بسم الله الرحمن الرحيم

সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার যিনি রমযানকে শ্রেষ্ঠ মাস বানিয়েছেন এবং সে সময় ভাল কাজের প্রতিদান বাড়িয়ে দিয়েছেন। দুরূদ ও সালাম প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোসÍফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যাঁর ওসীলায় আমরা এ বরকতময় মাসটি পেয়েছি।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও কিছু দিন পরই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসছে মাহে রমযান। মুমিনের আত্মাকে আল্লাহ তাআলা ধুয়ে-মুছে পাক-সাফ করে তার রঙে রঙিন করে তুলবেন। আর যারা খোদাপ্রেমিক তাদেরও অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। তাঁরা শুধুই ভাবছেন, কোন দিন থেকে শুরু হবে রমযান এবং কিভাবে তাঁরা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র করে গড়ে তুলবেনমপ এ মাসে। তাঁদের আখলাককে উন্নততর, মহত্তর, পবিত্রতর করে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ সাধন করবেন। পরম করুণাময়ের সন্তুষ্টির জন্য গরিবের প্রতি সহমর্মী, ধৈর্যশীল ও সহনশীল হবেন। চারিত্রিক গুণাবলি আরো শাণিত করবেন। সিয়াম সাধনার কঠোর সংযমের সিঁড়ি বেয়ে পরহেজগারির শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করবেন। 
এটা মহিমান্বিত মাস, যাতে আল্লাহ পাক রোযা ফরয করেছেন।নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

 عن أبي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : (( إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتْ الشَّيَاطِينُ) . رواه البخاري في الصوم باب هل يقال رمضان (১৭৬৬) ، والنسائي في الصيام (২০৭৯) و (২০৮১( 

“এ মাসে বেহেশ্তের দরজাগুলো খোলা থাকে আর দোজখের দরজাগুলো বন্ধ থাকে এবং শয়তান কে শিকল পরিয়ে রাখা হয়।” (বুখারী-১৭৬৬, নাসায়ী-২০৭৯, ২০৮১) 
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন,

فعن أنس بن مالكٍ، قال: دخل رمضان، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “إِنَّ هَذَا الشَّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ، وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الخَيْرَ كُلَّهُ، وَلَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلَّا مَحْرُومٌ”(ابن ماجه: كتاب الصيام، باب ما جاء في فضل شهر رمضان (১৬৪৪)، انظر: مصباح الزجاجة في زوائد ابن ماجه (২/৬২).

“এখানে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ট রাত রয়েছে। যে ব্যক্তি এর মহিমা কে অস্বীকার করল, মুলত সে বঞ্চিত!” (ইবনু মাযাহ-১৬৪৪)

 

জীবনের যে কোন বিষয়ে সফলতা আনতে চাইলে, অথবা কোন বিষয়ে লক্ষ্য নির্ধারন করলে, তার প্রথম ধাপ হচ্ছে নিজের মন মানসিকতাকে স্থির করা ও গোছানো এবং এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করা। মাহে রমযান আগমনের দুই মাস আগে থেকেই রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজবের শুরুতেই নিজে এবং সাহাবায়ে কিরামকে এই দোয়া করার জন্য বলতেন- 

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ(روى عبد الله بن الإمام أحمد في “زوائد المسند” (২৩৪৬) والطبراني في “الأوسط” (৩৯৩৯) والبيهقي في “الشعب” (৩৫৩৪) وأبو نعيم في “الحلية” (৬/২৬৯)। )

“আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান” (হে আল্লাহ! রজব এবং শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় কর এবং আমাদের রমযানের পুণ্যময় মাস অর্জনের সৌভাগ্য দান কর) (ত্ববরানী-৩৯৩৯, বায়হাক্বী-৩৫৩৪, আবু নাঈম: হিলয়া- ৬/২৬৯)

 

রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ঘোষণার প্রেক্ষিতেই বিশ্বের মুসলমানরা রমযান আসার আগে থেকেই এর জন্য প্রতি বছর প্রস্তুতি শুরু করে দেন। সাহাবায়ে কেরামের পর তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, মুহাদ্দিসীন, আইম্মায়ে মুজাতাহিদীনসহ সর্বস্তরের মুসলমানগন নিজ নিজ পরিসরে রমযানের প্রস্তুতি নিয়ে সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
মাহে রমযান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামদের মোবারকবাদ পেশ করতেন। 
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের এই মর্মে সুসংবাদ প্রদান করেছেন যে, 

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : ” أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ , تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ , وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ , وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ , لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ,مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ “)رواه النسائي ( ২১০৬ ) وأحمد (৮৭৬৯) صحيح الترغيب ( ৯৯৯( .

“তোমাদের সামনে রমযানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোযা ফরয করেছেন।’ (নাসায়ী-২১০৬. আহমদ-৮৭৬৯) 
অন্য এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

رجب شهر الله وشعبان شهري ورمضان شهر أمت} السيوطي في الجامع الصغير لأبي الفتح بن أبي الفوارس. رواه الدَّيلمي عن عائشةَ رضي الله عنها، جامع المسانيد والمراسيل(

“রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমযান আমার উম্মতের মাস” (সুয়ূতী: জামে আস সগীর)। 
তাই বলা হয়, ‘রজব মাসে শস্য বপন করা হয়, শাবান মাসে খেতে পানি সিঞ্চন করা হয় এবং রমযান মাসে ফসল কর্তন করা হয়।’ সুতরাং এ শ্রেষ্ঠতম মাসে নামায- রোযা পালন তথা আল্লাহর ইবাদত- বন্দেগি করে কাঙ্খিত লক্ষ্যপানে ধাবিত হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ্য করে মাহে রমযানের রোযার ফযিলত সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে এরশাদ করেন, 

فَقَالَ : ” أَيُّهَا النَّاسُ ، إِنَّهُ  قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ ، فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ جَعَلَ اللَّهُ صِيَامَهُ فَرِيضَةً ، وَقِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا ، مَنْ تَقَرَّبَ فِيهِ بِخَصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى  فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ ، وَمَنْ أَدَّى فِيهِ فَرِيضَةً كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ ، وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ ، وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ

‘হে মানবগণ! তোমাদের প্রতি একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এই মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে, যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। যে ব্যক্তি এই মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরয আদায় করার মতো কাজ করল। আর এই মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরয আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরয আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ (বায়হাক্বী-৩৯, ইবনু খোযাইমা-১৮৮৭))
প্রকৃতপক্ষে পবিত্র মাহে রমযান মুসলমানদের জন্য একটি বার্ষিক প্রশিক্ষণ কোর্স, যার মাধ্যমে রোযাদারদের জীবন প্রভাবিত হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

 إِذَا سَلِمَ رَمَضَانٌ سَلِمَتِ السَّنَةُ)  الحلية (৭/১৪০(

“যে ব্যক্তি পবিত্র রমযান মাস ভালোভাবে যাপন করবে, তার সমগ্র বৎসর ভালোভাবে যাপিত হবে।”(হিলয়া-৭/১৪০)। 
তিনি আরও বলেন, 

 لو يعلم العباد مافي رمضان لتمنت أمتي أن يكون رمضان السنة كلها)تنزيه الشريعة للكناني ২ / ১৫৩و كتاب مجمع الزوائد للهيثمي ৩ /১৪১و كتاب الفوائد المجموعة في الأحاديث الموضوعة للشوكاني ১ / ২৫৪ (

“আমার উম্মত যদি মাহে রমযানের গুরুত্ব বুঝত, তাহলে সারা বছর রমযান কামনা করত।”(মাজমাইয যাওয়ায়েদ-৩/১৪১, আল পাওয়ায়েদ: শাওকানী-১/২৫৪)
‘রামাদান’ শব্দটি আরবি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রমযান মাসে সিয়াম সাধনা তথা রোযাব্রত পালনের মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম ও কৃচ্ছ্রপূর্ণ জীবন যাপন করে এবং রিপুকে দমন করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। 
মাহে রমযান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রমাদান’। ইসলামের অনুসারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার বিরাট নিয়ামত রমযান মাস। এর প্রস্তুতি গ্রহণ করা না হলে মাহে রমযানের কোনো মূল্য বা মর্যাদা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় না।
তাই মাহে রমযানে রোযার প্রস্তুতির জন্য সহিহ-শুদ্ধভাবে আবশ্যকীয় বিধি-বিধান শরিয়তের মাসআলা অনুযায়ী রোযাদারদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা খুবই দরকার। এ ছাড়া আসন্ন মাহে রমযানের পবিত্রতা রক্ষার্থে ইবাদত- বন্দেগি তথা সাহরী, ইফতার, তারাবিহ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, ই’তিকাফ, তাহাজ্জুদ, জিকর-আযকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-ইস্তেগফার, দরূদ শরীফ, যাকাত-ফিতরা, দান- সাদ্কা প্রভৃতি সৃষ্টিকর্তার হক আদায়ের সামগ্রিক পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া উচিত। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা শুরু হওয়ার আগে তার সাহাবীদেরকে কিভাবে সচেতন করতেন নিম্নের হাদীস হতে আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি। 

عَنْ سَلْمَانَ  رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي آخِرِ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ ، فَقَالَ : ” أَيُّهَا النَّاسُ ، إِنَّهُ  قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ ، فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ جَعَلَ اللَّهُ صِيَامَهُ فَرِيضَةً ، وَقِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا ، مَنْ تَقَرَّبَ فِيهِ بِخَصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى  فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ ، وَمَنْ أَدَّى فِيهِ فَرِيضَةً كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ ، وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ ، وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ ، وَشَهْرُ الْمُوَاسَاةِ ، وَشَهْرٌ يُزَادُ فِي رِزْقِ الْمُؤْمِنِ فِيهِ ، مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا كَانَ لَهُ مَغْفِرَةً لِذُنُوبِهِ وَعِتْقَ رَقَبَتِهِ مِنَ النَّارِ ، وَكَانَ لَهُ مثل أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَجْرِهِ شَيْءٌ ” ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، لَيْسَ كُلُّنَا نَجِدُ مَا يُفَطِّرُ الصَّائِمَ ؟ قَالَ : ” يُعْطِي اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَذَا الثَّوَابَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا عَلَى مَذْقَةِ لَبَنٍ أَوْ تَمْرَةٍ أَوْ شَرْبَةِ مَاءٍ ، وَمَنْ أَشْبَعَ صَائِمًا سَقَاهُ اللَّهُ مِنْ حَوْضِي شَرْبَةً لا يَظْمَأُ حَتَّى يَدْخُلَ الْجَنَّةَ ، وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ  مَنْ خَفَّفَ فِيهِ عَنْ مَمْلُوكِهِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ وَأَعْتَقَهُ مِنَ النَّارِ ، فضائل الأوقات للبيهقي গ্ধ بَابٌ فِي فَضْلِ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ … رقم الحديث: ৩৯, هذا الحديث رواه ابن خزيمة بلفظه في صحيحه ৩/১৯১ رقم (১৮৮৭, رواه المحاملي في أماليه (২৯৩) والبيهقي في شعب الإيمان (৭/২১৬) وفي فضائل الأوقات ص ১৪৬ رقم ৩৭ وأبو الشيخ ابن حبان في كتاب ( الثواب ) عزاه له الساعاتي في ( الفتح الرباني ) (৯/২৩৩) وذكره السيوطي في ( الدر المنثور ) وقال : أخرجه العقيلي وضعفه ) والأصبهاني في الترغيب ، وذكره المنقي في ( كنز العمال ) ৮/৪৭৭ ، كلهم عن طريق سعيد بن المسيب عن سلمان الفارسي ، )

হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ হতে বর্ণিত হয়েছে যে, শা’বান মাসের শেষ দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খুতবা শুনালেন, যাতে  তিনি এরশাদ করেছেন, ‘হে জনগণ! তোমাদের নিকট একটি মহান ও পবিত্র মাস আসছে, যার মধ্যে এমন একটি রাত্র রয়েছে যা হাজার রাত্র হতেও উত্তম। যে মাসের দিনগুলোতে আল্লাহ রোযাকে ফরয করেছেন এবং রাত্রিতে নামাযকে (তারাবীহকে) নফল করেছেন (উম্মতের জন্য সুন্নত)। যে ব্যক্তি ঐ মাসে কোন একটি সদাভ্যাস ( বা সৎকাজ) করে তা ছওয়াবের দিক দিয়ে অন্য মাসের একটি ফরয কাজের সমতুল্য হয়ে থাকে। আর একটি ফরয আদায় করলে, তা অন্য মাসের ৭০টি ফরয আদায়ের সমতুল্য ছওয়াবের হয়ে থাকে। এটা হল ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্য অবলম্বনের প্রতিদান হচ্ছে বেহেশ্ত। এটা পরোপকার ও সহানুভূতির মাস এবং এটা এমন একটি মাস যাতে ঈমানদারগণের রুযী বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করায়, তার বিনিময়ে তার সমস্ত গুণাহ মাফ হয়ে যায় এবং সে জাহান্নাম হতে মুক্ত হয়। তাছাড়া সে উক্ত রোযাদার ব্যক্তির তুল্য ছওয়ারও পাবে। এতে অবশ্য উক্ত রোযাদারের ছওয়াবে একটুও কমতি করা হবে না। আমরা বললাম ইয়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইকা ওয়াসাল্লাম! আমাদের এমন কিছু সংস্থান নাই যা দ্বারা আমরা রোযাদারকে ইফতার করাতে পারি। তদুত্তরে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এই ছাওয়াব আল্লাহতায়ালা ঐ ব্যক্তিকেও প্রদান করবেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে এক ঢোক দুধ বা একটি খোরমা কিংবা সুমিষ্ট পানি দ্বারা ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে আমার ‘হাউজ কাওছার’ হতে এমনভাবে পর্যাপ্ত করে পান করাবেন যে, বেহেশতে না যাওয়া অবধি তার আর পিপাসা লাগবে না। আর ঐ মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক ক্ষমার ও তৃতীয় দশক জাহান্নাম হতে মুক্তির জন্য নির্ধারিত। যে ব্যক্তি ঐ মাসে স্বীয় চাকরের ওপর কার্যভার লাঘব করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন এবং জাহান্নাম হতে আযাদ করে দেন। (বাযহাক্বী-৩৯, ইবনু খোযাইমা-১৮৮৭)
প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

্রإِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ ،وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ،  وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ،  وَيُنَادِى مُنَادٍ:  يَا بَاغِىَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ ، وَيَا بَاغِىَ الشَّرِّ أَقْصِرْ .وللهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ)رواه الترمذي  واللفظ له (৬৮২) وقال:غريب، وابن خزيمة في صحيحه بنحوه (১৮৮৩)،  وابن حبان (৮/২২১) وقال الشيخ شعيب في التحقيق (إسناده قوي) ،  والحاكم في المستدرك (১৫৩২) وقال: (حديث صحيح على شرط الشيخين.(

রামাযান মাসের প্রথম রাত্রি সমাগত হতেই শয়তান ও দুষ্টমতি জ্বিনগুলো শৃঙ্খলিত হয় এবং জাহান্নামের দ্বারগুলো রুদ্ধ করে দেয়া হয়, একটি দরজাও মুক্ত থাকে না। আর বেহেশতের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়, তার একটাও বন্ধ থাকে না। আর কোন একজন গায়েবী আহ্বানকারী উচ্চঃস্বরে বলতে থাকেন যে, ‘হে পুণ্যার্থীগন অগ্রসর হও! হে পাপাত্মার দল পিছিয়ে যাও! এই সময় আল্লাহর পক্ষ হতে বহু দোযখী মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। এমনি করে প্রত্যেক রাত্রিতেই আহ্বান করা হয়। ( তিরমিযী-৬৮২, ইবনু খোযাইমা-১৮৮৩, ইবনু হিব্বান-৮/২২১, হাকেম-১৫৩২)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ” رواه البخاري ৩৮ ومسلم ৭৬০

‘যে ব্যক্তি রামাযান মাসে ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রোযা রাখে, তার অতীত গোণাহ মাফ হয়ে যায়। 
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, 

“مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ” (البخاري: كتاب صلاة التراويح، باب فضل من قام رمضان، (১৯০৫)، عن أبي هريرة رضي الله عنه، ومسلم: كتاب صلاة المسافرين وقصرها، باب الترغيب في قيام رمضان وهو التراويح، (৭৫৯).

আর যে ব্যক্তি এই মাসে ঈমানসহ ছওয়াবের আশায় রাত জেগে (তারাবীহ) নামায পড়ে, তার অতীত সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারী-১৯০৫, মুসলিম-৭৫৯)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ” )رواه البخاري في كتاب الصوم – باب من صام رمضان إيماناً واحتساباً ونية برقم (১৮০২)، ومسلم في كتاب صلاة المسافرين وقصرها – باب الترغيب في قيام رمضان وهو التراويح برقم (৭৬০(

যে ব্যক্তি ক্বদর রাতে ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় রাত জাগরণ করে নামায পড়ে, তারও অতীত সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (বুখারী-১৮০২, মুসলিম-৭৬১)
হযরত নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

عن أَبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( قَالَ اللَّهُ : كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلا الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ يَدَعُ طَعَامَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي) روى البخاري (১৭৬১) ومسلم (১৯৪৬)(

‘মানুষের প্রত্যেক সৎকর্মের ছওয়াব দশ হতে সাতশত গুণ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তবে আল্লাহ বলেন, ‘কেবল রোযা ব্যতীত। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য সুতরাং তার পুরস্কার আমিই আমার কুদরতের স্বহস্তে প্রদান করব। যেহেতু রোযাদার স্বীয় কামপ্রবৃত্তিকে দমন ও পানাহার পরিহার করে থাকে কেবলমাত্র আমারই জন্য।’ (বুখারি-১৭৬১, মুসলিম-১৯৪৬)   
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا : إِذَا أَفْطَرَ فَـرِحَ ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِه

‘রোযাদারের জন্য দুইটি আনন্দ। একটি ইফ্তার কালে এবং অপরটি আল্লাহর সাথে দীদারকালে।’(বুখারি-১৭৬১, মুসলিম-১৯৪৬)   

তিনি আরো বলেন, 

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْك .

‘রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশ্ক হতেও অধিক সুগন্ধময়।(বুখারি-১৭৬১, মুসলিম-১৯৪৬)    

তিনি বলেন, 

وَالصِّيَامُ جُنَّـةٌ ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلا يَرْفـثْ ، وَلا يَصْخَبْ ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ : إِنِّي امْرُؤٌ صَائِم .

(রোযাদারগণের পক্ষে) রোযা হচ্ছে ঢালস্বরূপ।’ (বুখারি শরিফ)   সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউই রোযা অবস্থায় নির্লজ্জ কথা বলবে না এবং বাজে বকবে না। যদি কেউ রোযাদারকে গালি দেয় অথবা তার সাথে লড়াই করতে আসে, তবে সে যেন বলে দেয় যে, আমি রোযাদার। (বুখারি-১৭৬১, মুসলিম-১৯৪৬)   
হযরত নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ وَالْجَهْل فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ) . روى البخاري (১৯০৩১৮০৪-) (৬০৫৭)

‘যে ব্যক্তি রোযা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ হতে বিরত রইল না, তার উপবাসে আল্লাহর কিছুই যায় আসে না।’((বুখারি-১৮০৪, ১৯০৩, ৬০৫৭)   
তিনি সাবধান করে বলেন, 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ :  ” رُبَّ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ حَظٌّ مِنْ صَوْمِهِ إِلَّا الْجُوعُ وَالْعَطَشُ ، وَرُبَّ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ حَظٌّ مِنْ قِيَامِهِ إِلَّا السَّهَرُ وَالنَّصَبُ ”

رواه ابن ماجه في سننه (১৬৯০) عن عمرو بن رافع والنسائي في الكبرى (২/২৩৯/رقم৩২৫০) ورواه النسائي في الكبرى (২/২৩৯/رقم৩২৫১) ورواه أحمد في مسنده (২/৪৪১) 

‘বহু রোযাদার এমনও রয়েছে, যে ক্ষুধায়-পিপাসায় কষ্ট পাওয়া ব্যতীত তাদের রোযা রাখায় আর কোন ফল নেই। এমনিভাবে বহু রাতজাগা নামাযী রয়েছে, যাদের রাত জাগরণ ব্যতীত অন্য কোন লাভ হয় না।’ হযরত নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বলেন, যে রোযাদারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে বিরত থাকল না, তার শুধু পানাহার হতে বিরত থাকায় কোন লাভ নেই।’ (ইবনু মাযা-১৬৯০, নাসায়ী- ৩২৫০, আহমদ-২/৪৪১(
আমরা যখন এ মাসের গুরুত্ব অনুভব করলাম তখন আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল কীভাবে এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায় সে প্রচেষ্টা চালানো। হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআনও নাযিল হয়েছে এ মাসে ।  

 
Top