প্রশ্নঃ
assalamualikum # আমার প্রশ্ন  হলো, রেডিওতে একটি চ্যানেল আছে সেখানে বলা হয় “””যাহা বলিবো সত্য বলিবো””””” তার মানে, কোন লোক খারাপ কাজ করে,  সেই খারাপ  কাজ সকল কে জানিয়ে দেওয়া যাতে করে কেউ আার খারাপ কাজ না করে। এই উদ্দেশ্যএ সকল বলা কি জায়েজ? আর যারা শুনবে তারা কি শিক্ষার জন্য শুনতে পারবে? এগুলো কি জায়েজ।

প্রশ্নকারী:- মুহাম্মদ জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

উত্তর:-

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

গোনাহ করার পর, সেই গোনাহের বিবরণ জনসম্মুখে বর্ণনা করা জায়েজ নয়। এভাবে বর্ণনা করার দ্বারা দু’টি খারাপ কাজ হচ্ছে।

এক হল, গোনাহ করার পর সেটি প্রকাশ করে এক ধরণের ঔদ্ধত্ম প্রদর্শন করা হচ্ছে যে, আমি গোনাহ করেছি। অথচ বান্দা আল্লাহর অনুগত থাকবে, এটাই ছিল তা স্বাভাবিক প্রকৃতি। কিন্তু সে গোনাহ করে যেমন আল্লাহর বিধানের বিদ্রোহ করেছে, আবার তা জনসম্মুখে প্রকাশ করে বেপরোয়া মানসিকতা জাহির করে আরো নিম্ন কাজ করল।

দ্বিতীয়তঃ তার এ বিবরণ দ্বারা অন্য কেউ প্রলুব্ধ হয়ে উক্ত গোনাহের কাজ করতে পারে। যা তার জন্য আরো ক্ষতিকর। কারণ, তার বিবরণ শুনে যত ব্যক্তি উক্ত গোনাহের কাজ করবে, এর পাপের ভার উক্ত ব্যক্তির আমলনামায়ও জমা হবে।

তাই গোনাহের পর তা প্রকাশ নয়, বরং তা লুকিয়ে রব্বে কারীমের কাছে কায়মানোবাক্যে কান্নাকাটি করে তওবা করা উচিত।

তাই এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ যেমন জায়েজ নয়। তেমনি তা শ্রবণ করাও জায়েজ নয়।

لَّا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا [٤:١٤٨]

আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ। [সূরা নিসা-১৪৮]

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [٢٤:١٩]

যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক,তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। [সূরা নূর-১৯]

أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا المُجَاهِرِينَ، وَإِنَّ مِنَ المُجَاهَرَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا، ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ، فَيَقُولَ: يَا فُلاَنُ، عَمِلْتُ البَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ، وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ “

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬০৬৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৯৯০]

হযরত জায়েদ বিন আসরম রাঃ থেকে বর্ণিতঃ

قَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ، قَدْ آنَ لَكُمْ أَنْ تَنْتَهُوا عَنْ حُدُودِ اللَّهِ، مَنْ أَصَابَ مِنْ هَذِهِ الْقَاذُورَاتِ شَيْئًا، فَلْيَسْتَتِرْ بِسِتْرِ اللَّهِ، فَإِنَّهُ مَنْ يُبْدِي لَنَا صَفْحَتَهُ، نُقِيمْ عَلَيْهِ كِتَابَ اللَّهِ.

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ এখন সময় আসিয়াছে তোমরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা হইতে ফিরিয়া আসিবে। যদি কেহ এইরূপ কোন কিছু করিয়া বসে তবে তাহাকে আল্লাহর পর্দার আড়ালে লুকাইয়া থাকা উচিত। যে ব্যক্তি স্বীয় পর্দা উন্মোচন করিবে তবে আমরা তাহার উপর আল্লাহর কিতাবের নির্ধারিত শাস্তি জারি করিব। [মুয়াত্তা মালিক-১৭৬৯]

والله اعلم بالصواب

 
Top