শাফায়াতের বর্ণনা

❏ প্রশ্ন-৫০: শাফা‘আত ও শাফা‘আতে কুবরা কী? তা কখন এবং কিভাবে হবে?
❏ প্রশ্ন-৫১: কিয়ামত দিবসে নবী করীম (ﷺ)’র সুপারিশ কত প্রকারের হবে?
❏ প্রশ্ন-৫২: পবিত্র কুরআনের যে কয়টি আয়াতে শাফা‘আত বা সুপারিশের কথা উল্লেখ রয়েছে। সে আয়াতগুলো কি কি?

কা’বা নির্মাণের বর্ণনা

❏ প্রশ্ন-৫৩: কা’বা ঘর কখন স্থাপিত হয়? এটির নির্মাণ কবে থেকে শুরু হয়েছে?
❏ প্রশ্ন-৫৪: কখন কোন সময় থেকে কা’বায় গিলাফ লাগানো শুরু হয়? এই রীতিটি কে চালু করেন?
❏ প্রশ্ন-৫৫: কা’বা শরীফের ভিত্তি যা ইবরাহীম (عليه السلام) করেছিলেন এবং বর্তমান ভিত্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা?

গোসল,অযু ও তায়াম্মুমের বর্ণনা

❏ প্রশ্ন-৫৬: অযু কি দাঁড়িয়ে করা উচিত, না বসে করা? এ-দু’টির কোনটি উত্তম?
❏ প্রশ্ন-৫৭: শীতকালে অযু করলেও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো শুকিয়ে যায় এই পরিস্থিতে কী করণীয়?
❏ প্রশ্ন-৫৮: গরম পানি দ্বারা অযু করা কি জায়েয? এ-বিষয়ে শরয়ী হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৫৯: বিড়ি, সিগারেট ও হুক্কা পানে কি অযু নষ্ট হয়ে যায়?
❏ প্রশ্ন-৬০: লবনের ওপর তায়াম্মুমের শরয়ী বিধান কি?
❏ প্রশ্ন-৬১: ইসলামী শরীয়তে গোসল কত প্রকার ও কী কী?
❏ প্রশ্ন-৬২: তায়াম্মুমের সময় দাড়ি খিলাল করার বিধান কী?
❏ প্রশ্ন-৬৩: অযুতে ব্যবহৃত কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জখমপ্রাপ্ত হলে, সে ব্যক্তি যদি অযুর সময় ক্ষত স্থানের ব্যান্ডেজের মাসেহ করে, তাহলে এমন ব্যক্তির ইকতেদা করে জামাত পড়া কি জায়েয হবে?

নামাযের বর্ণনা

❏ প্রশ্ন-৬৪: ফরয নামাযে একই সূরা তাক্রার বা পুনরুক্তি করা যেমন- ফজরের ফরয নামাযের উভয় রাকাআতে সূরা ইখলাস পাঠ করা জায়েয আছে কি না ?
❏ প্রশ্ন-৬৫: পায়খানা ও প্রস্রাবের বেগ অধিক হওয়া সত্ত্বেও তা চেপে রেখে নামায আদায় করার হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৬৬: চোখ বন্ধ করে নামায পড়া কী? কিছু লোক চোখ বন্ধ করে নামায আদায় করে, এটা জায়েয কি না?
❏ প্রশ্ন-৬৭: শীতকালে লোকজন চাদর কিংবা রুমাল দ্বারা মুখ ঢেকে রাখা অবস্থায় নামায আদায় করে থাকে- এর হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৬৮: সিজদায় যাওয়ার সময় পায়জামা উপরের দিকে উঠানোর হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৬৯: ইমামের পূর্বে সালাম বলার হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৭০: একই রাকাআতে একাধিক সূরা পাঠ করা জায়েয কি না?
❏ প্রশ্ন-৭১: ইমাম সাহেব নামায কখন আরম্ভ করবেন?
❏ প্রশ্ন-৭২: নামাযী বা মুসল্লিকে সালাম ফিরানোর সময় কী করা উচিত?
❏ প্রশ্ন-৭৩: নামাযে ছানার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া হয় না কেন? এটা রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস 
كل امر ذى بال لم يبداء ببسم الله الخ- এর বিপরীত আমল নয় কি?
❏ প্রশ্ন-৭৪: এশার নামায বিলম্বে আদায় করার হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৭৫: মহিলাদের স্বতন্ত্র ও এককভাবে জামাতে নামায পড়ার হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৭৬: নামাযীর সামনে দিয়ে মহিলা চলে গেলে নামায ফাসেদ বা ভঙ্গ হবে কি না?
❏ প্রশ্ন-৭৭: ইমাম নামাজ আদায়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালে মুক্তাদিগণ যদি তাঁর কর্মকান্ড ও অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজানা থাকে তবে এর হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৭৮: নামাযে নবীকুল সরদার রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কল্পনা ও ধ্যান আসলে কি নামায ভঙ্গ কিংবা এর কোন ক্ষতি হবে?
❏ প্রশ্ন-৭৯: পাগড়িবিহীন ইমামের পেছনে নামায পড়া জায়েয কি না?
❏ প্রশ্ন-৮০: নামাযে হাই আসলে কি করা উচিৎ?
❏ প্রশ্ন-৮১: ফরয নামায শেষে ইমাম সাহেব তাৎক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাবেন, না কিছুক্ষণ পর দাঁড়াবেন?
❏ প্রশ্ন-৮২: ফরয নামায শেষে ডান হাত মাথার ওপর রেখে কোনো বিশেষ দু‘আ ইত্যাদি পাঠ করার শরয়ী হুকুম কি?
❏ প্রশ্ন-৮৩: রমযান মুবারক ছাড়া বিতির নামায জামাতে পড়ার হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৮৪: পাগড়ি ছাড়া ইমাম শুধু টুপি পরে নামায পড়া এবং পড়ানো কি জায়েয? এতে নামাযের সওয়াবে তারতম্য বা কম-বেশি হবে কিনা?
❏ প্রশ্ন-৮৫: হুযূর মোস্তফা (ﷺ) অসুস্থাবস্থায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضى الله تعالي عنه)-এর পিছনে নামায আদায় করেছিলেন। তখন তাঁর মাথায় পবিত্র পাগড়ি ছিল না কি টুপি?
❏ প্রশ্ন-৮৬: মু’মিনের জন্য নামায মি‘রাজ হওয়া কি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
❏ প্রশ্ন-৮৭: এশার নামাযের সঠিক সময় দলিলসহ বর্ণনা কর। 
❏ প্রশ্ন-৮৮: মাগরিবের নামায তাড়াতাড়ি পড়ার ফযিলত দেখে কিছু সংখ্যক লোক প্রবঞ্চনার স্বীকার হয় যে, মাগরিবের নামাযের সময় অতীব সংক্ষিপ্ত! সাধারণত মাগরিবের নামাজের সময়সীমা কতটুকু হওয়া উচিত?
❏ প্রশ্ন-৮৯: ইস্তিসকার নামায ছাড়া অন্য কোন শরয়ী পদ্ধতি অনুমোদন আছে কিনা? 
❏ প্রশ্ন-৯০: মাগরিবের নামাযে দীর্ঘ সূরা পাঠ করার বিধান কী?
❏ প্রশ্ন-৯১: কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা করা জায়েয হবে কি না?
❏ প্রশ্ন-৯২: নামাযে আরবী ছাড়া অন্যান্য ভাষায় দু‘আ করার বিধান কী? 
❏ প্রশ্ন-৯৩: জামার আস্তিন বা হাতা কনুইর উপরে উঠিয়ে নামায পড়ার হুকুম কী? এতে নামায মাকরূহ হবে কি না?
❏ প্রশ্ন-৯৪: হজ্ব মৌসুমে আরাফাতের ময়দানে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হাজীদের, মুকীম বা স্থায়ী বাসিন্দা ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়েয হবে কি না?
❏ প্রশ্ন-৯৫: ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সাউদি আরবে পনের দিনের ভিসা নিয়ে যারা পবিত্র মক্কা ও মদিনা মুনাওয়ারা গমন করেন, তারা নামায পুরো পড়বেন না কসর পড়বেন?
❏ প্রশ্ন-৯৬: মুসাফির ভুলক্রমে দু’রাকাতের পরিবর্তে চার রাকাতের নিয়ত করলে, এ ক্ষেত্রে তার করণীয় কি? সে নিয়ত অনুযায়ী চার রাকাত আদায় করবে, না দু’রাকাত?
❏ প্রশ্ন-৯৭: মুসাফির ইচ্ছাকৃতভাবে পুরা চার রাকাত পড়লে তার নামাযের হুকুম কী?
❏ প্রশ্ন-৯৮: দু’জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি দুই শহরে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বাস করে, একজন অপরজনের নিকট গেলে তারা উভয়ই কী নামায কসর পড়বে?

তারাবীহ নামাযের বর্ণনা

❏ প্রশ্ন-৯৯: হুযূর সৈয়্যদুল মুরসালীন (ﷺ) তারাবীহ কত রাকাত পড়েছেন? 

জানাযার বর্ণনা

❏ প্রশ্ন-১০০: কবরের নিকট দু‘আ করার সময় কবরকে সামনে নিয়ে দু‘আ করা উত্তম, না কিবলামুখী হয়ে?
❏ প্রশ্ন-১০১: মাইয়্যেত বা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর দাঁড়িয়ে দু‘আ করা উচিত কি না?
❏ প্রশ্ন-১০২: মসজিদে ইতিকাফকারী জানাযার জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে কিনা?
❏ প্রশ্ন-১০৩: দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়ার বিধান কি?
❏ প্রশ্ন-১০৪: দাঁড়ানোর সময় নিয়ত করতে ভুলে গেলে, এরকম জানাযার নামায পড়ার হুকুম কি?
❏ প্রশ্ন-১০৫: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং দ্বিপ্রহরের সময় জানাযার নামায ও তিলাওয়াতে সিজদা করা জায়েয আছে কিনা?
❏ প্রশ্ন-১০৬: জারজ সন্তান বা অবৈধ পন্থায় জন্মগ্রহণ করেছে এমন সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযার হুকুম কি?
❏ প্রশ্ন-১০৭: জানাযার নামায পড়ানোর সবচেয়ে অধিক হকদার কে?
❏ প্রশ্ন-১০৮: নিয়তবিহীন জানাযা নামাযের কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না?

কাফন ও দাফনের বর্ণনা

❏ প্রশ্ন-১০৯: কোরআন শরীফের আয়াত সম্বলিত কা’বা শরীফের গিলাফের টুকরো কিংবা কালিমা খচিত কাপড় অথবা অন্য কোন বরকতময় কাপড় কাফনের সাথে তাবার্রুক হিসেবে দেয়া যাবে কি না?
❏ প্রশ্ন-১১০: মাইয়্যেতের ওপর সওয়াবের উদ্দেশ্যে যদি অতিরিক্ত কাপড় দেয়া হয়, এতে কি সওয়াব পাওয়া যাবে?
❏ প্রশ্ন-১১১: কাফনের ওপর কালিমা-ই তাইয়্যেবা কিংবা কোরআন শরীফের আয়াত কালির কলম দ্বারা লিখে দেয়া জায়েয আছে কি না?
❏ প্রশ্ন-১১২: মানুষ মারা গেলে কি মাটি ও পাথর হয়ে যায়? 

পাগড়ির বর্ণনা

❏ প্রশ্ন-১১৩: শরীয়তে পাগড়ির হুকুম কি?
❏ প্রশ্ন-১১৪: শুধু পাগড়ির ওপর মাসেহ করা জায়েয কি না?



শাফায়াতের বর্ণনা-

❏ প্রশ্ন-৫০: শাফা‘আত ও শাফা‘আতে কুবরা কী? তা কখন এবং কিভাবে হবে?

✍ উত্তর: সহীহ বুখারীসহ অন্যান্য হাদিসগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত আছে, কিয়ামত দিবসে যখন সময় খুবই দীর্ঘ হবে এবং তাপ প্রচন্ড গরম হবে এবং ইত্যাদি বিভিন্ন মুসিবত ও কষ্ট-যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ট হবে, ভীতসন্ত্রস্ত হবে; ঠিক তখনই তারা পরস্পর পরামর্শ করবে। পরামর্শের বিষয় হলো, এমন কাকে সুপারিশপ্রদানকারী রূপে মহান আল্লাহর দরবারে পাঠানো যেতে পারে, যিনি সবার নাজাতের জন্য সুপারিশ করবেন, যেমন- হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত।
অতএব, মানব সকল হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (عليه السلام) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণের নিকট যাবে। তারা প্রত্যেক নবীকে (ﷺ) সুপারিশের জন্য নিবেদন করবে। কিন্তু সকলই এই উত্তর দিবেন: ‘এটি আমার পদমর্যাদা নয়’। শেষতক হযরত ঈসা (عليه السلام)-এর ইঙ্গিতে তারা আল্লাহর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)’র নিকট আসবে। এরপর তাঁকে সুপারিশের জন্য আবেদন করবে। নবীজি (ﷺ) উত্তর দিবেন, আমিই তো এ-কাজের জন্য উপযুক্ত। সে-সময় নবী করীম (ﷺ) আল্লাহর দরবারে সিজদাবনত হয়ে মহান রবের অভিনব ও সুউচ্চ প্রশংসা করবেন। পরক্ষণে  আল্লাহ পাকের হুকুম হবে, 

يَا مُحَمَّدُ إرْفَعْ رَأسَكَ سَلْ تُعْط وَاِشْفَعْ تُشْفَعْ  

হে মুহাম্মদ! উঠুন! যা ইচ্ছে আপনি চান, সবই দেয়া হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সকল সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। এরপর নবী করীম (ﷺ) সিজদা থেকে উঠে বলবেন, হে রব! আমার উম্মতের ওপর রহম করুন।এ শাফা‘আতের নাম হলো শাফা‘আতে কুবরা  বা সর্বোত্তম সুপারিশ।

❏ প্রশ্ন-৫১: কিয়ামত দিবসে নবী করীম (ﷺ)’র সুপারিশ কত প্রকারের হবে?

✍ উত্তর: আল্লাহর সাহায্য ও তাঁর তাওফীকের ওপর ভরসা করে উত্তর প্রদান করছি। মোস্তফা(ﷺ)  র সুপারিশ ১২ প্রকারের হবে:-

১.শাফা‘আতে কুবরা: ইতিপূর্বে এর আলোচনা করা হয়েছে।
২.شفاعة ادخال فى الجنة بلاحساب‘হিসেব-নিকেশ ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য সুপারিশ।’ এটিও নবী করীম  -এর বৈশিষ্ট্য।
৩.হিসেব-নিকেশের পর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের জন্য সুপারিশ।
৪.পদমর্যাদা উন্নতির ক্ষেত্রে জান্নাতবাসীদের জন্য সুপারিশ।
৫.কিছু সংখ্যক কাফির ও অমুসলিমদের আযাব হ্রাস করার জন্য সুপারিশ। অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও যারা নবীজিকে সহযোগিতা করতো এবং তাঁকে ভালোবাসতো তাদের জন্য এই সুপারিশ যেমন, আবু তালেব প্রমুখ।
৬.আমলসমূহ পরিমাপের সময় উম্মতের জন্য সুপারিশ।
৭.হিসেব গ্রহণে শিথিলতা প্রদর্শনের জন্য একটি দলের পক্ষে সুপারিশ।
৮.স্খলন ও ইবাদত-অনুগত্যে দুর্বলতা ও ত্রুটি ক্ষমা করার জন্য সুপারিশ।
৯.আ’রাফবাসীদের জন্য সুপারিশ।
১০.মুশরিক ও অমুসলিমদের শিশুদের জন্য সুপারিশ।
১১.আহলে বায়ত বা নবী-পরিবারের জন্য সুপারিশ।
১২.মক্কা, মদিনা এবং তায়েফবাসীদের জন্য সুপারিশ।

উল্লেখ্য, ইমাম ইবনে হাজর আস্কালানী (رحمه الله تعالي ) রওযা পাক যিয়ারতকারী, আযানের উত্তরদাতা এবং নবী  -এর জন্য ওয়াসিলা ও সবোর্চ্চ মর্যাদার দো‘আ পাঠকারীর জন্য সুপারিশকে পঞ্চম ভাগে অন্তরÍভূক্ত করেছেন।
আরেকটি শাফাআত বা সুপারিশ হলো তুফাইলী শাফা‘আত বা মাধ্যম দ্বারা সুপারিশ। এটি আবার কয়েক রকমের হয়ে থাকে। এই ধরনের সুপারিশে অনেকেই নবী, ওলি, আলিম-ওলামা এবং পূণ্যাত্মা মনীষীদেরও শামিল করেছেন। এসব তুফাইলী শাফা‘আত মোস্তফা (ﷺ)  -এর মাধ্যমে হবে।
হযরত শাহ আবদুল আযিয দেহলভী (رحمه الله تعالي ) স্বীয় তাফসীরগ্রন্থে বলেন, তিয়াত্তোর দল তাদের গুনাহের মাত্রা অনুসারে আযাব পাবে। এমনকি নবীগণ, ওলিগণ, আলিম-ওলামা, শহীদগণ ও ফেরেশতাদের সুপারিশে আযাব থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। এসব হচ্ছে তুফাইলি শাফা‘আত বা মাধ্যম দ্বারা সুপারিশ। হাশরের মাঠে হিসেব দ্রুত সম্পন্ন করতে সুপারিশ করা হবে।
হাদিস শরীফে এসেছে, কেয়ামতের দিন সুরা বাকারা ও আলে-ইমরান সূরা দু’টি মেঘ বা কালো ছায়ার আকৃতিতে আসবে। তাতে একটি আলো চমকাতে থাকবে, তা উজ্জ্বল ও আলোকিত হবে অথবা সূরা দু’টি পাখির মত দল বেঁধে সারিবদ্ধ হয়ে আসবে। এরপর এই দুই সূরা পাঠকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এভাবে তাদের বেহেশত পর্যন্ত পৌঁছানোর পরই সূরা দু’টি ক্ষান্ত হবে।
ইবনে মরদুওয়াইয়াহ, ইস্পাহানী এবং দায়লামীর বরাতে হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেন, ফেরেশতারা কা’বা ঘরকে নব-বধুর মত সজ্জিত করে হাশর-মাঠে আনবে। পথে তারা যখন আমার রওযা অতিক্রম করবে, তখন কা’বা ঘর স্পষ্ট ভাষায় বলবে, اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا مُحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ হে মুহাম্মদ  ! সালাম নিন। আমি উত্তরে বলব, وَعَلَيْكَ السَّلَام    
يَا بَيْتُ اللهِ হে বায়তুল্লাহ! তোমার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক। বলো তো আমার উম্মত তোমার সাথে কেমন আচরণ করেছে? আর তুমি আল্লাহর সামনে তাদের নিয়ে কী আচরণ করবে? কা’বা ঘর উত্তর দিবে, হে নবীকুল শিরোমণি! আপনার উম্মতের মধ্যে যেই আমার যেয়ারত করতে এসেছে, আমি তার জন্য যথেষ্ট সুপারিশ করব। আপনি তাদের ব্যাপারে আমার পক্ষ থেকে নিশ্চিন্ত থাকুন। এ-ব্যাপারে আমার ওপর আস্থা রাখুন। আর যারা আমার কাছে আসেনি, তাদের জন্য আপনিই সুপারিশ করবেন।

❏ প্রশ্ন-৫২: পবিত্র কুরআনের যে কয়টি আয়াতে শাফা‘আত বা সুপারিশের কথা উল্লেখ রয়েছে। সে আয়াতগুলো কি কি? বর্ণনা কর।

✍ উত্তর: 
১- لَا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمٰنِ عَهْدًا . 
‘যে দয়াময় আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না।’  
68. সূরা মরয়ম, আল কোরআন, আয়াত: ৮৭।

২- يَوْمَئِذٍ لَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا. 
‘দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না।’ 
69. আল কোরআন, সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১০৯।

-وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ حَتَّى إِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ-৩ قَالُوا مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا الْحَقَّ . 
‘যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়, তার জন্যে ব্যতীত আল্লাহর কাছে কারও সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না। যখন তাদের মন থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়ে যাবে, তখন তারা পরস্পরে বলবে, তোমাদের পালনকর্তা কি বললেন? তারা বলবে, তিনি সত্য বলেছেন এবং তিনিই সবার উপরে মহান।’ 
70. আল কোরআন, সূরা সাবা, আয়াত: ২৩।

قُلْ لِلهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيْعًا لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ-৪
‘তাদেরকে বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ 
71. আল কোরআন, সূরা যুমার, আয়াত: ৪৪।

يَوْمَ يَقُوْمُ الرُّوْحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا لَا يَتَكَلَّمُوْنَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ৫   وَقَالَ صَوَابًا . 
‘যেদিন রূহ (জিবরাঈল) ও ফেরেশতাগণ তাঁর সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতীত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্যকথা বলবে।’ 
72. আল কোরআন, সূরা নাবা, আয়াত: ৩৮।

আরবের মুশরিকদের বিশ্বাস ছিল, ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা-সন্তান (নাউযুবিল্লাহ)। কিয়ামত দিবসে তারা সুপারিশ করবে। এখানে তাদের সে-বক্তব্যটি খন্ডন করা হয়েছে। প্রথমত আল্লাহর অনুমতি বিনে মুখ খোলারও সাহস করবে না কেউ। দ্বিতীয়ত অনুমতি পেলেও সুপারিশ যুক্তিসঙ্গত হতে হবে। অর্থাৎ- শুধু একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং প্রকৃত সুপারিশের হকদারদের জন্য সুপারিশ করতে পারবে। হযরত আবু হুরায়রা (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) এরশাদ ফরমান, কিয়ামত দিবসে আমার সুপারিশ পাওয়ার জন্য সবার্পেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি হলো যে একনিষ্ঠভাবে অন্তর থেকে বলেছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। 
73. সহীহ বুখারী।

হযরত ইমরান বিন হুসাইন (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত অপর এক রেওয়াতে আছে, মুখতারে কুল নবী করীম (ﷺ) এর সুপারিশের সুবাদে একটি দলকে জাহান্নাম থেকে নিস্তার দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তাদেরকে জাহান্নামী বলা হবে। 
74. সহীহ বুখারী শরীফ।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোকও থাকবে যে একটি বিশাল দলের পক্ষে সুপারিশ করবে। এদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও হবে যে শুধু একজন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য সুপারিশ করবে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। 
75. জামে‘ তিরমিযী শরীফ।

হযরত উসমান বিন আফ্ফান (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবে কিবরিয়া নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেন, কিয়ামত দিবসে তিন প্রকারের মানুষ সুপারিশ করবে: 
এক. নবীগণ, 
দুই. আলেমগণ এবং
তিন. শহীদান।  

76. মিশকাত শরীফ।

কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির পক্ষে নবীগণ এবং পূণ্যবান ব্যক্তিদের সুপারিশের কথা কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অবশ্য মু’তাজিলা নামক দলটি এর বিরোধিতা করে। তাদের ভাষ্য হলো, সুপারিশে কোন লাভ হবে না। মতানৈক্যের মূল ভিত্তি হলো অপর একটি বিষয়ের ওপর, তা হলো- আমাদের মতে সুপারিশ ব্যতীত ক্ষমা সম্ভব। সুতরাং, সুপারিশ থাকলে তো আরও ভালো।
পক্ষান্তরে মু’তাজিলা দলের মতে কবিরা গোনাহ ক্ষমাযোগ্য নয়। সুতরাং, সুপারিশেও কোন কাজ হবে না। এ-প্রসঙ্গে আমাদের প্রমাণ কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি প্রণিধানযোগ্য। 

এরশাদ হচ্ছে, 

وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَا

হে মুহাম্মদ  ! আপনি ক্ষমাপ্রার্থনা করুন নিজের ত্রুটির জন্যে এবং মু’মিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। 
77. আল কোরআন, সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৯।

এ-থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমানদের পক্ষে নবীজির ক্ষমাপ্রার্থনা লাভজনক ও ফলপ্রসু। 

অন্য আয়াতে এরশাদ হচ্ছে, 
فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِيْنَ.
‘সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন উপকারে আসবে না।’  
78. আল কোরআন, সূরা মুদ্দাসির, আয়াত: ৪৮।

এই আয়াতে কাফিরদের দুর্দশা ও দুর্ভাগ্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না। বাক্য ভঙ্গি থেকে সাধারণত সুপারিশ যে কাজে আসবে তা প্রমাণিত হচ্ছে। অর্থাৎ- সুপারিশ অনেকের কাজে আসবে। অবশ্যই এ-দ্বারা কাফিরদের কোন লাভ হবে না। যদি তা না হত, তাহলে কাফিরদের সুপারিশ কাজে না আসার বিষয়টির উল্লেখ দ্বারা বিশেষ কোন ফায়দা হতো না। কারণ এখানে তাদের বিশেষ একটি ব্যর্থতার বর্ণনাই উদ্দেশ্য। সবাই যে ব্যর্থতায় শরীক তা বর্ণনা উদ্দেশ্য নয়।

পবিত্র হাদিসে একথাও এসেছে, 

شَفَاعَتِىْ لِاَهْلِ الْكَبَائِرِ مِن اُمَّتِىْ 

নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘আমার উম্মতের কবীরা গোনাহকারীদের জন্যে আমার সুপারিশ আম থাকবে’।

যেহেতু মূল শাফা‘আত ও ক্ষমার কথা কোরআন-হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, তা অস্বীকার করা অসম্ভব। এ কারণে মু’তাজিলা দলও মূল ক্ষমার কথা স্বীকার করে। তাদের ভাষ্য হলো ছোট গুনাহের ক্ষমা হবে শুধু। অবশ্য ঐ-সব বড় গোনাহও ক্ষমা করা হবে যার জন্য তাওবা করা হয়েছে। সুপারিশের মাধ্যমে কেবল পূণ্য বৃদ্ধি হতে পারে, গোনাহ ক্ষমা হয় না।
সূফীয়া-ই কিরামের আক্বীদা হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীগণ, অলিগণ ও নেককার ব্যক্তিগণকে যে-কোন সময় কোন নির্দিষ্ট দল কিংবা ব্যক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার অধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওয়াহাবী-আহলে হাদিসের মত হলো, কিয়ামতের পূর্বে সুপারিশ হতেই পারে না। আর কিয়ামত দিবসেও আল্লাহর অনুমতি বিনে কোন সুপারিশ হবে না।
হাদিস শরীফে এসেছে, নবী করীম (ﷺ) বলেন, 

انا سيد ولد آدم ولافخرو اول من تنشق الارض عنه يوم القيامة ولا فخر وانا اوّل شافع واول مشفع ولا فخر ولواء الحمد بيدى-. 

‘আমি আদম-সন্তানদের সরদার, এটা অহংকার নয়। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমিই ভূ-গর্ভ (কবর) থেকে উঠব, এটা অহংকার নয়। সর্বপ্রথম আমিই সুপারিশ করব এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে, এটা অহংকার নয়। আমার হাতে লিওয়াউল হামদ বা আল্লাহ'র প্রশংসা মুখর পতাকা থাকবে।’
এটাও হাদীস শরীফে আছে, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আমাকে অর্ধেক উম্মতের গোনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে কিংবা সুপারিশের ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে। আমি সুপারিশ করার বিষয়টি গ্রহণ করেছি।
কোরআন মজিদে যে ‘মাকামে মাহমুদ’ বা প্রশংসিত স্থানের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, মুফাস্সিরদের সর্বসম্মতিক্রমে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুপারিশের স্থান। নবী করীম (ﷺ) নিজ উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন- এ-বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। অণু পরিমাণ ঈমান যার অন্তরে থাকবে, তিনি তাকেও ক্ষমা করিয়ে নিবেন। 
79. ইসলামী মালুমাত কা মাখযান, খন্ড-১, পৃষ্ঠা- ৪২২।

اللهم ارزقنا شفاعَة حبيبكَ المصطفىٰ صَلّى اللهُ عَليهِ وسلَّم بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَفَضْلِكَ وَجُوْدِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ .

আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। হে দয়াময় আল্লাহ! আমাদেরকে আপনি দয়া, অনুগ্রহ ও দানের মাধ্যমে আপনার প্রিয়তম রাসূল (ﷺ)-এর সুপারিশ । 



কা’বা নির্মাণের বর্ণনা-

❏ প্রশ্ন-৫৩: কা’বা ঘর কখন স্থাপিত হয়? এটির নির্মাণ কবে থেকে শুরু হয়েছে?

✍ উত্তর: হজ্ব ও ওমরায় যে ঘরটির চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করা হয় সেটিই কা’বা ঘর। এটি সেই পবিত্র গৃহ, মুসলমানরা প্রতি বছর, প্রতি মাস, প্রতিক্ষণে যার প্রদক্ষিণ করে। ফেরেশতারাও অবতীর্ণ হয়ে যার তাওয়াফ করে থাকে। 
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে এ-পর্যন্ত দশবারের মত কা’বা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
১.    সর্বপ্রথম আল্লাহর আদেশে ফেরেশতারা কা‘বা ঘর নির্মাণ করেছিল।
২.    এরপর নিমার্ণ করেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম পাঁচটি পাহাড়ের পাথরের সাহায্যে। পাহাড় পাঁচটি হলো, লেবানন পাহাড়, সীনার তুর পাহাড়, যাইতার তুর পাহাড়, জুদি পাহাড় এবং খোরাসান পাহাড়।  পাঁচ পর্বতসমূহের পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু হেরা পর্বতের পাথর দ্বারা এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল। 
80. মক্কার ইতিহাস, আল্লামা ফাসী, বর্ণনাকারী আল্লামা কুতুবুদ্দিন (رحمة الله)।

৩.    হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর তিরোধানের পর তাঁর পুত্র হযরত শীস আলাইহিস সালাম নিমার্ণ করেন। 
৪. এরপর নিমার্ণ কাজ সম্পাদন করেন হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)। তিনি প্রথম ভিত্তির ওপর এটি নিমার্ণ করেন। এই নিমার্ণের বর্ণনা হলো, কা’বা-মুখ তথা হাজরে আসওয়াদ থেকে রুকনে ইরাকী পর্যন্ত বিস্তৃত, এই স্থানটির দৈঘর্য ৩২ গজ, যাকে কা’বার মুখমন্ডল বলা হয়। রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত স্থানের প্রস্থ ২০ গজ। অন্যদিকে কা’বার পশ্চাদ ভাগ তথা রুকনে শামী থেকে রুকনে ইয়ামানী পর্যন্ত স্থানের দৈঘর্য ৩১ গজ। রুকনে ইরাকী থেকে রুকনে শামী পর্যন্ত যেখানে হাতীমও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে এই স্থানের প্রস্থ ২২ গজ। অন্যান্য প্রতিটি রুকনের উচ্চতা ৯ গজ।
এছাড়া হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কা’বা ঘরের দু’টি দরজা নিমার্ণ করেছিলেন। একটি পূর্বে, অপরটি পশ্চিমে। কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার ছাদ বানাননি। ইতিহাসগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, সে-যুগে শুধু দেওয়ালই নির্মিত হত, ছাদ থাকত না। আর দরজা ভূমির সাথে মিলিত থাকত। অবশ্য দরজার পার্ট লাগানো থাকত না, খিলও থাকত না। সে যুগের অবস্থা এমন ছিল যে, এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব ছিল না, যদিও তা আল্লাহর ঘর ছিল।
এই ঘরের এক পাশে বাইরের দিকে তাওয়াফ গণনার সুবিধার জন্য একটি লম্বা পাথর লাগানো হয়েছে, এটি ‘হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর’ নামে প্রসিদ্ধ। চিন্তা-ভাবনা করলে ধারণা করা যায় যে, এটি সেই ধরনের পাথর যা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর ইবাদতের জন্য দাঁড় করেছিলেন। যেটিকে আবার ‘মাযবাহ বা কুরবানির স্থান’ অথবা আয়েরও বলা হয়।
এই দেয়ালের ভেতর একটি খননকৃত গর্ত ছিল। একে বলা হত কা’বার খনি। কা’বার জন্য যা হাদিয়া-তুহফা আসত তা চুরি থেকে রক্ষার জন্য এখানে রাখা হত।
নোট: এই রীতি সেই প্রাচীন যুগ থেকেই চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজও মানুষেরা মসজিদ, খানকা, মাযার ও পবিত্র স্থানগুলোতে হাদিয়া-তোহফা দিয়ে থাকে। সেগুলোও একটি নিরাপদ স্থানে রাখা দরকার। প্রয়োজনের সময় তা থেকে হতদরিদ্র, ফকির, মিসকিনদের প্রয়োজনসহ অন্যান্য যেকোন ধর্মীয় কল্যাণমূলক কর্মে খরচ করা যেতে পারে। সদস্যদের প্রস্তাবিত কর্মেও তা খরচ করা যেতে পারে।
৫.    এরপর কা’বা ঘর নির্মাণ করে ‘আমালেকা গোত্র। এরা হলো ‘আমলীক বিন লিওয়ায বিন ইরাম বিন সাম বিন নূহ আলাইহিস সালাম এর বংশধর। এরাই মক্কার সর্বপ্রথম বাসিন্দা।
৬.    জুরহুম এর পুত্ররা ষষ্ঠবারের নিমার্ণে শরীক হন। জুরহুম হলো কাহতান বিন আ’বির বিন শামিখ আরক্বাহশাদ বিন সাম বিন নূহ আলাইহিস সালাম এর পুত্র। অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে, প্রথমে বনি জুরহুম এবং পরে আ’মালেকা নিমার্ণ করেছিল।
৭.    কুসাই বিন কেলাব নিমার্ণ করেন। এর প্রেক্ষাপট ছিল, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কা’বার স্থাপনায় কিছুটা জীর্ণতা দৃশ্যমান হয়। এটি বন্যার কারণে সংঘটিত হয়েছিল। এখনও অনেক সময় এ-ধরনের বন্যা হয়ে থাকে। এ-ছাড়া অন্য কোন কারণ খোঁজে পাওয়া যায় নি। সে-সময় কুসাই বিন কেলাব খেজুরের ঢাল-পালা ও গোগল কাঠ দিয়ে কা’বার ছাদ নিমার্ণ করেছিলেন। এই পুনঃনির্মাণ হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর ভিত্তি মুতাবেক হয়েছিল। যদিও নিমার্ণের নির্দিষ্ট সময় জানা নেই, কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে, কুসাই বিন কেলাব নবী কারীম (ﷺ) -এর ছয় প্রজন্ম পূর্ব পুরুষ ছিলেন। তাই অনুমানের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে, এই নিমার্ণকর্মটি নবীজি (ﷺ)-এর জন্মের দুইশ’ বছর আগে হয়েছিল।
৮.    কুরাইশরা নিমার্ণ করেছিল। এ সময় নবী কারীম (ﷺ) -এর বয়স মুবারক মাত্র ৩৫ বছর। সে-সময় ইবরাহীম (عليه السلام)-এর নিমার্ণে কিছুটা বেশ-কম করা হয়। কা’বা উচ্চতা যা পূর্বে ৯ গজ ছিল তা বৃদ্ধি করা হয়। দৈর্ঘ্য ৭ গজের কম করে ফেলা হয়। হাতিমের দিকে কিছু জায়গা রেখে দেয়া হয়। পশ্চিমের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং পূর্বের দরজা ভূমি থেকে ৪ গজ এক বিঘত উঁচু করে দেয়া হয়। হাতিম ছাড়া অন্যান্য দিকে একেক হাত করে ছেড়ে দেয়া হয়।
    কা’বা ঘর নিমার্ণকালে যখন হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের বিষয়টি আসে, ঠিক তখনই লেগে যায় ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্ব। প্রত্যেক গোত্রই হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করতে চাচ্ছিল। এমন সংকটময় মুহূর্তে আবু উমাইয়া বিন মুগিরার পরামর্শে সবাই একমত হয়। তার পরামর্শ ছিল- আগামীকাল সর্বপ্রথম যেই এই রাস্তা দিয়ে আসবে, তাকেই আমাদের বিষয়ে বিচারক বানানো হবে। তাদের সবার সৌভাগ্য যে, নবী কারীম (ﷺ) সর্বপ্রথম সেই নির্ধারিত পথে প্রথমে এসেছিলেন, যদিও সে-সময় নবী কারীম (ﷺ)-এর বয়স কম ছিল। কিন্তু সবাই ‘আল-আমীন’ বলে খুশিতে চিৎকার করে উঠে। আমরা সবাই তাঁর ফয়সালার ওপর রাজি, একথা বলে সবাই দাঁড়িয়ে উঠে।
    পরে নবী কারীম (ﷺ) তাঁর চাদর মুবারক বিছিয়ে আল্লাহর আদেশ মতে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে দেন। সকল গোত্রপতিদের উদ্দেশ্য বলা হলো, সবাই যেন চাদর ধরে হাজরে আসওয়াদ যেখানে স্থাপন করা হবে সে-পর্যন্ত নিয়ে যায়। সকলই তা করল। চাদর ধরে নিধার্রিত স্থানে চলে যায়। এরপর হাজরে আসওয়াদটি নবী কারীম(ﷺ)    নিজ হাতে নিয়ে স্ব-স্থানে স্থাপন করে দেন। এতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা আর হয়নি।
৯.    হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রাদিআল্লাহু আনহু নির্মাণ করেন। এর ঘটনা ছিল, হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (رضى الله تعالي عنه) হেজাজের গভর্ণর হলে পুরো হেজাজ তাঁর অধীনে চলে আসে। ইয়াজিদের পক্ষ থেকে তাঁকে হত্যা করার জন্য মসজিদে হেরমের দিকে লক্ষ্য করে হোছাইন বিন নুমাইর প্রাচীন কামান দ্বারা আগুন নিক্ষেপ করে। এই আঘাতে কা’বা ঘরের দেয়ালের কিছু অংশ পুড়ে যায় এবং ছাদের কিছু কাঠও জ্বলে যায়। এমন সময় ইয়াজিদ মারা যায়। ফলে তাঁর সৈন্যরা ফিরে যায়। সে-সময় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضى الله تعالي عنه) ইচ্ছা করলেন, অবশিষ্ট দেয়ালগুলো ভেঙ্গে পুনরায় নতুনভাবে  মজবুত করে দেয়াল নিমার্ণ করতে। অতপর সকল দেয়াল ভাঙ্গার পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর ভিত্তি প্রকাশ পায়। ফলে তার ওপরই কা’বা ঘর পুনঃনির্মাণ করা হয়। যে ভূমি বাইরে রয়ে গিয়েছিল তা আবার কা’বা ঘরের অন্তভর্ূক্ত করা হয়। পূর্বের মত দরজা ভূমির সাথে সমতল করা হয়। দ্বিতীয় দরজাও আগের মত পুনঃনিমার্ণ করা হয়। উচ্চতায় এর আগের তুলনায় ৯ গজ উঁচু করা হয়। এই নিমার্ণ কাজ ১৫ জুমাদাস সানী হিজরী ৬৪ সনে শুরু হয়ে ২৭ রজব ৬৪ হিজরীতে শেষ হয়।
১০.     আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের আদেশে ৭২ হিজরী সনে হাজ্জাজ বিন ইউসূফ নির্মাণ করেন। মৌলিকভাবে এইবার হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রাদিআল্লাহু আনহু এর নিমার্ণ ঠিক রাখা হয়। কিন্তু হাতিমের দিকে ৬ গজ এক বিঘত ভূমি বের করে দিয়ে কুরাইশের ভিত্তি মোতাবেক দেয়াল নিমার্ণ করে দেয়া হয়। পশ্চিমের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। পূর্বের দরজা ৪ গজ এক বিঘত উঁচু করা হয়। যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে হাজ্জাজের  নিমার্ণের ওপর। কা’বা ঘরের ভেতরে প্রথম দুই সারিতে ৬টি স্তম্ভ ছিল। হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (رضى الله تعالي عنه) তাঁর সময়ে ৩টি স্তম্ভ কমিয়ে দিয়েছিলেন এবং একই সারিতে ৩টি স্তম্ভ নির্মাণ করেন। সুতরাং এখনো ৩টি স্তম্ভ বিদ্যমান আছে। যার এক কোণে হাজরে আসওয়াদ রাখা হয়।
    কা’বার মূল নাম হলো বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর। হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর যুগ থেকে একটি নিয়ম প্রচলিত ছিল আল্লাহর ইবাদতের জন্য যেখানেই কোন চিহ্ন স্থাপন করা হত তাকে ‘বায়তে ইল’ বা আল্লাহর ঘর বলা হত। কিন্তু যেহেতু এই ঘরটি হযরত ইসমাইল (عليه السلام) মুকা’আব বা ঘন ক্ষেত্রফলের আকৃতিতে নির্মাণ করেছিলেন, তাই এটি ‘কা’বা’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। কা’বার নাম বায়তুল আতীক, মক্কা, বক্কা এবং উম্মুল ক্বোরাও এসেছে। বিভিন্ন কিতাবে কা’বার আরও অনেক নাম লেখা রয়েছে। প্রায় ১৮টি নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। সব নামের মধ্যে মক্কা ও কা’বা নামে বেশি প্রসিদ্ধ। কা’বা ঘরে অসংখ্য মূর্তি ছিল।  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মক্কা বিজয়ের দিন মূর্তিগুলো ভেঙ্গে আল্লাহর ঘর খানায়ে কা’বাকে একমাত্র আল্লাহ'র উপাসনালয়ে পরিণত করেছিলেন। হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর যুগ ও তাঁর পরবর্তী যুগগুলোতে দেয়াল পূর্বের মতই ছিল। কয়েকবার আগুন ধরে কা’বা জ্বলে গিয়েছিল।
    অনুমান করা হচ্ছে আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রাদিআল্লাহু আনহু এর যুগ পর্যন্ত পুরাতন গিলাফের ওপর নতুন গিলাফ পরিয়ে দেয়ার প্রচলন ছিল। এ-কারণেই তাঁর যুগে কা’বা ঘরে আগুন লেগেছিল। এর পরেও এই রীতি চালু ছিল। ইসলামী যুগেও কা’বার ওপর চাদর পরানোর রীতি ছিল এবং অদ্যবধিও প্রতি বছর হজ্বের দিন নতুন গিলাফ পরানোর প্রথা চালু রয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। 

❏ প্রশ্ন-৫৪: কখন কোন সময় থেকে কা’বায় গিলাফ লাগানো শুরু হয়? এই রীতিটি কে চালু করেন?

✍ উত্তর: হিজরতের ২২০ বছর পূর্বে কা’বার ওপর গিলাফ পরানোর রীতি চালু হয়। সর্বপ্রথম তুব্বা আবু কুরব আস‘আদ শাহ হুমাইর কা’বা ঘরকে স্বর্ণাবৃত চাদরের গিলাফ পরান। কা’বার জন্য একটি দরজা ও তালা-চাবিও বানিয়েছিলেন। এই রীতি তার অনুসারীদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। তারা চামড়া এবং মিসরীয় কাপড়ের গিলাফ পরাত। এরপর অন্যান্য ভক্তরাও গিলাফের জন্য কাপড় পাঠাত।
কুসাই গিলাফ বাবদ গোত্রসমূহকে বাৎসরিক সহযোগিতা করতে একটি নির্ধারিত অংকের অনুদান ধার্য করে দেন।
ইসলামের পূর্বে এই রীতি ছিল যে, আবু রবিআ‘ বিন মুগিরা এক বছর গিলাফের ব্যবস্থা করতো আর অপর বছর কুরাইশের বিভিন্ন গোত্ররা করতো।
অন্ধকার যুগ ও ইসলাম-পূর্ব যুগের কা’বার সম্মান ও সৌন্দর্য্য-বর্ধনের এই রীতি-নীতি ইসলাম প্রণেতা নবী মুহাম্মদ (ﷺ) ও ঠিক রেখে নিজেই ইয়ামেনী কাপড়ের গিলাফ দ্বারা কা’বা ঘরকে সজ্জিত করেন। তাঁর পরে হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান রাদিআল্লাহু আনহুমও সৌন্দর্য বর্ধনের রীতি বহাল রাখেন। এরপর আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (رضى الله تعالي عنه) মিসরীয় কবাতি কাপড় এবং স্বর্ণাবৃত কাপড় দ্বারা গিলাফ টানেন। এ-ভাবে উমাইয়া ও আব্বাসীসহ অন্যান্য খেলাফত যুগে খুব গুরুত্বের সাথে কা’বায় চাঁদর পরানো হত। কেউ এ-কথা বলেননি যে, এই সম্মান ও সৌন্দর্য বর্ধন রীতি অন্ধকার যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সুতরাং তা জায়েয হবে না। বুঝা গেল, ভালো সর্বদাই ভালো থাকে, আর মন্দ সর্বদা মন্দই হয়। অবশ্য স্পষ্টভাবে শরীয়তের কোন বিধান আসলে ভিন্ন কথা।
রোম বাদশার পক্ষ থেকে খুব শানদার ও ধুমধামের সাথে এই পবিত্র কাজটি করা হত। কুরাইশরা হাতিম ব্যতীত অন্য তিন পাশে একেক গজ করে যে অংশটা ছেড়ে দিয়েছিল মুহিব্বুদ্দিন তবরী শাফেয়ী এর যুগে সে-স্থানে প্রাচীরের নিম্নভাগে ১৬ আঙ্গুল পরিমাণ উঁচু করে টিলা তৈরি করে দেয়া হয়। যাতে সেদিক দিয়ে কেউ যাতায়াত করতে না পারে। দর্শকরা যাতে মনে করে, এটি দেয়ালের ভিত্তি মজবুত থাকার জন্য দেয়া হয়েছে। (মসজিদে হেরেমের ইতিহাস)
আবদুল মালিক বিন মারওয়ান নবী কারীম(ﷺ)   -এর অনুসরণ করেন। আব্বাসীয় খলিফা মাহদী ১৬০ হিজরীতে হজ্ব করার সময় প্রত্যক্ষ করেন যে, কা’বা ঘরের ওপর অসংখ্য চাঁদর ঝুলে আছে। খাদেম-সেবকদের কাছে এই বলে অভিযোগ করলেন, যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে এগুলোর ভারে তো ছাদের ক্ষতি হবে। তাঁরই আদেশে কা’বার ওপর শুধুমাত্র একটি চাঁদর রাখা হয়। এই নিয়ম এখনও চালু রয়েছে। প্রতি বছর হজ্বের দিন সকালে নতুন চাঁদর পরানোর সময় পুরাতন চাঁদরটি খুলে ফেলা হয়। পুরাতন চাঁদর যদি ফেঁটে-ছিড়ে যায়, সাধারণত তা মক্কার গভর্নর শরীফ হুসাইনের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হতো।
যদি হজ্ব জুমার দিন হয়, তাহলে তা বাদশার কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া হতো। অবশিষ্ট অস্বর্ণ খচিত কাপড় কা’বার তত্ত্বাবধায়ক শায়খ সিবী নিয়ে নিতেন এবং যে-কোনভাবে তা হাজীগণের হাতে পৌঁছে দিতেন। সুতরাং বাবুস্ সালামের কাছেই এর জন্য নির্দিষ্ট দোকান রয়েছে। গজ প্রতি সাত থেকে পনের রিয়ালে এটি কিনাতে পাওয়া যেত।

❏ প্রশ্ন-৫৫: কা’বা শরীফের ভিত্তি যা ইবরাহীম (عليه السلام) করেছিলেন এবং বর্তমান ভিত্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা?

✍ উত্তর: হ্যাঁ! অবশ্যই আছে। নিম্নোক্ত পরিমাপের ভিত্তিতে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যাবে।

১. রুকনে হাজরে আসওয়াদ থেকে রুকনে ইরাকী পর্যন্ত ৩২ গজ হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) এর ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর বর্তমান ভিত্তি হচ্ছে- ২৫ গজ।
২. রুকনে ইরাকী থেকে রুকনে শামী পর্যন্ত ২২ গজ। আর বর্তমান ভিত্তি হচ্ছে-২৪ গজ।
৩. রুকনে শামী থেকে রুকনে ইয়েমেনী পর্যন্ত ৩১ গজ। আর বর্তমান ভিত্তি হচ্ছে- ২২ গজ।
৪. রুকনে ইয়েমেনী থেকে রুকনে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত ২০ গজ। আর বর্তমান ভিত্তি হচ্ছে- ২১ গজ।


গোসল,অযু ও তায়াম্মুমের বর্ণনা-


❏ প্রশ্ন-৫৬: অযু কি দাঁড়িয়ে করা উচিত, না বসে করা? এ-দু’টির কোনটি উত্তম? 

✍ উত্তর: বসে অযু করা অযুর অন্যতম আদব। কারণ অযুর একটি আদব হলো, উঁচু স্থানে বসে অযু করা। যাতে ব্যবহৃত পানির ছিঁটা-ফোঁটা  শরীরে ও পোশাকে না পড়ে।

ومن الآداب أن يكون جلوسه على مكان مرتفع.

উঁচু স্থানে বসে অযু করা অযুর অন্যতম আদব। 
81. হালবী কাবীর, পৃষ্ঠা- ৩১, অযু অধ্যায়, খন্ড-১।

ومن الآداب أن يجلس المتوضي مستقبل القبلة عند غسل سائر الأعضاء.

‘অযুর আদব হচ্ছে, অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ধৌত করার সময় কেবলামুখী হয়ে বসা।’ 
82. দুররে মুখতার, অযুর আদবসমূহ, পৃষ্ঠা- ১২৭, খন্ড-১।

الجلوس في مكان مرتفع تحرزا عن الماء المستعمل وعبارة الكمال وحفظ ثيابه من التقاطر وهي أشمل.

উঁচু স্থানে বসে অযু করলে ব্যবহৃত পানি শরীরে বা কাপড়ে লাগা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মূলকথা হচ্ছে ব্যবহৃত পানির ফেঁাটা কাপড়ে লাগা থেকে হেফাযত হবে এবং এটাই যুক্তিযুক্ত। 
83. সেআ’য়া, অযুর আদবসমূহ, পৃষ্ঠা- ১৮।

❏ প্রশ্ন-৫৭: শীতকালে অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো এমনভাবে শুকিয়ে যায় যে, তাতে পানি প্রবাহিত করলেও শরীর শুকনো থেকে যায়। অথবা পাথর-ভূমিতে বেশি চলা-ফেরার কারণেও অনেক সময় শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ শুকনো হয়ে যায়। এই পরিস্থিতে কী করণীয়?

✍ উত্তর: শীতকালে পা অধিকাংশই শুকনো থাকে এবং পানিতে শরীরের অঙ্গগুলো ভালভাবে ধৌত করতে পারে না। এই কারণেই ফোকাহা-ই কেরাম বলেন, ধোয়ার পূর্বে অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো ভিজিয়ে নিবে। ফলে অযুর পানি যখন প্রবাহিত হবে তখন পানি অঙ্গগুলো ভালোভাবে ভেজাতে পারবে এবং অযুর অঙ্গগুলো ভালোভাবে ধৌত করা সম্ভব হবে।
বাদায়েউস্ সানায়ে‘ (পবিত্রতা অধ্যায়) খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩, এ আছে, 

عن خلف بن أيوب أنه قال: ينبغي للمتوضئ في الشتاء أن يبل أعضاءه شبه الدهن، ثم يسيل الماء عليها؛ لأن الماء يتجافى عن الأعضاء في الشتاء.

হজরত খলফ বিন আইয়ুব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শীতকালে অযুকারীর জন্য উচিত হলো (প্রথমে) শরীর তৈল মালিশের মত অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পানিতে ভিজিয়ে দেয়া অতঃপর পানি প্রবাহিত করা। নচেৎ শীতকালে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পানি যথাযথ ভাবে পৌঁছবেনা।
ফতোয়ায়ে হিন্দিয়াতে আছে, 

في الشتاء أن يبل أعضاءه بالماء شبه الدهن.

অর্থাৎ- শীতকালে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অযুর পানি দ্বারা এমনভাবে সিক্ত করবে, যেমনি ভাবে শরীরে তেল মালিশ করা হয়।

এ-কারণেই ইমাম কাসানী(رحمه الله تعالي ) ‘شبه الده)’ ‘তৈল মালিশের ন্যায়’ বলেছেন। ثم يسيل الماء عليها  অর্থ: অতঃপর তার ওপর পানি প্রবাহিত করবে। 
لأن الماء يتجافى عن الأعضاء في الشتاء - 
দ্বারা বুঝা যায় এটি মুস্তাহাব। 
84. ফতোয়া হিন্দিয়া, তৃতীয় অধ্যায়- মুস্তাহাবসমূহের বর্ণনা, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৯।

❏ প্রশ্ন-৫৮: গরম পানি দ্বারা অযু করা কি জায়েয? এ-বিষয়ে শরয়ী হুকুম কী?

✍ উত্তর: যে কোন পাক-পবিত্র পানি দ্বারা অযু করা বৈধ। হোক তা গরম কিংবা ঠান্ডা পানি। প্রত্যেক প্রকারের পানি দ্বারা অযু করা জায়েয। হ্যাঁ! অবশ্য সূর্যের তাপে উত্তপ্ত পানি দিয়ে অযু করা চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়। সুতরাং এটি তবয়ী মাকরূহ বা প্রাকৃতিক অপছন্দনীয় বিষয়। শরয়ী মাকরূহ নয়।

أن عمر بن الخطابؓ كان يسخن له ماء في قمقمة ويغتسل به.

বর্ণিত আছে যে, হযরত ওমর বিন খাত্তাব (رضى الله تعالي عنه)-এর জন্য তামার পাত্র বা ডেক্সীতে পানি গরম করা হতো। তিনি ঐ পানি দিয়ে অযু বা গোসল করতেন।
আরও একটি বর্ণনা,

أن عمر بن الخطابؓ  قال: لا تغتسلوا بالماء المشمس ، فإنه يورث البرص.

অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত ওমর ফারুক (رضى الله تعالي عنه) বর্ণনা করেন, তোমরা রৌদ্রের গরম পানি দ্বারা গোসল করোনা। কারণ এতে শ্বেত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 
85. দারে-কুতনী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৭৩, উত্তম পানি অধ্যায়।

عن عائشة رضى الله عنها قالت: نهى رسول الله صلّى الله عليه وسلّم أن يتوضأ بالماء المشمَّس.

হযরত আয়েশা (رضى الله تعالي عنها) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) রৌদ্রের উত্তপ্ত পানি দিয়ে অযু করতে নিষেধ করেছেন।  
86. নসবুর রায়া, পৃষ্ঠা-১০২-১০৩, অধ্যায়ঃ যে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন জায়েয। সেআ’য়ার পৃষ্ঠা-৩৩৭, খন্ড- ১, অধ্যায়ঃ সূর্যের তাপে উত্তপ্ত পানি মাকরূহ। ফতোয়া হক্কানিয়া, পৃষ্ঠা-৫১৫, খন্ড-২।

❏ প্রশ্ন-৫৯: বিড়ি, সিগারেট ও হুক্কা পানে কি অযু নষ্ট হয়ে যায়?

✍ উত্তর: অযু বিনষ্টকারী প্রসিদ্ধ কারণসমূহ ছাড়াও প্রত্যেক নেশা-উদ্দীপক বস্তু ব্যবহারে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। আর যেহেতু ফোকাহা-ই কেরাম যে নেশার কথা বলেছেন তা বিড়ি-সিগারেট এবং হুক্কাতে পাওয়া যায় না, তাই এগুলো ব্যবহারে অযু ভঙ্গ হবে না। কিন্তু দুর্গন্ধ দূর করতে ভালোভাবে মুখ ধোয়ে নেয়া এবং ভালোভাবে কুলি করা উচিত। ফতোয়া শামীতে রয়েছে, 

فإنه لم يثبت إسكاره ولا تغيره ولا إضراره، بل ثبت له منافع .

অর্থ: ‘যখন এর দ্বারা নিশা, কোন ধরনের পরিবর্তন এবং ক্ষতি প্রমাণিত হয়নি, বরং এর দ্বারা উপকারিতাই সাব্যস্ত হবে।
87. ফতোয়া শামী, পানীয় অধ্যায়, পৃষ্ঠা-৪৫৯, খন্ড-৬

কেফায়াতুল মুফতি গ্রন্থে আছে, তামাক পানে কিংবা ধুমপানে অযু নষ্ট হয় না। 
88. মুফতি কেফায়াতুল্লাহ, কেফায়াতুল মুফতি, পবিত্রতা অধ্যায়, চতুর্থ অনুচ্ছেদ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৭২

আল্লামা শামীর মতে, 

فان لم يثبت اسكاره، بل ثبت له منافع . 

এতে নেশা নয়, বরং কিছুটা উপকারিতা দেখা যায়। বিষয়টি ভালোভাবে চিন্তা করুন।

❏ প্রশ্ন-৬০: লবনের ওপর তায়াম্মুমের শরয়ী বিধান কি? একজন ব্যক্তি লবনের দোকানে কাজ করে এবং সেখানে যদি তার তায়াম্মুমের প্রয়োজন হয় এবং আশ-পাশে কোন মাটিও না থাকে, তাহলে এই মুহূর্তে উক্ত ব্যক্তি কি লবণের ওপর তায়াম্মুম করলে তা বৈধ হবে? 

✍ উত্তর: হযরত আল্লামা ইবরাহীম হালবী হানাফী (رحمه الله تعالي ) কবীরী গ্রন্থের তায়াম্মুম অধ্যায়ে বলেন, 

ولو تيمم بالملح نظر إن كان مائيا أي كان ماء فجمد ، لا يجوز  لأنه ليس من أجزاء الأرض وإن كان جبليا أى معدنيا وهو ما استحال ملحا من أجزاء الأرض يجوز به التيمم لأنه جنس الأرض 

‘আর যদি লবনের ওপর তায়াম্মুম করতে হয়- তাহলে তৎপূর্বে দেখতে হবে যে, লবন কি লোনা পানি থেকে উৎপন্ন (অর্থাৎ সমুদ্রের লবন) তাহলে এতে তায়াম্মুম জায়েয নেই। যেহেতু এটা মাটির অংশ নহে। আর যদি খনিজ লবন হয় তাহলে এতে তায়াম্মুম জায়েয। যেহেতু এটা মাটির অংশ, পানি জাতীয় নয়।
ফতোয়া কাজীখান-এ উল্লেখ আছে, 

اختلفوا في الجبلى والصحيح هو الجواز . 

‘ওলামাদের মধ্যে খনিজ লবনের ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মতে, জায়েয।’ 
89. বাহরুর রায়েক, তায়াম্মুম অধ্যায়; কাজীখান, অনুচ্ছেদঃ যা দ্বারা তায়াম্মুম জায়েয।

বিশুদ্ধ মত হলো, পাহাড়ী লবন যেহেতু মাটির অংশবিশেষ, তাই তা দ্বারা তায়াম্মুম করা শরয়ীভাবে বৈধ। আর আমাদের দেশে যে লবনগুলো সমুদ্র-পানি থেকে তৈরি হয়, তা দ্বারা তায়াম্মুম জায়েয নয়। 

هذا ما ظهرلى والعلم عندالله تعالىٰ ورسوله الكريم .

‘এটাই আমার বুঝে এসেছে। বাকি প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট।’

❏ প্রশ্ন-৬১: ইসলামী শরীয়তে গোসল কত প্রকার ও কী কী?
✍ উত্তর: ইসলামী শরীয়তে গোসল মোট (৯) নয় প্রকার। তা হলোঃ

১.    মহিলার ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবের পরে রক্ত বন্ধ হলে গোসল করতে হয়। এটি ফরয।
২.    নারী-পুরুষের সহবাস বা স্বপ্নদোষ হলে গোসল করতে হয়। এই দু’প্রকারের গোসলও ফরয।
৩.    জুমার দিন জুমার নামাযের জন্য গোসল করা। এটি সুন্নাতে মুআক্কাদা।
৪.    অমুসলিম মুসলমান হবার পর গোসল করতে হয়। এটিও সুন্নাতে মুআক্কাদা।
৫.    উভয় ঈদের দিন ঈদগাহে যাবার পূর্বে গোসল করা।
৬.    হজ্বের ইহরাম বাঁধার পূর্বে।
৭.    বায়তুল্লায় প্রবেশের পূর্বে। অনুরূপভাবে যিয়ারেতে মোস্তফা(ﷺ)    উদ্দেশ্যে মদিনায় প্রবেশের পূর্বে।
৮.    সিঙ্গা লাগানোর সময়। 
৯.    মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবার পর। এটি মুস্তাহাব। 

শেষ দু’টি গোসল সতর্কতামূলক। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য এটাও মুস্তাহাব যে, কমপক্ষে সপ্তাহে একবার মাথা এবং পুরো শরীর ধৌত করা।

❏ প্রশ্ন-৬২: তায়াম্মুমের সময় দাড়ি খিলাল করার বিধান কী?

✍ উত্তর: অযুতে দাঁড়ি খিলাল তো হয়ে থাকে। তায়াম্মুমেও দাঁড়ি খিলাল করা সুন্নাত। এর জন্য স্বতন্ত্রভাবে মাটিতে হাত মারার প্রয়োজন নেই।

فبقي تخليل اللحية من السنن. 

‘তায়াম্মুমের সময়ও দাঁড়ি খিলাল করা সুন্নাত।’ 
90. রাদ্দুল মুখতার, শামী, তায়াম্মুম অধ্যায়, পৃষ্ঠা-২৩২, 
ফতোয়া হক্কানী, পৃষ্ঠা-৫৫০, খন্ড-২।

❏ প্রশ্ন-৬৩: যদি কারও হাত, পা কিংবা অযুর অন্য যে কোন অঙ্গ জখমপ্রাপ্ত হয়, সে ব্যক্তি ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ বাঁধে এবং অযু করার সময় সে উক্ত স্থানে মাসেহ করে, তাহলে এমন ব্যক্তির ইকতেদা করে জামাত পড়া কি জায়েয হবে?

✍ উত্তর: উল্লেখ থাকে যে, শরীয়তে অপারগতা গ্রহণযোগ্য। যদি উক্ত ব্যক্তিটি শরীয়ী অপারগতার ভিত্তিতে ব্যান্ডেজে মাসেহ করে নামাযে ইমামতি করে এবং উক্ত ক্ষতস্থান থেকে আপনা-আপনি পুঁজ-রক্ত প্রবাহিতও না হয়, তাহলে এমন ব্যক্তির ইমামতিকে ফোকাহা-ই কেরাম বিশুদ্ধ বলেছেন। এ কারণে নামাযে কোন প্রভাব পড়বে না।

মারাকিউল ফালাহ মা‘ত তাহ্তাবী, ইমামত অধ্যায়, পৃষ্ঠা-১৬১ তে রয়েছে, 

وصح اقتداء غاسل بماسح على الخف والجبيرة أو فرصت لا يسيل منها شيء.

‘শরাহ মোতাবেক মৌজা, ব্যান্ডিজ বা এমন ক্ষত যা থেকে পূজ-রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে না, এমন স্থানে মুসেহকারী ইমামের পিছনে পানি দ্বারা অযুকারীর ইকতেদা সহীহ হবে।’



নামাযের বর্ণনা-

❏ প্রশ্ন-৬৪: ফরয নামাযে একই সূরা তাক্রার বা পুনরুক্তি করা যেমন- ফজরের ফরয নামাযের উভয় রাকাআতে সূরা ইখলাস পাঠ করা জায়েয আছে কি না ? বর্ণনা কর।

✍ উত্তর: নফল নামাযে একই সূরা তাক্রার বা পুনরাবৃত্তি করা জায়েয কিন্তু উত্তমের বিপরীত। অবশ্য ফরযসমূহে সূরা তাক্রার করা মাকরূহে তানযিহী। এতে নামাযের কোন ক্ষতি সাধন হবে না।

لا بأس ان يقرأ سورة ويعيدها فى الثانية . قال ابن عابدين افاد أنه يكرهُ تنزيها وعليه يحمل جزم القنية بالكراهة .

‘উভয় রাকাআতে একই সূরা তাকরার বা পুনরুক্তিতে কোন ক্ষতি নেই। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمه الله تعالي ) বলেন, এটা মাকরূহে তানযিহী আর কেনিয়া প্রণেতা এতে মাকরূহ হওয়ার ব্যাপারে জোর রায় দিয়েছেন। 
91. ফতওয়ায়ে শামী, কিরাত অধ্যায়, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৫৪৬।

❏ প্রশ্ন-৬৫: পায়খানা ও প্রস্রাবের বেগ অধিক হওয়া সত্ত্বেও তা চেপে রেখে নামায আদায় করার হুকুম কী?

✍ উত্তর: ফিকহশাস্ত্রবিদগণ বলেছেন, পায়খানা ও প্রস্রাবের হাজত বা বেগ অধিক হওয়া অবস্থায় নামায আদায় করা মাকরূহে তাহ্রিমী। উত্তম হলো, প্রয়োজন সেরে নামায আদায় করা। হ্যাঁ! যদি নামায কাযা বা ওয়াক্ত চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় মাকরূহ বিহীন নামায আদায় করা জায়েয। ফতোয়ায়ে শামীতে আছে,

وصلاته مع مدافعة الاخبثين، قال حسن شرنبلالى ومدافعًا لاحد الاخبثين البول والغائط او الريح... الا اذ خاف فوتُ الوقتِ او فوتُ الجماعة فحينئذٍ يصلى بتلك الحال لان اخراج الصلواة عن وقتها حرام، والجماعة مؤكدة واجبة . قال السيد احمد الطحطاوى تحت الا اذا حاضر.... ظاهره انها تختفى الكراهة عند ذالك.

‘পায়খানা-প্রস্রাবের বেগ অধিক হওয়া অবস্থায় নামায পড়া সম্পর্কে আল্লামা হাসান শরম্বেলালী (رحمه الله تعالي ) বলেন, পায়খানা-প্রস্রাব অথবা পশ্চাৎপদ থেকে বায়ুর বেগ অধিক হওয়া অবস্থায় তা চেপে রেখে নামায পড়া মাকরূহে তাহ্রিমী। কিন্তু নামাযের ওয়াক্ত কিংবা জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তখন সে অবস্থায় নামায আদায় করে নিবে। কেননা নামাযের ওয়াক্ত চলে যাওয়া হারাম এবং জামাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিংবা ওয়াজিব।’
সৈয়দ আহমদ তাহ্ত্বাবী বলেন, এমতাবস্থায় নামায আদায় করা মাকরূহ হবে না। 
92. মারাকিউল ফালাহ فصل ما يكره فى الصلواة, পৃষ্ঠা-২৯২; রদ্দুল মুখতার, باب مكروهات الصلواة, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২৪১।


❏ প্রশ্ন-৬৬: চোখ বন্ধ করে নামায পড়া কী? কিছু লোক চোখ বন্ধ করে নামায আদায় করে, এটা জায়েয কি না?

✍ উত্তর: নামাযে চোখ বন্ধ করা মাকরূহে তান্যিহী বা উত্তমের বিপরীত। তাই চোখ বন্ধ করে নামায না পড়া উচিত। হ্যাঁ! যদি খোদাভীতি, বিনয়-নম্রতা ও একাগ্রতার ভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে চোখ বন্ধ করা হয়, তবে বিনা মাকরূহে জায়েয। কিছু সংখ্যক ওলামা এটাকে উত্তমও বলেছেন।

وكره ..... تغميض عينه للنهى الا لكمال الخشوع . قال ابن عابدين تحت قوله للنهى ثم الظاهر ان الكراهة للتنزيه .

‘এবং চোখবুঝে নামায পড়া মাকরূহ, কিন্তু গভীর মনযোগ বা খোদাভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্য হলে মাকরূহ হবে না। এই মর্মে শামী প্রণেতা ইবনু আবেদীন বলেন, বাহ্যতঃ এটা (চোখবুঝে) মাকরূহে তানযিহী।’ 
93. রদ্দুল মুখতার, باب ما يفسد وما يكره فيها , খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৪৫।

❏ প্রশ্ন-৬৭: শীতকালে লোকজন চাদর কিংবা রুমাল দ্বারা মুখ ঢেকে রাখা অবস্থায় নামায আদায় করে থাকে- এর হুকুম কী?

✍ উত্তর: নামাযে নাক ও মুখ ঢেকে রাখা মাকরূহ। তাই শীত ও গ্রীষ্মকালীন সময় নামাযে এরকম না করা উচিত। কারণ এর দ্বারা নামায মাকরূহ হবে। ফতোয়া হিন্দীয়াতে আছে,

ويكره التلثم وهو تغطية الانف والفم فى الصلواة والتثائب الخ . انه صلى الله عليه وسلّم نهى عن ان يغطىٰ الرجل فاه . 

‘নামাযে নাক-মুখ ঢাকা মাকরূহ অনুরূপ হাই তোলাও। যেহেতু হুযূর   নামাযে মুখ ঢাকতে নিষেধ করেছেন।’  
94. শরহে তাহ্তাবী আলা মারাকিউল ফালাহ, পৃষ্ঠা- ২৮৯।

❏ প্রশ্ন-৬৮: সিজদায় যাওয়ার সময় পায়জামা উপরের দিকে উঠানোর হুকুম কী?

✍ উত্তর: নামাযরত অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া এমন করা মাকরূহ। তবে প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে রুকু-সিজদা করার সহজার্থে এরূপ করা মাকরূহ হবে না। 
95. রদ্দুল মুখতার, باب مايفسد الصلواة وما يكره فيها, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৪০।

❏ প্রশ্ন-৬৯: ইমামের পূর্বে সালাম বলার হুকুম কী?

✍ উত্তর: ফিকহ শাস্ত্রের কিতাবসমূহে এর সুনির্দিষ্ট হুকুম বা বিধান আমার নযরে পড়েনি। অবশ্য সহীহ মুসলিম শরীফের বরাত দিয়ে মিশকাত শরীফের বর্ণনা মতে মাকরূহ বুঝা যায়।

عن انس قال صلى النبى صلّى الله عليه وسلّم ذات يوم فلمّا قضى الصلواة اقبل علينا بوجهه فقال ايها الناس انى امامكم فلا تسبقونى بالركوع ولا بالسجود ولا بالقيام ولا بالانصراف فانى أراكم امامى ومن خلفى. 

‘হযরত আনাস (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে নামায পড়ালেন এবং নামায শেষে তাঁর চেহারা মুবারক আমাদের দিকে ফিরিয়ে বললেন, হে লোকেরা! আমি তোমাদের ইমাম; তাই তোমরা রুকু, সিজদা, কিয়াম এবং নামায শেষ করার ক্ষেত্রে আমার অগ্রগামী হয়ো না। নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে আমার সামনে যেমন দেখি, পেছনেও তেমনি সমানভাবে দেখতে পাই।’ অর্থাৎ মুকতাদীদের ওপর ইমামের অনুসরণ অনুকরণ করা অবশ্যই ওয়াজিব।  
96. সহীহ মুসলিম, باب ما على الماموم من المتابعة, 

❏ প্রশ্ন-৭০: একই রাকাআতে একাধিক সূরা পাঠ করা জায়েয কি না?

✍ উত্তর: এক রাকাআতে একটি সূরা পড়াই উত্তম। যদি একাধিক সূরা পাঠ করা হয়, এতে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। যদিও তা (অবশ্যই) অনুত্তম। 
97. মারাকিউল ফালাহ, باب ما يكره فى الصلواة

❏ প্রশ্ন-৭১: ইমাম সাহেব নামায কখন আরম্ভ করবেন?

✍ উত্তর: قَدْ قَامَتِ الصَّلٰواةُ বলার সময় ইমামের নামায আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যদিও ইমাম আবু ইউসুফ (رحمه الله تعالي ) ইকামত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। মূলতঃ এ মতানৈক্য শুধু মুস্তাহাব সম্পর্কে। উভয় অবস্থায় কোন অসুবিধা ও ক্ষতি নেই।

ولو اخّر حتى اتمها لابأس به اجماعًا .

‘যদি ইকামত শেষ হওয়া পর্যন্ত নামায আরম্ভে বিলম্ব করে তাতে সর্বসম্মতিক্রমে কোন ক্ষতি নেই।’ 
98. তাহতাবী শরহে মারাকিউল ফালাহ, باب اداب الصلواة, পৃষ্ঠা-২২৫; ফতওয়া শামী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৭৯।

❏ প্রশ্ন-৭২: নামাযী বা মুসল্লিকে সালাম ফিরানোর সময় কী করা উচিত?

✍ উত্তর: মুসল্লি সালাম ফিরানোর সময় ইমাম ও ফিরিশতার নিয়ত করা উচিত। 

জেনে রাখা আবশ্যক, নামাযী তিন প্রকার: 
১. ইমাম 
২. মুক্তাদী এবং 
৩. মুনফারিদ বা একাকী নামায আদায়কারী।

নামাযী যদি মুক্তাদি হয় এবং ইমামের ডান পাশে থাকে তাহলে ডানদিকে সালাম ফিরানোর সময় ফিরিশতা, ডান দিকের মুক্তাদি এবং ইমামকে উদ্দেশ্য করে সালাম দেয়া উচিত। আর ইমাম যদি বাম পাশে হয়, তাহলে বাম পাশের মুক্তাদি, ফিরিশতা ছাড়াও ইমামেরও নিয়ত করতে হবে। আর যদি মুক্তাদি কাতারের ঠিক মাঝখানে ইমামের সোজা পেছনে দাঁড়ায়, তাহলে উভয় দিকে সালাম দেয়ার সময় ইমামের নিয়ত করবে। আর নামাযী যদি ইমাম হয়, তাহলে ইমামের উভয় পাশের মুক্তাদির নিয়ত করবে। আর নামাযী একাকী হলে সালামের সময় উভয় পাশের ফিরিশতাগণের নিয়ত করবে। ফতোয়া হিন্দীয়াতে আছে,

و ينوى من عنده من الحفظة والمسلمين فى جانبيه والمقتدى يحتاج الى نية الامام مع نية من ذكرنا .  

‘ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর সময় ফিরিশতা ও উভয়দিকের মুসল্লিদের নিয়ত করবে এবং মুকতাদী ইমামেরও ‘নিয়ত করবে’ উল্লেখিতদের সাথে।’ 
99. ফতেওয়া হিন্দীয়া, الفصل الثالث من سنن الصلواة وآدابها খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৭৭।

❏ প্রশ্ন-৭৩: নামাযে ছানার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া হয় না কেন? এটা রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস 
كل امر ذى بال لم يبداء ببسم الله الخ- এর বিপরীত আমল নয় কি? দলীলসহ বর্ণনা কর।

✍ উত্তর: নামাযে ছানা سُبْحَانَكَ اَللهم وَبِحَمْدِكَ الخ এর পূর্বে বিসমিল্লাহ শরীফ পড়ার কোন প্রমাণ নেই। বরং তাকবীরে তাহরীমার পর হাত বেঁধে ছানা পাঠ করার পর বিসমিল্লাহ শরীফ পাঠ করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং ফিকহ্ শাস্ত্রের সকল কিতাবে সংরক্ষিত রয়েছে। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضى الله تعالي عنها) হতে বর্ণিত আছে,

-
َالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ قَالَ سُبْحَانَكَ اللهم وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا إِلٰهَ غَيْرُكَ-  

হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (رضى الله تعالي عنها) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযুর (ﷺ) যখন নামায শুরু করতেন অর্থাৎ تكبير تحريمه বাঁধার পর ছানা পড়তেন এবং বলতেন, سُبْحَانَكَ اَللهم হে আল্লাহ্! তোমারই তাসবীহ পাঠ করি, তোমারই প্রশংসায় বিভোর, তোমার নাম বরকতপূর্ণ, তোমার মহিমা সুউচ্চ ও সমুন্নত, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।’  
100. জামে তিরমিযী, ابواب الصلواة، باب ما يقول عنه افتتاح الصلواة , খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৫৭।

আল্লামা ইবনে নজীম হানাফী মিসরী (رحمه الله تعالي ) বলেন-

اى يضع قائلا سبحانك اللهم وبحمدك الخ، وقد تقدم انه سنة لرواية الجماعة انه كان صلى الله عليه وسلّم يقول اذا افتتح الصلواة .

‘তাকবিরে তাহরীমা বলে উভয় হাত নামিয়ে ছানা পড়বে। এর পূর্বেও ছানা পড়া সুন্নাত বলে বর্ণনা রয়েছে যে, হুযুর   এরশাদ করেছেন- যখন নামায শুরু করবে তখনি ছানা পড়বে।’ 
101. বাহরুর রায়েক, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩০৯।

❏ প্রশ্ন-৭৪: এশার নামায বিলম্বে আদায় করার হুকুম কী?

✍ উত্তর: এশার নামায বিলম্বে আদায় করা উম্মতে মুহাম্মদীর বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব। এশার নামায যেমন আমাদের জন্য খাস তেমনি পুরো  পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও আমাদের পূর্ববর্তী কোন উম্মত পায়নি। এ মহান নিয়ামত আমাদের প্রিয়নবী সৈয়্যদুল মুরসালীন (ﷺ) ব্যতীত পূর্ববর্তী কোন নবী-রাসূলের ক্ষেত্রে  পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিতভাবে ছিল না। ইমাম সুয়ূতী (رحمه الله تعالي ) ‘খসায়েস শরীফে’ একটি অধ্যায় লিখেছেন,

ختصاصه صلى الله عليه وسلّم بمجموع الصلواة الخمس ولم تجمع لاحد . 

‘হুযূর এর বিশেষত্বের মধ্যে  পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিত হওয়াকে গণ্য করা হয়েছে। এ সৌভাগ্য অন্য কেউ পাননি।’ যা জনাবে মোস্তফা (ﷺ)   এবং মোস্তফা (ﷺ)-এর উম্মতকে বিশেষভাবে দান করা হয়েছে। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আমিরুলহাজ্ব ‘হুলিয়া শরীফে’ বর্ণনা করেছেন-

هذه الصلواة تفرقت فى الانبياء وجمعت فى هذه الامة . 

‘পূর্ববর্তী নবীগণের (عليه السلام) মাঝে উক্ত নামাযসমূহ পৃথক পৃথক ছিল। আর উম্মতে মুহাম্মদী  কে সবগুলো নামায একত্রিতভাবে দেয়া হয়েছে।’
ইমাম যুরকানী (رحمه الله تعالي ) বলেছেন-  
لم يجمع لاحد غيرهم من الانبياء والامم . 

‘হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উম্মত ছাড়া পূর্ববর্তী কোন নবী এবং উম্মতের ওপর  পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিত হয়নি।’
‘হুলিয়া শরীফে’ উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ নামাযসমূহ আম্বিয়া কিরামের (عليه السلام) মাঝে পৃথক পৃথকভাবে ছিল। শুধু মোস্তফা(ﷺ)  -এর উম্মতকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিতভাবে দেয়া হয়েছে। অতঃপর বলেন-

 فذكر الفجر لادم والظهر لابراهيم والعصر لسليمان والمغرب لعيسى عليهم الصلواة والسلام، ثم قال واما العشاء فخصصت بها هذه الامة . 

‘ফজর- হযরত আদম (عليه السلام)-এর জন্য, যোহর- হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর জন্য, আসর- হযরত সোলাইমান (عليه السلام)-এর জন্য এবং মাগরিব- হযরত ঈসা (عليه السلام)-এর জন্য ফরয ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, এশার নামায এই উম্মতের জন্য নির্দিষ্ট।’
বর্ণিত প্রশ্নের উত্তর হলো, এশার নামায উম্মতে মুহাম্মদীর অনন্য বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব। হযরত মু‘আয (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে,

انكم فضلتم بها على سائر الامم- 

‘তোমরা সকল উম্মতের ওপর এশার নামাযের কারণে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল হয়েছ।’
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এশার নামায বিলম্ব করেন। অতঃপর যখন মসজিদে তাশরীফ আনেন তখন মানুষ নামাযের জন্য অপেক্ষমান ছিল। তিনি বলেন, 

اما انه ليس من اهل هذه الاديان احد يذكرالله تعالى هذه الساعة غيركم-

‘জেনে রাখো, তোমরা এমন এক শুভ সময়ে অবস্থান করছো, যে সময় তোমরা ছাড়া অন্য কোন ধর্মাবলম্বী মহান আল্লাহ তা‘আলার যিকির করছে না।’
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত আছে যে, لَيْسَ اَحَدٌ مِنْ اَهْلِ الْاَرْضِ অর্থ-‘সমগ্র ভূ-মন্ডলে তোমরা ছাড়া অন্য কেউ নামাযের জন্য অপেক্ষমান নেই।’ অর্থাৎ এ সময় পৃথিবীতে তোমরা ছাড়া অন্য কেউ নামাযের জন্য অপেক্ষা করছে না।
অন্য একটি হাদীস হযরত আবু মূসা আশ‘আরী (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, হুযূর   এক রাত্রে এশার নামায অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করেন। অতঃপর তাশরীফ আনেন এবং নামায আদায় করেন। নামায শেষে ইরশাদ করেন, যারা উপস্থিত আছ তারা অন্যদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও যে, 

لمن حضره ابشروا ان من نعمة الله عليكم انه ليس احد من الناس يصلى هذه الساعة غيركم- 

‘আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদের ওপর এ মহান নিয়ামত যে, এ সময় তোমরা ছাড়া অন্য কেউ নামায পড়ছে না।’

أو قال ما صلى هذه الساعة احد غيركم . 

‘অথবা এ রকম বলেছেন, এ সময় তোমরা ছাড়া অন্য কেউ নামায পড়ছে না।’ 
102. সীরাতে মোস্তফা, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-৮৬৫।

❏ প্রশ্ন-৭৫: মহিলাদের স্বতন্ত্র ও এককভাবে জামাতে নামায পড়ার হুকুম কী?

✍ উত্তর: শুধুমাত্র মহিলাদের স্বতন্ত্র ও একক জামাত মাকরূহে তাহরীমী। ‘দুর্রুল মুখতার’-এর ৫৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

ويكره تحريما جماعة النساء . 

অর্থাৎ- ‘মহিলাদের স্বতন্ত্র একক জামাত মাকরূহে তাহরিমী।’ ‘হিন্দিয়া’য় উল্লেখ আছে যে,

ويكره امامة المرأة للنساء فى الصلواة كلها من الفرائض والنوافل الا فى صلواة الجنازة، هكذا فى النهاية- 

‘ফরয ও নফল সকল নামাযে মহিলাদের জন্য ইমামতি করা মাকরূহ। কিন্তু জানাযার নামায ছাড়া। হিন্দীয়া গ্রন্থেও অনুরূপ উল্লেখ আছে।’
এতদ্সত্ত্বেও যদি মহিলারা জামাতে নামায পড়তে চায়, তাহলে মহিলা ইমাম কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবে। পুরুষদের ন্যায় কাতারের সামনে একাকী দাঁড়াবে না। আর মহিলা ইমাম পুরুষ ইমামের ন্যায় কাতারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে গোনাহগার হবে।
হ্যাঁ! আল্লামা ‘আইনি, ইমাম ইবনে হুমাম এবং মওলানা আবদুল হাই লক্ষ্মৌভি (رحمه الله تعالي )-এর গবেষণা মতে মহিলাদের জামাত অনুত্তম। মহিলারা পুরুষদের জামাতে পর্দা ও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পেছনে এক পাশের্ব দাঁড়িয়ে যদি ইচ্ছে করে নামায পড়তে পারবে। আর জামাত ছাড়া তারা যদি একাকী নামায পড়ে, তা হবে তাদের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট।

فان فعلن وقعت الامام وسطهن و بقيامها وسطهن لا تزول الكراهة . وان تقدمت عليهن امامهن لم تفسد صلاتهن . هكذا فى الجوهرة النيرة . وصلاتهن فرادى افضل، هكذا فى الخلاصة . 

‘যদি তারা জামাতে নামায পড়তে চায়, তাহলে ইমাম দাঁড়াবে কাতারের মাঝখানে এবং কাতারে দাঁড়ালেও মাকরূহ মুক্ত হবে না। আর ইমাম কাতারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও নামায ফাসেদ হবে না, ‘জওহারাতুন্ নাইয়্যেবা’ গ্রন্থে এভাবে উল্লেখ আছে। আর মহিলাদের নামায একাকী আদায় করা উত্তম, যা ‘খোলাসা’ গ্রন্থে লিখা আছে।’ 
103. খোলাসাহ, باب الامامة, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৮৫।

❏ প্রশ্ন-৭৬: নামাযীর সামনে দিয়ে মহিলা চলে গেলে নামায ফাসেদ বা ভঙ্গ হবে কি না?

✍ উত্তর: নামাযীর সামনে দিয়ে মহিলা চলে গেলে নামায ফাসেদ হবে না যেমন, ফতোয়া শামীতে উল্লেখ আছে,

قال ابن عابدين قوله ولوامرأة او كلب . هذا بيان للاطلاق واشاربه الى الرد على الظاهرة بقولهم يقطع الصلواة مرورالمرأة والكلب والحمار وعلى احمد فى الكلب الاسود. 
او مرّ مارّ فى موضع سجوده لاتفسد سواء المرأة والكلب والحمار لقوله صلى الله عليه وسلّم لا يقطع الصلواة شئى وادرؤا ما استطعتم فانما هو شيطان وان اثم المار. 

‘ইবনে আবেদীন শামী (رحمه الله تعالي ) বলেন- 
قوله ولو امرأة اوكلب অর্থাৎ- যদিও পথচারী কোন মহিলা কিংবা কুকুর হয়’, এ উক্তিটি জাহিরিয়াদের উক্তি। ‘মহিলা, কুকুর কিংবা গাধা নামাযীর সামনে দিয়ে চলে গেলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে’ উক্তিকে খন্ডন করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইমাম আহমদ (رحمه الله تعالي ) এর মতে, কালো কুকুর সামনে দিয়ে চলে গেলে নামায ফাসেদ হবে’। 
104. রদ্দুল মুখতার, যে-সব কারণে নামায ভঙ্গ হবে অধ্যায়, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৩৬, মিসরী ছাপা।

‘কোন মহিলা, কুকুর কিংবা গাধা নামাযীর সামনে দিয়ে চলে গেলে নামায ফাসেদ হবে না। কেননা হুযূর   ইরশাদ করেন, কোন বস্তু বা বিষয় নামায ভঙ্গ করে না। যতদূর সম্ভব তোমরা পথচারীকে বাঁধা দিবে। কারণ উক্ত পথচারী শয়তান এবং এতে পথচারীই গোনাহগার হবে’। 
105. মারাকিউল ফালাহ, পৃষ্ঠা-২০৫, ফতওয়া হক্কানিয়া, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-২২৮।

❏ প্রশ্ন-৭৭: ইমাম নামায আদায়ের নিমিত্তে সম্পূর্ণরূপে মিহরাবের ভিতর দাঁড়ানোর ফলে তাঁর উঠা-বসা, রুকু-সিজদা এবং তাঁর প্রত্যেক কর্মকান্ড ও অবস্থা সম্পর্কে মুক্তাদিরা অজ্ঞাত থাকলে অথবা ইমাম নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালে মুক্তাদিগণ তাঁর কর্মকান্ড ও অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজানা থাকলে- এমতাবস্থায় নামাযের হুকুম কী?

✍ উত্তর: ইমাম মিহরাবে এভাবে দাঁড়ানো যাতে মুকতাদিরা তার অবস্থার পরিবর্তন ও কর্মকান্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে- এমতাবস্থায় নামায মাকরূহ হবে। হ্যাঁ! অবশ্য ইমাম যদি এমন স্থানে দাঁড়ায় যাতে তার সকল কার্যক্রম ও অবস্থা সম্পর্কে মুক্তাদিরা অবগত থাকে, তবে মাকরূহ হবে না। যেহেতু ইমামের কার্যক্রম মুক্তাদিগণের নিকট অস্পষ্ট নয়, তাই মাকরূহ হবে না। 
অনুরূপ ইমাম নির্দিষ্ট স্থানে এবং মুক্তাদিরা আঙ্গিনায় দাঁড়ালে, তখন ইমামের সকল কার্যক্রম ও অবস্থা তাদের নিকট স্পষ্ট হলে নামায বিনা মাকরূহে জায়েয। আর যদি অজানা থেকে যায়, তাহলে মাকরূহ হবে। 
106. দুররুল মুখতার শরহে রদ্দুল মোহতার, অধ্যায়: নামাযের পরের বর্ণনা, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৪৫।

قيام الامام فى المحراب لاسجوده فيه وقدماه خارجه لان العبرة للقدم مطلقًا وان لم يتشبه حال الامام ان علل بالتشبه وان بالاشتباه ولا اشتباه فلا اشتباه فى الكراهة، قال الشيخ السيد احمد الطحطاوى لايكره قيام الامام بجملة فى المحراب لاقيامه خارجه وسجوده فيه مسمّى محرابًا لانه يحارب النفس والشيطان بالقيام اليه والكراهة لاشتباه الحال على القوم واذا ضاق المكان فلا كراهة . 

‘সম্পূর্ণভাবে মিহরাবে দাঁড়ানো মাকরূহ। হ্যাঁ! যদি মিহরাবে সিজদা পড়ে আর উভয় পা মিহরাবের বাইরে থাকে তাহলে মাকরূহ হবে না। যেহেতু নামাযে কদমের অবস্থান প্রযোজ্য। এতে যদিও ইমামের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে না হয়।
ইমাম তাহ্তাবী বলেন, ইমাম সম্পূর্ণরূপে মিহরাবের ভিতর দাঁড়ালে নামায মাকরূহ হবে না। আর যদি মিহরাবের বাইরে দাঁড়ায় এবং মিহরাবে সেজদা করে তবে ভিন্ন কথা।
মিহরাব নামকরণের কারণ হচ্ছে যেহেতু এখানে স্বীয় রিপু ও শয়তানের সাথে যুদ্ধ করা হয়, তাই মিহরাব নামকরণ করা হয়েছে। এখানে দাঁড়ানো মুক্তাদির সাপেক্ষে মাকরূহ বলা হয়েছে। তথাপি জায়গার সঙ্কীর্ণতা হলে মাকরূহ হবে না।’ 
107. তাহতাবী আলা দুর্রিল মুখতার, মাকরূহ পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা-২৯৪।

সারকথাঃ ইমাম মিহরাব কিংবা নির্ধারিত এমন স্থানে দাঁড়ালে মুক্তাদিরা তার অবস্থার পরিবর্তন বা কর্মকান্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকলে নামায মাকরূহ হবে। অন্যথায় মাকরূহ হবে না।

❏ প্রশ্ন-৭৮: নামাযে নবীকুল সরদার বুরহানুত্ তাওহীদ হুযূর মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কল্পনা ও ধ্যান আসলে নামায ভঙ্গ কিংবা নামাযের কোন ক্ষতি হবে কিনা? কিছু অনুপযুক্ত লোকের ধারণা যে, এতে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে- বর্ণনা কর।

✍ উত্তর: নামাযে তাওহীদের সাক্ষ্য হযরত মুহাম্মদ  -এর ধ্যান ও চিন্তা-ভাবনা আসা মানে ঈমানী ও রূহানী খোরাক দ্বারা সৌভাগ্যবান হওয়া। এখানে নামায ফাসেদ হওয়া তো দূরের কথা বরং নামাযে হুযূর (ﷺ)-এর পবিত্র খেয়াল ও কল্পনা আসা নামায গ্রহণীয় ও পরিপূর্ণতার স্থানে পৌঁছার অন্যতম মাধ্যম। কেননা আত্-তাহিয়্যাতু এবং দরূদ শরীফ পাঠ করলে মু’মিনের অন্তরে রাহমাতুলি­ল আলামীন (ﷺ)-এর খেয়াল ও ধ্যান স্বাভাবিকভাবে এসে যায়, যা ঈমানের দাবী। على سبيل التعظيم لا على العبادة ‘যা হুযূর (ﷺ) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয়।’ আর কেবল খেয়াল ও ভাবনার দ্বারা নামায ফাসেদ হবে না। 

❏ প্রশ্ন-৭৯: পাগড়িবিহীন ইমামের পেছনে নামায পড়া জায়েয কি না? কতিপয় লোক পাগড়ির ব্যাপারে এমন কঠোরতা অবলম্বন করে যে, তারা পাগড়ি ছাড়া নামায না-জায়েয মনে করে। শরয়ী বিধান মতে তাদের উক্ত ধারণা সঠিক কি না?

✍ উত্তর: নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, পাগড়ি পরিধান করা হুযূর (ﷺ) এর একটি উত্তম সুন্নাত ও সম্মানী পোশাক। কিন্তু এটা হুযূর সৈয়্যদে ‘আলম (ﷺ)-এর স্বভাবগত সুন্নাত, সুন্নাতে হুদা বা নির্দেশিত সুন্নাত নয়।

كالسواك والافعال المعهودة فى الصلواة وفى خارجها وتاركها غير معاقب . 

‘যেমন মিসওয়াক এবং নামাযের ভেতরে-বাইরে অনুসরণীয় কাজ যেগুলো বর্জনকারী শাস্তির উপযোগী নয়।’

সুন্নাত দু’প্রকার: 
এক. হুযূর  -এর মুবারক স্বভাবগত সুন্নাত। 
দুই. শরীয়তের স্বীকৃত সুন্নাত।

مشتركٌ بين ما صدر عن النبى صلى الله عليه وسلّم عليه بلا وجوب من قول اوفعل او تقرير . 

নবী কারীম(ﷺ)    থেকে ওয়াজিব ব্যতীত কথা, কর্ম ও সম্মতি যা প্রকাশ পেয়েছে, তা দু’ভাগে বিভক্ত।
১. সুন্নাতে হুদা যেমন- আযান, ইকামত ও জামাত ইত্যাদি।
২. সুন্নাতে রাতেবা যেমন- কুলি করা, নাকে পানি দেয়া বা নাক পরিষ্কার করা। 
সুন্নাতে হুদা পরিত্যাগকারীর জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে শাস্তির বিধান রয়েছে। 
অপরদিকে সুন্নাতে রাতেবা বর্জনকারীর কোন শাস্তি নেই। সুতরাং পাগড়ী সে উত্তম পরিধান যা মোস্তফা(ﷺ)   ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন।

قال صدر الشهيد رحمة الله عليه فسنن الهدىٰ وان كانت على سبيل العادة فسنن الزوائد كلبس الثياب والاكل باليمين وتقديم الرجل اليمنى فى الدخول ونحوذالك كل منا فى الاوّل الى اخره . 

বেকায়া প্রণেতা বলেন, ডান দিক দিয়ে কাপড় পরিধান, ডান হাতে খাওয়া, মসজিদে প্রবেশে প্রথমে ডান পা দেয়া ইত্যাদি যদিও অভ্যাসগত সুন্নাত, কিন্তু এটা সুন্নাতে হুদাও। 
108. শরহে বেক্বায়াহ, কিতাবুত্ ত্বাহারাত, খন্ড-১, পৃষ্ঠা ৬৯।

যেমন ধুতি ও সাদা কাপড় পরিধানের ফযিলত নামাযের সাথে নির্দিষ্ট নয়, তেমনি পাগড়ি পরিধান করাও নামাযের সাথে নির্দিষ্ট নয়। কারণ রাসূলে পাক (ﷺ) এর পছন্দনীয় পোশাক পরিধান অবশ্যই সম্মানীয় পোশাক মনে করা হয়। তাই আল্লাহ্ পাকের মহান দরবারে যাওয়ার প্রাক্কালে সম্মানী পোশাক পরিধান করা অতীব উত্তম ও উৎকৃষ্ট আমল। তাই ফকীহগণ (رحمه الله تعالي ) পাগড়ি পরে নামায আদায় করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন।
কারো যদি পাগড়ি পরার সুযোগ না হয়, সে ব্যক্তি পাগড়ি ছাড়া নামায পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। হযরত তাহের ইবনে আবদুর রশীদ বলেছেন, মূলতঃ এক কাপড় পরে নামায পড়াতে কোন ক্ষতি নেই।

وفى الاصل لابأس بان يصلّى الرجل فى ثوبٍ واحدٍ متوشحًا به ويؤم كذالك والمستحب ان يصلى الرجل فى ثلاثة اثواب، قميص وازار وعمامة. اما لو صلى فى ثوب واحد متوشحابه جميع بدنه كازار الميت يجوز صلاته من غير كراهة . 
قال ابن نجيم والمستحب ان يصلى فى ثلاثة اثواب: قميص وازاروعمامة . 

মূলতঃ এক কাপড়ে নামায পড়লে ক্ষতি নাই, ইমামতিও করা যায়। মুস্তাহাব হচ্ছে তিন কাপড়ে (জামা, পায়জামা, লুঙ্গি ও পাগড়ী) নামায পড়া। আর যদি এমন এক কাপড়ে নামায পড়া যায় যা পুরো শরীর আবৃত হয় যেমন- বড় লুঙ্গি, তাহলে এতে নামায মাকরূহ হবে না। 
109. খুলাছাতুল ফতাওয়া, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: সতর আবৃত করা প্রসঙ্গে, খন্ড-১, পৃ ৭৩।

আল্লামা ইবনু নজিম বলেন- মুস্তাহাব হচ্ছে তিন কাপড়ে- জামা, লুঙ্গি, পাগড়ি পরে নামায পড়া। 
110. বাহরুর রায়েক, নামাযের শর্ত অধ্যায়, পৃ ২৬৯।

কিন্তু পাগড়ির হুকুম ইমামের জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং তা সকল নামাযীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পাগড়ি সম্পর্কিত আলোচনা দ্বারা একথা প্রতীয়মান হয় যে, পাগড়ি শুধুমাত্র ইমামের জন্য নির্দিষ্ট করা শরয়ী বিধান অতিরঞ্জিত করার নামান্তর। উহা পরিধান না করাকে নামায অনিষ্টের কারণ মনে করা মূলতঃ ফোকাহা-ই কিরামের কানুন ও মূলনীতিমালা সম্পর্কে অবগত না হওয়ার প্রমাণ।
যদি কোন ব্যক্তি পাগড়িকে সম্মানীয় পোশাক মনে করে কোন বড় মাহফিল ও সভা-সমাবেশে যাওয়ার সময় তা পরিধান করে কিন্তু নামায পড়ার সময় এর অধিক গুরুত্ব দেয় না,  সে ক্ষেত্রে (بذل الثوب) কাপড় অপচয়ের হুকুমে নামাযীর জন্য এটা মাকরূহ হবে। আর যে ব্যক্তি পাগড়ি পড়ায় অভ্যস্ত নয় এবং এতো গুরুত্ব দিয়ে সর্বদা পড়েন না; এমতাবস্থায় পাগড়িবিহীন ইমামের পেছনে ইক্তিদা করলে কোন ক্ষতি নেই।
হ্যাঁ! অবশ্য যেখানে পাগড়ি বর্জন করলে ঝগড়া-বিবাদ ও ফিৎনা-ফাসাদের আশঙ্কা থাকে, এসব স্থানে পাগড়ি ছাড়া নামায পড়ানো উচিৎ না। কেননা পাগড়ি সম্পর্কে হাদীস শরীফে বিভিন্ন রেওয়ায়েত এসেছে এবং ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেঁচে থাকাও জরুরী।

❏ প্রশ্ন-৮০: নামাযে হাই আসলে কি করা উচিৎ? বর্ণনা কর।

✍ উত্তর: ফতোয়ায়ে দুর্রুল মুখতারে আছে,

وامساك فمه عند التثائب فائدة لدفع التثائب مجربة ولو بأخذ شفتيه بمسته فان لم يقدر غطائه بظهر يده اليسرىٰ وقيل باليمنى لوقائما والافيسراهُ . 

‘নামাযরত অবস্থায় যদি কারো হাই আসে, তার জন্য মুস্তাহাব যে, সাধ্যানুযায়ী তা বারণ বা দমন করা; আর যদি দমন করা সম্ভব না হয়, তবে ডান হাতের পৃষ্ঠ দ্বারা মুখ আবৃত করে রাখবে এবং সম্পূর্ণরূপে মুখ খুলে রাখবে না।’ 
111. দুররে মুখতার, সিফাতুস্ সালাত অধ্যায়; মারাকিউল ফালাহ, আদাবুস্ সালাত অধ্যায়।

জেনে রাখা আবশ্যক যে, দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাত ব্যবহার করবে, আর অন্যান্য রুকনগুলোতে বাম হাত ব্যবহার করবে।

❏ প্রশ্ন-৮১: ফরয নামায শেষে ইমাম সাহেব তাৎক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাবেন, না কিছুক্ষণ পর দাঁড়াবেন?

✍ উত্তর:  পাঁচ ওয়াক্ত নামায সমূহের মধ্যে ফরযের পর যে সকল নামাযে সুন্নাত ইত্যাদি আছে, সে সকল ফরয নামায শেষে ইমামের জন্য উচিত যে, তিনি তাৎক্ষণিক দাঁড়িয়ে একটু সামনে-পিছনে কিংবা ডানে-বামে সরে সুন্নাত আদায় করা। লম্বা মুনাজাত বা দীর্ঘ দু‘আ-আদিয়্যাহ্ পাঠ করা অনুচিত ও সুন্নাতের খেলাফ।

اذا فرغ من الظهر والمغرب والعشاء يشرع فى السنة ولايشتغل بادعية طويلة. وفى الهندية اذا فرغ من الظهر والمغرب والعشاء يشرع فى السنة ولايشتغل بادعية طويلة . 

‘জোহর, মাগরিব ও এশার ফরয নামাযের পর সুন্নাত পড়া আরম্ভ করবে। দীর্ঘ দু‘আ বা মুনাজাত করবে না। ফতোয়ায়ে হিন্দিয়াতে আছে, যে সব নামাযের পর সুন্নাত রয়েছে যেমন- জোহর, মাগরিব, এশা ওই সকল ফরয নামাযের পর লম্বা দোয়া বা মুনাজাত না করে সুন্নাত নামায আদায় করবে।’ 
112. ফতওয়া তাতারখানিয়া, খন্ড-১ম, তৃতীয় পরিচ্ছেদ: নামাযের সুন্নাত সমূহের বর্ণনা।

❏ প্রশ্ন-৮২: ফরয নামায শেষে ডান হাত মাথার ওপর রেখে কোনো বিশেষ দু‘আ ইত্যাদি পাঠ করার শরয়ী হুকুম কি?

✍ উত্তর: হ্যাঁ! হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে,  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফরয নামায শেষে তাঁর মাথার ওপর ডান হাত মুবারক রেখে এ দু‘আটি পাঠ করতেন,

بسم الله الذى لا الٰه الّا هو الرحمٰن الرحيم . اللهم ادفع عنى الهمّ والحزن برحمتك يا ارحم الراحمين .

অতএব এটা হুযূর মোস্তফা(ﷺ)   এর সুন্নাত যে, ফরয হোক কিংবা সুন্নাত যে কোন নামাযের পর নিজের ডান হাত মাথার ওপর রেখে উপরিউক্ত পবিত্র দু‘আ পাঠ করা উচিত। হিস্নে হাসীন গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, হুযুর (ﷺ) যখন নামায শেষ করতেন তখন ডান হাত মাথার ওপর বুলায়ে এই দু‘আ পড়তেন।

كان رسول الله صلى الله عليه وسلّم اذا صلّى وفرغ عن صلواته ويمسح بيمينه على راسه قال: بسم اللهِ الذى لا اله الّا هو الرحمٰن الرحيم اللهم اذهب عنى الهمّ والحزن-


❏ প্রশ্ন-৮৩: রমযান মুবারক ছাড়া বিতির নামায জামাতে পড়ার হুকুম কী?

✍ উত্তর: শরহে ইলিয়াস ১ম খন্ডর ২৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

ان الاقتداء فى الوتربالامام خارج رمضان جائز- 

‘পবিত্র রমযান ছাড়া বিতির নামায ইমামের পিছনে জামাত সহকারে আদায় করা জায়েয।’

قال ابن عابدين ويمكن ان يقال الظاهر ان الجماعة فيه اى الوتر غير مستحبة ثم ان كان ذٰلك احياناكما فعل عمر رضى الله عنه كان مباحًا غير مكروه وان كان على سبيل المواظبة كان بدعة مكروهة لانه خلاف المتوارث . 
ولو صلوٰ الوتر بجماعة فى غير رمضان فهو صحيح مكروه كالتطوع فى غير رمضان بجماعة، وقيّده فى الكافى بان يكون على سبيل التداعى .

অবশ্য রমযান শরীফে বিতির নামায জামাত সহকারে আদায় করা সকল ইমামের ঐকমত্যে সুন্নাত। রমযান মুবারক ব্যতীত বিতির জামাতে আদায় করা মাকরূহ সমেত শুদ্ধ। যেরূপ রমযান এর বাইরে নফল নামায জামাতে পড়া মাকরূহ। অবশ্য যদি ডাকাডাকি ছাড়া হঠাৎ পড়ানো হয় যেমন আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওমর  (رضى الله تعالي عنه) পড়িয়েছিলেন, তাহলে মাকরূহ ছাড়া মুবাহ হবে।  
113. ফতওয়া শামী, নফল নামাযে ইকতিদা করা মাকরূহ অধ্যায়, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৮।

হ্যাঁ! কাফি প্রণেতা উল্লেখ করেন যে, নফল নামায যদি এমন হয় যে, কোনো ডাকা-ডাকি ছাড়াই সমবেত হয় (যেমন- শবে বরাত), তবে এমতাবস্থায় জামাতে পড়া জায়েয। ‘শরহে ইলিয়াস’-এর ইবারত দ্বারা জায়েয প্রমাণিত হয় এবং অধিকাংশ ফোকাহা-ই কিরামও মূল নামায জায়েয হওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হ্যাঁ! যদি পরস্পর ডাকাডাকি করে সব সময় জামাতে আদায় করে, তাহলে মাকরূহ হবে। 
114. বাহরুল রায়েক, নফল অধ্যায়, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৭০; 
আল জওহিরাতুন নায়্যিরা, কিয়ামে রমযান অধ্যায়, খন্ড-১, পৃষ্ঠা ১২০।

❏ প্রশ্ন-৮৪: পাগড়ি ছাড়া ইমাম শুধু টুপি পরে নামায পড়া এবং পড়ানো কি জায়েয? এতে নামাযের সওয়াবে তারতম্য বা কম-বেশি হবে কিনা?

✍ উত্তর: পাগড়ি ছাড়া শুধু টুপি পরিধান করে নামায পড়া এবং পড়ানো জায়েয। এতে কোন ধরনের মাকরূহ হবে না।

قال فى شرح التنوير فى مكروهات الصلواة ، وصلاته حاسرًا اى كاشفًا راسه للتكاسل ولابأس به للتذلل واما للاهانة بها فكفر ولو سقطت قلنسوته فاعادتها أفضل . 

‘উক্ত ইবারত দ্বারা বুঝা গেল যে, অবমাননাকর অবস্থায় না হলে খালি মাথায় নামায পড়লে মাকরূহ হবে না। তাই টুপি পরে নামায পড়াতে মাকরূহ হওয়ার কোন অবকাশ নেই। আর অবমাননার মানসে খালী মাথায় নামায পড়লে কুফরী হবে। তাই টুপি পড়ে গেলে তা উঠিয়ে নেয়া উত্তম।’
এমনকি ولو سقطت قلنسوته ,এর ব্যাপারে ব্যাখ্যাকার (رحمه الله تعالي ) টুপি ছাড়া নামায মাকরূহ হওয়ার হুকুম আরোপ করেননি, যা মাকরূহ না হওয়ারই দলিল। অবশ্য যে ব্যক্তি পাগড়ি ছাড়া মজলিশে আসতে লজ্জাবোধ করে, এমন ব্যক্তির জন্য শুধু টুপি পরে নামায পড়া মাকরূহ হবে।
বিভিন্ন রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরাত সাহাবা-ই কিরাম (رضى الله تعالي عنه) এবং পূর্ববর্তী ইমামগণ হতে টুপি পরে নামায পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে, 

وضع ابو اسحاق قلنسوته فى الصلواة ورفعها . 

‘আবু ইসহাক নামাযে তাঁর টুপি মাথায় উঠায়ে নিলেন।’ 
115. সহীহ্ বুখারী, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-১৫৯।

যদিও এখানে ইমাম বুখারী (رحمه الله تعالي )-এর উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল। কিন্তু এতে এ বিষয়টিও প্রমাণিত হয়ে যায়। বুখারী শরীফের অন্যত্র উল্লেখ আছে,

قال الحسن كان القوم يسجدون على العمامة والقلنسوة . 

‘ইমাম হাসান (رضى الله تعالي عنه) বলেন, লোকেরা পাগড়ি ও টুপি পরিধান করে নামায আদায় করতেন।’ 
116. সহীহ্ বুখারী, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৫২।

শরহে বেকায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ওমদাতুর রি‘আয়া গ্রন্থে আছে,

وكلا ذكروا ان المستحب ان يصلى فى قميص وازار وعمامة لايكره والاكتفاء بالقلنسوة ولاعبرة لما اشتهر بين العوام من كراهة ذلك وكذا ما اشتهر ان المؤتم لوكان معتما بعمامة والامام مكتفيا على قلنسوة لايكره . 

যদিও সুন্নাত ও মুস্তাহাব হওয়ার দরুন পাগড়ি পরিধান করে নামায পড়া উত্তম- চাই ইমাম হোক বা মুক্তাদি, নামাযে হোক বা নামাযের বাইরে সব সময় পাগড়ি ব্যবহার করা সুন্নাত, এতদ্সত্ত্বেও পাগড়ি বিহীন শুধু টুপি পরে নামায পড়া এবং ইমামতি করা মাকরূহ ছাড়াই শুদ্ধ।
আর যদি মুকতাদিরা পাগড়ি বাঁধে এবং ইমাম শুধু টুপি পরিধান করে নামায পড়ায়, তাতেও মাকরূহ হবে না। 
117. শরহে বেকায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুর রেয়ায়াহ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৯৮।

যেমন ‘ওমদাতুর রি‘আয়া’ শরহে বেকায়া কিতাবের আনুষাঙ্গিক আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়।

❏ প্রশ্ন-৮৫: হুযূর মোস্তফা(ﷺ)   অসুস্থাবস্থায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضى الله تعالي عنه)-এর পিছনে নামায আদায় করেছিলেন। তখন তাঁর মাথায় পবিত্র পাগড়ি ছিল না কি টুপি?

✍ উত্তর: সীরাতে মুহাম্মদীয়াতে উল্লেখ আছে যে, তখন হুযূর মোস্তফা(ﷺ)   এর পবিত্র মাথায় পাট্টী বা ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। 

وروىٰ الطبرانى والبيهقى عن الفضل بن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلّم شدوا راسى لعلى اخرج الى المسجد فشدوا راسهُ بعصابة ثم خرج .

‘তাবরানী ও বায়হাকী শরীফে হযরত ফযল বিন আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) এরশাদ করেন, তোমরা আমার মাথা ব্যান্ডেজ করে দাও যাতে আমি মসজিদে যেতে পারি। তাঁর মাথা শক্তভাবে বেঁধে দেয়া হলো অতঃপর তিনি মসজিদের দিকে বের হলেন।’  
118. খাইরুল ফতওয়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৫০।

❏ প্রশ্ন-৮৬: মু’মিনের জন্য নামায মি‘রাজ হওয়া কি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? দলিলসহ বর্ণনা কর।

✍ উত্তর: নামায মু’মিনের জন্য মি‘রাজ হওয়া হুযূর মোস্তফা(ﷺ)  -এর স্পষ্ট বাণী দ্বারা প্রমাণিত- একথা আমি (লেখক) অধম নগন্যের নযরে পড়েনি। হ্যাঁ! অবশ্য কতিপয় বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত এবং কিছু সুফিয়া-ই কিরামের বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের নাম মি‘রাজ।
এক হাদীসে হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, বান্দার সবচেয়ে অধিক আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয় সিজদারত অবস্থায়। কতেক সুফিয়া-ই কিরাম বলেন, الصلواة معراج المؤمنين অর্থাৎ- ‘নামায মু’মিনের মি‘রাজ’।

❏ প্রশ্ন-৮৭: এশার নামাযের সঠিক সময় দলিলসহ বর্ণনা কর। 
অর্থাৎ-এশার নামায শফক বা লালিমা অস্ত যাওয়া হতে ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে এশার নামায পড়া জায়েয। কিন্তু ‘মজমুয়ায়ে ফতোয়া’ (উদুর্, ২য় খন্ড এইচ এম সাঈদ করাচি থেকে প্রকাশিত) গ্রন্থে উল্লেখ আছে, এশার নামায অর্ধ রাতের পর পড়া মাকরূহে তাহ্রিমী এবং সকালে তা পুনরায় পড়ে নেয়া ওয়াজিব। মূলতঃ অর্ধ রাতের পর নামাযই হবে না, অথচ এটা নামাযেরই ওয়াক্ত দলিলসহ বর্ণনা কর।

✍ উত্তর: এশার নামায অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে পড়ার ব্যাপারে ওলামাগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। 
কারো মতে, অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করা মাকরূহে তাহরীমী। যে কোন নামায মাকরূহে তাহরীমীর সাথে আদায় করলে, তা পুনরাবৃত্তি করা ওয়াজিব। আবার কারো মতে, মাকরূহে তানযীহি। যার কারণ জামাতে লোকসংখ্যা কমে যায়। মাকরূহে তানযীহির পরিণতি হলো খেলাফে আওলা বা অনুত্তম। এ অভিমতটি গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত। 
অতএব অর্ধরাতের পরও এশার নামায আদায় করা জায়েয এবং পুনরায় পড়ে নেয়াও ওয়াজিব নয়, বরং উত্তমের বিপরীত।

ان الكراهة فى تاخير العشاء تنـزيهية وهو الاظهر . 

‘ফতাওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে- এশার নামায বেশী বিলম্ব করা অনুত্তম আর এটাই স্বতঃসিদ্ধ।’ 
119. রদ্দুল মুহতার, সালাত পর্ব, নামাযের আওকাত অধ্যায়, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-২৬৯।

وفى الغياثية بعده الى نصف الليل مباح غير مكروه، قال الطحطاوى بعد نصف الليل الى طلوع الفجر مكروه ، اذا كان التاخير بغير عذر-

‘পক্ষান্তরে গিয়াছিয়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে-এশার নামায অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত বিলম্ব করা অনায়াসে জায়েয। ইমাম তাহ্তাবী বলেন, কোন শরয়ী ওজর ছাড়া অর্ধ রাত্রের পর ফজর পর্যন্ত বিলম্ব করা মাকরূহ।’  
120. ফতওয়া তাতারখানিয়া, সালাত অধ্যায়, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪০৬।

❏ প্রশ্ন-৮৮: মাগরিবের নামায তাড়াতাড়ি পড়ার ফযিলত দেখে কিছু সংখ্যক লোক প্রবঞ্চনার স্বীকার হয় যে, মাগরিবের নামাযের সময় অতীব সংক্ষিপ্ত! সাধারণত মাগরিবের নামাজের সময়সীমা কতটুকু হওয়া উচিত? দলিলসহ বর্ণনা কর।

✍ উত্তর: মাগরিবের নামাযের সময় ফিকহে হানফি মতে, সূর্যাস্ত হতে শুরু হয়ে পশ্চিম আকাশে লাল রেখা শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকে। ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمه الله تعالي )-এর মতে, সাদা রেখা অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। মাগরিবের সময় মৌসুম ও বিভিন্ন এলাকার তারতম্যে দূরে-কাছের আনুপাতিক তারতম্যে কার্যকর হয়ে থাকে। এমনকি কোনো এলাকায় এক ঘন্টা তিন মিনিট, কোনো জায়গায় এক ঘন্টা পনের মিনিট এবং আবার কোথাও এক ঘন্টা বিশ মিনিট মাগরিবের সময় হয়। সাধারণত মাগরিব ও এশার মাঝখানে দেড় ঘন্টা সময়ের ব্যবধান হয়ে থাকে।
তবে মাগরিবের নামায পশ্চিমাকাশের লালিমা ডুবে যাওয়ার পূর্বে পড়ে নেয়া উচিৎ। যাতে ইমামগণের মতবিরোধ থেকে বাঁচা যায়। অবশ্য মুসাফির অথবা ওজর-আপত্তি ও অসুস্থ লোকের জন্য সাদা রেখার মধ্যে পড়ার অনুমতি আছে। 
121. ফতওয়ায়ে শামী, কিতাবুস সালাত, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৬১।

শরহে বেকায়ায় আছে, 

وعند ابى حنيفة الشفق هو البياض الذى يلى الحمرة، هكذا فى القدورى . 

‘ইমাম আবু হানিফা (رحمه الله تعالي )’র মতে শফক অর্থ হচ্ছে, লালিমা অস্তমিত হওয়ার পর সাদা লালিমা ডুবা পর্যন্ত থাকে।’
মাসআলাঃ সূরা ফাতিহা থেকে যদি একটি অংশও ভুলক্রমে বাদ পড়ে, তবে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে। যেমন- নামাযের প্রথম রাকাতে যদি সূরা ফাতিহা থেকে اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ভুলক্রমে বাদ পড়ে, এতে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ ফরযসমূহের প্রথম দুই রাকাত, সুন্নাত, বিতির এবং নফল নামাযের সকল রাকাতে সূরা ফাতিহা থেকে একটি অক্ষরও যদি বাদ পড়ে, তবে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে। যদি সিজদা সাহু আদায় না করে, তাহলে নামায পূনরায় পড়া ওয়াজিব হবে। 
122. দুর্রুল মুহতার শামী, باب كل صلواة اديت مع كراهة , খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৫।

❏ প্রশ্ন-৮৯: ইস্তিসকার নামায ছাড়া অন্য কোন শরয়ী পদ্ধতি অনুমোদন আছে কিনা? অর্থাৎ- কোনো কোনো এলাকায় ইস্তেসকার নামাযের পরিবর্তে এ নিয়ম প্রচলিত আছে, এশার নামাযের পর এক ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন শরীফ শুরু থেকে প্রথম মুবীন পর্যন্ত তিলাওয়াত করে। অতঃপর এক ব্যক্তি উচ্চকন্ঠে নামাযের সুন্নাত আযানের মত আযান দেয়া শুরু করে এবং আরো অনেক কিছু করে। পরিশেষে এক লম্বা দু‘আর মাধ্যমে এর যবনিকাপাত করে। বৃষ্টির জন্য এ ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করা কী জায়েয?

✍ উত্তর: ইস্তিসকার নামাযের পরিবর্তে এমন নিয়ম সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। হ্যাঁ! যদি কোন আল্লাহর সাহেবে বেলায়ত ওলি ও দরবেশ-বুযূর্গ কোনো বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেন, তাহলে সেটা হবে তাঁর জন্য খাস। সর্বসাধারণের জন্য নয়। সার্বজনীন নিয়ম যা প্রচলিত আছে তা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। বৃষ্টিবর্ষণ মহান আল্লাহ তা‘আলার দয়া, মেহেরবানী ও অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল এবং এটা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যা চান তাই করেন- فَعَّالٌ لِمَا يُرِيْدُ আল্লাহ'র নিকট দু‘আ প্রার্থনা করা, বৃষ্টি চাওয়া- এটা প্রত্যেক সময়, প্রত্যেক অবস্থায় এবং যে কোনো পদ্ধতিতে জায়েয, বৈধ, মুসতাহসান ও মনদুব।

❏ প্রশ্ন-৯০: মাগরিবের নামাযে দীর্ঘ সূরা পাঠ করার বিধান কী? অথচ প্রায় সকল কিতাবে মাগরিবের নামাযে ছোট সূরা পড়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। লম্বা ক্বিরাত পড়লে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি না?

✍ উত্তর: هوالمستعان ইমাম সাহেব মুক্তাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে ক্বিরাত পড়া উত্তম। কারণ মুকতাদিদের মধ্যে কোনো অসুস্থ ও দুর্বল লোক থাকতে পারে। তাই ফোকাহা-ই কিরাম রাহিমাহুমুল্লাহ নামাযে লম্বা ক্বিরাতকে মাকরূহ বলেছেন। অবশ্য দীর্ঘ ক্বিরাতে নামাযের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। স্বয়ং নবী করীম   মাগরিবের নামাযে বেশ কয়েকবার সূরায়ে তুর এবং সূরায়ে মুরসালাত পড়েছেন। 
হযরত ইমাম হাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শরন্বলালী (رحمه الله تعالي ) বলেন,

وكره للامام تطويل الصلواة لما فيه من تنفير الجماعة لقوله عليه السلام من ام فليخفف . قال العلامة احمد الطحطاوى تحت قول تطويل الصلاة بقرأة او تسبيح او غيرهما.

‘শরন্বলালী গ্রন্থে ইমাম হাম্মাদ বলেন, ইমামের জন্য লম্বা কেরাত পড়া ঠিক নহে। কেননা এতে জমাতে মুসল্লিদের বিরক্তি আসে। হাদিস শরীফেও হুযূর   এরশাদ করেন, যিনি ইমামতি করবেন তিনি যেন কিরাত, রুকু, তাসবীহ্ সর্বত্রই সংক্ষেপ করেন। ইমাম তাহ্তাবী বলেন, শুধু কিরাত নয়।’  
123. তাহত্বাবী, বাবুল ইমামত, পৃষ্ঠা-২৪৬।

ফতোয়ায়ে শামীতে আছে,

ويكره تحريما تطويل الصلواة على القوم زائدًا على قدر السنة فى قرأة واذكار رضٰى القوم الخ . 

‘ফাত্ওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে, জামাতে ইমামতি করাতে যেন কেরাত লম্বা না করে অবশ্যই তা সুন্নাত মোতাবেক এবং কেরাত, রুকু, সিজদাহ্ ও তাসবীহ পড়াতে মুসল্লিদের অবস্থাভেদে করা হয়, নচেৎ মাকরূহ হবে।’ 
124. রদ্দুল মুখতার, বাবুল ইমামত, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৫৬৪।

عن جبير بن مطعم عن ابيه قال سمعتُ رسول الله صلى الله عليه وسلّم يقرأ فى المغرب بالطور، عن ام الفضل بنت الحارث قالت سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلّم يقرأ بالمغرب بالمرسلات- 

হযরত যোবায়ের বিন মুতয়িম (رضى الله تعالي عنه) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হুযূর  কে মাগরিবের নামাযে সূরায়ে তূর পড়তে শুনেছি। হযরত উম্মুল ফযল বিনতুল হারিস (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুযূর  কে মাগরিবের নামাযে সূরাতুল মুরসিলাত পড়তে শুনেছি।    
125. সহীহ মুসলিম, খন্ড-১ম, মাগরিবের নামাযে কিরাত অধ্যায়, পৃষ্ঠা-১৮৭; সহীহ বুখারী শরীফ (উভয় হাদীস বর্ণিত), খন্ড-১ম, মাগরিবের নামাযে কিরাত বড় করে পড়ার অধ্যায়, পৃষ্ঠা-১০০; অনুরূপ আল-জওয়াহারাতুন্ নায়্যিরাহ্, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৭৫; অনুরূপ মেশকাত শরীফে, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৭৯। 

❏ প্রশ্ন-৯১: এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে অপবাদ দিল যে, তুমি (নিজ ভাইয়ের স্ত্রীর) ভাবির সাথে অপকর্ম বা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে। অথচ উক্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। এখন শরয়ী বিধান মতে অভিযুক্ত ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা করা জায়েয হবে কি না?

✍ উত্তর: বাস্তবিক পক্ষে যদি প্রশ্ন সঠিক হয় এবং এটা পক্ষান্তরে ভিত্তিহীন অভিযোগ। অভিযোগকারী ব্যক্তি যদি তাওবা না করে, তাহলে অপবাদ দেয়ার কারণে উক্ত ব্যক্তি ফাসেক হিসেবে গণ্য হবে। অতএব দ্বীনদার মুত্তাকী ও পরহেজগার লোক তার পেছনে ইক্তিদা করা মাকরূহে তাহরীমী। হ্যাঁ! একথা স্মরণ রাখবে যে, একাকী নামায পড়ার চেয়ে ফাসেকের ইকতিদায় জামাতে নামায পড়া উত্তম।

ولو صلى خلف مبتدع او فاسق فهو محرز ثواب الجماعة لكن لا ينال مثل ما ينال خلف تقى. 

‘কেউ যদি ফাসেক বা বিদআতীর পেছনে নামায পড়ে সে জামাতের সাওয়াব পাবে। কিন্তু মুত্তাকি ইমামের ইকতিদার সমতুল্য সাওয়াব পাবে না।’ 
126. খোলাসাতুল ফাতওয়া, পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ: ইমামের ইকতিদা প্রসঙ্গে, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫০। 

❏ প্রশ্ন-৯২: নামাযে আরবী ছাড়া অন্যান্য ভাষায় দু‘আ করার বিধান কী? যদি কোন ব্যক্তি নামাযে আরবী ছাড়া বাংলা, উদুর্ ইত্যাদি ভাষায় আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করা আরম্ভ করে, এতে নামাযের ওপর কোন প্রভাব পড়বে কি না?

✍ উত্তর: সুন্নাত তরিকা এই যে, নামাযে শুধু আরবী ভাষায় দু‘আ করা উচিত। যদি ভিন্ন কোন ভাষায় দু‘আ করা হয়, তাহলে নামায মাকরূহ তানযিহী সাথে জায়েয হবে। جائز مع الكراهة অর্থাৎ-খেলাফে আওলার সাথে নামায জায়েয হবে।

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمه الله تعالي ) বলেন,

وظاهر التعليل ان الدعاء بغير العربية خلاف اولٰى وان الكراهة تنزيهية .

‘মূল কারণ হচ্ছে, আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দু‘আ করা অনুত্তম বা খেলাফে আওলা। মাকরূহ বলতে মাকরূতে তানযিহী উদ্দেশ্য।’ 
127. রদ্দুল মুহ্তার, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা- ৫৬১; আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় দু‘আ প্রসঙ্গে, বাবে সিফাতুল সালাত; আস্-সে‘আয়া; খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা- ২৪৫, বাবে সিফাতুল সালাত। 

আল্লামা আবদুল হাই লৌক্ষ্মভী (رحمه الله تعالي ) বলেন, 

ومنها ان يدعوا بالعربية ليكون اقرب الى الاجابة، فان اللسان العربى من الفضل ماليس لغيره . 

‘আরবী ভাষায় দু‘আ করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। আরবী ভাষায় যে ফযিলত ও মাহাত্ম্য রয়েছে তা অন্য ভাষায় নেই।’ 
128. ফাতওয়ায়ে আবদুল হাই, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা- ২৪৫; ফাতওয়ায়ে হাক্কানিয়্যাহ্, খন্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-২০৯।

❏ প্রশ্ন-৯৩: জামার আস্তিন বা হাতা কনুইর উপরে উঠিয়ে নামায পড়ার হুকুম কী? এতে নামায মাকরূহ হবে কি না?

✍ উত্তর: وبالله التوفيق উভয় হাতের কনুইয়ের উপরে আস্তিন উত্তোলন করে নামায পড়া মাকরূহ। যেমন,

 ولو صلّى رافعًا كميه الى المرافقين كره- 

‘কেউ হাতের কনুইয়ের উপরে আস্তিন তুলে নামায পড়লে মাকরূহ হবে।’ 
129. ফতওয়ায়ে কাজী খান, আল-হিন্দীয়া, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ- নামাযে যেসব কাজ মাকরূহ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২৬; আল-বাহরুর রায়েক্ব, অধ্যায়- যে সব কাজসমূহ করলে নামায ভঙ্গ ও মাকরূহ হয়, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪; রদ্দুল মুহতার, অধ্যায়- নামাযের মাকরূহসমূহ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২৪।

❏ প্রশ্ন-৯৪: হজ্ব মৌসুমে আরাফাতের ময়দানে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হাজীদের, মুকীম বা স্থায়ী বাসিন্দা ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়েয হবে কি না?

✍ উত্তর: وبه نستعين হানাফী মাযহাব মতে, মুসাফিরের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বের কম হলে নামায কসর পড়া জায়েয নেই। অতএব যে ইমাম মুকীম হওয়া সত্ত্বেও কসর নামায পড়াবে, হানাফি মাযহাব অনুসারী মুকতাদির নামায উক্ত ইমামের পিছনে জায়েয হবে না। 

যেমন, আল্লামা শামী (رحمه الله تعالي ) বলেন,

لو كان مقيمًا كامام مكة صلى بهم صلواة المقيمين لايجوزله القصرو لا للحجاج الاقتداء به . 

আল্লামা শামী বলেন, হজ্ব মৌসুমে মক্কা শরীফের ইমামের মত ইমাম যদি মুকীম হয় তিনি মুক্তাদীদের নিয়ে মুকীমের নামাযই পড়বেন। কছর করা জায়েয হবে না। হাজীদেরও উক্ত ইমামের পিছনে একতেদা সহীহ নহে।’ 
130. রদ্দুল মুহতার, কিতাবুল হজ্ব, খন্ড-২, পৃষ্ঠা- ৫০৫; আল-কবীর, অধ্যায়- মুসাফিরের নামায, পৃষ্ঠা-৫৯১।

ফাত্ওয়ায়ে রহিমিয়ায় আবদুর রহীম লাজপুরী (رحمه الله تعالي ) বলেন, আরাফাত ময়দানে হানাফি ইমাম মুকীম হওয়া সত্ত্বেও যদি নামায কসর পড়ে, তাহলে হানাফি মুকতাদির নামায উক্ত ইমামের পিছনে জায়েয হবে না; মুকতাদি মুসাফির হোক বা মুকীম। 
131. ফতওয়া রহিমীয়া, খন্ড-১, অধ্যায়- মুসাফিরের নামায, পৃষ্ঠা- ১৫৯।

❏ প্রশ্ন-৯৫: ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সাউদি আরবে পনের দিনের ভিসা নিয়ে যারা পবিত্র মক্কা ও মদিনা মুনাওয়ারা গমন করেন, তারা নামায পুরো পড়বেন না কসর পড়বেন?

✍ উত্তর: ইকামতের নিয়তের জন্য একই স্থানে পনের দিনের নিয়ত করা জরুরি। প্রশ্নোলি­খিত বিবরণ মোতাবেক তারা বিভিন্ন স্থানে পনের দিন অবস্থান করবেন, তাই তাদের ইকামতের নিয়ত গ্রহণযোগ্য ও শুদ্ধ হবে না। বরং তারা কসর নামাযই আদায় করবে।
দুররুল মুহতারে উল্লেখ আছে,

لودخل الحاج مكة لايام العشر لم تصح نيته لانه يخرج الى منٰى وعرفة فصار كنية الاقامة فى غير موضعها . 

‘যিলহজ্ব মাসের ১ম দশ দিনে কোন হাজী মক্কায় প্রবেশ করলে মুকিমের নিয়ত করা সহীহ হবে না। কেননা সে তো ওইদিনগুলোতেই মিনা আরাফাতে যাবে। সুতরাং সে মুসাফির থাকবে। 
132. ফতওয়ায়ে শামী, কিতাবুল মুসাফির, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১২৬।

হিদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে,

واذا نوى المسافر ان يقيم بمكة ومنىٰ خمسة عشر يومًا، لم يتم الصلواة لان اعتبار النية فى موضعين يقتضىٰ اعتبارها فى مواضع وهو متمنع ، ومثله فى الهندىة . 

‘কোন মুসাফির যদি মক্কা ও মিনায় পনের দিন অবস্থান করার নিয়ত করে, সে নামায পুরা পড়বে না। কেননা দুই জায়গায় নিয়ত করা মানে বিভিন্ন জায়গার নিয়ত করা যা মুকিম হওয়াকে বাধা সৃষ্টি করে। অর্থাৎ মুকীম হবে না। অনুরূপ ফাতওয়া হিন্দিয়াতে রয়েছে।’ 
133. হিদায়া, কিতাবুল মুসাফির, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৪৭।

❏ প্রশ্ন-৯৬: মুসাফির ভুলক্রমে দু’রাকাতের পরিবর্তে চার রাকাতের নিয়ত করলে, এ ক্ষেত্রে তার করণীয় কি? সে নিয়ত অনুযায়ী চার রাকাত আদায় করবে, না দু’রাকাত?

✍ উত্তর: একথা স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, নামাযের নিয়ত করার সময় নামায এবং ওয়াক্ত নির্ধারণ করা আবশ্যক। রাকাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা জরুরী নয়। এটা প্রসঙ্গত এমনিতেই এসে যাবে।
যেহেতু মুসাফিরের ওপর মাত্র দু’রাকাত ফরয, তাই নামাযের নিয়তও মুসাফির হিসেবে হবে। যদিও ভুলবশতঃ মুখে রাকাতের সংখ্যা বেশি উচ্চারিত হয়, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং ঐ ব্যক্তি কসর নামায আদায় করবে। ফতোয়া শামীতে আছে,

لابد من التعين عند النية دون التعين عدد ركعاته لحصولها ضمنا فلا يضر الخطأ فى عددها-  

‘মুসাফির ভুলক্রমে দুই রাকআতের স্থলে চার রাকআত এর নিয়ত করলেও দুই রাকআতই পড়বে। এখানে সংখ্যার কোন গুরুত্ব হবে না।’ 
134. দুররুল মুখতার সহ রদ্দুল মুহতার, বাবু শুরুতত্ সালাত, খন্ড-১, পৃষ্ঠা- ৪১৮-৪২০; ফাতওয়া হিন্দিয়া, চতুর্থ অধ্যায়- নিয়ত প্রসঙ্গে, খন্ড-১, পৃষ্ঠা- ১৬৬।

❏ প্রশ্ন-৯৭: মুসাফির ইচ্ছাকৃতভাবে পুরা চার রাকাত পড়লে তার নামাযের হুকুম কী?

✍ উত্তর: هو المتسعان সফরে নামায কসর করা আইনসিদ্ধ এবং আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কার ও অশেষ রহমত। এতে নিজের পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত কিছু করা, আল্লাহ্ তা‘আলার ইহসান ও দয়া অগ্রাহ্য করার শামিল। সুতরাং এটা  গোনাহ ও না-ফরমানী। অতএব যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সফরে পুরা নামায আদায় করবে সে গোনাহগার হবে এবং তার ওপর তাওবা ওয়াজিব হবে। 
135. হেদায়া, কিতাবুল মুসাফির, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৪৬।

ان صلى اربعًا و قعد فى الثانية قدر التشهد اجزئه الاوليان عن الفرض والآخريان له نافلة اعتبارًا بالفجر، ويصير مسيئا لتاخير السلام . 


‘মুসাফির যদি চার রাকআত পড়ে ফেলে এবং দ্বিতীয় রাকআতে তাশাহুদ পরিমাণ বসে, তাহলে ঐ প্রথম দু’রাকআত ফরয হিসেবে আদায় হয়ে যাবে। আর পরবর্তী দু’রাকআত নফল হবে ফজরের নামাযের মত। দুই রাকআতের স্থলে চার রাকআত পড়তে গিয়ে সালামে বিলম্ব হওয়ায় গোনাহগার হবে।’ 
136. দুর্রুল মুখতার, কিতাবুল মুসাফির, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১২৮।

❏ প্রশ্ন-৯৮: দু’জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি দুই শহরে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বাস করে, একজন অপরজনের নিকট গেলে তারা উভয়ই কী নামায কসর পড়বে?

✍ উত্তর: শরীয়তের বিধান মতে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদা বাসস্থান গ্রহণযোগ্য হবে। যখন তাদের উভয়ের মূল বাসস্থান পৃথক পৃথক, তাই উভয়ই একজন অন্যজনের নিকট গেলে মুকীম হবে না, বরং মুসাফির হিসেবে কসর আদায় করবে। 
137. দুর্রুল মুখতার, বাবু সালাতিল মুসাফির, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৩২।


তারাবীহ নামাযের বর্ণনা-


❏ প্রশ্ন-৯৯: হুযূর সৈয়্যদুল মুরসালীন (ﷺ) তারাবীহ কত রাকাত পড়েছেন? বিশ রাকাত তারাবীর পক্ষে বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণনা কর।
✍ উত্তর: حامدًا ومصليًا মুসান্নিফে ইবনে আবি শাইবা, তাবরানী এবং বায়হাকী শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত আছে, 

روىٰ ابن ابى شيبة فى مصنّفه والطبرانى فى معجمه والبيهقى من حديث ابراهيم بن عثمان عن ابن ابى شيبة عن الحكم عن مقسم عن ابن عباس رضى الله تعالىٰ عنهما ان النبى صلى الله عليه وسلّم كان يصلى رمضان عشرين ركعة سوىٰ الوتر-

‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ   রমযান শরীফে বিতির ছাড়া তারাবীহ নামায বিশ রাকাত পড়তেন।’ 
138. النهى نصب الراية , খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৫৩।

হযরত ওমর (رضى الله تعالي عنه)-এর যামানায় তারাবীহ বিশ রাকাত পড়া হতো। অতএব ‘মুআত্তা ইমাম মালিক’-এ আছে যে, 

كان الناس يقومون فى زمن عمر بن الخطاب رمضان بثلاث وعشرين ركعة- 

‘হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضى الله تعالي عنه) এর আমলে লোকেরা (বিতিরসহ) তেইশ রাকাত নামায আদায় করতেন।’ এটা হযরত ওমর (رضى الله تعالي عنه)-এর হুকুমে আদায় করা হতো।"
139. মুআত্তা ইমাম মালেক, পৃষ্ঠা-৪০।


জানাযার বর্ণনা-

❏ প্রশ্ন-১০০: কবরের নিকট দু‘আ করার সময় কবরকে সামনে নিয়ে দু‘আ করা উত্তম, না কিবলামুখী হয়ে?

✍ উত্তর: শরহে শর‘আতুল ইসলামে উল্লেখ আছে,

قال فى الاحياء والمستحب فى زيارة القبور ان يقف مستدبر القبلة مستقبلًا بوجه الميت . 

‘কবর যিয়ারতের সময় কিবলাকে পিছ দিয়ে কবরকে সামনে নিয়ে যিয়ারত করা মুস্তাহাব।’
140. খাইরুল ফতওয়া, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা ১৫২; ফতওয়া দারুল উলূম, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা ৪৩৪।

বর্ণিত ইবারত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, দু‘আ করার সময় কবরকে সামনে রেখে, কিবলার দিকে পীঠ করে দাঁড়িয়ে যিয়ারতের দু‘আ করা উত্তম। 

❏ প্রশ্ন-১০১: মাইয়্যেত বা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর দাঁড়িয়ে দু‘আ করা উচিত কি না?

✍ উত্তর: মারাক্বিউল ফালাহ গ্রন্থের ৩৪১ পৃষ্ঠায় আছে,

والسنة زيارتها قائمًا والدعاء عندها قائمًا كما كان يفعل رسول الله صلّى الله عليه وسلّم فى الخروج الى البقيع . 

‘দাঁড়িয়ে যিয়ারত করা এবং কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দু‘আ করা সুন্নাত। যেমন রাসূলে কারীম(ﷺ)    জান্নাতুল বাকীর দিকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে দু‘আ করতেন।’

এটা শুধু দু‘আর জন্য। যদি সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করা উদ্দেশ্য হয়, তখন বসেও দু‘আ করতে পারবে। যেমন- হাদীস শরীফ দ্বারা এটি মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

كما فى الدرالمختار وجلوس ساعة بعد دفنه لدعاء قرأة الخ. وفى سنن ابى داؤد كان النبى صلّى الله عليه وسلّم اذا فرغ من دفن الميت وقف على قبره الخ .

তাহ্তাবী ও ফতোয়ায়ে শামীতে আছে, যদি কবর সামনে হয়, তখন কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো উত্তম ও মুস্তাহাব।

❏ প্রশ্ন-১০২: মসজিদে ইতিকাফকারী জানাযার জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে কিনা? যদি কোন ইমাম রমযান শরীফে ইতিকাফ থাকেন, জানাযার জন্য তিনি বের হতে পারবেন কিনা? যদি বের হতে না পারেন তবে  কি মসজিদে জানাযা পড়াতে পারবেন?

✍ উত্তর: ই‘তিকাফের পূর্বে যদি এ রকম শর্ত করে থাকে যে, জানাযার নামাযের জন্য বের হবে, তখন জানাযার জন্য বাইরে যাওয়া জায়েয হবে। (কারো সাথে কথা-বার্তা বলতে পারবে না এবং ঠিক সময়ে গিয়ে জানাযা শেষে ফিরে আসতে হবে) মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ।  
141. খাইরুল ফতওয়া, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৩১৫।

❏ প্রশ্ন-১০৩: দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়ার বিধান কি?

✍ উত্তর: মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একবার পড়া ফরযে কিফায়াহ। অতএব যদি মৃত ব্যক্তির ওলি কিংবা কাজী নিজেই বা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে জানাযার নামায একবার আদায় করে, তা হলে দ্বিতীয়বার কিংবা কয়েকবার জানাযার নামায আদায় শরীয়ত স্বীকৃত নয়। অবশ্য যদি কোন অপরিচিত ব্যক্তি ওলীর অনুমতি ছাড়া জানাযা পড়ায় ফেলে, তখন ওলী কিংবা কাজীর অধিকার থাকবে পুনরায় জানাযা পড়ার।

 ফতোয়ায়ে আলমগীরিতে আছে,

وان كان غير هولاء له ان يعيد .

‘ওলী ছাড়া অন্য কেউ জানাযা পড়ালে তখন ওলী পুনরায় পড়ার অধিকার রাখে।’  
142.  ফতওয়া হিন্দিয়া, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৩।

❏ প্রশ্ন-১০৪: নিয়তবিহীন জানাযার নামাযের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। যেমন- দাঁড়ানোর সময় নিয়ত করতে ভুলে গেলে, এরকম জানাযার নামায পড়ার হুকুম কি?

✍ উত্তর: অন্যান্য সকল নামাযের ন্যায় জানাযার নামাযেও নিয়ত আবশ্যক। সুতরাং নিয়তবিহীন পঠিত জানাযার নামাযের কোন গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা নেই।

والنية يعتبر شرطًا لصحتها. 

‘নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়ত শর্ত।’ 
143. বাদায়েউস সানা‘য়ে, খন্ড-১, পৃষ্ঠা- ৩১৫।

❏ প্রশ্ন-১০৫: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং দ্বিপ্রহরের সময় জানাযার নামায ও তিলাওয়াতে সিজদা করা জায়েয আছে কিনা?

✍ উত্তর: প্রশ্নোলি­খিত মাকরূহ সময়ে যদি জানাযা তৈরী হয়ে যায় কিংবা তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়, তাহলে এ সময় জানাযার নামায পড়া এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা মাকরূহবিহীন জায়েয। হ্যাঁ! যদি জানাযা পূর্ব থেকে প্রস্তুত হয় কিংবা তিলাওয়াতে সিজদা উক্ত সময়ের পূর্বে ওয়াজিব হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত সময়ে জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা মাকরূহে তাহরিমী। 
144. ফতওয়া-ই শামী।

❏ প্রশ্ন-১০৬: জারজ সন্তান বা অবৈধ পন্থায় জন্মগ্রহণ করেছে এমন সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযার হুকুম কি?

✍ উত্তর: যেনা বা ব্যভিচারের দোষ ও অপরাধ ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনীর প্রতি সম্বোধিত হবে। সন্তান এ ধরনের অপরাধ থেকে দায়মুক্ত থাকবে। অতএব তার নিষ্পাপের প্রতি লক্ষ্য রেখে মুসলমানদের ওপর আবশ্যক যে, এ ধরনের সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযার নামায পড়া। কারণ গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, এ ধরনের শরীয়ত বিরোধী গর্হিত কাজে লিপ্ত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনীর যদি জানাযার নামায পড়া যায়, সে ক্ষেত্রে নিষ্পাপ সন্তানের জানাযা পড়া উত্তম পন্থায় জায়েয হবে।

ويصلّى على مسلم مات بعد الولادة صغيرًا كان او كبيرًا، ذكرًا كان او انثىٰ . ومثلهُ فى الشامى .

‘মুসলমান সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর মারা গেলে তার ওপর জানাযার নামায পড়া ওয়াজিব- মৃত ব্যক্তি ছোট হোক কিংবা বড়, ছেলে হোক বা মেয়ে।’ 
145. কনযুল উম্মাল, খন্ড-৬, হাদীস নং- ১৪১১৫; ফাতওয়ায়ে শামী, জানায়েয অধ্যায়, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২১।

❏ প্রশ্ন-১০৭: জানাযার নামায পড়ানোর সবচেয়ে অধিক হকদার কে?  পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের ন্যায় জানাযার নামায পড়ানোর ক্ষেত্রেও উপযুক্ততা বিবেচনা করা হবে? না এর জন্য কোন আলাদা হুকুম রয়েছে?

✍ উত্তর:   وبـالله الـتـوفـيـق 
জানাযার নামায পড়ানোর জন্য সবচেয়ে অধিক হকদার হলেন রাষ্ট্রপ্রধান বা বাদশাহ। তবে ইমামতির যোগ্যতার শর্ত সাপেক্ষে। রাষ্ট্রপ্রধানের অবর্তমানে এলাকার কাজী কিংবা মুফতি পড়াবেন। অন্যথায় মহল্লা মসজিদের ইমাম জানাযার নামায পড়াবেন। তা-ও নাহলে আত্মীয়-স্বজনের মধ্য থেকে কোন নিকটাত্মীয় জানাযার নামায পড়ানোর হকদার।
ফতোয়া হিন্দীয়াতে আছে,

اوّل الناس بالصلوٰة عليه السلطان ان حضر فان لم يحضر فالقاضى ثم امام الحى ثم الولى . 

‘জানাযা নামাযের ইমামতির জন্য উত্তম ব্যক্তি হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান, যদি তিনি উপস্থিত থাকেন (ইমামতির যোগ্যতা সাপেক্ষে), তাঁর অবর্তমানে স্থানীয় কাজী তথা মুফতি পড়াবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে মহল্লা মসজিদের ইমাম পড়াবেন, অন্যথায় মৃতের ওলি পড়াবেন।’ 
146. ফতওয়া হিন্দীয়া, খন্ড-১, পরিচ্ছেদ-৫, মৃতব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়ার বর্ণনা, পৃষ্ঠা-১৬৩।

বাদায়েউস্ সানায়ে গ্রন্থে উল্লেখ আছে,

قال علاء الدين الكاسانى وروى الحسن عن ابى حنيفة ان الامام الاعظم قال: السلطان احق بالصلوٰة عليه ان حضر فان لم يحضر فامير المصر، وان لم يحضر فامام الحى، فان لم يحضر فالاقرب من ذوى قرابته . وهذا هو حاصل المذهب عندنا، ومثله فى كبيرى. 

‘আল্লামা আলাউদ্দিন কাসানী বলেন, ইমাম হাসান, ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمه الله تعالي ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জানাযার নামাযে রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত থাকলে তিনিই ইমামতি করবেন। তাঁর অবর্তমানে ঐ শহরের আমীর পড়াবেন। তিনি না থাকলে স্থানীয় মসজিদের ইমাম পড়াবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে মৃতের নিকটত্মীয় যোগ্য ব্যক্তি পড়াবেন। এটাই আমাদের মাযহাবের মূল রায়।’ 
147. বাদায়েউস্ সানায়ে, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩১৭; আল-কবিরী, জানাযা অধ্যায়, পৃষ্ঠা-৫৮৪।

❏ প্রশ্ন-১০৮: নিয়তবিহীন জানাযা নামাযের কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না?

✍ উত্তর: حامدًا ومصليًا নামাযের মধ্যে নিয়্যত এবং সময় নির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অনুরূপভাবে জানাযার নামাযেও নিয়্যত আবশ্যক। যদি ভুলে নিয়্যত করা না হয়, তবে ঐ জানাযার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। কেননা নিয়্যত ছাড়া জানাযার নামায শুদ্ধ হবে না। বাদায়েউস সানায়ে গ্রন্থে উল্লেখ আছে, والنية يعتبر شرطًا لصحتها. অর্থাৎ- ‘জানাযার নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়্যত শর্ত।’



কাফন ও দাফনের বর্ণনা-

❏ প্রশ্ন-১০৯: কোরআন শরীফের আয়াত সম্বলিত কা’বা শরীফের গিলাফের টুকরো কিংবা কালিমা খচিত কাপড় অথবা অন্য কোন বরকতময় কাপড় কাফনের সাথে তাবার্রুক হিসেবে দেয়া যাবে কি না?

✍ উত্তর: তাবার্রুক বা বরকত লাভের উদ্দেশ্যে দেয়া যাবে। আশা করা যায়, উপকার হবে।

وفى هذا ندب ان يجعل الثوب المتبرك فى الكفن زائدًا عليه . 

‘এতে (কাফনের সাথে) বরকতময় কাপড়ের টুকরো তাবার্রুক হিসেবে দেয়া উত্তম।’ 
148. রাসাইলুল আরকান, মুহাম্মদ আবদুল আলী বাহরুল উলূম, পৃষ্ঠা- ১৫৩।

❏ প্রশ্ন-১১০: মাইয়্যেতের ওপর সওয়াবের উদ্দেশ্যে যদি অতিরিক্ত কাপড় দেয়া হয়, এতে কি সওয়াব পাওয়া যাবে?

✍ উত্তর: মাইয়্যেতের ওপর নিয়মাতিরিক্ত কাপড় দেয়া শরয়ী বিধান মতে জায়েয নেই। বরং অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে ফেলার প্রতি শরয়ী নির্দেশ রয়েছে। মারাক্বিউল ফালাহ গ্রন্থে আছে,

وينقص ان زاد العدد فى ثيابه على كفن السنة . 

‘সুন্নাত মোতাবেক কাফনের কাপড় রেখে অতিরিক্ত কাপড় ফেলে দিতে হবে।’

❏ প্রশ্ন-১১১: কাফনের ওপর কালিমা-ই তাইয়্যেবা কিংবা কোরআন শরীফের আয়াত কালির কলম দ্বারা লিখে দেয়া জায়েয আছে কি না?

✍ উত্তর: কালির কলম দ্বারা লিখা জায়েয নেই। ফতোয়া শামীতে আছে,

وقد افتىٰ ابن الصلاح بانه لايجوز ان يكتب على الاكفان خوفًا من صديد الميت  . 

‘ইবনুস্ সেলাহ ফাত্ওয়া দিয়েছেন যে, কাফনের কাপড়ে কালির কলম দ্বারা কিছু লিখা জায়েয নেই, কেননা তাতে মৃতের গলিজের দ্বারা নাপাক হতে পারে।’
149. ফতওয়া শামী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৮৪৭।

❏ প্রশ্ন-১১২: মানুষ মারা গেলে কি মাটি ও পাথর হয়ে যায়? যেমন আল্লাহ বলেন,      
  لَايَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِي عَنْكَ شَيْئًا .
 ‘তারা কিছুই দেখে না, শুনে না এবং কারো কোন কিছুর মুখাপেক্ষী হয় না- যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল।’ অতএব বুঝা গেল, মানুষ মারা গেলে মাটি ও পাথর হয়ে যায়। সাধারণ মুসলমানের কবর তো আছেই বরং আউলিয়া-ই কিরামের মাযারসমূহেরও কোন মর্যাদা নেই। তাই যথাসম্ভব এগুলো অবজ্ঞা ও অপমান করা কী উচিত? এমন আক্বীদা পোষণ করা কী শুদ্ধ?

✍ উত্তর: وبالله التوفيق পবিত্র শরীয়তে আউলিয়া-ই কিরামের মাযার তো দূরের কথা, সাধারণ মুসলমানের কবরকেও সম্মান করা ওয়াজিব; অবজ্ঞা ও অপমান করা যাবে না। কেননা ওলামায়ে কিরাম এমনও বলেছেন, কবরের ওপর পা রাখা গুনাহ এবং কবরের উপরিভাগও মাইয়্যেতের হক্ব। ফতোয়া কেনিয়া’য় ইমাম ‘আলাই (رحمه الله تعالي ) এর ভাষ্য বর্ণিত আছে যে, 

   يأثم بوطى القبور لان سقف القبر حق الميت    

ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত উকবা ইবনে আমের (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,    

  احبُّ الّى من أن امشى على قبر مسلم

‘আগুন কিংবা তরবারীর ওপর দিয়ে চলা অথবা আগুনের জুতা পরিধান করা, আমার নিকট মুসলমানের কবরের ওপর দিয়ে চলার চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।’ 
150. ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কবরের উপর হাটা নিষেধ, পৃষ্ঠা-৪৭২।

উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগে কবর এবং বাজারের মাঝখান দিয়ে পায়খানা-প্রশ্রাবের হাজত পূরণ করতে যাওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য আছে বলে আমার মনে হয় না। 
ওলামায়ে কিরামের ঐকমত্য ফতোয়া আছে যে, মুসলমানের সম্মান ও মর্যাদা মৃত ও জীবিত উভয় অবস্থায় সমান। ফতহুল কাদির ও আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলে কারীম (ﷺ)   ইরশাদ করেছেন, মৃতের হাড় ভাঙ্গা এবং একে কষ্ট দেয়া মানে জীবিতের হাড় ভাঙ্গার মতো।  
151. সুনানে আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) বলেন, মুসলমান মৃত দেহকে কষ্ট দেয়া মানে জীবিতকে কষ্ট দেয়া।  
152. মুসান্নাফে আবু বকর ইবনে আবি শাইবা।

ওলামায়ে কিরামগণ বলেছেন, যে সব কথা ও কারণে জীবিতদের কষ্ট পৌঁছে, মৃতরাও সে সব কারণে কষ্ট অনুভব করেন। এমনকি আমাদের ওলামায়ে কিরামগণ এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন যে, কবরস্থানের ওপর দিয়ে যে নতুন রাস্তা তৈরী করা হয়েছে, উক্ত রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচল করা হারাম। 
153. রদ্দুল মুহতার, ফতওয়ায়ে শামী ইত্যাদি।

কবরস্থানের তাজা সবুজ ঘাস কেটে ফেলা মাকরূহ। কারণ এগুলো যতদিন তরুতাজা থাকবে, আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে থাকবে। এ বিষয়ে আরো অনেক মাসআলা রয়েছে, যদি কারো জানতে বেশী আগ্রহ থাকে, তাহলে মুফতি খলিল খান বিরচিত ‘তাওযীহাত বর হাফত মাসআলা’ গ্রন্থখানা দেখার অনুরোধ রইল।  
154. তাওযীহাত বর হাফত মাসআলা, পৃষ্ঠা-২২৪।


পাগড়ির বর্ণনা-


❏ প্রশ্ন-১১৩: শরীয়তে পাগড়ির হুকুম কি? অর্থাৎ হুযূর রহমতে ‘আলম মুহাম্মদ মোস্তফা(ﷺ)   নামাযের জন্য কী আলাদা পাগড়ি রাখতেন। কারো মতে, হুযূর (ﷺ) মাত্র দু’টি কাপড় পরে নামায আদায় করতেন। টুপি ছাড়া খালি মাথায় নামায পড়লেও নামায পরিপূর্ণ হবে, দলিল হিসেবে তারা হযরত জাবের (رضى الله تعالي عنه)-এর কর্মকে পেশ করে থাকেন। হুযূর রহমতে ‘আলম   খুৎবা দানকালে পাগড়ি পরিধানের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু নামায পড়তেন শুধু দুটি কাপড় পরে, এটা কিভাবে হতে পারে?

✍ উত্তর: আল্লাহর প্রিয় হাবীব (ﷺ) সর্বদা দু’টি কাপড় পরিধান করে নামায পড়তেন এবং মাথায় পাগড়ি মুবারক থাকত না, এটা সম্পূর্ণ ভুল। বরং হুযূর (ﷺ) নামাযের জন্য একটি আলাদা পাগড়ি ব্যবহার করতেন। মুহাদ্দিসীনগণ এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। আরো  বিস্তারিত জানার জন্য জামে‘ তিরমিযীর শরাহ ‘আরফুশ সজি’ দেখুন। 
155. আরফুশ সজি, পৃষ্ঠা-৪৪২।

প্রশ্নকারী লিখেছেন যে, খুৎবা প্রদানকালে হুযূর (ﷺ) পাগড়ি মুবারক পড়তেন। তবে কী নামাযের সময় খুলে ফেলতেন? এটা একটি হাস্যকর ও উপহাসমূলক কথা। মূলতঃ নামাযের সময় পাগড়ি পরিধান করা রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত এবং হযরাত সাহাবা-ই কিরামের সুন্নাত। সকল সাহাবা-ই কিরাম এর ওপর আমল করতেন। দুই কাপড় দ্বারা নামায আদায় করা তা পরিপূর্ণ হওয়ার কথা, এটা কোন দালিলিক কথা নয়। বরং এটা নিজের পক্ষ হতে মনগড়া কথা। আল্লাহ্ তা‘আলা হিদায়ত নসীব করুন।

❏ প্রশ্ন-১১৪: শুধু পাগড়ির ওপর মাসেহ করা জায়েয কি না? কতিপয় ওলামায়ে কিরাম ‘বুলুগুল মুরাম’ গ্রন্থের নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি 

مسح بناصية وعلى العمامة وعلى الخفين . 

দ্বারা পাগড়ির ওপর মাসেহ জায়েয হওয়ার পক্ষে দলিল পেশ করে থাকেন। অতএব পাগড়ির ওপর মাসেহ জায়েয বুঝা যায়?

✍ উত্তর: পাগড়ির ওপর মাসেহ জায়েয না হওয়ার দলিল কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন, وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, পাগড়ির ওপর মাসেহ করা মানে মাথার ওপর মাসেহ করা নয়। অতএব কুরআনের দলিল দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ির ওপর মাসেহ করা জায়েয নেই। হ্যাঁ! অবশ্য হাদীস শরীফে পাগড়ীর ওপর মাসেহ করার ব্যাপারে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত মুগীরা (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত আছে, 

ومسح بناصية وعلى العمامة 

আর কোন বর্ণনায় শুধু পাগড়ির কথা উল্লেখ আছে। 

সুতরাং পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা মাথা মাসেহ করা ওয়াজিব প্রমাণিত। একথা সামনে রেখে যে সকল হাদীস দ্বারা পাগড়ির ওপর মাসেহ জায়েয সেগুলোর বিশুদ্ধ আমল নির্দিষ্ট করা হবে। আর তা হলো এই যে, হুযূর (ﷺ) মাথা মুবারকের এক চতুর্থাংশ মাসেহ করেছেন। যা কপালের প্রায় সমপরিমাণ। কিন্তু সে সময় পাগড়ি মাথা থেকে একেবারে খুলে ফেলেননি বা নামিয়ে রাখেননি। বাকী মাথার ওপর পাগড়ির ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে মাসেহ করেছেন। যা রাবী কখনো পরিপূর্ণ বর্ণনা দিতে গিয়ে কপালের পরিমাণ মাসেহ এবং পাগড়ির ওপর উল্লেখ করেছেন। আবার কখনো শুধু পাগড়ির কথা উল্লেখ করেছেন।
সারকথা হচ্ছে এই যে, মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা হয়েছিল, যা ফরয। পাগড়ির ওপর মাসেহ করা ফরযের কারণে ছিল না। হযরত মুহাক্কিক আল্লামা আবদুল বার (رحمه الله تعالي ) পাগড়ির ওপর মাসেহ সম্পর্কীয় বর্ণিত সকল রেওয়ায়েতগুলোকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। 
156. খায়রুল ফতওয়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২১।


 
Top