আবে  কাউছার  বা  কাউছারের   পানির   মূল  উৎস  হবে জান্নাত    এতে    কোন    দ্বিমত    নেই।    কিন্তু    এই      পানি সরবরাহের      জন্য    হাউজ    থাকবে    কয়টি     এবং    এর অবস্থান    কোথায়   এ   ব্যাপারে    উলামায়ে    কেরামদের মধ্যে কিছুটা মত পার্থক্য পরিলতি হয়। কেউ বলেছেন হাউজ  হল  হাশরের  ময়দানে  অবস্থিত।  আবার  কারো  মতে    হাউজ    জান্নাতে     অবস্থিত।    তবে     বিশুদ্ধ    মতে নবীজির  হাউজ  থাকবে   দু’টি।   একটি  হবে   জান্নাতের ভিতরে   অপরটি   থাকবে   হাশরের   ময়দানে।   এভাবে  আরো  একটি   বিষয়  নিয়ে  মত   পার্থক্য  রয়েছে     সেটা হলো    হাশরের    ময়দানে    নবীজি    স্বীয়    উম্মতদেরকে  হাউজে কাউছারের পানি পান  করাবেন সত্য  কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে     পান     করাবেন      কখন?     তা      কী     মিযান      ও   পুলছিরাতের    আগে  না   কী  পরে?  এটাও   বিশুদ্ধ   মত অনুযায়ী    হাউজে  কাউছার  হবে  মিযান  ও  পুলছিরাতে আগে।   এ    ব্যাপারে   হাফিজুল    হাদিস   হাফিজ   ইবনে হাজর  আসকালানী ‘ফতহুল বারী’ গ্রন্থে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।   নিম্নে   সেখান   থেকে   কিছুটা   আলোকপাত  করা হল।

তিনি         বলেন-         ইমাম         বুখারি         হাউজ         সংক্রান্ত  হাদিসগুলোকে      শাফায়াত       ও      পুলসিরাত       সংক্রান্ত হাদিসসমূহ  বর্ণনা  করার  পরে  উল্লেখ   করেছেন।   এর মধ্যে  ইঙ্গিত  রয়েছে   যে,  পুলসিরাত   অতিক্রম   করার  পরে   হাউজের  দিকে  গমন  করা   হবে।   যেমন   ইমাম   আহমদ    ও    ইমাম    তিরমিজি     একটি     হাদিস     বর্ণনা  করেছেন-

عن  انس  قال سألت رسول  الله صلى الله عليه وسلم   ان   يشفع لى فقال  انا  فاعل- فقلت   اين اطلبك؟  قال اطلبنى اول ما تطلبنى على الصراط – قلت فان لم القك؟ قال انا عند الميزان قلت فان لم القك؟ قال انا عند الحوض-

অর্থ:  হযরত   আনাস  রাদিয়াল্লাহু  আনহু   বলেন-   আমি রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর  কাছে ফরিয়াদ   করলাম আমার  জন্য  শাফায়াত করার জন্য। তিনি   বললেন  আমি তাই করব।  আমি বললাম- আমি  আপনাকে    কোথায়   তালাশ    করবো?    তিনি   বললেন  সর্বপ্রথম   তুমি   আমাকে   পুলসিরাতের   পাশে  অন্বেষণ করবে আমি বললাম, যদি সেখানে আপনাকে না পাই? তিনি  বললেন-  তাহলে  আমি  মিযানের  পাশে  থাকব।  আমি   বললাম-   যদি   সেখানে    আপনাকে    নাই   পাই? তিনি বললেন- তাহলে আমি হাউজের পাশে থাকব।

অতঃপর     ইমাম     আসকালানী     বলেন-       হাউজ     যদি পুলসিরাতের পরে হয়, তবে একটি সমস্যা দেখা দেয়। যেমন উক্ত অধ্যায়েই কয়েকটি হাদিসে বর্ণিত  হয়েছে। একদল   লোক   হাউজের    দিকে   গমন   করতে    চাইলে তাদেরকে   তাড়িয়ে  দেয়া  হবে  এবং জাহান্নামে  নিপে করা হবে।

এখন   প্রশ্ন  হল,   যে  ব্যক্তি   পুলসিরাত   অতিক্রম   করে হাউজের   নিকট পৌঁছে   গেল সে জাহান্নাম  থেকে মুক্তি পেয়ে গেল। অতঃপর তাকে আবার কিভাবে জাহান্নামে তাড়িয়ে দেয়া হবে?

ইমাম  আসকালানী  বলেন-    এ   প্রশ্নের   জবাব  এভাবে হতে পারে যে, উক্ত লোকগণ হাউজের নিকটবর্তী  হয়ে যাবে এমতাবস্থায় তারা   হাউজও দেখতে পাবে আবার অন্যদিকে     জাহান্নাম     ও     দেখতে     পাবে।      অতঃপর  সিরাতের  বাকী পথ  অতিক্রম করার  পূর্বেই তাদেরকে  জাহান্নামে তাড়িয়ে দেয়া হবে।

ইমাম  আবু  আব্দুল্লাহ  আল  কুরতুবি  ‘তাযকিরাহ’  গ্রন্থে  লিখেছেন-  ‘আলকুত’   গ্রন্থের   রচয়িতাসহ  কোন   কোন উলামাগণের মতে হাউজ পুলসিরাতের পরে হবে। কিন্তু অন্যান্য উলামাগণ এর বিপরীত মতপোষণ  করেছেন। অর্থাৎ  হাউজ  পুলসিরাতের  আগে  অবস্থিত।  অতঃপর  ইমাম কুরতুবি বলেন-

والصحيح ان للنبى صلى الله عليه وسلم حوضين  احدهما فى  الموقف  قبل الصراط والاخر داخل الجنة  فكل   منهما يسمى كوثرا-

অর্থ:   এ    ব্যাপারে   বিশুদ্ধ    অভিমত    হল   নবী      করিম সাল্লাল্লাহু       আলাইহি        ওয়াসাল্লাম     এর     দুটি     হাউজ থাকবে।    একটি    হবে    পুলসিরাতের     পূর্বে      হাশরের  ময়দানে      এবং      অপরটি      হবে     জান্নাতের     ভিতরে।  উভয়টিকেই কাউছার নামকরণ করা হবে।

ইমাম আসকালানী বলেন- আমি বলব,  এখানে একটি  সুè বিষয় রয়েছে যে, কাউছার হচ্ছে এমন একটি ঝর্ণা যা     জান্নাতের   ভিতর   অবস্থিত।   এ   ব্যাপারে   পূর্বাপর হাদিস  বর্ণিত হয়েছে। এ ঝর্ণার পানিই হাউজের মধ্যে  সরবরাহ করা  হবে।  এজন্য    কাউছার  শব্দটি হাউজের স্থলাভিষিক্ত    হিসাবে     ব্যবহৃত    হয়।     কারণ    কাউছার থেকেই হাউজের উৎপত্তি।

অতএব  ইমাম কুরতুবির  বক্তব্যের সারাংশ  হলো  যে,   হাউজ    সিরাতের   পূর্বে    অবস্থিত     কেননা   কিয়ামতের ময়দানে যখন সমস্ত লোক    পিপাসার্ত অবস্থায়  ছুটাছুটি করতে  থাকবে,  তখন  মুমিনগণ  হাউজের  দিকে  গমন  করবে।     পান্তরে   কাফিরগণ    জাহান্নামে   পতিত   হবে। তারা বলবে  হে   প্রভু আমরা পিপাসিত।    তখন তাদের জন্য জাহান্নামকে উত্তোলন করা হবে। এতে মনে হবে  যেন  পানি  দেখা  যাচ্ছে।    তখন  বলা  হবে  তোমরা  কি সেখানে  যেতে  চাও?   তারা  পানি  মনে  করে  সেদিকে  গমন করবে এবং জাহান্নামে পতিত হবে।

কাজি  আয়াজ  বলেন- হাউজ  সংক্রান্ত হাদিস  (من شرب منه  لم  يظمأ بعدها ابدا অর্থাৎ যে ব্যক্তি হাউজ থেকে  পান  করবে   সে  আর   কখনো  পিপাসিত     হবে  না)   এ হাদিসের    বাহ্যিক    অর্থ      দ্বারা    বুঝা   যায়   যে,    হিসাব নিকাশের   পরে    জাহান্নাম  থেকে   মুক্তি  লাভের  পরেই হাউজ     থেকে     পানি       পান      করানো     হবে।      কেননা বাহ্যিকভাবে সে ব্যক্তি  আর পিপাসার্ত  হবে না,  তাকে আগুন দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে না।

তবে  এমন   হতে   পারে  যে,  এমতাবস্থায় যাকে শাস্তির জন্য  নির্দেশ  দেয়া  হবে  তাকে  পিপাসার  কষ্টের  শাস্তি  দেয়া হবে না বরং অন্য কোন শাস্তি দেয়া হবে। (অর্থাৎ কাউছার পান করার  পরে কেউ   যদি  জাহান্নামেও যায়  তবুও পিপাসা অনুভব হবে না)

মিশকাতশরীফ    ৪৮৭   পৃষ্ঠায়     হাশিয়াতে   মিরকাতের  উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে এভাবে-

ثم   الصحيح ان الحوض قبل الميزان فان   الناس   يخرجون عطاشا   من   قبورهم   فيقدم   الحوض   قبل   الميزان   وكذا  حياض الانبياء فى الموقف (مرقاة)

অর্থ: অতঃপর  বিশুদ্ধ  কথা  হল-   হাউজ মিযানের পূর্বে অবস্থিত।  কেননা  লোকজন   তাদের  কবরসমূহ   থেকে  পিপাসিত অবস্থায় বের হবে। অতঃপর  হাউজের দিকে গমন করবে।  এমনিভাবে  অন্যান্য আম্বিয়া কেরামদের হাউজসমূহও মিযানের পূর্বে হবে। (মিরকাত)

 
Top