জানাযার নামাজে ফাতিহা খানি বা সূরা ফাতিহা পড়তে হয় না।

বর্তমানের তথাকথিত আহলে হাদীস নামধারী দলের লোকেরা বলে, জানাযার নামাজেও সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা চুপে চুপে কিংবা উচ্চঃস্বরে পড়া ওয়াজিব। (তাদের দলিল-তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, বুলুগুল মারাম)
আসলে সঠিক মাসয়ালা তা নয়।
এবার আমরা একটু পর্যালোচনা করে দেখি উক্ত নামাজে সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা পড়া কতটুকু শরিয়ত সম্মত বা শরিয়ত সম্মত কিনা।

নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করা হলোঃ
(ক)
১/ সহীহ মুসলিম, তিরমিজি ও নাসাঈতে হযরত আওফ ইবনে মালেক রাঃ থেকে,
২/ তিরমিজি ও নাসাঈতে হযরত ইবরাহিম আশহাল রাঃ তাঁর পিতা থেকে,
৩/ আবু দাউদে হযরত ওয়াছিলা রাঃ থেকে,
৪/ আবু দাউদ ও তিরমিজিতে হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত নবী করীমصلى الله عليه و آله وسلم জানাযার নামাজে দোয়া পড়তেন।
৫/ আবু দাউদ ও ইবনে মাজাতে হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত আছে, রাসুলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم জানাযা নামাজে দোয়া পড়তে বলেছেন।
হাদীসটির আরবি ইবারত-

ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻌﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻴﺘﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ ﻟﻪ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀـ
এই হাদীস দ্বারা জানাযা নামাজে দোয়া পড়া সাব্যস্ত হলো।
৬/ ফতহুল ক্বাদীর ২৮২ পৃষ্ঠায় আছে, “জানাযার নামাজে সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা পড়া নবী কারিমصلى الله عليه و آله وسلم থেকে কোন সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত নেই।”
আরবী ইবারত-

ﻟﻢ ﻳﺜﺒﺖ ﺍﻟﻘﺮﺃﺓ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻌﻤـ

(খ)
১/ তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাতে হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে, নবী কারিমصلى الله عليه و آله وسلم জানাযার নামাজে সূরা ফতিহা পড়ার কথা বর্ণিত আছে। তবে এর কোন সনদ নেই; ইমাম তিরমিজি এই হাদীসকে দ্বয়ীফ বলেছেন।
২/ ইবনে মাজাতে ওম্মে শরিক হতে জানাযার নামাজে সূরা ফাতিহা পড়তে নবী কারিমصلى الله عليه و آله وسلمএর নির্দেশ বলে বর্ণিত আছে। তবে এর সনদও দ্বয়ীফ; কেননা উক্ত হাদীসের তিনজন বর্ণনাকারী-আবু আছেম, হাম্মাদ ও শাহরকে “তাকরীব” গ্রন্থে দোষান্বিত ও ভুলকারী বলে উল্লেখ আছে।
৩/ বুলুগুল মারামে হযরত জাবের রাঃ থেকে রাসুলে মাকবুল صلى الله عليه و آله وسلم জানাযার নামাজে ১ম তাকবীরেব পর সূরা ফাতিহা পড়ার কথা বর্ণিত আছে। তবে এ হাদীসটিও দ্বয়ীফ।
সুতরাং মূলকথা এই যে, হযরত নবী করীমصلى الله عليه و آله وسلمএর কোন সহীহ হাদীসে জানাযার নামাজে সূরা ফাতিহা পড়ার কোনই প্রমাণ নেই।

(গ)
প্রায় প্রত্যেক ইসলামী শহরের বড় বড় তাবেয়ী মনীষীও জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার প্রবক্তা ছিলেন না।
যথা-
১/ মদীনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত তাবেয়ী প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফকীহ সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, জানাযার নামাযে কি (কুরআন) পড়া আছে? তিনি বললেন, ‘জানাযার নামাযে (কুরআন) পড়া নেই।’
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৫৩২]।

২/ মক্কা মুকাররমার বিখ্যাত তাবেয়ী প্রায় দুইশত সাহাবীর সাহচর্যধন্য মুহাদ্দিস আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. জানাযার নামাযে কুরআন পড়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করতেন।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৫২৯]।

৩/ কুফা নগরীর বিখ্যাত তাবেয়ী প্রায় পাঁচশ সাহাবীর সাক্ষাতধন্য প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ ইমাম আমের ইবনে শারাহীল আশশা‘বী রাহ. বলেন, ‘জানাযার নামাযে (কুরআন) পড়া নেই’।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৫২৮]।

শা‘বী রাহ. আরো বলেন, ‘জানাযার নামাযের প্রথম তাকবীরে আল্লাহর প্রশংসা করবে, দ্বিতীয় তাকবীরের পরে দরূদ পড়বে, তৃতীয় তাকবীরের পরে মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করবে, চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাবে’।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৬৪৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৪৯৬]।

কুফা-নগরীর আরেক তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকেও এ নিয়ম বর্ণিত হয়েছে-

ﻗَﺎﻝَ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﻭَﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱُّ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫَﺎﺷِﻢٍ، ﻋَﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﺍﻟﻨَّﺨَﻌِﻲِّ، ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ : ﺍﻟﺜَّﻨَﺎﺀُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔُ : ﺻَﻠَﺎﺓٌ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔُ : ﺩُﻋَﺎﺀٌ ﻟِﻠْﻤَﻴِّﺖِ، ﻭَﺍﻟﺮَّﺍﺑِﻌَﺔُ : ﺳَﻠَﺎﻡٌ ﺗُﺴَﻠِّﻢُ . ﻗَﺎﻝَ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ : ﻭَﺑِﻪِ ﻧَﺄْﺧُﺬُ . ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ .
ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. সুফইয়ান ছাওরী হতে, তিনি আবু হাশেম হতে, তিনি ইব্রাহীম নাখাঈ রাহ. হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, প্রথম: আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা (ছানা পড়া)। দ্বিতীয়: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাআহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পড়া। তৃতীয়: মায়্যেতের জন্য দু‘আ করা। চতুর্থ: সালাম (ফিরিয়ে শেষ করা)। ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, আমরা এটাই গ্রহণ করি। আর এটাই ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর মত।
[সূত্রঃ ইমাম মুহাম্মাদ রাহ., আল-আছার, ২৩৮]।

৪/ বসরা নগরীর বিখ্যাত তাবেয়ী প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. জানাযার নামাযে (কুরআন) পড়তেন না।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৫২৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৬৪৩২]।

৫/ ইয়ামানের বিখ্যাত তাবেয়ী প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফকীহ তাউস রাহ.-ও জানাযার নামাযে (কুরআন) পড়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করতেন।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৫২৯]।
উল্লেখ্য, ইসলামী উলূমের দুই মারকায মাদীনা মুনাওয়ারা এবং কুফা নগরীতে জানাযার নামাযে কুরআন পড়ার কোনো প্রচলন ছিল না।

মাদীনাবাসীর আমল:
_______________
ইমাম মালিক রাহ. বলেন,

ﻟﻴﺲ ﺫﻟﻚ ﺑﻤﻌﻤﻮﻝ ﺑﻪ ﺑﺒﻠﺪﻧﺎ ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻮ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﺃﺩﺭﻛﺖ ﺃﻫﻞ ﺑﻠﺪﻧﺎ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ .
অর্থাৎ, জানাযার নামাযে (কুরআন) পড়ার কোনো প্রচলন আমাদের এ শহরে (মাদীনায়) নেই। জানাযা হল দুআ করা। আমি আমার শহরের অধিবাসীদের এর উপরেই পেয়েছি।
[সূত্রঃ আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা ১/১৬৭]।

কুফাবাসীর আমল:
_______________
ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেন,

ﻭﻗﺎﻝ ﺑﻌﺾ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ : ﻻ ﻳﻘﺮﺃ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﻨﺎﺯﺓ ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻮ ﺍﻟﺜﻨﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻟﻠﻤﻴﺖ ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻭﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻜﻮﻓﺔ .
অর্থাৎ, আর কতক আহলে ইলম বলেন : ‘জানাযার নামাযে (কুরআন) পড়া হবে না এ তো শুধু আল্লাহর প্রশংসা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ এবং মাইয়েতের জন্য দুআ। এটা সুফিয়ান ছাওরী রাহ. এবং কুফার একাধিক মনীষীর কওল-অভিমত।
[সূত্রঃ জামে তিরমিযী ১০১১ নং হাদীসের অধীনে]।
উপরের আলোচনায় আমরা বেশ কয়েকজন সাহাবী ও তাবেয়ীর আছর উল্লেখ করলাম যারা কেউই জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার প্রবক্তা নন। সেই সাথে এটাও জানতে পারলাম যে, ইসলামের দুই কেন্দ্রভূমি মদীনা মুনাওয়ারা এবং কুফা নগরীতে জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার কোনো প্রচলন ছিল না। এতদসত্ত্বেও ওহাবী সালাফী নামধারীদের এই কথা বলা যে, ‘সূরা ফাতিহা ছাড়া জানাযার নামায হয় না’- বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।
এটা ঠিক যে, ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সহ দু’একজন সাহাবী জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়েছেন। কিন্তু ‘সূরা ফাতিহা না পড়লে জানাযার নামায হয় না’ এমন কোনো ফাতোয়া তাঁরা দিয়েছেন বলে জানা যায় না। তাঁরা যে কখনো কখনো সূরা ফাতিহা পড়েছেন তা তারা ভিন্ন কারণে পড়েছেন।
জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা না পড়ার নিয়ম খাইরুল কুরূন তথা সাহাবা-তাবেয়ীযুগে ব্যাপকভাবে চর্চিত ও অনুসৃত ছিল। মদীনা মুনাওয়ারা এবং কুফা নগরীতে সূরা ফাতিহা পড়ার কোনো প্রচলনই ছিল না। এতে বোঝা যায় জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা না পড়ার নিয়মটিই অধিক শক্তিশালী।

প্রিয় পাঠক, এখানে লক্ষ্য করুন,
জানাযার নামাযের ক্ষেত্রেও অজু করা জরুরী। তাকবীরে তাহরিমা বলে নিয়ত করা জরুরী। কিবলামুখী হওয়া। সতর ঢাকা ইত্যাদি নামাযের মতই জরুরী।
হাদীসে এসেছে-

عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : ( إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء
যখন তোমরা মাইয়্যেতের জন্য জানাযার নামায পড়, তখন ইখলাসের সাথে দুআ কর।
[সূত্রঃ সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/ ৩০৭৬, সুনানে আবু দাউদ, হা/ ৩২০১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/ ১৭৯৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হা/ ৬৭৫৫]।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম লিখেনঃ

ويُذكر عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أنه أمر أن يقرأ على الجنازة بفاتحة الكتاب ولا يصح إسناده
অর্থাৎঃ উল্লেখ করা হয় যে, রাসূলে রাব্বুল আলামীন জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহা পড়তে আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু এ বক্তব্যের সনদ সহীহ নয়।
[সূত্রঃ যাদুল মা’আদ-১/১৪১]।

সূরা ফাতিহা না থাকার আরেকটি বড় কারণ হল, জানাযার নামাযে কেরাত নেই।

আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে,

قلت لعبد الرحمن بن القاسم: أي شيء يقال على الميت في قول مالك؟ قال: الدعاء للميت. قلت: فهل يقرأ على الجنازة في قول مالك؟ قال: لا(المدونة الكبرى، كتاب الجنائز، باب ما جاء فى القرائة على الجنائز-1/158
অর্থাৎঃ আমি আব্দুর রহমান বিন কাসেম রহঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ইমাম মালিক রহঃ এর মাযহাবে মৃতের জন্য কী পড়া হয়? তিনি বললেনঃ মৃতের জন্য দুআ পড়া হয়। আমি বললামঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মতে কি জানাযার নামাযে কিরাত আছে? তিনি বললেনঃ না।
[সূত্রঃ আল মুদাওয়ানুতল কুবরা-১/১৫৮]।
এ কারণে ইবনে ওহাব রহঃ অনেক বড় বড় সাহাবী যেমন হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ, হযরত ফুযালা বিন ওবাদা রাঃ, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ, হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ, হযরত ওয়াসিলা বিন আসক্বা রাঃ, এবং আকাবীরে তাবেয়ীগণ যেমন কাসেম বিন মুহাম্মদ, সালেম বিন আব্দুল্লাহ, সাআদ বিন মুসায়্যিব, আতা বিন আবী রাবাহ, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ রহঃ প্রমূখদের ব্যাপারে নকল করেন যে, তারা কেউ জানাযার নামাযে কেরাত পড়তেন না।
আর ইমাম মালিক রহঃ ও জানাযার নামাযে কেরাত পড়াকে আমলযোগ্য হওয়াকে অস্বিকার করেছেন।
[সূত্রঃ আল মুদাওয়ানুতল কুবরা-১/১৫৮]।

সুপ্রিয় পাঠক, যেহেতু সূরায়ে ফাতিহার আলোচ্য বিষয় আল্লাহ তাআলা হামদ এবং সানা এবং দুআ সমৃদ্ধ। তাই যদি কেউ কেরাতের নিয়ত ছাড়াই হামদ-সানা এবং দুআর নিয়তে প্রথম তাকবীরের পর জানাযার নির্ধারিত দুআর বদলে সূরা ফাতিহা পড়ে নেয়, তাহলে এর সুযোগ আছে।

জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার হুকুম নেই-

رُوِيَ عن ابْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه أَنَّهُ سُئِلَ عن صَلَاةِ الْجِنَازَةِ هل يُقْرَأُ فيها فقال لم يُوَقِّتْ لنا رسول اللَّهِ صلى اللَّهُ عليه وسلم قَوْلًا وَلَا قِرَاءَةً وفي رِوَايَةٍ دُعَاءً وَلَا قِرَاءَةً كَبِّرْ ما كَبَّرَ الْإِمَامُ وَاخْتَرْ من أَطْيَبِ الْكَلَامِ ما شِئْت وفي رِوَايَةٍ وَاخْتَرْ من الدُّعَاءِ أَطْيَبَهُ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তাঁকে জানাযার নামাযে কেরাতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন তিনি জবাবে বলেন যে, রাসূলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم আমাদের জন্য কোন বিশেষ শব্দ বা কেরাত নির্ধারিত করেননি। এক বর্ণনায় এসেছে যে, কোন বিশেষ দুআ বা কেরাত নির্ধারিত করেননি। যখন ইমাম তাকবীর বলবে, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। আর উত্তম থেকে উত্তম বাক্য [সানা, দুআ, ইত্যাদি] চাইলে এখতিয়ার করে নাও। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, উত্তম থেকে উত্তম দুআ ইখতিয়ার করে নাও।
[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে-১/৩১৩, আলমুগনী লিইবনে কুদামা-২/৪৮৫]।
সুতরাং বুঝা গেল যে, জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া ঠিক নয়।

সূরায়ে ফাতিহা পড়ার পক্ষে একটি দুর্বল দলিল ও জবাব-

কোন কোন অঞ্চলের লা মাযহাবী সালাফী ওহাবীরা জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহা পড়ার কথা বলে থাকে।
এক্ষেত্রে তারা একটি দলিল দিয়ে থাকে যে, রাসূলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم ইরশাদ করেছেন সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না। তাই জানাযার নামাযও সূরা ফাতিহা ছাড়া হবে না।

সূধী পাঠক, আসলে তা তারা মনগড়া আর খায়রুল কুরুনের ধারাবাহিক আমলের স্থলে উল্টো প্রথা আবিষ্কারের জন্যেই কেবল এরুপ বলে থাকে।
সূরা ফাতিহা তথা ফাতিহাখানির দাবী করা হলে পাল্টা প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে,
- জানাযায় কেরাত নেই কেন?
- জানাযায় রুকু সেজদা নেই কেন?
সুতরাং বুঝা গেল, খালেস নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হাদীসকে জানাযার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ইসলামী ফিক্বহ সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।

 
Top