জড় পদার্থের আনুগত্য


জড় পদার্থসমূহও নবী করীম (ﷺ) এর হুকুমের গোলাম ছিলো। তারাও রসুলেপাক (ﷺ) এর দরবারে সালাম নিবেদন করেছে, কথা বলেছে, যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী করীম (ﷺ) এর বাণী ‘এমন কোনো গাছ ও পাথর নেই, যারা আমার উপর সালাম পেশ করেনি।’ তারা সশব্দে বলেছে, আসসালামু আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহ্। 


এ প্রসঙ্গে হাদীছ বর্ণনা করেছেন হজরত আলী রা, হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এবং হজরত জাবের (رضي الله عنه)। তাছাড়া নবুওয়াতের পূর্বে প্রথম জীবনে আবু তালেবকে সঙ্গে নিয়ে যখন তিনি (ﷺ) সফরে বেরিয়েছিলেন, তখন সমস্ত গাছপালা ও পাথর তাঁকে সেজদা করেছিলো। এই হাদীছের বিস্তারিত বর্ণনা যথাস্থানে আসবে ইনশাআল্লাহ্। 


সহীহ্ মুসলিম শরীফে হজরত জাবের ইবনে সামুরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে -নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমি নিঃসন্দেহে ওই পাথরগুলোকে চিনি, নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্বে যারা মক্কা মুকাররমায় আমাকে সালাম জানাতো। এ নিয়ে অবশ্য মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, সে পাথর হচ্ছে হাজারে আসওয়াদ। কেউ কেউ আবার বলেন, হাজারে আসওয়াদ ছাড়া আরও কিছু পাথর আছে যা হজরত খাদীজাতুল কুবরা (رضي الله عنه) এর বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে দেয়ালে রক্ষিত আছে। মানুষে এগুলো স্পর্শ করে বরকত লাভ করে থাকে। এগুলোর নাম যেকাকুল হাজার। মানুষেরা বলে, পাথরগুলো রসুলেপাক (ﷺ) এর আসা যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম পেশ করতো। শায়েখ ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন, মক্কাবাসীদের নিকট থেকে ব্যাপকভাবে বর্ণিত আছে, পাথরগুলো হচ্ছে যেকাকুল হাজার। এগুলোই রসুলেপাক (ﷺ)কে সালাম পেশ করতো। তার বিপরীত দিকে অপর একটি দেয়াল রয়েছে, যেখানে রসুলেপাক (ﷺ) এর কনুই মোবারকের দাগ রয়েছে। দেয়ালটি একটি পাথরেই তৈরী। উলামা কেরাম বলেন, আম্বিয়া কেরামের জন্য আল্লাহ্র কুদরতে লোহা এবং পাথর নরম করে দেয়া হয়েছিলো। মক্কা মুকাররমার ওই পাহাড় যেখানে রসুলেপাক (ﷺ) বকরী চরাতেন, সেখানে তাঁর কদম মোবারকের দাগ আছে। ওয়াল্লাহু আ’লাম।


মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়ার গ্রন্থকার আবু হাফস শিরাজী (رحمة الله) বলেছেন, আমি মক্কা মুকাররমার অলিতে গলিতে যতো লোকের সঙ্গে মিলিত হয়েছি, সকলেই মত প্রকাশ করেছেন, যে পাথর রসুলেপাক (ﷺ)কে সালাম পেশ করতো, সেগুলো ছিলো যেকাকুল হাজার। 


নবী করীম (ﷺ) যখন দোয়া করেছেন, তখন ঘরের সমস্ত দেয়াল ও খুঁটি দোয়ার সঙ্গে আমীন আমীন বলেছে। তিনি (ﷺ) হজরত আব্বাস (رضي الله عنه) ও তাঁর ফরজন্দগণের জন্য দোয়া করেছিলেন। এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন ইমাম বায়হাকী দালায়েল কিতাবে এবং ইবনে মাজা বর্ণনা করেছেন ‘মাহযার’ নামক কিতাবে। রসুলেপাক (ﷺ) হজরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে বললেন, আগামীকাল আমার আগমনের পূর্ব পর্যন্ত আপনি এবং আপনার সন্তানাদি কেউ যেনো ঘর থেকে বের না হন। আপনাদের সাথে আমার একটি বিশেষ কাজ আছে। আপনারা অবশ্যই অপেক্ষায় থাকবেন। রসুলেপাক (ﷺ) চাশতের সময় তাঁদের গৃহে উপস্থিত হয়ে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 


তিনি (ﷺ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, সকাল কেমন কাটলো? তাঁরা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ্! ভালোভাবেই কেটেছে। তিনি বললেন, আপনারা বসুন। রসুলেপাক (ﷺ) তাঁদের প্রতি তাওয়াজ্জুহ্ দিলেন এবং দোয়া করলেন, হে আমার রব! ইনি আমার চাচা, পিতৃতুল্য। হে আল্লাহ্! আপনি তাঁকে এবং তাঁর আহলে বাইতের সকলকে দোযখের আগুন থেকে এমনভাবে হেফাজত করুন, যেমন আমি তাদেরকে আমার চাদর দিয়ে আচ্ছাদিত করেছি। এরপর ঘরের সমস্ত দেয়াল ও খুঁটি সকলেই আমীন আমীন বলতে লাগলো। 


একদা হজরত আকীল ইবনে আবীতালেব কোনো এক সফরে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লেন। তখন রসুলেপাক (ﷺ) তাঁকে এক পাহাড়ে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, তোমরা পাহাড়কে বলো, পানি দাও। পাহাড় বললো, ‘ওই আগুনকে ভয় করো, যে আগুনের ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর।’ এই আয়াত যেদিন নাযিল হয়েছিলো, সেদিন থেকেই আমি আল্লাহ্র ভয়ে এতো বশেী কেঁদেছি যে, এখন আর আমার চোখে পানি নেই। 


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 





© | সেনানী এপ্স |

 
Top