দারূস সাআদাত গ্রন্থ সংকলিত- তাফসীর আদ দুররে মানসূর- সূরা আল ফাতিহা।

ইমাম সুয়ূতী (রহ)।

pdf 👉 [durre mansur- al fatiha Download]

অথবা নিচের ব্লগ থেকে পাঠ করুন

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

نَحْمَدُه وَنُصَلِّ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ

সূরা আল ফাতিহার তাফসীর

ইমাম সুয়ূতী (রহ) রচিত রিওয়ায়াত ভিত্তিক তাফসীর গ্রন্থ তাফসীর আদ দুররে মানসূর থেকে সংকলিত।

مُقَدّمَة سُورَة الْفَاتِحَة

সূরা আল ফাতিহার ভূমিকা

ওয়াহিদী আসবাবুন নুযূলে এবং সালাবী তার তাফসীরে হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন-

نزلت فَاتِحَة الْكتاب بِمَكَّة من كنز تَحت الْعَرْش

ফাতিহাতুল কিতাব মক্কায় আরশের খাযানার নিচ হতে নাযিল করা হয়েছ।

ইবনে আবি শাইবাহ মুসান্নাফে আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী তার মু’জামে এবং তাবরানী আউসাতে মুজাহিদের মাধ্যমে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন-

أَن إِبْلِيس رن حِين أنزلن فَاتِحَة الْكتاب وأنزلت بِالْمَدِينَةِ

ইবলিস চিৎকার করে উঠে যখন সূরা ফাতিহা নাযিল হয়। আর এটা পবিত্র মদীনায় নাযিল হয়েছিল।

ইমাম সাঈদ ইবনে মানসূর তার সুনানে এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

فَاتِحَة الْكتاب شِفَاء من السم

সূরা ফাতিহা বিষের প্রতিষেধক।

ইমাম দারিমী ও বায়হাকী শুআবুল ইমানে সিকাহ রাবীর সনদে আব্দুল মালিক বিন উমায়র থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

فَاتِحَة الْكتاب شِفَاء من كل دَاء

সূরা ফাতিহা প্রত্যেক রোগের শিফা।

বাযযার তার মুসনাদে যয়ীফ সনদে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

إِذا وضعت جَنْبك على الْفراش وقرأت (فَاتِحَة الْكتاب وَقل هُوَ الله أحد) فقد أمنت من كل شَيْء إِلَّا الْمَوْت

যখন তুমি বিছানায় শায়িত হও তখন যদি সূরা ফাতিহা এবং কুলহুআল্লাহ পাঠ  কর, তাহলে তুমি মৃত্যু ব্যতীত সব বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।

ইমাম দাইলামী মুসনাদুল ফিরদাউসে হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা) থেকে রিওয়ায়াত করেন-

فَاتِحَة الْكتاب وَآيَة الْكُرْسِيّ لايقرؤهما عبد فِي دَار فتصيبهم فِي ذَلِك الْيَوْم عين إنس أَو جن

যে ব্যক্তি নিজের ঘরে সূরা ফাতিহা ও আয়াতুল কুরস পাঠ করে, ঐ দিন তার পরিবার জিন ও ইনসানের বদ-নযর থেকে নিরাপদ থাকে।

আবুশ শায়খ (রহ) কিতাবুস সাওয়াবে আতা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

إِذا أردْت حَاجَة فاقرأ بِفَاتِحَة الْكتاب حَتَّى تختمها تقضى إِن شَاءَ الله

যখন তুমি কোন কাজের ইচ্ছা কর তখন সূরা ফাতিহা শেষ পর্যন্ত পাঠ কর। এতে তোমার ঐ কাজ পূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ।

ইবনে কা’নে মুজামুস সাহাবায় رَجَاء الغنوي থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

استشفوا بِمَا حمد الله بِهِ نَفسه قبل أَن يحمده خلقه وَبِمَا مدح الله بِهِ نَفسه قُلْنَا: وماذاك يَا نَبِي الله قَالَ (الْحَمد لله) و (قل هُوَ الله أحد) فَمن لم يشفه الْقُرْآن فَلَا شفَاه الله

আরোগ্য লাভের চেষ্টা কর তার মাধ্যমে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মাখলুকের প্রশংসা করার পূর্বেই নিজের প্রশংসা করেছেন। আরোগ্য লাভের চেষ্টা কর তার মাধ্যমে, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা নিজের মহত্ব বর্ণনা করেছেন। আমি আরয করলাম হে আল্লাহর রাসূল! তা কি? তিনি (সা) বললেন, আলহামদুলিল্লাহ ও কুলহুআল্লাহ! বস্তুত কুরআন যাকে আরোগ্য প্রদান করে না আল্লাহও তাকে আরোগ্য দান করেন না।

ইমাম ইবনে আসাকীর তারীখে দিমাশকে হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

إِذا أَخذ أحدكُم مضجعه ليرقد فليقرأ بِأم الْقُرْآن وَسورَة فَإِن الله يُوكل بِهِ ملكا يهب مَعَه إِذا هَب

তোমাদের কেউ যখন বিছানায় শায়িত হয় তখন তার উচিত উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) ও অন্য একটি সূরা পাঠ করা। কেননা এমন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন যে তার সাথে থাকে (তার হিফাযত করে)- যে পর্যন্ত না সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়।

1 – سُورَة الْفَاتِحَة (مَكِّيَّة وآياتها سبع)

১- সূরা আল ফাতিহা (মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত:৭)

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (1)

(১) দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে

[বিসমিল্লাহর তাফসীর]

1 – قَوْله تَعَالَى: بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم

আল্লাহর বাণী- ১.দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে

ইমাম ইবনুস যুরাইস হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন-

{بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} آيَة

বিসমিল্লাহ (কুরআনের) একটি (স্বতন্ত্র) আয়াত।

ইমাম দারাকুতনী যয়ীফ সনদে হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

كَانَ جِبْرِيل إِذا جَاءَنِي بِالْوَحْي أول مايلقي عَليّ {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم}

জিবরাইল (আ) যখন আমার নিকট ওহী নিয়ে আসতেন তখন প্রথমে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন।

ইমাম ওয়াহিদী হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

نزلت {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} فِي كل سُورَة

প্রত্যেক সূরার সাথে বিসমিল্লাহ নাযিল হয়েছে।

ইমাম আবু দাউদ, বাযযার, তাবরানী, হাকীম, বায়হাকী আল মা’রিফায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন-

كَانَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لايعرف فصل السُّورَة – وَفِي لفظ خَاتِمَة السُّورَة – حَتَّى ينزل عَلَيْهِ {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم}

 রাসূলুল্লাহ কোন সূরার শেষ অথবা দুই সূরার ব্যবধান জানতে পারতেন না, যে পর্যন্ত বিসমিল্লাহ নাযিল না হত।

ইমাম বাযযার ও তাবরানী আরো বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেন যে-

فَإِذا نزلت عرف أَن السُّورَة قد ختمت واستقبلت أَو ابتدئت سُورَة أُخْرَى

 যখন বিসমিল্লাহ নাযিল হত তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বুঝতে পারতেন যে, প্রথম সূরা শেষ হয়েছে আর দ্বিতীয় সূরা শুরু হয়েছে।

ইমাম হাকীম এবং বায়হাকী তার সুনানে বর্ণনা করেন, আর হাকীম এটাকে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত যে-

كَانَ الْمُسلمُونَ لايعرفون انْقِضَاء السُّورَة حَتَّى تنزل {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} فَإِذا نزلت عرفُوا أَن السُّورَة قد انْقَضتْ

মুসলমানরা (সাহাবীরা) যে পর্যন্ত বিসমিল্লাহ নাযিল না হত, সে পর্যন্ত বর্তমান সূরা নাযিল শেষ হয়েছে বলে জানতে পারত না। যখন বিসমিল্লাহ নাযিল হত তখন জানতে পারতেন যে, প্রথম সূরা শেষ হয়েছে।

ইমাম সালাবী হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

من ترك {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} فقد ترك آيَة من كتاب الله

যে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিল সে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত ছেড়ে দিল।

ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী, দারাকুতনী এবং বায়হাকী হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

كَانَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يفْتَتح صلَاته ب {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم}

নবী (সা) তার নামায বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করতেন।

ইমাম দারাকুতনী ও বায়হাকী হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

قَالَ لي رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم كَيفَ تقْرَأ إِذا قُمْت إِلَى الصَّلَاة قلت: أَقرَأ {الْحَمد لله رب الْعَالمين} قَالَ: قل {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم}

 আমাকে নবী কারীম (সা) বলেন- যখন তুমি নামায পড় তখন কিভাবে কিরাত পড়? আমি বললাম, আমি আলহামদু দ্বারা শুরু করি। তিনি বললেন, (আগে) বিসমিল্লাহ পাঠ কর।

আবু উবায়দ (রহ) মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কুরুযী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

فَاتِحَة الْكتاب سبع آيَات ب {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم}

সূরা ফাতিহা বিসমিল্লাহসহ সাত আয়াত।

ইমাম ইবনে মিরদুইয়া হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে-

اسْم الله الْأَعْظَم هُوَ الله

আল্লাহ নামটি ইসমে আযম।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ এবং ইবনে আবিদ দুনইয়া কিতাবুদ দুআয় শা’বী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

اسْم الله الْأَعْظَم يَا الله

ইসমে আযম হলো-  يَا الله হে আল্লাহ।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ হযরত যাহহাক (রহ) থেকে বর্ণনা করেন-

وَأخرج ابْن أبي حَاتِم عَن الضَّحَّاك قَالَ {الرَّحْمَن} لجَمِيع الْخلق و {الرَّحِيم} بِالْمُؤْمِنِينَ خَاصَّة

(আল্লাহর গুণ সম্পন্ন নাম) ‘রহমান’-দয়ালু সকল মাখলুকের জন্য। আর ‘রাহীম’-পরম দয়ালু বিশেষভাবে শুধু মুমিনদের জন্য।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ হযরত আব্দুর রহমান বিন বাসিত থেকে বর্ণনা করেন যে- রাসূলুল্লাহ (সা) নিম্নের কালিমাগুলো দ্বারা দুআ করতেন আর তা অন্যদেরকেও শিখাতেন-

اللَّهُمَّ فارج الْهم وَكَاشف الكرب ومجيب الْمُضْطَرين ورحمن الدُّنْيَا وَالْآخِرَة ورحيمها أَنْت ترحمني فارحمني رَحْمَة تغنني بهَا عَمَّن سواك

হে আল্লাহ! চিন্তা দূরকারী, বিপদ থেকে উদ্ধারকারিী, উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের দুআ কবুলকারী। দুনিয়া ও আখিরাতে রহমান ও রাহীম। একমাত্র তুমিই আমাকে দয়া করতে পার। যে দয়া আমাকে অন্য সবার অনুগ্রহ থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেবে।

ইবনুস সুন্নি আমালুল ইয়াওমে এবং দাইলামী হযরত আলী (রা) থেকে মারফুরুপে বর্ণনা করেন যে- যখন তুমি কোন মুশকিলে পড় তখন পাঠ কর-

{بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} لَا حول وَلَا قُوَّة إِلَّا بِاللَّه الْعلي الْعَظِيم

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম।

তাহলে আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে (তোমার) বিভিন্ন মুসিবতের মধ্যে যা ইচ্ছা দূর করে দিবেন।

ইমাম হাফিয (রহ) আব্দুল কাদির রিহাউয়ী থেকে আরবাঈনে হাসান সনদে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

كل أَمر ذِي بَال لَا يبْدَأ فِيهِ ب {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} أقطع

কোন গুরুত্তপূর্ণ কাজ বিসমিল্লাহ ব্যতীত শুরু করলে তা অপূর্ণ থেকে যায়।

ইমাম আবুশ শায়খ আল আযমায় সাফওয়ান বিন সালিম (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

الْجِنّ يستمتعون بمتاع الْإِنْس وثيابهم فَمن أَخذ مِنْكُم أَو وَضعه فَلْيقل {بِسم الله} فَإِن اسْم الله طَابع

জিনেরা মানুষের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও পোষাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করে থাকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন কাপড় পাড়বে বা রাখবে তখন বিসমিল্লাহ বলবে। কেননা আল্লাহর নাম হলো (জিন শয়তানদের জন্য) মোহর।

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2)

২. সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য

2 – قَوْله تَعَالَى: الْحَمد لله (رب الْعَالمين)

২ আল্লাহর বাণী- সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য

ইমাম আব্দুর রাযযাক আল মুসান্নিফে, হাকীম তিরমিযী নাওয়াদিরুল উসূলে, খাত্তাবী আল গারীবে, বায়হাকী আদাবে, দায়লামী মুসনাদুল ফিরদাউসে এবং সা’লাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবুনল আস (রা) থেকে আর তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেন-

{الْحَمد} رَأس الشُّكْر فَمَا شكر الله عبد لايحمده

হামদ বা প্রশংসা কৃতজ্ঞতার মূল। ঐ বান্দা (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা আদায় করে না যে (তার) প্রশংসা করে না।

ইমাম ইবনে জারির, হাকীম তারীখে নিশাপুরে এবং দায়লামী যয়ীফ সনদে হাকাম বিন উমায়র থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

إِذا قلت {الْحَمد لله رب الْعَالمين} فقد شكرت الله فزادك

যখন তুমি বললে ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’, তখন তুমি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলে। অতএব আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি তার নিয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দিবেন।

ইমাম ইবনে জারির, ইবনুল মুনযির এবং ইবনে আবি হাতিম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

{الْحَمد لله} كلمة الشُّكْر إِذا قَالَ العَبْد {الْحَمد لله} قَالَ الله شكرني عَبدِي

 আলহামদুলিল্লাহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশক শব্দ। যখন বান্দা আলহামদুলিল্লাহ বলে তখন আল্লাহ তাআলা বলেন- বান্দা আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করেছে।

ইমাম বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন-

مَا من عبد ينعم عَلَيْهِ بِنِعْمَة إلاَّ كَانَ {الْحَمد} أفضل مِنْهَا

যে ব্যক্তি কোন নিয়ামত পেয়েছে (আর তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলেছে) তবে তার নিয়ামত থেকে আলহামদু উত্তম।

ইমাম তিরমিযী (রহ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

التَّسْبِيح نصف الْمِيزَان وَالْحَمْد لله تملؤه وَلَا إِلَه إِلَّا الله لَيْسَ لَهَا دون الله حجاب حَتَّى تخلص إِلَيْهِ

সুবহানাল্লাহ মীযানের অর্ধেক। আলহামদুলিল্লাহ মীযানকে পূর্ণ করে দেয়। আর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই, যে পর্যন্ত তা আল্লাহ নিকট গিয়ে পৌছে।

ইবনে জারির হযরত আসওয়াদ বিন সারি’ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

لَيْسَ شَيْء أحب إِلَيْهِ الْحَمد من الله وَلذَلِك أثنى على نَفسه فَقَالَ {الْحَمد لله}

 কোন কিছুই আল্লাহর নিকট তার নিজের প্রশংসার চেয়ে বেশী প্রিয় নয়। তাই তো তিনি নিজের প্রশংসায় বলেছেন আলহামদুলিল্লাহ।

ইমাম বায়হাকী হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

التأني من الله والعجلة من الشَّيْطَان وَمَا شَيْء أَكثر معاذير من الله وَمَا شَيْء أحب إِلَى الله من الْحَمد

ধীরে সুস্থে কাজ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর তাড়াহুড়া করা শয়তানের পক্ষ থেকে। কোন কিছুই আল্লাহর দরবারে (বান্দার) ওযর কবুল করার চেয়ে বেশী নয়। আর আল্লাহর দরবারে তার নিজের প্রশংসার চেয়েও কোন কিছু বেশী প্রিয় নয়।

ইবনে শাহীন তার সুন্নায় এবং দায়লামী আবান সূত্রে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

التَّوْحِيد ثمن الْجنَّة و {الْحَمد لله} ثمن كل قِطْعَة ويتقاسمون الْجنَّة بأعمالهم

তাওহীদ বা একত্ববাদ হলো জান্নাতের মূল্য এবং প্রত্যেক নিয়ামতের মূল্য হলো আলহামদুলিল্লাহ। আর লোকেরা তাদের আমল অনুযায়ী জান্নাতকে বন্টন করবে।

ইমাম আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান এবং বায়হাকী হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

كل أَمر ذِي بَال لَا يبْدَأ فِيهِ بِحَمْد الله فَهُوَ أقطع

প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা আল্লাহর প্রশংসা ব্যতীত শুরু করা হয় তা অপূর্ণ থেকে যায়।

ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে, ইবনুস সুন্নী এবং আবু নুআইম তিব্বুন নবীতে হযরত আলী (রা ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন:

من قَالَ عِنْد كل عطسة سَمعهَا {الْحَمد لله رب الْعَالمين} على كل حَال مَا كَانَ لم يجد وجع الضرس وَالْأُذن أبدا

যে ব্যক্তি (মানুষের) প্রত্যেক হাঁচির সময় তা শুনে বলে ‘আল‑হামদুলিল্লাহ  রাব্বিল আলামীন আলা কুল্লি হাল’ তবে কখনও তার দাঁত ও কানের অসুখ হবে না।

হাকীম তিরিমিযী হযরত ওয়াসিলা ইবনুল আসকা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

من بَادر الْعَاطِس بِالْحَمْد لم يضرّهُ شَيْء من دَاء الْبَطن

যেই হাঁচিদাতা হাঁচি দিয়ে দ্রুত আলহামদুলিল্লাহ বলবে তার (স্থায়ী) কোন পেটের অসুখ হবে না।

 

2 – قَوْله تَعَالَى: (الْحَمد لله) رَبِّ الْعَالَمِينَ

২.আল্লাহ তাআলার বাণী- (সমস্ত প্রশংসা) জগতসমূহের প্রতিপালক (আল্লাহর জন্য)

[‘রাব্বুল আলামীন এর ’তাফসীর]

ইমাম ফিরইয়াবী, আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনে জারির, ইবনুল মুনযির এবং ইবনে আবি হাতিম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে ‘রাব্বুল আলামীন-জগতসমূহের প্রতিপালক’ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, আলামীন বা জগত দ্বারা উদ্দেশ্য

الْجِنّ والإِنس

জিন ও ইনসান।

ইমাম ইবনে জারির এবং ইবনে আবি হাতিম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে ‘রাব্বুল আলামীন-জগতসমূহের প্রতিপালক’ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে-

إِلَه الْخلق كُله السَّمَوَات كُلهنَّ وَمن فِيهِنَّ والأرضون كُلهنَّ وَمن فِيهِنَّ وَمن بَينهُنَّ مِمَّا يعلم وَمِمَّا لايعلم

তিনি সমস্ত সৃষ্টিকুলের মাবুদ। সমস্ত আসমান এবং এর মধ্যে যত সৃষ্টি আছে। সমস্ত যমীন আর এর মধ্যে যত সৃষ্টি আছে চাই তা (কারো) জানা থাক বা না থাক।

ইমাম ইবনে জারির হযরত কাতাদাহ (রহ) থেকে ‘রাব্বুল আলামীন-জগতসমূহের প্রতিপালক’ এর অর্থ বর্ণনা করেন যে-

كل صنف عَالم

সকল ধরনের জগতের প্রতিপালক।

ইমাম আবুশ শায়খ এবং আবু নুআইম হিলইয়াতে হযরত ওয়াহাব (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

إِن لله عز وَجل ثَمَانِيَة عشر ألف عَالم الدُّنْيَا مِنْهَا عَالم وَاحِد

মহান আল্লাহর আঠার হাজার জগত রয়েছে। এই দুনিয়া তার মধ্যে একটি।

الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (3)

৩. যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু

3 – قَوْله تَعَالَى: الرَّحْمَن الرَّحِيم

৩. আল্লাহ তাআলার বাণী- যিনি পরম করণাময় অতি দয়ালু

ইমাম দারকুতনী, হাকীম এবং বায়হাকী হযরত উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) নামাযে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করেন এবং একে এক আয়াত গণ্য করেন। ‘আলহামদুল্লিাহি রাব্বিল আলামীন’কে দ্বিতীয়, ‘আররাহমানির রাহিম’কে তৃতীয় ‘মালিকি ইয়াওমিদদীন’কে চতুর্থ আয়াত গণ্য করেন এবং বলেন এমনিভাবে ‘ইয়্যাকানবুদু ওয়া ইয়্যাকানাস্তায়ীন’ এবং নিজের পাঁচ আঙ্গুল একিত্রিত করেন। 

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4)

বিচার দিবসের মালিক।

4 – قَوْله تَعَالَى: ملك يَوْم الدّين [وَفِي قِرَاءَة: مَالك يَوْم الدّين]

৪.আল্লাহ তাআলার বাণী- যিনি বিচার দিবসের মালিক

ইমাম ইবনে জারির এবং হাকীম- তিনি তাকে সহিহ বলেছেন ইবনে মাসউদ এবং আরো অসংখ্য সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন যে-

هُوَ يَوْم الْحساب

এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হিসাবের দিন।

ইমাম ইবনে জারির এবং ইবনে আবি হাতিম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে এর অর্থ বর্ণনা করেন যে-

لايملك أحد مَعَه فِي ذَلِك الْيَوْم حكما كملكهم فِي الدُّنْيَا

 ঐ দিন তার সাথে হুকুমের আর কেউ মালিক হবে না, যেমন দুনিয়াতে মালিক হয়ে থাকে।

ইমাম আব্দুর রাযযাক এবং আব্দ ইবনে হুমায়দ হযরত কাতাদাহ থেকে এর তাফসীর বর্ণনা করেছেন যে-

يَوْم يدين اله الْعباد بأعمالهم

যেদিন আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে আমল অনুযায়ী প্রতিদান দিবেন।

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5)

আমরা তোমরাই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।

5 – قَوْله تَعَالَى: إياك نعْبد وَإِيَّاك نستعين

৫.আল্লাহ তাআলার বাণী- আমরা তোমরাই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।

আবুল কাসিম আল বাগাবী এবং মারওয়ার্দি মারিফাতুস সাহাবায়, তাবরানী আউসাতে এবং আবু নুআইম দালায়িলে হযরত আনাস (রা) এর মাধ্যমে হযরত আবু তালহা (রা) থেকে রিওয়ায়াত করেন। তিনি বলেন- আমাদের এক গযওয়ায় রাসূলের সাথে দুশমনদের মুকাবিলা হয়। আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে পাঠ করতে শুনলাম-

يَا {مَالك يَوْم الدّين إياك نعْبد وَإِيَّاك نستعين}

হে বিচার বিচার দিবসের মালিক। আমরা তোমরাই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।

এরপর আমি দেখলাম যে, তারা পড়ে যাচ্ছে। ফেরেশতারা তাদের সামনে ও পিছন থেকে মারছে।

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6)

আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর।

6 – قَوْله تَعَالَى: اهدنا الصِّرَاط الْمُسْتَقيم

৬.আল্লাহ তাআলার বাণী- আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর।

ইমাম ওকী, আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনে জারির, ইবনিুল মুনযির, মুহামিলী তার আমালীতে মুসান্নাফের নুসখা থেকে, হাকীম তার সহিতে হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে এর তাফসীর করেছেন যে-

هُوَ الإِسلام وَهُوَ أوسع مِمَّا بَين السَّمَاء وَالْأَرْض

 সিরাতে মুস্তাকীম দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলাম। আর এটা আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী প্রশস্ততার চেয়েও বেশী প্রশস্ত। 

ইমাম ওকী, আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনে জারির, ইবনিুল মুনযির, আবু বকর ইবনুল আম্বারী কিতাবুল মাসাহাফে, হাকীম তার সহিতে তাকে সহিহ বলেছেন এবং ইমাম বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত আবদু্ল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে এর তাফসীর বর্ণনা করেছেন যে-

هُوَ كتاب الله

এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কিতাব।

ইমাম ইবনুল আম্বারী হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

إِن هَذَا الصِّرَاط محتضر تحضره الشَّيَاطِين ياعباد الله هَذَا الصِّرَاط فَاتَّبعُوهُ {الصِّرَاط الْمُسْتَقيم} كتاب الله فَتمسكُوا بِهِ

এই পথ সংক্ষিপ্ত তদুপরি শয়তান তার উপর এসে পড়ে। অতএব হে আল্লাহর বান্দাগণ! তেমরা এই সরলপথ অনুসরণ কর। সিরাতে মুস্তাকীম হলো আল্লাহর কিতাব, একে মজবুতভাবে ধরে থাক।

ইমাম ইবনে আবি আবি শাইবা, দারিমী, তিরিমিযী- আর তিনি এটাকে যয়ীফ বলেছেন, ইবনে জারির, ইবনে আবি হাতিম, ইবনুল আম্বারী তার মাসাহাফে, ইবনে মিরদুইয়া এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি-

سَتَكُون فتن

অনেক ফিতনা দেখা দিবে।

আমি বললাম: তা থেকে বাঁচার উপায় কি? তিনি বললেন:

كتاب الله فِيهِ نبأ مَا قبلكُمْ وَخبر مَا بعدكم وَحكم مَا بَيْنكُم هُوَ الْفَصْل وَلَيْسَ بِالْهَزْلِ وَهُوَ حَبل الله المتين وَهُوَ ذكره الْحَكِيم وَهُوَ الصِّرَاط الْمُسْتَقيم

আল্লাহর কিতাব। তাতে আছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের সংবাদ এবং পরবর্তীদের  খবর। আর তোমাদের জন্য ফয়সালা-বিধান। এটা হলো (সত্য ও মিথ্যার) পার্থক্যকারী, এটা নিরর্থক নয়।  এটা হলো আল্লাহ্ তা’আলার সুদৃঢ় রজ্জু। এটা হল হিকমত পূর্ণ নসীহত। এটা হলো সরল সঠিক পথ।

ইমাম হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন আবুল আলিয়া থেকে তিনি ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন-

هُوَ رَسُول الله وصاحباه

সিরাতে মুস্তাকীম দ্বারা উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ (সা) এবং তার দুই সাথী।

আব্দ ইবনে হুমায়দ আবুল আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

تعلمُوا الْإِسْلَام فَإِذا علمتموه فَلَا ترغبوا عَنهُ وَعَلَيْكُم بالصراط الْمُسْتَقيم فَإِن {الصِّرَاط الْمُسْتَقيم} الْإِسْلَام وَلَا تحرفوا يَمِينا وَشمَالًا

ইসলামকে শিখ। আর যখন তুমি ইসলাম শিখে নিবে তখন তুমি এর থেকে বিমুখ হয়ো না। আর তোমাদের সিরাতে মুস্তাকীম এর উপর চলা আবশ্যক। কেননা সিরাতে মুস্তাকীম হলো ইসলাম। সুতরাং কখনো এর ডানে বামে ঝুঁকে যেও না।

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7)

৭.তাদের পথ যাদের প্রতি তোমার অনুগ্রহ বর্ষিত হয়েছে। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার গযব বর্ষিত হয়েছে এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট।

7 – قَوْله تَعَالَى: صِرَاط الَّذين أَنْعَمت عَلَيْهِم غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين

৭. আল্লাহ তাআলা বাণী- তাদের পথ যাদের প্রতি তোমার অনুগ্রহ বর্ষিত হয়েছে। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার গযব বর্ষিত হয়েছে এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট।

ইমাম ইবনে জারির এবং ইবনে আবি হাতিম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে صِرَاط الَّذين أَنْعَمت عَلَيْهِمএর তাফসীর বর্ণনা করেন যে,

طَرِيق من أَنْعَمت عَلَيْهِم من الْمَلَائِكَة والنبيين وَالصديقين وَالشُّهَدَاء وَالصَّالِحِينَ الَّذين أطاعوك وعبدوك

তারা হলো- ফেরেশতা, আম্বিয়া, সিদ্দিকীন, শহীদগণ এবং সালিহীন বা নেককারগণ যারা তোমার আনুগত্য ও ইবাদত করেছেন।

ইমাম ইবনে জারির হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে صِرَاط الَّذين أَنْعَمت عَلَيْهِم এর তাফসীর বর্ণনা করেন যে-

الْمُؤمنِينَ

তারা হলো মুমিনগণ।

ইমাম ইবনে জারির হযরত আবি যায়দ থেকে صِرَاط الَّذين أَنْعَمت عَلَيْهِم এর তাফসীর বর্ণনা করেন যে-

النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَمن مَعَه

তারা হলো নবী (সা) এবং তার সাথীগণ।

ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ হযরত রবী বিন আনাস থেকে বর্ণনা করেন- صِرَاط الَّذين أَنْعَمت عَلَيْهِم দ্বারা উদ্দেশ্য নবীগণ। غير المغضوب عَلَيْهِم দ্বারা উদ্দেশ্য ইহুদীগণ এবং وَلَا الضَّالّين  দ্বারা উদ্দেশ্য নাসারা বা খৃষ্টানগণ।

ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ হযরত সাঈদ ইবনে যুবায়র (রা) থেকে غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّينএর তাফসীর বর্ণনা করেন যে-

الْيَهُود وَالنَّصَارَى

এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইহুদী ও নাসারাগণ।

হযরত সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ তার তাফসীরে এবং সাঈদ ইবনে মানসূর ইসমাইল ইবনে আবি খালিদ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- المغضوب عَلَيْهِم –যারা ক্রোধে নিপতিত দ্বারা উদ্দেশ্য ইহুদীগণ। আর وَلَا الضَّالّين -যারা পথভ্রষ্ট দ্বারা উদ্দেশ্য নাসারগণ।

ذكر آمين

আমিন প্রসঙ্গ

ইমাম ওকী এবং ইবনে আবি শাইবাহ হযরত আবু মাইসারাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

لما أَقرَأ جِبْرِيل رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَاتِحَة الْكتاب فَبلغ {وَلَا الضَّالّين}

 قَالَ: قل آمين فَقَالَ: آمين

 জিবরাইল (আ) রাসূলুল্লাহ (সা) কে সূরা ফাতিহা পড়ান। অতঃপর যখন وَلَا الضَّالّين পর্যন্ত পৌছেন তখন বলেন- বলুন আমিন। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন আমিন।

ইমাম তাবরানী এবং বায়হাকী হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে শুনেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين বলতেন তখন বলতেন-

رب اغْفِر لي {آمين}

 রাব্বিগফিরলী, আমিন। অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন। আমিন।

ইমাম ইবনে মাজাহ হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি শুনেছি-

إِذا قَالَ {وَلَا الضَّالّين} قَالَ {آمين}

রাসূলুল্লাহ (সা) যখন বলেছেন- وَلَا الضَّالّين তখন আমিন বলেছেন।

ইমাম মুসলিম. আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ এবং এবং ইবনে আবি শাইবাহ হযরত আবু মূসা আল আশআরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

إِذا قَرَأَ – يَعْنِي الإِمَام – {غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين} فَقولُوا {آمين} يجِبكم الله

 যখন ইমাম غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين বলে, তখন তুমি আমিন বল। তাহলে তোমার দুআ কবুল করা হবে।

 ইমাম মালিক, শাফিয়ী, ইবনে আবি শাইবাহ, আহমদ, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ এবং বায়হাকী হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

إِذا أَمن الإِمام فَأمنُوا فَإِنَّهُ من وَافق تأمينه تَأْمِين الْمَلَائِكَة غفر لَهُ مَا تقدم من ذَنبه

 যখন ইমাম আমিন বলে, তখন তোমরাও আমিন বল। কেননা যার আমিন বলা ফেরশেতাদের আমিন বলার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

ইমাম আবু দাউদ হাসান সনদে হযরত আবু যুহাইর আন নুমাইরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন আর তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন-

أَنه كَانَ إِذا دَعَا الرجل بِدُعَاء قَالَ: اختمه بآمين فَإِن آمين مثل الطابع على الصَّحِيفَة

যখন তোমাদের কেউ দুআ করে তার উচিত আমিন বলে দুআ শেষ করা। কেননা আমিন শব্দটি ঐশী গ্রন্থের মোহর বা সিলস্বরূপ।

অতঃপর বললেন, এ প্রসঙ্গে আমি তোমাদের কাছে একটি ঘটনা  বলছি- এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে বাইরে গমন করি। এ সময় আমরা এমন এক ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হই, যিনি অনেক অনুনয়-বিনয় সহকারে দুআ করছিলেন। নবী করীম (সা) তার কথা শ্রবণের জন্য সেখানে দণ্ডায়মান হন। তখন নবী করীম (সা) বলেন, যদি সে দুআতে মোহর লাগায় তবে তার দুআ কবুল করা হবে। এক ব্যক্তি বলল, সে কিসের দ্বারা মোহর লাগাবে?  তিনি বললেন, আমিন দ্বারা। কেননা যদি সে আমিনের উপর তার দুআ সমাপ্ত করে তবে তার দুআ কবুল হবে।

ইমাম আহমদ, ইবনে মাজাহ, এবং বায়হাকী তার সুনানে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَا حسدتكم الْيَهُود على شَيْء مَا حسدتكم على التَّأْمِين

ইহুদিরা তোমাদের কোন কিছুর জন্য এতটা হিংসা পোষণ করে না, যতটা না হিংসা করে ‘আমিন’ এর জন্য।

ইবনে আদি তার কামিলে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

إِن الْيَهُود قوم حسد حسدوكم على ثَلَاثَة أَشْيَاء إفشاء السَّلَام واقامة الصَّفّ وآمين

 ইহুদীরা হিংসুক জাতি। তারা তোমাদের তিনটি বিষয়ের প্রতি হিংসা পোষণ করে থাকে। সালামের প্রসারের জন্য। কাতার সোজা রাখার জন্য এবং আমিন এর জন্য।

হারিস বিন উসামাহ তার মসুনাদে, হাকীম তিরমিযী নাওয়াদিরুল উসূলে এবং ইবনে মিরদুইয়া হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

أَعْطَيْت ثَلَاث خِصَال أَعْطَيْت صَلَاة الصُّفُوف وَأعْطيت السَّلَام وَهُوَ تَحِيَّة أهل الْجنَّة وَأعْطيت {آمين} وَلم يُعْطهَا أحد مِمَّن كَانَ قبلكُمْ إِلَّا أَن يكون الله أَعْطَاهَا هرون فَإِن مُوسَى كَانَ يَدْعُو وهرون يُؤمن

আমাকে তিনটি বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে। আমাকে নামায কাতারসহকারে দান করা হয়েছে। আমাকে সালাম দান করা হয়েছে যা জান্নাতীদের অভিবাদন। আমাকে আমিন দান করা হয়েছে যা তোমাদের পূর্বে কাউকে দান করা হয়নি, তবে হারূন (আ) কে দেওয়া হয়েছিল। কেননা মূসা (আ) দুআ করতেন আর হারূন (আ) আমিন বলতেন।

ইমাম তাবরানী কিতাবুদ দুআয়, ইবনে আদি এবং ইবনে মিরদুইয়া যয়ীফ সনদে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

آمين خَاتم رب الْعَالمين على لِسَان عباده الْمُؤمنِينَ

‘আমিন’ মুমিন বান্দার যবানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মোহর।

ইমাম ওকী এবং ইবনে আবি শাইবাহ তার মুসান্নিফে হিলাল বিন ইয়াসাফ এবং মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে- 

{آمين} اسْم من أَسمَاء الله

 আমিন আল্লাহর নামসমূহের একটি নাম।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ ইবরাহিম নাখয়ী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- মুস্তাহাব হলো ইমাম যখন غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين বলবে, তখন এই দুআ বলা-

اللَّهُمَّ اغْفِر لي {آمين}

আল্লাহুম্মাগফিরলী, আমিন। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমিন।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ হযরত মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- যখন ইমাম غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين বলবে তখন এই দুআ পাঠ কর-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسأَلك الْجنَّة وَأَعُوذ بك من النَّار

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ হযরত রবী বিন খুসাইম (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

إِذا قَالَ الإِمَام {غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين} فَاسْتَعِنْ من الدُّعَاء ماشئت

 যখন ইমাম غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين বলবে, তখন তোমার ইচ্ছামত দুআর দ্বারা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও।

 সূরা আল ফাতিহার তাফসীর সমাপ্ত।

 
Top