকে জিজ্ঞাসা করা হইল: কিভাবে তাহার দ্বারা নেক কাজ করান হয়? তিনি বলিলেন: আল্লাহতায়ালা তাহার মৌতের পূর্বে তাহাকে নেক কাজ করিবার তৌফিক (ক্ষমতা) প্রদান করেন।
  হাদীছঃ যে ব্যক্তি বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী সে ব্যক্তি নফছকে অধীন ও বাধ্য করিয়া রাখে এবং আখেরাতের জন্য নেক আমল করিয়া থাকে, আর ঐ ব্যক্তি নাদান ও দুর্বল, যে ব্যক্তি নফছের খাহেশের পায়রবী করে অথচ মনে মনে আল্লাহর নিকট আশা পোষণ করে (যে আল্লাহ তাহার প্রতি রাজী থাকেন ও তাহাকে মাফ করিয়া দেন)।
 
Top