আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম      হলেন      সর্বকালের      সর্বযুগের      সর্বশ্রেষ্ঠ  আদর্শ। রাজা-প্রজা, ধনী-গরিব, ছোট-বড়, প্রত্যেকের জন্য    তিনি    ছিলেন    অনুকরণীয়    অনুসরণীয়    অনুপম  আদর্শ। নবীজীর জীবনের   প্রতিটি   ধাপ,  প্রতিটি  মুহূর্ত উম্মতের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।

অথচ হামিদী সাহেব তার প্রবন্ধে বারংবার লিখেছেন-

‘জন্ম  থেকে  ৪০   বছর     পর্যন্ত  তিনি   নবুয়তপ্রাপ্ত  হননি এবং আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন না। ’

এমন কথা  কোন   নাস্তিকও কোন   দিন বলার  দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তার অজ্ঞতা ও মূর্খতার বহি:প্রকাশ ঘটেছে।

অনুকরণীয়    আদর্শ   বলতে   কি  বুঝায়?  যার  চারিত্রিক মাধুর্য্য,   চাল-চলন,   মহানুভবতা,    সত্যবাদিতা,     দয়া, আচার-ব্যবহার       অনুকরণযোগ্য         তাই        অনুকরণীয় আদর্শ।

হযরত   মুহাম্মদ   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি   ওয়াসাল্লাম   এর  আদর্শ  যদি  ৪০  বছর  পর্যন্ত   অনুকরণের   অযোগ্য  হয় তাহলে     কার     চারিত্রিক     আদর্শ     অনুকরণ    করবেন? বিভিন্ন       শ্রেণির     মানুষের     মধ্যে     যে      সব       গুণাবলী বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর  মধ্যে সবগুলো  গুণাবলী  এককভাবেই বিদ্যমান    ছিল।    তিনি    ছিলেন    একাধারে    সত্যবাদী,  ন্যায়পরায়ণ,         দূরদর্শী       পরোপকারী।       পরিচ্ছন্নতা,  পরিপতা, বাল্যকালেই  আরবের লোকেরা  তাঁকে লকব প্রদান করেছিল  আল  আমিন  তথা  বিশ্বাসী  এবং   আল সাদিক বা সত্যবাদী।

পথহারা  যুবক   সম্প্রদায়ের আদর্শ  স্থাপন করতে  গিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হিলফুল ফুজুল  নামক সেবা সংঘ। পঁচিশ      বছর     বয়সে   তিনি   বিবি   খাদিজা   রাদিয়াল্লাহু আনহা   এর ব্যবসায়িক পণ্য নিয়ে সিরিয়ায় গমন করে যে      সততা,      সচ্চরিত্রতা     ও     সত্যবাদিতার      পরিচয় দিয়েছেন তা   সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের জন্য  অনুকরণীয় আদর্শের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আল্লাহ তায়ালা   তাঁর প্রিয় নবীর  অনুকরণীয়  আদর্শের   বর্ণনা করেছেন এভাবে-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ:-   নিশ্চয়ই   তোমাদের   জন্য   রাসূলুল্লাহ   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর  মধ্যে  উত্তম   অনুপম   আদর্শ রয়েছে। (সূরা আহযাব- ২১)

এ   আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট করে দেননি যে, শুধুমাত্র ৪০ বছর পরে তাঁর চরিত্রে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। বরং আল্লাহ তায়ালা ব্যাপকভাবে বলেছেন    রাসূলের   মধ্যেই   রয়েছে     তোমাদের    জন্য  উত্তম আদর্শ।

সুতরাং রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের     প্রতিটি    স্তরই    উম্মতের    জন্য     অনুকরণীয়, অনুসরণীয় উত্তম আদর্শ।

হযরত    আয়েশা    সিদ্দিকা    রাদিয়াল্লাহু    আনহা    থেকে  বর্ণিত  ওহি   নাজিলসংক্রান্ত  লম্বা  হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

قالت  خديجة  كلا  والله   ما   يخزيك  الله    ابدا-  انك   لتصل  الرحم   وتحمل     الكل     وتكسب   المعدوم-    وتقرى   الضيف وتعين على نوائب الحق-

অর্থ:    খাদিজা      রাদিয়াল্লাহু      আনহা    রাসূল    সাল্লাল্লাহু আলাইহি     ওয়াসাল্লামকে     বললেন-      আল্লাহর      শপথ আল্লাহ    কখনো    আপনাকে    অপমানিত    করবেন    না। আপনি      আত্মীয়-স্বজনের      সাথে      সুসম্পর্ক      রাখেন।  অমদের   বোঝা    বহন   করেন,    নিঃস্বদেরকে   উপার্জন  করে   সাহায্য    করেন,   মেহমানদের    খেদমত     করেন, এবং      বিপদগ্রস্তদেরকে     সাহায্য      করেন।       (বোখারী কিতাবুল বাদউল ওহি)

এ হাদিসের সারাংশ হলো, যখন সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়   তখন   রাসূলুল্লাহ   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি   ওয়াসাল্লাম  হেরা    গুহা    থেকে     ফিরে     এসে    খাদিজা     রাদিয়াল্লাহু আনহাকে   সমস্ত    ঘটনা    খুলে   বললেন   এবং    বললেন আমাকে  চাদর  দিয়ে   ঢেকে   দাও।  আমার  ভয়  হচ্ছে। তখন  খাদিজা রাদিয়াল্লাহু  আনহা  আল্লাহর  কসম করে দৃঢ়তার সাথে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন এরূপ কখনো হতে পারে      না।     আল্লাহ      কখনো      আপনাকে     অপমানিত করবেন       না।       কারণ       আপনার       মধ্যে       নিম্নবর্ণিত  সদগুণগুলো বিদ্যমান।

১। আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য রাখেন।
২। অমদের সাহায্যার্তে তাদের বোঝা বহন করেন।
৩। নিঃস্ব গরিবদেরকে উপার্জন   করে  সাহায্য করেন। 
৪। অতিথিদের ভাল আপ্যায়ন করেন।
৫। বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন।

উপরোল্লেখিত         গুণাবলীগুলো          বাল্যকাল        থেকেই নবীজীর        চরিত্রে      বিদ্যমান।      এগুলো      কি      হামিদী সাহেবের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ নয়?

রোম    সম্রাট    হিরাকিয়াস    আবু    সুফিয়ান    রাদিয়াল্লাহু  আনহু     এর    কাছে    রাসূলেপাক     সাল্লাল্লাহু      আলাইহি ওয়াসাল্লাম      এর       চারিত্রিক      গুণাবলী       সম্বন্ধে      প্রশ্ন  করেছিলেন তা বর্ণিত হয়েছে এভাবে-

قال فهل تتهمونه با لكذب قبل ان يقول ما قال؟ قلت لا قال فهل يغدر؟ قلت لا- ونحن منه فى مدة لا ندرى ما هو فاعل فيها-

অর্থ:  হিরাকিয়াস   বলল,  তিনি কি  নবুয়ত  দাবির  পূর্বে কখনো মিথ্যা কথা বলতেন? আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু  বলেন-    আমি  বললাম না। সে বলল-  তিনি   কি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন? আমি বললাম  না।  তবে সম্প্রতি  তাঁর সাথে আমাদের একটি চুক্তির  সময়সীমা  নির্ধারিত  হয়েছে  (হুদায়বিয়ার সন্ধি) জানিনা তিনি এ ব্যাপারে কি করেন।  (বুখারী কিতাবুল বাদউল ওহি)

উল্লেখিত     হাদিসে    আবু   সুফিয়ান    রাদিয়াল্লাহু   আনহু  মুসলমান হবার পূর্বেও রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম      এর     চারিত্রিক     গুণাবলী      বর্ণনা     করতে দ্বিধাবোধ     করেননি।     বরং     তিনি     অকপটে       স্বীকার করছেন      মুহাম্মদ      সাল্লাল্লাহু      আলাইহি      ওয়াসাল্লাম  বাল্যকাল          থেকেই           কখনো          মিথ্যা          বলেননি,   বিশ্বাসঘাতকতা করেননি।

রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুপম আদর্শ  সম্বন্ধে   অমুসলিম  দার্শনিকরা    পর্যন্ত   প্রশংসায়  পঞ্চমুখ। দেখুন জর্জ বানার্ড শ কি বলেছেন

I believe, if a man like Mohammad were to assume   the    dictatarship   of    this   modern word     he     could     succed     in       solving      its  problem    in     a     way    that    would   bring   its much needed peace and happiness।

অর্থ:-   আমি  বিশ্বাস  করি  তাঁর  মত  কোন   ব্যক্তি  যদি   আধুনিক জগতের  একনায়কত্ব গ্রহণ   করতেন তা হলে এমন    এক  উপায়ে তিনি এর  সমস্যা সমাধানে  সফল  হতেন যা পৃথিবীতে নিয়ে আসত বহু আখাঙ্খিত সুখ ও শান্তি। (জগতগুরু মুহাম্মদ ﷺ)

অথচ হামিদী সাহেব গলাবাজী করছেন ৪০ বছর পর্যন্ত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন না।

 
Top