একটি সওয়াল ও তার জবাব
সওয়াল 
====
তুমি যদি বল, আরো একটি সমস্যা রয়ে গেল যা ইমাম মুসলিম রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

ان رجلا قال يا رسول الله- اين ابى؟ قال فى النار- فلما قفى دعاه فقال- ان ابى واباك فى النار- 

অর্থ: এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল- হে আল্লাহর রাসূল, আমার পিতা কোথায়? তিনি  বললেন- জাহান্নামে। তখন ইহা তার নিকট কষ্টদায়ক হল। নবীজী তাকে ঢেকে বললেন- আমার পিতা ও তোমার   পিতা জাহান্নামে। 

এবং আরো একটি হাদিস ইমাম মুসলিম ও আবু দাউদ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। 

انه صلى الله عليه وسلم استأذن فى الاستغفار لامه فلم يؤذن له 

অর্থ: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের ইস্তেগফারের জন্য  অনুমতি চাইলে তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়নি। অতএব  এ সমস্যার সমাধান করুন।   

জবাব 
===
উল্লেখিত  ইবারতটি ‘আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামী’ এর ব্যাপারে বর্ণনাকারীগণ ঐকমত্য পোষণ করেননি। ইহা বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ বিন সালমা। তিনি ছাবিত থেকে, তিনি হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম মুসলিম এই সূত্রেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অথচ মা’মার  হযরত ছাবিত  থেকে ব্যতিক্রমভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ‘আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামী’ বাক্যটি উল্লেখ করেননি। বরং নবীজী বলেছেন- اذا مررت بقبر كافر فبشره بالنار অর্থ: যখন তুমি কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দাও। 

এই ইবারতটি কখনো রাসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতাকে এর অন্তর্ভুক্ত  করে না। এ সনদটি  অধিক শক্তিশালী। কারণ হাম্মাদের চেয়ে মা’মার অধিক নির্ভরযোগ্য। 

তাছাড়া হাম্মাদের স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে এবং তাঁর বর্ণনার মধ্যে অনেক মুনকার হাদিস রয়েছে। 

বর্ণিত আছে  যে, রবিয়াহ তার কিতাবে ভুলক্রমে বিষয়টি ছেড়ে দিলেন। কিন্তু হাম্মাদ বিষয়টি  সংরণ রাখতে পারেননি এবং এভাবেই বর্ণনা  করলেন। সুতরাং এ ব্যাপারটি ল্যণীয়। তদুপরি  ইমাম বুখারী হাম্মাদ থেকে কোন হাদিস বর্ণনা  করেননি। ইমাম মুসলিমও প্রকৃতপে হাম্মাদ থেকে  উক্ত ছাবিতের হাদিস ছাড়া অন্য কোন বর্ণনা করেননি। 

যেমন ইমাম হাকিম ‘মুদখাল’ কিতাবে বলেছেন- 

ما خرج مسلم لحماد فى الاصول الا  من حديثه عن ثابت- 
অর্থ: ইমাম মুসলিম হাম্মাদ থেকে  ছাবিতের হাদিস ব্যতিত অন্য কোন হাদিস বর্ণনা করেননি। 

কিন্তু মা’মারের স্মৃতিশক্তি সম্বন্ধে কেউ কোন আপত্তি করেননি। এবং তাঁর কোন হাদিস মুনকার পর্যায়ের নেই। তাছাড়া শাইখান তথা বুখারী ও মুসলিম তাঁর থেকে  হাদিস গ্রহণের েেত্র  ঐকমত্য পোষণ করেছেন। অতএব তাঁর বর্ণনা অধিক নির্ভরযোগ্য। 

অতঃপর আরো একটি হাদিস আমরা সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে পেয়েছি যা মা’মার কর্তৃক ছাবিত থেকে বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। 

তাছাড়া ইমাম বাযযার, ইমাম তাবরানী ও  ইমাম বায়হাকী একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন ইব্রাহিম বিন সাদ থেকে, তিনি যুহরি থেকে, তিনি আমির বিন সাদ থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন- 

ان اعرابيا قال لرسول الله صلى الله عليه وسلم اين ابى؟ قال فى النار- قال فاين ابوك؟ قال حيثما مررت بقبر كافر فبشره بالنار- 

অর্থ: এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে বলল- ‘আমার পিতা কোথায়? নবীজী বললেন জাহান্নামে। অতঃপর লোকটি বলল আপনার পিতা কোথায়?  নবীজী বললেন- যখন তুমি কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের দুঃসংবাদ দিবে। 

এ হাদিসটির সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুরূপ। তাই ইহা অন্যান্য বর্ণনার উপর প্রাধান্য পাবে। 

ইমাম তাবরানী ও ইমাম বায়হাকী এ হাদিসের শেষে আরো একটু অতিরিক্ত শব্দ উল্লেখ করেছেন- তা হলো পরবর্তীতে এ বেদুইন লোকটি ইসলাম গ্রহণ  করল এবং বলল- 

لقد كلفنى رسول الله صلى الله عليه وسلم تعبا ما مررت بقبر كافر الا بشرته با لنار- 

অর্থ:  রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে  এমন একটি কঠিন নির্দেশ দিয়েছেন যে যখনই আমি কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে গমন করেছি তখন তাকে জাহান্নামের সংবাদ দিয়েছি। 

ইমাম  ইবনে মাজাহ  আরো একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। 

ইব্রাহিম বিন সাদ থেকে তিনি যুহরি থেকে তিনি সালিম থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট  একজন বেদুইন এসে প্রশ্ন করল- হে আল্লাহর রাসূল, আমার পিতা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতেন। বর্তমানে তিনি কোথায়? তিনি  বললেন- জাহান্নামে। এতে লোকটি কিছুটা মর্মাহত হল। 

অতঃপর  বলল- হে আল্লাহর রাসূল আপনার পিতা কোথায়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম বলেন- তুমি যখন কোন মুশরিকের কবরের পাশ  দিয়ে গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের দুঃসংবাদ দিবে। পরবর্তীতে লোকটি মুসলমান  হয়ে গেল এবং বলল রাসূলুল্লাহ আমাকে এমন একটি কঠিন কাজের নির্দেশ দিয়েছেন যখনই আমি কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে   গমন করেছি তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিয়েছি। এ অতিরিক্ত বর্ণনা দ্বারা একথাই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত  হয় যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  থেকে বর্ণিত আম শব্দটি এবং ঐ বেদুইনের  ইসলাম গ্রহণ পরবর্তী অভিমতটি একটি উদাহরণমূলক বক্তব্য। 

অতএব যদি প্রথমোক্ত জবাবটি গ্রহণ করা হয় তাহলে এতে কোন সমস্যাই থাকে না।  অর্থাৎ প্রথমোক্ত ইবারতটি হচ্ছে বর্ণনাকারীর প থেকে পরিবর্তন। তিনি তার অনুধাবন অনুযায়ী  অর্থ বর্ণনা করেছেন। এ ধরণের অনেক বর্ণনা বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে যা রাবী তার অনুধাবন অনুযায়ী বর্ণনা করেছেন। অথচ অন্য রাবীগণ তার চেয়ে অধিক নির্ভরশীল। 

যেমন মুসলিমশরীফে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নামাযে বিসমিল্লাহ পড়তে বারণ করা হয়েছে। ইমাম শাফেয়ী  রাদিয়াল্লাহু আনহু এ হাদিসটির ইল্লত বর্ণনা করেছন এভাবে- তিনি বলেন- হযরত ছাবিত অন্য একটি সূত্রে বিসমিল্লাহ’ শ্রবণকে অস্বীকার  করেছেন। এতে  বর্ণনাকারী অনুধাবন করেছেন বিসমিল্লাহ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তিনি তার  ধারণা অনুযায়ী হাদিসটির অর্থ বর্ণনা করেছেন। সুতরাং তিনি ভুল করেছেন। 

আমরা এখানে ইমাম  মুসলিমের হাদিসের জবাব এভাবেই প্রদান করব। যেভাবে আমাদের ইমাম  শাফেয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইমাম মুসলিমের বিসমিল্লাহ না পড়াসংক্রান্ত হাদিসের জবাব প্রদান করেছেন। 

অতএব যদি  প্রথমোক্ত বর্ণনার উপর  রাবীদের ঐকমত্য  আবশ্যক হয় তাহলে ইহা পূর্বে উল্লেখিত অনেক দলিল ও সহিহ হাদিসসমূহের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। 

যখন কোন সহিহ হাদিসের সাথে অন্য কোন দলিল সাংঘর্ষিক হয় তখন ক্ষেত্রে সহিহ হাদিসকে প্রাধান্য দেয়া আবশ্যক। ইহা উসুলের একটি নীতি। 

এ শেষোক্ত জবাবটি ঐ হাদিসের জবাবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য  যে হাদিস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে  মায়ের ইস্তেগফারের অনুমতি প্রদান করা হয়নি। সম্ভবত  এতে এমন দোয়ার কথা বলা হয়েছে যা আবশ্যক নয়। 

যেমন দলিলস্বরূপ বলা যায় ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ নিয়ম ছিল। যদি  কোন মুসলমানের ঋণ থাকে তাহলে তার উপর নামায পড়া নিষেধ। 

সম্ভবত আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর উপর কুফুরি ব্যতিত অন্যান্য সমস্যাবলী ছিল। যার দরুণ তাঁর জন্য ইস্তেগফার করতে বারণ করা  হয়েছে। তবে প্রথম জবাবটিই অধিক শক্তিশালী এবং ইহাই গ্রহণযোগ্য। 

অতঃপর আমি ‘মা’য়মার’ কৃর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মতো অন্য একটি হাদিস ভিন্ন সূত্রে পেয়েছি। ব্যাখ্যাস্বরূপ যে হাদিসটি এখানে  উল্লেখ করব। সেখানে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে প্রশ্নকারী ইচ্ছা করেছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে। কিন্তু আদব ও সৌন্দর্য্য রা করতে সে প্রশ্নের ধরণ পরিবর্তন করেছে। যেমন ইমাম হাকিম মুস্তাদরিক গ্রন্থে লাকিত বিন আমির থেকে বর্ণনা করে ইহাকে  সহিহ বলেছেন। 

একবার তিনি  একটি প্রতিনিধি   দলের সাথে রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসলেন। তার সাথে তখন নুহাইক বিন  আসিম বিন মালিক বিন মুন্তাফিক ছিলেন। তিনি বলেন আমরা রজব মাসে মদিনাশরীফে পৌঁছলাম। অতঃপর নবীজীর সাথে নামায পড়লাম। নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের প্রতি ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। (অতঃপর বর্ণনাকারী হাদিসের বাকী অংশ বর্ণনা করলেন) অবশেষে বলেন- তখন  আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে  যারা জাহিলিয়াত যুগে মৃত্যুবরণ করেছে তাদের মধ্যে কোন ভাল লোক আছে কি? তখন কুরাইশ বংশীয় এক ব্যক্তি বলল। তোমার পিতা মুন্তাফিক জাহান্নামী। 

উপস্থিত জনতার সামনে আমার পিতা সম্বন্ধে এমন মন্তব্য করায় আমার চেহারায় আগুন ঝরতে লাগল। তাই আমি জিজ্ঞাসা করতে চাইলাম- হে আল্লাহর  রাসূল, আপনার পিতাও কি জাহান্নামী। কিন্তু যখন  আমি দৃষ্টিপাত করলাম তখন  অন্য একটি সৌন্দর্য্য আমাকে মোহিত করল।  তাই আমি অন্যভাবে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনার পরিবারও কি জাহান্নামী? তখন নবীজী বললেন- যখন তুমি কোন মুশরিকের  কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন বলবে, আমাকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম তোমার প্রতি প্রেরণ করেছেন। অতএব তোমাকে তোমার মন্দ অবস্থার সুসংবাদ দিচ্ছি। 

এ বর্ণনাটিতে কোন জটিলতা নাই। ইহা একটি সুস্পষ্ট বর্ণনা।   

অন্য একটি ব্যাখ্যা 
========
প্রশ্নকারী ব্যক্তির প্রশ্নটি ‘আপনার  পিতা কোথায়?’ এভাবে বলতে কি সমস্যা ছিল? এমনিভাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিসে আমার পিতা ‘বাক্য দ্বারা আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পিতা মুরাদ না নিয়ে চাচা আবু তালিবকে মুরাদ নিতে সমস্যা কোথায়? 

যেমন ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর পিতা দ্বারা তাঁর চাচাকে মুরাদ নিয়েছেন। যা ইতোপূর্বে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু মুজাহিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ইবনে জুরাইজ ও সুদ্দি   রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে দলিল পেশ করা হয়েছে।  এখানে বিষয়টি দুটি  ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত।   

প্রথম ব্যাখ্যা 
======
‘পিতা’ শব্দটি আবু তালিবের উপর প্রয়োগ করা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায়ও স্পষ্টভাবে  প্রমাণিত ছিল। এজন্য মক্কাবাসীরা আবু তালিবকে বললো- তোমার পুত্রকে বল আমাদের  দেবদেবীদেরকে গালি না দিতে। 

একবার তারা আবু তালিবকে বলল তোমার পুত্রকে আমাদেরকে দিয়ে দাও। আমরা তাকে  হত্যা করব এবং তুমি তার স্থলে এই ছেলেকে গ্রহণ কর। তখন আবু তালিব তাদেরকে বলেছিলেন- 

اعطيكم ابنى تقتلونه واخذ ابنكم اكفله لكم- 

অর্থ: আমার পুত্রকে তোমাদেরকে দিয়ে দেব তোমরা তাকে হত্যা করবে আর আমি তোমাদের পুত্রকে গ্রহণ করে লালন পালন করব। 

যখন আবু  তালিব নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে সিরিয়া গমন করেছিলেন তখন একজন পাদ্রীর সাাত হলে সে আবু তালিবকে জিজ্ঞাসা করল এ ছেলেটি তোমার কি হয়? তিনি বললেন সে আমার পুত্র। তখন পাদ্রী বলল এটা কি করে সম্ভব যে এ বালকের পিতা এখনোও জীবিত? 

অতএব আবু তালিবকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা সম্বোধন করা তাদের কাছে স্পষ্ট ছিল। কারণ তিনি ছিলেন নবীজীর চাচা। ছোটবেলা থেকেই  তিনি  নবীজীকে  লালনপালন,  সাহায্য-সহযোগিতা ও দেখাশোনা করেছেন।   

দ্বিতীয় ব্যাখ্যা 
======
ইমাম তাবরানী উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন, বিদায় হজ্জের সময় হারিছ বিন হিশাম নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল  আপনি উৎসাহিত করেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে। প্রতিবেশির প্রতি সদয় ব্যবহার করতে, ইয়াতিমের লালপালন  করতে, এবং অতিথি ও গরিব মিসকিনদের  খাদ্য প্রদান করতে। আর হিশাম বিন মুগিরা এর সবগুলোই করতেন। অতএব তার সম্বন্ধে আপনার ধারণা কি ইয়া রাসূলাল্লাহ? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম বললেন- 

كل قبر لا يشهد صاحبه ان لا اله الا الله فهو جذوة من النار وقد وجدت عمى ابا طالب فى طمطام من النار- فاخرجه الله لمكانه منى واحسانه الى فجعله فى ضحضاح من النار- 

অর্থ: এমন প্রত্যেক কবরের অধিবাসী যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর স্ব্যা প্রদান করেনি সে জাহান্নামী। আমি আমার চাচা আবু তালিবকে জাহান্নামের সর্বনিু স্তরে পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহতায়ালা আমার কারণে তাকে সেখান  থেকে বের করে নিয়েছেন এবং তাকে  জাহান্নামের শিখার মধ্যে রেখেছেন।   

সতর্কবাণী 
=====
একদল উলামায়ে  কেরাম উল্লেখিত জবাবসমূহের সাথে ভিন্ন  একটি মত পোষণ করেছেন।  তারা রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতা সম্বন্ধে বর্ণিত  হাদিসসমূহের জবাবে বলেছেন এগুলো রহিত হয়ে গেছে। যেমনিভাবে রহিত হয়ে গেছে ‘মুশরিক  শিশুরা  জাহান্নামী’ সংক্রান্ত হাদিসগুলো। তারা বলেন- মুশরিক শিশুদের ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলো রহিতকারী আয়াত হল- 

ولا تزر وازرة وزر اخرى 

অর্থ: কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। (আনআম- ১৬৪) 

আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতা সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলোকে রহিতকারী আয়াত হল- وما  كنا معذبين حتى نبعث رسولا অর্থ: কোন রাসূল না  পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি প্রদান করি না। (বনি ইসরাইল- ১৫) 

এখানে একটি সুক্ষ বিষয় হলো- উল্লেখিত দুটি ফারিক বা দলের জন্য দুটি বাক্য একই আয়াতে সংযুক্তভাবে ছন্দাকারে বর্ণিত হয়েছে। এ  জবাবটি সংপ্তি কিন্তু অত্যন্ত অর্থবহ। ইহা  অন্যান্য সকল জবাবের মধ্যে উত্তম। তবে ইহা প্রথম মসলক বা অনুসারীদের স্বপরে দলিল। অতএব দ্বিতীয় মসলকের পক্ষে অন্যান্য দলিল প্রয়োগ করতে হবে।

 
Top