উলামায়ে কেরামদের দ্বিতীয় মসলক বা  অভিমত
দ্বিতীয় মসলক বা অভিমত হল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতার পক্ষ থেকে কোন শিরকি কার্যকলাপ প্রমাণিত হয়নি। বরং তারা ছিলেন হানিফ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।  তারা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন আরবদের মধ্যে এ রকম আরো অনেক লোক বিদ্যমান ছিলেন।  যেমন যায়দ  বিন আমর বিন নুফাইল, ওয়ারাকা বিন নওফেল প্রমুখ।   

দ্বিতীয় মসলকের স্বপে ইমাম রাযী (রা.) এর বক্তব্য 
==========
এ মসলক বা অভিমতের অন্যতম প্রবক্তা হলেন ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি স্বীয় اسرار التنزيل কিতাবে দলিলভিত্তিক আলোচনায় বলেছেন- বলা হয়েছে আযর ইব্রাহিম আলাইহি সালাম এর পিতা ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন ইব্রাহিম আলাইহি সালাম এর চাচা। এ  ব্যাপারে তারা কয়েকটি দলিল পেশ করেছেন। 

প্রথম দলিল 
=====
আম্বিয়ায়ে কিরামদের পিতৃপুরুষদের  মধ্যে কোন কাফির ছিল না। এর উপর কয়েকটি দলিল বিদ্যমান। যেমন আল্লাহর বাণী- 

الذى يرك حين تقوم- وتقلبك فى السجدين 

অর্থ: যিনি আপনাকে দেখেন যখন  আপনি নামাযে দণ্ডায়মান  হন এবং নামাযীদের মধ্যে  আপনার চলাচল। (শুয়ারা- ২১৮-২১৯) 

বলা হয়েছে এ আয়াতের অর্থ হল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারক সিজদাকারী থেকে সিজদাকারীর মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে। এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী উক্ত আয়াত দ্বারা ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ব পুরুষদের মধ্যে প্রত্যেকেই মুসলমান ছিলেন। অতএব ইহা অকাট্যভাবে  আবশ্যক যে ইব্রাহিম আলাইহি সালাম এর পিতা কাফির ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন তাঁর চাচা। ইহাই উক্ত আয়াতের ভাবার্থ।   

দ্বিতীয় দলিল 
=====
রেওয়ায়ত তথা  বর্ণনাসমূহ  যখন কুল্লি বা  সমষ্টিগতভাবে  প্রয়োগ হয় এবং এর মধ্যে কোন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া না যায় তখন আয়াতের অর্থ ‘কুল্লি’ বা সমষ্টির উপর প্রয়োগ করা আবশ্যক। 

এ মূলনীতিটি যখন বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত  হল তখন ইহাই প্রতীয়মান হল যে, ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর পিতা মূর্তিপূজক ছিলেন না। অতঃপর ফখরুদ্দিন রাযী বলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতৃপুরুষদের মধ্যে যে কেহই মুশরিক ছিলেন না তার দলিল হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- 

لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات 
অর্থ: আমি পবিত্র  পুরুষদের পৃষ্ঠদেশ থেকে পবিত্র রমণীগণের গর্ভের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছি 

এবং আল্লাহ বলেছেন-انما المشركون نجس অর্থ: নিশ্চয় মুশরিকগণ অপবিত্র। (তাওবা- ২৮) 

অতএব ইহা আবশ্যক যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতৃপুরুষদের মধ্যে কেউ মুশরিক  হতে পারবে না। ইহা হচ্ছে ইমাম ফখরুদ্দিন  রাযী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হুবহু বক্তব্য। 

তিনি ছিলেন তাঁর যুগের  আহলে সুন্নাত  ওয়াল জামায়াতের ইমাম। বেদআতী মতবাদের খণ্ডনকারী এবং আশআরী জামাতের সাহায্যকারী। তিনি হিজরি ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রেরিত হয়েছিলেন উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীনি  সংস্কার সাধন  করার জন্য। অর্থাৎ তিনি ছিলেন একজন মুজাদ্দিদ।   

দু’টি মুকাদ্দামা 
=====
ইমাম সুয়ুতি বলেন,  এ  মসলকের স্বপে ইমাম ফখরুদ্দিন যে বক্তব্যটি পেশ করেছেন  সে ব্যাপারে আমার নিকট কয়েকটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে। 

প্রথমত, তিনি যে দলিল পেশ করেছেন  তা দু’টি মুকাদ্দামা বা ভূমিকার সাথে যুক্ত। 
প্রথম মুকাদ্দামা: নবীজীর পিতৃপুরুষগণ ছিলেন স্ব-স্ব যুগে সর্বশ্রেষ্ঠ 

বিশুদ্ধ হাদিসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত যে, নবীয়েপাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম এর পিতৃপুরুষগণ আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত সর্বযুগে তারা ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। 

দ্বিতীয়  মুকাদ্দামা: পৃথিবীতে সর্ব যুগেই এমন কিছু লোক থাকেন যারা ফিতরাতের উপর বিশ্বাসী 

অসংখ্য হাদিস ও  আছার দ্বারা প্রমাণিত যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে  শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত  এ  পৃথিবীতে সদাসর্বদা এমন কিছু লোক বিদ্যমান থাকবেন যারা হবেন  ফিতরাতের উপর বিশ্বাসী। তারা আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তারা হবেন একত্ববাদে বিশ্বাসী। তাদের মাধ্যমেই পৃথিবীকে হিফাজত করা হবে। যদি তারা না থাকতেন তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত। 

এখন তুমি  যদি উভয় মুকাদ্দামাকে একত্রিত কর তাহলে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হবে  যে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কোন মুশরিক  ব্যক্তি ছিলেন না।  কারণ তাদের ব্যাপারে প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব যুগে সর্বোত্তম লোক ছিলেন।  
এখন যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতৃপুরুষগণ তাদের অন্তর্ভুক্ত হন যারা ফিতরাতের উপর  বিশ্বাসী ছিলেন, তাহলে সেটাইতো আমাদের দাবি। কিন্তু যদি তারা অন্যান্য লোকদের অন্তর্ভুক্ত হন যারা ছিলেন মুশরিক তাহলে দুটি বিষয়ের যে কোন একটি অবশ্যক হয়। 

হয়তো মুশরিকগণ মুসলমানদের চেয়ে উত্তম হবে। ইহা সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য। অথবা অন্যান্য লোকগণ  তাদের চেয়ে উত্তম হবে। ইহাও বাতিল। কারণ ইহা সহিহ হাদিসসমূহের ব্যতিক্রম। অতএব অকাট্যভাবে ইহাই প্রমাণিত হয় যে, তাদের মধ্যে কোন মুশিরিক ছিলেন না। তাদের যুগে তারাই ছিলেন উত্তম লোক।   

প্রথম মুকাদ্দামার দলিলসমূহ 
==========
ইমাম বুখারী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بعثت من خير قرون بنى ادم قرنا فقرنا حتى بعثت من القرن الذى كنت فيه 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আমি আদম সন্তানদের মধ্যে উত্তম যুগ থেকে উত্তম যুগে প্রেরিত হয়েছি। সর্বশেষ আমি বর্তমান যুগে এসে পৌঁছেছি। 

ইমাম বায়হাকী دلائل النبوة কিতাবে হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

ان  النبى صلى الله عليه وسلم قال ما افترق الناس فرقتين الا جعلنى الله فى خيرهما- فا خرجت من بين ابوى فلم يصبنى شئ من عهد الجاهلية- وخرجت من نكاح ولم اخرج من سفاح من لدن ادم حتى انتهيت الى ابى وامى فانا خيركم نفسا وخيركم أبا- 

অর্থ: নবী  করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে দুভাগে বিভক্ত করে আমাকে  তাদের উত্তমভাগে মনোনীত করেছেন। আমি আমার পিতামাতার মাধ্যমে আগমন করেছি। অতএব জাহিলিয়াতের কোন জিনিস আমাকে স্পর্শ  করেনি। আমি বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে আগমন করেছি। আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আমার পিতামাতা পর্যন্ত কোন অবৈধ সূত্র ছিল না।  অতএব আমি তোমাদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও বংশগত উভয় সূত্রেই উত্তম। 

আবু নাঈম دلائل النبوة গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- لم يزل الله ينقلنى من الاصلاب الطيبة الى الارحام الطاهرة مصنفا مهذبا- لا تنشعب شعبتان الا كنت فى خيرهما- 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহতায়ালা পবিত্র পৃষ্ঠদেশসমূহ থেকে পবিত্র গর্ভের মাধ্যমে আমাকে স্থানান্তর করেছেন। যখনই কোন দুটি শাখা তৈরি হয়েছে তখন আমি তাদের উত্তম শাখায় ছিলাম। 

ইমাম মুসলিম এবং ইমাম তিরমিজি সহিহ  সূত্রে ওয়াসিলা বিন আসকা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله اصطفى من ولد ابراهيم واسماعيل واصطفى من ولد اسماعيل بنى كنانة- واصطفى من بنى كنانة قريشا واصطفى من قريش بنى هاشم واصطفنى من بنى هاشم- 

অর্থ:  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আল্লাহতায়ালা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর বংশধর থেকে ইসমাইল আলাইহিস সালামকে  মনোনীত করেছেন। অতঃপর ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর বংশ থেকে  বনী কেনানাকে মনোনীত করেছেন। অতঃপর বনী কেনানা থেকে কুরাইশকে মনোনীত করেছেন।  কুরাইশ থেকে বনী হাশিমকে নির্বাচন করেছেন। অতঃপর বনি হাশিম থেকে আমাকে মনোনীত করেছেন। 

হাফিজ আবুল কাশিম  হামসাহ বিন ইউসুফ সাহমী হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ফজিলতসংক্রান্ত একটি হাদিস ওয়াসিলাহ থেকে বর্ণনা করেছেন- 

ان الله  اصطفى من ولد ادم ابراهيم واتخذه خليلا- واصطفى من ولد ابراهيم اسماعيل- ثم اصطفى من ولد اسماعيل نزار- ثم اصطفى من ولد نزار مضر ثم اصطفى من مضر كنانة ثم اصطفى من كنانة قريشا ثم اصطفى من قريش بنى هاشم  ثم اصطفى من بنى هاشم بنى عبد المطلب ثم اصطفنى من عبد المطلب 

অর্থ: আল্লাহতায়ালা আদম সন্তানদের মধ্যে ইব্রাহিম আলাইহি সালামকে মনোনীত করেছেন এবং তাকে খলিল উপাধি প্রদান করেছেন।  অতঃপর ইব্রাহিম আলাইহিস  সালাম  এর বংশ থেকে ইসমাইল আলাইহিস সালামকে নির্বাচন  করেছেন। অতঃপর ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর বংশ থেকে নাজ্জার গোত্রকে নির্বাচন করেছেন। অতঃপর নাজ্জার থেকে মুদার  গোত্রকে নির্বাচন করেছেন। অতঃপর মুদার থেকে কেনানা গোত্রকে মনোনীত করেছেন। অতঃপর কেনানা থেকে কুরাইশ, কুরাইশ থেকে বনি হাশিম, বনি হাশিম থেকে বনি আব্দুল মুত্তালিব গোত্রকে  মনোনীত  করেছেন। অতঃপর আমাকে বনী আব্দুল মুত্তালিব গোত্র থেকে নির্বাচন করেছেন। 

মুহিব  তাবারী- ذخائر العقبى গ্রন্থে এবং ইবনে সা’দ তাকাত গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خير العرب مضر وخير مضر بنى عبد مناف (وخير بنى مناف) بنو هاشم وخير بنى هاشم بنو عبد المطلب والله ما افترق فرقتان منذ خلق الله ادم الا كنت فى خيرهما- 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আরবদের মধ্যে মুদার গোত্র উত্তম। মুদার গোত্রের মধ্যে আব্দে মনাফ শাখা উত্তম। বনী মনাফের মধ্যে বনু হাশিম উত্তম। হাশেমী শাখার মধ্যে  বনু আব্দুল মুত্তালিব উত্তম। 

আল্লাহর  শপথ, আদম আলাইহিস সালাম এর সৃষ্টি থেকে শুরু করে যখনই দুটি শাখা তৈরি হয়েছে তখন তাদের উত্তম শাখায় ছিলাম। 

ইমাম তাবরানী, বায়হাকী  এবং আবু নাঈম হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول الله صلى الله عليه ان الله خلق الخلق فاختار من الخلق بنى ادم واختار من بنى ادم العرب واختار من العرب مضر واختار من مضر قريشا واختار من قريش بنى هاشم واختارنى من بنى هاشم فانا من خيار الى خيار- 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন- আল্লাহতায়ালা  সৃষ্টিরাজীর  মধ্যে বনী আদমকে মনোনীত করলেন। বনী  আদম থেকে আরবদেরকে নির্বাচন করলেন। অতঃপর আরবদের মধ্যে মুদার গোত্র, মুদার থেকে কুরাইশ এবং কুরাইশ থেকে বনি হাশিমকে মনোনীত করলেন। অতঃপর বনী হাশিম থেকে আমাকে নির্বাচন করলেন। অতঃপর  আমি উত্তম থেকে উত্তম গোত্রে মনোনীত হয়েছি। 

ইমাম তিরমিজি হাসান সূত্রে  এবং ইমাম বায়হাকী হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন- 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله حين خلقنى جعلنى من خير خلقه ثم حين خلق القبائل جعلنى من خيرهم قبيلة وحين خلق الانفس جعلنى من خير انفسهم ثم حين خلق البيوت جعلنى من خير بيوتهم فاناخيرهم بيتا وخيرهم نفسا- 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহতায়ালা আমাকে সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ  সৃষ্টি হিসেবে মনোনীত করলেন।  অতঃপর যখন গোত্র নির্ধারণ করলেন তখন আমাকে শ্রেষ্ঠ গোত্রে মনোনীত করলেন। অতঃপর ব্যক্তি  হিসেবে আমাকে শ্রেষ্ঠ মনোনীত করলেন। অতঃপর যখন পরিবার নির্ধারণ করলেন তখন আমাকে শ্রেষ্ঠ  পরিবারে মনোনীত করলেন। অতএব আমি তাদের মধ্যে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উভয়ভাবে উত্তম। 

ইমাম তাবরানী, ইমাম বায়হাকী ও আবু নাঈম হযরত ইবনে আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে  বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- ان الله قسم الخلق قسمين فجعلنى فى خيرهما قسما- ثم جعل القسمين اثلاثا فجعلنى فى خيرهما ثلثا ثم جعل الاثلاث قبائل فجعلنى فى خيرها- ثم جعل القبائل بيوتا فجعلنى فى خيرها بيتا- 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিরাজিকে দু’ভাগে বিভক্ত করলেন এবং আমাকে উত্তম ভাগে মনোনীত করলেন। অতঃপর উভয় দলকে তিনটি করে ভাগ করলেন এবং আমাকে উত্তম  ভাগে মনোনীত করলেন। অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করলেন এবং আমাকে উত্তম  গোত্রে   মনোনীত করলেন। অতঃপর গোত্রসমূহকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করলেন এবং আমাকে তাদের উত্তম পরিবারে মনোনীত করলেন। 

(এ ব্যাপারে আরো কয়েকটি হাদিস রয়েছে। এখানে সংপ্তি করা হয়েছে) অনুবাদক।   

দ্বিতীয় মুকাদ্দামার দলিলসমূহ 
===========
ইমাম আব্দুর রাজ্জাক মুসান্নাফ  গ্রন্থে মা’মার ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন ইবনুল মুসাইয়াব বর্ণনা করেছেন। তিনি আলী  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। 

لم يزل على وجه   الدهر فى الارض سبعة مسلمون فصاعدا- فلولا ذالك هلكت الارض ومن عليها 

অর্থ:  আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- প্রতিটি যুগে পৃথিবীর মধ্যে এমন সাতজন বা অধিক লোক বিদ্যমান থাকেন। যদি তারা না থাকতেন তাহলে পৃথিবী তার বাসিন্দাসহ ধ্বংস হয়ে যেত। 

এ হাদিসের সনদ বুখারী  ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহিহ। 

ইমাম ইবনে জারির তদীয় তাফসির গ্রন্থে শাহর বিন হুসাব থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال لم تبق الارض الا وفيها اربعة عشر يدفع الله بهم عن اهل الارض وتخرج بركتها الا زمن ابراهيم فانه كان وحده- 

অর্থ:  তিনি বলেন- পৃথিবীতে সদা-সর্বদা  এমন চৌদ্দজন  লোক অবশিষ্ট থাকেন যাদের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা জগতবাসীর উপর থেকে বিপদ মুসিবত দূর করেন এবং বরকত নাজিল করেন। তবে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম  এর যামানা ব্যতিত। কারণ সে সময় তিনি একা ছিলেন। 

ইমাম মুনজির স্বীয় তাফসির গ্রন্থে হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু  আনহু  থেকে বর্ণনা  করেছেন, আল্লাহতায়ালার বাণী- 

قلنا اهبطوا منها جميعا- فاما يأتينكم منى هدى فمن تبع هداى فلا خوف عليهم ولاهم يحزنون- 

অর্থ: আমি বললাম তোমরা সবাই এখান থেকে নিচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার প থেকে কোন হিদায়ত পৌঁছে তবে যে ব্যক্তি  আমার হিদায়ত অনুসরণ করবে তাদের উপর কোন ভয় নাই এবং তারা চিন্তাগ্রস্তও হবে না। (বাকারা- ৩৮) 

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় কাতাদাহ বলেন- 

فما زال الله فى الارض اولياء منذ هبط ادم ما اخلى الله الارض لابليس الا وفيها اولياء له يعملون لله بطاعته- 

অর্থ:  হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর আগমন থেকে আল্লাহতায়ালা এই পৃথিবীকে কখনো ইবলিসের জন্য আউলিয়া শূন্য করেন নাই। অর্থাৎ সবসময় কিছু আউলিয়া বিদ্যমান থাকেন। তারা আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করেন। 

ইমাম আহমদ বিন  হাম্বল রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘যাহদ’ গ্রন্থে এবং  খিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘কিরামাতুল আউলিয়া’ গ্রন্থে বুখারি ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহিহ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال ما خلت الارض من بعد نوح من سبعة يدفع الله بهم عن اهل الارض 

অর্থ: তিনি বলেন- হযরত নুহ আলাইহিস সালাম এর পর থেকে পৃথিবীতে সবসময় এমন সাতজন লোক বিদ্যমান থাকেন যাদের  উসিলায় আল্লাহতায়ালা জগতবাসীর উপর থেকে বালামুসিবত দূর করেন। (এ হাদিসটি মরফু পর্যায়ের) 

ইমাম আরযুকী ‘তারিখে মক্কা’  গ্রন্থে যুহাইর বিন মুহাম্মদ থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال لم يزل على وجه الارض سبعة مسلمون فصاعدا لولا ذلك لاهلكت الارض ومن عليها- 

অর্থ: তিনি বলেন- পৃথিবীতে  সদা-সর্বদা সাতজন অথবা তার অধিক মুসলমান বিদ্যমান থাকেন। যদি তারা না থাকতেন তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত। 

ইবনে মুনজির স্বীয় তাফসির গ্রন্থে সহিহ সনদে ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেছেন- 

فى قوله رب اجعلنى مقيم الصلوة ومن ذريتى- قال فلن يزال من ذرية ابراهيم ناس على الفطرة يعبدون الله- 

অর্থ:  আল্লাহর বাণী-  হে প্রভূ আমাকে নামায কায়েমকারী করুন  এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। (ইব্রাহিম-৪০) 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন- ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর বংশধরদের মধ্যে সদা-সর্বদা এমন কিছু লোক অবশিষ্ট  ছিল যারা ফিতরাতের উপর বিশ্বাস করত এবং আল্লাহর ইবাদত করত। 

ইমাম বাযযার তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে এবং ইবনে জারির ইবনে মুনজির ও ইবনে আবি হাতিম প্রত্যেকে তাদের তাফসির গ্রন্থে এবং ইমাম হাকিম তাঁর মুস্তাদরিক গ্রন্থে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন এবং হাকিম ইহাকে সহিহ বলেছেন- 

فى قوله تعالى كان الناس امة واحدة قال كان بين ادم ونوح عشرة قرون كلهم على  شريعة من الحق فاختلفوا فبعث الله النبيين- 

অর্থ: আল্লাহর বাণী সকল  মানুষ একই জাতিসত্ত্বার অন্তর্ভুক্ত ছিল। (বাকারা- ২১৩)  ইবনে  আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আদম আলাইহিস সালাম থেকে নুহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত দশটি যুগ ছিল। তারা প্রত্যেকেই সত্য শরিয়তের উপর ছিলেন।  অতঃপর তারা মতানৈক্য তৈরি করল, তখন আল্লাহ নবীদেরকে প্রেরণ করলেন। 

ইবনে আবি হাতিম হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال ذكر لنا انه كان بين ادم ونوح عشرة قرون كلهم على الهدى وعلى شريعة من الحق ثم اختلفوا بعد ذالك فبعث الله نوحا وكان اول رسول الله ارسله الله الى اهل الارض- 

অর্থ: তিনি বলেন- বর্ণিত আছে যে, আদম আলাইহিস সালাম থেকে নুহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত দশটি স্তর ছিল।  তারা প্রত্যেকেই  সত্য শরিয়তের উপর হিদায়তপ্রাপ্ত ছিলেন। অতঃপর তারা বিভিন্ন মতানৈক্য তৈরি করল। তখন আল্লাহ নূহ আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করলেন। তিনি  ছিলেন পৃথিবীতে আল্লাহর প্রেরিত সর্বপ্রথম রাসূল।

 
Top