রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা রহমত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভালো আমল দেখি তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো। (ইমাম বাযযার রহঃ আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৮ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১৯২৫, জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহঃ জামিউস সগীরঃ ১/২৮২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩৭৭০-৭১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭ পৃষ্ঠা,...)

হযরত সালমা রা. বলেন- ‘‘আমি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন উম্মে সালামাহ রা. এঁর নিকট গিয়েছিলাম এবং দেখলাম যে তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, একটু আগে আমি রাসূল ﷺ কে স্বপ্নে দেখলাম যে তাঁর মাথা মুবারকে এবং দাঁড়ি মুবারকে ধুলা বালি লেগে আছে। অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, এই মাত্র আমি হুসাইনকে কতল করার স্থানে উপস্থিত ছিলাম।’’
(সূনান আত তিরমিজি ৩৭৭১)

ইয়াযীদ আল ফারিসী (রাঃ) বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ কে স্বপ্নে দেখলাম। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখনও (দুনিয়ায়) জীবিত ছিলেন। আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে স্বপ্নে দেখেছি। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম নয়। যে আমাকে স্বপ্নে দেখে, সে প্রকৃতপক্ষেই আমাকেই দেখে। [ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন], তুমি যাকে স্বপ্নে দেখেছো তাঁর কিছু বিবরণ দিতে পার? আমি বললাম, হ্যাঁ। তাঁর দেহাকৃতি মধ্যম আকারের, গায়ের রং গৌর, তাতে সাদা অংশ বেশী। সুরমা মাখা চোখ, প্রফুল্ল মুখ, হাস্যোজ্জল চেহারা, মুখভর্তি দাড়ি যা বুক পর্যন্ত পরিপূর্ণ ছিল। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি যদি জাগ্রত অবস্থায় তাঁকে দেখতে, তাহলেও এর চেয়ে বেশি বলতে সক্ষম হতে না। (শামায়েলে তিরমিযীঃ মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪১০; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হা/৩২৪৬৯)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে আমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখল সে আমাকেই দেখল। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। আর মু’মিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
(সহীহ বুখারী ৬৯৯৪)

আবূ হুরাইরাহ (রা.) বলেন, নবী ﷺ বলেনঃ ‘আমার নামে তোমরা নাম রেখ; কিন্তু আমার উপনামে (কুনিয়াতে) তোমরা নাম রেখ না। আর যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করতে পারে না। যে ইচ্ছা করে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার আসন বানিয়ে নেয়।’ (সহীহ বুখারী ১১০)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন,

"বলুন, তোমরা কাজ (আমল) করতে থাক। অচিরেই তোমাদের কার্যকলাপ আল্লাহ দেখবেন এবং তাঁর রসূল ও বিশ্বাসীগণও দেখবে। আর অচিরেই তোমাদেরকে অদৃশ্য ও প্রকাশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা (আল্লাহর) দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের সকল কৃতকর্ম জানিয়ে দেবেন।" (সূরা তাওবাহঃ ১০৫)

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলছেন,

"অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতেই একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের যে দুঃখ-কষ্ট হয়ে থাকে তা তার জন্য বড়ই বেদনাদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি করুণাশীল ও অতি দয়ালু (রউফুর রহীম)।" (সূরা তাওবাহঃ ১২৮)

বিখ্যাত ফকিহ ও হাদিস বিশারদ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ উল্লেখ করেন,

আউলিয়াদের ইহকালীন জীবনের অবস্থা এবং পরকালীন জীবনের অবস্থার মাঝে কোন পার্থক্য নাই, এজন্য বলা হয় আল্লাহর ওলীগণ (প্রিয় বান্দাগণ, সাধারণদের মত) মৃত্যুবরণ করেন না বরং (মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে, দুনিয়া হতে পর্দা করে) তারা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তন হন মাত্র। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ইমাম বায়হাকী রহঃ বলেন, নবীগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হতে পারেন এটা আকল দ্বারাও বৈধ, যেমনিভাবে হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত। (মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মেরকাতের ৩য় খন্ড, ৪১৪-৪১৫ পৃষ্ঠা)

মুফতিয়ে বাগদাদ আল্লামা মাহমুদ আলুসী আল বাগদাদী রহঃ তদীয় তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে সূরা আহযাবের ৪৫ নং আয়াতঃ "হে নবী আমি আপনাকে সাক্ষ্য প্রদানকারী, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারীরুপে।") এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন, "নিশ্চয় নবীয়ে রহমত রাসূলুল্লাহ ﷺ শারীরিক ও রুহানী উভয় ভাবে জীবিত এবং আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় পৃথিবী ও জগতসমূহে ক্ষমতা প্রয়োগ ও পরিভ্রমণ করতে পারেন যেভাবে ওফাত শরীফের পূর্বে করতেন। তাঁর কোন কিছুই পরিবর্তন হয়নি শুধু বাহ্যিক চোখের আড়াল হয়েছেন যেমনি ফেরেস্তাগণের উপস্থিতি স্বত্বেও চোখের আড়াল বা অদৃশ্য হয়ে আছেন।"

ইমাম শরফুদ্দিন বুসরী (রহঃ) কর্তৃক প্রিয় নবী ﷺ এঁর প্রশংসায় রচিত সুদীর্ঘ কবিতা কাসীদা-এ-বুরদা (মাওলা ইয়া সল্লি ওয়া সাল্লিম দাঁ ইমান আবাদান...) সর্বমহলে সমাদৃত একটি কাসীদা। কবির এই রচনার প্রেক্ষাপট এমন যে,

কবি একসময় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ও সম্পূর্ণ অচল হয়ে বিছানায় আশ্রয় নেন। বহু চিকিৎসার পরেও তিনি আরোগ্য লাভ করেন নি, এ সময় তিনি নবিজী ﷺ এঁর প্রশংসায় একটি কাসীদা লিখে তাঁর উছিলায় আল্লাহ পাকের দরবারে রোগমুক্তির প্রার্থনা করার নিয়ত করেন। কাসীদা রচনা সমাপ্ত হলে তিনি এক জুমার রাতে পাক-সাফ হয়ে এক নির্জন ঘরে প্রবেশ করেন এবং গভীর মনোযোগে ভক্তি ভরে কাসীদা আবৃত্তি করে থাকেন। আবৃত্তি করতে করতে তিনি একসময় ঘুমিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তিনি স্বপ্ন দেখলেন, সমগ্র ঘর আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে গেছে এবং প্রিয় নবী ﷺ সেখানে শুভাগমন করেছেন। কবি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন এবং স্বপ্নাবস্থায় প্রিয় নবী ﷺ কে কাসীদা পাঠ করে শুনাতে থাকেন। আবৃত্তি করতে করতে যখন কাসীদার শেষের দিকের একটি পঙক্তি পর্যন্ত পৌঁছান যেখানে লেখা ছিল "কাম আবরাআত আসিবান"- অর্থাৎ 'কত চিররুগ্ন ব্যক্তিকে নিরাময় করেছে প্রিয়নবীর হাতের স্পর্শ' তখন প্রিয় নবী ﷺ তাঁর হাত মোবারক দিয়ে কবির সমগ্র দেহ মুছে দেন এবং তিনি খুশী হয়ে নিজ গায়ের নকশাদার ইয়ামেনী চাঁদর দিয়ে তাঁকে ঢেকে দেন। স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় কবির! তাকিয়ে দেখেন প্রিয়নবী ﷺ সেখানে নেই। তবে কবি সম্পূর্ণ রোগমুক্ত এবং নবীজীর প্রদত্ত চাঁদর তার গায়ে জড়ানো। তিনি আল্লাহর শোকর আদায় করলেন।
 
Top