১) রোজা কার উপরে ফরজ?

প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়ষ্ক, মুকীম মুসলমান নর-নারীর উপর রমযানের রোযা রাখা ফরজ। তবে মহিলাদের জন্য শর্ত হল তাদের হায়েয –নেফাস থেকে পবিত্র হতে হবে। কাজেই পাগল,মুসাফির,নাবালেগ ও হায়েজ- নেফাস ওয়ালী মহিলার উপর রোজা ফরজ নয়।

২) স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী: ৪/২৬৪)

৩) চোখের দু’ এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে রোযার ক্ষতি হয় না। তবে তা যদি গলার ভেতর চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলমুহীতুল বুরহানী: ৩/৩৪৯; ফাতাওয়া হিনিদয়া: ১/২০৩)

৪) মিসওয়াক করলে রোযা ভাঙ্গে না, মাকরুহও হয় না। (বুখারি-১৭৯৬)

৫) রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মাজন বা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা মাকরুহ। রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। কোনো ব্যক্তি যদি হাঁপানি অথবা অ্যাজমার কারণে ইনহেলার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়, তাহলে রোজা ভাঙার অনুমতি আছে। তবে ওই রোজা পরে কাজা করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ২/৩৯৫) 

৬) কোনো কারণে রোজা ভেঙে গেলেও দিনের বেলায় পানাহার করা যাবে না। সারা দিন রোজাদারের মতো থাকা ওয়াজিব। (হিদায়া: ১/১৮৫)

৭) রমযান মাসে কেউ যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে তার রোযা মাফ হয়ে যায়। তবে পুরো মাসের কোন অংশে সুস্থ হলে পূর্বের রোযাগুলোর কাযা করতে হবে। (আল বাহরুর রায়েক: ২/৫০৭)

৮) নাবালেগ ছেলে-সন্তানদেরকে রোযা রাখার হুকুম করতে হবে, যদি তারা এর শক্তি রাখে এবং এর দ্বারা তাদের কোন ক্ষতি না হয়। আর দশ বৎসর বয়সে রোযা রাখতে শুরু না করলে প্রয়োজনে প্রহার করা যাবে।(দুররে মুখতার: ২/৪০৯)


মন্দ কাজ সম্পর্কিত মাসায়েল


১) কেউ যেন রোজা রাখা অবস্থায় কোন খারাপ কর্ম না করে। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে আসে বা গালি দেয় তাহলে সে যেন বলে আমি রোজাদার। (বুখারি : ১৮৯৪)

২) হস্তমৈথুন করলে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং তার কাযা আদায় করা জরুরী। এটা জঘন্য পাপকার্য। হাদিসে এইরুপ ব্যক্তির উপর লানত করা হয়েছে। (দুররে মুখতার: ২/৩৯৯)

৩) বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৫)

৪) গীবত করলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(আদ দুররুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬২)
যদিও গীবত জঘন্য কবীরা গুনাহ্। ★কুরআন মজীদে গীবত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মতোই।’ আর হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে, ‘গীবত যেনা থেকেও জঘন্যতর।’ 
(আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৩১, হাদীস নং-২৬)
অবশ্য, গীবতের কারণে রোযার নূরানিয়্যাত শেষ হয়ে যায়।
(বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৫ম, পৃ-৬১১)

৫) রোযা অবস্থায় অযথা কথাবার্তা বলা কিংবা অশ্লীল কথা বলা মারাত্মক গুনাহের কাজ। (সহিহ ইবনে খুযাইমা-১৯৯৪)



সালাত সম্পর্কিত মাসায়েল


১) বিতরের নামাযে ভুলে দোআয়ে কুনুত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। তাই নামায শেষে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে। (আল বাহরুর রায়েক) 

২) এভাবে মোবাইল নামাযে বন্ধ করলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তবে যদি না দেখে শুধু হাত দ্বারা আন্দাজ করে বন্ধ করে তহলে নামায নষ্ট হবে না।  ( মাসায়েলে মোবাইল) 

৩) ২০ রাকাত তারাবীহ নামায পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্য সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। তবে পুরুষদের জন্য তারাবীর জামাত করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহে কিফায়া। মেয়েরা জামাআত ছাড়াই নিজেরা পড়ে নিবে। ( আহসানুল ফাতওয়া) 

৪) এ অবস্থায় জামাতের সাথে ইমামের পিছনে বিতর নামায আদায় করার পর ছুটে যাওয়া তারাবীহ নামাযের রাকাআতগুলো আদায় করতে হবে। ( ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)

৫) সিজদার ফরজ হচ্ছেঃ 

- কমপক্ষে পায়ের এক আঙ্গুল এর পেট যমীনের লাগানো থাকবে এবং 

- প্রতিটি পায়ের বেশির ভাগ আঙ্গুলের পেট যমীনের উপর স্থির থাকা ওয়াজিব। 

- অনুরূপভাবে নাকের হাড় যমীনের উপর লাগানো ওয়াজিব। অনেক লোকের নাক যমীনের সাথে লাগেই না আর লাগলেও নাকের অগ্রভাগ লাগে মাত্র। এখানে ওয়াজিব বর্জন করা গুনাহ আর এতে অভ্যস্ত হওয়া ফাসেক্বী। 

- পাগুলো দেখুন আঙ্গুলের মাথা জমিনের উপর থাকে বটে কিন্তু কোন আঙ্গুলের পেট বিছানো অবস্থায় থাকে না। এমতাবস্থায় সেজদা বাতিল। নামাজও নিষ্ফল। 

অথচ মুসল্লী সাহেব নামাজ পড়ে বাসায় চলে গেলেন। (ফতোয়ায়ে রেজভীয়া, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা 555, ইরশাদে আ'লা হযরত)



 
Top