ফিকহা ও এজতেহাদের অঙ্গনে এ চার ইমামের মত আরো অনেক ইমামের জন্ম হয়েছিল, তারা সকলে ও এজতেহাদ করেছিলেন যেমন ইমাম আওযায়ী, সুফিয়ান সওরী, ইমাম রাহওয়াই, আবদুল্লাহ ইবন মোবারক, ইবনে আবি লায়লা, ইমাম বোখারী প্রমুখ – অনিবায্য কারন বশত অন্য ইমামদের তাকলীদ সম্ভব নয়, কারন এ চার ইমামদয়ের এজতেহাদী মাসালা সমূহ সূবিন্যস্থ পুস্তুক / গ্রন্থবদ্ধ সংরক্ষিত আকারে আমাদের কাছে যে ভাবে পৌঁছেছে তা অন্যদের বেলায় ঘটেনি, তাছাড়া সারা পৃথিবীতে এ চার মাযহাবের অসংখ্য মহাবিজ্ঞ, আলেম মুফতি মোহাদ্দেসীন রয়েছেন যা অন্য মাযহাবের বেলায় নেই, সুতরাং অনিবার্য কারন বশত এ চার মাযহাবই  মানা জরুরী ৷

আর কুরআনে কারীম ৭টি কিরাতে নাজীল হয়েছে। কিন্তু একটি কিরাতে প্রচলন করেছেন হযরত উসমান (রাঃ)। যেটা ছিল আবু আসেম কুফী (রহঃ) এর কিরাত। এর কারণ ছিল বিশৃংখলা রোধ করা। যেন দ্বীনকে কেউ ছেলেখেলা বানিয়ে না ফেলে। আর সবার জন্য এটা সহজলভ্য হয়। তেমনি একটি মাযহাবকে আবশ্যক বলা হয় এই জন্য যে, একাধিক মাযহাব অনুসরণের অনুমোদন থাকলে সবাই নিজের রিপু পূজারী হয়ে যেত। যেই বিধান যখন ইচ্ছে পালন করত, যেই বিধান যখন ইচেছ ছেড়ে দিত। এর মাধ্যমে মূলত দ্বীন পালন হতনা, বরং নিজের প্রবৃত্তির পূজা হত।

তাই ৪র্থ শতাব্দীর উলামায়ে কিরাম একটি মাযহাবের অনুসরণকে বাধ্যতামূলক বলে এই প্রবৃত্তি পূজার পথকে বন্ধ করে দিয়েছেন। যা সেই কালের ওলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত সীদ্ধান্ত ছিল। আর একবার উম্মতের মাঝে ইজমা হয়ে গেলে তা পরবর্তীদের মানা আবশ্যক হয়ে যায়। ইমাম ইবনে তাইমিয়াও লাগামহীনভাবে যে মাযহাব মনে চায় সেটাকে মানা সুষ্পষ্ট হারাম ও অবৈধ ঘোষণা করেন। (ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া- ২/২৪১)

আর এ মাযহাব মানা না মানাকে কেন্দ্র করে বেদআত, শীরক্‌ কুফর, ইত্যাদি অকথ্য ভাষায় লাগামহীন ভাবে একে অপরকে আক্রমন করা একে বারেই অনূচীত ও নিন্দনীয়, এটা মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টিরই নামান্তর৷ অথচ ইমাম চথুষ্টদয়ের জীবদশায় এমন কিছুই ঘটেনি তাঁরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করছেন ৷ বস্তুত তাদের সকল মত পাথক্য ছিল তাত্ত্বিক পর্যায়ের , ব্যক্তি পর্যায়ের নয় ৷ প্রত্যেক ইমাম অপরের ইলম ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে কেমন শ্রদ্বাশীল ছিলেন এবং তাদের মাঝে কি অপূব সৌহাদ্যমূলক আচরন ছিল তা দেখলে বা অধ্যয়ন করলে, আজ তা ভাবতেও অভাক লাগে ৷ আর ইমাম মুজতাহিদদের ইজতিহাত গত যে মত পাথর্ক্য ছিল উত্তম ও অধিক উত্তম বিষয়ক৷ জায়েয- না জায়েয বা হালাল –হারাম বিষয়ক নয় ৷

যেমন - রুকুর সময় হাত তোলা বা না তোলা, বুকের উপর হাত বেঁধে দাঁডাবে নাকি নাভী বরাবর৷ আমিন জোরে বলবে না আস্তে মুক্তাদি সুরায়ে ফাতেহা পড়বে কি পড়বেনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উভয় অবস্থার বৈধতা সম্পর্কে কোন ইমামের দ্বিমত নেই, মত পাথক্য শুধু মাত্র এ দুয়ের মধ্যে কোনটি উত্তম? সুতরাং ইমামগনের এ সাধারন মত পাথর্ক্যকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এবং মুসলিম  উম্মার মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করা, কাদা ছোড়াছুডি করা, একে অপরকে কাফের মুশরীক বেদআতী বলে গালী গালাজ করা কোন ক্রমেই অনুমোদন যোগ্য নয় ৷

• ইমাম ও খতিবে কাবা শেখ শোরাইমের অভিমতঃ

ইমাম হারামে মক্কী  মুহতারম শেখ শোরাইম মাঃ জিঃ কে  জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন চার মাযহাব মানা কি বেদআত? তখন তিনি এর জবাবে পবিত্র খানায়ে কাবার সামনে দাঁডিয়ে  জুমার খোৎবাতে বলেছিলেন যে চার মাযহাব মানা বেদআত নয় , বরং সুযোগ সন্ধানী হয়ে মনের ইচ্ছা মাফিক এক এক সময় এক এক মাযহাবের অনুসরন করবে তা হবেনা, বরং যে যে মাযহাবকে অনুসরন করছে তাকে সেই মাযহাবই অনুসরন করতেই হবে, নাহয় মন বা রীপু পুজারী হয়ে দ্বীন কে ছেলে খেলা বানিয়ে ফেলবে ৷ কতইনা সুন্দর উক্তি তিনি করেছেন।

 
Top