আল্লাহ   তায়ালা  যাকে   নবী  বা  রাসূল  হিসেবে    প্রেরণ  করবেন    তাঁকে    শুরু    থেকেই    ঈমানের    উপর    পয়দা  করেন। ওহিপ্রাপ্তির  পূর্বেও  নবীগণ  পাকাপোক্ত  মুমিন  হয়ে থাকেন।

তাফসিরে রুহুল মায়ানীতে উল্লেখিত আছে-

لان  الانبياء  عليهم السلام جميعا قبل البعثة  مؤمنون لعصمتهم عن الكفر باجماع-
অর্থ:  সমস্ত   নবীগণ   আলাইহিমুস  সালাম   ওহি  আসার পূর্বে  মুমিন   ছিলেন।  কুফুরি    ও   শিরক   থেকে   সম্পূর্ণ  পুতঃপবিত্র     ছিলেন।     এ     ব্যাপারে     সমস্ত     উলামায়ে  কেরামদের ইজমা বা ঐকমত্য হয়েছে। (রুহুল মায়ানী- সূরা শুরা)

অথচ   এ   ব্যাপারে       হামিদী   সাহেব   মন্তব্য   করেছেন   আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাকি  জানাই  ছিল  না  ঈমান  কি  জিনিস  এবং  ধর্ম  কি  জিনিস।

তার দুর্গন্ধময় উক্তিটি তারই ভাষায় ল্য করুন-

‘রাসূল  ﷺ   জন্ম  থেকে   ৪০    বৎসর   পর্যন্ত   এই   দীর্ঘ  সময়ের মধ্যে তিনি রেসালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত  হননি  এই সময়ে তিনি নিজেই জানতেন না ঈমান কাহাকে বলে? এবং কোরআন কি? ধর্ম কি’ নাউজুবিল্লাহ।

এমন উদ্ধত্বপূর্ণ,  ঈমান  বিধ্বংসী, বেআদবিমূলক কথা  কোন  মুসলমানদের   মুখে   শোভা  পায়  না।   ইহা  তার  ধর্মীয় জ্ঞান সম্বন্ধে অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ।

বাংলা   ভাষায়   সামান্যতম   জ্ঞানও     যার   কাছে     আছে তিনিও বুঝবেন এ বক্তব্য দ্বারা হামিদী সাহেব নবীজীর শানে      কতটুকু      আঘাত    করেছেন।     বাংলা    ব্যাকরণ অনুযায়ী    ‘নিজেই   জানেন     না’  বাক্যটি  যখন  ব্যবহার করা হয়, তখন যে ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে তাকে  এ ব্যাপারে  সর্ব নিুস্তরের  অজ্ঞ  ধারণা করা হয়।

উদাহরণ  স্বরূপ  বলা   যায়,  যেমন   এক  ব্যক্তি   জীবনে কোন   দিন    স্কুলে    যায়নি।   তথাপি    তিনি    যদি    কোন স্কুলের অংকের  শিক নিযুক্ত হন  তাহলে-  তার    সম্বন্ধে  বলা হবে উনি  কিভাবে  অঙ্ক পড়াবেন? তিনি   নিজেই  জানেন না অঙ্ক কি জিনিস।

ঠিক    তেমনিভাবে    হামিদী    সাহেব    উদাহরণটি    পেশ  করেছেন যে,  মুহাম্মদ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়াসাল্লাম  ৪০   বছর    পর্যন্ত   নিজেই   জানতেন   না    ঈমান    কাকে  বলে? কোরআন কি?  এবং ধর্ম কি? তাহলে এ সময়ে  তিনি     কিভাবে    আমাদের     জন্য      অনুকরণীয়     আদর্শ হবেন?

তাইতো তিনি বারংবার লিখেছেন ‘নবুয়তপ্রাপ্তির পূর্বের এই  ৪০ বৎসর  পর্যন্ত  তিনি উম্মতের  জন্য অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন না।

এ ব্যাপারে তিনি একটি  আয়াতের  অংশবিশেষ উল্লেখ করেছেন এভাবে-

‘আল্লাহপাক   বলেন-   মা   কুনতা   তাদরী   মাল   কিতাবু  ওয়ালাল    ঈমান’  অর্থাৎ   আপনি   নিজেই  জানতেন  না  কিতাব কি? ঈমান কাকে বলে? (সূরা শুয়ারা)’

এখানে তিনি প্রথমে যে ভুলটি করেছেন তা হচ্ছে সূরার নাম  সম্বন্ধে।   তিনি লিখেছেন সূরা  শূয়ারা।  অথচ  এই  আয়াতটি হলো সূরা  শুরা। সূরা  শুয়ারা হলো উনিশতম পারায়। আর সূরা শুরা হলো চব্বিশতম পারায়। হয়তো তিনি নিজেই জানেন না যে, কোরআন শরীফে এ রকম দুটি সূরা রয়েছে।

দ্বিতীয়ত তিনি উল্লেখিত আয়াতের যে অনুবাদ করেছেন তা মারাত্মক ভুল। কারণ- ‘আপনি নিজেই জানতেন না’ এ কথাটি আল্লাহ তায়ালা বলেননি।   এমন কি  এখানে  কোন প্রকার প্রশ্নবোধক শব্দও ব্যবহার হয় নাই। অথচ তিনি   মনগড়াভাবে    অনুবাদ    করেছেন      নিজের   হীন উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করার জন্য।

এবার আয়াতটির প্রকৃত অনুবাদ লক্ষ্য করুন-

وكذالك   اوحينا   اليك   روحا   من   امرنا-   ما   كنت   تدرى  مالكتاب ولا الايمان-
অর্থ:  এমনিভাবে   আমি আপন  নির্দেশে  আপনার প্রতি রূহ তথা কোরআন অবতীর্ণ করেছি। ইতোপূর্বে আপনি না কিতাব সম্পর্কে বিস্তারিত  জানতেন   না   ঈমান তথা  শরিয়তের      বিধানাবলীর      বিস্তারিত      বিবরণ।      (সূরা  শুরা-৫২)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে রূহুল মায়ানীতে বর্ণিত হয়েছে-

واستشكلت   الاية   بان  ظاهرها   يستدعى    عدم   الاتصاف بالايمان  قبل   الوحى   ولايصح  ذالك   لان  الانبياء   عليهم   السلام جميعا قبل البعثة مؤمنون لعصمتهم عن الكفر باجماع-

অর্থ: উক্ত আয়াতের বাহ্যিক   অর্থ দ্বারা  বুঝা যায় হুজুর সাল্লাল্লাহু     আলাইহি     ওয়াসাল্লাম    ওহি    আসার     পূর্বে  ঈমানের  গুণে   গুণান্বিত ছিলেন  না। অথচ ইহা অমূলক ও ভ্রান্তি ধারণা। করণ সমস্ত নবীগণ আলাইহিস সালাম ওহি   আসার  পূর্বেও  মুমিন  ছিলেন।    কুফুরি   ও  শিরক থেকে সম্পূর্ণ পুতঃপবিত্র ছিলেন।  এর   উপর উলামায়ে কেরামদের    ইজমা    বা    ঐকমত্য    প্রতিষ্ঠিত    হয়েছে।  (তাফসিরাতে আসরারুল কোরআন)

তাফসিরে রূহুল মায়ানীতে আরো উল্লেখিত হয়েছে-

الايمان  بالمعنى  الاخر  اعنى  التصديق-  وهو  الذى  اجمع  العلماء    على   اتصاف   الانبياء     عليهم    السلام    به    قبل البعثة- لذا   عبر بتدرى  دون ان  يقال   لم  تكن مؤمنا-  وهو جواب حسن ولا يلزمه-

আয়াতে কারীমায় বর্ণিত ঈমান দ্বারা তাছদীক (আল্লাহর জাত  ও   সিফত   সম্পর্কে  অন্তরে    বিশ্বাস   করা)  মুরাদ  নেয়া  হয়েছে। এমতাবস্থায়  সকল উলামায়ে  কেরামের  ইজমা     হয়েছে   যে    সমস্ত   আম্বিয়ায়ে   কেরামগণ    ওহি আসার পূর্বেই ঈমানের গুণে গুণান্বিত ছিলেন।

এ    জন্য   উক্ত   আয়াতে    ‘তাদরী’    শব্দ    ব্যবহার     করা হয়েছে। যার অর্থ হল বুদ্ধিখাটিয়ে অনুমান বা অনুধাবন করা। কিন্তু لم تكن مؤمنا (ঈমানদার ছিলেন না)  বলে অবিহিত  করা হয়  নাই।   ইহা অত্যন্ত চমৎকার জবাব। (তাফসিরাতে আসরারুল কোরআন)

আল্লামা কাজী  সানা উল্লাহ পানিপথী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাফসিরে      মাজহারি     নামক     গ্রন্থে       উক্ত     আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-

والايمان  فقال  محمد    بن    اسحاق  المراد  بالايمان  فى    هذه المقام   الصلوة  كما  فى  قوله   تعالى-  ما  كان  الله   ليضيع  ايمانكم-  وهذا  التفسير مبنى على   ان اصل العلم  اتفقوا على  ان   الانبياء  عليهم  السلام-  كانوا  ملهمين   من  الله تعالى بالايمان بالصانع المتوحد بصفات الكمال-

অর্থ:  প্রখ্যাত  মুফাসসির  মুহাম্মদ  ইবনে  ইসহাক  উক্ত  আয়াতে    ‘ঈমান’   দ্বারা    ‘সালাত’    তথা    নামায    মুরাদ  নিয়েছেন।   যেমন  অন্য  আয়াতে  ইরশাদ  হচ্ছে   ماكان  الله ليضيع ايمانكم (আল্লাহ তায়ালা তাদের ঈমান তথা নামাজকে বিনষ্ট করবেন না।

এ   তাফসিরটি   ঐ   মূলনীতির   উপর   ভিত্তি   করে   করা  হয়েছে     যে,     সমস্ত     আহলে     ইলম     তথা      উলামায়ে  কেরামগণ এ  ব্যাপারে ঐকমত্য  পোষণ   করেছেন  যে, সকল  নবীগণ  আলাইহিমুস  সালাম  ওহি  আসার  পূর্বে  খোদাপ্রদত্ত  ইলহাম  দ্বারা   ঈমান   ও  তাওহিদ   সম্পর্কে পূর্ণ       অবহিত       ছিলেন।        (তাফসিরাতে       আসরারুল  কোরআন)

অতএব    ‘আল্লাহর    নবী    ওহিপ্রাপ্তির    পূর্বে    ঈমানদার  ছিলেন না’  এ আক্বিদা  পোষণ করা  কুফুরি। এর  উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ভিজিট করুন এই সাইটটিও- ইসলামী জীবন
 
Top