গাছপালা, পাথর, বিভিন্ন জীবজন্তু কর্তৃক রাসুলুল্লাহ ﷺ এঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন (নবুয়্যতের নিদর্শন)
------
হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমি মক্কায় একটি পাথরকে জানি, যেটি (নবীরূপে) প্রেরিত হওয়ার আগেও (নবুয়্যত প্রকাশের পূর্বেও) আমাকে সালাম করত; আমি এখনও তাকে নিশ্চিতভাবে চিনতে পারি।

(সহীহ মুসলিম ৫৮৩৩, সুনান আত তিরমিজি ৩৬২৪)




হযরত আলী রাঃ বলেন, আমরা নবী ﷺ এঁর সাথে মক্কায় ছিলাম। একদা তাঁর সাথে মক্কার পার্শ্ববর্তী কোন এক অঞ্চলের দিকে বের হয়েছিলাম। তখন আমরা পাহাড় ও গাছপালার মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাম। আমরা যে গাছ কিংবা যে পাহাড়কেই অতিক্রম করতাম, সে গাছই কিংবা পাহাড়ই বলে উঠত: আসসালামু আলাইকা, ইয়া রাসূলাল্লাহ।

(সুনান আত তিরমিযী ৩৬২৬, সুনান আদ-দারেমী ২১
ইমাম তাবারানীঃ মুজামুল আওসাত ৬/২০৬ হা/ ৫৪২৮, ইমাম বাইহাকীঃ দালাইলুন নব্যুয়ত ২/১৫৩-১৫৪)

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ বলেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর সাথে হাঁটতে হাঁটতে বনী নাজ্জারের এলাকায় একটি বাগানের নিকট পৌঁছলাম। তখন সেই বাগানে একটি উট ছিল। যে ব্যক্তিই সেই বাগানে প্রবেশ করত, তার উপরই সেটি চড়াও হত। নবী ﷺ কে লোকেরা এ কথা জানালো। তিনি সেখানে গেলেন এবং উটটিকে ডাকলেন। উটটি নিচু হয়ে ঠোঁট মাটির উপর লাগিয়ে তাঁর সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তখন তিনি বললেন: ‘তোমরা এর লাগাম আনো।’ তারপর তিনি একে লাগাম পরালেন এবং তার মালিককে ফিরিয়ে দিলেন। পরে আমাদেরকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন: “আসমান হতে জমিন পর্যন্ত যা কিছু আছে, সকলেই জানে যে, আমি আল্লাহর রাসূল। কেবলমাত্র জ্বিন ও মানুষের মধ্য থেকে অবাধ্যরা ব্যতীত।

(মুসনাদে আহমাদ ৩/৩১০; ইবনে আবী শাইবা হা/নং ১১১৬৮, সুনান আদ-দারেমী ১৮)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এঁর নিকট এক বেদুঈন এসে বলল, আমি কিভাবে অবগত হব যে, আপনি নবী? তিনি বললেনঃ ঐ খেজুর গাছের একটি কাদিকে আমি ডাকলে (তা যদি নেমে আসে) তাহলে তুমি কি সাক্ষ্য দিবে যে, আমি আল্লাহ তা'আলার রাসূল? রাসূলুল্লাহ ﷺ উহাকে ডাকলেন, সে সময় কাদি খেজুর গাছ থেকে নেমে নাবী ﷺ এঁর সম্মুখে এসে গেল। তারপর তিনি বললেনঃ এবার প্রত্যাবর্তন কর এবং তা স্বস্থানে ফিরে গেল। সে সময় বেদুঈনটি ইসলাম গ্রহণ করলো।

(সূনান আত তিরমিজী ৩৬২৮)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর সাথে কোন এক সফরে ছিলাম। তখন একজন বেদুইন এসে উপস্থিত হল। যখন সে তাঁর নিকটবর্তী হল, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন: ‘তুমি কোথায় যেতে চাচ্ছ? সে বলল, আমার পরিবারের নিকট যেতে চাচ্ছি। তিনি তাকে বললেন: তোমার কি কল্যাণের কোন প্রয়োজন আছে? সে বলল, তা (সে কল্যাণ) আবার কি? তিনি বললেন: ‘তুমি এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। সে জিজ্ঞেস করল, আপনার এ কথার সত্যায়ন করবে কে? তিনি বললেন: এই বাবলাগাছ সাক্ষ্য দেবে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ উপত্যকার কিনারায় অবস্থিত বাবলা গাছটিকে ডাকলেন এবং সে মাটিতে দাগ কাটতে কাটতে এসে তাঁর সামনে দাঁড়াল। আর তিনি সেই গাছের নিকট তিনবার এর সাক্ষ্য চাইলেন, আর সেটি তিনবারই সেভাবে সাক্ষ্য দিল যেভাবে তিনি বলেছিলেন। তারপর সেই গাছটি আপন স্থানে ফিরে গেল। তখন বেদুইন লোকটিও তার গোত্রের নিকট ফিরে গেল। আর বলে গেল, যদি আমার সম্প্রদায় আমার অনুসরণ করে, তবে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমি আপনার কাছে উপস্থিত হবে, নাহলে আমি একাই ফিরে আসব এবং আপনার নিকট অবস্থান করব।”

(সুনান আদ-দারেমী ১৬, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২৯২, আবী ইয়ালাঃ আল মুসনাদ ৫৬৬৪; সহীহ ইবনে হিব্বান ২১১০)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, বনী আমির হতে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নিকট এলে তিনি লোকটিকে বললেন: ‘আমি কি তোমাকে কোন নিদর্শন দেখাব না?’ লোকটি বলল, অবশ্যই দেখাবেন। তখন তিনি বললেন: ‘যাও, ঐ খেজুর গাছটিকে ডেকে নিয়ে এসো।’ তখন সে গাছটিকে ডাকলো এবং গাছটি লাফিয়ে তার সামনে চলে এলো। লোকটি তাঁকে বললো, আপনি একে ফিরে যেতে বলুন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এটিকে বললেন: ‘ফিরে যাও।’ তখন সেটি ফিরে তার আপন স্থানে চলে গেল। এই ঘটনা দেখার পর সেই লোকটি তার সম্প্রদায় বনী আমিরকে উদ্দেশ্যে করে বললো, হে বনী আমির, আজকের মতো এই লোকটির চেয়ে বড় যাদুকর আমি আর কাউকে দেখিনি।

(মুসতাদরেক হাকিম ২/৬২০; মুসনাদে আহমাদ ১/২২৩; সুনান আদ-দারেমী ২৪, মুজামুল কাবীর ১২/১১০, হা/নং ১২৬২২)

গাছপালা, পাথর, বিভিন্ন জীবজন্তু কর্তৃক রাসুলুল্লাহ ﷺ এঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতেই হয়েছে। যেহেতু নবী করীম ﷺ আল্লাহ'র-ই প্রেরিত রাসূল তাই এগুলো তাঁর প্রতিও অনুগত হয়েছে এবং আল্লাহ তায়ালার হুকুমে তাঁকে সম্মান করেছে। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিবকেও সম্মানিত করেছেন এবং চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন। যেমনটি তাঁর হাবিবের আঙুলের ইশারায় চাঁদকেও দ্বিখণ্ডিত করিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

"তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহ্‌র সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহ্‌র প্রতি সিজদাবনত হয়? আল্লাহ্‌কে সিজ্‌দা (আনুগত্য প্রকাশ) করে যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও যমীনে, যত জীবজন্তু আছে সেসব এবং ফিরিশ্‌তাগণও, তারা অহংকার করে না। নিজেদের উপর আপন রবের ভয় রাখে এবং তা-ই করে, যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। [সূরা নাহলঃ ৪৮-৫০]

"এরা কি আল্লাহর দ্বীন ছাড়া অন্য দ্বীনের সন্ধান করছে? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা তাঁরই আনুগত্য করে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এবং তাদেরকে তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করা হবে।" [সূরা আলে ইমরান ৮৩]
 
Top