আজ ৩রা রমজান। বনী আদমের সর্দারের নন্দিনী, মুমিনদের মাওলা হিসেবে যিনি ঘোষিত হয়েছেন উনার সম্মানিতা স্ত্রী, জান্নাতী যুবকদের সর্দারদ্বয়ের সম্মানিতা জননী, জান্নাতী রমনীদের সর্দারনী মা ফাতিমা-তুজ- জাহরা রাঃ এঁর ওফাত দিবস। নবীজি ﷺ এঁর ওফাতের পর আহলে বাইতের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম ওফাতবরণ করবেন বলে প্রিয় নবী ﷺ বলে দিয়েছিলেন।

হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর স্ত্রীরা সবাই তাঁর নিকট ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ বাদ ছিলেন না। এমন সময় ফাতিমা (রাঃ) আসলেন। তাঁর চলার ভঙ্গি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর চলার ধরণ থেকে একটুও আলাদা ছিল না। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাকে দেখলেন তখন তিনি এ বলে খোশ-আমদেদ জানালেন, মারহাবা, হে আমার আদরের মেয়ে! তারপর তাকে তাঁর ডানদিকে অথবা বামদিকে বসালেন এবং তার সঙ্গে চুপিসারে কিছু বললেন। এতে তিনি খুব কান্নাকাটি করলেন। যখন তিনি তার অস্থিরতা দেখলেন, তিনি আবার তার সাথে চুপেচুপে কিছু বললেন, তখন তিনি হেসে দিলেন। (আয়িশা রাঃ বলেন) আমি তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সহধর্মিণীগণের উপস্থিতিতেই তোমার সাথে বিশেষভাবে কোন গোপন কথা বলেছেন। আবার তুমি কাঁদছ? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ উঠে গেলেন। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমার নিকট কি বলেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর গোপন কথা প্রচার করবো না।

আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর ওফাত হয় তখন আমি তার উপর আমার অধিকারের কসম দিয়ে বললাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমাকে কী বলেছেন, আমাকে অবশ্যই বলতে হবে। তিনি বললেন, আচ্ছা, এখন তবে হ্যাঁ। প্রথমবার তিনি আমাকে গোপনে বললেন, জিবরীল (আলায়হিস সালাম) প্রতি বছর একবার কি দু’বার আমাকে কুরআন পুনরাবৃত্তি করান। এ বছর তিনি দু’বার পুনরাবৃত্তি করালেন, আমার মনে হয় আমার (দুনিয়া থেকে পর্দা করার) সময় সন্নিকটে এসে গেছে। তুমি আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্যধারণ করো। কারণ, আমি তোমার জন্য কত উত্তম পূর্বসুরী। তখন আমি কাঁদলাম, যা আপনি দেখেছেন। তারপর আমার অস্থিরতা দেখে তিনি দ্বিতীয়বার চুপিসারে বললেন, হে ফাতিমা! মু’মিন রমণীদের প্রধান ও এ উম্মতের সকল মহিলাদের নেত্রী হওয়া কি তুমি অপছন্দ করো? ফাতিমা (রাঃ) বললেন, তখন আমি হাসলাম, আমার যে হাসি আপনি তা প্রত্যক্ষ করেছেন। (সহীহ মুসলিম ৬২০৭)

বুখারী শরীফের বর্ণনায় রয়েছে,

প্রিয় নবী ﷺ যখন ফাতিমাহ রাঃ কে ওনার ওফাত হওয়ার বিষয়ে অবগত করেন তখন ফাতিমাহ রাঃ কেঁদে ফেলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ চুপেচুপে বলেন, ফাতিমাহ রাঃ ই উনার পরিবারবর্গের মধ্যে সর্বপ্রথম উনার সঙ্গে মিলিত হব, তখন ফাতিমাহ রাঃ (খুশিতে) হাসতে শুরু করলেন। (সহীহ বুখারী ৩৭১৬)

উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি আকৃতি প্রকৃতি, স্বভাব-চরিত্র ও কাঠামো-অবয়বে, কথা-বার্তায় ফাতিমা (রাঃ) এঁর চেয়ে আর কাউকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর সাথে অধিক মিল দেখিনি। যখন তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর কাছে যেতেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়ে তার হাতে চুমু দিতেন এবং নিজ স্থানে বসাতেন। একইভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ফাতিমা (রাঃ)’র ঘরে তাশরীফ নিয়ে আসতেন তখন তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর হাত মুবারকে চুম্বন করে নিজের জায়গায় বসাতেন। (সুনান আবূ দাউদ ৫২১৭, ইমাম বুখারীঃ আল আদাবুল মুফরাদ ৯৮৩, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৬৮৯)

সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া বারিক ওয়া সাল্লাম।

কবি নজরুলের ভাষায়,

পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া।
যাও রে বইয়া এই গরীবের সালামখানি লইয়া।।

কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই,
সারা জনম সাধ ছিল যে, মদিনাতে যাই (রে ভাই)।
মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।।

তোমার পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি,
লইয়া যাওরে এই নিরাশের দীর্ঘ নিশ্বাসখানি।
নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।।

মা ফাতেমা হযরত আলীর মাজার যেথায় আছে,
আমার সালাম দিয়া আইস তাঁদের পায়ের কাছে।
কাবায় মোনাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।
 
Top