ইয়াজিদ (লানতুল্লাহ)
🖋কৃতঃ মাসুম বিল্লাহ সানি ও ফুরকান কাদেরী

ইমাম হোসাইন (عليه السلام) কে যারা শহীদ করেছে তাদের ফয়সালা

❏ ১. সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻤْﺮُﻭ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦِ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺳَﻌِﻴﺪٍ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﺟَﺪِّﻱ، ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺟَﺎﻟِﺴًﺎ ﻣَﻊَ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ (ﷺ) ﺑِﺎﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ، ﻭَﻣَﻌَﻨَﺎ ﻣَﺮْﻭَﺍﻥُ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺍﻟﺼَّﺎﺩِﻕَ ﺍﻟﻤَﺼْﺪُﻭﻕَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻫَﻠَﻜَﺔُ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺪَﻱْ ﻏِﻠْﻤَﺔٍ ﻣِﻦْ ﻗُﺮَﻳْﺶٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺮْﻭَﺍﻥُ ﻟَﻌْﻨَﺔُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻏِﻠْﻤَﺔً ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻟَﻮْ ﺷِﺌْﺖُ ﺃَﻥْ ﺃَﻗُﻮﻝَ ﺑَﻨِﻲ ﻓُﻼَﻥٍ، ﻭَﺑَﻨِﻲ ﻓُﻼَﻥٍ، ﻟَﻔَﻌَﻠْﺖُ

অর্থাৎ হযরত আমর বিন ইয়াহিয়া সাঈদ বিন আমর বিন সাঈদ তার দাদা হতে বর্ণনা করেন।তিনি বলেন, আমি মদীনা শরীফে মসজিদে নববীতে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সাথে বসে ছিলাম,আর মারওয়ানও আমাদের সাথে ছিল।হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বললেন,আমি সত্যবাদী এবং সত্যয়নকারী নবী কারীম (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে,আমার উম্মতের বিনাশ কুরাঈশ গোত্রের কতেক যুবক সন্তানের দ্বারা হবে।তখন মারওয়ান বলল, ঐসব যুবকদের উপর আল্লাহর লা’নত। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) আমি যদি বলি সে বনু অমুক বনু অমুকের অন্তর্ভুক্ত তবে কি তুমি তা লা’নত বলবে? 
[সহীহ আল বুখারী,কিতাবুল ফিতান হাদীস নং-৭০৫৮/৬৬৪৯; মুসনাদে আহমদ-৮৪০৪]

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় “ফাতহুল বারীতে” আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন-

ﺃَﻥَّ ﺃَﺑَﺎ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴُّﻮﻕِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻟَﺎﻛْﻨِﻲ ﺗُﺪْﺭِ ﺳَﻨَﺔُ ﺳِﺘِّﻴﻦَ ﻭَﻟَﺎ ﺇِﻣَﺎﺭَﺓُ ﺍﻟﺼِّﺒْﻴَﺎﻥِ ﻭَﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺇِﺷَﺎﺭَﺓٌ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻥَّ ﺃَﻭَّﻝَ ﺍﻟْﺄُﻏَﻴْﻠِﻤَﺔِ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﻨَﺔِ ﺳِﺘِّﻴﻦَ ﻭَﻫُﻮَ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻓَﺈِﻥَّ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺑْﻦَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﺍﺳْﺘُﺨْﻠِﻒَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﺑَﻘِﻲَ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﻨَﺔِ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَﺳِﺘِّﻴﻦَ ﻓَﻤَﺎﺕَ
অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বাজারে হাটার সময়ও এই দু’আ করতেন যে,৬০ হিজরী এবং যুবকদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর! এই বর্ণনায় ঐ দিকেই ইঙ্গিত ছিল যে,৬০ হিজরী সালে যে শাসক হবে সে যুবক সম্প্রদায়ের হবে এবং এমনই হল ৬০ হিজরী সনে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া শাসক হিসেবে বসে এবং ৬৪ হিজরী পর্যন্ত বলবত থেকে মারা যায়। [আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী-১৩:১০,হাদীস-৭০৫৮; দারুল মা’রেফাহ বৈরুত]

❏ ২. হাদীস শরীফের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে

ﻋَﻦْ ﺣَﻀْﺮَﺕْ ﺃَﺑِﻲ ﻋُﺒَﻴْﺪَﺓَ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠّٰــﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟﻰٰ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠّٰـﻪِ (ﷺ) : ﻟَﺎ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺃَﻣْﺮُ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﺑِﺎﻟْﻘِﺴْﻂِ، ﺣَﺘّٰﻰ ﻳَﻜُﻮْﻥَ ﺃَﻭَّﻝُ ﻣَﻦْ ﻳَﺜْﻠَﻤُﻪ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻰْ ﺃُﻣَﻴَّﺔَ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪ ﻳَﺰِﻳْﺪُ ﻟَﻌْﻨَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ .

হযরত আবূ উবাইদা ইবনে জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন-আখিরী রসূল,নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,আমার সম্মানিত উম্মত উনাদের শাসন ব্যবস্থা তথা সম্মানিত খিলাফত মুবারক সত্য,ন্যায় ও ইনসাফ উনার উপর অবিচল থাকবে। আর সর্বপ্রথম বনূ উমাইয়ার এক সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি সেই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক বিনষ্ট করে দিবে (তথা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে)।তার নাম হচ্ছে,ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি।
      তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ: ১০/৮৯
●(খ.) খাছাইছুল কুবরা: ২/২৩৬
●(গ.) তারীখুল খুলাফা: ১৬৬
●(ঘ.) আছ ছওয়াইকুল মুহরিক্বাহ: ২/১২৩
●(ঙ.) জামিউল আহাদীছ: ৯/২৪ 
●(চ.) দায়লামী শরীফ: ৫/৯২
●(ছ.) আবূ ইয়ালা
●(জ.) আবূ নাঈম
●(ঝ.) বাইহাক্বী
●(ঞ.) ইবনে আসাকির ইত্যাদি।

❏ ৩. হাদীস শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে

ﻋَﻦْ ﺣَﻀْﺮَﺕْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠّٰــﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟﻰٰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠّٰـﻪِ ﻳَﺰِﻳْﺪُ ﻟَﻌْﻨَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ !‍‍‍‍‍‍‍ ﻻ ﺑَﺎﺭِﻙَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓِﻲ ﻳَﺰِﻳْﺪَ ﻟَﻌْﻨَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﻄَّﻌَّﺎﻥِ  ﺍﻟﻠَّﻌَّﺎﻥِ . ﺃَﻣَﺎ ﺇِﻧَّﻪ ﻧُﻌِﻲَ ﺇِﻟَﻲَّ ﺣَﺒِﻴْﺒِﻲْ ﻭَﺣِﺒّـِﻰْ ﺣَﻀْﺮَﺕْ ﺍِﻣَﺎﻡٌ ﺣُﺴَﻴْﻦٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﺃُﺗِﻴْﺖُ ﺑِﺘُﺮْﺑَﺘِﻪٖ ﻭَﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻗَﺎﺗِﻠَﻪ ﺃَﻣَﺎ ﺇِﻧَّﻪ ﻻ
অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন-যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন,খাতামুন (ﷺ) তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,“আয় বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি-এর উপর থেকে বরকত তুলে নিন,তার উপর আপনি লা’নত বর্ষণ করুন,তার উপর আপনি লা’নত বর্ষণ করুন,সে হচ্ছে আমার পূত-পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সর্বনিকৃষ্ট আক্রমণকারী,আঘাতকারী এবং উনাদের ক্ষতি সাধন করার ব্যাপারে দৃঢ়। সাবধান! নিশ্চয়ই ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি সেই সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি যে,আমার পূত-পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করবে।আমার নিকট আমার অতি প্রিয় হাবীব এবং মাহবূব হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সংবাদ মুবারক নিয়ে আসা হয়েছে এবং তিনি যেই জায়গায় সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করবেন,সেই জায়গার মাটি মুবারক আমার মুবারক খিদমতে পেশ করা হয়েছে।আর উনাকে যে শহীদ করবে,আমি সেই সর্বনিকৃষ্ট মাল’ঊন, মরদূদ ব্যক্তিটিকে দেখেছি।সাবধান! তিনি নির্জন এলাকায় সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করবেন এবং ওই সময় উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ কেউ এগিয়ে আসবে না।তবে উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত থাকবে,মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে ব্যাপকভাবে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দিবেন।”
     তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) জামি’উল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী: ২৪/১২৬
●(খ.) জাম’উল জাওয়ামি’ লিস সুয়ূত্বী: ১ম খন্ড
●(গ.) সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ: ১০/৮৯ 
●(ঘ.) ইবনে আসাকির ইত্যাদি।

❏ ৪. কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার অন্যতম শয়তান ইবনে যিয়াদ নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছে,

أما قتلي الحسين فإنه أشار إلي يزيد بقتله أو قتلي فاخترت قتله
আমি (ইবনে যিয়াদ) হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছি (নাউযুবিল্লাহ) ইয়াজিদের কথায়।সেটা না করলে সে (ইয়াযিদ) আমাকে হত্যা করে ফেলতো।সুতরাং আমি  হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার বিষয়টিকে বেছে নিয়েছি। (নাউযুবিল্লাহ)
[আল কামিল ফিত তারীখ ২য় খন্ড ১৯৯ পৃষ্ঠা; লেখক: ইমাম ইবনুল আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি; ওফাত: ৬৩০ হিজরী]

ইবনে যিয়াদের আবারো স্বীকারোক্তি যে,সে ইয়াজিদের নির্দেশে হুসাইন (عليه السلام) কে হত্যা করেছে।

وَقَدْ كَانَ يزيد كتب إلى عبد الله بن زياد أن يسير إلى ابن الزُّبَيْرِ فَيُحَاصِرَهُ بِمَكَّةَ، فَأَبَى عَلَيْهِ وَقَالَ: وَاللَّهِ لَا أَجْمَعُهُمَا لِلْفَاسِقِ أَبَدًا، أَقْتُلُ ابْنَ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَغْزُو الْبَيْتَ الْحَرَامَ؟
“(এর আগে) ইয়াযিদ উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে চিঠি লেখে যে,সে যেন মক্কায় গিয়ে (আব্দুল্লাহ) ইবনে যুবাইরকে অবরোধ করে অথবা তার সাথে যুদ্ধ করে।ইবনে যিয়াদ আদেশ অমান্য করে এবং বলে,‘আল্লাহের কসম এই (ইয়াযিদ এর মত) ফাসিকের জন্য আমি দুটি বাজে কাজ একত্রে করতে পারবো না।তার একটা রাসুল আল্লাহর নবীর মেয়ের পুত্রকে হত্যা আরেকটা বাইতুল্লাহিল হারাম (মক্কা) এ যুদ্ধ করা”।
          
তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) ইবনে কাসির তার ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ (বাংলা); ৮ম খন্ড,পৃ: ৪০৪
●(খ.) ইবনে আসির তার বিখ্যাত কিতাব ‘আল কামিল ফিত তারিখ’ ৪র্থ খন্ড,পৃ: ২১২ (দারুল কেতাব আরাবি,বৈরুত)

ইবনে যিয়াদও এয়াযীদের আচরণে বিরূপ!!

এয়াযীদের অপরাধ এতো গর্হিত ছিল যে এমন কি তার অনুগত উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ যাকে মুসলিম ইবনে আকীল ও পরবর্তী পর্যায়ে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যার জন্যে পাঠানো হয়েছিল এবং যাকে পত্র মারফত এয়াযীদ বলেছিল মক্কায় গিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)র ওপর আবরোধ দিতে,সেও তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিল:

وَقَدْ كَانَ يزيد كتب إلى عبد الله بن زياد أن يسير إلى الزُّبَيْرِ فَيُحَاصِرَهُ بِمَكَّةَ، فَأَبَى عَلَيْهِ وَقَالَ: وَاللَّهِ لَا أَجْمَعُهُمَا لِلْفَاسِقِ أَبَدًا، أَقْتُلُ ابْنَ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَغْزُو الْبَيْتَ الْحَرَامَ؟ وَقَدْ كَانَتْ أُمُّهُ مَرْجَانَةُ قَالَتْ لَهُ حِينَ قَتَلَ الْحُسَيْنَ: وَيْحَكَ مَاذَا صَنَعْتَ وماذا ركبت؟ وعنفته تعنيفا شديدا. قَالُوا: وَقَدْ بَلَغَ يَزِيدَ أَنَّ ابْنَ الزُّبَيْرِ يقول في خطبته: يزيد القرود، شارب الخمور، تارك الصلوات، منعكف على القينات.
‘আল্লাহর শপথ! আমি কোনো ফাসেক (পাপী এয়াযীদ)-এর খাতিরে দুটো (অপ)-কর্মতে জড়াবো না।আমি ইতোমধ্যেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ের মেয়ের (ঘরের) নাতিকে হত্যা করেছি; আর এখন (সে নির্দেশ দিচ্ছে) বায়তুল হাররামের সাথে যুদ্ধ করতে।’ তবে এয়াযীদ যখন ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে শহীদ করে,তখন তার মা মারজানা তাকে বলেন, ‘তুমি মরো গে! তুমি এই জঘন্য অপরাধ কীভাবে করতে পারলে?’ তিনি তাকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করেন। এয়াযীদকে জানানো হয় যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বিভিন্ন ভাষণে এয়াযীদ সম্পর্কে বলতেন,সে একজন জালিয়াত, মদ্যপ,নামায তরককারী ও গায়িকা (ভ্রষ্টা) নারীদের সাহচর্যে অবস্থানকারী ব্যক্তি।
[ইবনে কাসীর: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮:২৭৯]

❏ ৫. ইয়াজিদের ছেলের সাক্ষ্য:

দ্বিতীয় মুয়াবিয়া,ইয়াজিদের নিজের ছেলের বক্তব্য তার বাবা ইয়াজিদ,হুসাইন (عليه السلام) কে কতল করেছেন। “যখন ইয়াজিদের উত্তরসূরী হয়ে তার পুত্র মুয়াবিয়া সিংহাসনে বসল,তার প্রথম খুৎবায় বলল ‘আমরা ইয়াজিদের খারাপ কাজের ব্যাপারে সম্যক জানি, সে রাসুলের (ﷺ) পরিবারকে হত্যা করেছে, মদকে হালাল মনে করত এবং কাবাকে ব্যাথিত করেছিল।” ইয়াজিদের ছেলে নিজেই তার বাবার কৃতকর্মকে তুলে ধরেছে।
[হায়াত আল হাইয়ান,১ম খন্ড,পৃষ্ঠা ৮৮]

ইয়াযীদের পুত্র দ্বিতীয় মু‘আভিয়া যে খোৎবা (ভাষণ) দিয়েছিলেন,তাও ইয়াযীদের দুর্ষ্কম ও ইসলাম-বিদ্বেষের প্রমাণ বহন করে।(তিনি অবশ্য সৎ ও ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন।) তিনি বলেন, ‘‘অতঃপর আমার পিতাকে রাজকীয় পোশাক পরানো হয়।সে অনুপযুক্ত ছিলো।রসূল-ই আক্রামের দৌহিত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।এর ফলে তার জীবন হ্রাস পেয়েছে,বংশ নিপাত গেছে,সে তার কবরে তার পাপরাশির শাস্তিতে গ্রেফতার হয়ে আছে।’’তারপর তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘‘আমাদের সবার জন্য অতি আফসোস ও মনোকষ্টের ব্যাপার হলো তার মন্দমৃত্যু ও মন্দ ঠিকানা (পরিণাম)।সে তো রসূলে আক্রামের সম্মানকে ভূ-লুণ্ঠিত করেছে। মদকে হালাল করেছে,কা’বা শরীফ ধ্বংস করেছে।’’
[সাওয়া-ইক্ব-ই মুহরিক্বাহ্: পৃ-১৩৪]

ইয়াজিদ সম্পর্কে সবচেয়ে বড় যেই সাক্ষ্যটি এসেছে,সেটি তার নিজ ঘর হতেই।নিজ ঔরসজাত ছেলের চেয়ে পিতা সম্পর্কে কে-ই বা অধিক জানতে পারে! আর ছেলেও তো সেই পর্যায়ের,যে কিনা অত্যন্ত সৎকর্মশীল ছিল।এখন দেখুন, মুয়াবিয়া বিন ইয়াজিদ (ইয়াজিদের ছেলে মুয়াবিয়া) আপন পিতা ইয়াজিদ সম্পর্কে কি সাক্ষ্য দেয়, যখন ইয়াজিদের এই নেক্‌ সন্তান মুতাওয়াল্লী হলেন,তখন সে মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে নিজ পিতা সম্পর্কে যেই জবানবন্দি দিয়েছে,সেটি হল এই যে-

“আমার বাবা যদিওবা রাষ্ট্রভার হাতে নিয়েছিল,কিন্তু সে সেটার উপযুক্ত-ই ছিল না।সে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)া এঁর নাতির সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।অবশেষে তার (ইয়াজিদের) আয়ু ফুরিয়ে আসলো এবং জীবন প্রদীপ নিভে গেল।এখন সে তার কবরে নিজ গুনাহের দায়-দায়িত্ব নিয়ে দাফন হয়ে গিয়েছে”।

এ কথাগুলো বলে সে(মুয়াবিয়া বিন ইয়াজিদ) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন-“যে বিষয়টা আমাদের উপর সবচাইতে অধিক কষ্টদায়ক হয়েছে,সেটা হচ্ছে এই যে-এই কৃত কর্মের খারাপ পরিণতি এবং ভয়ংকর শাস্তি আমাদের জ্ঞাত আছে (আর তা কেনই বা নয়,যেখানে কিনা) সে (ইয়াজিদ) প্রকৃতপক্ষেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)া’র নাতিকে শহিদ করেছে, মদ্যপানকে মুবাহ (যেটা করলে সাওয়াব বা গুনাহ কোনটি-ই হয় না) করেছে,বাইতুল্লাহ শরিফকে তছনছ করেছে এবং আমি খিলাফতের স্বাদ-ই গ্রহণ করি নাই,তবে কেন তার (ইয়াজিদের) তিক্ততাকে বহন করবো? এজন্যই তোমরা তা জেনে রেখো এবং এটাই তোমাদের কাজ।আল্লাহর শপথ! যদি দুনিয়ায় আজ কল্যাণ থাকে,তাহলে আমরা তার বড় একটা অংশকে অর্জন করে ফেলেছি এবং যদি অনিষ্টতার মধ্যে থাকে,তবে যা কিছু আবু সুফিয়ানের সন্তান (ইয়াজিদ) দুনিয়া হতে অর্জন করেছে,সেটাই যথেষ্ট (অর্থাৎ দুনিয়ার আজকের এই অনিষ্ট অবস্থার জন্য দায়ী আবু সুফিয়ানের আওলাদ ইয়াজিদ)।
[আস্‌ সওয়াকে মুহরিকা,পৃষ্ঠা ১৩৪, মিশর হতে মূদ্রিত] 

আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কি রহমাতুল্লাহ আলাইহি

ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺍﻟﻬﻴﺘﻤﻲ، ﻫﻮ ﺷﻬﺎﺏ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺍﻟﻬﻴﺘﻤﻲ ﺍﻟﺴﻌﺪﻱ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ، ‏( 909 ﻫـ – 973 ﻫـ ‏) ، ﻓﻘﻴﻪ ﺷﺎﻓﻌﻲ

তাহার ﺍﻟﺼﻮﺍﻋﻖ ﺍﻟﻤﺤﺮﻗﺔ নামক কিতাবে বলেন মুয়াবিয়া ইবনে ইয়াজিদ এজিদের পুত্র ছিলেন তিনি বড় ধার্মিক ও সৎ স্বভাবের লোক ছিলেন।সাধারণ সভায় প্রকাশ্যভাবে তার পিতা ইয়াজিদের ভক্তবৃন্দের সামনে ঘোষণা করেছিলেন

ﻭﻗﺪﻡ ﻛﺎﻥ ﻏﻴﺮ ﺍﻫﻞ ﻟﻪ ﻭﻧﺎﺯﻉ ﺍﺑﻦ ﺑﻨﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻔﻘﺖ ﻋﻤﺮﻩ ﻭﺍﻧﺘﺸﺮ ﻭﻋﻘﺒﻪ ﻭ ﺻﺎﺭﻩ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ ﺭﻫﻴﻨﺎ ﺑﺬﻧﻮﺑﻪ ﺛﻢ ﺑﻜﻰ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﻣﻦ ﺍﻋﻈﻢ ﻋﻤﻮﺭﻱ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺑﺴﻮﺋﻲ ﻣﺼﺮ ﻭﻣﻦ ﻗﻠﺒﻪ ﻭﻗﺘﻞ ﻋﺘﺮﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ (ﷺ) ﻭﺍﺑﺎﺡ ﺍﻟﺨﻤﺮ ﻭﺧﺮﺏ ﺍﻟﻜﻌﺒﺔ
যদিও আমার পিতা ইয়াজিদকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয় কিন্তু হাতে তিনি একেবারেই উপযুক্ত ছিলেন না। তিনি আল্লাহর রাসূলের নাত সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন তাহার জীবন শেষ হইয়া গেল এবং তাঁর অনুসারীগণ ছত্রভঙ্গ হইয়া গেল।তিনি কবরের নিজের গুনাহের কারণে গ্রেফতার হয়েছেন।ইহার পর মুয়াবিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন আর বলিলেন, তাহার খারাপ এবং তাহার খারাপ ঠিকানায় আমাদের জন্য বড় কলঙ্কের বিষয়।তিনি রাসুলের বংশধরগণ কে হত্যা করেন,মদপান হালাল বলিয়া ঘোষণা করেন এবং কাবা শরিফের সম্মানকে নষ্ট করেন।

❏ ৬. আবু বারজা (رضي الله عنه) তীব্র প্রতিবাদ ও লানত: 

ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (আ:)’র কর্তিত শিরের দু’টি চোখে ও তাঁর নাসিকায় বেত্রাঘাত করেছিল। আর এ দৃশ্য দেখে রাসূল (ﷺ)’র সাহাবি আবু বারজা (رضي الله عنه) তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইয়াজিদকে বলেন: তুমি কি তোমার ছড়ি দিয়ে হুসাইনের দাঁতের সারিতে আঘাত করে দাগ বসিয়ে দিলে? সাবধান! তোমার ছড়িটি তাঁর দাঁতের সারিতে দাগ বসিয়েছে এমন স্থানে যেখানে মুখ রেখে চুষতে দেখেছি আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে। সাবধান রোজ হাশরে তথা বিচার দিবসে তোমার শাফায়াতকারী (বিদ্রূপাত্মক অর্থে) বা সঙ্গী হবে (অভিশপ্ত) ইবনে জিয়াদ।আর হুসাইনের শাফায়াতকারী হবেন খোদ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)।এ কথা বলে তিনি ইয়াজিদের দরবার থেকে বের হয়ে যান।
[তাবারি: ৭ম খন্ড,পৃ: ১৯২ এবং বিদায়া ও নিহায়া: ৫ খণ্ড,পৃ: ২৬৮ ও ৫১৬]

❏ ৭. সিহাহ সিত্তাহর ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) 

ইয়াজিদ সম্পর্কে কি বলেছেন: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) যিনি মুসনাদে আহমদের প্রনেতা
The greatest Imam of Hamboli Mazhab.
যার জন্ম ১৬৪ হিজরি ওফাত ২৪১ হিজরি।যিনি ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর শিক্ষক ছিলেন ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর শিষ্য ছিলেন।যিনি বিখ্যাত ইমাম,মুস্তাহিদ ও মুহাদ্দিস ছিলেন।সেই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) লানত করেছেন ইয়াজিদকে।এ প্রসঙ্গে বর্নিত আছে-

ﺍﻧﺎ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﺍﺣﻤﺪ ﺳﺄﻟﻪ ﻭﻟﺪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﻟﻌﻦ ﻳﺬﻳﺪ ﻗﺎﻝ ﻛﻴﻒ ﻻ ﻳﻠﻌﻦ ﻣﻦ ﻟﻌﻨﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ؟ ﻓﻘﺎﻝ
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺪ ﻗﺮﺃﺕ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭ ﺟﻞ ﻓﻠﻢ ﺍﺟﺪ ﻓﻴﻪ ﻟﻌﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻳﻘﻮﻝ ﻓﻬﻞ
ﻋﺴﻴﺘﻢ ﺍﻥ ﺗﻮﻟﻴﺘﻢ ﺍﻥ ﺗﻔﺴﺪﻭ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻭ ﺗﻘﻄﻌﻮﺍ ﺍﺭﺣﺎﻣﻜﻢ ﺍﻭﻝﺀﻙ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻟﻌﻨﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ. ﻭﺍﻱ ﻓﺴﺎﺩ ﻭﻗﻄﻴﻌﺔ
ﺍﺷﺪ ﻣﻤﺎ ﻓﻌﻠﻪ ﻳﺰﻳﺪ ؟

অর্থ: হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) উনার ছেলে হযরত আবদুল্লাহ (رحمة الله) তিনি উনার পিতাকে ইয়াজিদকে লা’নত করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন।তিনি ছেলেকে বলেন, আল্লাহ পাক যাকে উনার কিতাব (কুরআন শরীফে) এ লা’নত করেছেন তাকে লা’নত করা যাবে না কেন? হযরত আব্দুল্লাহ (رحمة الله) তিনি বলেন,আমি আল্লাহ পাক উনার কিতাব পাঠ করেছি।কুরআন শরীফে ইয়াজিদকে লা’নতের সন্ধান পাই নাই।হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) তিনি উনার ছেলেকে বলেন,আল্লাহ পাক তিনি বলেন,”হতে পারে তোমরা ফিরে যাবে আর পৃথিবীতে উপদ্রবসৃষ্টি করবে এবং তোমাদের রেহমী বা জঠর সম্পর্ক ছিন্ন করবে।এরূপ লোকদের প্রতি আল্লাহ পাক তিনি লা’নত করেন।” কাজেই ইয়াজিদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি যা করেছে তার চেয়ে অধিক উপদ্রব ও রেহমী সম্পর্ক ছিন্ন করা আর কি হতে পারে?” 
[তাফসীরে রূহুল মাআনী: ২৫ তম খন্ড ৭২ পৃষ্ঠা,সুরা মুহাম্মদ আয়াত নং ২২-২৩]

ইয়াজিদ সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: 

আল্লামা আলূসী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,ইমাম বারযাঞ্জী তার ইশা’আহ গ্রন্থে,ইমাম হাইসামী তার সাওয়াইক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে,ইমাম আহমাদকে তার ছেলে আব্দুল্লাহ জিজ্ঞাসা করেছিলেন ইয়াজিদের উপর লা’নত দেয়া যাবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছিলেন,কেন তাকে লা’নত দেয়া যাবেনা যাকে স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে কারীমে লা’নত দিয়েছেন।

আব্দুল্লাহ বললেন,আমি তো কুরআন শরীফ অধ্যয়ন করেছি,কিন্তু ইয়াজিদের লা’নতের বিষয়টি পাইনি।তখন ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ বললেন,আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,,

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ
ক্ষমতা লাভ করলে,সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَىٰ أَبْصَارَهُمْ
এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।
[সূরা মুহাম্মাদ,আয়াত নং ২২-২৩]

❏ এরপর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন এযিদ যা করেছে তা থেকে অধিক ফাসাদ ও আত্মীয়তার বন্ধন বিনষ্ট করা আর কী হতে পারে?
[রুহুল মা’আনী,২৬ তম খন্ড,পৃ: ৭২-৭৩]

এয়াযীদের প্রতি লা’নত তথা অভিসম্পাত দেয়ার প্রমাণ:

نقل البرزنجي في الإشاعة والهيثمي في الصواعق أن الإمام أحمد لما سأله ولده عبد الله عن لعن يزيد قال كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى في كتابه فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم أجد فيه لعن يزيد فقال الإمام إن الله تعالى يقول: فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحامَكُمْ أُولئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ الآية وأي فساد وقطيعة أشد مما فعله يزيد انتهى.

এয়াযীদের প্রতি অভিসম্পাত দেয়ার প্রমাণ বের করা হয়েছে নিম্নবর্ণিত আয়াতটি থেকে যা আল-বরযানজি নিজ ’আল-আশয়াত’ কেতাবে এবং ইমাম হায়তামী তাঁর ‘আস্ সাওয়াইক’ পুস্তকে বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে এই মর্মে যে,ইমাম সাহেবের পুত্র আবদুল্লাহ এয়াযীদের প্রতি লা’নত বর্ষণের পক্ষে কুরআন মজীদের কোথায় প্রমাণ আছে সে ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন।ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর পক্ষে উদ্ধৃত করেন আল-কুরআনের বাণী:

“তবে কি তোমোদের এ লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে তোমরা শাসনক্ষমতা লাভ করলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং আপন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহতা’লা অভিসম্পাত (লা’নত) দিয়েছেন…” (৪৭:২২-২৩)।

বস্তুতঃ এয়াযীদ যে অপকর্ম করেছে,তার থেকে বড় কোনো ফিতনা আর হতে পারে কি?/ইয়াজিদের চেয়ে বড় অনর্থ বা নৈরাজ্য পৃথিবীতে আর কে সৃষ্টি করেছিল?
[আল্লামা আলূসী: রুহুল মা’আনী,আত তাফসীর,৯ম খণ্ড,সূরা মোহাম্মদ (ﷺ),২২-২৩]

❏ ৮. আবু মুহাম্মদ আলী ইবনে আহমদ ইবনে সাইদ ইবনে হাজমঃ

তিনি স্পেনের কর্ডোভায় জন্মগ্রহণ করে।জন্ম ৩৮৪ হি: মৃত্যু ৪৫৬ হিজরী।ইসলামের জাহিরি ধারার প্রবক্তা।হাজমের দাদা এবং বাবা উভয়ই উমাইয়া খলিফার দরবারে উপদেষ্টার পদে নিয়োজিত ছিলো।সে হিসাবে ইয়াযিদের ইতিহাস ইবনে হাজমের ভালোই জানা আছে।

এই ইবনে হাজম তার কিতাবে ইয়াযিদের চরিত্র উল্লেখ করেছে।সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ইবনে হাজম তার লিখিত বই “জামহারাত আনসাব আল আরবে” যেখানে ইয়াযিদের কুৎসিত চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে সেখানে ইয়াযিদকে আমিরুল মুমিনিনও বলেছে (নাউযুবিল্লাহ)।খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সামনে এক ব্যক্তি ইয়াযিদকে “আমিরুল মু’মিনিন” বলায় ২০ বেত মারার ইতিহাস ইবনে হাজমের জানা ছিলো কিনা জানি না!

❏ যাইহোক এই ইবনে হাজম তার কিতাবে ইয়াযিদ সর্ম্পকে লিখেছে,

ويزيد أمير المؤمنين؛ وكان قبيح الآثار في الإسلام؛ قتل أهل المدينة، وأفاضل الناس، وبقية الصحابة -رضي الله عنهم- يوم الحرة، في آخر دولته؛ وقتل الحسين -رضي الله عنه- وأهل بيته في أول دولته؛ وحاصر ابن الزبير -رضي الله عنه- في المسجد الحرام، واستخف بحرمة الكعبة والإسلام؛ فأماته الله في تلك الأيام
“ইয়াজিদ (লা’নতুল্লাহি আলাইহি); পবিত্র ইসলামে অনেক খারাপ কাজ করেছে।সে তার রাজত্ব্যের শেষ দিকে হাররার দিনে সম্মানিত মদীনা শরীফের অধিবাসী, সম্মনিত ব্যক্তিবর্গ,ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে অবশিষ্টদের শহীদ করে।তার রাজত্ব্যের প্রথম দিকে সে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম ও আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শহীদ করে।পবিত্র মসজিদে হারামে ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে ঘেরাও করে।সে পবিত্র কা’বা শরীফ ও ইসলামের সম্মানকে ভুলন্ঠিত করে।আর এ সময়ের মধ্যে আল্লাহ পাক তার মৃত্যু দেয়।”
[জামহারাত আনসাব আল আরব ১১২ পৃষ্ঠা; লেখক: ইবনে হাজম; প্রকাশনা : দারুল মা’রিফা,মিশর]

ইবনে হাজমের উক্তি থেকেই ইয়াযিদের কুৎসিত চরিত্র ফুটে উঠেছে।সেই সাথে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে সেই দায়ী এটাও প্রমাণিত হয়েছে।আর যার চরিত্রে এই পরিমান ইসলাম বিদ্বেষ সে নিঃসন্দেহে কাফির।

ইবনে খলদুন এর স্বীকারোক্তি

❏ ৯. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নাম করা ঐতিহাসিক ইবনে খলদুন এর স্বীকারোক্তি: ইবনে খলদুন ও তার কিতাব ‘আল মুকাদ্দামা’-কে জানে না এমন কোন মুসলমান এবং অমুসলিম ওরিয়েন্টাল ঐতিহাসিক নেই।ইবনে খালদুন নিজে একজন নাসেবী ছিল তা সত্বেও তার স্বীকারোক্তি:
فلا يجوز نصرة يزيد بقتال الحسين ، بل قتله من فعلات يزيد المؤكدة لفسقه ، والحسين فيها شهيد
“হুসাইনের হত্যার ব্যাপারে ইয়াজিদেকে সমর্থন করা অসম্ভব।বরং হুসাইনের হত্যা ইয়াজিদের কাজ এবং এটা তাকে ফাসেক প্রমাণিত করে এবং হুসাইনকে শাহিদ।”
[মুকাদ্দামাহ: পৃষ্ঠা ২৫৪]

❏ ১০. বিখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ বিন সা’দ তার বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ﻃﺒﻘﺎﺕ ﻛﺒﺮﻱ তাবকাতে কুবরায় উল্লেখ করেন-

ﺃَﺟْﻤَﻌُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺣَﻨْﻈَﻠَﺔَ ﻓَﺄَﺳْﻨَﺪُﻭﺍ ﺃَﻣْﺮَﻫُﻢْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻓَﺒَﺎﻳَﻌَﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡُ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻ ﺷﺮﻳﻚ ﻟﻪ . ﻓﻮ ﺍﻟﻠﻪ ﻣَﺎ ﺧَﺮَﺟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺣَﺘَّﻰ ﺧِﻔْﻨَﺎ ﺃَﻥْ ﻧُﺮْﻣَﻰ ﺑِﺎﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ . ﺇِﻥَّ ﺭَﺟُﻼ ﻳَﻨْﻜِﺢُ ﺍﻷُﻣَّﻬَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﺒَﻨَﺎﺕَ ﻭَﺍﻷَﺧَﻮَﺍﺕِ ﻭَﻳَﺸْﺮَﺏُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮَ ﻭَﻳَﺪَﻉُ ﺍﻟﺼَّﻼﺓَ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮْ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻣَﻌِﻲ ﺃَﺣَﺪٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻷَﺑْﻠَﻴْﺖُ ﻟِﻠَّﻪِ ﻓِﻴﻪِ ﺑَﻼﺀً ﺣَﺴَﻨًﺎ
অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ বিন হানযালাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মদীনাবাসী হতে আমৃত্যু লড়াইয়ের বায়’আত গ্রহণের পর তার বক্তৃতায় বললেন,হে আমার সম্প্রদায়! এক আল্লাহকে ভয় কর, যিনি ব্যতীত কোন শরীক নেই। আল্লাহর শপথ! আমরা ইয়াযিদের আনুগত্য তখনই ছেড়ে দিয়েছি যখন আমাদের আশংকা হল যে, (তারই বদমায়েশীর কারণে) না জানি আমাদের উপর আসমান হতে পাথর বর্ষিত হয় কিনা।অবশ্যই লোকটি (ইয়াযিদ) মা-বোন ও কন্যাদের সাথে বিবাহে বৈধতা দেয়,প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে থাকে এবং নামায ত্যাগ করে। আল্লাহর শপথ! যদি কেউই এই লোকের বিরুদ্ধে আমায় সঙ্গ না দেয়,তবুও আমি আল্লাহর ওয়াস্তে তার বিরুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করতঃ যুদ্ধ করে যাব।
[] ﺍﻟﻜﺎﻣﻞ : 3 / 310 ﻭﺗﺎﺭﻳﺦ ﺍﻟﺨﻠﻔﺎﺀ : 165
ﺳﻴﺮ ﺃﻋﻼﻡ ﺍﻟﻨﺒﻼﺀ ﻟﻠﺤﺎﻓﻆ ﺍﻟﺬﻫﺒﻲ
ﺗﻌﺠﻴﻞ ﺍﻟﻤﻨﻔﻌﺔ ﻻﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺝ 1 ﺹ 453 .

❏ ১১. ইবনে আসীর তার তারিখে কামিলে হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন-
ﺍﺑْﻨَﻪُ ﺳِﻜِّﻴﺮًﺍ ﺧِﻤِّﻴﺮًﺍ، ﻳَﻠْﺒَﺲُ ﺍﻟْﺤَﺮِﻳﺮَ ﻭَﻳَﻀْﺮِﺏُ ﺑِﺎﻟﻄَّﻨَﺎﺑِﻴﺮِ
অর্থাৎ তিনি ইয়াযিদের ব্যাপারে বলেন, সে বড়ই নেশাখোর ছিল মদ্যপানে অভ্যস্ত ছিল,সেতারাও বাজাতো।
[ ﺍﻟﻜﺎﻣﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ ﻻﺑﻦ ﺍﻻﺛﻴﺮﺝ 2 ﺹ 188 .

❏ ইবনে আসীর আরো মন্তব্য করেন

ﻋﺰ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﻟﺠﺰﺭﻱ ﺍﻟﻤﻮﺻﻠﻲ ‏( 630-555 ﻫـ ‏) ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ ﺑـ ﺍﺑﻦ ﺍﻷﺛﻴﺮ ﺍﻟﺠﺰﺭﻱ

ইবনে আসীর নিজ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﺍﻟﻜﺎﻣﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ
‘তারীখ আল-কামিল’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায় মুনযির ইবনে যাবীর থেকে বর্ণনা করেন:

ﺇِﻧَّﻪُ ﻗَﺪْ ﺃَﺟَﺎﺯَﻧِﻲ ﺑِﻤِﺎﺋَﺔِ ﺃَﻟْﻒٍ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻤْﻨَﻌُﻨِﻲ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻊَ ﺑِﻲ ﺃَﻥْ ﺃُﺧْﺒِﺮَﻛُﻢْ ﺧَﺒَﺮَﻩُ، ﻭَﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻴَﺸْﺮَﺏُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮَ .

‘‘এটি সত্য যে এয়াযীদ আমাকে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) দিরহাম পুরস্কারস্বরূপ দিয়েছিল,কিন্তু এটি তার প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করা হতে আমাকে রুখবে না।আল্লাহর কসম,সে একজন মাতাল।”

❏ ১২. ইবনে কাসীর বর্ণনা করেন:

ثُمَّ أَبَاحَ مُسْلِمُ بْنُ عُقْبَةَ، الَّذِي يَقُولُ فِيهِ السَّلف مسرف بن عقبة – قبحه الله من شيخ سوء ما أجهله – المدينة ثلاث أَيَّامٍ كَمَا أَمَرَهُ يَزِيدُ، لَا جَزَاهُ اللَّهُ خَيْرًا، وَقَتَلَ خَلْقًا مِنْ أَشْرَافِهَا وَقُرَّائِهَا وَانْتَهَبَ أَمْوَالًا كَثِيرَةً مِنْهَا، وَوَقَعَ شرُّ عَظِيمٌ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ عَلَى مَا ذَكَرَهُ غَيْرُ وَاحِدٍ. فَكَانَ مِمَّنْ قُتِلَ بَيْنَ يَدَيْهِ صَبْرًا مَعْقِلُ بْنُ سنان، وَقَدْ كَانَ صَدِيقَهُ قَبْلَ ذَلِكَ ، وَلَكِنْ أَسْمَعَهُ فِي يَزِيدَ كَلَامًا غَلِيظًا فَنَقَمَ عَلَيْهِ بِسَبَبِهِ.

মুসলিম ইবনে উকবা,যার অপর পরিচিতি আস্ সাইফ মুসরাফ বিন উকবা নামে (আল্লাহ এই বদ ও মূর্খ লোকের কল্যাণ না করুন,আমীন),সে এয়াযীদের আদেশে মদীনা মোনাওয়ারার আক্রমণকে ‘বৈধতা’ দিয়েছিল তিন দিনের জন্যে।আল্লাহ তা’লা এয়াযীদকে ‘জাযা’ ও ’খায়র’ মন্ঞ্জুর না করুন,আমীন।সে বহু ন্যায়বান মানুষের হত্যা সংঘটন করে এবং মদীনার বিপুল মালামাল লুঠপাট করে।একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে সে ওখানে প্রচুর ক্ষতি সাধন করে এবং অনেক ফাসাদের জন্ম দেয়।এও উল্লেখিত হয়েছে যে (সাহাবী) হযরত মুয়াফল ইবনে সানান (رضي الله عنه)কে ইবনে উকবার সামনে বেঁধে রাখা হয় এবং তারপর শহীদ করা হয়। এই সময় সে বলে, ‘তুমি এয়াযীদের বন্ধু ছিলে,কিন্তু পরে তুমি তার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছ; তাই এয়াযীদ তোমার প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হয়েছে।
[ইবনে কাসীর: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২৮০]

ইবনে কাসিরের বিদায়া ও নিহায়ার অষ্টম খণ্ডের ২৭৪ পৃষ্ঠায় এ হাদিসটি উল্লেখিত হয়েছে ইমাম হাম্বলের মুসনাদ থেকে।এতে বলা হয়েছে: যে অবিচার ছড়িয়ে দেয় ও মদীনার লোকদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তার ওপর আল্লাহর ও তাঁর ফেরেশতাদের এবং সব মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হয়।

পবিত্র কুরআনেও (সুরা আহজাবে) বলা হয়েছে: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে বিরক্ত করে বা কষ্ট দেয় আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তথা পরকালে তাদের ওপর অভিশাপ দেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন অপমানজনক বা লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (৩৩:৫৭)

আল্লামা ইবনে কাসির জন্ম ৭০২ হিজরী ইন্তেকাল ৭৩৪ হিজরী,ইয়াজিদ সম্পর্কে বলেন,

ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻛﺜﻴﺮ : ﺍﻥ ﻳﺰﻳﺪ ﻛﺎﻥ ﺍﻣﺎﻣﺎً ﻓﺎﺳﻘﺎً – ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ : 8 / 223
নিঃসন্দেহে ইয়াজিদ ফাসেক ও পাপাত্মা ছিল।
[আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া: ৮ম খন্ড,২০ পৃষ্ঠা]

এবার জানা যাক আইয়ামে হাররা কী?

❏ আইয়ামে হাররা ঐ দিন গুলোকে বলা হয়,যখন ইয়াযীদের নির্দেশে মদীনা মুনাওয়ারা আক্রমণ করা হয়েছিল।এ সময় তার নির্দেশে মদীনাতে হত্যা,লুন্ঠন, ধর্ষণ সব কিছু সংঘটিত করেছিল ইয়াযিদের বাহিনী।অনেক সাহাবীদেরকে এ সময় শহীদ করা হয়েছিল।
       
তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ: ৬ষ্ঠ খন্ড অধ্যায়ঃ আল ইখবারু আন ওয়াকআতিল হাররাহ
●(খ.) আত তাবারীঃ ৫/৪৮৪ 
●(গ.) আল কামিলঃ ৪/১১২
●(ঘ.) আল বিদায়াহঃ ৮/২১৮।

এ ঘটনাকালে মুসলমানের রক্তে পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল মদীনার রাস্তা গুলো।মুসলমানের রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে রাসুল (ﷺ)ের রওযা মোবারক পর্যন্ত পৌঁছেছিল। মসজিদে নববী রক্তে ভরে গিয়েছিল। ১০০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। 
[আত তাযকিরাহ ইমাম ইবনুল জাওযী: পৃ: ৬৩,১৬৩]

আরও বর্ণনাতে এসেছে, 

و قد روى الدارمي عن سعيد بن عبد العزبز قال: لما كان آبام الحرة ؛ لم يؤذن في مسجد النبى صلى الله عليه وسلم ولم يبرح سعيد بن المسيب من المسجد و كان لا يعرف وقت الصلوة الا بهمهمه يسمعها من قبر النبى صلى الله عليه وسلم — شرح العلامة الزرقانى-جلذ-12-صفه-407 

আইয়ামে হাররার সময় মসজিদে নববীতে তিন দিনের জন্য আজান দেয়া হয়নি। একামত ও দেয়া হয়নি।সায়ীদ বিন মুসাইয়াব (সাইয়্যিদুত তাবিয়ীন) মসজিদে নববী থেকে বের হতে পারেননি।( ঐ তিন দিন তিনি মসজিদে নববীতে অবস্থান করছিলেন)।তিনি (এ সময়) মসজিদে নববী থেকে এক ধরণের আওয়াজ শুনে নামাজের সময় অনুধাবন করতেন। অন্যত্র বলা হয়েছে, ঐ আওয়াজ ছিল আজানের ধ্বনি।যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের রওজা পাক থেকে আসত। 
          
তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) শরহে আল্লামা যুরকানী: ১২ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৪০৭
●(খ.) তাখরীজু আহাদীসিল মাসাবীহ: ৫/২৩৬১ 
মুহাদ্দিসঃ মুহাম্মাদ আল মানাওয়ী হাদীসটি সহীহ।
●(গ.) সুনানে দারিমী: ১ম খন্ড,পৃ: ২২৮ , হাদীস সহীহ।

হাররার দিন গুলোতে সায়ীদ বিন মুসাইয়্যাব রাসুল (ﷺ)ের রাওযা মুবারক থেকে নামাজের সময়গুলোতে আজানের আওয়াজ শুনতেন। এ সময় তিনি ছাড়া আর কেঊ মসজিদে ছিলনা।
[কিতাবুল ফারকি বাইনা আউলিয়া ইর রাহমানি ওয়া আউলিয়া ইশ শাইতানি ইবনু তাইমিয়াহ অধ্যায়ঃ কারামাতুস সাহাবাতি ওয়াত তাবিয়ীন।]

সায়ীদ বিন মুসাইয়াব কে ছিলেন? 
সায়ীদ বিন মুসাইয়াব ছিলেন মদীনা মুনাওয়ারার ফকীহদের মধ্য থেকে একজন।তিনি হাদীস,তাফসীর এবং ফিকহ সম্পর্কে অনেক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
[কিতাবু শাযারাতিয যাহাবি ফী আখবারিম মিন যাহাবি ইবনু ইমাদ হাম্বালী]

তালহা বিন মুহাম্মাদ বলেন,হাররার দিন গুলোতে সায়ীদ বিন মুসাইয়াব মসজিদে নববীতে ছিলেন।কোথাও বের হন নাই।তিনি বলেছেন,যখন নামাজের সময় হত,আমি রাসুলের (ﷺ) রওজা হতে আজানের আওয়াজ বের হতে শুনতাম। 
            
তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-ইমাম যাহাবী।
●(খ.) দালাইলুন নুবুওওয়াহ: ৫০৯/৫১০ আবু নাঈম।
●(গ.) আত তাবাকাতুল কুবরা-ইবনু সা’দ (৫৮১৯)-৫:৬
●(ঘ.) শরহে আল্লামা যুরকানী: ১২ম খন্ড, পৃ-৪০৭।

❏ ১৩. ইয়াযিদ সমর্থকরা বলে থাকে,ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা ইয়াযিদ নাকি পছন্দ করে নাই,সে দুঃখ পেয়েছিলো।(নাউযুবিল্লাহ, মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাকের লা’নত)।যদি তাই হবে এ প্রশ্নে জবাব ইয়াযিদ ভক্তরা কি দিবে? যখন ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মস্তক মুবারক ইয়াযিদের সামনে আনা হলো তখন সে অনেক নোংরা আচরন করলো, হাতের ছড়ি দিয়ে আঘাতও করলো (https://bit.ly/2kd2rUb) ………. এরপর যা করলো তা ইতিহাসে বর্ণিত আছে,
أنه رأى رأس الحسين مصلوبا بدمشق ثلاثة أيام
হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সুমহান মস্তক মুবারক দামেষ্কে ৩ দিন ঝুলানো ছিলো।(নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক! নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক! নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক!)

[সিয়ারু আলামিন নুবালা: ৩য় খন্ড ৩১৯ পৃষ্ঠা, লেখক: হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি,প্রকাশনা: মুওয়াসাতুর রিসালা,বৈরুত লেবানন]

এছাড়া এ ঘটনা হযরত ইবনে আসাকীর রহমতুল্লাহি তারীখে মাদীনাতু দিমাষ্ক, ইমাম যাহাবী উনার তারিখুল ইসলাম সহ আরো অনেক প্রসিদ্ধ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।ইয়াযিদ যদি দুঃখই পাবে তাহলে সম্মানিত মস্তক মুবারক ৩ দিন ঝুলিয়ে রাখার মত চরম বেয়াদবি করলো কেন?

ইমাম যাহাবী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে আরও বলেন,

“আমি বলি,এয়াযীদ মদীনাবাসীদের সাথে যে আচরণ করেছিল এবং ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) ও তাঁর বংশধরদের যেভাবে হত্যা করেছিল,আর যেভাবে মদ্যপান ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়েছিল,তাতে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিকবার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে রহমত-বরকত দেন নি; উপরন্তু,আবু বিলাল মিরদাস্ বিন আদইয়া আল-হানযালী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”
[তারিখুল ইসলাম ওয়া তাবাকাত আল- মাশাহির ওয়াল্ আ’লম: ০০৫ খণ্ড,৩০ পৃষ্ঠা]

❏ ইমাম যাহাবী আরও লিখেন,“যিয়াদহারসী বর্ণনা করে: ‘এয়াযীদ আমাকে মদ পান করতে দেয়।আমি ইতিপূর্বে কখনোই এ রকম মদ পান করি নি; তাই তাকে জিজ্ঞেস করি কোথা থেকে সে এই মদের উপাদান সংগ্রহ করেছে।এয়াযীদ জবাবে বলে,এটি মিষ্টি ডালিম,ইসপাহানের মধু, হাওয়াযের চিনি,তায়েফের আঙ্গুর ও বুরদাহ-এর পানি দ্বারা প্রস্তুতকৃত।’ আহমদ ইবনে মাসামা বর্ণনা করেন: ‘একবার এয়াযীদ মদ্যপান করে নাচা আরম্ভ করে; হঠাৎ সে পড়ে যায় এবং তার নাক দিয়ে রক্ত বেরুতে আরম্ভ করে’।”
[সিয়ার আল-আ’লম আন্ নুবালাহ,০০৪ খণ্ড,০৩৭ পৃষ্ঠা]

ইমাম যাহাবী ইয়াজিদকে নাসেবী বলে উল্লেখ করেন:

وَكَانَ نَاصِبِيّاً فَظّاً غَلِيْظاًجَلْفاً, يتناول المسكر, ويفعل المنكر. افْتَتَحَ دَوْلَتَهُ بِمَقْتَلِ الشَّهِيْدِ الحُسَيْنِ, وَاخْتَتَمَهَا بِوَاقِعَةِ الحَرَّةِ فَمَقَتَهُ النَّاسُ وَلَمْ يُبَارَكْ فِي عُمُرِه. وَخَرَجَ عَلَيْهِ غَيْرُ وَاحِدٍ بَعْدَ الحُسَيْنِ: كَأَهْلِ المَدِيْنَةِ قَامُوا للهِ,.

‘‘এয়াযীদ ছিল এক জঘন্য নসিবী (আহলে বায়তকে ঘৃণাকারী)।সে রাজত্ব আরম্ভ করে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে শহীদ করে এবং রাজত্বের ইতি টানে হাররা-এর ঘটনা দ্বারা (অর্থাৎ, মদীনা অবরোধ,যার দরুন সহীহ হাদীস মোতাবেক সে লা’নতের যোগ্য হয়)।ফলে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতো; অধিকন্তু সে জীবনে রহমত-বরকত কিছুই পায় নি; ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)এর শাহাদাতের পরে তার বিরুদ্ধে অনেকে অস্ত্র তুলে নেন-যেমনটি করেছিলেন মদীনাবাসীগণ,যাঁরা আল্লাহর ওয়াস্তে (তার বিরুদ্ধে) রুখে দাঁড়ান।”
[সিয়্যার আল-আ’লম আন্ নুবালা: ৪:৩৭-৩৮]

ইমাম যাহাবী আরো লিখেছেন,

عن نوفل بن أبي الفرات ، قال : كنت عند عمر بن عبد العزيز فقال رجل : قال أمير المؤمنين يزيد ، فأمر به فضرب عشرين سوطا.

অর্থাৎঃ ‘নওফাল বিন ফুরাত বলেন,আমি উমর ইবন আবদুল আযিযের সাথে ছিলাম।তখন এক ব্যক্তি এজিদের ব্যাপারে বললো,‘আমিরুল মুমিনিন ইয়াযিদ।’এটি শুনে উমর ইবন আবদুল আযিয সে লোককে বিশটি চাবুক মারতে আদেশ দিলেন।’
[যাহাবী রচিত সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৪র্থ খন্ড,পৃ: ৩৯]

আমীরুল মোমেনীন (খলীফা) উমর ইবনে আব্দিল আযীযের দরবারে একবার মানুষেরা এয়াযীদ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় মানুষের মধ্যে কেউ একজন এয়াযীদকে ‘আমীরুল মোমেনীন’ বলে সম্বোধন করে।এতে খলীফা রাগান্বিত হয়ে ওই লোককে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি (দুশ্চরিত্র, দুরাত্মা) এয়াযীদকে আমীরুল মোমেনীন হিসেবে ডাকো?’ অতঃপর খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয ওই লোককে ২০টি দোররা মারার নির্দেশ দেন। [তাহযিবুত্ তাহযিব: ১:৩৬১ পৃষ্ঠা]

❏ ১৪. ইমাম হালাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: হে আল্লাহ,যে ব্যক্তি মদীনা বাসীর উপর অত্যাচার করে এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করে,তুমি তাকে ভয় প্রদর্শন কর।এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহ,ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের লা’নত বর্ষিত হোক।

“তবে কী বুঝা গেলো,বুঝা গেলো যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা আক্রমণকারীর উপর লা’নত দিয়েছেন।সহীহ হাদীস তার প্রমাণ।ইতিহাসবীদগন ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন,ইয়াযিদের নির্দেশে মদীনা শরীফে হত্যা,লুঠ,ধর্ষণ হয়েছে।তাই এই পাপিষ্ঠ লা’নত পাবার উপযুক্ত।”
             
তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) মু’জামুল আওসাত লিত তাবারানীঃ ২/১২৫/১
●(খ.);আস সিলসিলাতুস সাহীহাহ লিল আলবানীঃ ১/৬২০, ১/৩৫১
●(গ.) আলা মাজমা’ লিল হাইসামীঃ ৩/৩০৬
●(ঘ.) আসসীরাতুল হালাবিয়্যাহঃ ২/২৮৭

❏ ১৫. ইবনুল ইমাদ হাম্বালী রাহিমাহুল্লাহ ও আল্লামা ইয়াফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছে অথবা তার নির্দেশ দিয়েছে সে কাফের। [শাযারাতুয যাহাবি: ১/৬৮]

ইবনুল ইমাদ হাম্বালী রাহিমাহুল্লাহ

ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺤﻲ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻌﻤﺎﺩ ﺍﻟﻌﻜﺮﻱ ﺍﻟﺤﻨﺒﻠﻲ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻔﻼﺡ ‏( 1032 – 1089 ﻫـ / 1623 – 1679 ﻡ ‏) ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ ﺑﺎﺑﻦ ﺍﻟﻌﻤﺎﺩ ﺍﻟﺤﻨﺒﻠﻲ، ﻣﺆﺭﺥ ﻭﻓﻘﻴﻪ ﻋﺎﻟﻢ ﺑﺎﻷﺩﺏ

ও আল্লামা ইয়াফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ

ﻋﻔﻴﻒ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺴّﻌﺎﺩﺍﺕ، ﺃﺑﻮ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺃﺳﻌﺪ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻓﻼﺡ ﺍﻟﻴﺎﻓﻌﻲ 698 ﻫـ / 1298 ﻡ
ﻳﺎﻓﻊ ﻟﻴﻠﺔ 20 ﺟﻤﺎﺩﻯ ﺍﻵﺧﺮﺓ 768 ﻫـ / 1367 ﻡ ‏( 70 ﻋﺎﻣﺎً ‏)
ﻣﻜﺔ ﺍﻟﻤﻜﺮﻣﺔ
বলেন—
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻴﺎﻓﻌﻲ : ﻭﺃﻣّﺎ ﺣﻜﻢ ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ، ﺃﻭ ﺃﻣﺮ ﺑﻘﺘﻠﻪ، ﻣﻤّﻦ ﺍﺳﺘﺤﻞّ ﺫﻟﻚ ﻓﻬﻮ ﻛﺎﻓﺮ . ﺷﺬﺭﺍﺕ ﻣﻦ ﺫﻫﺐ / ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻌﻤﺎﺩ ﺍﻟﺤﻨﺒﻠﻲ 1 / 68

যে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছে অথবা তার নির্দেশ দিয়েছে সে কাফের।
[শাযারাতুয যাহাবিঃ১/৬৮]

যারা ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে,শহীদ করতে আদেশ করেছে তাদের ব্যাপারে ইমাম ইয়াফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وأمّا حكم من قتل الحسين, أو أمر بقتله, ممّن استحلّ ذلك فهو كافر

“যে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে,অথবা শহীদ করতে আদেশ করেছে,এটা যারা বৈধ মনে করেছে সবাই কাফির।”
[শাযরাতুয যাহাবী: ১ম খন্ড,১২৪ পৃষ্ঠা]

❏ সুতরাং এ থেকে প্রমাণ হলো ইয়াযিদ, ইবনে যিয়াদ ও এদের সমর্থনকারী সবাই কাফির।

❏ ১৬. ইমাম সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন:

قال نوفل بن أبي الفرات: كنت عند عمر بن عبد العزيز، فذكر رجل يزيد، فقال: قال أمير المؤمنين يزيد بن معاوية، فقال: تقول أمير المؤمنين؟ وأمر به، فضرب عشرين سوطًا. وفي سنة ثلاث وستين بلغه أن أهل المدينة خرجوا عليه وخلعوه، فأرسل إليهم جيشًا كثيفًا وأمرهم بقتالهم، ثم المسير إلى مكة لقتال ابن الزبير، فجاءوا وكانت وقعة الحرة على باب طيبة، وما أدراك ما وقعة الحرة؟ ذكرها الحسن مرة فقال: والله ما كاد ينجو منهم أحد، قتل فيها خلق من الصحابة -رضي الله عنهم- ومن غيرهم، ونهبت المدينة، وافتض فيها ألف عذراء، فإنا لله وإنا إليه راجعون قال صلى الله عليه وسلم: “من أخاف أهل المدينة أخافه الله، وعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين”. رواه مسلم

وكان سبب خلع أهل المدينة له أن يزيد أسرف في المعاصي.

وأخرج الواقدي من طرق: أن عبد الله بن حنظلة الغسيل قال: والله ما خرجنا على يزيد حتى خفنا أن نرمى بالحجارة من السماء إنه رجل ينكح أمهات الأولاد، والبنات، والأخوات، ويشرب الخمر، ويدع الصلاة
قال الذهبي: ولما فعل يزيد بأهل المدينة ما فعل، مع شربه الخمر وإتيانه المنكرات، اشتد عليه الناس، وخرج عليه غير واحد، ولم يبارك الله في عمره، وسار جيش الحرة إلى مكة لقتال ابن الزبير، فمات أمير الجيش بالطريق، فاستخلف عليه أميرًا، وأتوا مكة، فحاصروا ابن الزبير وقاتلوه ورموه بالمنجنيق، وذلك في صفر سنة أربع وستين، واحترقت من شرارة نيرانهم أستار الكعبة وسقفها وقرنا الكبش الذي فدى الله به إسماعيل وكانا في السقف، وأهلك الله يزيد في نصف شهر ربيع الأول من هذا العام، فجاء الخبر بوفاته والقتال مستمر، فنادى ابن الزبير: يا أهل الشام إن طاغيتكم قد أهلك، فانقلبوا وذلوا وتخطفهم الناس، ودعا ابن الزبير إلى بيعة نفسه, وتسمى بالخلافة، وأما أهل الشام فبايعوا معاوية بن يزيد، ولم تطل مدته كما سيأتي.

নগরী লুঠপাটের পরে সে তার বাহিনীকে পবিত্র মক্কায় পাঠায় সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)কে শহীদ করার জন্যে।ওই সময় ‘হাররা’-এর ঘটনা ঘটে।হাররায় কী ঘটেছিল আপনারা জানেন কি? এ প্রসঙ্গে (তাবেঈ) হযরত হাসসান বলেন,হযরত নওফল বিন আবি ফিরায়াত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে একবার তিনি খলীফা উমর ইবনে আব্দিল আযীযের দরবারে বসেছিলেন; এমন সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল মো’মেনীন’ খেতাবে সম্বোধন করে।এতে খলীফা (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি এই ব্যক্তিকে ’আমীরুল মো’মেনীন’ বলো?” অতঃপর তিনি ওই লোককে ২০টি দোররা মারার আদেশ দেন।৬৩ হিজরীতে এয়াযীদ জানতে পারে যে মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই সে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী পবিত্র নগরীতে প্রেরণ করে এবং মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।পবিত্র “মদীনা মোনাওয়ারায় হামলা হলে পর কেউই নিরাপদ ছিলেন না।অসংখ্য সাহাবী ও অন্যান্য মানুষ শহীদ হন এবং মদীনায় লুঠপাট হয়; আর সহস্র সহস্র কুমারী মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয়। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। …মহানবী (ﷺ) এরশাদ করেন: “মদীনাবাসীকে যে কেউ (সন্ত্রাসের মাধ্যমে) হয়রানি বা ভীত-সন্ত্রস্ত করলে আল্লাহ-ও তাকে অনুরূপ প্রতিদান দেবেন এবং তার ওপর আল্লাহর লা’নত, ফেরেশতাকুল ও মানব জাতির (মো’মেনদের) লা’নত-ও” (মুসলিম শরীফ)।মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ যে কারণে এয়াযীদের বায়াত গ্রহণ করেন নি, তা হলো সে ’অত্যধিক পাপাচারে লিপ্ত’ ছিল।আল-ওয়াকিদী সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন খাযলাতাল গুসাইল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আল্লাহর শপথ! আমরা এয়াযীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি যখন আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ‘আমাদের প্রতি আসমান থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হবে’; কেননা,এয়াযীদী গোষ্ঠী তাদের মা,বোন ও কন্যাদের বিয়ে করা আরম্ভ করেছিল, প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল এবং নামাযও তরক করছিল।” ইমাম যাহাবী বলেন, এয়াযীদ ‘মদ্যপান ও অন্যান্য কুকর্মে লিপ্ত’ হবার পর মদীনাবাসীদের প্রতি জুলুম-নিপীড়ন করলে মক্কাবাসী মুসলমানবৃন্দও চারদিক থেকে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে কোনো রহমত-বরকত দেন নি।(এয়াযীদ মক্কা আক্রমণ করে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)কেও শহীদ করে)।
[ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত: তারিখুল খুলাফা ১:১৬৭]

❏ হাফিজুল হাদিস (১ লক্ষ হাদিসের হাফিজ) ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) ’তারিখুল খুলাফা’ গ্রন্থে যা বলেন
فأبوا إلا قتله، فقتل وجيء برأسه في طست حتى وضع بين يدي ابن زياد، لعن الله قاتله وابن زياد معه ويزيد أيضًا.

‘‘আপনি (ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)) শাহাদাত বরণ করেন এবং আপনার কর্তিত শির ইবনে যিয়াদের সামনে একটি থালায় করে আনা হয়।আপনাকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার ওপর আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত); আরও লা’নত ইবনে যিয়াদ ও এয়াযীদের ওপর।”
[ইমাম সৈয়ুতী রচিত: তারিখুল খুলাফা, ১:১৬৫]

❏ ১৭. বিখ্যাত মুফাসসির “তফরীরে রুহুল মায়ানীর” প্রনেতা আল্লামা আলুসি (رحمة الله) এর মন্তব্য:

❏ (ক.) আল্লামা আলূসী (رحمة الله) কৃত ‘তাফসীরে রূহুল মা’আনী’ কেতাবে সূরা মুহাম্মদ (ﷺ)-এর ২২-২৩ নং আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় বলেন:

واستدل بها أيضا على جواز لعن يزيد عليه من الله تعالى ما يستحق نقل البرزنجي في الإشاعة والهيثمي في الصواعق أن الإمام أحمد لما سأله ولده عبد الله عن لعن يزيد قال كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى في كتابه فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم أجد فيه لعن يزيد فقال الإمام إن الله تعالى يقول: فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحامَكُمْ أُولئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ الآية وأي فساد وقطيعة أشد مما فعله يزيد انتهى.

“এয়াযীদের প্রতি ‘লা’নত’ দেয়ার দালিলিক প্রমাণ এই আয়াত থেকেই বের করা হয়েছে,যেমনটি ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন আল-বরযানজি রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘আল-আশআত’ পুস্তকে এবং আল-হায়তামী তাঁর ‘আস্ সাওয়াইক্ক’ গ্রন্থে এই মর্মে যে,ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর পুত্র আবদুল্লাহ তাঁকে এয়াযীদের প্রতি লা’নত দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন।ইমাম সাহেব বলেন, ‘তার প্রতি লা’নত দেয়া যাবে না কেন,যেখানে স্বয়ং আল্লাহতা’লা-ই কুরআন মজীদে তাকে লা’নত দিয়েছেন?’ আবদুল্লাহ আবার প্রশ্ন করেন, ‘কিতাবুল্লাহর ওই আয়াতটি তেলাওয়াত করুন যাতে আমি জানতে পারি কীভাবে এয়াযীদের প্রতি লা’নত দেয়া হলো?’ এমতাবস্থায় ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিম্নবর্ণিত আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন,‘তবে কি তোমোদের এ লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে তোমরা শাসনক্ষমতা লাভ করলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং আপন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহতা’লা অভিসম্পাত (লা’নত) দিয়েছেন…’ (আল-কুরআন, ৪৭:২২-২৩)। অতঃপর তিনি বলেন, ‘এয়াযীদ যা করেছে তার থেকে বড় বিপর্যয় আর কী হতে পারে’?”
[আল্লামা আলূসী: রূহুল মা’আনী’, আত তাফসীর ৯ম খণ্ড,আল-কুরআন ৪৭:২২-২৩-এর ব্যাখ্যায়]

❏ (খ.) বিখ্যাত মুফাসসির ও মুহাদ্দিস আল্লামা আলুসি (رحمة الله) আরও বলেন -ইবনে যিয়াদ ইয়াযীদের নির্দেশে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত উনাদেরকে বন্দী করে এবং কারবালায় শাহাদাত প্রাপ্ত উনাদের কর্তিত মস্তক মুবারক নিয়ে মিছিল করে দামাস্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিমার ইবনে জুল জাউশান ইবনে সালাবা,শীস ইবনে রাবী,আমর ইবনে,হাজ্জাজ এবং আরো কতক লোককে নিযুক্ত করে। তাদের হুকুম দেয় তারা যে শহরে পৌঁছাবে সেখানে যেন কর্তিত মস্তক মুবারকের প্রদর্শনী করা হয়। নাউযুবিল্লাহ !! এরূপ মিছিলটি পহেলা ছফর দামেস্ক শহরের দ্বার দেশে পৌঁছে।ইয়াযীদ তখন জায়রূন রাজপ্রাসাদে অবস্থা করছিলো।সে প্রাসাদের বেলকুনীতে বসে দৃশ্য উপভোগ করছিলো।নাউযুবিল্লাহ !

❏ ওখানকার কাকগুলো কলরব করে বিলাপ প্রকাশ করতে লাগলো।ইয়াযীদ তখন কবিতা আবৃত্তি করে বিজয় উল্লাস করে বলে-
ﻟﻤﺎ ﺑﺪﺕ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﺤﻤﻮﻝ ﻭﺍﻟﺸﺮﻗﺖ + ﺗﻠﻚ ﺍﻟﺮﺅﺱ ﻋﻠﻲ ﺷﻔﺎ ﺟﻴﺮﻭﻥ + ﻧﻌﺐ ﺍﻟﻐﺮﺍﺏ ﻓﻘﻠﺖ ﻗﻞ ﺍﻭ ﻻﺗﻘﻞ +
ﻓﻘﺪ ﺍﻗﺘﻀﻴﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺩﻳﻮﻧﻲ

অর্থ: যখন ওইসব বাহন চোখে পড়লো,আর ওইসব মস্তক সামনে ভেসে উঠলো জয়রূন উপকন্ঠে তখন কাককুল কলরব করে উঠলো।আমি বললাম,কলরব করো বা নাই করো,আমি রসূলের নিকট হতে আমার ঋনগুলো শোধ করে নিয়েছি।”আসতাগফিরুল্লাহ !! নাউযুবিল্লাহ !!!
[তাফসীরে রূহুল মায়ানী: ২৫ তম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা]

ইয়াযীদ কাফির যে তার কবিতায় কথিত ঋনের কথা বলেছে সে বিষয়ে আল্লামা আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) বলেন-” ইয়াযীদ তার উক্তি আমি রসূলের নিকট হতে আমার ঋনগুলো শোধ করে নিয়েছি দ্বারা বুঝাতে চাচ্ছে যে,হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদর যুদ্ধে ইয়াযীদের নানা উতবা এবং তার মামাকে ও অন্যান্য আপনজনকে হত্যা করেছিলেন।যার প্রতিশোধরূপে ইয়াযীদ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত শরীফ উনাদের শহীদ করেছে।নাউযুবিল্লাহ! এটা স্পষ্ট কুফরীর প্রমান। তার এ উক্তি প্রমানিত হওয়ায়
ইয়াযীদ এজন্য অবশ্যই কাফির হয়ে গেছে।”
[তাফসীরে রূহুল মায়ানী: ২৫ তম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা]

❏ আলুসী (رحمة الله) বলেন-
ﺫﺍﻟﻚ ﻟﻌﻤﺮﻱ ﻫﻮ ﺍﻟﻀﻼﻝ ﺍﻟﺒﻌﻴﺪ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻜﺎﺩ
ﻳﺰﻳﺪ ﻋﻠﻲ ﺿﻼﻝ ﻳﺰﻳﺪ

অর্থ-আমি কসম করে বলি,এটা হলো চরম ভ্রষ্টতা।যা ইয়াজীদের ভ্রষ্টতাকে অতিক্রম করেছে।”
[রুহুল মায়ানী: ২৫ তম খন্ড,৭৩ পৃষ্ঠা]

❏ (গ.) আল্লামা আলূসী আরও বলেন,

ولو سلّم أن الخبيث كان مسلما فهو مسلم جمع من الكبائر ما لا يحيط به نطاق البيان، وأنا أذهب إلى جواز لعن مثله على التعيين ولو لم يتصور أن يكون له مثل من الفاسقين، والظاهر أنه لم يتب، واحتمال توبته أضعف من إيمانه، ويلحق به ابن زياد وابن سعد وجماعة فلعنة الله عز وجل عليهم أجمعين، وعلى أنصارهم وأعوانهم وشيعتهم ومن مال إليهم إلى يوم الدين ما دمعت عين على أبي عبد الله الحسين.

“আর আমি বলি,আমার ভাবনায় যা প্রাধান্য পায় তা হলো এই খবীস (এয়াযীদ) মহানবী (ﷺ)-এর রেসালতের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় নি।আমার মতে,এয়াযীদের মতো লোককে লা’নত দেয়া সঠিক,যদিও তার মতো এতো বড় ফাসিকের কথা কল্পনা করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়; আর এটাও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে সে কখনোই তওবা করে নি; (উপরন্তু) তার তওবা করার সম্ভাবনাও তার ঈমান পোষণ করার সম্ভাবনার চেয়ে ক্ষীণতর।এয়াযীদের পাশাপাশি ইবনে যিয়াদ,ইবনে সা’আদ ও তার দল-বল এতে জড়িত।অবশ্যঅবশ্য কেয়ামত দিবস অবধি এবং ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)এর জন্যে (মো’মেনদের) চোখের পানি যতোদিন ঝরবে ততোদিন পর্যন্ত আল্লাহর লা’নত তাদের সবার ওপর পতিত হোক; তাদের বন্ধু-বান্ধব,সমর্থক, দল-বল এবং ভক্তদের ওপরও পতিত হোক!”
[আল্লামা আলূসী: রূহুল মা’আনী’, আত তাফসীর,২৬:৭৩]

তাফসীরে রূহুল মা’আনী গ্রন্থটি এয়াযীদকে কাফের ঘোষণা করে আল্লামা আলূসী বলেন,
وعلى هذا القول لا توقف في لعن يزيد لكثرة أوصافه الخبيثة وارتكابه الكبائر في جميع أيام تكليفه ويكفي ما فعله أيام استيلائه بأهل المدينة ومكة.
অপবিত্র এয়াযীদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রেসালতকে অস্বীকার করেছিল। মক্কা মোয়াযযমা ও মদীনা মোনাওয়ারার মুসলমান সর্বসাধারণ এবং মহানবী (ﷺ) এর পরিবার সদস্যদের প্রতি যে (অসভ্য ও বর্বর) আচরণ সে করেছিল, তাতে প্রমাণ হয় যে সে কাফের (অবিশ্বাসী) ছিল।”

এ বিখ্যাত মুফাসসির ও মুহাদ্দিস,মুফতীয়ে বাগদাদ হযরত আল্লামা আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) ইয়াজিদ কাফির হওয়া প্রসঙ্গে বলেন-

ﺍﻧﺎ ﺍﻗﻮﻝ : ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻐﻠﺐ ﻋﻠﻲ ﻇﻨﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﺨﺒﻴﺚ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﺼﺪﻗﺎ ﺑﺮﺳﺎﻟﺔ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺍﻥ

ﻣﺠﻤﻮﻉ ﻣﺎ ﻓﻌﻞ ﻣﻊ ﺍﻫﻞ ﺣﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻭﺍﻫﻞ ﺣﺮﻡ ﻧﺒﻴﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻻ ﻻﺓ ﻭ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﻋﺘﺮﺗﻪ ﺍﻟﻄﻴﺒﻴﻦ ﺍﻟﻄﺎﻫﺮﻳﻦ

ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻴﺎﺓ ﻭ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺍﺕ ﻭﻣﺎ ﺻﺪﺭ ﻣﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺨﺎﺯﻱ ﻟﻴﺲ ﺑﺎﺿﻌﻒ ﺩﻻﻟﺔ ﻋﻠﻲ ﻋﺪﻡ ﺗﺼﺪﻳﻘﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺎﺀ

ﻭﺭﻗﺔ ﺍﻟﺼﻔﻒ ﺍﻟﺸﺮﻳﻒ ﻓﻲ ﻗﺬﺭ

অর্থ: আমি বলছি, আমার এটাই অধিক ধারনা যে, খবীসটি হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল বলে বিশ্বাস করতো না।সে আল্লাহ পাক উনার হেরেম শরীফে (কা’বা শরীফ প্রান্তে) অবস্থানকারীদের সাথে,হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হেরেম শরীফ (মদীনা শরীফ) এ
অবস্থানকারীদের সাথে এবং উনার পূত-পবিত্র বংশধর উনাদের সাথে উনার জীবদ্দশায় এবং উনাদের বেছাল শরীফের পরে যে আচরন করেছে, এছাড়া তার দ্বারা যে সমস্ত অনাচার প্রকাশ পেয়েছে তা তার ঈমান না থাকার ব্যাপারটি স্পষ্ট করে,(তার ঈমান থাকার) ব্যাপারটি প্রমান করতে কোন দুর্বল দলীলও নাই।কারন এ কাজটি ছিলো কুরআন শরীফের পাতা অবহেলা অবজ্ঞার সাথে ময়লা আবর্জনায় নিক্ষেপ করার মতো অন্যায়।”
[তাফসীরে রূহুল মা’য়ানী: ২৫ তম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা।]

❏ (ঘ.) প্রখ্যাত এই সুন্নি তাফসিরকারক পবিত্র কুরআনের ‘রুহুল মাআনি’ নামক তাফসির গ্রন্থে লিখেছেন: “আমি আমার এ বিশ্বাসকেই বেশি গুরুত্ব দেই যে, খবিসটি (ইয়াজিদ) নবী (ﷺ)-কে রাসূল বা নবী বলেই বিশ্বাস করতো না,অর্থাৎ সে কাফির ছিল।সে কখনও অনুতপ্ত হয়নি দৃশ্যত।তার অনুতপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা ঈমানদার হওয়ার সম্ভাবনার চেয়েও দুর্বল।আমি মনে করি বেশিরভাগ মুসলমানের কাছেই ইয়াজিদের কার্যকলাপ অজানা ছিল না।কিন্তু মুসলমানরা তখন অসহায়ভাবে বশীভূত ছিল।আর যদি ধরে নেই খবিসটি (অপবিত্র) মুসলমান ছিল,তাহলেও বলতে হবে সে যাবতীয় বড় পাপ একত্রে করেছে যা বর্ণনা করার ভাষা নেই।আমি মনে করি তার মত ব্যক্তির প্রতি অভিশাপ দেয়া বৈধ।তার মত বড় পাপী কেউ আছে বলেও ধারণা করা যায় না।

ইয়াজিদ ছাড়াও (তার গভর্নর) ইবনে জিয়াদ,ওমর সাদ ও তাদের দলবলও অভিশাপ পাওয়ার উপযুক্ত।তাদের সবার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।তাদের সাহায্যকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাঙ্গপাঙ্গদের ওপরও লানত তথা অভিশাপ।আর যারা তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে তাদের ওপরও অভিশাপ কিয়ামতের দিন পর্যন্ত এবং ততদিন যতদিন ইমাম হুসাইন (আ.)’র জন্য একটি মাত্র চোখ থেকেও অশ্রু ঝরবে।আর শিয়াদেরকে হেয় করার জন্য ইয়াজিদের পক্ষ নেয়াও মূর্খতার নিদর্শন।”
[রুহুল মায়ানি,২৫ম খণ্ড,পৃ: ৭৩]

❏ (ঙ.) ইয়াজিদের উপর লা’নত করার ব্যাপারে সকল ইমাম ও উলামায়ে কিরামগন একমত।এ বিষয়ে বিখ্যাত তাফসীরের কিতাব “তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী”তে সূরা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ২২ নং আয়াত শরীফের তাফসীরে এ বিষয়ে সকল ইমাম মুস্তাহিদ উনাদের রায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে-

وقد صرح بكفره وصرح بلغنه جماعة من العلماء منهم الحافظ ناصر السنة ابن الجوزي وسبقه القاضي ابو يعلي وقال العلامة التفتازاني لانتوقف في شانه بل في ايمانه لعنة الله تعالي عليه وعلي انصاره واعوانه وممن صرح بلعنه الجلال السيوطي عليه الرحمت
অর্থ- ইয়াজীদ কাফির হওয়া সম্পর্কে এবং তার প্রতি লানত করা বৈধতার বিষয়ে এক জামাতের উলামা পরিস্কার মন্তব্য করেছেন।উনারা হলেন,হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের মদদগার ইবনুল জাওজী (رحمة الله) আর উনার পূর্বে হযরত কাজী আবু ইয়ালা (رحمة الله)।আর আল্লামা হযরত তাফতানী (رحمة الله) বলেন,আমরা ইয়াজীদের ব্যাপারে দ্বিধা করবো না। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারে ও না।তার প্রতি,তার সাহায্যকারী দের প্রতি এবং শুভকামনা কারীদের প্রতি আল্লাহ পাকের লানত।যারা ইয়াজীদ সুস্পষ্ট লানত করেছেন তাদের মধ্যে ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী (رحمة الله) তিনিও রয়েছেন।”
[তাফসিরে রুহুল মায়ানী: ২৫ খন্ড,৭২ পৃষ্ঠা]

তাছাড়াও আল্লামা আলুসির মতে এবং অন্যান্যদের মতে আরো অনেকজন তাকে লানত করেছে তারা হলেন:

❏ আল-বারযানযি (رحمة الله) তার “আল- হাসনাত” কিতাবে
❏ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) “(আস-সাওয়াইক)” ও “(তফসীরে রুহুল মায়ানী ২৫:পৃ ৭৩, সুরা ৪৭:২২-২৩) কিতাবে ওনার নিজ পুত্র আব্দুল্লাহ এটা বর্ননা করেছেন আর তার থেকে
❏ ইমাম আল-হায়তামী (رحمة الله) ও আল্লামা আলুসী বর
❏ ইমাম তাবারী (رحمة الله)
❏ বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়েখ আব্দুল হক্ব দেহলবী (رحمة الله)
❏ বিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী (رحمة الله) ইয়াযীদকে লা’নতপ্রপ্ত,অভিশপ্ত,নাপাক বলে উল্লেখ করেছেন।

মুফাসসির আল্লামা আলুসী (رحمة الله) আরো বলেন-

ﻋﻠﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ‏( ﺍﻱ ﻋﻠﻲ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺑﻌﻌﻦ ﻣﻌﻴﻦ ‏) ﻻﻧﻮﻗﻒ ﻓﻲ ﻟﻌﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻜﺜﺮﺓ ﺍﻭﺻﺎﻓﻪ ﺍﻟﺨﺒﻴﺜﺔ
ﻭﺍﺭﺗﻜﺎﺑﻪ ﺍﻟﻜﺒﺎﺀﺭ ﻓﻲ ﺟﻤﻴﻊ ﺍﻳﺎﻡ ﺗﻜﻠﻴﻔﻪ ﻭﻳﻜﻔﻲ ﻣﺎ ﻓﻌﻠﻪ ﺍﻳﺎﻡ ﺍﺳﺘﻼﺀﻩ ﺑﺎﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻭﻣﻜﺔ ﻓﻘﺪ ﺭﻭﻱ
ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﺑﺴﻨﺪ ﺣﺴﻦ : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻣﻦ ﻇﻠﻢ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻭﺍﺧﺎﻓﻬﻢ ﻓﺎﺧﻔﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻟﻌﻨﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻣﻼﺀﻛﺔ ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ
ﺍﺟﻤﻌﻴﻦ ﻻﻳﻘﺒﻞ ﻣﻨﻪ ﺻﺮﻑ ﻭﻻﻋﺪﻝ
ﻭﺍﻟﻄﺎﻣﺔ ﺍﻟﻜﺒﺮﻱ ﻣﺎ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺑﺎﻫﻞ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻭﺭﺿﺎﻩ ﺑﻘﺘﻞ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻋﻠﻲ ﺟﺪﻩ ﻭﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﺎﻭﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺍﺳﺘﺒﺸﺎﺭﺓ
ﺑﺬﺍﻟﻚ ﻭﺍﻫﺎﻧﺘﻪ ﺍﻫﻞ ﺑﻴﺘﻪ ﻣﻤﺎ ﺗﻮﺍﺗﺮ ﻣﻌﻨﺎﻩ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﻔﺎﺻﻴﻠﻪ ﺍﺣﺪﺍ .
অর্থ: এ কথার ভিত্তিতে ( সুনির্দিষ্টভাবে অভিসম্পাত দানের বৈধতার ভিত্তিতে) ইয়াযিদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে লা’নত করার প্রশ্নে আমরা দ্বিধা করবো না। সে বহুবিধ নিকৃষ্টমানের দোষ করেছে।তার জবর দখলের দিনগুলোতে সে মদীনা শরীফ ও মক্কা শরীফ এর অধিবাসীদের সাথে যে আচরন করেছে তার ব্যাপারে বিচার করতে গেলেই যথেষ্ট।প্রসঙ্গত হযরত ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হাসান সনদে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন,হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,হে বারে ইলাহী ! যে মদীনাবাসীদের প্রতি যুলুম করবে,উনাদের সন্ত্রস্ত করবে, আপনি তাকেও ভীতির সম্মুখীন করুন।”
এরূপ ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ পাক,ফেরেশতাকুল, মানবকুলসহ সকলে অভিসম্পাত ( লা’নত) বর্ষিত হোক। এরূপ ব্যক্তির কোন ফরজ ও নফল ইবাদত কবুল করা হবে না।আর মহাপ্রলয়ের ন্যায় ইয়াযিদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত শরীফ (পরিবারবর্গ) উনাদের সাথে যা করেছে আর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতকে যেভাবে সানন্দে সে গ্রহণ করেছে।নাউযুবিল্লাহ।হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার নানা ও উনাদের উভয়ের প্রতি ছলাত ও সালাম বিনিময়
নিবেদন করি এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পরিবারবর্গের সাথে সে যেসব মানহানিকর ব্যবহার করেছে,তার বিস্তারিত বিবরন সূত্রগত একক বর্ননায় বর্নিত হলেও অর্থ ও তথ্য দৃষ্টে (মুতাওয়াতির) ব্যাপক সূত্রে বর্নিত।”
[তাফসীরে রূহুল মায়ানী ২৫ তম খন্ড ৭২ নং পৃষ্ঠা।]

❏ ১৮. আল্লামা তাফতাযানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন

ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺳﻌﺪ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺘﻔﺘﺎﺯﺍﻧﻲ ‏( 722 ﻫـ – 792 ﻫـ ‏) ، ﻋﺎﻟﻢ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﻓﻘﻴﻪ ﻣﺘﻜﻠﻢ،

ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺘﻔﺘﺎﺯﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻌﻘﺎﺋﺪ ﺍﻟﻨﻔﺴﻴﺔ : ﻭﺍﻟﺤﻖ ﺃﻥ ﺭﺿﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻘﺘﻞ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ، ﻭﺍﺳﺘﺒﺸﺎﺭﻩ ﺑﺬﻟﻚ، ﻭﺇﻫﺎﻧﺘﻪ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺖ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻣﻤﺎ ﺗﻮﺍﺗﺮ ﻣﻌﻨﺎﻩ، ﻟﻌﻨﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ، ﻭﻋﻠﻰ ﺃﻧﺼﺎﺭﻩ ﻭﺃﻋﻮﺍﻧﻪ ﺇﺑﻦ ﺍﻟﻌﻤﺎﺩ ﺍﻟﺤﻨﺒﻠﻲ – ﺷﺬﺭﺍﺕ ﺍﻟﺬﻫﺐ ﻓﻲ ﺃﺧﺒﺎﺭ ﻣﻦ ﺫﻫﺐ – ﺍﻟﺠﺰﺀ : ‏( 1 ‏) – ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺼﻔﺤﺔ : ‏( 68

সঠিক কথা হচ্ছে,ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করার ব্যাপারে ইয়াজিদের সম্মতি ছিল।তার উপর আল্লাহর লা’নত পড়ুক।লা’নত পড়ুক তাদের উপর যারা তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।
[ফায়দুল কাদীরঃ ৩/১০৯ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ]

❏ ১৯. হাফিজুল হাদিস ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) ইয়াজিদ সম্পর্কে মন্তব্য:

●(ক.) আহলে সুন্নার মুহাদ্দিস ও রিজাল শাস্ত্রের আলেম,বুখারির বিখ্যাত শারাহ লেখক শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত ‘আল-এমতা’ বিল আরবাঈন’ শীর্ষক বইয়ের পুরো শিরোনামই দিয়েছেন ‘এয়াযীদের প্রতি লা’নত’।ওতে তিনি লিখেন,

وَأما الْمحبَّة فِيهِ وَالرَّفْع من شَأْنه فَلَا تقع إِلَّا من مُبْتَدع فَاسد الِاعْتِقَاد فَإِنَّهُ كَانَ فِيهِ من الصِّفَات مَا يَقْتَضِي سلب الْإِيمَان عَمَّن يُحِبهُ لِأَن الْحبّ فِي الله والبغض فِي الله من الْإِيمَان وَالله الْمُسْتَعَان.
“এয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ‘বেদআতী-গোমরাহ’ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না,যে ব্যক্তির বিশ্বাস একেবারেই শূন্য।কেননা,এয়াযীদের এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল যার ভক্ত-অনুরক্ত হলে কুফর তথা অবিশ্বাসের যোগ্য হতে হয়। এটা এই কারণে যে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসা এবং তাঁরই ওয়াস্তে ঘৃণা করা ঈমানেরই লক্ষণ।”
[ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী: ‘আল-’ এমতা বিল্ আরবাঈন আল-মাতবাইনাত আস্ সামা’আ’, দার আল-কুতুব আল-এলমিয়্যা,বৈরুত,লেবানন হতে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত প্রণীত পুস্তকের ৯৬ পৃষ্ঠা।]

❏ আহলে সুন্নার মুহাদ্দিস ও রিজাল শাস্ত্রের আলেম,বুখারির বিখ্যাত শারাহ লেখক ইবনে হাজর আস্কালানীর লেখা আল ইমতা বিল আরবাইনের পৃষ্ঠা নং ৯৬ থেকে তুলে ধরা হল:

وأما المحبة فيه والرفع من شأنه فلا تقع إلا من مبتدع فاسد الاعتقاد فإنه كان فيه من الصفات ما يقتضي سلب الإيمان عمن يحبه لأن الحب في الله والبغض في الله من الإيمان والله المستعان
ইয়াজিদের প্রতি লানতঃ
“………তাকে (ইয়াজিদকে) ভালবাসা ও তার বড়ত্ব একজন অধার্মিক ও ইমানশূন্য ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রকাশ করে না,কারণ ইয়াজিদ এমন চরিত্রের লোক যে,তার প্রেমীকরা ইমানশুন্য হতে বাধ্য,কারণ আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও ঘৃনা ইমানের লক্ষন।”

●(খ.) ইমাম সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি অন্যত্র লিখেন,

وقال يحيى بن عبد الملك بن أبي غنية أحد الثقات ثنا نوفل بن أبي عقرب ثقة قال كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزيد بن معاوية فقال أمير المؤمنين يزيد فقال عمر تقول أمير المؤمنين يزيد وأمر به فضرب عشرين سوط.
“এয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন আবি গানিয়্যা যিনি ’সিকা (নির্ভরযোগ্য) বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ‘সিকা’ বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব থেকে শুনেছেন: একবার খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর)-এর দরবারে মানুষেরা এয়াযীদ ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন।ওই সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল মো’মেনীন (ঈমানদারদের শাসক) খেতাবে সম্বোধন করে।এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি এয়াযীদকে আমীরুল মো’মেনীন ডেকেছ?” অতঃপর তিনি ওই লোককে ২০টি দোররা মারার হুকুম দেন।[ইমাম আসকালানী: ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’, ৬:৩১৩]

●(গ.) ইমাম ইবনে হাজার ইয়াজিদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন: ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رضي الله عنه) তাঁর তফসীরে, ইয়াজিদের ‘মাগফুর’ বা ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন এভাবে,“ইবনে মুহলাব বলেছেন যে,এই হাদীসে আমীর মুয়াবিয়ার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন তিনি প্রথম নৌ অভিযান করেছিলেন এবং এই হাদীসে ইয়াযিদের কথাও ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন সে প্রথম কাইসারের নগরী আক্রমন করেছিল (এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন ইয়াযিদ প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি সে অনেক পরের একটি অভিযানে তার পিতা কর্তৃক শাস্তিস্বরুপ প্রেরিত হয়েছিল- লেখক)

কিন্তু,ইবনে আল তীন এবং ইবনে আল্ মূনীর এর উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ইহা অপরিহার্য নয় যে,ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে সকলেই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত কারন উলামায়ে ক্বিরাম তথা জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সকলেই একমত যে, তারাই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত হবে যারা প্রকৃতই তার উপযুক্ত হবে কারন আক্রমনকারীদের মধ্যে যদি কেউ পরে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সে আর ক্ষমাপ্রাপ্তগনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে না এবং এটা প্রমান যে উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ক্ষমাপ্রাপ্তির বিষয়টি শর্তাধীন।
[ তথ্যসূত্র: ফাতহুল বারী শারাহ সাহীহ বুখারী-ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: ৬ষ্ট খন্ড,পৃ: নং ২০০-২০১]

❏ ২০. তাফসীরে মাযহারী নামক কিতাবে সূরা মুহাম্মদ এর ২২ও ২৩নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আছে

ﻗَﺎﻝَ ﺻَﺎﻟِﺢُ ﺑْﻦُ ﺃَﺣْﻤَﺪَ ﺑْﻦِ ﺣَﻨْﺒَﻞٍ : ﻗُﻠْﺖ ﻟِﺄَﺑِﻲ : ﺇﻥَّ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ : ﺇﻧَّﻬُﻢْ ﻳُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﻳَﺰِﻳﺪَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻭَﻫَﻞْ ﻳُﺤِﺐُّ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺃَﺣَﺪٌ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺎَﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ؟ ﻓَﻘُﻠْﺖ : ﻳَﺎ ﺃَﺑَﺖِ ﻓَﻠِﻤَﺎﺫَﺍ ﻟَﺎ ﺗﻠﻌﻨﻪ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻭَﻣَﺘَﻰ ﺭَﺃَﻳْﺖ ﺃَﺑَﺎﻙ ﻳَﻠْﻌَﻦُ ﺃَﺣَﺪًﺍ؟ ” .

অর্থাৎ আল্লামা ইবনে জাওজি বলিয়াছেন যে কাজী আবু ইউলা আলতা মাদুল উসুল নামক কিতাবে সনদ সহকারে বর্ণনা করেন সালেহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল তাহার পিতা কে জিজ্ঞাসা করেন যে আব্বা কোন কোন লোক ধারণা করে যে আমরা এজিদ ইবনে মুয়াবিয়া কে ভালোবাসিয়া থাকি।তদুত্তরে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলিলেন বাবু যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ঈমান কাকে তাহার নিকট কি এই খবর পৌঁছাতে পারে যে সে ইয়াজিদকে ভালোবাসেন আর ওই ব্যক্তি কেন অভিশপ্ত হইবে না যাকে আল্লাহ পাক কোরআন মাজিদে অভিশপ্ত ঘোষণা করিয়াছেন আমি বলিলাম আব্বাজান কোরআন মাজিদের কোন জায়গায় আল্লাহ তাআলা ইয়াজিদকে করিয়াছেন তিনি উত্তরে বললেন সূরা মুহাম্মদ এর ২২ ও ২৩নং আয়াতে

এই আয়াতে যে আল্লাহ পাক বলিয়াছেন তোমরা যখন শাসক নিযুক্ত হইবেন তখন কি তোমরা জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং এই প্রকার লোকগুলো আল্লাহপাক অভিশপ্ত করিয়াছেন।

তাফসীরে মাযহারী নামক কিতাবে চতুর্থ খণ্ড ২০০ পৃষ্ঠা সূরা ইব্রাহীম এর ২৮ নং আয়াত কাজী সানাউল্লাহ পানিপথি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন

ﻗﻠﺖ ﺍﻣﺎ ﺑﻨﻮ ﺍﻣﻴﺔ ﻓﻤﺘﻌﻮﺍ ﺑﺎﻟﻜﻔﺮ ﺣﺘﻰ ﺍﺳﻠﻢ ﺍﺑﻮ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﻭﻣﻌﺎﻭﻳﻪ ﻭﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﺎﺹ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﺛﻢ ﻛﻔﺮ ﻳﺰﻳﺪ ﻭﻣﻦ ﻣﻌﻪ ﺑﻤﺎ ﺍﻧﻌﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﺍﻧﺘﺼﺒﻮﺍ ﺍﻟﻌﺪﺍﻭﺍﺕ ﺍﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﻭ ﻗﺘﻠﻮﺍ ﺣﺴﻴﻨﺎ ﻇﻤﻼ ﻭﻛﻔﺮ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﺪﻳﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ

আমি বলি যে,কুফরী দ্বারা ফায়দা আছে এমনকি আবু সুফিয়ান ও আমর ইবনে আস ইসলাম গ্রহণ করেন।তারপর ইয়াজিদ ও তাহার আল্লাহর নেয়ামতের সহিত করিয়া বসিল আল্লাহপাক তাহাদিগকে দান করিয়াছেন তাহারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশধর সহিত শত্রুতা করিল এবং হযরত ইমাম হুসাইন কে জুলুম ও কুফরী্র সহিত হত্যা করিল।অত পর ইয়াজিদ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর ধর্মের সাথে কুফরী করিল।

❏ ২১. আল্লামা শাহ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (রাহঃ) লিখেন,ইয়াজিদ মালাউন ছিল এবং তার কাজ অভিশপ্ত ছিলো।তার প্রতি ভালোবাসা নবী বিদ্বেষের বহি:প্রকাশ। [মা-ছাবাতা বি সুন্নাহ: ৩৯ পৃষ্ঠা]

❏ হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম ৯৫৮ হিজরী ইন্তেকাল ১০৫২ হিজরী আশআতুল লুম আত নামক কিতাবে বলেন,
ﺍ ﮞ ﺷﻘﺞ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺒﻮﺍﺩ ﺭﻓﺖ
ওই দুষ্টু পাপাচারী ইয়াজিদ জাহান্নামে গেল।

❏ হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী তাকমিলুল ঈমান
ﺟﺰﺏ ﺍﻟﻘﻠﻮﺏ ﺍﻟﯽ ﺩﯾﺎﺭ ﺍﻟﻤﺤﺒﻮﺏ
জাজবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব নামক কিতাবে ইয়াজিদের জুলুম- অত্যাচার পূর্ণ কাজ গুলি লিপিবদ্ধ রয়েছে।

❏ হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী তাকমিলুল ঈমান,নামক কিতাবে ইয়াজিদের জুলুম-অত্যাচার পূর্ণ কাজ গুলি লিপিবদ্ধ রয়েছে।

❏ ২২. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সোলাইমান ফলওয়ারী সাহেব শাহাদাতে হুসাইন নামক কিতাবের ৫৩ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন-ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি, আল্লামা ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি রহমাতুল্লা আলাইহি,আল্লামা সাদ উদ্দিন তাফতা জানী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি ও তাফসির রুহুল মায়ানীর লেখক সৈয়দ মাহমুদ আলুসি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি প্রমুখ বড় বড় মুহাদ্দিস ও বুযুর্গানে দ্বীন এজিদ কে কাফের বলিয়া অভিহিত করেন এবং তাহারা এজিদকে একবারই মুসলমান নহে বলিয়া মনে করেন।

❏ ২৩. বাহরুল উলুম আল্লামা আব্দুল আলী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলিয়াছেন
ﺑﺤﺮ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ : ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﻠﻲ ﺑﻦ ﻧﻈﺎﻡ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺑﻦ ﻗﻄﺐ ﺍﻟﺪﻳﻦ، ﺍﻟﻠﻜﻬﻨﻮﻱ، ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ , ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ 1225, ﻫـ
ﻗﺎﻝ ﺣﻀﺮﺓ ﺑﺤﺮ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﻠﻰ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﺍﻥ ﻳﺰﻳﺪ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﺧﺒﺚ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻛﺎﻥ ﺑﻌﻴﺪ ﺍﻟﻤﺮﺍﺣﻞ ﻣﻦ ﺍﻻﻣﺎﻧﺔ
ﺑﻞ ﺷﻖ ﻓﻲ ﺍﻳﻤﺎﻧﻪ ﺧﺬﻟﻪ ﺍﻟﻠﻪ
অর্থাৎ অত্যন্ত প্রকৃতির লোক ছিল এবং সে খেলাফতের পদ উপযোগী হইতে শুধু অনেক দূরে ছিল না বরং তাহার ঈমানে সন্দেহ আছে আল্লাহ তাকে লাঞ্চিত করুন।
[শারহে মুছাল্লাবুছুবুত: ১৬২ পৃষ্ঠা]

❏ ২৪. সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কুস্তোলানী (رحمة الله) বলেছেন যে,এ কথা তো সবারই জানা যে,ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যায় এবং আহলে বাইতের অপমানে খুশি ও রাজী ছিল। এজন্যই আমরা তার বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করি না।বরং তার ঈমানের ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি।আল্লাহর অভিশম্পাত ইয়াজিদ ও তার সহযোগীদের উপর।

❏ ২৫. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ফয়সালা: সকল মুফাসসীরিন,মুহাদ্দীসীন,আইম্মায়ে কিরাম, ওলামায়ে রাব্বানী এবং আল্লাহর ওলীগণ এই কথার উপর ঐক্যমত যে,হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হক্বের উপর ছিলেন।অপরদিকে ইয়াজিদ ফাসিক ও ফাজির ছিল।হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আমার উম্মতের ঐক্যমত কখনোই গোমরাহীর উপর হতে পারে না।

ইমামে রাব্বানী হযরত মুজাদ্দীদ আলফে সানী সহ অন্যান্য আওলিয়ায়ে কিরাম এবং ওলামায়ে ইসলামগণ বলেন,ইয়াজিদ পাপীষ্ঠ ও ফাসিকদের দলের অন্তর্ভূক্ত।তার পাপীষ্ঠতার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নাই।যে হীন কর্ম এই দূর্ভাগা করেছে, কোন কাফির ফিরিঙ্গিও তা করতো না।[মাকতুবাত শরীফ-৫৪,২৫১]

❏ ২৬. এয়াযীদের কুরআন প্রত্যাখ্যান:

নিচের রেফারেন্সগুলো দেখুন:

●(ক.) আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া: ৮ম খণ্ড,২০৪ পৃষ্ঠা,যিকর রাস আল-হুসাইন
●(খ.) মিনহাজ আস্ সুন্নাহ: ২য় খণ্ড,২৪৯ পৃষ্ঠা,যিকর এয়াযীদ
●(গ.) শরহে ফেকাহে আকবর: ৭৩ পৃষ্ঠা, যিকর এয়াযীদ
●(ঘ.) শরহে তাফসীরে মাযহারী: ৫ম খণ্ড, ২১ পৃষ্ঠা,সূরাহ ইবরাহীম
●(ঙ.) শাযরাহ আল-যাহাব: ৬৯ পৃষ্ঠা, যিকরে শাহাদাতে হুসাইন
●(চ.) মাকাতাহিল হুসাইন: ২য় খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা,যিকরে শাহাদাতে হুসাইন
●(ছ.) তাযকিরায়ে খাওওয়াস: ১৪৮ পৃষ্ঠা
●(জ.) তারীখে তাবারী: ১১তম খণ্ড, ২১-২৩ পৃষ্ঠা,যিকর ২৮৪ হিজরী
●(ঝ.) তাফসীরে রূহুল মা’আনী (সূরা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)

❏ ২৭. বিশ্ব বিখ্যাত সুন্নী আক্বায়ীদের কিতাব আক্বাইদে নাসাফী” কিতাবে বর্নিত আছে
ﻭﺑﻌﻀﻬﻢ ﺍﻃﻠﻖ ﺍﻟﻠﻌﻦ ﻋﻠﻴﻪ ﻟﻤﺎ ﺍﻧﻪ ﻛﻔﺮ ﺣﻴﻦ ﺍﻣﺮ ﻳﻘﻨﻞ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭ ﺍﺗﻔﻘﻮﺍ ﻋﻠﻲ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﻠﻌﻦ

ﻋﻠﻲ ﻣﻦ ﻗﺘﻠﻪ ﺍﻭ ﺍﻣﺮ ﺑﻪ ﺍﻭ ﺍﺟﺎﺯﻩ ﻭﺭﺿﻲ ﺑﻪ ﻭﺍﻟﺤﻖ ﺍﻥ ﺭﺿﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﻳﻘﺘﻞ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭ

ﺍﺳﺘﺒﺸﺎﺭﻩ ﺑﺰﻟﻚ ﻭ ﺍﻫﺎﻧﺔ ﺍﻫﻞ ﺑﻴﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ (ﷺ) ﻣﻤﺎ ﺗﻮﺍﺗﺮ ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺍﻥ ﻛﺎﻥ ﺗﻔﺎﺻﻴﻠﻪ ﺍﺣﺎﺩﺍ ﻓﻨﺤﻦ ﻻﻧﺘﻮﻗﻒ ﻓﻲ ﺷﺎﻧﻪ ﺑﻞ ﻓﻲ ﺍﻳﻤﺎﻧﻪ ﻟﻌﻨﺖ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻋﻠﻲ ﺍﻧﺼﺎﺭﻩ ﻭﺍﻋﻮﺍﻧﻪ

অর্থঃ কতক আলেম ইয়াজীদদের প্রতি লা’নত বর্ষন করেছেন।কারন ইয়াজীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার নির্দেশ দিয়ে কাফিরের কর্ম করে।আর যে ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে,যে উনাকে শহীদ করার নির্দেশ জারী করেছে,যে উনাকে শহীদ করাকে বৈধ বলে মত পোষন করেছে, এসব কান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।এরুপ লোকদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত দেয়াকে সকলেই বৈধ বলেছেন।আর সত্য হলো,ইয়াজীদ ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার ব্যাপারে রাজি ছিলো।উনার শহাদাত বরনের ব্যাপারে সে উল্লসিত ছিলো।সে নবীজী উনার পরিবারের মানহানী করে আনন্দিত হয়।নাউযুবিল্লাহ! কাজেই আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইয়াজীদের ব্যাপারে এতটুকু দ্বীধা করবো না,এমনকি তার ঈমানের প্রশ্নেও না। ইয়াজীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত,ইয়াজীদের সাহায্যকারী দের প্রতি লানত ও অভিসম্পাত।ইয়াজীদের পক্ষ সমর্থন কারীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত।”
[শরহে আক্বায়ীদে নাসাফী ১৬২ পৃষ্ঠা]

❏ ২৮. ইয়াজিদ পন্থীরা বলে থাকে যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে হত্যার আদেশ দেয়নি এবং না সে এই কাজে সন্তুষ্ট ছিল।(যারা এমনটা বলে) তারাও ভ্রান্ত।

“এবং কতেক বলে থাকে যে,ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যা ছিল কবীরা গুনাহ, কুফরী নয়;এবং লা’নত যে কাফিরের জন্য নির্ধারিত,এটাও ভূল।”

অথচ: তাদের জানা উচিত যে, দো’জাহানের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’কে কষ্ট দেওয়াটাও যে অন্যতম কুফরী।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا

অর্থাৎ নিশ্চয় যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়,তাদের উপর দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর অভিশম্পাত।এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৫৭]

❏ পবিত্র কোরআনের ঘোষণা …রাজা বাদশারা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে,তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গকে অপদস্থ করে।তারাও এরূপই করবে।
[সুরা নামাল,আয়াত নং ৩৪]

❏ পবিত্র কোরআনের ঘোষণা “কোন মোমিনকে যে ব্যক্তি জেনেশুনে হত্যা করবে তার শাস্তি জাহান্নাম সে সেখানে চিরস্থায়ী হবে তার উপর আল্লাহর লা‘নত (অভিসষ্পাত) এবং তার জন্য বড় ধরনের আযাব তৈরি করে রেখেছেন।”
[সূরা নিসা,আয়াত নং ৯৩]

এখানে আল্লাহকে কষ্ট দেয়ার অর্থ হলো তাঁর প্রিয় বান্দাদের কষ্ট দেয়া।ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং তাঁর সঙ্গীদের উপর পাপিষ্ঠ ইয়াজিদের নির্দেশে তার বাহিনীরা যে তলোয়ার চালিয়েছিল তাতে আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় হাবীব নবীয়ে দো’জাহা হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই সীমাহীন কষ্ট পেয়েছেন।সুতরাং ইয়াজিদকে নির্দোষ ও রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ইত্যাদি বলা মূলত আল্লাহ্ জাল্লাজালালুহু ও তাঁর প্রিয় হাবীবকে কষ্ট দেয়া।

কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ অনুসারে কাদের লা’নত করা যাবে?

❏ পবিত্র কোরআন শরীফে লানত শব্দটি ৪১ বার ব্যবহৃত হয়েছে। لعن : এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অভিসম্পাত করা,খোদার রহমত ও মাগফেরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া,বদ দোয়া করা।লা’নত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ নিন্মে উল্লেখ করা হল:

●১. তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।
[সূরা বাকারা,আয়াত নং ৮৮]

●২. অতএব অস্বীকারকারীদের উপরে আল্লাহর অভিসম্পাত।
[সূরা বাকারা,আয়াত নং ৮৯]

●৩. নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেস্তা এবং সমগ্র মানুষের লানত।
[সূরা বাকারা,আয়াত নং ১৬১]

●৪. এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের উপর লা’নত করেছেন আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং।বস্তুতঃ আল্লাহ যার উপর লা’নত করেন তুমি তার কোন সাহায্যকারী খুঁজে পাবে না।
[সূরা নিসা,আয়াত নং ৫২]

●৫. যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে,তার শাস্তি জাহান্নাম,তাতেই সে চিরকাল থাকবে।আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন,তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।
[সূরা নিসা,আয়াত নং ৯৩]

●৬. ওয়াদা করেছেন আল্লাহ, মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারীদের এবং কাফেরদের জন্যে দোযখের আগুনের-তাতে পড়ে থাকবে সর্বদা। সেটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আযাব।
[সূরা তওবা,আয়াত নং ৬৮]

●৭. তাদের চেয়ে বড় যালেম কে হতে পারে,যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে।এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন করা হবে আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে,এরাই ঐসব লোক, যারা তাদের পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল।শুনে রাখ,যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে।
[সূরা হুদ,আয়াত নং ১৮]

●৮. যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়,আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালেঅভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৫৭]

●৯. নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছেন।
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৬৪]

●১০. আল্লাহ বললেনঃ (হে ইবলিস) বের হয়ে যা,এখান থেকে। কারণ, তুই অভিশপ্ত।
[সূরা ছোয়াদ,আয়াত নং ৭৭]

●১১. তোর প্রতি আমার এ অভিশাপ বিচার দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
[সূরা ছোয়াদ,আয়াত নং ৭৮]

●১২. ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন,অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন। [সূরা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,আয়াত নং ২২-২৩]

●১৩. কেমন করে আল্লাহ এমন জাতিকে হেদায়েত দান করবেন,যারা ঈমান আনার পর এবং রসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের নিকট প্রমাণ এসে যাওয়ার পর কাফের হয়েছে।আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।এমন লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত।
[সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ৮৬-৮৭]

●১৪. বনী-ইসলাঈলের মধ্যে যারা কাফের,তাদেরকে দাউদ আলাইহিস সালাম ও ঈসা আলাইহিস সালাম উনাদের মুখে অভিসম্পাত করানো হয়েছে।এটা একারণে যে,তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমা লংঘন করত।
[সূরা মায়েদা,আয়াত নং ৭৮]

●১৫. সে দিন যালেমদের ওযর-আপত্তি কোন উপকারে আসবে না,তাদের জন্যে থাকবে অভিশাপ এবং তাদের জন্যে থাকবে মন্দ গৃহ।
[সূরা মুমিন,আয়াত নং ৫২]

সুতরাং ইয়াজিদের ফয়সালা আপনারাই চিন্তা করে দেখুন।কোন মু’মিন ঈমানদারকে কি লা’নত করা যায়? একমাত্র চুড়ান্ত অবাধ্য,চুড়ান্ত জালিম, ও বেঈমান কাফির শ্রেনীর লোক হলেই তাকে লা’নত করা সম্ভব।আর যে কিনা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শহীদকারী,মক্কা ও মদীনা শরীফে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী তার চাইতে বড় অবাধ্য,জালিম,কাফির আর কে হতে পারে?

❏ ২৯. এবার দেখুন হাদিস শরিফে কি বলা হয়েছে!!

❏ (ক.) ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সা’য়েব ইবনে খালেদ (رضي الله عنه)র সূত্রে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদীস,যিনি এরশাদ ফরমান:

الْمَدِينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إِلَى ثَوْرٍ ، فَمَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا ، أَوْ آوَى مُحْدِثًا ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.

“যে কেউ অন্যায়ের প্রসার এবং মদীনাবাসীদের হয়রানি বা ভীত-সন্ত্রস্ত করে,তার প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত),ফেরেশতাকুলের এবং গোটা মানব জাতির (মো’মেন বান্দাদের) লা’নত-ও।”

তথ্যসূত্রঃ●
●(ক.) আহমদ: আল মুসনাদ,মুসনাদু আলী ইবনে আবী তালিব,১:৮১,হাদীস নং ৬১৫।
●(খ.) বুখারী: আস সহীহ,বাবু হারামিল মদীনা,৩:২০; হাদীস নং ১৮৬৭।
●(গ.) মুসলিম: আস সহীহ,বাবু ফদ্বলিল মদীনা,২:৯৯৪ হাদীস নং ১৩৬৬।
●(ঘ.) আবূ দাঊদ: আস সুনান,বাবু ফি তাহরিমিল মদীনা, ২:২১৬ হাদীস নং ২০৩৪।
●(ঙ.) তিরমিযী: আস সুনান,৪:৪৩৮ হাদীস নং ২১২৭।
●(চ.) নাসায়ী: আস সুনানুল কুবরা, ৪:২৫৮ হাদীস নং ৪২৬৩।
●(ছ.) ইবনে কাসীর: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২৭৪।

হুযূর পুরনূর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘হে আল্লাহ্! যে ব্যক্তি মদীনা বাসীর উপর অত্যাচার করে এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করে,তুমি তাকে ভয় প্রদর্শন কর।এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহ্, ফেরেশতা এবং সকল মানুষের লা’নত বর্ষিত হোক।

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) মু’জামুল আওসাত লিত তাবারানী: ২/১২৫/১
●(খ.) আস সিললিাতুস্ সাহীহাহ লিল আলবানী: ১/৬২০,১/৩৫১
●(গ.) আলা মাজমা’ লিল হাইসামী: ৩/৩০৬

❏ (খ.) হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ أَخْبَرَنَا الْفَضْلُ عَنْ جُعَيْدٍ عَنْ عَائِشَةَ هِيَ بِنْتُ سَعْدٍ قَالَتْ سَمِعْتُ سَعْدًا قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَكِيدُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَحَدٌ إِلاَّ انْمَاعَ كَمَا يَنْمَاعُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ

রাসূল (ﷺ)-বলেছেন,যারা মদিনা বাসীকে ক্ষতি করতে চাইবে তারা ব্যর্থ হবে।সা‘দ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,আমি নাবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ মাদ্বীনাবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র বা প্রতারণা করবে,সে লবণ যেভাবে পানিতে গলে যায়,সেভাবে গলে যাবে।
তথ্যসূত্রঃ●
●(ক.) সহীহ মুসলিম: ১৫/৮৯,হা/১৩৮৭
●(খ.) আহমাদ: ১৫৫৮ (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৪২)
●(গ.) বুখারি ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৫৩
●(ঘ.) সহিহ বুখারিঃ ১৮৭৭

হযরত সাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মদীনাবাসীর প্রতি মন্দ আচরণ করার ইচ্ছা পোষণ করবে,(কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ তাকে (তার শরীরকে) এমনভাবে গলিয়ে ফেলবেন, যেমনভাবে পানিতে লবণ গলে যায়।
[সহীহ বুখারী ফাদাইলিল মাদীনাহ্: ৩/২৭, হাদীস নম্বর- ১৭৭৮]

❏ সহীহ মুসলিম শরীফে বলা হয়েছে,তার দেহ শীশা দ্বারা গলিয়ে দেয়া হবে। [মুসলিম,কিতাবুল হজ্ব: ৪/১১৩]

ইয়াজিদ ও সাঙ্গপাঙ্গরা কী পরিমাণ অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলো তার কোন হিসেব দেয়া সম্ভব নয়।সমস্ত বরবতাকে হার মানিয়ে ছিলো।আর আহলে বাইতের সাথে কত জগন্যতম আচরণ করে ছিল।আর সকল দিক বিবেচনা করলে একজন সাধারণ মানুষও তাদেরকে মুসলমান বলে মানবে না।
তদুপরি ৬১ হিজরিতে ইসলামের ইতিহাসে ইয়াজিদ কারবালায় যে হৃদয় বিদারক ঘটনা সংঘটিত করেছে যেখানে কুখ্যাত ইয়াজিদের নির্দেশে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও আহলে বাইতে রাসূল সহ ইমাম হোসাইনের অনুসারী ৭২ জন সদস্যকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে। এই নিষ্ঠুর পাপের অভিশাপ হতে ইয়াজিদ এবং তার দোসররা মুক্তি পেতে পারে না।

উক্ত হাদীসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফ আক্রমণকারীর উপর লা’নত দিয়েছেন।ইতিহাসবিদগণ ঐকমতের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন যে,ইয়াজিদের নির্দেশে ৬৩ হিজরিতে মদীনা শরীফে হত্যা,লুঠ,ধর্ষণ হয়েছিল।

❏ সুতরাং যাদের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা ঈমানের দাবী,আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় হাবীবের নির্দেশ,তাদেরকে অর্থাৎ সে আহলে বাইতে রাসূল-এঁর সাথে ইয়াজিদের কারবালার ময়দানে যে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে শহীদ করেছে,নবী বংশের প্রতি যে অপমান-অসম্মান পৃথিবীর বুকে সে করেছে তা মূলত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আদেশকে অমান্য ও অপমান করেছে।তাই ইয়াজিদ ও তার সাথীদের নি:সন্দেহে লা’নত দেয়া যাবে।আর তারা চিরকালই অভিশপ্ত।

❏ ৩০. ড: আল্লামা ইকবাল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন,‘‘সিরের ইবরাহীম ইসমাঈল বুয়দ ইয়া’নি ইসমাঈল রা তাফসীলে বুয়দ।’’

অর্থাৎ ইবরাহীম আলায়হিস্ সালাম এবং হযরত ইসমাঈল আলায়হিস্ সালাম-এঁর সেই কোরবানির ঘটনা ছিল এক গূঢ় রহস্য,আর তার প্রাকটিক্যাল নমুনা হলো কারবালার যমীনে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত।হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এঁর ওফাত শরীফের পর শেরে খোদা হযরত আলী ও নবী দুলালী মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এঁর বংশ অব্যাহত থাকে।সেই শাহাদাত সংঘটিত হওয়ার সময় যাকে যবেহ ইসমাঈল প্রতিপাদ্য করা হয়েছে।অর্থাৎ কারবালার ময়দানের ঘটনা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এঁর পরিবারের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আর আহলে বাইত তথা আউলাদে রাসূলগণকে আল্লাহ্ তা‘আলা যে মর্যাদা দান করেছেন তা সাধারণ মুমিন মুসলমানদের দেয়া হয়নি।কারণ তাঁরা আল্লাহর রাসূলের বংশধর।ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে আল্লাহর রাসূল নিঁজের পুত্রের মত ভালোবাসতেন।হাদীসে পাকে এসেছে- হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ হতে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি দেখেছি,নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের হাত ধরে বলেছেন-এঁরা আঁমার সন্তান।
[দায়লামী আল্ ফিরদাউস বিমা’ সূরিল খিতাব-৪/৩৩৬, হাদীস ৫৯৭৩]

❏ ৩১. হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু নুআম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ الْعَمِّيُّ، حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي نُعْمٍ، أَنَّ رَجُلاً، مِنْ أَهْلِ الْعِرَاقِ سَأَلَ ابْنَ عُمَرَ عَنْ دَمِ الْبَعُوضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ انْظُرُوا إِلَى هَذَا يَسْأَلُ عَنْ دَمِ الْبَعُوضِ وَقَدْ قَتَلُوا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ إِنَّ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ هُمَا رَيْحَانَتَاىَ مِنَ الدُّنْيَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَقَدْ رَوَاهُ شُعْبَةُ وَمَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوُ هَذَا ‏.‏

আবদুর রহমান ইবনু আবী নু’ম (رحمة الله) থেকে বর্ণিতঃ এক ইরাকবাসী মাছির রক্ত কাপড়ে লাগলে তার বিধান প্রসঙ্গে ইবনু ‘উমার (رضي الله عنه) এর কাছে জানতে চায়।ইবনু ‘উমার (رضي الله عنه) বললেন,তোমরা তার প্রতি লক্ষ্য কর,সে মাছির রক্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছে। অথচ তারাই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এঁর পুত্রকে (নাতি হুসাইন) হত্যা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন দু’জন এই পৃথিবীতে আমার দু’টি সুগন্ধময় ফুল।

[সহীহ; মিশকাত (৬১৫৫),সহীহ (৫৬৪), বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে, বুখারি: হা/নং ৫৬৪৮, তিরমিযি: হা/নং ৩৭৭০, নাসাই হা/নং ৮৫৩০]

❏ আবূ ‘ঈসা বলেন,এ হাদীসটি সহীহ। শু’বাহ (رحمة الله) এ হাদীস মাহদী ইবনু মাইমূন হতে,তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়া‘কূবের সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। আবূ হুরাইরাহ্‌ (رضي الله عنه)-এর বরাতেও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে।
[হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]

❏ ৩২. পবিত্র কোরআনে, মহানবী (ﷺ) -এঁর আহলে বাইত-এঁর ভালবাসা ও অনুসরণ ফরজ করা হয়েছে।

“বলুন,যে পারিশ্রমিকেই আঁমি তোমাদের কাছ চেয়ে থাকি না কেন,তা তো তোমাদেরই জন্য।”
[সূরা সাবা,আয়াত নং ৪৭]

“বলুন,আঁমি আঁমার রিসালাতের দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কিছুই চাই না,কেবল আঁমার আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ব্যতিত।”
[সূরা শুরা,আয়াত নং ২৩]

হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে।হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন যে,যখন এই আয়াত নাযিল হলো তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন,“ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কাঁরা আঁপনার নিকট আত্মীয়? যাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনে উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে।উত্তরে নবী (ﷺ) বললেন- আলী,ফাতেমা,হাসান ও হোসাইন এঁর মুয়াদ্দাত (আনুগত্য)।”

তথ্যসূত্রঃ
●১. সুরা শুরা,আয়াত নং ২৩,আশরাফ আলী থানভী,পৃঃ ৬৯২
●২. তাফসীরে মাজহারী,১১ম খন্ড,পৃঃ ৬৩ (ই,ফাঃ)
●৩. তাফসীরে নুরুল কোরআন (মাওলানা আমিনুল ইসলাম),২৫ম খন্ড,পৃঃ ৬৭
●৪. মাদারেজুন নাবুয়াত,৩য় খন্ড,পৃঃ ১১৭
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী
●৫. তাফসীরে দূররে মানসুর,৬ষ্ঠ খন্ড,পৃঃ ৭ (মিশর)
●৬. তাফসীরে যামাখশারীঃ ২য় খন্ড,পৃঃ ৩৯৯ (মিশর)
●৭. তাফসীরে তাবারী,২৫ম খন্ড,পৃঃ ২৫ (মিশর)
●৮. তাফসীরে কাশশাফ,৩য় খন্ড,পৃঃ ৪০২ ৪র্থ খন্ড,পৃঃ ২২০ (মিশর)
●৯. তাফসীরে কাবীর,২৭ম খন্ড,পৃঃ ১৬৬ (মিশর)
●১০. তাফসীরে বায়যাভী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ ১২৩ (মিশর)
●১১. তাফসীরে ইবনে কাসির,৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১১২ (মিশর)
●১২. তাফসীরে কুরতুবি,১৬ম খন্ড,পৃঃ ২২ (মিশর)
●১৩. তাফসীরে নাসাফী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ ১০৫ (মিশর)
●১৪. তাফসীরে আবু সাউদ,১ম খন্ড,পৃঃ ৬৬৫
●১৫. তাফসীরে জামে উল বায়ান, (তাবারী),২৫ম খন্ড,পৃঃ ৩৩
●১৬. তাফসীরে আল আকাম,২য় খন্ড, পৃঃ ১২১
●১৭. তাফসীরে বাহরুল মুহিয়াত (ইবনে হাইয়্যান),৯ম খন্ড,পৃঃ ৪৭৬
●১৮. তাফসীরে বিহার আল মাদিদ (ইবনে আজি),৫ম খন্ড,পৃঃ ৪৩১
●১৯. তাফসীরে আবু সাউদ,৬ষ্ঠ খন্ড,পৃঃ ৮০
●২০. তাফসীরে কাবীর,১৩ম খন্ড,পৃঃ ৪৩২
●২১. তাফসীরে বাইদাবী,৫ম খন্ড,পৃঃ ১৫৩
●২২. তাফসীরে আল নাসাফীঃ ৩য় খন্ড, পৃঃ ২৮০
●২৩. তাফসীরে আল নিশাবুরি,৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৪৬৭
●২৪. ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত,পৃঃ ১৭৩, (উর্দ্দু)
●২৫. আরজাহুল মাতালেব,পৃঃ ১০২,৫৮৭ (উর্দ্দু)]

❏ আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ুতী (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে,পবিত্র কোরআন ও নবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এঁর হাদীস হতে এটা প্রমাণিত হয় যে,আহলে বাইত আলী,ফাতেমা,হাসান ও হোসাইন (عليه السلام)-এঁর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) দ্বীনের ফরায়েজে গণ্য; সুতরাং ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এটার সমর্থনে এরূপ সনদ দিয়েছেন যে,“ইয়া আহলে বাইত-এ রাসূল,আল্লাহ তাঁর নাজিল করা পবিত্র কোরআনে আপনাদের মুয়াদ্দাতকে ফরজ করেছেন, যারা নামাজে আঁপনাদের উপর দরুদ পড়বে না,তাদের নামাজই কবুল
হবে না”।
[ইবনে হাজার মাক্কীর,সাওয়ায়েকুল মুহরেকাঃ পৃঃ ১০৩]

❏ ৩৩. ইমাম আহমদ,ইমাম তিরমিজী (তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) ইমাম নাসায়ী এবং হাকেম প্রমূখ হযরত মুত্তালিব ইবনে রাবীয়াহ্ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,
أخرج أحمد، والترمذي وصححه، والنسائی، والحاکم عن المطلب بن ربيعة رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (والله لا يدخل قلب امریء مسلم إيمان، حتى يحبكم للهولقرابتی)

তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন,আল্লাহর শপথ! ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মুসলিমের ক্বলবে ঈমান প্রবেশ করবেনা,যতক্ষন সে তােমাদেরকে আল্লাহ ও আমার নিকটাত্মীয়দের কারণে (ওয়াস্তে) ভালবাসবেনা।

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) মুসনাদ এ ইমাম আহমদঃ ১:৩৪২ (১৭৮০)/৫:১৭২ (১৭০৬১)।
●(খ.) তিরমীজিঃ ৫: ৬১০ (৩৭৫৮)।
●(গ.) নাসায়ীঃ ৫:৫১ (৮১৭৫)।
●(ঘ.) আল মুসতাদরিকঃ ৪:৮৫:৬৯৬০।
●(ঙ.) তিবরিযিঃ মিশকাত পৃঃ ৫৭০।

আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন-‘আল্লাহর শপথ! কোন মুসলমানের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করবেনা যতক্ষণনা সে আল্লাহকে এবং তার সাথে আঁমার নিকটাত্মীয়দের (আহলে বাইত) কে ভালবাসবে।’
[মুসনদে আহমদ-১/৩৪২,সুনানে তিরমিজিঃ ৫/৬১০]

তাবরানী শরীফে আছে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন-কোন বান্দা পূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ আঁমাকে তার নিজের প্রাণের চেয়ে,আঁমার আওলাদকে নিজের আওলাদের চেয়ে,আঁমার আহলে বায়তকে নিজের আহল (পরিবার- পরিজন) থেকে এবং আঁমার সত্তাকে নিজের সত্তা থেকে অধিক ভালোবাসবে না।
[আশশারফুল মুয়ায়্য়দঃ পৃষ্ঠা-৮৯, খুতবাতে মুহররম পৃষ্ঠা-২৩৩]

❏ ৩৪. হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বলেন, “মহানবী (ﷺ)-এঁর সন্তুষ্টি তাঁর আহলে বাইতের ভালবাসার মধ্যে নিহিত।”

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) সহীহ্ বোখারী,৬ষ্ঠ খন্ড,হা/৩৪৪৭, ৩৪৭৯,(ই. ফাঃ)
●(খ.) তাফসীরে ইবনে কাসির: ১৬ম খন্ড, পৃঃ ৫২৬(হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, আহলে হাদীস)]

❏ ৩৫. হুজুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাদিস শরীফে ইরশাদ করেন

ﻋﻦ ﻋَﻠِﻲِّ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ , ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ، ﻗَﺎﻟﺴُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ (ﷺ) : ” ﺃَﺩِّﺑُﻮﺍ ﺃَﻭْﻟَﺎﺩَﻛُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺧِﺼَﺎﻝٍ ﺛَﻠَﺎﺙٍ : ﻋَﻠَﻰ ﺣُﺐِّ ﻧَﺒِﻴِّﻜُﻢْ ، ﻭَﺣُﺐِّ ﺃَﻫْﻞِ ﺑَﻴْﺘِﻪِ ، ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺣَﻤَﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻓِﻲ ﻇِﻞِّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﻟَﺎ ﻇِﻞَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻇِﻠُّﻪُ ﻣَﻊَ ﺃَﻧْﺒِﻴَﺎﺋِﻪِ ﻭَﺃَﺻْﻔِﻴَﺎﺋِﻪ “

অর্থ: “তোমরা তোমাদের সন্তানকে তিনটি আমল শিক্ষা দাও।
●১. তোমােদর নবীর ভালবাসা
●২.তাঁর (তোমাদের নবীর) পরিবার বা আহলে বায়তের ভালবাসা।

৩.কুরআনের শিক্ষা।নিশ্চই কুরআনের বাহকরা সেদিন (হাশরের দিন) তাঁর ছায়ার নিচে নবীগন ও আল্লাহর মনোনীতদের সাথে থাকবে যেদিন তাঁর ছায়া ভিন্ন আর কোন ছায়া থাকবে না।” 

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) আল জামি-উল-সাগীর: ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪
●(খ.) কাঞ্জুল উম্মাল: ১৬ম খণ্ড,পৃষ্ঠা ৪৫৬, হা/ ৪৫৪০৯।
●(গ.) কাশফ আল খিফা,১১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা ৭৪, হা/ ৩৪১৫৭

❏ ৩৬. রাসুল (ﷺ) ইরশাদ মুবারক করেন-

الا من مات على حب ال (سيدنا حضرت) محمد صلى الله عليه وسلم مات تائبا

অর্থ: “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার বংশধরগণ উঁনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তিকাল করবে,সে ব্যক্তি তওবাকারীরূপে ইন্তিকাল করবে।”

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) তাফসীরে কবীর-৭/৩৯০
●(খ.) তাফসীরে কাশশাফ
●(গ.) তাফসীরে রুহুল বয়ান-৩/৫৩৪
●(ঘ.) নুজহাতুল মাজালিস-২/২২২

এমনকি দুনিয়ার শেষ পরীক্ষা অর্থাৎ মৃত্যুর পরীক্ষায় ও আউলাদে রাসূলের নেগাহে করমে ও দোয়ার বরকতে সফলতা লাভ করা যাবে,যা আল্লাহ রাসূলের একাধিক হাদীসে পাক দ্বারা সুস্পষ্ট। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,যে ব্যক্তি নবী বংশের ভালোবাসায় ইন্তেকাল করলো,সে যেন ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় ইন্তেকাল করল এবং আর যে ব্যক্তি নবী বংশের ভালোবাসা নিয়ে ইন্তেকাল করলো সে যেন তাওবাকারী রূপে ইন্তেকাল করল।এবং যে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর বংশধরদের ভালোবাসার উপর ইন্তেকাল করলো,সে যেন মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করলো।[খোতবাতে মুহাররম: ১৪১]

❏ ৩৭. হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে

أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول الله(ﷺ) لا تزول قدما عبد حتى يسأل عن أربع: عن عمره فيما أفناه، وعن جسده فيما أبلاه، وعن ماله فيما أنفقه ومن أين اكتسبه وعن محبتنا أهل البيت؛

ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র সূত্রে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,কোন বান্দাহ ততক্ষণ অগ্রসর হতে পারবেনা,যতক্ষণ না তাকে চারটি প্রশ্ন করা হবে।(তা হচ্ছে)

১. তার বয়সের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে ব্যয় করেছে,
২. তার শরীরের ব্যাপারে যে, তা সে কীভাবে ক্ষয় করেছে।
৩. তার সম্পদের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে খরচ করেছে এবং কোথায় হতে আয় করেছে।
৪. এবং আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসার ব্যাপারে।

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) আল মু’জামুল কাবীর: ১১:৮৩ (১১১৭৭)।
●(খ.) আল মু’জামুল আওসাত: ১০:১৮৫ (৯৪০২)।
●(গ.) মাজমাউয যাওয়ায়েদ,হাইছামী ১০:৩৪৬
❏ হযরত আবু বরযা’র বর্ণনায় অনুরূপ রয়েছে।

❏ ৩৮. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

(حديث مرفوع) وَسألت أبي عَنْ حديثرَوَاهُ إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي أُوَيْسٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ قَيْسٍ ، عَنْ عَطَاءٍ ، وَغَيْرِهِ مِنْ أَصْحَابِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنَّهُ قَالَ : ” يَا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ ، إِنِّي سَأَلْتُ اللَّهَ لَكُمْ ثَلاثًا : أَنْ يُثَبِّتَ قَائِمَكُمْ ، وَأَنْ يَهْدِيَ ضَالَّكُمْ ، وَأَنْ يُعَلِّمَ جَاهِلَكُمْ ، وَسَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَكُمْ جُودًا نُجُدًا رُحَمَاءَ ، وَلَوْ أَنَّ رَجُلا صَفَنَ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ فَصَلَّى وَصَامَ ثُمَّ لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ مُبْغِضٌ لأَهْلِ بَيْتِ مُحَمَّدٍ دَخَلَ النَّارَ ” . قَالَ أَبِي : هَذَا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ .

عن حضرت ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو أن رجلا صف بين الركن والمقام فصلى وصام ثم لقى الله مبغضا لاهل بيت محمد صلى الله عليه وسلم دخل النار.

“হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,হুযূর পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,কোনো ব্যক্তি যদি সম্মানিত রুকন এবং সম্মানিত মাক্বামের মধ্যবর্তী স্থানে সারিবদ্ধ হয়ে থাকে।অতঃপর নামায পড়ে এবং রোযা রাখে,কিন্তু এই অবস্থায় তার মৃত্যু হয় যে, সে আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”
[মুস্তাদরাকে হাকীমঃ ৪৭৬৬,যাখাইরুল উক্ববা লি-মুহিব্বে ত্ববারীঃ ১/১৮,হাদিসের মান সহীহ]

হুজুর পুরনূর (ﷺ) আরও এরশাদ করেন-‘তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি রূকনে ইয়ামানী ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায় অত:পর নামাজ পড়ে ও রোযা রাখে,তারপর সে আহলে বাইতে মোহাম্মদের প্রতি শত্রুতা রেখে মারা যায় (তার এই ইবাদত সমূহ কবুল হবেনা) সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ [মু’জামুল কবীর-১১/১৪২]

হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

أخرج الطبرانی والحاكم عن ابن عباس رضی الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يابنی عبد المطلب، انی سألت الله فيكم ثلاثا: أن يثبت قلوبكم، وأن يعلم جاهلكم، ويهدی ضالكم، وسألته أن يجعلکم جوداء، نجداء، رحماء. فلو أن رجلا صفن بين الركن والمقام فصلى وصام، ثم مات وهو مبغض لأهل بيت محمد، دخل النار؛

ইমাম তাবরানী ও হাকেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,যদি কোন ব্যক্তি রুকন ও মক্কামে ইব্রাহীমের মাঝখানে অবস্থান করে,অতঃপর (তাতে) নামাজ আদায় করে এবং রােজা রাখে,অতঃপর (এমতাবস্থায়) মারা গেল যে,সে মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর পরিবার বর্গের (আহলে বায়ত) সাথে হিংসা পােষণকারী,(তাহলে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করল।

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) আল মু’জামুল কাবীর-১১:১৪২ (১১৪১২)।
●(খ.) আল মুস্তাদরেক-৩:১৬১ (৪৭১২) এবং তিনি এ হাদীসকে ইমাম মুসলিমের শর্তমতে সহীহ বলেছেন।

❏ ৩৯. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,হযরত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,“যদি কোন ব্যক্তি পবিত্র কা’বার পাশে রুকন ইয়ামানি ও মাকাম ইব্রাহিমের মধ্যবর্তী স্থানে দন্ডায়মান হয়ে নামাজ আদায় করে এবং রোযাও রাখে,অতঃপর এমতাবস্থায় আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রেখে মৃত্যুবরণ করে,তাহলে সে জাহান্নামে যাবে”।

তথ্যসূত্রঃ
●১.তাবরানী,আল মু’জাম আল আওসাত, ৪র্থ খন্ড,পৃঃ ২১২,হা/৪০০২
●২. হায়সামী,মাজমাউজ যাওয়ায়েদঃ ৯ম খন্ড,পৃঃ ১৭২
●৩. জুরজানী,তারিখ জুরজানঃ পৃঃ ৩৬৯
●৪. হাকেম আল মুস্তাদরাক,৩য় খন্ড,পৃঃ ১৬২,হা/৪৭১৭
●৫. হায়সামী সাওয়াইক আল-মুহরিকাঃ পৃঃ ৯০
●৬. আল্লামা সূয়ুতী,এহইয়াউল মাইয়্যাতঃ পৃঃ ২০
●৭. ইবনে হিব্বান,আস সহীহঃ ১৫ম খন্ড, পৃঃ ৪৩৫,হা/৬৯৭৮
●৮. যাহাবী সি’আরু আলামিন নুবালাঃ ২য় খন্ড,পৃঃ ১২৩ (হাকেমের মত এই হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ্)
●৯. মুহিবের তাবারী,যাখায়েরুল উকবাঃ পৃঃ ৫১
●১০. ফাসবী,আল ‘মা’রিফাতু ওয়াত তারিখঃ ১ম খন্ড,পৃঃ ৫০৫
●১১. আল্লামা আলী হামদানি শাফায়ী, মুয়াদ্দাতুল কুরবা,পৃঃ ১০৯
●১২. ওবাইদুল্লাহ অমৃতসারি-আরজাহুল মাতালেব,পৃঃ ৫৬৭
●১৩. কাওকাবে দুরির ফি ফাযায়েলে আলী,পৃঃ ২০৯
●১৪. সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী সুন্নি হানাফী আরিফ বিল্লাহ;আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী- মাদারিজুন নবুওয়াত,২য় খন্ড,পৃঃ ৯০, (ইঃ, ফাঃ)]

ইমাম তবরানী ও ইমাম হাকেম (رحمة الله) হযরত আবদুল্লাহ্‌ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হতে বর্ণনা করেছেন যে,অবশ্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লামবলেন যে,যদি কোন পুরুষ কা’বা শরীফের রুকন ওয়া মকামে ইব্রাহীমের মাঝখানে আরোহণ করে নামায পড়ে এবং রোযা রাখে তার পর সে মারা যায় এমতাবস্থায় সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এঁর আহলে বায়তের প্রতি দুশমনি পোষণ করে,তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
[আশশারফুল মুয়ায়্‌য়দঃ পৃষ্ঠা-৯৮]

❏ ৪০. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول الله(ﷺ) أربعة أنالهم شفيع يوم القيامة: المکرم لذريتي، والقاضي لهم حوائجهم، والساعي لهم أمورهم عندما اضطروا، والمحب الهم بقلبه ولسانه ؛

ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) এঁর সূত্রে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আঁমি চার ব্যক্তির জন্য সুপারিশকারী হব। (তারা হল)

১. আমার বংশধরদেরকে সম্মান কারী
২. তাঁদের প্রয়ােজন পূরণকারী,
৩. তারা যখন কোন বিষয়ে সংকটে পড়বে তখন তাদেরকে সহযােগিতাকারী, এবং
৪. তাদেরকে অন্তর ও জবান দ্বারা (প্রকৃত) ভালবাসা পােষণকারী’।

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) যাখায়েরুল উক্বাবা,তাবরানী:পৃ-৫০
●(খ.) কানযুল উম্মাল,আল মুত্তাকিউল হিন্দ: ১২:১০০ (৩৪১৮০)।
●(গ.) ইত্তিহাফু সা-দাতিল মুত্তাক্বীন: ৮:৭৩
●(ঘ.) জাওয়াহিরুল ইক্বদিয়্যীন,আস সামহুদী: ২:৩৮৩।

হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন-হুযূর পাক (ﷺ) তিঁনি বলেন,“ক্বিয়ামতের দিন আঁমি নিঁজেই চার শ্রেণীর লোককে খাছভাবে সুপারিশ করবো।যথা:

১. যে ব্যক্তি আমার বংশধর তথা আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলদেরকে সম্মান করবে।
২. যে ব্যক্তি আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলদেরকে অর্থ-সম্পদ দ্বারা খিদমত করবে।
৩. যে ব্যক্তি আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলদেরকে কাজে-কর্মে সহযোগিতা বা খিদমত করবে।
৪. যে ব্যক্তি আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলদেরকে মনেপ্রাণে গভীরভাবে মুহব্বত করবে।”
[বিহারুল আনওয়ার-৮/৪৯,যখায়িরুল উক্ববা-১৮]

❏ ৪১. রাসূল (ﷺ) বলেন,“যে ব্যক্তি এজন্য আনন্দিত যে,সে চায় আঁমার মত জীবন যাপন করতে,আঁমার মত মৃত্যুবরণ করতে ও আঁমার প্রতিপালকের চিরস্থায়ী বেহেশতে বাস করতে সে যেন আঁমার পর, আঁমার আহলে বাইতকে অনুসরণ করে।কারণ তাঁরা আঁমার সর্বাধিক আপন এবং তাঁরা আঁমার অস্তিত্ব হতে অস্তিত্ব লাভ করেছে।আঁমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকেই তারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করেছে।ধ্বংস আঁমার সেই উম্মতের জন্য যারা আঁমার আহলে বাইতের শ্রষ্ঠত্বকে মিথ্যা মনে করে এবং আঁমার ও তাদের (আহলে বাইত (عليه السلام)-এঁর) মধ্যেকার সম্পর্ক ছিন্ন করে।আল্লাহ আঁমার শাফায়াতকে তাদের জন্য হারাম করেছেন”।

তথ্যসূত্রঃ
●(ক.)মুস্তাদরাকে হাকেমঃ৩য় খন্ড,পৃঃ১২৮
●(খ.) মুসনাদে আহম্মদঃ ৫ম খন্ড,পৃঃ ৯৪
●(গ.) কানজুল উম্মালঃ ৬ষ্ঠ খন্ড,পৃঃ ২১৭ হা/৩৭১৯
●(ঘ.) হুলিয়াতুল আউলিয়াঃ পৃঃ ৪৪৯

হুজুর (ﷺ) আরো বলেছেন,যে কেউ আমার মত বাঁচতে ও মৃত্যুবরণ করতে চায় এবং মরণের পর বেহেশতে বসবাস করতে চায়,তাঁর উচিত আলীকে পৃষ্ঠপোষক হিসাবে গ্রহণ করা এবং আঁমার পর আঁমার আহলে বাইতকে অনুসরণ করা।কারণ তাঁরা আঁমার আহলে বাইত এবং আঁমাকে যা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে,তাঁদেরও তাই দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাঁদেরও সে জ্ঞান ও বুদ্ধি দান করা হয়েছে,যা আঁমাকে দান করা হয়েছে।আঁমার সে সকল অনুসারীদের জন্য দুঃখ,যারা আঁমার আহলে বাইত ও তাঁদের মর্যাদা অস্বীকার করবে,তারা আঁমার সাথে সম্পর্ক ও সম্বন্ধ অস্বীকার করে।আল্লাহ যেন তাদের আঁমার শাফায়েত হতে লাভবান না করেন।[মুসনাদে হাম্বলঃ ৫ম খন্ড]

❏ আহলে বাইত-এঁর ভালবাসা ও অনুসরণ ফরজ।
❏ নামাজই কবুল হবে না/ইবাদত সমূহ কবুল হবে না।
❏ ক্বলবে ঈমান প্রবেশ করবেনা।
❏ পূর্ণ ঈমানদার হবে না।
❏ নবিজীর সন্তুষ্টি তাঁর আহলে বাইতের ভালবাসার মধ্যে নিহিত।
❏ হুযূর পাক বংশধরগণের মুহব্বতকারী তওবাকারীরূপে ইন্তিকাল করবে।
❏ আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
❏ শাফায়াত হারাম।

 
Top