শাবান মাস এর গুরুত্বঃঃ- 

ফজিলত ও বরকতের দিক দিয়ে শাবান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং অন্য মাসের তুলনায় এ মাসটিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছেন।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, রজব অন্য মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব রাখে। যেমন পবিত্র কোরআন অন্য কিতাবের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব রাখে। অনুরূপভাবে শাবান অন্য মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব রাখে, যেমন অন্য নবী ও রাসূলদের মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব অন্য মাসের মধ্যে এমন, সারা সৃষ্টিকুলের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এ মাসের গুরুত্ব বর্ণনায় হজরত ওসামা বিন জায়েদ (রা.) এর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এ মাস সম্পর্কে লোকরা উদাসীন থাকে অথচ এ মাসে মানুষের আমল আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে পেশ করা হয়। আমার আমল যখন পেশ করা হয়, তখন রোজা অবস্থায় থাকা আমি পছন্দ করি।
(আহমদ ও নাসাঈ)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, শাবান আমার মাস, রজব আল্লাহর মাস ও রমজান আমার উম্মতের মাস। শাবান মাস অন্যায়-অপরাধ থেকে রক্ষা করে। আর রমজান মাস মানুষকে পূত-পবিত্র করে। শাবান শব্দটি আরবি। অভিধানে এর অর্থ হচ্ছে শাখা-প্রশাখা বের হওয়া। যেহেতু এ মাস প্রচুর কল্যাণ ও নেকির মাস, সেহেতু এর নামকরণ হয়েছে শাবান। হজরত আবু ওমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন শাবান মাস হাজির হতো, তখন প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, এ মাসে তোমরা তোমাদের অন্তরকে পবিত্র করে নাও এবং নিয়তকে সঠিক করে নাও।
(মুসলিম)। 

শাবান মাস রমযানের পূর্ব প্রস্তুতিঃঃ-

এ মাসে আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে বান্দার প্রতি অশেষ রহমত ও বরকত নাজিল হয়। অনেক অনুগ্রহ ও অনুকম্পা দান করা হয়। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা) এ মাসে অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। উম্মুল মোমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া)  কে কখনও রমজান ছাড়া পুুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি, আর শাবান মাসের মতো অন্য কোনো মাসে তাকে অধিকহারে রোজা রাখতে দেখিনি।
(বুখারি ও মুসলিম )।

রজব মাস হলো চাষাবাদের মাস, অর্থাৎ বীজ বপনের মাস, আর শাবান হলো পরিচর্যার মাস, আর রমজান হলো ফসল কাটার মাস। কাজেই শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কারণ বীজ বপন করলেই হয় না। তাতে ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হয়, সার দিতে হয়, আগাছা পরিষ্কার করতে হয়, প্রয়োজনমাফিক পানি দিতে হয়, তবেই না ভালো ফসল হবে। আর মাহে রমজানে ভালো ও বেশি ফসল কাটা যাবে।

এ মাস থেকেই ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কেননা আগেভাগে নেক আমলের অভ্যাস গড়ে না তুললে পরে বড় ধরনের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। প্রিয় নবী (সাাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে বেশি বেশি রোজা রাখতেন এবং ইবাদতে রাত অতিবাহিত করতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্ললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা)এর কাছে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন রোজা উত্তম? জবাবে তিনি বললেন, শাবানের মাসের রোজা, কারণ এ রোজা রমজানের রোজার সম্মানের জন্য। (তিরমিজি)। 

এছাড়া এ মাসে প্রিয় নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শানে অধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ পাঠ করা উম্মতের জন্য অতীব জরুরি। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা) আল্লাহ তায়ালা আরশের নিচে নূরের একটি সমুদ্র সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন, যার এক হাত পূর্বে অপরটি পশ্চিমে। তার মাথা আরশের নিচে এবং পদযুগল সপ্ত জমিনের নিচে। বান্দা শাবান মাসে আমার প্রতি দরুদ পড়লে আল্লাহ তায়ালা সেই ফেরেশতাকে 'আবে হায়াতে' ডুব দেয়ার জন্য আদেশ দেন। সেই ফেরেশতা পানিতে ডুব দিয়ে বের হয়ে ডানাদ্বয় ঝাড়া দিলে প্রত্যেক ফোঁটা দ্বারা এক একজন ফেরেশতা সৃষ্টি হয়। যারা কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ইস্তেগফার করতে থাকে।
(দুররাতুন নাসিহিন ও জুবতাদুল ওয়ায়েজিন)।

 হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা) এর প্রিয় সাহাবিরা শাবানের চাঁদ দেখে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন, মুসলমানরা তাদের মালের জাকাত বের করে দিতেন। যাতে করে গরিব-মিসকিনরা এর দ্বারা রোজা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিচারকরা জেলখানা থেকে কয়েদিদের বের করে এনে তাদের মধ্যে যারা দোষী তাদের সাজা দিয়ে বাকিদের ছেড়ে দিতেন। ব্যবসায়ীরা এ মাসে তাদের ঋণ পরিশোধ করে দিতেন এবং অন্যদের কাছে যা পাওনা তা আদায় করে নিতেন। রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে মানুষ গোসল করে এতেকাফে বসে যেতেন। মোট কথা, এ মাস থেকেই প্রতিটি মোমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য হচ্ছে রমজানের প্রস্তুতি নেয়া। কেননা, শাবানই আগত রমজানের প্রস্তুতির সর্বোত্তম মাস।।
 
Top