• নাহমাদুহু নুসাল্লি ওয়া নুসাল্লিম আ'লা রাসুলিহিল কারিম।।আম্মা বা'দঃ-  


শাবান মাসের নামকরণের যর্থাথতাঃ-

 হিজরি চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস হলো ‘শাবান’। এই মাসটি বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ। এর পরের মাসই পবিত্র ‘মাহে রমজান’। শাবান এলেই চারদিকে ইবাদতের সুবাতাস বইতে শুরু করে। মুমিন হৃদয় জেগে ওঠে। নিজেদেরকে প্রভুপ্রেমে বিলিয়ে দেন বিনীদ্র রজনীতে। ইবাদত-বন্দেগিতে কাটান দিনের বেশিরভাগ সময়।

শাবান  শব্দের অর্থ হলোঃ
  الجَمْعُ ، والتَّفْريقُ ، والإِصْلاحُ ،والإِفْسادُ ، والصَّدْعُ ، والتَّفَرُّقُ ، والقَبيلَةُ العَظِيمَةُ ، والجَبَلُ ، ومَوْصِلُ قَبائِلِ الرَّأسِ ، والبُعْدُ ،والبَعيدُ ، وبَطْنٌ مِنْ هَمْدانَ ، 
 (মুজামুল ওয়াসীত,আর-রাঈদ,লিসানুল আরব,কামুসুল মুহিত,মুজামুল আরবি)

এই মাসটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মাসটির নামকরণের প্রতি লক্ষ করলেই এর গুরুত্বের বিষয়টি বোঝা যায়। ‘শাবান’ আরবি শব্দটির অর্থ ছড়িয়ে পড়া। বস্তুত শাবান মাসের আগের মাস, অর্থাৎ রজব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ বা হারাম হওয়ার কারণে আরবদের ওই সময়ে ঘরে বসে সময় কাটাতে হতো। আর শাবান মাসের পরের মাস রমজান ছিল প্রচণ্ড গরমের মৌসুম। বিধায় প্রকৃতির রুক্ষতার কারণে রমজানেও তারা ঘর থেকে বের হতে পারত না। মাঝখানের এই মাসটিই ছিল তাদের জন্য জীবিকা উপার্জনের মোক্ষম সময়। তাই তারা এই সময়ে জীবিকার সন্ধানে এই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত।
সুতরাং মাসটির নামকরণ করা হয়েছে শাবান।

শাবান মাসের গুরুত্বঃ- 
জীবন ও জীবিকার জন্য আরবদের কাছে শাবান মাসটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, ধর্মীয় দিক দিয়ে মুসলিম সমাজের কাছে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর অতীব গুরুত্বের কারণেই রাসুলুল্লাহ (সাল্ললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাবানকে নিজের মাস বলে অভিহিত করেছেন।

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রজব হলো আল্লাহর মাস। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর মাস রজবকে সম্মান করল, সে আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। আর যে আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন। আর শাবান হলো আমার মাস। আর যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল সে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। আর যে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, কিয়ামতের দিন আমি হব তার অগ্রবর্তী এবং নেকির ভাণ্ডর। আর রমজান মাস হলো আমার উম্মতের মাস।
(শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৫৩২)

হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই মাসেই কিবলা পরিবর্তন হয়; অর্থাৎ পূর্ব কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবা শরিফ কিবলা হিসেবে ঘোষিত ও নির্ধারিত হয় এই মাসে।

 ‘বারবার আপনার আকাশের দিকে মুখমণ্ডল আবর্তন আমি অবশ্যই লক্ষ করি। সুতরাং কিবলার দিকে আপনাকে প্রত্যাবর্তন করে দেব, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। অতএব আপনি মসজিদুল হারামের (কাবা শরিফ) দিকে চেহারা ঘোরান। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওই (কাবা) দিকেই মুখ ফেরাও।’
(সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪৪)।

তাই শাবান মাস একদিকে ইসলামি ঐক্যের মাস, অন্যদিকে কাবাকেন্দ্রিক মুসলিম জাতীয়তা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়ার মাস।
 
Top