রাসূল (ﷺ)'র মি'রাজ হলাে ২৭ই রজব বা ২৬ই রজব দিবাগত রাত । এ মতটিই সুপ্রসিদ্ধ ও অধিক গ্রহণযােগ্য।
আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী (রহ) বলেন,
كَانَ الْإِسْرَاء لَيْلَة السَّابِع وَالْعِشْرين من رَجَب -‘
“রাসূল (ﷺ)'র ইসরা ভ্রমণ বা মিরাজ ২৭ই রজব হয়েছিল। বিশ্বের মুসলিম সমাজের সর্বত্র এ মতই সমধিক সুপ্রসিদ্ধও সুপরিচিত। ১৮০
{ইমাম আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৪/৩৯পৃ,
দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন ।}
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আহলে হাদিসদেরও ইমাম এবং সকলের মান্যবড় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ) তার একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেন,
أَنَّ الْإِسْرَاءَ كَانَ لَيْلَةَ السَّابِعِ وَالْعِشْرِينَ مِنْ رَجَبٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
-“অবশ্যই মি'রাজ সংগঠিত হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ । মহান রব আল্লাহ তা'য়ালাই ভাল জানেন।” ১৮১
{ইমাম ইবনে কাসির, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১৩৫পৃ. দারু ইহইয়াউত-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২/৯৩,}
ইমাম কাস্তাল্লানী (রহ) উল্লেখ করেন,
كان ليلة السابع والعشرين من رجب
-“মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।” ১৮২
{ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৬২পৃ, দারু ইহইয়াউত-তুরাসুল আল্লবী, বয়রুত, লেবানন ।}
ইমাম জুরকানী (রহ) অনুরূপ মতামত পেশ করেছেন। ১৮৩
{ইমাম জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেরুল লাদুন্নিয়া, ২/৭১পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।}
তিনি আরও বলেন-
قال بعضهم: وهو الأقوى
“অনেক উলামাগণ বলেছেন যে, এটিই শক্তিশালী অভিমত।” ১৮৪
{ইমাম জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া,২/৭১. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।}
রাসূল (ﷺ) স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ তা'য়ালা কে স্বচক্ষে অবলােকন করেছেন :
এ বিষয়ে নিয়ে কিছু হাদিসে পাক ও ইমামদের বক্তব্য দেয়া হলাে-
  قَالَ: كَانَ الْحَسَنُ يَحْلِفُ بِاللَّهِ ثَلَاثَةً لَقَدْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ-‘
“ইমাম আব্দুর রাযযাক (রহ) তাঁর “তাফসীরে” হযরত হাসান বসরী (রা.) হতে বর্ণনা করেন,
তিনি কসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তা'য়ালাকে দেখেছেন।” ১৮৫
{ক. ইমাম আব্দুর রাযযাক, আত-তাফসির, ৩/২৫১, হাদিস ও ৩০৩৩,
খ. কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ
১/১১৫,
গ. মােল্লা আলী কারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃ.}
وَرَوَى شَرِيكٌ عَنْ أَبِي ذَرّ رَضِيَ اللَّه عَنْهُ فِي تَفْسِيرِ الآيَةِ قَالَ رَأَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم رَبَّهُ
-হযরত তাবেয়ি শারিক (রহ) হযরত আবু যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত (হৃদয় যা দেখেছে তা মিথ্যা নয়) প্রসঙ্গে যে, হুযুর (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করেছেন।” ১৮৬
{কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৬পৃ., মােল্লা আলী ক্বারী শরহে শিক্ষা : ১/৪২৬}
হযরত আবুল হাসান আশ'আরী (রহ) বলেন,
وَقَالَ أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ إِسْمَاعِيل الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّه عَنْهُ وَجَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ أنَّهُ رَأَى اللَّه تعالى ببصره وعيسى رَأسِهِ وَقَالَ كُلّ آيةٍ أُوتِيهَا نَبِيّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَقَدْ أُوتِي مِثْلَهَا نَبِيُّنا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخُصَّ مِنْ بَيْنِهِمْ بِتَفْضِيلِ الرُّؤْيَةِ-
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আলী আশআরী (রহ) ও তাঁর এক জামাত সঙ্গী-সাথী বলেন হুযুর (ﷺ) আল্লাহ তা'য়ালাকে কপালের (চর্ম) চক্ষু দ্বারাই অবলােকন করেছেন। তারা আরও বলেন, অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামকে যত মু'জিজা দেওয়া হয়েছে অনুরূপ মু'যিজা হুযুর (ﷺ) কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হুযুর (ﷺ) কে অগ্রবর্তী করে দিদারে এলাহী মুযিজা দেওয়া হয়েছে।” ১৮৭
{কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পূ, আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪ ২৯ পৃ.}
বুঝা গেল, কেউ যদি রাসূল (ﷺ)'র মি'রাজে আল্লাহ দেখার বিষয়টি অস্বীকার করে তাহলে সে নিঃসন্দেহে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত এবং পথভ্রষ্ট বাতিল ফিরকা হিসেবে গণ্য।
ইমাম কাযি আবুল ফজল আয়াজ (রহঃ) তিনি বলেন,
قَالَ الْقَاضِي أَبُو الْفَضْلِ وَفَّقَهُ اللَّهُ : والحق الذي لا امتراءالحق الذى لا امتراء فيه ان فِيهِ أَنَّ رُؤْيَتَهُ تَعَالَى فِي الدُّنْيَا جَائِزَةٌ عَقْلًا. وَلَيْسَ فِي الْعَقْلِ مَا يُحِيلُهَا-
“সত্য কথা হলাে আকলের দিক থেকে এ বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করার কোন অবকাশ নেই যে, দুনিয়াতে তিনি আল্লাহর দীদার লাভ করেছেন। আর আকলের দিক থেকে বিরূপ কোন প্রমাণও নেই যে, এরূপ হওয়া অসম্ভব।” ১৮৮
{কাজী আয়াজ । শিফা শরীফ : ১/১১৮ প আল্লামা মোল্লা অালী : কারী শরহে শিফা : ১/৪২৯ }
মােল্লা আলী ক্বারী (রহ) বলেন,
وقال الغزالي في الإحياء والصحيح أن رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم  رأى الله تعالى ليلة المعراج-
-“ইমাম গাযযালী (রহ) ইহইয়াউল উলুমুদ্দী’নে লিখেন, এ মতই সহীহ বা বিশুদ্ধ যে মি'রাজের রজনীতে রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন।” ১৮৯
{আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৩ পৃ,}
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
فَالْحَاصِلُ أَنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ إن رسول الله صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنَيْ رَأْسِهِ لَيْلَةَ الْإِسْرَاءِ لِحَدِيثِ بن عَبَّاسٍ وَغَيْرِهِ مِمَّا تَقَدَّمَ وَإِثْبَاتُ هَذَا لَا يَأْخُذُونَهُ إِلَّا بِالسَّمَاعِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-“অধিকাংশ ওলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নবী করীম (ﷺ) মি'রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তার চর্ম চক্ষু দ্বারাই দেখছেন। যেমনটি, ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে যারা (সাহাবীরা) রাসূল (ﷺ) হতে মি'রাজের সময় (মিরাজের ঘটনা) শ্রবণ করেছেন কেবল তাদের অভিমত ছাড়া বাকি অন্য অভিমত (যেমন মা আয়েশার অভিমত; কেননা তিনি তখন খুব ছােট ছিলেন) গ্রহণ করা হবে না।” ১৯০
{ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ৩/৫পৃ. দারু ইহইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬, মােল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিক্ষা : ১/৪২৫ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ }
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উনােচন"১ম খণ্ডের ১২৮-১৩৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন ।
 
Top