রোগীর সেবা


রসুলেপাক  (ﷺ) এর পবিত্র  অভ্যাস ছিলো রোগী  দেখা। কারো অসুস্থতার  সংবাদ পাওয়া মাত্রই তিনি তাকে দেখতে যেতেন। রোগীর শিয়রে বসতেন। হাল অবস্থা জিজ্ঞেস করতেন  এবং রোগীর কপালে হাত রাখতেন। কখনও যন্ত্রণার স্থানে হাত রেখে তার অবস্থা কেমন তা জিজ্ঞেস করতেন। বিসমিলা­ হ্ শরীফ পাঠ করতেন। বিসমিলা­ হ্ শরীফ পাঠ করাও এক প্রকারের চিকিৎসা। এতে রোগীর দেহে প্রশান্তি ও আনন্দকর অনুভূতি সৃষ্টি হয়। রোগীর রোগমুক্তি এবং যন্ত্রণা লাঘবের ক্ষেত্রে আনন্দকর অনুভূতি, মানসিক প্রশান্তি ও সান্ত্বনা প্রদান ইত্যাদির যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এর দ্বারা মনোবল বৃদ্ধি পায়, সাহস সঞ্চার হয়, আত্মপ্রত্যয় জন্মে এবং যন্ত্রণা দূর হয়। বিশেষ করে প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব ও  বুযুর্গ লোকদের উপস্থিতি এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে। আর এরূপ ক্ষেত্রে একটি প্রবাদ রয়েছে, বন্ধুর সাক্ষাৎ রোগমুক্তির ওসিলা। এক ইহুদী যুবক রসুলেপাক (ﷺ) এর খেদমত করতো। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লো। রসুলেপাক (ﷺ) তার খোঁজখবর নেয়ার জন্য গেলেন। কাছে বসে সালাম দিলেন। আর এতে খুশি হয়ে সে সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে গেলো। রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি একে দুঃখ থেকে পরিত্রাণ দান করলেন।


হজরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, একবার আমি রোগাক্রান্ত হয়ে বেহুঁশ হয়ে গেলাম। তখন রসুলেপাক এলেন এবং অজু করে অজুর পানির ছিটা দিলেন আমার শরীরে। তৎক্ষণাৎ আমার হুঁশ ফিরে এলো। আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমার মুখের উপর পানি ছিটিয়ে দিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে আমি সুস্থ হয়ে গেলাম।  রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, তোমরা রোগীর শুশ্রুষা করো। রসুলেপাক (ﷺ) সাধারণভাবে সব রোগীর সেবা করার জন্যই বলেছেন।


আবার কেউ কেউ এ হুকুমকে আম হুকুম মনে করেন না। তাঁদের মতে চোখ উঠা, ফোঁড়া হওয়া এবং দাঁত ব্যথা এ তিনটি রোগ এ হুকুমের বাইরে। ইমাম বায়হাকীও এরূপ একটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু প্রথমোক্ত মতটিই বিশুদ্ধ। অর্থাৎ সকল রোগীর সেবা করার জন্য রসুলেপাক  (ﷺ) হুকুম করেছেন। শনিবার দিন রোগীর সেবা করা নিষেধ সংক্রান্ত একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু এটিও ঠিক নয়। এই বর্ণনা সুন্নতের পরিপন্থী। এ খারাপ আচারটি আবিষ্কার করেছে এক ইহুদী চিকিৎসক।


এক  বাদশাহ্  অসুস্থ হয়ে  পড়েছিলো। উক্ত  বাদশাহ্ চিকিৎসককে  হুকুম করলো, দিনরাত সবসময় তুমি আমার খেদমতে হাজির থাকবে। ইহুদী চিকিৎসক ফন্দীফিকির করে এই কঠিনদায়িত্ব থেকে একটু অব্যাহতি পেতে চাইলো। তাই সে কাল্পনিক কথাটি এক্ষেত্রে বিধানরূপে প্রকাশ করলো যে, শনিবার দিন কোনো রোগীর চিকিৎসা করা ঠিক নয়। আর তারপর থেকেই এটা মানুষের কাছে প্রচার হয়ে গেলো।


কেউ কেউ বলে থাকেন, শীতকালে রাতের বেলায় আর গ্রীষ্মকালে দিনের বেলায় রোগীর সেবা করা মোস্তাহাব। শীতকালে রাত লম্বা আর গ্রীষ্মকালে দিন লম্বা হয়ে থাকে। দ্বীনের দুশমন ও বাতিল ফেরকার লোকদের শুশ্রুষা করা মাকরুহ। তবে বিশেষ কঠিন পরিস্থিতিতে তাদেরও সেবা করা মোস্তাহাব। এ ব্যাপারে বহু হাদীছ রয়েছে। তবে এ শ্রেণীর  লোকদের শুশ্রুষা করার আদব মাসআলার কিতাবে রয়েছে।


জেনে রাখা দরকার, রোগ দুই প্রকারের। মনের রোগ এবং দেহের রোগ। মনের রোগের চিকিৎসা রসুল করীম (ﷺ) এর বৈশিষ্ট্য। কেবল তিনি এবং তাঁর প্রকৃত অনুসারী ছাড়া অন্য কারও দ্বারা মনের রোগ সারানো সম্ভব নয়। দৈহিক রোগের চিকিৎসা করা অন্য লোকের পক্ষেও সম্ভব। তবে রসুলে করীম (ﷺ) থেকে দৈহিক রোগের চিকিৎসাও পাওয়া যায়। তাঁর আবির্ভাবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্তরের রোগের চিকিৎসা করা। দেহের বিষ থেকে বিষের প্রতিক্রিয়া যেমন বিভিন্ন ধরনের হয় এবং তার চিকিৎসাও বিভিন্নভাবে করা হয়ে  থাকে, ঠিক তদ্রুপ গোনাহর ক্ষতি, ব্যাধি ও ক্ষতের সৃষ্টি হয় বিভিন্ন প্রকারের গোনাহর কাজ দ্বারা, আর তার দূরীকরণ প্রক্রিয়াও তদ্রুপ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বান্দা দুনিয়া ও আখেরাত সম্পর্কিত যে সমস্ত ক্ষতি ও লোকসান দ্বারা আক্রান্ত হয়, তার অধিকাংশই গোনাহ্ ও নাফরমানির কারণে হয়ে থাকে। গোনাহর প্রতিক্রিয়া অন্তরের মধ্যেও পড়ে। দেহের মধ্যেও পড়ে। আর তার একাধিক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে, এলেম থেকে বিমুখ থাকা। কেনোনা এলেমের নূর গোনাহর তমসার সাথে মিশ্রিত হয় না। এমর্মে ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর শেরখানা বিশেষভাবে উলেখ­ যোগ্য।


ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, আমি আমার উস্তাদের কাছে আমার স্মরণশক্তির ব্যাপারে অনুযোগ করলাম। তিনি উপদেশ দিলেন, গোনাহ্র কাজ বর্জন করো। আরও বললেন,

জেনে রেখো, এলেম হচ্ছে এক প্রকার নূর। আর আল্লাহ্র নূর তো গোনাগাহ্রকে দেয়া হয় না। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, প্রকৃত রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়া। হাদীছ শরীফে এসেছে, বান্দার গোনাহ্র কারণে তাকে ওই রিযিক থেকে বঞ্চিত করা হয়, যা দ্বারা সে তাকওয়া অর্জন করতে পারে। তার পরিবর্তে সে তাকওয়াবিরোধী অধিক সম্পদ লাভ করে থাকে।

যেমন  আল্লাহ্তায়ালা  এরশাদ ফরমান, গ্রামবাসীরা  যদি ইমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের উপর আসমান ও যমীনের বরকতের দ্বারসমূহ খুলে  দিতাম। এক্ষেত্রে একটা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। যেমন বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক গোনাহ্গার লোক  এক সময় যে ভিখারী ছিলো, সে অন্যান্যদের তুলনায় অধিক গোনাহ্গার হওয়া সত্ত্বেও এখন বেশ সুখস্বাচ্ছন্দ্যের অধিকারী। এর উত্তর এই যে, এহেন হুঁশিয়ারী  তো উচ্চারণ করা হয়েছে ইমানদারদের জন্য। কাফেরদের জন্য নয়। তবে উপরোক্ত স্বাচ্ছন্দ্যের অধিকারীদের জন্য রয়েছে মারাত্মক আশংকা। হতে পারে এমতাবস্থায় ইমানের বীজটি তাদের অন্তরের মাটিতে আর নেই। অথবা বাহ্যিকভাবে যা সুখ স্বাচ্ছন্দ্যরূপে প্রতীয়মান হচ্ছে, প্রকৃত অবস্থা তা নয়। তারা একটি ধোঁকায় নিমজ্জিত রয়েছে। কেনোনা গোনাহ্র কারণে তাদের অন্তরে এক ধরনের তমসা এবং পাশবিকতার জন্ম  হয়। ফলে তাদের প্রকৃত অনুভূতি লোপ পায়। কখনও কখনও এমন হয় যে, গোনাহর বদনসিবীর আলামত কৃষ্ণতা তাদের চেহারাতেও বিস্তার লাভ করে।


সঠিক  অনুভূতিও  ইমানের একটি  শাখা। মন এবং  দেহের অসুস্থতাও  গোনাহর আলামতসমূহের  মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া  গোনাহর কাজ মানুষের হায়াতকেও  কমিয়ে

দেয়। যেমন ইবাদতের দ্বারা মানুষের হায়াত বাড়ে।

 

গোনাহর  দ্বারা হায়াত  কমে যায়- এর ব্যাখ্যা  কেউ কেউ এভাবে করেছেন যে, এদ্বারা  খায়ের ও বরকত কমে যায়। কেনোনা গোনাহ্ দ্বারা মানুষের জীবনে অখ্যাতি, বিবেকহীনতা, সুখ ও নেয়ামতবিচ্ছিন্নতা এবং হতভাগ্যতা ইত্যাদি নেমে আসে। যেমন মানুষের  শারীরিক সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তির যথার্থতা বিরাজ করে গোনাহ্ এবং তার উপকরণাদি বর্জনের মাধ্যমে। অন্তরের অবস্থাও তদ্রুপ। অন্তরের বর্জন কার্যটি হাসিল হয় তওবার মাধ্যমে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে নিষিদ্ধ কাজ থেকে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে।


হজরত আনাস (رضي الله عنه) বলেছেন, নবী করীম (ﷺ) একদিন বললেন, আমি কি তোমাদের যন্ত্রণা এবং তার ঔষধ সম্পর্কে বলবো না। তোমাদের যন্ত্রণা হচ্ছে তোমাদের গোনাহ্। আর তার ঔষধ হচ্ছে এসতেগফার। সুতরাং এ থেকে বুঝা যায়, অন্তর্ব্যাধির পরিচিতি ও তার চিকিৎসা   পাওয়া যাবে রসুলেপাক (ﷺ) এর কাছ থেকেই। অন্তর্ব্যাধির পরিচিতি ও তার চিকিৎসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতার দিকেই ধাবিত হয়েছে। ওহীর মাধ্যমেও হয়েছে। যেমন সফর ও রুগ্নাবস্থায় রোজাভঙ্গ করার অনুমতি, ভয়, অসুস্থতা বা পানি না পাওয়া অবস্থায় তায়াম্মুম করার বিধান ইত্যাদি শরীয়তের মাসআলাগুলো তার প্রমাণ। তাছাড়া যে সকল চিকিৎসা ওহীর মাধ্যমে জাহের হয়েছে, সেগুলোর অস্তিত্ব যদি রসুলে করীম (ﷺ) এর অভিজ্ঞতা ও কিয়াস দ্বারাও ধরা হয় তবু তা সুদূরপরাহত হবে না। কেনোনা চিকিৎসা  সাব্যস্ত করা, কারণ নির্ধারণ করা এগুলো তাওয়াক্কুলের (আল্লাহ্ নির্ভরতার) পরিপন্থী নয়। যেমন খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে ক্ষুধা ও পিপাসা দূর করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়।


অসুস্থ  হলে চিকিৎসা  করার বৈধতা রসুলেপাক  (ﷺ) এর অবস্থা দ্বারা  প্রমাণিত। কেনোনা তিনি চূড়ান্ত তাওয়াক্কুলের সাথে ঔষধ ব্যবহার করতেন এবং রোগের কারণ ও উপসর্গের প্রতি খেয়াল রাখতেন। এ মর্মে রসুলেপাক (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ্তায়ালা এমন কোনো ব্যাধি সৃষ্টি করেননি, যার ঔষধ নেই। এক বর্ণনায় আছে, মৃত্যুরোগ ছাড়া সকল রোগের নিরাময় আছে। কোনো কোনো বর্ণনায় রোগের চিকিৎসা করারও হুকুম রয়েছে  এবং সেখানে ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে যে, চিকিৎসা করার সময় আল্লাহ্তায়ালার হুকুম ও তকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং ঔষধকেই একমাত্র রোগ নিরাময়কারী মনে করা যাবে না। তবে চিকিৎসা করার জন্য যে হুকুম রয়েছে, তা দ্বারা চিকিৎসা করা ওয়াজেব এটা বুঝায় না। এ ব্যাপারে সকলেরই ঐকমত্য রয়েছে। বরং রোগের চিকিৎসা করা সুন্নত বা মোস্তাহাব।  তকদীরে এলাহীর উপর ভরসা রাখলে চিকিৎসা করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী হবে না।


অবশ্য কোনো কোনো সময় অবস্থা বাস্তবায়ন ও মাধ্যম অর্জনের জন্য আসবাব বা চিকিৎসা বর্জনও করা  যেতে পারে। এ কথার দিকে ইঙ্গিত করে রসুলেপাক (ﷺ) এর এই হাদীছখানা, আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে। আর তারা হলো ওই সকল লোক, যারা রোগের চিকিৎসা করবে না এবং বদফালিতে বিশ্বাস করবে না। তারা আপন রবের উপর তাওয়াক্কুলকারী হবে।

 

অন্য  এক বর্ণনায় আছে, তারা  কাপড় পরিধান করবে না। হাদীছের  ব্যাখ্যায় উলামা কেরাম বলেন, চিকিৎসার উপর তারা বিশ্বাস রাখবে না এবং তার উপর পূর্ণ নির্ভরশীল হবে না, আর বদফালির উপর কোনোরূপ বিশ্বাস রাখবে না। উত্তম কাপড় পরিধান করবে না। কোনো  তাওয়াক্কুলকারী ব্যক্তি কী চিকিৎসা গ্রহণ করবে, এ মর্মে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে হজরত হারেছ ইবনে মাহাসেবী থেকে একখানা হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চিকিৎসা  গ্রহণ করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। কেনোনা এর অস্তিত্ব রসুলেপাক (ﷺ) এর আমলের মধ্যে পাওয়া যায়। অতঃপর হজরত হারেছ (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞেস করা হলো, রসুলেপাক (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি চিকিৎসা গ্রহণ করে এবং দেহের মধ্যে দাগ লাগায়, সে তাওয়াক্কুলের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায় এই হাদীছের তাৎপর্য তবে কী?


উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এ হাদীছের তাৎপর্য এটাই, যা ওই হাদীছেই বলা হয়েছে। অর্থাৎ চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এবং দাগ না লাগালে বিনা হিসাবে সে বেহেশতে যাবে। আর করলে বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, তাওয়াক্কুলের বিভিন্ন স্তর ও সোপান রয়েছে, যা একটি অপরটি থেকে উত্তম। সুতরাং  চিকিৎসা গ্রহণ করলে উত্তম স্তর থেকে বের হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে তামহীদ কিতাবের লেখক বলেছেন, তাওয়াক্কুলের গণ্ডি বহির্ভূত তখনই ধরা হবে, যখন শরীয়তের চিকিৎসা গ্রহণ করা হবে না। আর দাগ লাগানোর ব্যাপারে যদি এরকম বিশ্বাস হয় যে, রোগমুক্তি এটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এমতাবস্থায় যদি সে আল্লাহ্র কুদরতের উপর থেকে বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়, তখন সে তাওয়াক্কুলের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যায়। আর যদি এই ধারণা রাখে যে, রোগমুক্তি আল্লাহ্তায়ালার তরফ থেকেই হয়ে থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে। তার দলীল হচ্ছে কোরআনে পাক ও সুরা ফাতেহা দ্বারা চিকিৎসা করার রীতি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা সামনে প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ্।


রোগমুক্তির  জন্য গ্রহণযোগ্য  আসবাব বা উপকরণ তিন  প্রকার। ১. আসবাবে একীনিয়া যা আল্লাহ তায়ালার বিধান। এগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া ওয়াজিব। যেমন খানা খাওয়ার সময় ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া। পেয়ালায় মুখ লাগিয়ে চুমুক দিয়ে পানি পান করা। এ জাতীয় আসবাব পরিত্যাগ করার নাম তাওয়াক্কুল নয়। বরং পরিত্যাগ করলে গোনাহ্ হবে। ২. আসবাবে যন্নিয়া অভিজ্ঞতার আলোকে যা বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত। এটাও তাওয়াক্কুলের অন্তর্গত। যেমন, গরম অবস্থায় শীতল ঔষধ এবং ঠাণ্ডা অবস্থায় গরম ঔষধ ব্যবহার করা। এ জাতীয় উপকরণ গ্রহণের ক্ষেত্রে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াও তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। তবে হ্যাঁ, নফসের অবস্থা সাব্যস্ত করার ব্যাপারে, মাকাম হাসিলের বেলায় এ জাতীয় উপকরণ বর্জন প্রশংসনীয় কাজ বটে। ৩. আসবাবে ওয়াহামিয়া - এটা একীনীও নয় যন্নীও নয়। অর্থাৎ এ জাতীয় আসবাব আল্লাহ্র বিধান বা অভিজ্ঞতা কোনোটির দ্বারাই সাব্যস্ত নয়। কেবল ধারণা এবং খেয়ালই এটাকে উপকরণ হিসেবে ধরে নিয়েছে। এ জাতীয় উপকরণ ব্যবহার করা সর্বসম্মতভাবে তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী।


রসুলেপাক (ﷺ) এর চিকিৎসা তিন প্রকারের ছিলো। ১. তবয়ী দাওয়া যা, উদ্ভিদ ও প্রাণীজ বস্তুর সাহায্যে করা হতো। ২. রূহানী দাওয়া যা, বিভিন্ন দোয়া, যিকির আযকার ও কোরআনের আয়াতের সাহায্যে করা হতো। ৩. মুরাক্কাব বা যৌগিক যা উপরোক্ত দুপ্রকারের সংমিশ্রণে করা হতো। অর্থাৎ দোয়া এবং দাওয়া দুয়ের মাধ্যমেই করা হতো। কোরআন করীমের চেয়ে অধিক ব্যাপক, উপকারী এবং বড় কোনো চিকিৎসাই  নাযিল করা হয়নি। যেমন আল্লাহ্তায়ালা এরশাদ করেছেন কোরআন মজীদের কিছু অংশ মুমিনদের জন্য শেফা এবং রহমত। রূহানী ব্যাধির জন্য কোরআন মজীদ পরিপূর্ণ নিরাময়। এই ব্যাধি নষ্ট আকীদাগত হোক বা মন্দ স্বভাবজাত অথবা দুষ্কর্মই হোক। কোরআনে করীমে বিশুদ্ধ বিশ্বাস, প্রশংসানীয় চরিত্র এবং উত্তম আমলের সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। এখন কথা হলো, দৈহিক ব্যাধির ক্ষেত্রে কোরআন করীম শেফা হতে পারে কেমন করে।


হ্যাঁ, দৈহিক রোগ ব্যাধি সারানোর জন্যও কোরআন করীম ভূমিকা রাখতে পারে। কোরআন  তেলাওয়াতের দ্বারা বরকত ও প্রশান্তি হাসিল হয়, যা অনেক রোগ ও উপসর্গের  ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, অচেনা যাদুমন্ত্র ঝাড় ফুঁক যার অর্থ ও ভাব কিছুই বোধগম্য হয় না, তাও আবার ফাসেক ফাজের লোকেরা করে থাকে, যারা অপরিচ্ছন্নতায় নিমজ্জিত তাদের এ ধরনের যাদুমন্ত্র ও ঝাড় ফুঁক দ্বারা উপকারও পরিলক্ষিত হয়। তাহলে কোরআনে করীম যার মধ্যে রয়েছে জালাল ও কিবরিয়া, আল্লাহ তায়ালার নাম, বারী তায়ালার যাত ও সিফাতের নাম। তাও ব্যবহৃত হয় এমন লোকদের দ্বারা যারা পাক, পবিত্র   ও পরিচ্ছন্ন, যারা আযমত ও কামালিয়াতওয়ালা। আর স্বয়ং কোরআন মজীদ একটি জ্বলন্ত মোজেজা, তাহলে তার মাধ্যমে মানুষ আরোগ্য লাভ করবে না কেনো ?


নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, কোরআন দ্বারা যার রোগারোগ্য হয়নি, আল্লাহ তায়ালা তাকে নিরাময় করবেন না। হাদীছ শরীফে আছে, ফাতেহা শরীফ সকল রোগের দাওয়া। বিষাক্ত জানোয়ারের দংশনের বিষ, পাগল ও মূর্ছাগ্রস্ত লোকের ক্ষেত্রে সুরা ফাতেহার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আমীরুল মুমিনীন সাইয়্যেদুনা আলী মুর্তযা (رضي الله عنه) এর হাদীছ যা ইবনে মাজা (رحمة الله) মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তাতে বর্ণিত হয়েছে, উত্তম দাওয়া হচ্ছে কোরআন মজীদ। তাফসীরে বায়যাবীর লেখক তাঁর উক্ত তাফসীর গ্রন্থ ‘ওয়া নুনাযযিলু মিনাল ক্বুরআনি মা হুয়া শিফা’  এবং এ জাতীয় আয়াতে করীমাকে রোগমুক্তির আয়াত হিসেবে উলেখ­ করেছেন। নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ যেমন মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া ইত্যাদিতে আয়াতে শেফা সংক্রান্ত একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইমামে তরীকত আলা­ মা আবুল কাসেম কুশাইরী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর একটি বাচ্চা রোগাক্রান্ত হয়েছিলো। তার রোগ এতো প্রকট আকার ধারণ করেছিলো যে, মৃত্যু প্রায় হয় হয়। তিনি বলেন, আমি তখন রসুল করীম (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম। রসুলে করীম (ﷺ) এর খেদমতে আমার বাচ্চার কথা বললাম। রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, তুমি আয়াতে শেফা থেকে দূরে কেনো? আয়াতখানির আমল করে তার মাধ্যমে রোগমুক্তি চাচ্ছো না কেনো? আমি জেগে উঠলাম এবং এ ব্যাপারে চিন্তা করতে লাগলাম। গোটা কোরআন মজীদের ছয় জায়গায় আয়াতে শেফা পেলাম।

 

আয়াতে শেফা

وَﺷِﻔَﺎءٌ ﻟِﻤَﺎ ﻓِﻲْ اﻟﺼﱡﺪُوْرِ-

وَ ﯾَﺸْﻒِ ﺻُﺪُوْرَ ﻗَﻮْمٍ ﻣُﺆْﻣِﻨِﯿْﻦَ -

ﯾَﺨْﺮُجُ ﻣِﻦْ ﺑُﻄُﻮْﻧِﮭَﺎ ﺷَﺮَابٌ ﻣُﺨْﺘَﻠِﻒٌ اَﻟْﻮَاﻧُﮫُ ﻓِﯿْﮫِ ﺷِﻔَﺎءٌ ﻟﻠﱢﻨﱠﺎسِ-

ُوَﻧﻨَ ﱢﺰلُ ﻣِﻦَ  اﻟْﻘُﺮْانِ ﻣَﺎ ھُﻮَ  ﺷِﻔَﺎءٌ وﱠ    ْرَﺣﻤَﺔٌ    ُِِْْﻟﱢﻠﻤﺆﻣﻨﯿْﻦَ - وَاِذَا وﱠﺷِﻔَﺎءٌ -

 ھُﻮَ ﻟَﻠﱠﺬِﯾْﻦَ اﻣَﻨُﻮْا ھُﺪًا ﻗُﻞْ

 ﻣَﺮِﺿْﺖُ ﻓَﮭُﻮَ ﯾَﺸْﻔِﯿْﻦِ -

 


আমি এ আয়াতসমূহ লিখে পানিতে ভিজিয়ে বাচ্চাকে পান করিয়ে দিলাম। আমার  বাচ্চা সঙ্গে সঙ্গে ভালো হয়ে গেলো। তার অবস্থা এমন হলো, যেনো রুগ্নাবস্থায় তার পায়ে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিলো। আর আয়াতগুলো পাঠ করার  সঙ্গে সঙ্গে পায়ের বাঁধন খুলে গেলো। শায়েখ তাজুদ্দীন সুবকী (رحمة الله) যিনি শাফেয়ী মাযহাবের একজন বড় আলেম ছিলেন, তিনি বলেন, আমি বহু মাশায়েখকে রোগমুক্তির জন্য আয়াতে শেফার আমল লিখতে দেখেছি।


এই  কিতাবের  লেখকও শায়েখ  আবদুল ওহাব মুত্তাকী  (رحمة الله) কে উক্ত আমল করতে দেখেছেন। এক্ষেত্রে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে জেনে নেয়া দরকার যে, এ সমস্ত আয়াত বা দোয়া জিকির কি স্বয়ং নিরাময় করতে পারে? নাকি যোগ্যতার, আমল প্রদানকারীর শক্তি, হিম্মত এবং তার তাছির- এগুলো আমলের ক্ষেত্রে শর্ত? এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, শেফা লাভের মধ্যে তারতম্য হয়। অর্থাৎ কেউ শেফা

পেয়ে থাকে, আবার কেউ পায় না। এক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে যে, এখানে আমল প্রদানকারীর  তাছির বা হিম্মতের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। অথবা এখানে এমন

কোনো শক্ত বাধা রয়েছে, যার কারণে আমল প্রদানকারীর শক্তি ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও  তাছির হচ্ছে না। তবীয়ত যখন দাওয়াকে ভালোভাবে কবুল করে নেয় এবং হজম করে, তখন তার দ্বারা পূর্ণ ফায়দা হয়। তেমনি মন যখন শেফার দোয়া বা তাবীযকে পুরোপুরি গ্রহণ করে এবং আমল প্রদানকারীর তরফ থেকে হিম্মতও সুদৃঢ় হয়, তখন তার দ্বারা রোগ দূর করার বিশেষ আছর পাওয়া যায়। এভাবে

রোগ দূর করা, বালা মুসিবত দূর করা এবং উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার ক্ষেত্রে দোয়া শক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কোনো কোনো সময় তার ক্রিয়া বিপরীত হয়ে

থাকে। সেটা দোয়াকারীর নিজের দুর্বলতার কারণে হতে পারে।


যেমন কেউ দোয়া করছে ঠিকই, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এটা তার জন্য উত্তম বলে মনে করছেন না। হতে পারে তা কবুল হলে হক্কানিয়াত ও ইনসাফের সীমা থেকে  সে বেরিয়ে যাবে। অথবা এমন দুর্বলতার কারণে হতে পারে, যা দোয়াপ্রার্থীর অন্তরে বিদ্যমান। যেমন দোয়ার সময় পূর্ণ মনোনিবেশ না করে খামখেয়ালির সাথে দোয়া করছে। অথবা এমনও কারণ থাকতে পারে যে, মকসুদ হাসিলের  ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন হারাম খাওয়া। গোনাহ্র তমসা থাকা। অন্তরে অমনযোগিতা বা চপল চিন্তা ও কল্পনা দ্বারা হৃদয় ভরপুর থাকা ইত্যাদি।


হাদীছ শরীফে আছে, অনর্থক চিন্তা ও কাজের প্রতি মশগুল এবং জিকির থেকে গাফেল  ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। দোয়া হচ্ছে বালা মুসিবতের দুশমন। দোয়া তার দুশমনকে দূর করে দেয়। সংশোধন করে দেয় এবং বালা মুসিবতের প্রতিবন্ধক হয়। বিপদ অবতীর্ণ হলে তাকে দূরীভূত করে। আর না হয় হালকা করে দেয়। দোয়া মুমিন ব্যক্তির হাতিয়ার।


যদি  হুজুরে  কলব এবং  নিবিষ্টচিত্তে  নির্দিষ্ট লক্ষ্যসহ,  বিনয়, ভক্তি ও কাকুতিমিনতিসহ দোয়া করা হয়, পবিত্র হয়ে দুহাত তুলে তওবা এস্তেগফারের পর আল্লাহ্পাকের প্রশংসা ও দরূদ শরীফ আদায় করার পর আল্লাহ্তায়ালার যাতী ও সিফতী নামসমূহের ওসিলা দিয়ে রসুলেপাক (ﷺ) এর তাওয়াজ্জুহের খেয়াল করে দোয়া  করলে ওই দোয়া লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে তীরের মতো। পূর্ণালোকিত দিবস, পূর্ণশক্তি সম্পন্ন বাহু, লক্ষ্যবস্তু সামনে এবং তার আদব ও শর্তও রপ্ত করা আছে- এ ধরনের তীরন্দাজের তীর যেমন লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না, উক্ত দোয়াকারীর দোয়াও তেমনি ব্যর্থ হয় না।


মুআওয়াযাত ইত্যাদি ও আল্লাহ তায়ালার নামসমূহের দ্বারা আরোগ্য অন্বেষণ করাও  এক প্রকারের সফল রূহানী চিকিৎসা, যদি তা একজন নেককার, পরহেজগার, মুক্তাকী লোকের মুখের উচ্চারিত হয় এবং পূর্ণ হিম্মত ও মনযোগের সাথে যদি আমল করা হয়। কিন্তু আজকাল এ ধরনের মানুষ বিরল, তাই মানুষ উক্ত রূহানী চিকিৎসা বাদ দিয়ে জিসমানী চিকিৎসার দিকে দৌড়ে যায়।


মুআওয়াযাত বলতে তাই বুঝায়, যা হাদীছ শরীফে এসেছে, রসুলেপাক (ﷺ) ‘কুল আউযু বিরব্বিল ফালাক’ এবং ‘কুল আউযু বিরব্বিন্নাস’ পাঠ করে নিজের উপর  দম করতেন। কেউ কেউ অবশ্য কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ এবং কুল ইয়া আইয়্যুহাল ক্বাফিরুনকেও শামিল করেন। তাছাড়া মুআওয়াযাত কোরআনে করীমের ওই সকল আয়াতকে বলে যার মধ্যে ‘আউযু’ শব্দ রয়েছে।


رَبﱢ اَﻋُﻮْذُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ھَﻤَﺰَاتِ اﻟﺸﱠﯿَﺎﻃِﯿْﻦِ وَاَﻋُﻮْذُﺑِﻚَ رَبﱢ اَنْ

ﯾُﺤْﻀَﺮُوْنَ -


উলামা কেরাম তিনটি শর্ত সাপেক্ষে শেফার দোয়াকে জায়েয মনে করেন। প্রথম শর্ত এই যে, দোয়া আলা­ হ্পাকের কালাম এবং তাঁর ইসিম ও সিফাত থেকে হতে হবে। চাই আরবী ভাষাতে হোক বা অন্য কোনো ভাষাতে। আরবী ছাড়া অন্য

কোনো ভাষা থেকে হলে তার অর্থ জানা থাকা প্রয়োজন। দ্বিতীয় শর্ত, এরকম ধারণা   রাখতে হবে যে, এ দোয়ার মধ্যে প্রকৃত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী আল্লাহ তায়ালা। তৃতীয় শর্ত, দোয়ার ফলাফল সম্পর্কে আল্লাহ্তায়ালার ইচ্ছা ও তকদীরের উপর নির্ভরশীল হতে হবে।


হাদীছ  শরীফে এসেছে,  এক ব্যক্তি রসুলেপাক  (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করেছিলো, আমরা যে আমল, দোয়া, ওযীফা ইত্যাদি করে থাকি, এগুলো দিয়ে কি আমাদের তকদীরের  কোনো পরিবর্তন হয়? তিনি (ﷺ) উত্তর দিয়েছিলেন, হলে তকদীরে এলাহী অনুসারেই হয়। সহীহ্ মুসলিম শরীফে হজরত আউফ ইবনে মালেক (رضي الله عنه)

থেকে  বর্ণিত  আছে, তিনি  বলেন, আমরা জাহেলী  যুগের বিভিন্ন মন্ত্রতন্ত্র  পাঠ করতাম। আমরা এ সম্পর্কে রসুলেপাক  (ﷺ) কে বললাম, ইয়া রসুলালা­ হ! এ ব্যাপারে  আপনার মত কী? তিনি (ﷺ) বললেন, তোমাদের মন্ত্রতন্ত্রগুলো  আমার সামনে পেশ করো। তার মধ্যে মন্দ কথা না থাকলে পড়তে পারো।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 





© | সেনানী এপ্স |

 
Top