সংকলিত তাফসীর আদ দুররে মানসূর-ইমাম সুয়ূতী (রহ)। সূরা লুকমান

(কৃতজ্ঞতায়ঃ দুররুস সা'আদাত) 

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
نَحْمَدُه وَنُصَلِّ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ

সূরা লুকমান

ইমাম ইবনুয যুরাইস, ইবনে মিরদুইয়া এবং বায়হাকী হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে-

أنزلت سُورَة لُقْمَان بِمَكَّة

সূরা লুকমান মক্কায় নাযিল হয়েছে।

ইমাম নাসাঈ এবং ইমাম ইবনে মাজাহ হযরত বারা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে-

كُنَّا نصلي خلف النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الظّهْر ونسمع مِنْهُ الْآيَة بعد الْآيَة من سُورَة لُقْمَان والذاريات

আমরা নবী (সা) এর পিছনে যোহরের নামায পড়তাম। তখন আমরা তার থেকে সূরা লুকমান ও যারিয়াতের কোন কোন আয়াত শুনতে পেতাম।

الم (1) تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيمِ (2) هُدًى وَرَحْمَةً لِلْمُحْسِنِينَ (3) الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ (4) أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (5) وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ (6)

১.আলিফ-লাম-মীম। ২.এগুলো প্রজ্ঞাময় কিতাবের আয়াত। ৩.হিদায়াত ও রহমত সৎকর্মপরায়ণদের জন্য। ৪.যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখিরাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। ৫.এসব লোকই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং এরাই সফলকাম। ৬.মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে (মানুষকে) বিচ্যুত করার জন্য  অসার বাক্য ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহপ্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।

ইমাম বায়হাকী (রহ) শুআবুল ইমানে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে وَمن النَّاس من يَشْتَرِي لَهو الحَدِيث এর ব্যাপারে বর্ণনা করেন যে, ‘লাহওয়াল হাদীস’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বাতিল কথাবার্তা। আর এমন করত হারেস বিন আলকামা। সে অনারবদের কিচ্ছা-কাহিনী এবং তাদের কল্প-কাহিনীসমৃদ্ধ গ্রন্থাদি ক্রয় করে। সে হীরা ও শামের (অধিপতিদের কাহিনী সম্বলিত) কিতাবাদি লিখত এবং কুরআনকে অস্বীকার করত। সে কুরআন থেকে বিমুখ হয় এবং ইমান আনয়ন করা থেকে বিরত থাকে। 

ইমাম ফিরইয়াবী, ইবনে জারির, ইবনে মুনযির, ইবনে আবি হাতিম হযরত মুজাহিদ (রহ) ويتخذها هزوا এর তাফসীর বর্ণনা করেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পথের উপহাস করা।

ইমাম যুআইবির হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াত নযর বিন হারিসের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। সে একজন গায়িকা মেয়ে ক্রয় করে রেখেছিল। যখনই সে কারো ব্যাপারে শুনত যে, সে ইসলাম গ্রহণ করার চিন্তা করছে, তখনই সে তাকে তার ক্রয়কৃত মেয়েটির কাছে পাঠিয়ে দিতেন। আর মেয়েটিকে বলত, তাকে খাবার খাওয়াও, মদ পান করাও আর গান-বাদ্য শোনাও। আরো বলত যে, এটা তার থেকে উত্তম, যার দিকে মুহাম্মদ (সা) দাওয়াত প্রদান করে। যেমন নামায রোযা এবং এটা যে, তুমি জিহাদ কর। তখন এই আয়াত নাযিল হয়।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) যাম্মুল মালাহীতে এবং ইবনে মিরদুইয়া (রহ) হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

ان الله حرم الْقَيْنَة وَبَيْعهَا وَثمنهَا وَتَعْلِيمهَا وَالِاسْتِمَاع إِلَيْهَا

আল্লাহ তাআলা গায়িকা-নর্তকী, তার কেনা-বেচা, তার মূল্য, তার শিক্ষা এবং তা শ্রবণ করা হারাম ঘোষণা করেছেন।

অতঃপর তিনি উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন।

ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে,

{وَمن النَّاس من يَشْتَرِي لَهو الحَدِيث} قَالَ: هُوَ الْغناء وأشباهه

এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গান-বাজনা এবং এই জাতীয় বিষয়।

ইমাম ইবনে আসাকীর হযরত মাকহুল (রা) থেকে এর তাফসীর বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ

الْجَوَارِي الضاربات

এমন মেয়ে বা নর্তকী যে গান গায়।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ, ইবনে আবিদ দুনইয়া, ইবনে জারির, ইবনে মুনযির, হাকিম আর তিনি একে সহিহ বলেছেন এবং বায়হাকী (রহ) শুআবুল ইমানে হযরত আবুস সাহবা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) কে এই আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন-

هُوَ – وَالله – الْغناء

আল্লাহর শপথ! এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গান।

ইমাম ফিরইয়াবি, সাঈদ ইবনে মানসূর, ইবনে আবিদ দুনইয়া, ইবনে জারির এবং ইবনে মুনযির হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে এর তাফসীর বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হলো-

الْغناء وكل لعب لَهو

গান গাওয়া এবং সবধরণের খেল-তামাশা।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে-

الْغناء ينْبت النِّفَاق فِي الْقلب كَمَا ينْبت المَاء الزَّرْع وَالذكر ينْبت الإِيمان فِي الْقلب كَمَا ينْبت المَاء الزَّرْع

গান বাজনা অন্তরে নিফাক বা কপটতা এমনভাবে সৃষ্টি করে, যেভাবে পানি ঘাস উৎপাদন করে। আর যিকির অন্তরে ইমান এমনভাবে সৃষ্টি করে যেভাবে পানি ঘাস উৎপাদন করে।  

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) ইবরাহিম (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, (পূর্বসূরী নেক) লোকেরা বলতেন যে,

الْغناء ينْبت النِّفَاق فِي الْقلب

গান অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া এবং ইমাম বায়হাকী (রহ) শুআবুল ইমানে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে-

إِذا ركب الرجل الدَّابَّة وَلم يسم ردفه شَيْطَان فَقَالَ: تغنه فَإِن كَانَ لَا يحسن قَالَ لَهُ: تمنه

যখন কোন ব্যক্তি বাহনে উঠে বিসমিল্লাহ না বলে, তখন শয়তান তার পিছনে বসে যায়। আর বলে কিছু গান গাও। যদি সে গাইতে না পারে তবে বলে, তার আশা কর।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া এবং ইমাম বায়হাকী (রহ), শা’বী (রহ) থেকে আর তিনি কাসিম বিন মুহাম্মদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাকে গান গাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন- আমি তোমাকে এর থেকে নিষেধ করি এবং তোমার জন্য তা অপছন্দ করি। প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করল, তা কি হারাম? তিনি বললেন, ভাতিজা! যখন আল্লাহ তাআলা হক ও বাতিলকে পৃথক করে দিয়েছেন, তবে এ দুটির মধ্যে গানকে কোথায় রাখা যায়?

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া এবং ইমাম বায়হাকী (রহ) শা’বী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

لعن الْمُغنِي والمغنى لَهُ

যে গান গায় আর যার জন্য গান গাওয়া হয়, উভয়ের প্রতি আল্লাহর লা’নত।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া এবং ইমাম বায়হাকী (রহ) হযরত ফুযায়ল ইবনে আয়ায (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

الْغناء رقية الزِّنَا

গান বাদ্য যিনা ব্যভিচার ও অশ্লিল কর্মকাণ্ডের মন্ত্র।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া এবং ইমাম বায়হাকী (রহ) হযরত আবু উসমান লাইস থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

يَا بني أُميَّة إيَّاكُمْ والغناء فَإِنَّهُ ينقص الْحيَاء وَيزِيد فِي الشَّهْوَة ويهدم الْمُرُوءَة وَإنَّهُ لينوب عَن الْخمر وَيفْعل مَا يفعل السكر فَإِن كُنْتُم لابد فاعلين فجنبوه النِّسَاء فَإِن الْغناء دَاعِيَة الزِّنَا

 হে বনু উমাইয়া! গান-বাদ্য থেকে বাঁচ, কেননা তা লজ্জা-শরম নষ্ট করে দেয়, কামনা-বাসনাকে বাড়িয়ে দেয়। ভাব-মর্যাদাকে নামিয়ে দেয়। এটি মদ ও মাদকের সমতুল্য। এটি তাই করে নেশা-পানি যা করে। আর এরপরেও যদি তোমরা এর মধ্যে লিপ্ত থাক। তবে নারীদেরকে এর থেকে দূরে রাখ। কেননা গান-বাদ্য অশ্লিলতা ও বদকারীকে আহ্বান করে।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) হযরত রাফে বিন হাফস মাদানী থেকে বর্ণনা করেন-

أَربع لَا ينظر الله إلَيْهِنَّ يَوْم الْقِيَامَة الساحرة والنائحة والمغنية وَالْمَرْأَة مَعَ الْمَرْأَة

وَقَالَ: من أدْرك ذَلِك الزَّمَان فَأولى بِهِ طول الْحزن

চার ব্যক্তি এমন যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টি দিবেন না। তারা হলো- যাদুকারিনী মহিলা, বিলাপকারী মহিলা, গায়িকা মহিলা আর ঐ মহিলা যে অপর মহিলার সাথে কাম চরিতার্থ করে। আর বলেন, যে এমন যুগ পেয়েছে তার জন্য দীর্ঘ শোক উপযুক্ত।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রা) থেকে বর্ণনা করেন-

مَا قدّست أمة فِيهَا البربط

ঐ উম্মত পবিত্র হতে পারবে না, যাদের মধ্যে সারিঙ্গা আছে।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন-

صوتان ملعونان مزمار عِنْد نَغمَة وَرَنَّة عِنْد مُصِيبَة

দুটি আওয়ায অভিশপ্ত। গান-বাজনায় বাঁশির শব্দ এবং বিপদ-মুসিবতে হা-হুতাশের শব্দ। 

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন-

أَخبث الْكسْب كسب الزمارة

সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপার্জন হলো বাঁশি বাজানোর উপার্জন।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া এবং ইমাম বায়হাকী (রহ) নাফে (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি এক পথে হযরত ইবনে উমর (রা) এর সাথে চলছিলাম। এমন সময় তিনি এক রাখালের বাঁশি বাজানোর আওয়ায শুনতে পেলেন। তখন তিনি কানের ভিতর আঙ্গুল দিয়ে এক পাশে সরে গেলেন। এরপর বারবার বলতে লাগলেন, হে নাফে! এখনও কি আওয়ায শোনা যাচ্ছে। আমি বললাম, না। অতঃপর তিনি কান থেকে তার উভয় আঙ্গুল বের করে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে এমন করতে দেখেছি।

ইমাম ইবনে মিরদুইয়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এই আয়াতের ব্যাপারে শুনেছেন যে, এর অর্থ হলো-

إِنَّمَا ذَلِك شِرَاء الرجل اللّعب وَالْبَاطِل

কোন ব্যক্তির খেল-তামাশার বস্তু ও অনর্থক বিষয়াবলী ক্রয় করা।

চলবে ইনশাআল্লাহ

وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِ آيَاتُنَا وَلَّى مُسْتَكْبِرًا كَأَنْ لَمْ يَسْمَعْهَا كَأَنَّ فِي أُذُنَيْهِ وَقْرًا فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (7)

৭.যখন তাদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তারা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন তারা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন তাদের কান দুটি বধির। সুতরাং তাদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) হযরত কাতাদাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। এর অর্থ হলো, যখন তাদের নিকট আমার আয়াত পাঠ করে শোনানো হয় তখন তারা তা মিথ্যা সাব্যস্ত করত মুখ ফিরিয়ে নেয়।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتُ النَّعِيمِ (8) خَالِدِينَ فِيهَا وَعْدَ اللَّهِ حَقًّا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (9) خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَأَلْقَى فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيمٍ (10)

৮.যারা ঈমান আনে ও নেককাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত- জান্নাতে নায়ীম। ৯.সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। ১০.তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জন্তু। আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, অতঃপর তাতে উদগত করেছি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি।

ইমাম ইবনে আবি হাতিম হযরত মালিক ইবনে দীনার (রহ) থেকে বর্ণনা করেন- জান্নাতুল ফিরদাউস ও আদনের মাঝখানে জান্নাতে নায়ীম অবস্থিত। তার মধ্যে এমন নারী আছে যাকে জান্নাতের গোলাপ ফুল থেকে বানানো হয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, সেখানে কারা বসবাস করবে? তিনি বললেন, সেখানে বসবাস করবে তারা, যারা কখনো গুনাহ্‌র ইচ্ছা করে অতঃপর আল্লাহর বড়ত্বের কথা চিন্তা করে তাকে ভয় করে তা করা থেকে বিরত থাকে।

هَذَا خَلْقُ اللَّهِ فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ بَلِ الظَّالِمُونَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (11)

১১.এটা আল্লাহর সৃষ্টি, অতঃপর তিনি ব্যতীত অন্যেরা যা সৃষ্টি করেছে, তা আমাকে দেখাও। বরং যালিমরা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে।

ইমাম ইবনে জারির এবং ইবনে আবি হাতিম হযরত কাতাদাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং এর মধ্যে যেসব প্রাণী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে আর যা কিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে তার সব সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা। অতএব আমাকে দেখাও তো ঐ সব মূর্তিরা কি সৃষ্টি করেছে?

চলবে ইনশাআল্লাহ

وَلَقَدْ آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ وَمَنْ يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ (12) وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ (13)

১২.আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম। (আর বলেছিলাম, আল্লাহর নিআমতের জন্য) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যানের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।

১৩.যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলেছিল, হে বৎস! আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় শির্‌ক অনেক বড় যুলম।

ইমাম ইবনে মারদুবিয়া হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তোমরা কি জান লুকমান কে ছিলেন? সাহাবীগণ আরয করলেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তিনি একজন হাবশী (নিগ্রো) ছিলেন।

ইমাম ইবনে আসাকির হযরত আব্দুর রহমান বিন ইয়াযিদ থেকে, তিনি হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলূল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

سَادَات السودَان أَرْبَعَة لُقْمَان الحبشي وَالنَّجَاشِي وبلال وَمهجع

হাবশীদের সরদান চারজন। লুকমান (আ), নাজ্জাশী (রা), বিলাল (রা) এবং মাহজা (রা)।

ইমাম ইবনে জারির, ইবনে মুনযির এবং ইবনে আবি হাতিম হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়িব (রহ) থেকে বর্ণনা করেন- লুকমান (আ) মিসরের হাবশীদের মধ্যে ছিলেন। তার ঠোঁট ছিল পুরু। আল্লাহ তাআলা তাকে হিকমত দান করেছিলেন, তবে নুবুওয়াত দান করেন নি।

ইমাম ইবনে জারির হযরত আব্দুর রহমান ইবনে হারমালা থেকে বর্ণনা করেন। কয়েকজন হাবশী হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়িব (রহ) এর নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করার জন্য আসে। তখন তিনি তাদেরকে বললেন- হাবশী হওয়ার জন্য তোমরা দুঃখ করো না। নিঃসন্দেহে মানুষের মধ্যে উত্তম মানুষ হলো তিনজন হাবশী- হযরত বিলাল (রা), মাহজা (রা) যিনি উমর (রা) এর গুলাম ছিলেন। আর লুকমান (আ)। তিনি ছিলেন কালো, নাব্বী এবং পুরু ঠোঁটের অধিকারী ।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ এবং ইবনে মুনযির হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে-

كَانَ لُقْمَان عَلَيْهِ السَّلَام عبد أسود

হযরত লুকমান (আ) হাবশী গুলাম ছিলেন।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ, আহমদ কিতাবুয যুহুদে, ইবনে জারির, ইবনে মুনযির এবং ইবনে আবি হাতিম- হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন-  

كَانَ لُقْمَان عَلَيْهِ السَّلَام عبدا حَبَشِيًّا غليظ الشفتين مصفح الْقَدَمَيْنِ قَاضِيا لبني إِسْرَائِيل

হযরত লুকমান (আ) হাবশী গুলাম ছিলেন। ঠোঁট মোটা ও চেপ্টা পা বিশিষ্ট ছিলেন। আর বনী ইসরাইলের কাযী ছিলেন।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ, আহমদ কিতাবুয যুহুদে, ইবনে মুনযির- হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়িব (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

أَن لُقْمَان عَلَيْهِ السَّلَام كَانَ خياطاً

হযরত লুকমান (আ) দর্জী ছিলেন।

ইমাম ইবনে ইবনে মুনযির (রহ) হযরত ইকরিমা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার মালিকের সবচেয়ে প্রিয় গুলাম ছিলেন। তার প্রথম যে হিকমতটি প্রকাশ পায় তা হলো একবার তিনি তার মালিকের সাথে ছিলেন। আর তার মালিক বাথরুমে গেল এবং অনেক সময় সেখানে বসে রইল। লুকমান (আ) তার মালিককে আওয়ায দিয়ে বললেন- প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য দীর্ঘ সময় পায়খানায় বসে থাকলে চিত্ত খারাপ হয়ে যায়, অর্শ্বরোগ দেখা দেয় এবং মস্তিষ্ক উষ্ণ হয়। অল্প সময়ে কাজ সেরে বের হয়ে আসুন। তার মালিক বাহিরে এসে তার কথা লিখে বাগানে টানিয়ে দিলেন।   

 ইমাম ইবনে মারদুবিয়া হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে وَلَقَد آتَيْنَا لُقْمَان الْحِكْمَة এর তাফসীরে বর্ণনা করেন যে-

يَعْنِي الْعقل والفهم والفطنة من غير نبوّة

হিকমত অর্থ হলো আকল, বোধশক্তি এবং মেধা- নুবুওয়াত নয়।

ইমাম ফিরইয়াবি, ইমাম আহমদ যুহুদে, ইবনে জারির, ইবনে মুনযির এবং ইবনে আবি হাতিম- হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে وَلَقَد آتَيْنَا لُقْمَان الْحِكْمَةএর তাফসীরে বর্ণনা করেন- হিকমত অর্থ হলো-

الْعقل وَالْفِقْه والاصابة فِي القَوْل فِي نبوّه

আকল, ফিকহ এবং কথায় যথার্থতা- নুবুওয়াত নয়।

ইমাম ইবনে আবি হাতিম হযরত কাতাদাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তাআলা হযরত  লুকমান (আ)-কে হিকমত অথবা নুবুওয়াত গ্রহণের ইখতিয়ার দান করেন। তিনি হিকমত পছন্দ করেন। যখন তিনি শুয়ে ছিলেন তখন জিবরাইল (আ) এসে তার উপর হিকমত ঢেলে দিলেন। তখন থেকে তিনি হিকমত ও প্রজ্ঞার কথা বলতে থাকেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি নুবুওয়াতের উপর হিকমতকে কেন প্রাধান্য দিলেন, যেখানে আপনার প্রতিপালক আপনাকে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন যে, আল্লাহ তাআলা যদি আমাকে নুবুওয়াতের আদেশ করতেন তবে আমি তার সফলতার আশা করতাম এবং এই আশা করতাম যে, এই দায়িত্ব পালন করতে পারব।  কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন। তাই আমি ভয় করেছি যে, হয়তো আমি এই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হব না। অপরদিকে হিকমত আমার বেশী পছন্দ ছিল।

ইমাম ইবনে আবি হাতিম হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, লুকমান (আ) কি নবী ছিলেন? তিনি বললেন-

لَا لم يُوح إِلَيْهِ وَكَانَ رجلا صَالحا

না, তার প্রতি ওহি প্রেরণ করা হয় নি। বরং তিনি একজন নেক মানুষ ছিলেন।

ইমাম ইবনে জারির এবং ইবনে আবি হাতিম হযরত ইকরিমা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

كَانَ لُقْمَان عَلَيْهِ السَّلَام نَبيا

হযরত লুকমান (আ) নবী ছিলেন।

ইমাম ইবনে আবি হাতিম হযরত লায়স (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

كَانَت حِكْمَة لُقْمَان عَلَيْهِ السَّلَام نبوّة

লুকমান (আ) এর হিকমত ছিল নুবুওয়াত।

ইমাম ইবনে জারির হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে-

كَانَ لُقْمَان عَلَيْهِ السَّلَام رجلا صَالحا وَلم يكن نَبيا

লুকমান (আ) একজন নেক লোক ছিলেন, নবী ছিলেন না।

ইমাম তাবরানী, রামাহুরমুযযী তার ‘আমসালে’ যয়ীফ সনদে হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

يَا بني عَلَيْك بمجالس الْعلمَاء واستمع كَلَام الْحُكَمَاء فَإِن الله يحي الْقلب الْمَيِّت بِنور الْحِكْمَة كَمَا تحيا الأَرْض الْميتَة بوابل الْمَطَر

লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন, বৎস! আলিমদের মজলিসে বস এবং প্রজ্ঞাবানদের কথা শুন। কেননা আল্লাহ তাআলা হিকমতের নূর বা প্রজ্ঞার আলো দ্বারা মৃত অন্তরকে জীবিত করেন। যেভাবে মৃত যমীন বৃষ্টির বড় বড় ফোটার দ্বারা সতেজতা লাভ করে।

ইমাম ইবনে আবি হাতিম হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি লুকমান (আ) এর আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন- তাকে যা দান করা হয়েছে তা পরিবার-পরিজন, মাল-সম্পদ, বংশ গৌরব বা কোন স্বভাবের কারণে দান করা হয়নি। বরং তিনি ছিলেন একজন দৃঢ়প্রত্যয়ী, নিশ্চুপ, গভীর চিন্তা-ফিকিরকারী এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি দিনের বেলা কখনও ঘুমাতেন না। তাকে কেউ কখনো দেখেনি থুতু ফেলতে, কাশি দিতে, প্রস্রাব-পায়খানা করতে, গোসল করতে, বাজে কাজ-কর্ম ও হাসি-মজাক করতে।

তিনি গভীর কোন জ্ঞানের কথা বা কেউ জিজ্ঞাসা করা না পর্যন্ত কোন কথার পূণরাবৃত্তি করতেন না। তিনি বিবাহ করেছিলেন এবং তার সন্তান-সন্ততীও হয়েছিল। সন্তানের মৃত্যুতে তিনি কাঁদেন নি। তিনি রাজা-বাদশাহ ও আমীর-উমরাদের নিকট যেতেন তাদের অবস্থা দেখে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য। এসব কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে যা প্রদান করার প্রদান করেছেন।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) কিতাবুস সুমত-এ এবং ইবনে জারির হযরত উমর বিন কায়স (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি লুকমান (আ) এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তার পাশে লোকজন উপস্থিত ছিলেন। লোকটি বলল, আপনি কি অমুক ব্যক্তির গুলাম ছিলেন না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলল, আপনি কি অমুক অমুক পাহাড়ে বকরী চড়াতেন না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলল, আমি যা দেখছি তা অর্থাৎ এই মর্যাদা আপনি কিভাবে লাভ করলেন? তিনি বললেন-

تقوى الله وَصدق الحَدِيث وَأَدَاء الْأَمَانَة وَطول السُّكُوت عَمَّا لَا يعنيني

তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি, সত্য বলা, আমনতদারী, দীর্ঘ নীরবতা ও বেহুদা কথা বর্জন করার দ্বারা।

ইমাম আহমদ, হাকীম তিরমিযী, হাকীম তার আল কুনাতে এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে- হযরত ইবনে উমর (রা) সূত্রে নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেন। মহামতি লুকমান হাকীম বলতেন-

إِن الله إِذا استودع شَيْئا حفظه

যখন আল্লাহ তাআলার নিকট কোন কিছু সোপর্দ করা হয়, তখন তিনি তার হেফাযত করেন।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ)- হযরত ফযল রাক্কাশী (রহ) থেকে ‘না’তুল খায়িফীন’ এ বর্ণনা করেন-

مَا زَالَ لُقْمَان يعظ ابْنه حَتَّى انشقت مرارته فَمَاتَ

 লুকমান (আ) তার ছেলেকে বরারব উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি তার পিত্ত ফেটে গেল আর মারা গেল।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ)- হযরত হাফস বিন উমর কিন্দী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার পার্শ্বে একটি কঙ্করের থলি রাখতেন। তিনি তার ছেলেকে নসীহত করতেন আর একটি দানা ফেলতেন। সেগুলো যখন শেষ হয়ে গেল তখন তার ছেলেকে বললেন-

يَا بني لقد وعظتك موعظة لَو وعظتها جبلا لتفطر فتفطر ابْنه

বৎস! আমি তোমাকে যে নসীহত করেছি তা যদি কোন পাহাড়কে করতাম তবে তা ফেটে যেত। তখন তার ছেলেও ফেটে গেল।

[অর্থাৎ অনুতাপ  ও অনুশোচনায় জর্জরিত হয়ে গেল।]

ইমাম বায়হাকী (রহ) শুআবুল ইমানে হযরত আউন ইবনে আব্দুল্লাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني ارج الله رَجَاء لَا تأمن فِيهِ مكره وخف الله مَخَافَة لَا تيأس بهَا من رَحمته فَقَالَ: يَا أبتاه وَكَيف أَسْتَطِيع ذَلِك وَإِنَّمَا لي قلب وَاحِد قَالَ: الْمُؤمن كَذَا لَهُ قلبان قلب يَرْجُو بِهِ وقلب يخَاف بِهِ

বৎস! আল্লাহ তাআলার প্রতি আশা কায়েম রাখ, তবে এমন আশা নয় যা তোমাকে আল্লাহর সুক্ষ্ম কৌশল থেকে নির্ভিক করে দেবে। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবে এমন ভয় নয় যা তোমাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে দেবে।

তার ছেলে জিজ্ঞাসা করল, আব্বাজান! আমি কিভাবে তা করতে পারি, যেহেতু আমার একটাই অন্তর? লুকমান (আ) বললেন, মুমীনের এমনই হওয়া উচিত- যেন তার দুটি অন্তর। একটি মন দিয়ে সে আল্লাহর প্রতি আশা পোষণ করে, আর অপরটি দিয়ে আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।

ইমাম বায়হাকী (রহ) সুলায়মান তায়মী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেন- বৎস! অধিকাংশ সময় এই কথা দুআ কর-

رب اغْفِر لي

হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা কর।

কেননা আল্লাহ তাআলার নিকট কিছু সময় এমন আছে, যখন তিনি কোন প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা ফিরিয়ে দেন না।

ইমাম বায়হাকী  এবং সাবুনী (রহ) তার ‘মিআতাইনে’ হযরত ইমরান বিন সুলায়মান থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, হযরত লুকমান (আ) তার  তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني حملت الْحِجَارَة وَالْحَدِيد وَالْحمل الثقيل فَلم أحمل شَيْئا أثقل من جَار السوء يَا بني إِنِّي قد ذقت المر كُله فَلم أذق شَيْئا أَمر من الْفقر

বৎস! আমি তীর, লোহা এবং ভারি বোঝা বহন করেছি, তবে মন্দ প্রতিবেশী থেকে ভারি কোন বোঝা উঠাইনি। বৎস! আমি অনেক তিক্ত জিনিসের স্বাদ আস্বাদন করেছি, কিন্তু দারিদ্রতা ও অভাব-অনটনের চেয়ে বেশী তিক্ততা আর কোন কিছুতে দেখিনি।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) ‘কিতাবুল ইয়াকীনে’ হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার তার ছেলেকে বলেছেন- বৎস! আমলকে ইয়াকীনের সাথেই করা যেতে পারে। যার ইয়াকীন দুর্বল হয় তার আমলও দুর্বল হয়। অতএব যখন শয়তান তোমার নিকট সন্দেহ সংশয় নিয়ে আগমন করে, তখন তুমি ইয়াকীন ও ইখলাস দ্বারা তার উপর প্রবল হও। যখন অলসতা ও দুর্বলতার দ্বারা তোমার কাছে আসে, তখন কবর ও কিয়ামতের স্মরণ দ্বারা তার উপর প্রবল হও। আর যখন কামনা-বাসনা নিয়ে তোমার কাছে আসে, তখন তুমি তাকে বল যে, তুমি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে। 

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) ‘কিতাবুত তাকওয়ায়’ হযরত ওয়াহাব (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেন-

يَا بني اتخذ تقوى الله تِجَارَة يأتك الرِّبْح من غير بضَاعَة

বৎস! তুমি তাকওয়াকে ব্যবসারুপে গ্রহণ কর তাহলে পুঁজি ছাড়াই লাভবান হবে।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) ‘কিতাবুর রিযায়’ হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়িব (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার তার ছেলেকে বলেন-

يَا بني لَا ينزلن بك أَمر رضيته أَو كرهته إِلَّا جعلت فِي الضَّمِير مِنْك أَن ذَلِك خير لَك

বৎস! তোমার জীবনে যা ঘটে যায় চাই তুমি তা পছন্দ কর আর নাই কর, এটা মনে বসিয়ে নাও যে,  (হয়তো) এটাই তোমার জন্য ভাল।

ইমাম বায়হাকী (রহ) শুআবুল ইমানে- মালিক (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

لَيْسَ غنى كصحة وَلَا نعيم كطيب نفس

সুস্থতার চেয়ে উত্তম কোন সম্পদ নাই। আর খোশমেজাজ বা মনের খুশির মত কোন নিআমত নাই।

ইমাম বায়হাকী (রহ) শুআবুল ইমানে ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

من كذب ذهب مَاء وَجهه وَمن سَاءَ خلقه كثر غمه وَنقل الصخور من موَاضعهَا أيسر من إفهام من لَا يفهم

 যে মিথ্যা বলে, তার চেহারার উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়। যার চরিত্র খারপ, তার দুঃখ দীর্ঘ হয়ে যায়। কোন প্রান্তরকে স্থানন্তরিত করা তার থেকে সহজ, যাকে কোন কথা বোঝানো হয় অথচ বোঝে না।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ, আহমদ যুহুদে এবং বায়হাকী (রহ) হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন- হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

বৎস! আমি বড় পাথর, লোহা এবং প্রত্যেক ভারি বোঝা বহন করেছি, তবে মন্দ প্রতিবেশী থেকে ভারি কোন বোঝা উঠাইনি। বৎস! আমি সবধরণের তিক্ততা দেখেছি, কিন্তু দারিদ্রতা ও অভাব-অনটনের চেয়ে বেশী তিক্ত আর কিছু দেখিনি। বৎস! মূর্খকে দূত বানিয়ে প্রেরণ করো না। যদি তুমি হাকীমকে না পাও তবে তুমি নিজেই নিজের দূত হও। বৎস! মিথ্যা থেকে বাঁচ! কেননা এটা পাখির গোশতের চেয়েও সুস্বাদু, প্রত্যেক ঐ সামান্য জিনিস থেকে যা মানুষ রান্না করে।

বৎস! জানাযায় উপস্থিত থেকো আর বিবাহের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকো। কেননা জানাযা তোমাকে আখিরাতের স্মরণ করাবে আর বিবাহ-শাদির অনুষ্ঠানাদি তোমাকে দুনিয়ার প্রতি আসক্তি করবে। বৎস! তৃপ্ত অবস্থায় তৃপ্তির আহার করো না। এই খাবার তোমার নিজে খাওয়ার চেয়ে কুকুরকে দিয়ে দেয়া উত্তম। বৎস! এত মিষ্ট হয়ো না যে, তোমাকে গিলে ফেলা হয়। আর এত তিক্ত হয়ো না যে, তোমাকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। 

ইমাম বায়হাকী (রহ) হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني لَا تكونن أعجز من هَذَا الديك الَّذِي يصوّت بالأسحار وَأَنت نَائِم على فراشك

বৎস! তুমি মোরগ থেকে বেশী অক্ষম হয়ো না। মোরগ তো শেষ রাতে উঠে যায় অথচ তুমি বিছানায় শুয়ে থাক।

ইমাম আব্দুল্লাহ (রহ) যাওয়ায়েদে এবং বায়হাকী হযরত উসমান ইবনে যাওয়ায়েদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني لَا تُؤخر التَّوْبَة فَإِن الْمَوْت يَأْتِي بَغْتَة

বৎস! তুমি তওবা করতে বিলম্ব করো না। কেননা মৃত্যু হঠাৎ আগমন করে।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ, আহমদ, বায়হাকী- হযরত সিয়ার বিন হাকাম থেকে বর্ণনা করেন যে, লুকমান (আ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, অপনার হিকমত কি? তিনি বললেন-

لَا أسأَل عَمَّا قد كفيت وَلَا أتكلف مَا لَا يعنيني

প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিষয়ের চাহিদা না করা এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য তাকাল্লুফ বা কষ্ট না করা।

ইমাম আহমদ যুহুদে হযরত আবু উসমান জা’দী থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني لَا ترغب فِي ود الْجَاهِل فَيرى أَنَّك ترْضى عمله وَلَا تهاون بمقت الْحَكِيم فيزهد فِيك

 বৎস! মূর্খদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে আগ্রহী হয়ো না। তাহলে সে মনে করবে যে, তার কর্মে তুমি সন্তুষ্ট। বিজ্ঞ ব্যক্তিদের অসন্তুষ্টিকে তুচ্ছ ভেবো না, তাহলে সে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ, আহমদ যুহুদে হযরত মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসে (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني اتَّقِ الله وَلَا تَرَ النَّاس أَنَّك تخشى الله ليكرموك بذلك وقلبك فَاجر

বৎস! আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। আর তুমি লোকদেরকে এমন দেখিও না যে, তুমি আল্লাহকে ভয় কর, যাতে লোকেরা তোমার সম্মান করে। অথচ তোমার অন্তর গুনাহ ও পাপাচারকারী।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ, আহমদ এবং ইবনে জারির হযরত খালিদ আর রাবিয়ী থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) একজন হাবশী ক্রিতদাস ছিলেন, যিনি কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। একদিন তার মালিক তাকে একটি বকরী জবাই করতে বলেন। তিনি বকরী জবাই করেন। মালিক তাকে বলল, বকরীর দুটি উৎকৃষ্ট অংশ নিয়ে আস। লুকমান (আ) বকরীর জিহ্বা ও হৃৎপিণ্ড নিয়ে আসলেন। মালিক বলল, এর চেয়ে উত্তম কিছু কি ছিল না? লুকমান (আ) বললেন, না। মালিক কিছু সময় নীরব রইলেন। তারপর বললেন, আমার জন্য আরেকটি বকরী যবেহ কর। তিনি যবেহ করলেন। মালিক বলল, এর নিকৃষ্ট দুটি অংশ ফেলে দাও। লুকমান (আ) বকরীর জিহ্বা ও হৃৎপিণ্ড ফেলে দিলেন। তখন তার মালিক বলল, আমি তোমাকে বকরীর ভাল দুটি অংশ আনতে বললাম, তুমি জিহ্বা ও হৃৎপিণ্ড নিয়ে আসলে। আবার নিকৃষ্ট দুটি অংশ ফেলে দিতে বললাম, তুমি তার জিহ্বা ও হৃৎপিণ্ড দুটিই ফেলে দিলে। এর রহস্য কি? তখন লুকমান (আ) বললেন, যখন এই দুটি অঙ্গ পবিত্র থাকে তখন এর চেয়ে উত্তম আর কিছু হয় না। আর যখন এই দুটি খারাপ হয়ে যায় তখন এর চেয়ে নিকৃষ্ট আর কিছু হয় না।   

ইমাম আব্দুল্লাহ ‘যাওয়ায়েদে’ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) বলেছেন-

أَلا أَن يَد الله على أَفْوَاه الْحُكَمَاء

 জেনে রাখ! প্রজ্ঞাবানদের মুখে আল্লাহর হাত থাকে। তিনি যা তৈরী করে দেন তা ব্যতীত তারা কোন কথা বলেন না।

ইমাম আব্দুল্লাহ হযরত সুফিয়ান (রহ) থেকে বর্ণনা করেন- হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني مَا نَدِمت على الصمت قطّ وَإِن كَانَ الْكَلَام من فضَّة كَانَ السُّكُوت من ذهب

বৎস! নীরবতার ব্যাপারে কখনো লজ্জিত হয়ো না। কথা বলা যদি হয় মুক্তার মত, তবে চুপ থাকা হলো স্বর্ণের মত।

ইমাম আহমদ হযরত কাতাদাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন- হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني اعتزل الشَّرّ كَيْمَا يعتزلك فَإِن الشَّرّ للشر خلق

বৎস! তুমি মন্দ থেকে দূরে থাকো তাহলে মন্দও তোমার থেকে দূরে থাকবে। কেননা মন্দকে মন্দের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।

হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- লুকমান (আ) এর হিকমতে এটা লিখা আছি যে-

يَا بني إياك والرغب كل الرغب فَإِن الرغب كل الرغب ينفذ الْقرب من الْقرب وَيتْرك الْحلم مثل الرطب يَا بني إياك وَشدَّة الْغَضَب فَإِن شدَّة الْغَضَب ممحقة لفؤاد الْحَكِيم

বৎস! অতিরিক্ত মাখামাখির সম্পর্ক থেকে বাঁচ। কেননা অতিরিক্ত মাখামাখি নিকটজনকে নৈকট্য থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেয় এবং প্রজ্ঞা ও সহনশীলতাকে ঝেড়ে ফেলে দেয়, যেভাবে তাজা খেজুর গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে। আর অতিরিক্ত ক্রোধ থেকে বাঁচ, কেননা তা প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির অন্তঃকরণ নষ্ট করে দেয়।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ এবং ইমাম আহমদ হযরত উবায়দ বিন উমায়র থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন- বৎস! তুমি নিজের জন্য মজলিস নির্বাচন কর। যখন তুমি এমন মজলিস দেখবে যার মধ্যে আল্লাহর যিকির করা হয় তাকে স্মরণ করা হয়, তখন তুমি তাদের সাথে বস। যদি তুমি জ্ঞানী হও তাহলে তোমার জ্ঞান তোমার উপকার করবে। আর যদি তুমি জ্ঞানী না হও, তাহলে তারা তোমাকে শিক্ষা দেবে। যদি আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহম করতে চান তাহলে তাদের সাথে সাথে তোমারও রহমত লাভ হবে।

আর বৎস! তুমি এমন মজলিসে বস না, যেখানে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় না। যদি তুমি জ্ঞানী হও তাহলে তোমার জ্ঞান তোমার উপকার করবে না। আর যদি তুমি জ্ঞানী না হও, তাহলে তারা তোমার দোষ-ত্রুটিকে আরো বাড়িয়ে দেবে। যদি আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে চান তাহলে তাদের সাথে সাথে তোমার প্রতিও তার অসন্তুষ্টি পৌছবে। হে বৎস! ইমানদারের রক্তপাতকারী শক্তিমান ব্যক্তির প্রতি ক্রোধ ও বিদ্বেষ পোষণ করো না। কারণ তার জন্য এমন ঘাতক রয়েছে, যে মৃত্যুবরণ করবে না।

ইমাম আব্দুল্লাহ যাওয়ায়েদে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন- হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

لَا يَأْكُل طَعَامك إِلَّا الأتقياء وشاور فِي أَمرك الْعلمَاء

 তোমার খাবার যেন মুত্তাকী ছাড়া আর কেউ না খায়। আর তোমার কাজকর্মে জ্ঞানী ব্যক্তিদের পরামর্শ নিও।

ইমাম আহমদ হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, লুকমান (আ) এর হিকমতের কথায এটাও লিখিত আছে যে-

لتكن كلمتك طيبَة وَليكن وهجك بسيطاً تكن أحب إِلَى النَّاس مِمَّن يعطيهم الْعَطاء

তুমি ভাল কথা বলবে এবং হাসিমুখে থাকবে। তাহলে তুমি মানুষের নিকট তাদের চেয়েও বেশী প্রিয় হবে যারা তাদেরকে দান করে।

তাওরাতে লিখিত আছে-

كَمَا تَرحمون تُرحمون

তুমি যেমন দয়া করবে তেমন দয়া পাবে।

হিকমতের কথায় লিখিত আছে-

كَمَا تَزْرَعُونَ تَحْصِدُون

তুমি যেমন বপন করবে তেমন ফসল তুলবে।

হিকমতের কথায় লিখিত আছে-

أحب خَلِيلك وخليل أَبِيك

তুমি তোমার বন্ধু এবং তোমার পিতার বন্ধুকে মহব্বত কর।

ইমাম আহমদ (রহ) হযরত আবু কিলাবাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, লোকদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশী ধৈর্যশীল। তিনি বললেন, এমন ধৈর্য যার পরে কষ্ট দেওয়া হয় না। জিজ্ঞাসা করা হলো, লোকদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী? তিনি বললেন, যে অন্যদের জ্ঞান দ্বারা নিজের জ্ঞান বাড়িয়ে নেয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, লোকদের মধ্যে কে সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, যে ধনী ও অমুখাপেক্ষী। জিজ্ঞাসা করা হলো সম্পদের ধনী? তিনি বললেন, না। বরং ঐ ধনাঢ্যতা- যখন তার কাছে কোন কল্যাণ অনুসন্ধান করা হয় তখন তার মধ্যে তা পাওয়া যায়- ঐ ব্যক্তি নয় যে লোকদের দৃষ্টিতে ধনী।

ইমাম আহমদ (রহ) হযরত সুফিয়ান (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, লোকদের মধ্যে কে বেশী মন্দ? তিনি বললেন-

الَّذِي لَا يُبَالِي أَن يرَاهُ النَّاس مسيئاً

যে ব্যক্তি এই পরোয়া করে না যে লোকেরা তাকে খারাপ মনে করবে।

ইমাম আহমদ (রহ) হযরত মালিক ইবনে দীনার (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। আমি হিকমতের কথায় এটা পেয়েছি যে, আল্লাহ তাআলা তার হাড়কে শীতল করবেন না, যে মানুষের ইযযতের সাথে খেলে (অর্থাৎ তাকে শাস্তি ও চাপের মধ্যে রাখবেন)। আমি তাতে আরও পেয়েছি যে, তুমি যা জান তা আমল না করে, যা জান না তা জানার মধ্যে কোন কল্যাণ নাই। এটি তো সে ব্যক্তির ন্যায়, যে কাঠ সংগ্রহ করে বোঝা বাঁধে। তারপর তা মাথায় তুলে নিতে চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। তারপরও আরো কাঠ সংগ্রহ করে।

ইমাম আহমদ (রহ) হযরত মুহাম্মদ ইবনে জিহাদাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) বলেছেন-

يَأْتِي على النَّاس زمَان لَا تقر فِيهِ عين حَكِيم

লোকদের উপর এমন এক যুগ আসবে, যখন শাসক ও বিচারকের চক্ষু শীতল হবে না।

ইমাম আহমদ (রহ) হযরত সুফিয়ান (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

أَي بني إِن الدُّنْيَا بَحر عميق وَقد غرق فِيهَا نَاس كثير فَاجْعَلْ سفينتك فِيهَا تقوى الله وحشوها الإِيمان بِاللَّه وشراعها التَّوَكُّل على الله لَعَلَّك أَن تنجو وَلَا أَرَاك ناجياً

বৎস! এই দুনিয়া একটি গভীর সমুদ্র, তার মধ্যে বহু লোক নিমজ্জিত হয়ে গেছে। তুমি তাকওয়াকে নৌকা, আল্লাহর প্রতি ইমানকে উপকরণ এবং তাওয়াককুল বা আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতাকে তার পাল বানিয়ে নাও, আশা করা যায় তুমি নাজাত পেয়ে যাবে। আমি তোমাকে নাজাতপ্রাপ্তদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না।

ইমাম আব্দুল্লাহ (রহ) যাওয়াযেদ-এ হযরত আউন ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার  তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني إِنِّي حملت الجندل وَالْحَدِيد فَلم أحمل شَيْئا أثقل من جَار السوء وذقت المرارة كلهَا فَلم أذق أَشد من الْفقر

বৎস! আমি পাথর ও লোহা উঠিয়েছি, তবে আমি মন্দ প্রতিবেশী থেকে ভারি কিছু উঠাইনি। আমি সব ধরণের তিক্ত জিনিসের স্বাদ আস্বাদন করেছি, কিন্তু দারিদ্রতা ও অভাব-অনটনের চেয়ে বেশী তিক্ত আর কিছু দেখিনি।

ইমাম আহমদ হযরত শুরাহবিল বিন মুসলিম থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) বলেন-

أقصر من اللجاجة وَلَا أنطق فِيمَا لَا يعنيني وَلَا أكون مضحاكاً من غير عجب وَلَا مشاء إِلَى غير أرب

আমি ঝগড়া-বিবাদ কম করি অর্থাৎ এড়িয়ে যাই। যে কথায় কোন প্রয়োজন ও উপকারিতা নাই, তা বলি না। আশ্চর্যান্বিত হওয়া ব্যতীত হাসি না। আর উদ্দেশ্যেবিহীন কারো নিকট কোন কথা পৌছাই না।

ইমাম আহমদ আবিল জালদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হিকমতের কথার মধ্যে এটা পড়েছি যে-

من كَانَ لَهُ من نَفسه واعظاً كَانَ لَهُ من الله حَافِظًا وَمن أنصف النَّاس من نَفسه زَاده الله بذلك عزا والذل فِي طَاعَة الله أقرب من التعزز بالمعصية

 যে ব্যক্তি নিজেকে নিজে নসীহতকারী হয়, আল্লাহ তাআলা তার হিফাযতকারী হয়। যে নিজের সাথের লোকদের সাথে ইনসাফ করে, আল্লাহ তার ইযযত-সম্মান বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর আনুগত্যের সাথে নম্রতা অবলম্বন করা গুনাহ ও পাপের সাথে সম্মানিত হওয়ার চেয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের বেশী উপায়।

ইমাম আহমদ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني انْزِلْ نَفسك منزلَة من لَا حَاجَة لَهُ بك ولَا بُد لَك مِنْهُ يَا بني كن كمن لَا يَبْتَغِي محمدة النَّاس وَلَا يكْسب ذمهم فنفسه مِنْهُ فِي عناء وَالنَّاس مِنْهُ فِي رَاحَة

বৎস! তুমি নিজেকে এমন অবস্থানে রাখ যে, কোন কিছুর তোমার প্রয়োজন নাই আর তোমার জন্য এটা ব্যতীত আর কোন উপায় নাই। বৎস! তুমি ঐ লোকের মত হও, যে লোকদের থেকে প্রশংসা আশা করে না, আর না তাদের নিন্দাবাদ অজর্ন করে। বরং তার নফস তার (চাহিদা পূরণের) উপর ক্লান্ত হয় এবং লোক তার থেকে শান্তি পায়।

ইমাম আহমদ হযরত ইবনে আবি ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

أَي بني أَن الْحِكْمَة أجلست الْمَسَاكِين مجَالِس الْمُلُوك

বৎস! হিকমত ও প্রজ্ঞা মিসকীনদেরকে বাদশাহর আসনে বসিয়ে দেয়।

ইমাম আহমদ হযরত মুয়াবিয়া বিন কুররা থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন- বৎস! তুমি নেক লোকদের সাথে বসবে, তাহলে তুমি তাদের সাথে বসে কল্যাণ লাভ করবে। হতে পারে পরিশেষে তাদের প্রতি রহমত নাযিল হবে, আর তাদের সাথে সাথে তোমার কাছেও রহমত পৌছবে। আর তুমি  মন্দ লোকদের সাথে বসবে না, তুমি তাদের সাথে বসে কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। হতে পারে পরিশেষে তাদের প্রতি আযাব নাযিল হবে, তখন তাদের সাথে সাথে তোমার কাছেও শাস্তি পৌছবে।

ইমাম আহমদ হযরত ইবনে আবি নাজিহ থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) বলেছেন-

الصمت حكم وَقَلِيل فَاعله

নীরবতা হলো হিকমত ও প্রজ্ঞার মধ্য থেকে অথচ এর আমলকারী কম।

তখন হযরত তাউস (রহ) বললেন, হে ইবনে আবি নাজিহ! যে কথা বলে আর আল্লাহকে ভয়কারী হয়, সে ঐ লোক হতে উত্তম যে নীরব থাকে ও আল্লাহকে ভয়কারী হয়।

ইমাম আহমদ হযরত আউন (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني إِذا انْتَهَيْت إِلَى نَادِي قوم فَارْمِهِمْ بِسَهْم الإِسلام ثمَّ اجْلِسْ فِي ناحيتهم فَإِن أفاضوا فِي ذكر الله فاجلس مَعَهم وَإِن أفاضوا فِي غير ذَلِك فتحول عَنْهُم

বৎস! যখন তুমি কোন মজলিসে যাবে তখন তাদেরকে সালাম করবে অতঃপর একপাশে বসে যাবে। যদি দেখ যে, তারা আল্লাহর যিকির ও স্মরণ দ্বারা মজলিস শুরু করে, তাহলে সেখানে বসো। আর যদি দেখ যে, অন্য কোন কাজ দ্বারা মজলিস শুরু করছে তাহলে সেখান থেকে উঠে যেয়ো।

ইমাম আব্দুল্লাহ যাওয়ায়েদ-এ আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। একবার হযরত লুকমান (আ) সফর থেকে ফিরে আসার সময় পথে একটি বালকের সাথে তার দেখা হয়। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার বাবার কি খবর? সে বলল, আপনার বাবা মারা গেছেন। তিনি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ! আমি আমার মুআমালা বা বিষয়াবলীর নিজেই মালিক হয়ে গেলাম। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, আমার মায়ের কি খবর? সে বলল, আপনার মা মারা গেছেন। তিনি বললেন, আমার দুঃখ দূর হয়ে গেল। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, আমার স্ত্রীর কি খবর? সে বলল, আপনার স্ত্রীও মারা গেছেন। তিনি বললেন, আমি আবার বিবাহ করে নেব। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, আমার বোনের কি খবর? সে বলল, আপনার বোন মারা গেছেন। তিনি বললেন, সে আমার ইযযতের উপর পর্দা ফেলে দিয়েছে। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, আমার ভাইয়ের কি খবর? সে বলল, আপনার ভাই মারা গেছেন। তিনি বললেন, তবে তো আমার কোমড় ভেঙ্গে গেল।

আব্দুল্লাহ ইবনে কায়েস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني امْتنع مِمَّا يخرج من فِيك فَإنَّك مَا سكت سَالم وَإِنَّمَا يَنْبَغِي لَك من القَوْل مَا ينفعك

তোমার মুখ থেকে যা বের হয় তা থেকে বিরত থাক। কেননা যতক্ষণ তুমি চুপ থাকবে নিরাপদ থাকবে। তোমার ঐ কথাই বলা উচিত যা তোমার জন্য উপকারী হয়।

ইমাম আহমদ মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসে (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني لَا تتعلم مَا لَا تعلم حَتَّى تعْمل بِمَا تعلم

 বৎস! তুমি যা জান না, তা শিক্ষা করো না- যে পর্যন্ত না তুমি যা জান তার উপর আমল না কর।

ইমাম আহমদ বকর বিন মুযানী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) বলেছেন-

ضرب الْوَالِد لوَلَده كَالْمَاءِ للزَّرْع

পিতার জন্য পুত্রের শাসন এমন, যেমন ক্ষেতের জন্য পানি।

ইমাম ক্বালী তার ‘আমালীতে’ হযরত উতবা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, হযরত লুকমান (আ) বলেছেন-

ثَلَاثَة لَا يعْرفُونَ إِلَّا ثَلَاثَة مَوَاطِن الْحَلِيم عِنْد الْغَضَب والشجاع عِنْد الْحَرْب وأخوك عِنْد حَاجَتك إِلَيْهِ

তিনটি বিষয় তার যথাসময়েই চেনা যায়। ১. সহনশীলতা ক্রোধের সময়। ২. বীরত্ব মুকাবিলার সময় এবং ৩. ভাই-বন্ধুকে তোমার প্রয়োজনের সময়।

ইমাম ওকী ‘আল-গারার’-এ হযরত হানযালা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني إِذا أردْت أَن تؤاخي رجلا فاغضبه قبل ذَلِك فَإِن أنصفك عِنْد غَضَبه وَإِلَّا فاحذره

বৎস! যখন তুমি কারো সাথে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক কায়েম করতে চাও, তাহলে আগে তাকে রাগান্বিত কর। যদি রাগের সময় তোমার সাথে সে ইনসাফ করে, তবে তো ঠিক আছে। আর না হয় তার থেকে দূরে থাক।

ইমাম ইবনে মুবারক (রহ) হযরত ইবনে আবি মুলাইকা থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) দুআ করতেন-

اللَّهُمَّ لَا تجْعَل أَصْحَابِي الغافلين إِذا ذكرتك لم يعينوني وَإِذا نسيتك لم يذكروني وَإِذا أمرت لم يطيعوني وَإِن صمت أحزنوني

হে আল্লাহ! আমার বন্ধুকে গাফিল বানিও না, যে আমাকে তোমার যিকির ও স্মরণের জন্য সাহায্য করবে না। তোমাকে ভুলে গেলে স্মরণ করাবে না। আমি যখন কোন কিছু করতে বলব তখন তা মান্য করবে না। আর যখন আমি নীরব থাকি তখন সে আমাকে বিষন্ণ করে দেয়।

ইমাম হাকীম তিরমিযী মু’তামার থেকে আর তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেন-

يَا بني عود لسَانك أَن يَقُول: اللَّهُمَّ اغْفِر لي فَإِن لله سَاعَة لَا يرد فِيهَا الدُّعَاء

বৎস! তুমি তোমার যবানকে এই দুআর উপর অভ্যস্থ কর- اللَّهُمَّ اغْفِر لي হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর। কেননা আল্লাহ তাআলার নিকট কিছু সময় এমন আছে, যখন তিনি কোন প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা ফিরিয়ে দেন না।

ইমাম খতীব (বাগদাদী) হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন- হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني إياك والدَيْن فَإِنَّهُ ذُلُّ النهارِ هَمُّ الليلِ

বৎস! ঋণ করা থেকে বাঁচ। কেননা এটা দিনের বেলা অপমানের কারণ আর রাতের বেলা চিন্তার কারণ।

ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) এবং বায়হাকী (রহ) শুআবুল- ইমানে হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত লুকমান (আ) তার ছেলেকে বলেছেন-

يَا بني ارج الله رَجَاء لَا يجرئك على مَعْصِيَته وخف الله خوفًا لَا يؤيسك من رَحمته

বৎস! আল্লাহ তাআলার প্রতি এমন আশা কায়েম রাখ, যা তোমাকে পাপ কাজ থেকে নির্ভিক করে দেবে না। আর আল্লাহকে এমন ভয় কর, যা তোমাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে দেবে না।

ইমাম আব্দুর রাযযাক হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। লুকমান (আ) বলেছেন-

إِذا جَاءَك الرجل وَقد سَقَطت عَيناهُ فَلَا تقض لَهُ حَتَّى يَأْتِي خَصمه قَالَ: يَقُول لَعَلَّه أَن يَأْتِي وَقد نزع أَرْبَعَة أعين

কোন ব্যক্তি যখন ক্রন্দনরত অবস্থায় তোমার নিকট (বিচারের জন্য) আসে, তখন তুমি তার পক্ষেই ফয়সালা করে দিও না- যে পর্যন্ত না তার প্রতিপক্ষ আসে। হতে পারে যে, সে তার থেকে দ্বিগুণ অশ্রু ঝড়াচ্ছে।

ইমাম আব্দুল্লাহ যাওয়ায়েদ-এ হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

يَا ابْن آدم خلقتك وَتعبد غَيْرِي وَتَدْعُو إِلَيّ وتفر مني وتذكرني وتنساني هَذَا أظلم ظلم فِي الأَرْض ثمَّ يَتْلُو الْحسن {إِن الشّرك لظلم عَظِيم}

 হে বনী আদম! আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি অথচ তুমি অন্যের ইবাদত কর। তুমি মানুষকে আমার দিকে ডাক অথচ তুমি নিজে দূরে সরে যাও। তুমি আমাকে স্মরণ কর আবার আমাকে ভুলে যাও। এটা যমীনের মধ্যে বড় যুলুম। অতঃপর হাসান (রহ) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন-

إِن الشّرك لظلم عَظِيم

নিশ্চয়ই শিরক খুব বড় যুলুম।

চলবে ইনশাআল্লাহ
 
Top