হাদিস ৬


عن أنس بن مالك: قال النبي صلى الله عليه وسلم: " ففرض الله عز وجل على أمتي خمسين صلاة فرجعت بذلك حتى مررت على موسى فقال : ما فرض الله لك على أمتك ؟ قلت : فرض خمسين صلاة ، قال : فارجع إلى ربك فإن أمتك لا تطيق ذلك ، فراجعت فوضع شطرها ، فرجعت إلى موسى ، قلت : وضع شطرها ، فقال : راجع ربك فإن أمتك لا تطيق ، فراجعت فوضع شطرها ، فرجعت إليه ، فقال : ارجع إلى ربك فإن أمتك لا تطيق ذلك ، فراجعته ، فقال : هي خمس ، وهي خمسون ، لا يبدل القول لدي ، فرجعت إلى موسى ، فقال : راجع ربك ، فقلت : استحييت من ربي، حتى انتهى بي إلى سدرة المنتهى، وغشيها ألوان لا أدري ما هي؟ ثم أدخلت الجنة، فإذا فيها حبايل اللؤلؤ واذا ترابها المسك - متفق عليه


হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, (মে’রাজ এর রাত্রি) আল্লাহ তা'আলা আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ রাকাত নামায ফরজ করলেন, তখন আমি ঐ (নামায)গুলােকে নিয়ে ফিরে আসি। এ পর্যন্ত যে আমি মূসা আলায়হিস সালাম এর পাশ দিয়ে চললাম তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ তা'আলা আপনার উম্মতের জন্য আপনার উপর কি ফরজ করেছেন? আমি বললাম, আল্লাহ তা'আলা পঞ্চাশ রাকাত নামায ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি রবের দিকে ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মত ইহা (আদায়) এর শক্তি রাখেনা। তখন তিনি আমাকে ফিরায়ে দিলেন। (আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে) আল্লাহ তা'আলা উহার একভাগ কমিয়ে দিলেন।

আমি হযরত মূসা আলায়হিস্সালামের নিকট ফিরে আসলাম এবং বললাম যে, আল্লাহ তা'আলা একভাগ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট পুনরায় গমন করুন, কেননা আপনার উম্মতের মধ্যে ইহা (আদায়) এর শক্তিও নেই। তারপর আমি ফিরে গেলাম তখন আল্লাহ তা'আলা আরও একভাগ কমিয়ে দিলেন। আমি তাঁর নিকট এলাম। তিনি আবারও বললেন, আপনার রবের নিকট যান, কেননা আপনার উম্মতের মধ্যে ইহা আদায়েরও শক্তি নেই। আমি ফিরে গেলাম তখন (আল্লাহ্ তা'আলা) বললেন, এই (হল যে) পাঁচ (নামায) কিন্তু (পুণ্যের হিসেবে) পঞ্চাশ (এর বরাবর), আমার নিকট নির্দেশাবলী পরিবর্তিত হয় না।

আমি হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম এর নিকট আসলাম তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট যান (আরও বেশী করে কমিয়ে দেয়ার আবেদন করুন)! আমি বললাম, এখন আমার রবের নিকট আমার লজ্জাবােধ হচ্ছে। অতঃপর (জিব্রাঈল আলায়হিস সালাম) আমাকে নিয়ে চললেন, শেষ পর্যন্ত সিদরাতুল মুনতাহার উপর পৌছলেন, যাকে বিচিত্র রঙে আবৃত করে রেখেছে, জানিনা উহা কি? অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করা হলাে যেখানে মুক্তার হারসমূহ রয়েছে এবং উহার মাটি যেন মেশক (এর ন্যায় সুগন্ধিযুক্ত)।

এ হাদিস মুত্তাফাকুন আলায়হি।

_______________________
ক. বুখারী : আস্ সহীহ, কিতাবুস্ সালাত, ১/১৩৬, হাদিস : ৩৪২; কিতাবুল আম্বিয়া, হাদিস : ৩১৬৪;
খ. মুসলিম : আস্ সহীহ, কিতাবুল ঈমান,১/১৪৮, হাদিস : ১৬৩;


হাদিস ৭


عين الزهري، قال: أخبرني سعيد بن المسيب، عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ليلة أسري به : " لقيت موسى، قال: فتعته، فإذا رجل حسبته قال – مضطرب رجل الرأس، گانه من رجال شنوءة، قال: ولقيت عیسی فنعته النبي صلى الله عليه وسلم فقال: - ربعه أحمر، كانما خرج من دیماس - يعني الحمام -،  ورايت إبراهيم وأنا أشبه ولده به،- متفق عليه.


হরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, মেরাজের রাত্রি হযরত মূসা আলাইহিস্ সালামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। হাদিস বর্ণনাকারী বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত মূসা আলায়হিস্ সালামের গুণ এরপ বর্ণনা করলেন, তিনি হালকা-পাতলা, দীর্ঘকায় এলােমেলাে চুলবিশিষ্ট। তিনি শানুয়াহ গােত্রের লােক সাদৃশ্য। হযরত সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালামের সাথেও আমার সাক্ষাৎ হলাে, তখন হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর ভূষণ এর বর্ণনা দিলেন যে, তিনি মধ্যম কায়বিশিষ্ট লাল বর্ণওয়ালা (এবং এমন হৃষ্টপুষ্ট) যেন এখনই হাম্মাম থেকে (গােসল সেরে) বের হয়েছেন এবং আমি হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম এর সাথেও সাক্ষাৎ করেছি এবং আমি তাঁর সকল আওলাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক তাঁর সাদৃশ্যপূর্ণ হই।

এ হাদিস মুত্তাফাকুন আলায়হি।

________________________
ক. বুখারী : আস সহীহ, কিতাবুল আম্বিয়া, ৩/১২৬৯, হাদিস : ৩২৫৪
খ. মুসলিম : আস সহীহ, কিতাবুল ঈমান, ১/১৫৪, হাদিস : ১৬৮


হাদিস ৮


عن عطاء ، مؤلى أم حبيبة قال : سمعت أبا هريرة ، يقول : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ليهبطن عيسى ابن مريم حكما عدلا ، وإماما مقسطا وليسلكن فجا حجا، أو معتمرا أو نبيتهما وليأتين قبري حتى يسلم ولاردن عليه يقول أبو هريرة : أي بني اخي إن رأيتموه فقولوا : أبو هريرة يقرئك السلام.

رواه الحاكم وابن عساكر وقال : هذا حديث صحيه الإسناد ،


হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, হযরত ঈসা ইবনু মরইয়ম আলায়হিস সালাম ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী হুকুমদাতা এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী নেতা হিসাবে নিশ্চয় অবতীর্ণ হবেন, তিনি অবিলম্বে হজ্ব বা ওমরা অথবা উভয়টির নিয়তে বের হবেন এবং নিশ্চয় তিনি আমার কবরে আসবেন এবং আমাকে সালাম দেবেন আর আমি নিশ্চয় তাকে উত্তর দেব। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু (বর্ণনাকারীকে) বললেন, হে আমার ভাতিজা! যদি আপনি তার জেয়ারতের ভাগ্য হাসিল করেন, তখন তাঁর নিকট আরজ করবেন যে, আবু হুরায়রা আপনার খেদমতে সালাম পেশ করেছেন।

এ হাদিসকে ইমাম হাকেম, ইবনু আসাকের এবং মুত্তাকী হিন্দী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, ইহা সহীহ সনদ বিশিষ্ট হাদিস।

________________________
ক. হাকেম। : আল মুসতাদরাক, ২/৬৫১, হাদিস : ৪১৬২;
খ. ইবনে আসকীর : তারিখে মাদীনা-এ দামেস্ক, ৪৭/৪৯৩; গ. হিন্দী : কানযুল উম্মাল, ১৪/১৪৬, হাদিস : ৩৮৮৫১;


হাদিস ৯


عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لقد رأيتنى في الحجر وقريش تسألني عن مسراي، فسألتني عن أشياء من بيت المقدس لم أثبتها، فگربت كربة ما كربت مثله قط، قال فرفعه الله لي أنظر إليه، ما يسألوني عن شيء إلا أنبأتهم به، ممثله قط»،  وقد رأيت في جماعة من الأنبياء، فإذا موسی قائم يصلي، فإذا رجل ضرب، جعد گانه من رجال شنوءة، وإذا عیسی ابن مريم عليه السلام قائم يصلي، أقرب الناس به شبها غروة بن مسعود الثقفي، وإذا إبراهيم عليه السلام قائم يصلي، أشبه الناس به صاحبگم - يعنى نفسه -

فحانت الصلاة فأمتهم، فلما فرغت من الصلاۃ قال قائل: يا محمد، هذا مالك صاحب النار، فسلم عليه، فالتفت إليه، فبدأني بالسلام " رواه مسلم والنسائي ،


হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, (মে'রাজের রাতে) আমি নিজেকে হাতীমে কা'বায় পেলাম এবং কোরাইশগণ মে’রাজের সফর প্রসঙ্গে আমার নিকট জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দিছ এর কিছু বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলেন, যেগুলাে আমি (স্মৃতিপটে) সংরক্ষিত রাখিনি, যদ্বারা আমি এত অস্বস্থিবােধ করেছি যে, ইতােপূর্বে কখনাে এত অস্বস্থিবােধ করিনি। তখন আল্লাহ তা'আলা বায়তুল মুকাদ্দিছকে উঠিয়ে নিয়ে আমার সামনে রেখে দিলেন, তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দিছ প্রসঙ্গে যা কিছু জিজ্ঞাসা করেন (দেখে দেখে) তাদেরকে বলে দিতে লাগলাম। এবং আমি নিজকে নবীদের একটি দলের অন্তর্ভুক্ত পেলাম। আমি দেখলাম হযরত মূসা আলায়হিস সালাম দণ্ডয়মান অবস্থায় নামাযরত আছেন। এবং তিনি শানুয়াহ গােত্রের লােকদের ন্যায় এলােমেলাে চুলওয়ালা ছিলেন। অতঃপর ঈসা ইবনু মরইয়ম আলায়হিমাস সালামও দন্ডয়মান অবস্থায় নামাজরত ছিলেন এবং উ’রওয়া ইবনু মাসউদ ছাক্বাফী তাঁর সাদৃশ্য ছিলেন। অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম দণ্ডয়মান অবস্থায় নামাযরত ছিলেন। এবং আপনাদের সর্দার (অর্থাৎ স্বয়ং হুযূর নবী আকরম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাথে সবচেয়ে বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন এবং আমি সেসব নবী আলায়হিমুস্ সালামের ইমামতী করলাম। যখন নামায থেকে অবসর হলাম একজন প্রবক্তা আমাকে বললেন, ইনি মালিক যিনি জাহান্নামের দারােগা। তাঁকে সালাম দিন, তখন আমি তার অভিমুখী হলাম তখন তিনি (আমার) আগে আমাকে সালাম করলেন।

ইহাকে ইমাম মুসলিম এবং নাসাঈ বর্ণনা করেছেন।

________________________
ক. মুসলিম : আস্ সহীহ, কিতাবুল ঈমান, ১/১৫৬, হাদিস : ১৭৮;
খ. নাসায়ী : আস্ সুনানুল কুবারা, ৬/৪৫৫, হাদিস : ১১৪৮০;


হাদিস ১০


عن أبي سعيد الخدري، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول وهو يصف يوسف حين راه في الشماء الثالثة، قال: " رايت صورته كصورة القمر ليلة البدر، فقلت: يا جبريل من هذا؟ قال: هذا اخوك يوف " قال ابن إسحاق: وكان الله قد أعطى يوسف من الحسن والهيبة ما  لم يعطه أحدا من العالمين قبله، ولا بعده حتی کان يقال: والله أعلم إنه أعطي نصف الحسن و وابن قتيبة وقسم النصف الأخر بين الناس،

 رواه الحاكم وابن قتيبة -


হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বয়ান করেন যে, আমি হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনলাম, সে সময় তিনি হযরত ইউসুফ আলায়হিস সালাম এর গুণাবলী বয়ান করতে ছিলেন। যখন হুযুর সহ তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (মে’রাজের রাতে) তৃতীয় আসমানে দেখলেন, হযরত সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখলাম যার আকৃতি চৌদ্দ তারিখের চাদের ন্যায় ছিল। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিব্রাঈল! ইনি কে? তিনি আরজ করলেন, ইনি আপনার ভাই হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালাম। ইবনু ইসহাক বলেন, আল্লাহ তা'আলা হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালামকে ঐ সৌন্দর্য ও প্রভাব দান করে ছিলেন যা সারাজগতে তার আগে বা পরে কাউকে দান করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বলা যেত যে, আল্লাহর শপথ আমি ইহাই জানি যে, হযরত ইউসুফ আলায়হিস সালামকে পূর্ণ সৌন্দর্যের অর্ধাংশ এবং অপর অর্ধাংশ (সারা দুনিয়ার) লােকদেরকে দেয়া হলাে।

এ হাদিসকে ইমাম হাকেম এবং ইবনু কুতায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন।

____________________
ক. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ২/৬২৩
খ. ইবনু কুতাইবা : তাবীলু মুখতালাফিল হাদিস, ১/৩২১

 
Top