সিররী নামাযে ফাতেহা না পড়ার দলিল

১. হযরত জাবির রা. বলেছেন,

عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : كل من كان له إمام فقراءته له قراءة. أخرجه ابن أبي شيبة (٣٨٢٣) قال حدثنا مالك بن إسماعيل عن حسن بن صالح عن أبي الزبير عنه. وإسناده صحيح. وأخرجه عبد بن حميد في مسنده قال : ثنا أبو نعيم ثنا الحسن بن صالح عن أبي الزبير عنه مرفوعا. قال البوصري : إسناده صحيح على شرط مسلم. وأخرجه أحمد بن منيع في مسنده قال: أنا إسحاق الأزرق نا سفيان وشريك عن موسى بن أبي عائشة عن عبد الله بن شداتعليق-١ د عن جابر  مرفوعا. قال البوصري: إسناده صحيح على شرط الشيخين. وأخرجه الإمام محمد في الموطا (صـ٩٨) عن أبي حنيفة نا أبو الحسن موسى بن أبي عائشة عن عبد الله بن شداد بن الهاد عن جابر مرفوعا. وإسناده صحيح. وأخرجه أحمد عن أسود بن عامر – وهو ثقة – عن الحسن بن صالح عن أبي الزبير عن جابر مرفوعا (رقم 14643) وهو إسناد صحيح أيضا. وأخرجه ابن ماجه كذلك وفي إسناده جابر الجعفي (٨٥٠)

অর্থ: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির ইমাম আছে, তার ইমামের কেরাতই তার কেরাত বলে গণ্য হবে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৮২৩। এ সনদটি সহীহ।

মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমায়দে ভিন্ন সনদে এটি উদ্ধৃত হয়েছে। বূসিরী র. বলেছেন, এটি ইমাম মুসলিম এর শর্ত মোতাবেক সহীহ। আহমদ ইবনে মানী’ অন্য একটি সনদে তার মুসনাদ গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম বূসিরী বলেছেন, এটি বুখারী ও মুসলিম উভয়ের শর্ত মোতাবেক সহীহ। (দ্র, শায়খ মুহাম্মদ আওওয়ামা কৃত মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বার টীকা) মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, পৃ ৯৮; মুসনাদে আহমদ, ৩খ, ৩৩৯পৃ; (এ সনদ দুটিও সহীহ)। ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং ৮৫০। এতে জাবের জু’ফী রয়েছে।

এ হাদীসে মুলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে, মুকতাদীর জন্য আলাদা করে সূরা ফাতেহা বা অন্য কোন সূরা পড়ার প্রয়োজন নেই। বরং ইমামের কেরাতই তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা সূরা ফাতেহা হলো আল্লাহর দরবারে হেদায়াতের আবেদন। সকলের পক্ষ থেকে আবেদন একজনই পেশ করে। ইমামকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রুকু, সেজদা, তাকবীর ও তাসবীহ হলো উক্ত দরবারের আদব। এজন্য এগুলো সকলকে পালন করতে হয়।

২. হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেছেন,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلاَ تَعُدُّوهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاَةَ . أخرجه أبو داود عن مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ فَارِسٍ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْحَكَمِ حَدَّثَهُمْ أَخْبَرَنَا نَافِعُ بْنُ يَزِيدَ حَدَّثَنِى يَحْيَى بْنُ أَبِى سُلَيْمَانَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِى الْعَتَّابِ وَابْنِ الْمَقْبُرِىِّ عنه(٨٩٣) وأخرجه نحوه عبد الرزاق عن شيخ من الأنصار . ٢/٢٨١

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা সেজদায় থাকাবস্থায় যদি তোমরা নামাযে শরীক হও তবে তোমরাও সেজদা করবে। সেটাকে কিছু গণ্য করবে না। যে ব্যক্তি রুকু পেল সে নামায (অর্থাৎ ঐ রাকাত ) পেল। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৮৯৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২/২৮১।

এ হাদীস থেকেও বোঝা গেল, মুকতাদীর ফাতেহা পড়ার প্রয়োজন নেই । ইমামের সঙ্গে রুকু পেলেই তার রাকাত পূর্ণ হবে।

৩. হযরত আবূ বাকরা রা. বলেছেন,

انه انتهى إلى النبي صلى الله عليه وسلم وهو راكع فركع قبل ان يصل إلى الصف فذكر ذلك للنبى صلى الله عليه وسلم فقال زادك الله حرصا ولا تعد. أخرجه البخاري (رقم ٧٨٣) وفي رواية البخاري في كتاب القراءة له، والطبراني: فقال: أيكم صاحب هذا النفس قال خشيت أن تفوتني الركعة معك

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে থাকাবস্থায় তিনি এসে পৌঁছলেন, এবং কাতারে যাওয়ার পূর্বেই রুকুতে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনি ব্যাপারটি জানালে তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এমনটি আর করো না। বুখারী শরীফ, হাদীস নং৭৮৩।

ইমাম বুখারী কিতাবুল কিরাআতে ও তাবারানী (দ্র, ফাতহুল বারী) একথাও উল্লেখ করেছেন যে , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এমন কে করেছ? তিনি বললেন, আপনার সঙ্গে আমার এ রাকাতটি ছুটে যাওয়ার আশংকা করেছিলাম (তাই আমি এমনটি করেছি)।

এ হাদীসটি থেকে বোঝা গেল, রুকু পেলেই মুকতাদীর রাকাত পূর্ণ হয়, এবং সূরা ফাতেহা পড়া মুকতাদীর জন্য ফরজ নয়। অন্যথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরা রা.কে পুনরায় নামায পড়তে বলতেন।

ইমাম বায়হাকী হযরত যায়দ ইবনে ছাবিত রা. থেকেও আবূ বাকরা রা.এর অনুরূপ ঘটনা উল্লেখপূর্বক বলেছেন,

وفي ذلك دليل على إدراك الركعة ولولا ذلك لما تكلفوه

অর্থাৎ এ থেকে প্রতীয়মান হয়, রুকু পেলেই রাকাত পাওয়া হয়। অন্যথায় তারা এমন তড়িঘড়ি করতেন না। সুনানে বায়হাকী, ২খ, ৯০পৃ।

মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে হযরত যায়দ ইবনে ছাবিত রা. ও হযরত ইবনে উমর রা. উভয় থেকে এই ফতোয়া বর্ণিত হয়েছে -

الرجل إذا انتهى إلى القوم وهم ركوع أن يكبر تكبيرة وقد أدرك الركعة وإن وجدهم سجودا سجد معهم ، ولم يعتد بذلك .

অর্থাৎ নামাযে আগত ব্যক্তি যদি দেখে, জামাত রুকু অবস্থায় রয়েছে, তবে তাকবীর দিয়ে নামাযে শরীক হবে। এতে করে সে রাকাতটি পেয়ে যাবে। কিন্তু তাদেরকে সেজদা অবস্থায় পেলে সেজদা করবে বটে, তবে সেটাকে রাকাতরূপে গণ্য করবে না। (দ্র, ২খ, ২৭৮ পৃ)

আব্দুর রাযযাক স্বীয় মুসান্নাফে (২খ, ২৮১পৃ) ইবনুল মুনযির তার আওসাত গ্রন্থে (২০২৫) ও ইমাম তাবারানী আলমুজামুল কাবীরে (৯৩৫১) হযরত আলী রা. ও ইবনে মাসউদ রা.এর এই ফতোয়া উদ্ধৃত করেছেন,

من لم يدرك الركعة فلا يعتد بالسجدة

অর্থাৎ যে ব্যাক্তি রুকু পেল না সে যেন সেজদা করেই সেটাকে রাকাত গণ্য না করে। হায়ছামী র. বলেছেন,رجاله موثقون এর বর্ণনাকারীগণকে বিশ্বস্ত বলা হয়েছে। দ্র, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, (২৪০২)

উক্ত দুটি গ্রন্থে ও তাহাবী শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে,

وعن زيد بن وهب قال دخلت أنا وابن مسعود المسجد والامام راكع فركعنا ثم مضينا حتى استوينا بالصف فلما فرغ الامام قمت أقضى فقال قد أدركته . أخرجه الهيثمي في مجمع الزوائد ورجاله ثقات (২৪০৪) وعبد الرزاق في المصنف (৩৩৮১) وشرح معاني الآثار (২৩২২) والطبراني في المعجم الكبير (৯৩৫৪)

অর্থাৎ যায়দ ইবনে ওয়াহব র. বলেন, আমি ও ইবনে মাসউদ রা. মসজিদে প্রবেশ করলাম। ইমাম তখন রুকুতে ছিলেন। আমরা রুকু করে হেঁটে হেঁটে কাতারে পৌঁছলাম। ইমাম নামায শেষ করলে আমি রাকাতটি পড়বার জন্য দাঁড়াতে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, তুমি তো রাকাত পেয়ে গেছ। হায়ছামী বলেন, এর বর্ণনাকারীরা বিশ্বস্ত। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (৩৩৮১); মু’জামে কাবীর (৯৩৫৪); তাহাবী (২৩২২)

বুখারী শরীফের পূর্বোক্ত হাদীস ও সাহাবীগণের এসব ফতোয়ার প্রেক্ষিতে অধিকাংশ আলেম এই মত পোষণ করতেন যে, যে ব্যক্তি রুকু পেল সে রাকাত পেয়ে গেল।

হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী র. তাঁর ফাতহুল বারী নামক বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেছেন,

من أدرك الركوع مع الإمام فقد أدرك الركعة، وإن فاته معه القيام وقراءة الفاتحة . وهذا قول جمهور العلماء ، وقد حكاه إسحاق بن راهويه وغيره إجماعا من العلماء . وذكر الإمام أحمد في رواية أبي طالب أنه لم يخالف في ذلك أحد من أهل الإسلام ، هذا مع كثرة اطلاعه وشدة ورعه في العلم وتحريه . وقد روي هذا عن عليٍ وابن مسعود وابن عمر وزيد بن ثابتٍ وأبي هريرة - في رواية عنه رواها عبد الرحمن بن إسحاق المديني ، عن المقبري ، عنه . وذكر مالك في الموطأ أنه بلغه عن أبي هريرة ، أنه قال : من أدرك الركعة فقد أدرك السجدة . وهو قول عامة علماء الأمصار .

অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে রুকু করতে পারল সে ঐ রাকাত পেয়ে গেল, যদিও ইমামের সঙ্গে তার কিয়াম (দাঁড়ানো ) ও ফাতেহা পাঠ ছুটে গেল। এটাই সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের মত । ইমাম ইসহাক র. (ইমাম বুখারীর উস্তাদ) প্রমুখ এটাকে আলেমগণের ইজমা বা ঐকমত্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু তালিব এর বর্ণনানুসারে ইমাম আহমদ র. বলেছেন যে, এ ব্যাপারে কোন মুসলমানের দ্বিমত নেই। অথচ তাঁর অবগতি ছিল ব্যাপক, ইলমের ক্ষেত্রে তাঁর সতর্কতা ও পরহেজগারী ছিল চরম পর্যায়ের। এ মতই পোষণ করতেন হযরত আলী রা., ইবনে মাসউদ রা., ইবনে উমর রা., যায়দ ইবনে ছাবিত রা. ও এক বর্ণনানুসারে হযরত আবূ হুরায়রা রা. । আব্দুর রাহমান ইবনে ইসহাক আল মাদীনী র. সাঈদ আল মাকবূরী’র সুত্রে হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। (দ্র. ৪খ. ২৩০ পৃ.)

রুকু পেলে রাকাত পাওয়া হয় উম্মতের এই সর্বসম্মত মত দ্বারাই ইমাম আহমদ প্রমাণ করেছেন যে, মুকতাদির উপর কেরাত পড়া ফরজ নয়। তার পুত্র আব্দুল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, فإن صلى خلف الإمام ولم يقرأ بشيءঅর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি মুকতাদি হয় এবং কোরআনের কোন অংশই না পড়ে? তিনি উত্তরে বললেন,

يجزيه وذلك أنه لو أدرك الإمام وهو راكع فلم يعلم الناس اختلفوا أنه إذا ركع مع الإمام أن الركعة تجزئه وإن لم يقرا (رقم ২৭৮)

অর্থাৎ তার নামায হয়ে যাবে। কেননা যদি সে ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়ে তার সঙ্গে রুকু করে তবে কেরাত না পড়লেও যে তার নামায হয়ে যাবে তাতে কারো দ্বিমত আছে বলে জানা যায় না। (নং ২৭৮)

মাওলানা শামসুল হক আজীমাবাদী (তিনি লা-মাযহাবী আলেম ছিলেন) আবূ দাউদ শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ আওনুল মাবূদ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আল্লামা শাওকানী র. এই মত পোষণ করতেন যে, রুকু পেলে মুকতাদীর রাকাত পাওয়া হয় না। কিন্তু ‘ফাতহুর রাব্বানী ফী ফাতাওয়াশ শাওকানী’ গ্রন্থে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। (দ্র, আওনুল মাবূদ, ৩খ, ১১০পৃ)।

মোট কথা, বুখারী শরীফের হাদীস, সাহাবীগণের ফতোয়া ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের উল্লিখিত মত থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ফাতেহা পাঠ করা মুকতাদীর জন্য অপরিহার্য নয়। অন্যথায় রুকু পেলে রাকাত পাওয়া হয়নি বলে ফতোয়া দেওয়া হতো।

৪. আতা ইবনে ইয়াসার র. বলেছেন,

أَنَّهُ سَأَلَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ عَنِ الْقِرَاءَةِ مَعَ الإِمَامِ فَقَالَ لاَ قِرَاءَةَ مَعَ الإِمَامِ فِى شَىْءٍ . أخرجه مسلم (٥٧٧) في باب سجود التلاوة. والنسائي في باب ترك السجود في النجم. (٩٦٠)

অর্থ: তিনি ইমামের সঙ্গে কুরআন পড়া সম্পর্কে যায়দ ইবনে ছাবিত রা.কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি জবাব দিলেন, কোন নামাযেই ইমামের সঙ্গে কোন কিছু পড়বে না। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৫৭৭, নাসাঈ শরীফ (৯৬০), আবু আওয়ানা (১৯৫১), বায়হাকী (২৯১১)।

৫. নাফে র. থেকে বর্ণিত:

أن عبد الله بن عمر كان إذا سئل هل يقرأ أحد خلف الإمام قال إذا صلى أحدكم خلف الإمام فحسبه قراءة الإمام وإذا صلى وحده فليقرأ قال وكان عبد الله بن عمر لا يقرأ خلف الإمام. موطا مالك صـ ٢٩

অর্থ: হযরত ইবনে উমর রা.কে যখন জিজ্ঞেস করা হতো, ইমামের পেছনে কুরআন পড়া যাবে কিনা? তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পেছনে নামায পড়ে তখন ইমামের পড়াই তার জন্য যথেষ্ট হয়। আর যখন একাকী পড়ে, তখন যেন নিজেই কেরাত পড়ে। নাফে বলেন, ইবনে উমর রা. ইমামের পেছনে কুরআন পড়তেন না। (মুয়াত্তা মালেক, পৃ২৯, (৪৩), আব্দুর রাযযাক (২৮১৪), মুসনাদে ইবনুল জাদ (১১৫০), তাহাবী (১৩১২, ১৩১৭) দারাকুতনী (১৫০৩), বায়হাকী (২৯০১, ২৯০৩)।

৬.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর ফতোয়া:

عن أبي وائل : جاء رجل إلى عبد الله فقال: اقرأ خلف الإمام؟ فقال له عبد الله إن في الصلاة شغلا وسيكفيك ذلك الإمام

আবু ওয়াইল রহ. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি ইমামের পেছনে কেরাত পড়বো? তিনি বললেন, নামাযে খুবই মগ্নতা আছে। কেরাত পড়ার জন্য ইমামই তোমার পক্ষে যথেষ্ট। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা (৩৭৮০), মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (২৮০৩), তাহাবী (১৩০৭), তাবারানী কৃত আল আওসাত (৪০৪৯), মুজামে কাবীর (৯৩১১)

৭. হযরত জাবির রা. বলেছেন,

من صلى ركعة لم يقرأ فيها بأم القرآن فلم يصل إلا أن يكون وراء الإمام. أخرجه الترمذي (٣١٣) وقال هذا حديث حسن صحيح ومالك في الموطا صـ ٢٨

অর্থ: যে ব্যক্তি নামাযের কোন রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ল না, সে যেন নামাযই পড়ল না। তবে যদি সে ইমামের পেছনে নামায পড়ে। (তাহলে তার ব্যাপার ভিন্ন।) তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৩; তিনি এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। মুয়াত্তা মালেক, পৃ ২৮, নং ৩৮; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (২৭৪৫) মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা (৩৬২১), আল কিরাআতু খালফাল ইমাম লিল বুখারী (১৭৪), নাসাঈ কুবরা (২৮৯৯), শারহু মুশকিলিল আছার (১৩০১), বায়হাকী (১২৪২), মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার (৩২০৩) আল কিরাআতু খালফাল ইমাম লিল বায়হাকী (৩৫৮)

এ হাদীসে জাবির রা. স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সূরা ফাতেহা পড়া ইমাম বা একাকী নামায আদায়কারীর জন্য আবশ্যক। মুক্তাদীর জন্য সেটা আবশ্যক নয়। এ কথা দ্বারা তিনি যেন উবাদা ইবনুস সামেত রা. কর্তৃক বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই হাদীসের ব্যাখ্যা করে দিলেন, যে হাদীসে তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ে না, তার নামাযই হয় না। হযরত জাবির রা. বুঝিয়ে দিলেন, এ বিধানটি মুক্তাদির জন্য নয়। ইমাম বা একা নামায আদায়কারীর জন্য। আবূ দাউদ শরীফে সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না র. থেকেও অনুুরূপ কথা উদ্ধৃত হয়েছে। হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রা. কর্তৃক বর্ণিত ঐ হাদীসটি বর্ণনা করার পর আবূ দাউদ র. বলেন, قال سفيان : لمن يصلي وحده অর্থাৎ সুফিয়ান র. বলেছেন, একা নামায আদায়কারীর ক্ষেত্রে এই হাদীস। (দ্র, হাদীস নং ৮২২) ইমাম তিরমিযী র. ইমাম আহমাদ থেকেও একই কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,

واما أحمد بن حنبل فقال معنى قول النبي صلى الله عليه وسلم لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب إذا كان وحده

অর্থাৎ আহমাদ র. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বলেছেন সূরা ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না এটা তখন, যখন কেউ একা নামায পড়ে। ইমাম আহমাদ র. এক্ষেত্রে জাবির রা. এর উল্লিখিত হাদীসটিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে বলেন,

فهذا رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم تأول قول النبي صلى الله عليه وسلم لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب أن هذا إذا كان وحده

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথার ‘যে সূরা ফাতেহা পড়েনি তার নামায হয়নি’ এ ব্যাখ্যা করেছেন যে, এটা তার ক্ষেত্রে যে একা নামায আদায় করে।

ইমাম তিরমিযীও হযরত উবাদা রা. এর হাদীসটিকে মুকতাদীর বিধান বলে মনে করতেন না। এই কারণে ‘কিরাআত খালফাল ইমাম’ বা মুকতাদীর জন্য কেরাত পড়া অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ না করে তিনি এর ঊনচল্লিশ অনুচ্ছেদ পূর্বে ما جاء أنه لا صلاة إلا بفاتحة الكتاب অনুচ্ছেদে নামাযে ফাতেহার কি গুরুত্ব সেটা বোঝাবার জন্য উল্লেখ করেছেন।

এখন বলুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী হযরত জাবির রা. ইমাম বুখারী র. এর উস্তাদের উস্তাদ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না, ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম আহমাদ, এবং ইমাম তিরমিযী বলছেন, এ হাদীসটি মুকতাদীর জন্য নয়। আর আমাদের লা-মাযহাবী ভাইয়েরা বলেন, এটা মুকতাদীর জন্যও। আমরা কার কথা মানবো?

তাছাড়া অধিকাংশ ইমাম ও আলেম যারা ইমামের পেছনে মুকতাদীর কুরআন পড়া জরুরী মনে করতেন না, তাদেরও তো একই মত। ইমাম আহমাদ র. কত জোর দিয়ে বলেছেন,

ما سمعنا أحدا من أهل الإسلام يقول إن الإمام إذا جهر بالقراءة لا تجزئ صلاة من خلفه إذا لم يقرأ وقال هذا النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه والتابعون وهذا مالك في أهل الحجاز وهذا الثوري في اهل العراق وهذا الأوزاعي في أهل الشام وهذا الليث في أهل مصر ما قالوا لرجل صلى وقرأ إمامه ولم يقرأ هو صلاته باطلة . المغني لابن قدامة (١/٣٣٠

অর্থাৎ ইমাম যখন উচ্চস্বরে কেরাত পড়ে, তখন তার পেছনে মুকতাদী যদি কেরাত না পড়ে তবে মুকতাদীর নামায হবে না: এমন কথা আহলে ইসলামের কাউকে আমরা বলতে শুনিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবীগণ, ও তাবেয়ীগণ, মদীনাবাসীদের মধ্যে ইমাম মালেক, ইরাকবাসীদের মধ্যে সুফিয়ান ছাওরী, শামবাসীদের মধ্যে ইমাম আওযায়ী, ও মিসরবাসীদের মধ্যে লায়ছ ইবনে সা’দ, এঁদের কেউই একথা বলেননি - ইমাম যখন কুরআন পড়বে, তখন পেছনে মুকতাদী যদি না পড়ে তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে কুদামা কৃত আল-মুগনী, ১খ, ৩৩০পৃ)

হায় আফসোস! ইমাম আহমদ র. যা জীবনেও শুনেননি, কোন আলেম যে বিষয়ে মত দেননি, সে বিষয়ের দিকে এখন মুসলমানদেরকে জোরেশোরে ডাকা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে, এছাড়া নামাযই হবে না। আল্লাহ আমাদেরকে সুমতি দান করুন। আমীন।

 
Top